Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্যায়ামের আগে ও পরে যা যা করবেন

জগিং, রোপ-জাম্পিং, ওয়েট লিফটিং, কার্ডিও কিংবা অন্য যেকোনো ব্যায়ামে ব্যয় করা সময়ের পরিমাণ দিনের মাত্র চার শতাংশ! আপনি যদি ভেবে থাকেন, এই অল্প সময়ে একটু ঘেমে-নেয়ে ফিটনেস ঠিক রাখার ব্যাপারে পর্যাপ্ত কাজটি শেষ করে ফেলেছেন, তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। এ ব্যাপারে  সেলেব্রেটি ফিটনেস ট্রেইনার জে কার্ডিয়েলো বলেছেন, “ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য তৈরি রুটিনে  ব্যায়াম হচ্ছে সবচাইতে সহজ কাজগুলোর একটি।” অর্থাৎ ফিট থাকার জন্য ব্যায়াম ছাড়াও আপনাকে পুষ্টিযুক্ত খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুমানো সহ ব্যায়ামের আগে ও পরে করা কাজগুলোর দিকে মনোযোগী হতে হবে। এগুলো শুধুমাত্র জিমে আপনার কার্যক্ষমতাই বৃদ্ধি করবে না, সাথে সাথে সলিড-মাসল গঠনেও পর্যাপ্ত সাহায্য করবে। তো আসুন, ব্যায়ামের আগে ও পরে করা প্রয়োজনীয় কাজগুলোর ব্যাপারে জেনে নেই।

ব্যায়ামের পূর্বে

১) পর্যাপ্ত ঘুমের প্রতি মনোযোগী হোন

যেকোনো ব্যায়াম শুরুর আগে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া জরুরি। আর বিশ্রাম পুরোপুরি আসে ঘুম থেকে। ব্যায়াম ছাড়াও বিভিন্ন কাজে ফোকাস রাখার জন্য, শরীরকে জড়তামুক্ত রাখার জন্য এর বিকল্প নেই। ঘুম আপনার হার্ট এবং ব্লাড ভেসেলগুলোর আরোগ্য লাভের ব্যাপারে সহযোগিতা করে। এছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম ঘ্রেলিন এবং লেপটিন নামক হরমোনগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখে। সুস্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষুধা লাগা জরুরি। কিন্তু আপনি যদি পর্যাপ্ত না ঘুমান, তাহলে আপনার শরীরের লেপটিনের পরিমাণ কমে যাবে এবং ঘ্রেলিনের পরিমাণ বেড়ে যাবে। যে কারণে আপনার ক্ষুধা কমে যাবে এবং পর্যাপ্ত খাবার খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবেন না। এটি শরীরের জন্য আত্মঘাতী।

ঘুমের গুরুত্ব বুঝাতে কার্ডিয়েলো বলেন,

“যেকোনো ফিটনেস প্রোগ্রাম শুরু হয় পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে। আমি আমার ক্লায়েন্টদের সর্বনিম্ন সাত ঘণ্টা ঘুমানোর ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকি। যদি তারা সাত ঘণ্টা না পারে, তাহলে যেন অন্তত ছ’ঘণ্টা ঘুমায়! ওটাও যদি না পারে, তাহলে তাদেরকে জিমে না আসার জন্য বলি।”

২) পর্যাপ্ত পানি পান করুন

সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য পানির গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা প্রত্যেকেই অবগত। ফিটনেস রুটিনেও এটি বেশ বড় ভূমিকা পালন করে। যখন আপনি ব্যায়ামের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আপনার নিশ্চিত হওয়া উচিত যে, আপনার শরীরে ঘাম ঝরানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি আছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পানি পান করার মাধ্যমে আপনি আপনার এনার্জি লেভেলের ভারসাম্য বজায় রাখছেন। অর্থাৎ যেখানে যতটুকু শক্তি প্রয়োজন, সেখানে ততটুকু শক্তি ব্যয় করার ব্যাপারে শরীরকে নির্দেশ করছেন।

কার্ডিয়েলোর মতে,

“পানিকে গাড়ির তেলের সাথে তুলনা করা যায়। গাড়ি চালানোর জন্য যেমন তেলের প্রয়োজন, শরীরকে স্বাভাবিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন পানির।”

Source: thoughtco.com

যেহেতু পর্যাপ্ত পানির পরিমাণ ব্যক্তিভেদে সম্পূর্ণ ভিন্ন, সেহেতু কার্ডিয়েলো প্রত্যেককে নিজের ওজনের অর্ধেক আউন্স পরিমাণ পানি পান করার জন্য বলেছেন। অর্থাৎ, দি আপনার ওজন ১৫০ পাউন্ড হয়, তাহলে দৈনিক আপনার ৭৫ আউন্স পানি পান করা উচিত। তবে অবশ্যই, আবহাওয়া, ব্যায়ামের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে আপনি কম-বেশি পান করতে পারেন। তবে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি যেন পান করা হয়। 

৩) হালকা খাবার খেতে পারেন

অনেকেই একবেলা খাবার খাওয়ার পর ব্যায়ামের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। যদি আপনার মনে হয় যে, আপনার পূর্বে কোনো জলখাবারের প্রয়োজন নেই, তাহলে জোর করে কিছু খাওয়া নিষ্প্রয়োজন! কিন্তু যদি হালকা ক্ষুধা অনুভব করে থাকেন বা যদি দীর্ঘক্ষণ ব্যায়াম করার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে অবশ্যই হালকা নাস্তা করে যাওয়া উত্তম। খাওয়ার জন্য এমন কিছু বাছাই করুন, যাতে পর্যাপ্ত প্রোটিন আছে এবং যেগুলো প্রায় সাথে সাথেই শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যেমন: কলা, আপেল, রান্না করা ওটমিল, দুধ ইত্যাদি। অনেকে ব্যায়াম শুরু করার পূর্বে কফি পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকে। বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা গেছে, কফিতে থাকা ক্যাফেইন অ্যাথলেটিক পারফর্মেন্স বৃদ্ধি করে।

৪) পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মনোযোগী হোন

পরিধানের জন্য লাইটওয়েটের টি-শার্ট, ট্রাউজার, সোয়েটার জাতীয় কাপড় বাছাই করুন। খেয়াল রাখুন, এগুলো যেন পর্যাপ্ত ফ্লেক্সিবল হয় এবং সহজেই যেন এগুলো থেকে তাপ বের হতে পারে। মেয়েরা স্পোর্টস-ব্রা, জিম শর্ট, ইয়োগা প্যান্ট বা এ ধরনের কাপড়গুলো পরতে পারেন। ছেলেদের জন্য ট্রাউজার, থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট, স্পোর্টস প্যান্ট বা হাইকিং প্যান্টগুলো উত্তম। কটন বা পলিয়েস্টার জাতীয় কাপর বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম।

Source: Youtube

৫) ওয়ার্ম আপ

ওয়ার্ম আপ আপনার শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে ‘রেঞ্জ অফ মোশন বৃদ্ধি করে। এছাড়াও জড়তা দূর করা সহ লম্বা সময় ধরে করা ব্যায়ামের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। সরাসরি বিশ্রাম থেকে কঠিন সব ব্যায়ামে শুরু করলে বিভিন্ন ধরনের ইনজুরির সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া হঠাৎ করেই অতিরিক্ত তাপ বৃদ্ধির কারণে শরীর অল্প সময়েই ক্লান্ত হয় পড়ে। কিন্তু আপনি যদি মূল ব্যায়াম শুরুর আগে পুরো শরীরটাকে মিনিট দশেকের জন্য দড়িলাফ, জগিং, সাইড-টু-সাইড হোপস, হাফ জ্যাক সহ সাধারণ কিছু ব্যায়াম দিয়ে শুরু করেন, তাহলে আপনার শরীর এর পরের ধকলগুলো সহ্য করতে প্রস্তুত হয়ে যাবে। একটি পারফেক্ট ওয়ার্কআউট সেশন শেষ করতে সাহায্য করবে।

ব্যায়ামের পরে

১) স্ট্রেচিং

স্ট্রেচিং হচ্ছে প্রায় ওয়ার্ম-আপের বিপরীত। তবে অনেক ক্ষেত্রে এরা একই কাজ করে। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর ব্যায়াম করার পর আমাদের পেশি শক্ত এবং সঙ্কুচিত হয়ে থাকে। ব্যাপারটা যেমন অস্বস্তিকর, তেমনি ক্ষতিকর। সঙ্কোচনের ফলে স্বাভাবিকভাবে পর্যাপ্ত রক্ত চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়। স্ট্রেচিং এ সমস্যা থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে। তাছাড়া ফ্লেক্সিবিলিটি অর্জনের জন্যও স্ট্রেচিংয়ের ভূমিকা অসাধারণ। ব্যায়াম শেষে মাসলের ভূমিকা বজায় রাখার মাধ্যমে শরীরকে আগের অবস্থানে নিয়ে আসার মাধ্যমে প্রশান্তি অর্জনের জন্য স্ট্রেচিং সাহায্য করে। এছাড়া পেশি এবং পেশি-গ্রন্থিগুলোর বিভিন্ন আঘাত থেকেও স্ট্রেচিংয়ের মাধ্যমে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। স্কোয়াড স্ট্রেচ, সিটেড ট্রাংক টুইস্ট, ফ্লাডওভার স্ট্রেচ, বাটারফ্লাই স্ট্রেস, সোয়াচ স্ট্রেচ, স্টেন্ডিং ট্রাইসেপ স্ট্রেচের মতো স্ট্রেচিং ওয়ার্কআউটগুলো নিয়মিত করতে পারেন।

স্ট্রেচিং গুরুত্বপূর্ণ; Image Source: Philip Haynes

২) ব্যায়ামের পরবর্তী পুষ্টি ঘাটতি পূর্ণ করুন

ব্যায়ামের পূর্বে খাবার গ্রহণ করুন বা না করুন, কিন্তু ব্যায়ামের পরবর্তী সময়ে খাবার গ্রহণ অবশ্যই করবেন। ব্যায়ামের পরবর্তী ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে আপনার শরীর পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন প্রত্যাশা করে, যা গ্লাইকোজেনের ঘাটতি পূর্ণ করার মাধ্যমে ক্ষয়প্রাপ্ত মাসল পুনরুদ্ধার করে এবং নতুন মাসল তৈরিতে সাহায্য করে।

আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, যা খাচ্ছেন সেগুলো যেন পর্যাপ্ত প্রোটিনযুক্ত হয়। তাছাড়া কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণও যেন পরিমাণ মতো থাকে। শক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য কার্বোহাইড্রেটের প্রয়োজন রয়েছে। আর অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন।

৩) সর্বোপরি, ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করুন

ব্যায়ামের পরপরই ঠাণ্ডা পানিতে গোসল ধকলের পরিমাণ কমিয়ে আনে এবং নিরাময় ক্ষমতাকে ত্বরান্বিত করে। তাছাড়া এর মাধ্যমে শরীরে প্রশান্তির সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তী দিনগুলোতে নতুন করে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে শরীরকে শক্তিশালী করে তোলার ব্যায়ামগুলোতে মনোযোগী হতে অনুপ্রেরণা যোগায়।

আরো পড়ুন: নিজেকে সুস্থ এবং শক্তিশালী রাখার জন্য চার সহজ ব্যায়াম

ফিচার ছবি: Crossfit Photography

Related Articles