Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

টাকা জমানোর দারুণ কয়েকটি কৌশল

টাকা এমন একটি জিনিস সেটা যখন না থাকে শুধুমাত্র তখনই বোঝা যায়। তাই টাকা থাকতেই এর মর্ম দেয়া উচিত। উপার্জন আর খরচ মিলিয়ে পরিস্থিতিটা সবসময় একই থাকে না। ভবিষ্যতের জন্য সতর্কতা হিসেবে তাই টাকা জমানো খুব দরকার। জেনে নিন টাকা জমানোর অসাধারণ কিছু টিপস।

১। কালকের জন্য বসে না থেকে আজ থেকেই জমানো শুরু করুন

প্ল্যানটা চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। কিন্তু করবো করবো বলে আর শুরুই করা হচ্ছে না। আপনার সাথেও নিশ্চয়ই এর ব্যতিক্রমটি হয়নি! কোনো কাজের শুরুটা করা উচিত একদম তোড়জোড় দিয়ে। তাই টাকা জমানোর সিদ্ধান্ত নিলে শুধু এই চিন্তা মাথায় নিয়ে বসে থাকবেন না। এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জোগাড় করে টাকা জমানোর কাজে নেমে পড়ুন।

শুরুর শুরুটা করা বেশ জরুরী, Image Source: Money Lover Blog

২। প্রয়োজন এবং চাহিদার মাঝে পার্থক্যটি বোঝার চেষ্টা করুন

প্রয়োজন আর চাহিদা কিন্তু একেবারেই আলাদা জিনিস। প্রয়োজন হলো যেটা আমাদের জীবনে চলার জন্য একেবারে না হলেই নয়! আর চাহিদা হলো আমাদের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা যা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ না হলেও আমরা পূরণ করতে চাই। প্রথমে আপনার বর্তমান প্রয়োজনগুলো পূরণ হওয়ার পর পরবর্তীতে প্রয়োজন পূরণের জন্য সিকিউরিটি হিসেবে যথেষ্ট সঞ্চয় আছে বা হচ্ছে কিনা  সেদিকে খেয়াল রাখুন। নিজের সুবিধামতো একটি লিস্টও বানিয়ে নিতে পারেন।

কোনটি চাহিদা এবং কোনটি প্রয়োজন তা আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, Image Source: GoBankingRates

৩। অবশ্যই বাজেট তৈরি করুন

মাসের প্রথম দিন থেকেই পারিবারিক বাজেট বানিয়ে নিন। পরিবারে সবকিছুর জন্য প্রতি মাসে আনুমানিক কত খরচ হয় তা নিশ্চয় আপনার জানা থাকবে। একটা ডায়েরি বা খাতা বানাতে পারেন যেখানে প্রতি মাসের হিসাবটা রাখবেন। এতে করে আপনি নতুন মাসের হিসাব করার সময় আগের মাসের হিসাবগুলো দেখে কতটুকু কম বেশি করতে হবে তা ব্যালেন্স করে নিতে পারবেন। মনে রাখবেন, টাকা জমানোর প্রথম শর্ত কিন্তু বাজেট করা। আপনি যদি বাজেট না করে এলোপাথারি খরচ করতে থাকেন, তাহলে টাকা জমানো তো হবেই না, বরং আয় কত করছেন আর ব্যয় কত হচ্ছে সে সম্পর্কেও আপনার কোনো ধারণা থাকবে না।

খুব সহজেই কিন্তু বানিয়ে ফেলতে পারেন বাজেট, Image Source: Pexels

৪। চেক অথবা ক্যাশে টাকা লেনদেনের অভ্যাস করুন

সাথে ক্রেডিট কার্ড থাকলে কেনাকাটার সময় একটু বেশিই খরচ হয়ে যায় বটে! কারণ বিল পে করার সময় ক্যাশে অনেকগুলো টাকা দিতে হয় না বলেই ব্যপারটা অনেক সহজ হয়ে যায়। আর তখনই বেশ বড় অংকের একটি টাকা খরচ হয়ে যায়। তাই যেসব ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার লাভজনক সেসব ক্ষেত্র ছাড়া এর ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। যেমন- টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন বা এ ধরনের বড় কোন কিছু আপনি EMI বা Installment-এ কিনছেন তখন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া শপিং বা অন্যান্য ক্ষেত্রে ক্যাশ ও চেক দিয়ে টাকা পরিশোধ করার চেষ্টা করুন।

লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্যাশ বা চেক ব্যবহার করাই ভালো, Image Source: Shutterstock

৫। টাকা জমানোর বিষয়টাকে সবকিছুর আগে প্রাধান্য দিন

ধরুন, কোনো একটি জিনিস আপনার খুব পছন্দ হয়েছে। এই মুহূর্তে আপনার হাতে টাকা নেই বলে আপনি প্ল্যান করে রাখলেন যে, আগামী মাসে টাকা হাতে পাবার পরই জিনিসটা কিনে ফেলবেন। আপনি কিন্তু আগামী মাসের বাজেট, টাকা জমানোর কথা মাথায় আনলেনই না। এ ধরনের কাজগুলো আপনার টাকা জমাতে না পারার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে প্রতি মাসে আপনি যে পরিমাণ টাকা জমান, তা আগে মাথায় রেখে তারপর অন্যকিছু করার প্ল্যান করুন।

টাকা জমানোর কথা যেন মাথায় থাকে সবসময়, Image Source: Dave Ramsey

৬। ছোটখাটো জিনিসেরও হিসাব রাখুন

‘ছোট ছোট বালু কণা, বিন্দু বিন্দু জল / গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল’- এই প্রবাদ বাক্যটিই কিন্তু এই বিষয়টিকে অনেকটা পরিষ্কার করে দেয়। একদমই ছোট কোনো খরচ বলে আপনি হয়তবা হিসাবগুলো রাখেন না। কিন্তু এই ছোট ছোট খরচগুলো যুক্ত করলে দেখা যাবে প্রায় অনেকটা খরচ হয়ে গিয়েছে। যেমন- একটি কলম বা পেন্সিল কিনলেও সেটার খরচটা লিখে রাখুন।

ছোটখাটো খরচ ভেবে এড়িয়ে যাবেন না, Image Source: Satujam.com

৭। বিভিন্ন ধরনের অফারগুলো কাজে লাগান

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় নানান ধরনের ডিসকাউন্ট, ফ্রি, ক্যাশব্যাক সহ রকমারি অফার চলতে থাকে। এই অফারগুলো সম্পর্কে জানুন এবং সেখান থেকে লাভজনক অফারটি নেয়ার চেষ্টা করুন। অনেক সময় অফারের জিনিস খারাপ হবে, এই ধরনের আশংকা বা সন্দেহ থেকে আমরা পিছপা হয়ে যাই। অথচ দেখেশুনে এবং ভালোমতো জেনে অফার নেয়ার সুযোগ কিন্তু আমাদের হাতে থাকে। তাই যথাসম্ভব এই সুযোগগুলো আপনার সুবিধা বুঝে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন।

বিভিন্ন উপায়ে জেনে নিতে পারেন অফারগুলো, Image Source: The Washbay

৮। পরিবর্তিত জীবনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করুন

জীবনের একেক সময় একেক ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। সেসব পরিস্থিতিতেও কীভাবে টাকা জমানোর বিষয়টা মাথায় রেখে এগোতে হয় তা জানতে হবে। যেমন- আগে আপনার অফিস ছিলো একদমই বাসার পাশে। তাই আসা যাওয়ার খরচটা ছিলো না বললেই চলে। কিন্তু নতুন অফিস বাসা থেকে বেশ দূরে। সেক্ষেত্রে কীভাবে যাতায়াত করলে সেভিংসের বিষয়ে আপনার সুবিধা হয় তা খুঁজে বের করুন এবং সে অনুযায়ী চলাফেরা করুন।

৯। অল্প কিছু দিয়েই জমানো শুরু করুন

প্রথমেই যে আপনাকে বড় অংকের টাকা দিয়ে জমানো শুরু করতে হবে তা কিন্তু নয়। যতটুকু পারেন ততটুকু দিয়েই শুরু করুন। বাসায় জমালে ইচ্ছে মতন যখন যত খুশি জমা রাখতে পারবেন। যদিও বাসায় জমালে অনেক সময় দেখা যায় যে নিয়মিত জমানো হয়ে ওঠে না। কিন্তু কোথাও যদি টাকা জমানোর জন্য একটি একাউন্ট খুলে রাখেন, তাহলে ধারাবাহিকভাবে টাকা জমা দেয়ার একটা তাড়া থাকে। আর এই সুযোগে টাকাটা নিয়মিত জমানোও হয়।

স্বল্প পরিমাণে জমাতে থাকলে একদিন অনেকখানি টাকা জমে যাবে, Image Source: Shutterstock

১০। ডিজিটাল সুযোগগুলোকে কাজে লাগান

ডিজিটাল যুগের সুবিধাগুলো ভোগ না করা একেবারেই বোকামি। এই যেমন ধরুন পানি, গ্যাস ও ইলেকট্রিক বিল কিন্তু এখন ঘরে বসেই দেয়া যায়। সেক্ষেত্রে কেন শুধু শুধু যাওয়া আসার টাকা খরচ করে আপনি বিল দিতে যাবেন! তার চেয়ে ঘরে বসেই বিল পরিশোধ করে ফেলুন। কিন্তু যদি এমন হয় যে সার্ভিস চার্জ আপনার যাওয়া আসার খরচের চেয়ে বেশি হয়ে যাচ্ছে তখন নিজে গিয়েই বিল দিয়ে আসুন। ব্যবধানটা বুঝে সে অনুযায়ীই কাজটি করুন।

টাকা জমানোর ক্ষেত্রেও ডিজিটাল হোন, Image Source: RiverMA

১১। বাড়তি খরচের বোঝা বয়ে বেড়াবেন না

টাকা জমাতে চাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু এদিকে আবার অযথা খরচ করেই যাচ্ছেন। তাহলে কিন্তু টাকা জমানোর ব্যাপারটা একটা প্ল্যানই রয়ে যাবে, বাস্তবে আর সম্ভবপর হবে না। অফিসের বা ব্যবসার কাজে আপনার অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এরপর আপনার মনে হতে পারে যে, রিল্যাক্স হওয়ার জন্য স্পা বা ম্যাসাজ করা দরকার। এই ভেবে আপনি এর পিছনে বেশ খানিকটা খরচ করে ফেললেন যা না করলেও চলতো। এর বদলে যদি আপনি বাসাতেই ভালো মতন বিশ্রাম নিতেন তাতেই কিন্তু হয়ে যেত। এ ধরনের অযথা টাকা খরচ করার আগে ভেবেচিন্তে কাজ করুন।

১২। টাকা জমানোর আগে তুলনা ও বিবেচনা করুন

ডিপিএস, সঞ্চয়পত্র, সেভিংস একাউন্ট নাকি ইনভেস্টমেন্ট! কোন ব্যাংক বা ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানিতে আপনি লাভজনক স্কিমে টাকা জমা রাখতে পারবেন তা বাছাই করে নিন। বিভিন্ন ব্যাংক বা ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির ওয়েবসাইটে গিয়ে স্কিমগুলো দেখে যাচাই বাছাই করে যেটা আপনার কাছে তুলনামূলকভাবে ভালো মনে হবে সেই স্কিমটিই নিন।

বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেটে স্কিমগুলো তুলনা করুন, Image Source: Finder

আমরা সবাইই টাকা জমানোর কথা ভাবি। কিন্তু এটি যেন শুধু ভাবনা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ না থেকে যায় সেজন্য জমানো শুরু করুন আজকে থেকেই!

Related Articles