Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বজুড়ে বিয়েশাদির ঝলমলে বেশভূষা

‘বিয়ে’- এই একটি শব্দ কতটা গভীরতা ধারণ করে তা মাপতে যাওয়াটাই মুশকিলের ব্যাপার। এই একটি ঘটনাই কারো জীবন আমূল পাল্টে দেয় সুন্দরের পথে, কারো আবার গোটা জীবন বিষিয়ে দেয়ার বীজও বোনে! সে যাকগে, আমরা বিয়ের কার্যকারিতার আলোচনায় না যাই। পাশের দেশে একটি বহুল প্রচলিত কথা আছে, এ দেশেও সেটা বেশ চলে- “বিয়ে হলো দিল্লীর লাড্ডু, আপনি সেটা খেলেও পস্তাবেন, না খেলেও পস্তাবেন!” তাই বিয়ে আপনি করছেন কিনা, সে ভাবনা নাহয় আপনার নিজের কাছেই রইলো। আমরা বরং কথা বলি বিয়ের পোশাক নিয়ে। পুরো পৃথিবীতে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য পাত্র-পাত্রী তো বটেই, এমনকি কোথাও কোথাও আমন্ত্রিতদের জন্যও বিশেষ পোশাক নির্ধারিত থাকে। আর এই বিশেষ পোশাক হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিটি সংস্কৃতিরই অংশ। যাদের বিয়ে, তাদেরকে খানিক আলাদা করে তো চোখে পড়াই উচিৎ। বিয়ের পোশাক সেই কাজটা করে দেয় অনেকটাই।

একেবারেই বিবাহবিমুখ যে মেয়েটি, সে-ও কোনোদিন মনের অজান্তেই নিজেকে সেই বিশেষ দিনের সাজে কল্পনা করে থাকবে। বিয়ের সাজ ব্যাপারটাই এমন জাদুকরী যে, অন্যের বিয়ের বোরহানির গ্লাস হাতে নিজের বিয়ের সাজসজ্জা মাথায় খেলে যেতে পারে! বঙ্গদেশে বেশিরভাগ রীতিতে লাল টুকটুকে বৌ আর সাদা পাঞ্জাবি বা শেরওয়ানির বর দেখতে পাই যেমন, তেমনি বিশ্বের অন্য কোনো প্রান্তে কোথাও দেখা মেলে ধবলসাদা একহারা গাউন পরা কনে আর কালো স্যুট পরিহিত বর মশাইয়ের। কোনো দেশে আবার বর-বধূ দুজনই রঙিন সব কাপড়ের টুকরো গায়ে জড়িয়ে বিয়ে করে। একেক দেশের একেক চল, গোত্রে গোত্রে ভিন্ন রীতিনীতি, কতকিছুই না আছে!

বিশ্বজুড়ে এমন হরেক ঢঙের বিয়ের পোশাক-আশাক নিয়েই আজ গল্প হবে। গল্পে আর ছবির রাজ্যে ডুব দিয়ে এমনও হতে পারে, নতুন কোনো পোশাক আপনার নিজের বিয়ের জন্যই মনে ধরে গেলো!

শ্রীলঙ্কা

বিয়েশাদিতে আকর্ষণের কেন্দ্রে মূলত থাকে কনে। কনের সাজপোশাক থেকে চোখ সরে না অতিথিদের। কিন্তু আপনি যদি কোনো শ্রীলঙ্কান বিয়েতে উপস্থিত হন, তাহলে নিশ্চিত থাকুন, বরের বেশভূষা আপনার নজর কেড়ে নেবে। শ্রীলঙ্কান কনে বিয়ের সাজে পরে থাকে ‘ওশারিয়া’ নামক এক ধরনের ভারী কাজ করা শাড়ি। ওশারিয়াতে সাদার শুভ্রতাই বেশি দেখা যায়। আর বরের বেশভূষা ভাগ করা যায় চারটি ভাগে। তার মাথায় থাকে এক ধরনের টুপি, থাকে জ্যাকেট এবং মুল এন্ডুমা আর জুতো।

বর-কনে দুজনেই নজর কেড়ে নেবে; Source: Elite Readers

মালয়েশিয়া

মালয় কনেরা সাধারণত বেগুনী বা ঘিয়া রঙের শেডে বিয়ের পোশাকের রং বাছাই করে থাকে। কনের সাথে মেলানো থাকে বরের পোশাকের রংটাও। এক রঙের পোশাকে বর-কনের সাজ মালয় বিয়ের বড় আকর্ষণ। মালয় বরের পোশাকের নাম ‘বাজু মেলাইউ’, যা লম্বা হাতার জামা ও ট্রাউজারের একটি সেট। কনের একহারা লম্বা পোশাকটি হলো ‘বাজু কুরুং’, টপ ও স্কার্টের সমন্বয়ে এটি তৈরি।

মালয় বিয়ের ম্যাচিং ম্যাচিং সাজ! Source: Simplifai Studios

জাপান

জাপানি কনে বিয়ের আসরে একাধিক পোশাক পরে থাকে, যা লাল কিংবা সাদা রঙের হতে পারে। জাপানের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ‘কিমোনো’ পরা হয় তাদের বিয়েতে, যা বর ও কনে উভয়ের পোশাকের নাম। আধুনিক জাপানি বিয়েতে তাদের ঐতিহ্যের পোশাকের মেলবন্ধন চোখে পড়ে পশ্চিমা রীতির সাথে, ব্রাইডাল কিমোনো অনেকটাই গাউনের আদল পেয়ে যায় যেমন। কিছু কিমোনোতে ফুলেল নকশাও বেশ নজরকাড়া লাগে।

পুতুলের মতো সাজে জাপানি বৌ, বরকে সঙ্গে নিয়ে; Source: My Modern Met

ইন্দোনেশিয়া

দ্বীপে পরিপূর্ণ দেশ ইন্দোনেশিয়ায় আছে তিনশোরও বেশি জাতির মানুষ। তাই তাদের জীবনযাপনের রীতিনীতিতে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় ব্যাপকভাবে। বিয়ের সাজপোশাকেও তাই থাকে অনেক বেশি বৈচিত্র্য। তবে লক্ষণীয় যে, ইন্দোনেশিয়ান বিয়েতেও সাধারণত বর-কনে এক রঙের পোশাক পরে থাকে।

ঝলমলে সাজে বিয়ের আসরে দুজন; Source: Brilio.net

নরওয়ে

এখানে বরের পরনে সাধারণত থাকে নরওয়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ‘বোনাড‘, যার আছে কয়েকটি খণ্ড- স্যুট, প্যান্ট, শার্ট, ভেস্ট ও মোজা। কনের পরিধেয় পোশাকটি হলো ‘ব্রুডেকজল‘, এক ধরনের বিয়ের গাউন, যা সাধারণত সাদা বা রূপালি রঙের হয়ে থাকে। হালকা ধাঁচের স্যুট গায়ে বর আর স্কার্টের মত গাউনে কনে, নরওয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান এমন সাদামাটা হলেও দারুণ প্রাণবন্তই হয়ে থাকে।

নরওয়ের ছিমছাম বিয়ের সাজ; Source: Spinzak

নাইজেরিয়া

বিয়েতে নাইজেরিয়ান বর-কনে রং মিলিয়ে প্রথম পোশাকটি পরে থাকে। তারপর কনে পোশাক পরিবর্তন করে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কনের পোশাকের সংখ্যা হয় দুই। এ দিন কনের পরনে থাকে কয়েক প্রস্থের পরিচ্ছদ। থাকে লম্বা হাতার ব্লাউজ, কোমরে জড়ানো কাপড়ের খণ্ড, কাঁধে নেওয়ার একরকম শাল বা চাদর এবং স্কার্ফের মতো বস্ত্র, যা কনে মাথায় পরে থাকে। বরের পোশাকেও থাকে কনের মতই কয়েক প্রস্থ। নাইজেরিয়ান বরকেও কনের চেয়ে কোনো অংশে কম আকর্ষণীয় দেখায় না।

লাল আর কালোর আভিজাত্যে নাইজেরিয়ান বর-কনে; Source: Pinterest

চীন

চীন দেশের বিয়ের পোশাকে থাকে তাদের ঐতিহ্যের রং লাল। কনে সেদিন পরে থাকে ‘কিপাও‘ নামক পোশাক। বেশিরভাগ চীনা বিয়েতে কনে একাধিকবার পোশাক পরিবর্তন করে থাকে। অনদিকে বরমশাইয়ের পরিধেয় হয় একটি বা দুটি স্যুট। বিয়েতে কেউ কেউ ঐতিহ্যবাহী ‘জংশান‘ স্যুট পছন্দ করলেও, অনেকেই বেছে নেয় পশ্চিমা রীতির স্যুট।

বিয়ের সাজে চীনেও চলে ম্যাচিং ম্যাচিং ধারা! Source: Pinterest

ইথিওপিয়া

ঐতিহ্যগত দিক থেকে ইথিওপিয়ান বিয়ের হরেক রকম রূপ হতে পারে। জাতিগত ভিন্নতাই তার কারণ। বরের গায়ে স্যুট ও কনের ব্রাইডাল গাউনেই সাধারণত বিয়ে সম্পন্ন হয় ইথিওপিয়ায়। কোটের মতো একটি পরিচ্ছদ বর-কনে পরে, যা একই রকম দেখতে হয় সাধারণত, সেটি ভারী কাজের হয়ে থাকে।

সাদা গাউন আর কালো স্যুটের  চিরায়ত বিয়ের রূপ ইথিওপিয়ায়; Source: Washingtonian

ভারত

শাড়ি আর শেরওয়ানি, ধুতি, লেহেঙ্গা, এমনকি সালোয়ার-কামিজ; কী নেই ভারতীয় বিয়ের পোশাকের তালিকায়! প্রদেশভেদে একেক রকম পোশাক পরা হয় ভারতীয় বিয়ের অনুষ্ঠানে। লালের পাশাপাশি সাদা কিংবা অন্য যেকোনো রং দিব্যি চলে কনের বিয়ের পোশাকে। বরের ক্ষেত্রেও খাটে এই রীতি। কনের মাথায় ঘোমটা এবং বরের পাগড়ি, এই দুটো জিনিস চোখে পড়ে বেশিরভাগ অঞ্চলেই।

সংস্কৃতির শতরূপ মেলে ইন্ডিয়ান বিয়ের সাজপোশাকে; Source: enchantedfloristtn.com

ঘানা

তাদের রঙিন পোশাকগুলো বিয়েতে উৎসবের ভাব এনে দেয় ষোলোআনা। কয়েক রঙের মিশেলে তৈরি বস্ত্র গায়ে জড়িয়ে বিয়ের আসরে উপস্থিত হয়ে থাকে ঘানাইয়ান বর-কনে, যাকে ‘কেনটে‘ বলা হয়। ঘানাতে বিভিন্ন পরিবারের আছে ভিন্ন ভিন্ন রকমের পোশাকের ধাঁচ। সে অনুযায়ী তাদের বিয়ের পোশাকেও ভিন্নতা আসে।

হাসিখুশি আর প্রাণবন্ত সাজকে ঘানাইয়ান বর-কনে; Source: Pinterest

নেপাল

নেপালি বিয়ের সাজকে ভারতীয় বিয়ের সাজ থেকে খুব একটা আলাদা করা যাবে না। নেপালি কনেরা বিয়ের পোশাক হিসেবে শাড়িকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। রঙের বেলায় তাদের দুর্বলতা উজ্জ্বল লালের প্রতিই দেখা যায়। লাল শাড়িতে সোনালি জরি ও সিকোয়েন্সের কাজ নজর কেড়ে নেয়। শাড়িতে সবুজ বর্ডার তাদের ঐতিহ্যের আরেকটি অংশ। বরের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের নাম ‘দৌরা সুরুয়াল‘, যা কুর্তা-পায়জামারই একটি রূপ। কুর্তাটি বেশ লম্বা হয়, সাথে থাকে আরামদায়ক প্যান্ট। দৌরা সুরুয়ালে জ্যামিতিক নকশা করা হয় এবং এটি সাধারণত উজ্জ্বল রঙের হয়ে থাকে।

লাল টুকটুকে নেপালি বৌ, বরের পোশাকেও আছে মেলানো রঙ; Source: Pinterest

এগারোটি ভিন্ন ভিন্ন দেশের বিয়ের বেশভূষার সাথে পরিচিত হয়ে এখন আপনার কী মনে হয়? অন্য কোনো সংস্কৃতির পোশাকে নিজের বিয়েতে সাজবেন নাকি? কোনোটা মনে ধরলো কি তেমন?

ফিচার ইমেজ- anirbanbrahma.com

Related Articles