Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জীবনানন্দ দাশ: বাংলা সাহিত্যের শুদ্ধতম কবির নিভৃতে থেকে যাওয়ার গল্প

১৯২৯ সালের ঘটনা, মার্কিন মুল্লুকের শেয়ার বাজারে ধ্বস নেমেছে। সারা বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে তার ব্যাপক প্রভাব পড়ে। ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশের অর্থনীতিও এই মহামন্দার হাত থেকে রেহাই পায়নি। কলকাতা সহ পুরো বাংলা জুড়ে যেন এই মহামন্দার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছে। পাট আর চায়ের মতো শিল্পের উপর ভর করে বাংলার অর্থনীতি যখন একটু একটু করে দাঁড়াচ্ছিল, ঠিক তখনই এমন এক অর্থনৈতিক মন্দার আগমন। বাংলা জুড়ে শুরু হয় কর্মী ছাটাই। পথে পথে বেকার আর কর্মহীনের হতাশা যেন ভারি করে তুলেছিল কলকাতার বাতাস। ইংরেজি সাহিত্যের তরুণ গ্র্যাজুয়েট জীবনানন্দেরও চাকরি নেই। দিল্লীর রামযশ কলেজের চাকরি ছেড়ে দিয়ে বেকায়দায় পড়ে যাওয়া তরুণের কবিতার ছন্দে ছন্দে তখন কেবলই হতাশার সুর বেজেছে। হাজারো মানুষের বেদনার ছন্দগুলো বাধা পড়তে থাকে ‘ধূসর পান্ডুলিপি’র পাতায় পাতায়। এখন অবধি বাংলা সাহিত্যের অনন্য এক মাইলফলক হয়ে আছে এই ধূসর পাণ্ডুলিপি। কিন্তু ধূসর পান্ডুলিপির পাতায় পাতায় রূপকের এমন বাহার দেখে যেকোনো সাহিত্যবোদ্ধাকে মুগ্ধই হতে হয়। এই গ্রন্থের পাতায় পাতায় যেন বাংলা সাহিত্যের অমর সব কবিতা রচনা করে যাবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন জীবনানন্দ।

তরুণ জীবনানন্দ; source: commons.wikimedia.org

‘নির্জন স্বাক্ষর’, ‘মাঠের গল্প’, ‘সহজ’, ‘কয়েকটি লাইন’, ‘অনেক আকাশ’, ‘পরস্পর’, ‘বোধ’, ‘অবসরের গান’, ‘ক্যাম্পে’, ‘জীবন’,’ শকুন’, ‘স্বপ্নের হাতে’ কিংবা ‘মৃত্যুর আগে’ সহ মোট বিশটি কবিতার বিনি সুতোয় গাঁথা এই ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’।

ধূসর পাণ্ডুলিপির প্রচ্ছদ; source: indicpub.com

কাব্যগ্রন্থ আকারে প্রকাশের কবিতাগুলো ছাপা হতো বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র আর সমর সেনের সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায়। সেই পত্রিকার এক সংখ্যায় জীবনানন্দের ‘মৃত্যুর আগে’ কবিতাটি নজর কাড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। বুদ্ধদেব বসুকে লেখা এক দীর্ঘ চিঠিতে জীবনানন্দের ভূয়সী প্রশংসাও করেন তিনি। ‘মৃত্যুর আগে’ কবিতার কয়েক লাইন-

“আমরা মৃত্যুর আগে কি বুঝিতে চাই আর? জানি না কি আহা,

সব রাঙা কামনার শিয়রে যে দেয়ালের মতো এসে জাগে

ধূসর মৃত্যুর মুখ; একদিন পৃথিবীতে স্বপ্ন ছিলো—সোনা ছিলো যাহা

নিরুত্তর শান্তি পায়; যেন কোন্ মায়াবীর প্রয়োজনে লাগে।

কি বুঝিতে চাই আর? . . . রৌদ্র নিভে গেলে পাখি পাখালির ডাক

শুনিনি কি? প্রান্তরের কুয়াশায় দেখিনি কি উড়ে গেছে কাক!”

বাংলা সাহিত্যের অনেক সমালোচকের ধারণা, জীবনানন্দের কবিতার মধ্যে যে অন্তর্নিহিত, জীবনদর্শন তা হয়তো তার কবিতায় ব্যবহৃত অসাধারণ সব রূপকের আড়ালেই চাপা পড়ে গেছে। হয়তো রবীন্দ্রনাথকেও সে জীবনদর্শন ছুঁতে পারেনি। কারণ রবীন্দ্রনাথের সম্পাদনায় ১৯৩৮ সালে যখন ‘আধুনিক বাংলা কবিতার সংকলন’ প্রকাশিত হয়েছিলো তাতে তিনি জীবনানন্দের ‘মৃত্যুর আগে’ কবিতার শেষ দুই স্তবক বাদ দিয়ে এটিকে সংকলনভুক্ত করেন। সাহিত্যিক সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন

“বঙ্কিমচন্দ্র কি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশাপাশি দেখলে রবীন্দ্রনাথকে ঔপন্যাসিক হিসেবে অত্যন্ত নিষ্প্রভ লাগে। তারাশঙ্কর বা বিভূতিভূষণেরও তদবস্থা। আর কবি হিসেবে জীবনানন্দ যে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে অনেক অনেক গুণে গুণী– ঢের বেশি ঈশ্বরপ্রেরিত বুদ্ধিমান –সে তো বলার অপেক্ষা রাখে না।”

অনেক সাহিত্যিক সমালোচকের মতে জীবনানন্দ বাংলা ভাষার শুদ্ধতম কবি। কিন্তু তাকে নিয়ে একটু বেশিই কি প্রশংসা করা হয়ে গেল কি?

কে এই জীবনানন্দ ?

১৮৯৯ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি, অবিভক্ত বাংলার বরিশালে সত্যানন্দ দাশ আর কুসুমকুমারী দাশের কোল আলোকিত করে পৃথিবীর মুখ দেখেন জীবনানন্দ। স্কুল শিক্ষক বাবার ছিলো লেখালেখির ঝোঁক; প্রবন্ধ, গল্প লিখতেন।

কুসুমকুমারী দাশ; source: arts.bdnews24.com

মা কুসুমকুমারী দাশও কবিতা লিখতেন। ১৮৯৬ সালে ‘কবিতা মুকুল’ নামে তার একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ‘পৌরাণিক আখ্যায়িকা’ নামের একটি গদ্যগ্রন্থও রচনা করেছেন তিনি। তার বিখ্যাত কবিতা ‘আদর্শ ছেলে’ পাঠ্যবইয়েও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই লাজুক ও মুখচোরা স্বভাবের ছিলেন জীবনানন্দ দাশ। ভারিক্কী গোছের জীবনানন্দ নামটার আড়ালে বাড়ি জুড়ে তার ডাক নাম ছিলো মিলু। ভোরে উঠেই বাবার কণ্ঠে উপনিষদের শ্লোকের আবৃত্তি ও মায়ের কাছ থেকে ধর্মীয় গান শুনতেন মিলু। মায়ের কন্ঠে কবিতার আবৃত্তি শুনতে শুনতে শিশু মিলুর মধ্যেও ছন্দের প্রতি ভালোবাসা জন্মে যায়।

বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে মেট্রিকুলেশন আর ইন্টারমিডিয়েটে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন তরুণ জীবনানন্দ। ১৯১৯ সালে ইংরেজীতে অনার্স শেষ করেন তিনি। বাংলা কবিতায় রবীন্দ্রযুগ চলছে তখন। ইংরেজী সাহিত্যে পড়া এক তরুণ লেখা শুরু করলো বাংলা কবিতা, অসাধারণ সব রূপকের গাঁথুনি দিয়ে তৈরি সব কবিতা। জীবনানন্দ কবিতা না লিখলে হয়তো অনেকের অজানাই থাকতো ‘অন্ধকারের গায়ে ঠেস দিয়ে জেগে থাকা যায়’, ‘নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতের ছবিও মানসপটে আঁকা যায় কিংবা সেই ‘বনলতা সেন’ যার চোখ দেখতে পাখির নীড়ের মতন!

ত্রিশ দশকের পঞ্চপান্ডব

কলকাতায় পা দিয়ে জীবনানন্দ একটু একটু করে কবি হয়ে উঠতে থাকেন। ১৯২৫ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ মৃত্যুবরণ করলে তার স্মরণে জীবনানন্দ লেখেন ‘দেশবন্ধুর প্রয়াণে’ নামের একটি কবিতা। বঙ্গবাণী পত্রিকায় প্রকাশিত সেই কবিতাটি পড়ে কবি কালিদাস রায় মন্তব্য করেছিলেন,

“এ কবিতাটি নিশ্চয়ই কোনো প্রতিষ্ঠিত কবির ছদ্মনামে রচনা”

বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দেব, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমিয় চক্রবর্তী আর জীবনানন্দ এই পঞ্চপান্ডব মিলে বাংলা কবিতায় আধুনিকত্ব নিয়ে এসেছিলেন। ‘কল্লোল’ নামের সাহিত্যপত্রিকায় প্রকাশিত কবিতাগুলো যেন ধীরে ধীরে বাংলা কবিতায় নতুন যুগ আসার আগমনী বাণী দিচ্ছিলো। বুদ্ধদেব বসুর সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকার ভূমিকাও ছিলো অপরিসীম। ১৯৩৫ সালে এই ‘কবিতা’র দ্বিতীয় সংখ্যাতেই প্রকাশিত হয় ‘বনলতা সেন’।

সত্যজিৎ রায়ের করা ‘বনলতা সেন’ এর প্রচ্ছদ; source: commons.wikimedia.org

১৮ লাইনের এই অনবদ্য সৃষ্টি বর্তমানে বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতার একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ‘বনলতা সেন’ কবিতার কয়েক লাইন-

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,

“মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের পর

হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা

সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,

তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’

পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।”

জীবনানন্দের অমর সৃষ্টিগুলো

কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে। ১৯৩৬ এ প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’। ১৯৪২ সালে বুদ্ধদেব বসুর কবিতা-ভবন হতে ‘এক পয়সায় একটি’ সিরিজের অংশ হিসেবে প্রকাশিত হয় ষোল পৃষ্ঠার ‘বনলতা সেন’। এই তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করার জন্য প্রকাশক খুঁজে বের করতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন জীবনানন্দ। বুদ্ধদেব বসুই ছিলেন শেষ ভরসা। ১৯৪৪ সালে তার চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‘মহাপৃথিবী’ প্রকাশিত হয়।

”মহাপৃথিবী’ কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদ; source: www.goodreads.com

কলকাতার ‘পি ১৩ গণেশচন্দ্র এভিনিউ’ থেকে প্রকাশিত হয় এই কাব্যগ্রন্থ। ১৯৪৫ পরবর্তী সময়ে বিশ্বযুদ্ধ আর ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বেশ প্রভাব পড়ে জীবনানন্দের উপর। এরপর আরো অনেক লিখেছেন কবিতা, উপন্যাস ও প্রবন্ধ। কিন্তু ওপার থেকে বড্ড তাড়াতাড়ি ডাক চলে এসেছিলো, প্রকাশের তখনো অনেক বাকি। পান্ডুলিপির পাতাগুলো ট্রাঙ্কের নিচে ধূসর হতে থাকে। কেউ হয়তো খুঁজে পাবে! পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার পরে হয়তো তিনি হয়ে উঠবেন বাংলা ভাষায় আধুনিক কবিতার পথিকৃতদের একজন।

জীবনানন্দ প্রেমে পড়েছিলেন

জীবনানন্দের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা বরিশাল শহরে। তরুণ জীবনানন্দ প্রেমে পড়েছিলেন কাকাতো বোন শোভনা দাসের। কাকা অতুলচন্দ্র দাসের বাড়িটি ছিলো কবির বাড়ির লাগোয়া। দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভালোবেসে গেছেন তাকেই। হয়তো সমাজে লোকলজ্জার ভয়ে মুখ ফুটে কোনোদিন কিছু বলা হয়ে ওঠেনি। তবে দিনলিপির পাতায় পাতায় বন্দী করে রেখে গেছেন সেই অস্ফুট দুঃখগুলোর কথা। জীবনানন্দ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার উদ্ধার করা দিনলিপিগুলোর পাতায় পাতায় ‘Y’ নামে কোনো এক মেয়ের নাম লেখা আছে।

দিনলিপিগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জীবনানন্দ তার দিনলিপিতে সংক্ষেপ ব্যবহার করতেই পছন্দ করতেন। তাই শুরুতেই লিখে নিয়েছিলেন ‘Y=শচী’। জীবনানন্দ গবেষক ভূমেন্দ্র গুহের মতে এই ‘শচী’ই ছিলেন শোভনা। শোভনা ছিলেন তরুণ জীবনানন্দের মুগ্ধ পাঠক আর শ্রোতা। ঘন্টার পর ঘন্টা কবি তার নিজের কবিতা পড়ে শোনাতেন শোভনাকে। নিতান্ত অখ্যাত এক তরুণ থেকে বাংলা সাহিত্যের শুদ্ধতম কবি হয়ে উঠার দিনগুলোতে শোভনা ছিলেন তার অনুপ্রেরণা।

জীবনানন্দের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’; source: jibanananda.eduliture.com

১৯২৭ সালে কলকাতার ৯০/২ এ হ্যারিসন রোড থেকে প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ শোভনাকেই উৎসর্গ করেছিলেন তিনি। কোনো কোনো জীবনানন্দ গবেষকের মতে, এই শোভনাই ছিলেন বনলতা সেন!

বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল অন্যের সাথে

১৯৩০ সালে লাবণ্যপ্রভা দাশের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন জীবনানন্দ।

বিয়ের পিঁড়িতে জীবনানন্দ; source: arts.bdnews24.com

প্রেমিকা শোভনাও এসেছিলেন তার বিয়েতে। হাসিমুখে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিয়ে বাড়ি জুড়ে। এমন কষ্টের কথাগুলো হয়তো মুখ ফুটে কাউকে বলতেও পারেননি কবি। শুধু লিখে গেছেন। পাণ্ডুলিপির পাতায় পাতায় বিষাদগুলোকে বন্দী করেছেন এই নিভৃতচারী। সেই জীবনানন্দ, যাকে কেউ ভালো রাখেনি। লাবণ্য ধীরে ধীরে ব্যস্ত হয়ে উঠেন সিনেমার কাজে। টালিগঞ্জের সিনেমার কাজে ব্যস্ত লাবণ্য একরকম বিচ্ছেদের রেখা টেনে দিয়ে কবিকে আরো তিমিরে ঠেলে দেন।

এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর!

কিছুটা দূরে একটি ট্রাম, অবিরাম ঘণ্টা বাজিয়ে এগিয়ে আসছে লাইন ধরে। সময়টা এখানে থেমে গেলে বড্ড ভালো হতো। কিন্তু দুর্ভাগা সময়ের করাল গ্রাসে হারিয়ে গেলেন তিমিরবিদারী কবি। গত একশ বছরে একমাত্র ট্রাম দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো কবিকে।

তিমিরবিদারী কবি জীবনানন্দ; ছবিসূত্র: banglanews24.com

জীবনের শেষ কয়েক বছর জীবনানন্দ কাটিয়েছেন চরম অর্থকষ্টে। একটার পর একটা চাকরি হারিয়েছেন। কলকাতার ১৮৩ নম্বর ল্যান্সডাউন স্ট্রিটের একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। বাড়ি ভাড়া দেওয়ার মতো পয়সাটি পকেটে ছিলো না। এক নর্তকীর কাছে ভাড়াবাড়ির একটি ঘর সাবলেট দিয়েছিলেন। কলকাতায় বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে টিউশনি করেছেন, বীমা কোম্পানির দালালি পর্যন্ত করেছেন। টাকা ধার করেছেন আশপাশের সবার কাছ থেকে। ঘাতক ট্রাম হয়তো কবিকে এই দৈন্যদশা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই আবির্ভূত হয়েছিলো! নাকি সচেতন চিত্তেই আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন কবি? সে গল্প তোলা থাক অন্য কোনো এক দিনের জন্য।

১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর হিমশীতল রাত, নিউমোনিয়াকে সঙ্গী করে নিঃসঙ্গতার কবি পৃথিবীর ব্যস্ততা থেকে অবসর নিলেন। হয়তো কবি আবার ফিরে আসবেন তার ধানসিঁড়িটির তীরে, হয়তো মানুষ হয়ে নয় হয়তো শংখচিল শালিখের বেশে। তবে দৃশ্যমান পৃথিবীর ক্লান্তি থেকে জীবন ভরে ছুটি নিয়ে চলে গেলেন কবি।

“আর তো ক্লান্তি নাই—নাইকো চেষ্টা আজ—নাইকো রক্ত ব্যথা—বিমূঢ় ভিড়ের থেকে নিয়েছি জীবন ভরে ছুটি

হেঁটেছি অনেক পথ—আমার ফুরালো পথ—এখানে সকল পথ তোমার পায়ের পথে গিয়েছে নীলাভ ঘাসে মুছে।”

ফিচার ইমেজ- জাকারিয়া হাসান

Related Articles