Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বজুড়ে নান্দনিক যত হাত ভাস্কর্য

পৃথিবীর নানা প্রান্তে কত ধরনের যে ভাস্কর্য রয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। বৈচিত্র্যময় বিষয়বস্তু ও উদ্দেশ্য নিয়ে নির্মিত হয় এসব ভাস্কর্য। তবে মানুষের কোনো অঙ্গ ভাস্কর্যের বিষয়বস্তু হতে পারে তা অনেকের কাছেই অকল্পনীয়। মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে হাত। এই হাত মানুষের নানা সৃষ্টিশীল কাজের হাতিয়ার। তাই অনেক শিল্পীর কাছে এই হাতই ভাস্কর্য শিল্পের মূল বিষয়বস্তু হিসেবে উঠে এসেছে। এসব হাত ভাস্কর্যের নানা আঙ্গিক, নির্মাণ উপাদান এবং বিষয়বস্তু পরষ্পর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বিশ্বের প্রখ্যাত সব শিল্পীর তৈরি হাতের নান্দনিক ভাস্কর্য নিয়ে আজকের এই আয়োজন।

প্রেয়িং হ্যান্ড, টালসা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

১৯৮০ সালে  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যের টালসা শহরের ওরাল রবার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস চত্বরে ৬০ ফুট উচ্চতা এবং ৩০ টন ওজনের ‘প্রার্থনারত হাত’-এর ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়। এর নির্মাতা ওকলাহোমার জনপ্রিয় ভাস্কর শিল্পী লিওনার্ড ম্যাকমুরি। পুরোপুরি বোঞ্জের তৈরি ভাস্কর্যটি যে সময়ে নির্মিত হয় তখন এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভাস্কর্য । 

ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যের টালসা শহরের ওরাল রবার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস চত্বরে স্থাপিত ‘প্রার্থনারত হাত’-এর ভাস্কর্য; Photo credit: Jeffkao/Flickr

এই ভাস্কর্যটি প্রথমে দ্য সিটি অব ফেইথ মেডিকেল এন্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রবেশ মুখে স্থাপন করা হয়েছিল। তখন ভাস্কর্যটি ‘দ্য হিলিং হ্যান্ডস’ নামে পরিচিত ছিল। ১৯৮৯ সালে রিসার্চ সেন্টারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এটি ওরাল রবার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস চত্বরে সরিয়ে আনা হয়। তখন এর নামও পরিবর্তন করা হয়।

জায়েন্ট হ্যান্ড অব ভেনিস, ইতালি

ভেনিস একটি ভাসমান শিল্প নগরী যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্ব সংস্কৃতির নানা শাখাকে সমৃদ্ধ করেছে। ইতালির চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর লরেনসো কুইনের এক অনন্য ভাস্কর্য এই ‘জায়েন্ট হ্যান্ড অব ভেনিস’। এই ভাস্কর্যে দেখা যায়, ইতালির ভেনিসের গ্র্যান্ড ক্যানেলের পানির ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে দুটি সাদা হাত। দুটি হাতের একটি টেনে ধরেছে ঐতিহাসিক ‘কা সাগ্রারেদো’ হোটেলকে, যা দেখে মনে হতে পারে হাতটি যেন ভেঙে দিতে চাইছে হোটেলটিকে।

আর অপর হাতটি যেন আগলে ধরে রেখেছে হোটেলটিকে। শিল্পী প্রতিকী হাত দুটির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় মানুষের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক এই দুটি দিক সকলের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন।

ভাস্কর লরেনসো কুইনের এক অনবদ্য সৃষ্টি ‘জায়েন্ট হ্যান্ড অব ভেনিস’; Image Source: explo-re.com

এ প্রসঙ্গে শিল্পী লরেনসো এক সাক্ষাৎকারে জানান যে, ‘আমি মানুষের শরীরের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে বেছে নিয়েছি। এই দুটি হাত অসম্ভব শক্তিশালী। দুটি হাত দিয়ে যেমন মানুষ ভালবাসতে পারে, ঠিক তেমনি কোনও কিছু সৃষ্টি করতে, ঘৃণা করতে এবং সবকিছু ধ্বংস করে দিতে মানুষের এই দুটি হাতই যথেষ্ট।

ইতালির ভেনিস ‘ভাসমান নগরী’ হিসেবে বা সিটি অব ক্যানেল হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ভেনিস আস্তে আস্তে ডুবতে শুরু করেছে। হারিয়ে ফেলছে সে তার প্রাচীন ঐতিহ্য। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মর্যাদা পাওয়া ইতালির ভেনিস নগরীকে প্রকৃতির এই রুক্ষতার হাত থেকে রক্ষায় মানুষকে সচেতন করে তোলার জন্য শিল্পী লরেনসোর এক আন্তরিক প্রয়াস এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে।

হ্যান্ডস অ্যান্ড মোলিকিউল, ইংল্যান্ড

ডেভিড বার্নাসের তৈরি ভাস্কর্য হ্যান্ডস অ্যান্ড মোলিকিউল; Image Source: John Sheldon/Flickr

ইংল্যান্ডের কেন্টের রামসগেট নামক অঞ্চলে ৮ ফুট উচ্চতার এই হাত ভাস্কর্যটি অবস্থিত। এই ভাস্কর্যের নির্মাতা জনপ্রিয় ভাস্কর শিল্পী ডেভিড বার্নাস। ইংল্যান্ডের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার এর আর্থিক সহায়তায় এই ভাস্কর্য তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০০০ সালের জুন মাসে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। সম্পূর্ণ ব্রোঞ্জের তৈরি ভাস্কর্যটির নির্মাণশৈলীতে রয়েছে নতুনত্বের ছোঁয়া। বিশাল দুটি হাতের মাঝে যেন খেলা করছে অণু পরমাণু।

হলোকস্ট মেমোরিয়াল, মায়ামি, যুক্তরাষ্ট্র

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ও নির্মমতার স্মৃতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে গড়ে উঠেছে ‘দ্য হলোকস্ট মিউজিয়াম’। এই জাদুঘর চত্বরেই স্থাপন করা হয়েছে এক অতুলনীয় ভাস্কর্য ‘হলোকস্ট মেমোরিয়াল’। ভাস্কর্যটি ১২ মিটার উঁচু।   

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে নির্মিত ভাস্কর্য হলোকস্ট মেমোরিয়াল; Photo credit: Scurzuzu/Flickr

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদি গণহত্যা স্মরণে এটি নির্মাণ করা হয়। এই ভাস্কর্যের স্থপতি কেনেথ ট্রাইস্টার। শিল্পী তার অপূর্ব দক্ষতায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নিমর্মতাকে এই শিল্প সৃষ্টির মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছেন। মৃত্যুর মুখ থেকে পালিয়ে বেড়ানো অসংখ্য মানুষের ভয়ার্ত মূখ এবং বাঁচার আশায় তাদের আকাশের পানে হাত বাড়ানোর চেষ্টার এক অদ্ভুত চিত্রকল্প ফুটিয়ে তুলেছেন। এ যেন সৃষ্টিকর্তার কাছে তাদের অসহায়ত্ব থেকে মুক্তির প্রার্থনা। শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধই নয়, যে কোনো যুদ্ধ সাধারণ মানুষদের জন্য কি দুর্বিষহ দুর্ভোগ বয়ে আনে, এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে শিল্পী তাই তুলে ধরতে চেয়েছেন।

জায়েন্ট হ্যান্ড, বানডাং, ইন্দোনেশিয়া

ইন্দোনেশিয়ার উত্তরে বানডাং শহরে নির্মিত এক অসমান্য হাত ভাস্কর্য জায়েন্ট হ্যান্ড, বানডাং, ইন্দোনেশিয়া; Image Source: theartstack.com

এই অনন্য ভাস্কর্যটি ইন্দোনেশিয়ার উত্তরে বানডাং শহরে রয়েছে। এই শহরেরই গেট অব শেত্রুদুতার একটি হাউজিং কমপ্লেক্সের প্রবেশমুখে এটি স্থাপন করা হয়েছে। এটি স্টিলের তৈরি। ভাস্কর্যটি নির্মাণ ও নকশা করেন নিউম্যান নুয়ার্তা নামের এক ভাস্কর্য শিল্পী। এক বিশাল হাতের মাঝে মানুষ তার আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছে- এমন ভাবনা থেকেই শিল্পী ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন বলে ধারণা করা হয়।

মানো ডেল ডেসিটারো, আতাকামা মরুভূমি, চিলি

‘মানো ডেল ডেসিটারো’, ইংরেজিতে যার অর্থ ‘হ্যান্ড অব ডেজার্ট’, আর বাংলায় যার মানে ‘মরুভূমির হাত’। চিলির আন্তোফাগাস্তা শহর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে আতাকামা মরুভূমির প্যান-আমেরিকান হাইওয়ে যাওয়া পথে এই হাতের ভাস্কর্যটি দেখতে পাওয়া যায়। এটি চিলির প্রখ্যাত ভাস্করশিল্পী মারিও ইররাজাবালার এক অসাধারণ শিল্পকর্ম।

খ্যাত ভাস্করশিল্পী মারিও ইররাজাবালার এক অসাধারণ শিল্পকর্ম ‘মানো ডেল ডেসিটারো’; Photo credit: Juan Eduardo Donoso Rosas/Flickr

শিল্পী যখন এই শিল্পকর্মটি নির্মাণ করে তখন দেশটির জনগণ সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট। শিল্পী এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে প্রকৃতির সামনে মানুষের জীবনের অসহায়ত্ব এবং তার সাথে নানা দুর্যোগ, অন্যায়, একাকীত্ব ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানুষের রুখে দাঁড়ানোর সংগ্রামী চেতনার কথা তুলে ধরতে চেয়েছেন। কংক্রিটের তৈরি এই ভাস্কর্য উচ্চতায় ১১ মিটার লম্বা। ১৯৮০ সালের এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২৮ মার্চ ১৯৯২ সালে এটি উদ্বোধন করা হয়। একটি স্থানীয় বুস্টার সংস্থা ‘কর্পোরেশন প্রো অ্যান্টোফাগস্টা’ এই ভাস্কর্য তদারকির দায়িত্বে রয়েছে।

হ্যান্ড অব হারমোনি, কেপ হোমি, দক্ষিণ কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়ার হোমিগট বিচে স্থাপিত হ্যান্ড অব হারমোনি; Image Source: silversea.com

ব্রোঞ্চ ও গ্রানাইট পাথরে তৈরি এই ভাস্কর্যটি ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্মিত হয়। ভাস্কর্যটি দক্ষিণ কোরিয়ার কেপ হোমি অঞ্চলের হোমিগট সৈকতে স্থাপিত। কোরিয়ার সূর্যোদয় উৎসবের প্রতীক হিসেবে এই ভাস্কর্যটি পরিচিত। সমুদ্রের তীর থেকে ২০-৩০ ফুট প্রশস্ত হাত একটি সমৃদ্ধ জীবনের জন্য সমগ্র কোরিয়ানদের একতাবদ্ধ সহবস্থান এবং আত্মনিবেদনের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত।

ড্রোনিং হ্যান্ড, পুনতা ডেল এস্টে, উরুগুয়ে

উরুগুয়ের পর্যটন শহর পুনতা ডেল এস্টে-র সমুদ্রতটে স্থাপতি মারিও ইররাজাবালার আরও একটি অসাধারণ শিল্পকর্ম ‘ড্রোনিং হ্যন্ড’; Photo credit: Vince Alongi/Flickr

চিলির ভাস্কর্য শিল্পী মারিও ইররাজাবালার আরও একটি অসাধারণ শিল্পকর্ম ‘ড্রোনিং হ্যান্ড’ বা ‘ডুবন্ত হাত’। উরুগুয়ের পর্যটন শহর পুনতা ডেল এস্টের বিস্তৃত ব্রভা সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে এই নান্দনিক শিল্পকর্মটি স্থাপিত। এই ভাস্কর্যকে বিভিন্ন নামেও ডাকা হয়ে থাকে। যেমন হম্বরে আর্মিয়িংও এ লা ভিডা (ম্যান ইমার্জিং ইনটু লাইফ), মনুমেন্টো লস ডিডোস (ফিঙ্গারদের স্মৃতিস্তম্ভ) বা মনুমেন্টো আল আহোগাদো (মনুমেন্ট টু দ্য ড্রোনড) বা ডুবে যাওয়া স্মৃতিস্তম্ভ। ১৯৮২ সালে এটি নির্মাণ করা হয়। সমুদ্রের রুক্ষ স্রোতে সাঁতার না কাটার জন্য আগত সাঁতারুদের সতর্ক করার উদ্দেশ্যেই এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়।

This article is a bengali article. This is story about some aesthetic hand sculptures around the world. All the sources are hyperlinked into the article.

Feature Image Source: pinterest.com

Related Articles