Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গোল্ডেন ব্রিজ: যে সেতুকে কেন্দ্র করে ভিয়েতনামের দানাং শহরে পর্যটন শিল্পের প্রসার

পাহাড় ও সমুদ্রের অদ্ভুত মিতালি, ‍মায়াময় পুরনো শহর আর আলোরে রোশনাইয়ে উজ্জ্বল নতুন শহরের হাতছানি- সবকিছু মিলে এক অপরূপ সৌন্দর্যের দেশ ভিয়েতনাম। দক্ষিণ চীন সাগরের পাড়ে অবস্থিত দেশটির পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে মুগ্ধতা। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য দেশটির সরকার কোনো কমতি রাখেনি। সব জায়গায় সাজানো-গোছানো, পরিচ্ছন্নতা ও পরিকল্পনার ছোঁয়া লক্ষণীয়। দেশটি তার সমস্ত যৌবন নিয়ে যেন পর্যটকদের স্বাগত জানানোর অপেক্ষায়। প্রাচীনত্ব ও আভিজাত্যের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন তৈরি করেছে দেশটি। মানুষ, সভ্যতা আর সংস্কৃতি উপভোগ করার জন্য পর্যটকদের এক প্রধান আকর্ষণ ভিয়েতনাম।

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের দেশ ভিয়েতনাম; Image Sorce: vietjet.net

ভিয়েতনামের এমনই ছিমছাম, শান্ত, সুন্দর এক শহর দানাং। ভিয়েতনামের পঞ্চম বৃহত্তম শহর। হান নদীর তীরে দক্ষিণ চীন সাগর উপকূলে শহরটি অবস্থিত। এটি ভিয়েতনামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক বন্দর শহরও। অঞ্চলটি নানা প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ। দানাং শহর থেকে ৬ কি.মি. পূর্বে দর্শনীয় মেইখে সমুদ্র সৈকত ভিয়েতনামের জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকতগুলোর একটি। এছাড়া শহরের খুব কাছেই রয়েছে নন নুউক বিচ নামে আরও একটি সৈকত। এটিও বিশ্বের সুন্দরতম সমুদ্র সৈকতগুলোর একটি। সাদা বালুময় সৈকতে সূর্য স্নান, মাছ ধরা ও সার্ফিংয়ের জন্য সৈকতগুলো পর্যটকদের জন্য এক আদর্শ স্থান।

ছবির মতো সাজানো এক শহর দানাং; Image Sorce: Vietnam Tourism

শহর থেকে ৯ কি.মি. দক্ষিণে সৌন্দর্যে মোড়া মার্বেল মাউন্টেন, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৯৩ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ৬৭ মিটার দীর্ঘ সোনত্রা ন্যাশনাল পার্ক এবং দানাং শহরের শেষ প্রান্তে অবস্থিত হাইভেন পাসের দৃশ্যাবলী এককথায় অনবদ্য। এছাড়া ফরাসি স্থাপত্যে তৈরি দানাং ক্যাথিড্রাল, শহরের মাঝেই অবস্থিত ফাপলাম প্যাগোডা বা ড্রাগন ব্রিজ স্থাপত্যশিল্পকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তাই ভিয়েতনামীদের কাছেই শুধু নয়, পর্যটকদের কাছেও দানাং শহরের গুরুত্ব অপরিসীম। 

বা-না হিলসের আরেক দ্রষ্টব্য স্থান ফ্রেঞ্চ ভিলেজ; Image Source: bestpricevn.com

দানাং শহরের ২৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে বিস্তৃত এক সবুজ উপত্যকা বা-না হিলস। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪৮৭ মিটার উচ্চতায় এ উপত্যকা অবস্থিত। দু’পাশে পাথুরে পাহাড়ি ঘন সবুজ বন। পাশ দিয়ে বয়ে চলা খরস্রোতা নদী। বিংশ শতকের শুরুর দিকে এ অঞ্চলে ফরাসি উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল। ফরাসি আমলে বা-না হিলস ছিল একটি পাহাড়ি স্টেশন। এ সময় অনেক ফরাসিরা এখানে তাদের বসতি গড়ে তোলে। ফরাসি স্থাপত্যে তৈরি প্রাচীন ক্যাথেড্রাল, মধ্যযুগের বেশ কয়েকটি পুরনো দুর্গ বা-না হিলসকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে।

বা-না হিলসের প্রধান আকর্ষণ গোল্ডেন ব্রিজ; Image Sorce: heartbrook.com

বা-না হিলসের আরেক আকর্ষণ সোনালী সেতু। এই দৃষ্টিনন্দন সেতুটি ঘন পাহাড়ি জঙ্গলের মধ্যেই নির্মিত হয়েছে। সেতুর দুপাশ থেকে দুটি বিশালাকার পাথুরে হাত যেন সেতুটিকে আঁকড়ে ধরে আছে। অনেকের কাছে এ যেন ‘ঈশ্বরের হাত’। ‘গোল্ডেন ব্রিজ’ নামে পরিচিতি পেলেও স্থানীয়দের কাছে সেতুটি ‘কাউ ভ্যাং’ নামে পরিচিত। 

সেতুটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০০ মিটার উচ্চতায় স্থাপিত। ১৫০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি পাশাপাাশি দু’টি পাহাড়কে সংযুক্ত করেছে। সর্পিল আকারের আঁকাবাঁকা সেতুটি দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে স্বয়ং ঈশ্বরের হাতে যেন একটি সোনালি সাপ ধরা আছে। সেতুর উপর যখন সূর্যের আলো পড়ে তখন সেতুটি সোনালি রঙে ঝলমল করে উঠে।

দেশি-বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ২০১৮ সালের জুন মাসে সেতুটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। তারপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেতুটিকে নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে সোনালি সেতুর ছবি ভাইরাল হতে থাকে। 

পুরো সেতুটি ফাইবার গ্লাস, কংক্রিট ও ইস্পাতের তৈরি; Image Sorce: modernica.net

স্থাপত্যশিল্পটি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের মাঝে এতটা সাড়া ফেলবে, তা নিয়ে নির্মাতাদেরও তেমন ধারণা ছিল না। সেতুর দু’পাশের হাত দু’টি পাথরের খোদাই করা ভাস্কর্য মনে হলেও আসলে হাতের ডিজাইনটি ইস্পাতের তৈরি। তাতে পাথর আর সিমেন্টের প্রলেপ দেয়া হয়েছে। পুরো সেতুটি ফাইবার গ্লাস, কংক্রিট ও ইস্পাতের তৈরি। এই সেতুর কাজ শেষ করতে প্রায় এক বছর সময় লেগেছে আর তা তৈরিতে প্রায় দু’ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে।

কেবল কারে চড়ে পুরো বা-না হিলসের চারপাশ এক ঝলকে দেখে আসা যায়; Image Sorce: blogphuotdanang.com

পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য এর আগেই বা-না হিলসে কেবল কার চালু করা হয়। এছাড়া উপত্যকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ফরাসি আমলের ছোট-বড় অনেক প্রাসাদ আর ক্যাথেড্রাল। তার সাথে ফরাসি অধ্যুষিত বেশ কয়েকটি গ্রাম। ফরাসি স্থাপত্যের এসব নিদর্শন দর্শকদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। ফলে বা-না হিলস অঞ্চলটি পর্যটন শিল্পের এক অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।

ভিয়েতনাম পর্যটন বিভাগ পুরো এলাকাটিকে ফরাসি উপনিবেশিকের অনুলিপি হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছে। সোনালি সেতুকে কেন্দ্র করে পর্যটন বিভাগ বা-না হিলসকে নতুন করে সাজিয়ে তুলেছে। ফরাসি স্থাপত্যশৈলীর দুর্গ, ক্যাথেড্রাল, বাগান- সবকিছুতেই যেন প্রাচীনত্বের ছোঁয়া। 

পুরো বা-না হিলস জুড়ে ফরাসি স্থাপত্যশৈলীর নানা নিদর্শন ছড়িয়ে আছে; Image Sorce: comboasiatours.com

অঞ্চলটিতে নিয়মিত পর্যটকদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। এই বিস্ময় জাগানিয়া স্থাপত্যশিল্পের উপর হাঁটতে হাঁটতে দর্শনার্থীরা পুরো দানাং শহরের দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। সাথে উপরি পাওনা হিসেবে মাথার উপর নীল আকাশে সাদা মেঘের খেলা আর চারপাশের অনন্যসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী, দর্শনার্থীদের মুগ্ধ না করে পারে না! ভিয়েতনামের সরকারি পরিসংখ্যান বিভাগের এক তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালে ২.৮৬ মিলিয়ন বিদেশী পর্যটক ভিয়েতনামের নানা দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনে এসেছেন যা ২০১৭ সালে আসা পর্যটকদের চেয়ে ২৯.৭ শতাংশ বেশি।

ফরাসি উপনিবেশিক আমলে তৈরি ক্যাথিড্রাল; Image Sorce: comboasiatours.com

হো চি মিন সিটি ভিত্তিক টিএ ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচার প্রতিষ্ঠান এই সোনালি সেতুটির নকশা তৈরির দায়িত্বে ছিল। প্রতিষ্ঠানের ডিজাইন প্রিন্সিপাল ভু ভিয়েত আনহ সেতুর নকশা তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। পুরো প্রকল্পটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিল সানগ্রুপ নামের এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

সেতুটিতে গাড়ি চলাচলের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। আগত দর্শনাথীদেরকে পায়ে হেঁটে সেতু পাড়ি দিতে হয়। এ ধরনের সেতু নির্মাণের পেছনের কারণ জানাতে গিয়ে স্থপতি ভু ভিয়েত আনহ জানান যে, এই পৃথিবীর দেবতা, এই বিশাল বসুন্ধরা এবং তার সৃষ্টি সম্পর্কিত ধারণা- বিষয় সেতু নির্মাণের পেছনে কাজ করেছে। সেতুটি নির্মাণের সময় আনহ চেয়েছিলেন সেতুটিকে দেখতে যেন ঈশ্বরের হাতে ধরা এক সোনালি সুতোর মতো মনে হয়।

সেতুর উপর হাঁটতে হাঁটতে পর্যটকেরা পুরো দানাং শহরের দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন; Image Sorce: lonelyplanet.com

সোনালি সেতুর পর পর্যটকদের জন্য ভিয়েতনামে আরও একটি সেতু নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছে টিএ ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচার প্রতিষ্ঠানটি। এর নাম হবে রূপালি সেতু বা সিলভার ব্রিজ। হ্যান্ড অব গডের পর এবারের নকশাটি হবে ‘হেয়ার অব গড’-এর আদলে। ঈশ্বরের হাত দিয়ে যেমন গোল্ডেন ব্রিজটি ধরা আছে, ঠিক তেমনি ঈশ্বর তার চুলের সাহায্যে সিলভার ব্রিজটিকে আঁকড়ে রাখবেন- এমনই ভাবনা পরবর্তী সেতুরও নকশাকার ভিয়েত আনহের ।

ইউনাইটেড নেশনস ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন কর্তৃক প্রকাশিত ২০১৭-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী পর্যটন প্রসারে ভিয়েতনাম সপ্তম স্থানে রয়েছে এবং দেশটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র দেশ যে পর্যটন তালিকায় শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে রয়েছে। দেশটি এ বছরের শেষ নাগাদ ১৫-১৭ মিলিয়ন বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, সে লক্ষ্য অর্জন করতে তারা সক্ষম হবেন। 

ভিয়েতনাম পর্যটন বিভাগ মনে করছে, ভিয়েতনাম ক্রমেই বিদেশি পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় ভ্রমণস্থল হয়ে উঠেছে। শীঘ্রই ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর সাথে ভিয়েতনামও পর্যটন শিল্পে তার প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবে।

বিশ্বের চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/

This article is a Bengali article. This story is about Golden Bridge of Vietnam which helps to increase the tourism industry in the city of Da Nang.

All the sources are hyperlinked inside the article.

Featured Image: bestpricevn.com

Related Articles