Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নতুন ধারার ১০টি স্থাপত্যশৈলী

পৃথিবীর সবচাইতে প্রাচীন সভ্যতা হচ্ছে মিশরীয় সভ্যতা। মিশরীয় সভ্যতায় স্থাপত্যশিল্প থেকে শুরু করে ভাস্কর্য, চিত্রকলা, বিজ্ঞান, গণিতশাস্ত্র, ভাষার ব্যবহার, প্যাপিরাসের উদ্ভাবন প্রতিটা ক্ষেত্রেই মিশরীয়রা ঐশ্বর্যের দাবিদার। তাই বলা হয়ে থাকে, মিশরীয়রা হচ্ছে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্মাতা। যার প্রমাণ মেলে গিজার পিরামিড কিংবা কার্নাক মন্দির অথবা আবু সিম্বলের মন্দির গৃহসহ মিশরীয় সভ্যতার রেখে যাওয়া নিদর্শনসমূহে।

মিশরীয়রা একদিন কালের গর্ভে হারিয়ে যায়; একইভাবে হারিয়ে গেছে পরবর্তী অন্যান্য সভ্যতাগুলোও। তারপর আরো ঘনবসতি হয়েছে পৃথিবী। প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগ পেরিয়ে পৃথিবী এসে দাঁড়িয়েছে এখন উত্তর আধুনিক যুগে। তবে প্রতিটা সভ্যতাই রেখে গেছে তাদের নিজস্ব নিদর্শন, তাদের স্থাপত্যধারা যা দেখে আজও আমরা অবাক হই। যদিও যুগের বিবর্তনে বদলে গেছে স্থাপত্যধারার রীতি, নীতি আর কৌশল।

ভবিষ্যৎ কী হবে তা কেউ জানে না। কিন্তু ভবিষ্যতে কী হতে পারে সে সম্পর্কে মানুষজন সম্যক ধারণা রাখতে পারে। আমরা প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ, আধুনিক যুগ এবং উত্তর আধুনিক যুগের স্থাপত্যধারা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখি, কিন্তু ভবিষ্যতের স্থাপত্যধারা কেমন হতে পারে তা কি আমরা বলতে পারি কিংবা জানি? একটা সময় ছিল যখন মানুষ বহুতল ভবন কিংবা আকাশ ছোঁয়া ইমারতের স্বপ্ন দেখত; এরকম বহুতল ভবন কিংবা আকাশ ছোঁয়া ইমারতের অভাব নেই আজকের দুনিয়া। তাই যদি হয় তাহলে ভবিষ্যতে ইমারত কেমন হবে এমনটা জানতে ইচ্ছা সবারই হয়। তাই, আজ আমরা জানবো এরকম ১১টি স্থাপত্যধারা সম্পর্কে যা বর্তমান বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে গেছে আরো কয়েকশো বছর ভবিষ্যতে।

কাতারের একটি আধুনিক স্থাপত্যধারার নির্মাণকাজ চলছে; Image © Phil Handfoth Source: middleeastarchitect.com

বিখ্যাত স্থাপত্যশিল্পী মার্ক কাশনার দ্য ফিউচার অফ আর্কিটেকচার ইন হান্ড্রেড বিল্ডিং শিরোনামে একটা বই লিখেছেন। যে বইতে তিনি খুব সংক্ষেপে আগামী দিনের স্থাপত্যধারাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বইটা হয়তো দেখতে ছোট বা পাতলা, কিন্তু এতে থাকা চিন্তাধারার জগতটা বিশাল। মার্ক এমন সব নকশা নিয়ে আলোচনা করেছেন যেটা যেকোনো কাঠামোর ক্ষেত্রেই মানানসই, এমনকি সেটা যদি আপনার বাসা হয় তাতেও সমস্যা নেই। মার্ক কাশনার বলেন,

এই যোগাযোগ বিপ্লবের যুগ আমাদেরকে চারপাশে নির্মিত স্থাপত্যধারা সম্পর্কে আমাদের খুব বেশি সমালোচক হিসেবে গড়ে তুলেছে, যদিও সমালোচনাসমূহ কেবলওএমজি আই লাভ দিস কিংবা দিস প্লেস গিভ মি দ্য ক্রিপ্স এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তাতেও আপত্তি নেই। কেননা এই ধরনের সমালোচনাগুলোই ধীরে ধীরে একচেটিয়া স্থাপত্যধারার রীতিকে বদলাতে সাহায্য করবে। 

অ্যাকুয়া টাওয়ার; Image © Victor Delaqua Source: archdaily.com

অ্যাকুয়া টাওয়ার, শিকাগো

৮২ তলার ৮৭৬ ফুট উচ্চতার অ্যাকুয়া টাওয়ারটি হচ্ছে অন্যান্য বহুতল ভবনগুলোর মধ্যে এমন একটি বহুতল ভবন যেটার সম্মুখভাগ ঐ ভবনে বসবাসরত লোকজনের মধ্যে আন্তরিকতার বন্ধন তৈরি করতে সক্ষম। শিকাগোর বৃহত্তম এবং সবচাইতে উঁচু ছাদ বাগানের পাশাপাশি হোটেল, অফিস, আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট, কন্ডোমিনিয়াম এবং পার্কিংয়ের সুব্যবস্থাসম্পন্ন এই অ্যাকুয়া টাওয়ারটি শহর এবং এর জনপদের মধ্যে এক শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করেছে। আপনি যদি একটানা অ্যাকুয়া টাওয়ারের দিকে তাকিয়ে থাকেন তাহলে মার্ক কাশনারের মতো আপনিও বলতে বাধ্য হবেন, ঢেউখেলানো ব্যালকনিও কি বানানো সম্ভব?

অ্যাকুয়া টাওয়ারের সম্মুখভাগ; Image © Butler V. Adams Source: studiogang.com

স্থপতি জ্যিন গ্যাং ২০১০ সালে এই আশ্চর্যজনক এবং দৃষ্টিবিভ্রম ভবনটির নকশা করেছিলেন। একদম অনন্য আর অভাবনীয় কিছু করার লক্ষ্যে তিনি প্রত্যেকটি ব্যালকনিকে এমনভাবে স্থাপন করেন যে এগুলো ব্যবহারযোগ্যতার পাশাপাশি নান্দনিক সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম। অ্যাকুয়া টাওয়ারটিতে এমন এক স্থাপত্যকৌশল ব্যবহার করা হয়েছে যেন মানুষজন আকাশ ছোঁয়া বহুতল ভবনে থেকেও একে অপরের কাছাকাছি, প্রকৃতির কাছাকাছি এমনকি সবুজের কাছাকাছিও থাকতে পারে। ভবনটির উচ্চতার উপর ভিত্তি করে প্রত্যেক তলাতেই আলাদা আলাদা ব্যালকনি দিয়ে ভবনটির স্বতন্ত্র কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

অ্যাকুয়া টাওয়ারের সম্মুখভাগ; Image © Steve Hall Source: studiogang.com

অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রত্যেক তলার ফলকগুলোকে এমনভাবে ঝুলন্ত ব্যালকনিতে রূপান্তর করা হয়েছে, যেন একই তলায় থাকা প্রতিবেশীরা খুব সহজেই এবং যখন তখন একে অপরের সাথে দেখা বা কথা বলতে পারে। শুধু তা-ই নয়, পুরো ভবনের দৃশ্যমান সৌন্দর্য এবং শিকাগো শহরের দৃশ্যও যেন অবলোকন করতে পারে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েই। ভবনটিকে দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে ল্যান্ডস্কেপ ছবিতে থাকা কোনো এক পাহাড় কিংবা পাহাড়ের উপত্যকা বিশেষ।

হারপা কনসার্ট হল অ্যান্ড কনফারেন্স সেন্টার; Image Courtesy: Nic Lehoux Source: olafureliasson.net

হারপা কনসার্ট হল অ্যান্ড কনফারেন্স সেন্টার, আইসল্যান্ড

আইসল্যান্ডের ভাষায় হারপা শব্দের অর্থ হার্প অথবা বাংলায় বীণা। এছাড়াও, আইসল্যান্ডের বসন্তকালের শুরুর মাসটার নামও এই একই নামে এবং সে সময়টা শুভ্র সুন্দর উজ্জ্বল আলোয় পরিপূর্ণ থাকে গোটা শহর। বর্তমানে এই আগ্নেয়গিরি সম্পন্ন দেশটির আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে যে নামটি জড়িয়ে আছে তা-ও ঐ একই নামে- হারপা। শক্ত পাথর এবং স্ফটিক-স্বচ্ছ আবরণের ভিতরের হলঘরটা প্রতিদিনকার নগর জীবনের ব্যাপকতাকে মেলে ধরে। যেখানে বাচ্চারা খেলাধুলা করে, ইয়োগার ক্লাস হয়, কনসার্ট হয়, এমনকি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মেলনে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষেরা এখানে একত্রিতও হয়।

হারপা কনসার্ট হল অ্যান্ড কনফারেন্স সেন্টারের ভেতরের দৃশ্য; Image Courtesy: Nic Lehoux Source: olafureliasson.net

হারপা কনসার্ট হল অ্যান্ড কনফারেন্স সেন্টার হচ্ছে আইসল্যান্ডের একটা জীবন্ত আর চলমান নিদর্শনস্বরূপ। সারাটা বছর জুড়েই এই নান্দনিক ভবনটিতে বিভিন্ন ধরনের উৎসব এবং ইভেন্টের আয়োজন করা হয়ে থাকে। মিউজিক স্কুলের কনসার্ট থেকে শুরু করে পিকনিক, ইন্টারন্যাশনাল গালা পারফরমেন্স এবং এমনকি সম্মিলিত ভোজের আয়োজনও হয়ে থাকে।

হারপা কনসার্ট হলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য; Image Source: en.sinfonia.is/visits/harpa

ড্যানিশ-আইসল্যান্ডীয় শিল্পী ওলাফুর এলিয়াসনের সহযোগিতায় এই ভবনের নকশা তৈরি করা হয়েছে আইসল্যান্ডের চিরাচরিত প্রকৃতির দৃশ্যপটকে ফুটিয়ে তোলার জন্যে। স্ফটিক-স্বচ্ছ আবরণ ভেদ করে নর্ডিক দিনের আলো হলঘরে প্রবেশ করে এক অদ্ভুত ভালোলাগার দৃশ্যপট আঁকে প্রতিনিয়ত। হারপা শিল্প আর সংস্কৃতির বিষয়বস্তুগুলোর মধ্যে এক সামঞ্জস্যতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এবং এটা আইসল্যান্ডসহ পৃথিবীর মানুষদের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।  

কার্ডবোর্ড ক্যাথেড্রাল; Image © Bridgit Anderson

কার্ডবোর্ড ক্যাথেড্রাল, নিউজিল্যান্ড

স্থাপত্যশিল্পীদের মধ্যে জাপানিী স্থপতি শিগেরু ব্যান ভবন নির্মাণে বৈচিত্র্যময় উপকরণ ব্যবহারের জন্য একইসঙ্গে প্রশংসিত এবং নিন্দিত একজন। তার ব্যবহার্য উপকরণের মধ্যে সবচাইতে প্রসিদ্ধ হচ্ছে কার্ডবোর্ড দিয়ে ভবনের কলাম তৈরি এবং জাহাজের পরিত্যক্ত কন্টেইনার দিয়ে ছাদের কাঠামো তৈরি। তিনি দেয়ালহীন বাড়ির নকশা করেন এবং অভ্যন্তরে এমন সব নকশা ব্যবহার করেন যেগুলো দেখতে আসলে চলমান বা মুহূর্তেই পরিবর্তনযোগ্য বলে মনে হয়। প্রথমাবস্থায় এসব শখ কিংবা ব্যবহারিকভাবে শুরু করা হলেও, প্রিটজকার পুরষ্কার জেতার পর থেকে ব্যান এই ধারাটাকে আরো গুরুত্ব সহকারে নেন।

২০১১ সালে নিউজিল্যান্ডে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে দেশটির ক্রাইস্টচার্চ এলাকার বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। শহরটির অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন ১৮৬৪ সালে নির্মিত এংলিক্যান ক্যাথেড্রালটিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঠিক এর দুই বছর পর ধ্বংসস্তূপ খ্যাত এই এলাকাটি আবারো লোকজনের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় ব্যানের জন্যে। এংলিক্যান ক্যাথেড্রালটির বদলে শিগেরু ব্যান কার্ডবোর্ড ক্যাথেড্রালটি নির্মাণ করেন যার সময়সীমা নির্ধারণ হয়েছে আগামী ৫০ বছর। অর্থাৎ, যেহেতু ব্যান কার্ডবোর্ড এবং কন্টেইনার দিয়ে কাজ করেন সে হিসেব মোতাবেক এই উপকরণসমূহ ৫০ বছর অবধি সুরক্ষিতভাবেই টিকে থাকবে। আর যতদিন না এই শহরে স্থায়ী অন্যান্য কাঠামোসমূহ আবার মাথা তুলে না দাঁড়ায় ততদিন অবধি এই শহরের মধ্যমণি হয়ে থাকবে এই কার্ডবোর্ড ক্যাথেড্রাল।

কার্ডবোর্ড ক্যাথেড্রালের ভেতরের দৃশ্য; Image © Bridgit Anderson

এই কার্ডবোর্ড ক্যাথেড্রালটি শুধু মনোমুগ্ধকরই নয়, বরঞ্চ পরিবেশবান্ধবও বটে। অন্তত নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের লোকজন তা-ই মনে করে। কেননা, ব্যান তাদের সম্প্রদায়ের প্রার্থনার জন্য এমন একটি অস্থায়ী গির্জা নির্মাণ করে দিয়েছেন যা বর্তমানে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আগামী ৫০ বছর যেমন এই কার্ডবোর্ড ক্যাথেড্রালটি প্রার্থনা এবং আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকবে, ঠিক একইভাবে অন্যদিকে আরো দৃষ্টিনন্দন এবং পরিবেশবান্ধব ক্যাথেড্রাল নির্মাণে উৎসাহিত করবে এই স্থাপনাটি।

৯৮টি কার্ডবোর্ডের সমান সাইজের পাইপ এবং ৮টি জাহাজের স্টিল কনটেইনারের দ্বারা ইংরেজি বর্ণমালার প্রথম অক্ষর এ-ফ্রেমের মতো কাঠামো দিয়ে তৈরি এমন একটি ভবন নির্মাণ করেছেন শিগেরু ব্যান, বলা হচ্ছে এটি ক্রাইস্টচার্চের সবচাইতে নিরাপদ, এবং ভূমিকম্প-প্রবণতা থেকে মুক্ত একটি ভবন। এই ভবনে ব্যবহৃত কার্ডবোর্ড এবং ছাদের অংশ পুরোটাই এমনভাবে করা হয়েছে যেন পানি বা আগুনের সংস্পর্শেও কোনো ক্ষতি না হয়।

কার্ডবোর্ড ক্যাথেড্রাল; Image © Bridgit Anderson

শিগেরু ব্যান বলেন, 

একটি ভবন কতটা শক্তিশালী হবে সেটা কোনোভাবেই ঐ ভবনের নির্মাণে ব্যবহৃত উপকরণসমূহের উপর নির্ভর করে না, বরঞ্চ কৌশলগত স্থাপত্যবিদ্যার উপর নির্ভর করে। কংক্রিটের ভবনও ভূমিকম্পে গুঁড়িয়ে যাবে, কিন্তু কাগজের ভবনের কিছু হবে না।

মেট্রোপোল প্যারাসোল; Photo © Fernando Alda

মেট্রোপোল প্যারাসোল, স্পেন

২০১১ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার পর থেকে স্থানীয়ভাবে লাস সেটাস (বাংলায় মাশরুম) নামে পরিচিত মেট্রোপোল প্যারাসোল ইতিমধ্যেই কেবল স্পেনের স্যাভিয়া শহরেরই নয় বরঞ্চ পুরো বিশ্বের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই দৈত্যাকৃতির ছাতার ডিজাইন করেছেন জার্মান স্থপতি ইয়ুর্গেন মায়ার এইচ। ধারণা করা হয় এটিই পৃথিবীর সবচাইতে বড় কাঠের স্থাপত্য। ৩০ মিটার উঁচু মাশরুম সদৃশ স্তম্ভ এবং ঢেউ খেলানো মৌচাক সদৃশ ছাদ। বেজমেন্ট থেকে ছাদ অবধি লিফট চলাচলের ব্যবস্থা আছে এবং ছাদের কিছু অংশে হাঁটাচলারও ব্যবস্থা আছে যেখান থেকে শহরটার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা সম্ভব।

মেট্রোপোল প্যারাসোলের উপরিভাগ; Photo © David Franc

পুরো স্থাপত্যটি চারতলা বিশিষ্ট। একদম নিচতলায় আছে অ্যাকুরিয়াম; পাশাপাশি রোমান এবং মুরিশদের থেকে প্রাপ্ত এক বিশালাকার সংগ্রহশালাও আছে। রাস্তা লাগোয়া দ্বিতীয়তলা মূলত স্যাভিয়ার প্রাক্তন সেন্ট্রাল প্লাজার সাথে যুক্ত, যেখানে স্থানীয় মুদি এবং খাবারের দোকান লক্ষ্য করা যায়। আর উপরের দুই তলা, বিশেষ করে ছাদে বিভিন্ন ধরনের কনসার্ট, সেমিনার, সম্মেলন, পথচারী কেন্দ্র কিংবা শহরের দৃশ্য দেখার অঞ্চল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

দূর থেকে মেট্রোপোল প্যারাসোল; Photo © Fernando Alda

প্লাজা দে লা এনকারনেশনের পুনর্নির্মাণের অংশ হিসেবে ক্যাথেড্রাল অফ স্যাভিয়ার থেকে প্রাপ্ত ভল্টসমূহের অনুপ্রেরণায় তৈরি ছয়টি প্যারাসোলের সংযুক্তে বিশালাকার মাশরুমের আদলে স্পেনের সবচাইতে রৌদ্রকরোজ্জল শহরের ছাতা হিসেবে বানানো হয়েছে এই প্যারাসোল। স্থানীয়ভাবে প্রশংসিত এবং সমালোচনার শিকার এই  প্যারাসোলটি দুর্দান্ত, উদ্ভাবনীয় এবং অনন্য এক স্থাপত্যশৈলী যা দেখলে মুগ্ধ হওয়াটাই স্বাভাবিক। যদিও বিশেষ কিছু কারণে এই স্থাপত্যটি আরো বেশি সমালোচনার শিকার হচ্ছে, তা-ও এই বৃহদাকার কাঠের কাঠামোটি ইউরোপের সাংস্কৃতিক এবং বাণিজ্যিক উৎকর্ষতা সাধনে একমাত্র স্থাপত্যশৈলী হিসেবে কাজ করছে এবং করবে।

হায়দার আলিয়াভ সেন্টার; Photo © Hufton+Crow

হায়দার আলিয়াভ সেন্টার, আজারবাইজান

আজারবাইজানের বাকু শহরে একটা ঢেউ খেলানো ভবন আছে যেটা কনক্রিটের বিছানা থেকে জেগে উঠেছে নিজের মহিমা প্রকাশে। এর স্থির শুভ্র সাদা দেয়াল দেখে মনে হয় যেন হঠাৎ করেই ঢেউটা এর মধ্যবর্তী স্থানে এসে থমকে গেছে। পুরো শহরে এই রকম স্থাপত্য আর দ্বিতীয়টি নেই। এই হায়দার আলিয়াভ সেন্টারকে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গণ্য করা হয় এবং আধুনিক আজারবাইজান আর আধুনিক বাকু শহরের প্রতীক হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।

হায়দার আলিয়াভ সেন্টার; Photo © Iwan Baan

জাহা হাদিদ, এই ভবনটির রচয়িতা, যিনি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একজন স্থপতি, যিনি সম্মানসূচক প্রিটজকার আর্কিটেকচার প্রাইজ বিজয়ী এবং এই হায়দার আলিয়াভ সেন্টারের নকশার জন্য ডিজাইন অফ দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ডেও ভূষিত হন। ভবনটির নির্মাণ কৌশলের সামগ্রিক দিক বিবেচনা করলে বলা যায়, ভবনটি মাটি থেকে ঢেউ খেলে আকাশের উচ্চতায় উঠে যাচ্ছে এবং আবার ধীরে ধীরে তা মাটির দিকেই ফিরে আসছে। বাকু শহর জুড়ে আধুনিক সোভিয়েত স্থাপত্যধারার ভবনই বেশিরভাগ চোখে পড়লেও এই ভবনটি একদমই ভিন্নতা এবং নিজস্বতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভবনের ভেতরে, শূন্য সাদা জায়গা এবং বক্ররেখাসমূহ এক শান্ত পরিবেশের সৃষ্টি করে।

হায়দার আলিয়াভ সেন্টার; Photo © Hufton+Crow

ভবনটির মধ্যখানে একটা যাদুঘর, একটা গ্যালারি হল এবং একটা অডিটোরিয়াম আছে। ভবনের পাতলা এবং ভাঁজ করা যায় এমন দেয়ালগুলো আসলে আজারবাইজানের সাংস্কৃতিক এবং প্রাকৃতিক সম্পর্কের এক মেলবন্ধন সৃষ্টি করেছে। পুরো ভবনটির নকশার প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল আজারবাইজানের অতীত এবং ভবিষ্যতের সমস্ত উৎসর্গের প্রতিনিধিত্ব করা এবং ভবনটি যেন এর নিজস্ব স্লোগানের প্রমাণ রাখে, যোগ্যতাসম্পন্ন ভবিষ্যতের উৎসর্গে

নিউটাউন ক্রিক ওয়েস্টওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট; Photo © Stefen Turner

নিউটাউন ক্রিক ওয়েস্টওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, নিউ ইয়র্ক

নতুন ভবন নির্মাণের চাইতে বিদ্যমান ভবনটিকে পুনঃসংস্কার করা যেতে পারে- এই যেমন খাদ্যশস্যের একটা গুদাম পরিণত হলো আর্ট মিউজিয়ামে কিংবা একটা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট পরিণত হলো একটা আইকনে।

এমনটাই বলেছিলেন মার্ক কুশনার। এবং মজার বিষয় হচ্ছে কুশনারের এই ধারণার বাস্তব উদাহরণ পাওয়া যায় নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন শহরে গেলে, যেখানে নিউটাউন ক্রিক ওয়েস্টওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপিত। ভেঙে ফেলা এবং নতুন করে গড়ার বিপরীতে তারা পুনঃসংস্কারে হাত দেয় এবং এখন তারা বিশালাকারের ডাইজেস্টর এগ বানাতে সক্ষম হয়েছে। ডাইজেস্টর এগ বলতে পানি পরিশুদ্ধকরণ যন্ত্রকে বোঝান হয়েছে।

ছত্রপতি শিবাজী এয়ারপোর্ট; Photo @ Robert Polidori

ছত্রপতি শিবাজী এয়ারপোর্ট, মুম্বাই

ছত্রপতি শিবাজি এয়ারপোর্ট হচ্ছে মুম্বাই শহরের অন্যতম প্রধান বিমানবন্দর। যদিও আগে এটি সাহার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামেই পরিচিত ছিল। সান্তা ক্রুজ এবং সাহার এলাকার প্রায় ১৪৫০ একর জায়গা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে এই দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরটি। এটি ভারতের সবচাইতে বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং জাতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র।

সৌমায়া মিউজিয়াম; Photo @ Raul Soria

সৌমায়া মিউজিয়াম, মেক্সিকো

১৫০ ফুট লম্বা কাঠামোটি সাংস্কৃতিক এবং বাণিজ্যিক এলাকার প্রাণকেন্দ্র প্লাজা কারসোর একদম অন্তঃস্থল থেকে উদয় হয়েছে, যেটির নকশা করেছেন ফার্নান্দো রোমেরো এবং সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন ফ্রাঙ্ক গেহরি। এই সৌমায়া মিউজিয়ামের বাহিরের অংশে ষড়ভুজাকৃতির প্রায় ১৬,০০০ অ্যালুমিনিয়ামের প্লেট ব্যবহার করা হয়েছে, যেগুলো একটার থেকে অন্যটা খানিকটা হলেও দূরে অবস্থিত। ফলে সূর্যের আলো প্রতিটা প্লেটে প্রতিবিম্বতায় অদ্ভুত এক আলো-ছায়ার খেলা সৃষ্টি করে।

২৮টি বাঁকান বিভিন্ন আকার এবং আকৃতির স্টিলের স্তম্ভ দিয়ে নির্মিত যাদুঘরটি দাঁড়িয়ে আছে ষড়ভুজাকৃতির প্রায় ১৬,০০০ অ্যালুমিনিয়ামের প্লেটের চাদর গাঁয়ে জড়িয়ে। কাঁচের মতো প্রতিবিম্ব তৈরি করতে সক্ষম এই প্লেটসমূহ বলতে গেলে আবহাওয়ার প্রতিবিম্বটাও তৈরি করে এবং ভবনের ভেতরটা শীতল রাখতে সহায়তা করে।

ফ্রগ কুইন; Photo @ Zachariadis

ফ্রগ কুইন, অস্ট্রিয়া

ফ্রগ কুইন নামে পরিচিত ভবনটি আসলে অস্ট্রিয়ার গ্রাজ শহরের একটি প্রকৌশলী সংস্থার অফিস এবং সংযুক্ত পরীক্ষাগারের সুব্যবস্থা সম্পন্ন একটি ভবন। কিউবিক পিক্সেলের আদলে এই ভবনটির নকশা করেছে স্প্লিটাররেক আর্কিটেকচার ফার্ম। ভবনটিকে দেখলে একটা দৈত্যাকৃতির পিক্সেল বাক্স বলে মনে হয়। দূর থেকে দেখে কেবল সাদা-কালো বাক্স মনে হলেও ভবনটির কাছে গেলে এর আসল সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। একজন দর্শক ভবনটার যত কাছে যাবে এতে থাকা কালো আর সাদা চারকোনাকৃতির প্লেটগুলোতে থাকা অলঙ্কারসমৃদ্ধ কারুকাজ ততই বেশি চোখে পড়বে। অ্যালুমিনিয়াম বোর্ডের মধ্যে বিভিন্ন সিল্ক-স্ক্রিন প্রিন্টের সাহায্যে বাইরের দেয়ালটা গড়ে তোলা হয়েছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে ভবনটিকে আবার দ্বি-মাত্রিক ছবির মতোই লাগে।

সোশ্যাল কমপ্লেক্স; Photo @ Ricardo Oliveira Alves

সোশ্যাল কমপ্লেক্স, পর্তুগাল

পর্তুগালের অ্যালক্যাবিডেসের সোশ্যাল কমপ্লেক্স হচ্ছে সোশ্যাল ফাউন্ডেশন ফর দ্য ব্যাংকিং সেক্টরের আবাসস্থল, যা মূলত বসবাসের পাশাপাশি নাগরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করেছে। ২০১২ সালে শেষ হওয়া এই প্রজেক্টটির আওতায় মোট ৫২টি বাড়ি এবং একটি আশ্রয়ভবন আছে। পাশাপাশি চতুর্দিকে প্রসারিত রাস্তাসমূহ পথচারীদের দিনের বেলা সূর্যের আলো থেকে বাঁচায় ভবনগুলোর ছায়াতে এবং রাতের বেলা উজ্জ্বল আলো দেয় ভবনের আলোয়। এই ভবনগুলোর ছাদগুলো বিশেষভাবে বানানো হয়েছে। কোনো জরুরি মুহূর্তে ভবনের কেউ যদি এলার্ম বাটনে চাপ দেয় তাহলে সংকেতটা সরাসরি মূল ভবনে চলে যাবে এবং সাদা ভবনটা আচমকা লাল রঙে পরিণত হবে।

বিশ্বের চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/

ঐতিহাসিক নানা স্থাপত্য নিয়ে জানতে পড়ুন এই বইটি

১) ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও আমাদের ঐতিহ্য

This article is in Bangla Language. This article featured the future of architecture in 10 buildings. 
Necessary references have been hyperlinked inside the article. 

Feature Image: podshipnikivse.com 

Related Articles