Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের অজানা উৎসব

পৃথিবী জুড়েই রয়েছে অযুত মানুষের নিযুত সংস্কৃতি। সেই সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে নানা রকম অনুষ্ঠান আর উৎসব। দীর্ঘ ঐতিহ্য ও ইতিহাস রয়েছে এসব অনুষ্ঠানের পেছনে। চলুন জেনে আসি পৃথিবীর নানা প্রান্তের এমন কিছু আয়োজন নিয়ে।

মহা মস্তক অভিষেক, ভারত

৯৮১ খ্রিস্টাব্দ হতে উদযাপিত হয়ে আসছে এই উৎসব, ১৭ মিটার উঁচু বিশাল আকৃতির এক শিলা দিয়ে তৈরি বাহুবলীর একটি মূর্তি অনুমোদিত হওয়ার পর থেকে। বাহুবলী কথাটির অর্থ হলো ‘হাতের জোর’। আর বাহুবলী হলেন জৈন সম্প্রদায়ের লোকজনদের অনেক সম্মানিত একজন দেবতা। তাদের বিশ্বাস, বাহুবলীর বসবাস ছিলো প্রায় বিশ হাজার বছর আগে এবং সেই সময়ে তিনি তার ভাই ভারতকে আভানাথ রাজ্যের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে  চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। তার প্রকাণ্ড বাহু শক্তির বলেই তার সহোদর তার হাতেই জীবন হারায়। নিজের এই কাজটির জন্য তিনি বিক্ষুব্ধ হয়ে যান এবং প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ কাপড় পরিধান প্রত্যাখ্যাত করেন। এছাড়াও তিনি তার সব চুল ছেঁটে ফেলেন, বিবস্ত্র অবস্থায় অনড় হয়ে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকেন গোটা একটি বছর।

মূর্তি স্থাপনের অনুষ্ঠানের আয়োজনে প্রায় বিশ লক্ষ ভক্ত উপাসকেরা দশ দিন ধরে বাহুবলীর মূর্তি ধৌত করেন। এই মূর্তি ধৌতকরণ এতটাই মঙ্গলজনক মানা হয় যে, ২০০৬ সালে একজন বিশিষ্ট জৈন ১.৩ মিলিয়ন ডলারে নিলাম জিতে সবার প্রথমে বাহুবলীর মূর্তি ধোয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।

বাহুবলীর সেই প্রতিমূর্তি, Image Source: We Heart

আয়োজনের সময়

অনুষ্ঠানটি মূলত প্রতি বারো বছরে একবার আয়োজন করা হয়ে থাকে। সর্বশেষ ২০০৬ সালে এটি অনুষ্ঠিত হয়, সেই হিসেবে পরবর্তীতে ২০১৮ সালে এর আয়োজন করা হবে।

লিভিং ঘোস্ট (এগুনগুন), ডাকন গ্রাম, বেনিন

আফ্রিকান কালো জাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিকের উৎপত্তি পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিন থেকে। সেখানে একটি গোপন সোসাইটি রয়েছে, যার নাম এগুনগুন। এই সোসাইটির সদস্যদের বলা হয়ে থাকে ‘জীবন্ত আত্মা’। তাদের মধ্যে বিশ্বাস আছে যে, এগুনগুন সদস্যরা অন্য কোনো ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হয় এবং এগুনগুনেরও মৃত্যু হয়। এগুনগুন সোসাইটির সদস্যরা আলখাল্লা আর ওড়নার সাথে বিভিন্ন রঙের কাপড় পরে নিজেদের মুখ ঢেকে রাখে যেন তাদের না চেনা যায়। তাদের মূল কাজ হলো, গ্রামের লোকজনের মাঝে দ্বন্দ্ব-বিরোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া। সেখানকার গ্রামের লোকজনের বিশ্বাস এই যে, তাদের উপর পূর্বপুরুষদের আত্মার ভর করে এবং তাদের মাধ্যমেই বিরোধের সিদ্ধান্ত দেয়। তাই এগুনগুনের সিদ্ধান্তকে তারা সৃষ্টিকর্তার সিদ্ধান্ত বলে মনে করে। যেকোনো তর্ক-বিতর্কের মীমাংসার জন্য একের অধিক গুনগুন বৈঠক করা হয়। সে সময়ে তাদের হাতে লাঠি থাকে। যেহেতু এগুনগুন কাউকে স্পর্শ করলে তার এবং এগুনগুন দুজনেরই মৃত্যু হয়, তাই এগুনগুন এবং সাধারণ লোকের মাঝে বিশেষ দূরত্ব থাকে। এগুনগুনদের বিশ্রামের সময় পাহারাদার তাদেরকে পাহাড়া দেয়। তাদের সাথে ঢোল বাজানোর লোক থাকে। ঢোলের তালে তালে এগুনগুনরা নাচে।

আলখাল্লা পরিধেয় এগুনগুন-এর সদস্যরা, Image Source: The Sun

আয়োজনের সময়

এগুনগুনদের সাধারণত উইয়েদাহ্‌র উত্তর দিকের গ্রামগুলোতে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে যায়। স্থানীয় একজন মধ্যস্থতাকারী থাকেন, যিনি বলতে পারেন যে গ্রামের ঠিক কোন জায়গায় এগুনগুনদের পাওয়া যাবে।

গ্রেট মোনলাম ফেস্টিভ্যাল, লাবুলেং আশ্রম, পূর্ব তিব্বত

লাসার বাইরে ১৭০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া লাবুলেং তিব্বতের মুখ্য আশ্রম শহর হিসেবে পরিচিত। এটি দালাই লামার অনুসারী হলুদ টুপি সম্প্রদায়ের কেন্দ্রবিন্দু। চার দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের এই আয়োজনে গোটা সন্ন্যাসী গোষ্ঠী তাদের মহান তর্ক-বিতর্ক পেশ করেন জীবিত বুদ্ধের উপস্থিতিতে। এর উদ্দেশ্য থাকে মূলত প্রজ্ঞাময়দের আশীর্বাদের জন্য প্রার্থনা করা। এই জায়গাটির অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,২৬০ মিটার উঁচুতে এবং যে সময়ে এর আয়োজন করা হয়, তখন সেখানকার তাপমাত্রা -২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে আসে। সন্ন্যাসীরা তখন প্রবল তুষার ঝড়ের মধ্যেও পুরোটা সময় সেখানে অবিচলিত অবস্থায় বসে থাকেন।

প্রজ্ঞাময়দের আশীর্বাদের জন্য প্রার্থনা করা হয় এই আয়োজনে; Image Source: dalje.com

আয়োজনের সময়

দ্য গ্রেট মোনলাম ফেস্টিভ্যাল তিব্বতীয় পঞ্জিকা অনুযায়ী প্রথম চন্দ্র মাসের (সাধারণত ফেব্রুয়ারির দিকে) অনুষ্ঠিত হয়। তিব্বতের নতুন বছর শুরুর অগ্রদূত হিসেবে অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজন।

গুড ফ্রাইডে, অ্যান্টিগুয়া গুয়াতেমালা

মানবজাতির জন্য যিশু খ্রিস্টের আত্মত্যাগ স্মরণ করার জন্য ইস্টারের পঁয়তাল্লিশ দিন আগে থেকে একটি বিশেষ কর্মসূচি শুরু হয় এবং একে বলা হয় প্রায়শ্চিত্তকাল। এই সময়সীমায় রবিবার দিনগুলো ছাড়া প্রতিদিনই বিভিন্নভাবে নিজেদের পাপের জন্য অনুতাপ প্রার্থনা করেন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা। উপবাস, নিয়মিত প্রার্থনা আর পাপকর্মের স্বীকারের মাধ্য দিয়ে পালন করা হয় প্রায়শ্চিত্তকাল। রবিবার ছাড়া উপবাসের এই কর্মসূচি চলে চল্লিশ দিন ধরে। এছাড়া প্রায়শ্চিত্তকাল চলার সময়ে প্রতি শুক্রবার বিশেষভাবে প্রায়শ্চিত্ত করেন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা। এর কারণ হলো বাইবেলের মতে, যিশু খ্রিস্টের মৃত্যু হয়েছিলো শুক্রবার ঠিক দুপুর তিনটায়। ইস্টার সানডের আগের শুক্রবার তাই নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় ‘গুড ফ্রাইডে’।

স্টার সানডের আগের শুক্রবার পালন করা হয় ‘গুড ফ্রাইডে’; Image Source: mattbastone.wordpress.com

রক্তবর্ণ পোশাকে মোড়া হাজার হাজার অনুতপ্ত ব্যক্তি ইস্টার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য সেন্ট্রাল আমেরিকার সর্বত্র থেকে যাত্রা শুরু করে। ভোর থেকে রোমের সেনাপতিরা গুয়াতেমালার প্রাচীন শহরের সাজানো রাস্তায় রাস্তায় যাত্রা (মার্চ) করে। সে সময় তাদের পরনে থাকে কালো রঙের কাপড়। এই দিন যিশু খ্রিস্টের মৃত্যু শোক অনুভব করতে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীর বিভিন্ন গির্জায় একত্রিত হয়ে বিশেষ প্রার্থনা করে থাকেন।

ভিরহেন ডেল কারমেন ফেস্টিভ্যাল, পোকারটাম্বো, পেরু

হাজার বছরের পুরনো এই উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে স্পেনের উপকূলবর্তী শহর ও মাছ ধরার গ্রামগুলো। স্পেনের ভাষায় এই উৎসবটির নাম ফিয়েস্তা ডেল দিয়া দে ভিরহেন ডেল কারমেন। এই উৎসবটিকে নাবিক ও জেলেদের রক্ষাকর্তা হিসেবে মানা হয়। জাবেগাস্‌ নামের সাজানো মাছ ধরার নৌকা নিয়ে দৃষ্টিনন্দন এক উপকূলবর্তী শোভাযাত্রা সমুদ্রে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়। এসময়ে তাদের সাথে থাকে মহামূল্যবান কার্গো, যা মূলত ভিরহেন ডেল কারমেনের প্রতিমূর্তি। তাদের বিশ্বাস যে, এই প্রতিমূর্তি মাছ ধরার জায়গাগুলোতে আশীর্বাদ করেন। উজ্জ্বল রঙিন পতাকা দিয়ে সাজানো বিভিন্ন জাহাজ একেবারেই লোকবোঝাই থাকে। গোধূলি বেলায় আবছা অন্ধকার আকাশের নিচে অধীর আগ্রহে তারা অপেক্ষা করে নাবিক, জেলে, পাদ্রী ও কর্তৃপক্ষের জন্য, যারা স্ট্যাচু অব ভার্জিন (কুমারীর মূর্তি) এমন একটি জাহাজে করে নিয়ে যায়, যা পুরো শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দান করে।

উৎসবটিকে নাবিক ও জেলেদের রক্ষাকর্তা হিসেবে মানা হয়; Image Source: YouTube

আয়োজনের সময়

প্রতি বছর ১৬ জুলাইয়ের দিকে আয়োজিত হয় এই অনুষ্ঠানটি।

পোউং ডাও উ প্যাগোডা ফেস্টিভ্যাল, ইনলে লেক, মিয়ানমার

আঠারো দিন ব্যাপী আয়োজিত এই উৎসবটি শান প্রদেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। সারি সারি নৌকার এক শোভাযাত্রায় পোউং ডাও উ প্যাগোডা থেকে বুদ্ধের পাঁচটি প্রতিমূর্তি থেকে চারটি প্রতিমূর্তি রয়্যাল কারাওইয়েইক বার্জে (রাজকীয় নৌকা) স্থানান্তর করা হয়। তার আশেপাশে, সামনে-পিছনেও অনেক নৌকা থাকে এবং সেই নৌকাটি সহ এই নৌকাগুলোও প্রায় শ’খানেক রঙিন পোশাক পরা মানুষজন এক পা দিয়ে বৈঠা বেয়ে নিয়ে যান। রয়্যাল বার্জে (রাজকীয় নৌকা) ইনলে লেকের আশেপাশের চৌদ্দটি গ্রামে থামে। সেই গ্রামগুলোর প্রধান আশ্রমগুলোতে প্রতিমূর্তিগুলোকে এক রাতের জন্য রাখা হয়।

আঠারো দিন ব্যাপী চলে এই আয়োজন; Image Source: Indochina Travel

আয়োজনের সময়

এই উৎসবটি বার্মিজ মাস থাদিংইয়িউতয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এই মাসটি হলো বার্মিজ চান্দ্রমাসের পঞ্জিকা অনুযায়ী ৭ম মাস, অর্থাৎ ইংরেজি অক্টোবর/ নভেম্বর মাসের দিকে।

ব্ল্যাক স্নেক ড্যান্স, অ্যাপেন্ডা গোষ্ঠী, পাপুয়া নিউ গিনি

অ্যাপেন্ডা ক্ল্যান হলো পাপুয়া নিউ গিনির প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি আদিবাসী গোষ্ঠী। বার্ষিকভাবে তারা একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যার নাম সিং-সিংস্‌। এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো আদিবাসী সংহতি এবং লোকবল প্রকাশ করা। পাপুয়া নিউ গিনির উত্তর উপকূলবর্তী রাজ্য মরোবের কাছাকাছি লেহ-তে সিং-সিং অনুষ্ঠানেই আদিবাসী গোষ্ঠীরা ব্ল্যাক স্নেক ড্যান্সের আয়োজন করে থাকে।

অ্যাপেন্ডা গোষ্ঠীর আয়োজিত ব্ল্যাক স্নেক ড্যান্স; Image Source: Leggypeggy.com

আয়োজনের সময়

দ্য মরোবে সিং-সিং অনুষ্ঠানের ব্ল্যাক স্নেক ড্যান্স উদযাপন করা হয় সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে।

ফিচার ইমেজ- Vimeo

Related Articles