Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অভিনব বড়দিন পালনে আফ্রিকান দেশগুলো

‘আফ্রিকা’ নামটি শুনলেই খাঁ খাঁ মরুভূমি, কড়া রোদ্দুর আর জঙ্গলাকীর্ণ পথপ্রান্তরের দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে। দৈন্য, অসহায়ত্ব আর সংগ্রামী জীবনযাত্রায় আভিজাত্যের ছোঁয়ায় কিছু করতে চাওয়াটা বেমানান শোনায়। তো এই আফ্রিকাও, আসলে পুরো আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে কিন্তু এই আভিজাত্যের বড়দিন বা ক্রিসমাস পালিত হয় প্রতি বছর ২৫ শে ডিসেম্বরে। বড়দিন মানেই যেমন অনেকের কাছে লোভনীয় কেক, সান্তা ক্লজের উপহার সামগ্রী আর আলোকসজ্জায় সজ্জিত ঝাউগাছ, আফ্রিকার দেশগুলোতেও কী তা-ই? নাকি ভিন্ন ধরনের আয়োজন হয় সেখানে? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

আফ্রিকায় খ্রিস্টধর্ম

ধর্মীয় উৎসব সম্পর্কে জানবার আগে আফ্রিকায় খ্রিস্টধর্মের শুরুটা জানা যাক। আফ্রিকায় খ্রিস্টধর্মের সূচনা হয়েছিল সেই প্রথম শতাব্দীতে। শুরুটা ছিল মিশর থেকে, যা চতুর্থ শতাব্দীর মধ্যেই আফ্রিকা মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর ইউরোপের আগেই খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার ঘটেছিল উত্তর আফ্রিকায়। তবে ইসলাম ধর্মের প্রচারে খ্রিস্টীয় ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। এছাড়াও অনেকেই আফ্রিকান সনাতন ধর্মাবলম্বী হয়ে ছিলেন। বর্তমানে আফ্রিকায় সর্বাধিক পালিত দুটি ধর্মের মধ্যে এটি একটি। ২০১৮ সালের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, আফ্রিকায় ৬৩১ মিলিয়ন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী রয়েছে, সংখ্যাটি অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় বেশিও বটে।

মহাদেশ জুড়ে আয়োজনে বিভিন্নতা

আফ্রিকা মহাদেশে স্বাধীন দেশ রয়েছে ৫৪টি এবং আন্তঃমহাদেশীয় দেশ একটি। এই ৫৫টি দেশে বড়দিন পালনে রয়েছে বৈচিত্র। সাদৃশ্য পাওয়া যায় গির্জায় যাওয়া এবং ক্যারোল বা স্তুতি সঙ্গীত গাওয়া, উপহার আদান-প্রদান প্রভৃতি ক্ষেত্রে। আফ্রিকায় গির্জায় যাওয়াকে বড়দিনের প্রধান অংশ বলা চলে, যেখানে যিশুখ্রিস্টের জন্ম নিয়ে আলোচনা, স্তুতি গান গাওয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে নাচ পরিবেশিত হয়। এখানে কয়েকটি দেশের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

ইথিওপিয়ায় ক্রিসমাস পালন

ইথিওপিয়ায় এখনো ইংরেজি পঞ্জিকার পরিবর্তে জুলিয়ান পঞ্জিকা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জুলিয়ান পঞ্জিকানুযায়ী, বড়দিন ২৫ ডিসেম্বর হয় না, বরং হয় ৭ জানুযারি। অর্থাৎ ইথিওপিয়ায় জানুয়ারির ৭ তারিখে বড়দিন উৎযাপন করা হয়ে থাকে। ইথিওপিয়ান গির্জায় বড়দিন উদযাপনের বিষয়টিকে তারা ‘গ্যানা’ বা ‘গেনা’ বলে আখ্যায়িত করে থাকে।

ইথিওপিয়ান ‘গ্যানা’; Image Source: Amazing Ethiopia

ইথিওপিয়ার বেশিরভাগ খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীগণ খ্রিস্টের আবির্ভাবের জন্য এই দিনকে সম্মান জানিয়ে বড়দিনের ৪৩ দিন আগে থেকে উপবাস করেন। একে বলা হয় ‘নবীদের উপবাস’। নভেম্বরের ২৫ তারিখ থেকে শুরু করে বড়দিনের আগের দিন পর্যন্ত তারা এই প্রথা পালন করেন। এই সময়টা তারা দিনে একবার আহার গ্রহণ করে থাকেন এবং আহারে সর্বপ্রকার মাংস, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার ও মদ পরিহার করা হয়ে থাকে।

বড়দিনের দিন তারা গ্যানার (গির্জায় ক্রিসমাস পালন) জন্য সকলে সাদা রঙের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ‘নেটেলা’ পরে থাকে। নেটেলা হলো পাতলা সাদা সুতির কাপড়ের টুকরো, যাতে উজ্জ্বল বর্ণের পাড় থাকে এবং অনেকটা শাল গায়ে জড়ানোর মতো করে পরা হয়। ক্রিসমাসের সন্ধ্যা ঠিক ৬টায় তারা গির্জায় চলে যান এবং রীতিপালন শেষ হয় রাত ঠিক ৩টায়।

তাদের গির্জাগুলোতে তিনটি বৃত্ত থাকে। হাতে একটি মোমবাতি নিয়ে স্তুতি গাইতে গাইতে সকলে এক এক করে এই তিনটি বৃত্ত তিনবার প্রদক্ষিণ করে। মাঝের বৃত্তটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কেননা তাদের বিশ্বাস, এই বৃত্তে স্বর্গের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব।

ঐতিহ্যবাহী বড়দিনের খাবারের মধ্যে রয়েছে ‘ওয়াট’, যেটি মাংস, ডিম, সবজি এবং বেশ ঝাল দিয়ে ভাপে বানানো হয়। ওয়াট খাওয়া হয় ‘ইনজেরা’ নামক পাতলা রুটি দিয়ে।

ওয়াট এবং ইনজেরা নামক খাবার © Rama

তবে এখানেই শেষ নয়। গ্যানা পালনের ১২ দিন পর, অর্থাৎ ১৯ জানুয়ারি তিনদিন ধরে ‘টিমকাত’ পালন করে, যেখানে ছোট ছোট বাচ্চারা মাথায় মুকুট এবং শরীরে গাউন পরে গির্জা প্রদক্ষিণ করে। এসময় বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়ে থাকে।

ইথিওপিয়ায় বাচ্চাদের ‘টিমকাত’ পালন; Image Source: Fklm Tours

‘মেরি ক্রিসমাস’কে ইথিওপিয়ার ভাষায় বলা হয় ‘মেলিকাম গেনা’!

সিসিলিতে ক্রিসমাস পালন

আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট দেশ হলো সিসিলি। ভারত মহাসাগরে ১১৫টি দ্বীপ নিয়ে গড়ে ওঠা এই সিসিলি সৌন্দর্যপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গীয় স্থান। সিসিলিতে বড়দিন পালিত হয় বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে। এখানে বড়দিন মানে খাবার, পরিবার আর সৈকতে আড্ডা।

সিসিলিতে বড়দিনের আয়োজন শুরু হয়ে যায় নভেম্বর মাস থেকে। ক্রিসমাস ডে’র আগের চারটি রবিবারে খ্রিস্টের আবির্ভাব পালন শুরু হয় গির্জাগুলোতে। ২৪ ডিসেম্বর মধ্যরাতে সবাই জড়ো হয়ে ‘ক্রিসমাস ইভ’ পালন করে স্তুতি গান গায়। আবার ২৫ তারিখ সকালে জড়ো হয়ে ছোট যিশুর জন্ম উদযাপন করে। বাচ্চারা ২৫ তারিখে গির্জায় এক সেন্ট করে দান করে থাকে। অনেকেই সকালে আগে সমাধিক্ষেত্রে গিয়ে নিজেদের গত হওয়া পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে।  

সিসিলিতে সপরিবারে ক্যারোল গাওয়া হচ্ছে; Image Source: Udiscover Music

চাকচিক্য আর জাঁকজমকে পরিপূর্ণ থাকে সিসিলির রাজপথ এবং শহর। পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের মিলন উৎসবের ক্ষেত্র হয়ে ওঠে সমুদ্র সৈকত। শ্যাম্পেনের বোতল ঝাঁকিয়ে উৎসবের শুরু হয় এবং জমপেশ খাওয়া-দাওয়া আর নাচগান তো আছেই, আছে উপহার বিনিময়ের প্রথাও।

গণপ্রজাতান্ত্রিক কঙ্গো

কঙ্গোতে বড়দিন মানে শুধুই ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবে উপহার আদান-প্রদানের ব্যাপারগুলো এদের মাঝে দেখা যায় না। উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো গির্জা। সেখানে বৃহৎ পরিসরে সঙ্গীতসন্ধ্যা পালিত হয়ে থাকে। পাশাপাশি থাকে নাটক মঞ্চায়ন। নাটকে যারা অভিনয় করেন তারা তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকেন সবচেয়ে ভাল অভিনয় প্রকাশের। সন্ধ্যা থেকে শুরু হরে মোটামুটি রাত একটা পর্যন্ত চলে এই নাটক।

গণতান্ত্রিক কঙ্গোতে চলছে নাটক; Image Source: Olalecan Oduntan

গাম্বিয়া

গির্জায় যাওয়া, প্রার্থনা করা, ক্রিসমাস ট্রি সজ্জিত করা ইত্যাদির পাশাপাশি গাম্বিয়ার মানুষেরা কুচকাওয়াজে অংশ নেয় হাতে বড় বড় ‘ফানাল’ নামক লন্ঠন নিয়ে। এই ফানালগুলোর আকৃতি হয় নৌকার মতো, নতুবা বাড়ির মতো। এই কুচকাওয়াজ প্রথা গাম্বিয়ার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য।

ঘানা

ঘানায় বড়দিন পালন ডিসেম্বরের ২০ তারিখ থেকে শুরু হয়ে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে থাকে। ঘানায় প্রায় ৬৬টি ভাষা ব্যবহারকারী গোষ্ঠী রয়েছে এবং প্রত্যেকের রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য ও জীবনযাত্রার ধরন।

ঘানা জুড়ে ক্রিসমাস ইভ শুরু হয় গির্জা প্রদর্শনীর মাধ্যমে, যেখানে সারারাত চলে ড্রাম-বাজনা এবং নাচ-গান। বাচ্চারা নাটিকা উপস্থাপন করে। সকলে নিজেদের ভাষায় স্তুতি পাঠ করে থাকে, কেননা, তাদের মতে, মাতৃভাষাই ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগের উত্তম মাধ্যম।

ঘানায় বাহারি পোশাকে বাচ্চাদের ক্রিসমাস পালন; Image Source: Kuulpeeps

ঘানার ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে রয়েছে ‘অকা স্যুপ’, ‘ফুফু’ (ভাত এবং মিষ্টি আলু ভর্তা) এবং মাংস। উপহার আদান-প্রদানের প্রথা ঘানার সর্বত্রই দেখা যায়।

মালয়

অন্যান্য সবকছুর সাথে চোখে পড়ার মতো একটি বিষয় রয়েছে মালয়ে। ছোট ছোট বাচ্চারা ক্রিসমাসের দিন বাড়িতে তৈরি বাদ্যযন্ত্র নিয়ে রাস্তা দিয়ে নেচে নেচে গান গেয়ে বেড়ায় এবং বাড়ি বাড়িও যায়। বাড়িগুলো থেকে তারা টুকটাক অর্থ উপহার হিসেবে পেয়ে থাকে, অনেকটা ঈদের সময় আমাদের দেশের বাচ্চারা যেমন সালামি জোগাড় করে বেড়ায় ঠিক তেমনই। 

অন্যান্য

মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে তেমন ঘটা করে বড়দিন পালিত হয় না। অনেকক্ষেত্রে তা ছুটির দিনও নয়, যেমন আলজেরিয়া বা সেনেগালে। আবার মরক্কোতে বড়দিন পালন পুরোপুরি যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো। আর খাবার-দাবারের ক্ষেত্রে সকলেই এই উৎসবমুখর পরিবেশে একটু ভাল খাবারের আয়োজনের চেষ্টা করে থাকে। সেখানে লোভনীয় কেক থাকতে হবে ব্যাপারটি কিন্তু আফ্রিকায় তেমন নয়।  

This article is in Bangla language. It is about the christmas celebration across the countries of Africa. Their tradition, rituals, foods etc. have been described in the article. References have been hyperlinked inside the article.

Featured Image Source: Cometo Capetown

Related Articles