Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফিডব্যাক: বাংলা ব্যান্ড জাগরণের এক সফল পথিকৃৎ

বাঙালির অন্যতম বড় উৎসব পহেলা বৈশাখ এলেই ঘরে ঘরে শুরু হয়ে যায় উৎসবের মাতন আর সুরের আন্দোলন, বাসন্তী রং শাড়ি পড়ে সুন্দরী ললনাদের মেলায় ঘুরতে যাওয়ার উপক্রম, রমনা বটমূলের গান আর প্রখর রোদ উপেক্ষা করে রাজপথ জুড়ে প্রাণবন্ত সব তরুণ-তরুণীদের ভিড়; তখন আপন মনেই বলতে থাকে, বাঙালির বৈশাখী মেলায় যাওয়ার উদাত্ত আহবান যতদিন থাকবে, ততদিন বাঙালি মনে ‘মেলায় যাইরে’ গানটি বার বার দোলা দিয়ে যাবে নতুন রূপে আর সেই সাথে গানটির  প্রতিষ্ঠাতা ব্যান্ড ‘ফিডব্যাকে’র নামটিও উচ্চারিত হবে, বাঙালিকে এমন এক উৎসবের গান উপহার দেওয়ার কৃতজ্ঞতায়।

জনপ্রিয় গান ‘মেলা’র সৃষ্টিকারী ব্যান্ড ফিডব্যাক; Source: youtube.com

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর স্পন্দন ও উচ্চারণের হাত ধরে বাংলা ব্যান্ড ধারণার সৃষ্টি। কিন্তু তখনও আজম খান যেন একাই লড়ে যাচ্ছেন পাশ্চাত্য সংগীতের বিরুদ্ধে। অন্য যেসকল ব্যান্ড উঠে আসছিল সকলেই ইংরেজী গানকেই তাদের মূল ধারার গান করে এগিয়ে যাচ্ছিল।

আজম খান ছিলেন সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু যুদ্ধের পরও তিনি সাংস্কৃতিক যুদ্ধ শেষ করেননি। বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সংগীতে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া দেওয়ার জন্যে লড়াই করে গেছেন সারাজীবন। এই সংগ্রামে তার অনুসারীদের মধ্য ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিভাবান কী-বোর্ডিস্ট, সুরকার, ও ফিডব্যাকের কর্ণধার ফুয়াদ নাসের বাবু।

ফুয়াদ নাসের বাবু; Source: thedailystar.net

১৯৭৫ সালের দিকে ফুয়াদ নাসের বাবু এবং তার এক বন্ধু মিলে একটি ব্যান্ড শুরু করেন যার নাম ছিল ‘অস্থির’। ১৯৭৮ সালে ব্যান্ড ‘আলট্রাসোনিকস’-এর কয়েকজন সদস্যের সাথে মিলে প্রতিষ্ঠিত হলো ‘ফিডব্যাক টোয়েন্টিন্থ সেঞ্চুরি’। পরবর্তীতে অবশ্য ‘টোয়েন্টিন্থ সেঞ্চুরি’ ব্যান্ডের নাম থেকে বাদ দেওয়া হয়।

সেই সময় ব্যান্ডের সদস্য ছিলেন এরশাদ মঈনুদ্দিন পপ্সি (ড্রামস), মুরাদ রহমান (বেজ গিটার), সেলিম হায়দার (লিড গিটার), কিংসলে রিক্টার (রিদম ও ভোকাল), স্যান্ড্রা হফ (ভোকাল), জাকিউর রহমান (গিটার ও ভোকাল) আর ফুয়াদ নাসের বাবু (কি-বোর্ডিস্ট); আর ম্যানেজার ছিলেন হাফিজুর রহমান। ফিডব্যাকের প্রথম ভোকালিস্ট জাকিউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক মতিউর রহমানের ভাই।

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হোটেল ‘ইন্টার কন্টিনেন্টাল’ এ (সাবেক/রূপসী বাংলা) সপ্তাহে তিনদিন বিভিন্ন ধরনের ইংরেজি গান পরিবেশন করার সুযোগ পেয়ে যায় নব্য গঠিত এই ব্যান্ডটি। কিন্তু শুধু ইংরেজি গানের কাভার করে যেন কিছুতেই মন ভরছিল না ব্যান্ডটির। নিজেদের মধ্যে ভিন্ন কিছু করার তাগিদ ছিল সবসময়। ইংরেজি গানের পাশাপাশি তাই বাংলা গানের চর্চা শুরু হয় ব্যান্ডের মধ্যে।

ইন্টার কন্টিনেন্টালে ফিডব্যাক; Source: ashik110.blogspot.com

১৯৭৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রথমবারের মতো সাধারণ শ্রোতাদের সম্মুখে গান পরিবেশন করে ব্যান্ডটি। দর্শকদের কাছ থেকে বেশ ভালো সাড়া পেয়ে নিজেদের মধ্যে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় ব্যান্ডটির। এরপর শুরু হয়ে যায় ফিডব্যাকের বাংলা গান তৈরির কাজ।

১৯৮২ সালে বিটিভির একটি অনুষ্ঠানে আক্তার ফিরোজের লেখা ও ফুয়াদ নাসের বাবুর সুর করা ‘এই দিন চিরদিন রবে’ নিয়ে দর্শকদের সামনে ফিডব্যাক প্রথম নিজেদের গান উপস্থাপন করে। গানটি তখন এতটাই সাড়া ফেলে যে এরপর থেকে ব্যান্ডটি নিয়মিত বাংলা গান করা শুরু করে।

১৯৮৫ সালে অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সারগামের ব্যানারে ফিডব্যাকের প্রথম অডিও অ্যালবাম ‘ফিডব্যাক’ মুক্তি পায়। এই অ্যালবামের উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলো এইদিন চিরদিন, ঝাউ বনে, এক ঝাঁক প্রজাপতি, দিন যায় দিন ইত্যাদি।

ফিডব্যাকের প্রথম অ্যালবাম; Source: youtube.com

১৯৮৭ সালটি ব্যান্ডটিতে অনেক পরিবর্তন চলে আসে। ব্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জাকিউর রহমান ডাক্তারি পড়ার জন্যে রাশিয়া চলে যান। তার জায়গায় ব্যান্ডে নিয়মিতভাবে যোগ দেন ফিডব্যাকের অন্যতম পরিচিত মুখ মাকসুদুল হক, যিনি ম্যাক নামেই অধিক পরিচিত এবং বাংলাদেশের অন্যতম লিড গিটারিস্ট লাবু রহমান। এছাড়াও তখন স্থায়ীভাবে যুক্ত হয়েছিলেন আরেকজন গুণী শিল্পী পিয়ারু খান। সব মিলিয়ে অসম্ভব কিছু গুণী শিল্পীর মিলনমেলা হয়ে উঠল ফিডব্যাক।

আশির দশকের ফিডব্যাকের সদস্যরা; Source: youtube.com

প্রথমের দিকে মাকসুদ কেবল ইংরেজি গানই করতেন। কিন্তু আজম  খান এবং ফুয়াদ নাসের বাবুর পীড়াপীড়িতে বাংলা গান গাওয়া শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি গান লেখা ও সুরও করতে থাকেন। ফিডব্যাকের অনেক জনপ্রিয় গানের লেখক ও সুরকার ছিলেন মাকসুদ। মাকসুদের প্রথম লেখা গান ছিল ‘মাঝি’।

ফিডব্যাক এমন একটি সময় বাংলা গান নিয়ে কাজ করে যাচ্ছিল যখন সাধারণ শ্রোতারা ব্যান্ড সম্পর্কে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে রেখেছিলেন। আধুনিক, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, হিন্দি ও ইংরেজি গানের পাশাপাশি নিজেদের প্রমাণ করা মোটেও সহজ কথা ছিল না তখন। অনেক প্রতিকূলতা থাকা স্বত্বেও ১৯৮৭ সালে ফিডব্যাকের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘উল্লাস’ মুক্তি পেল।

ফিডব্যাকের দ্বিতীয় অ্যালবাম ’উল্লাস’; Source: youtube.com

অ্যালবামটি বাংলাদেশের ব্যবসাসফল অ্যালবামগুলোর মধ্যে অন্যতম। অ্যালবামটির অধিকাংশ গানই ছিল অসম্ভব জনপ্রিয়। মৌসুমি, জানালা, চিঠি, উদাসী, মাঝি, এবং কেমন করে হায় গানগুলো এখনো শ্রোতাদের মুখে মুখে গাইতে শোনা যায়। মাকসুদের অসম্ভব হৃদয়খোলা কন্ঠ এবং বৈচিত্র্যময় কথার জন্যে শ্রোতামনে খুব সহজেই জায়গা করে নেয় ‘উল্লাস’।

উল্লাস তখন শুধু একটি অ্যালবাম নয়, এ যেন বাংলাদেশে ব্যান্ডের জগতে এক দৃঢ় পদার্পণ। বাংলাদেশের শহর এলাকায় যখন ভারতীয় বাংলা ও হিন্দী গানের একক আধিপত্য ঠিক সেই সময় ‘উল্লাস’ নিয়ে এলো নিজেদের অহংকার করার মতো কিছু বাংলা গান। শ্রোতারা যেন খুঁজে পেল এক অন্যরকম সুর ও সংগীতের মাদকতা।

ফিডব্যাকের তৃতীয় অ্যালবাম মেলা; Source: youtube.com

যেকোনো সাফল্য সাফল্যকারীকে অনেকটাই সচেতন ও আরো বেশি দায়িত্বশীল করে তোলে। কেননা তখন বারবার তুলনা চলতে থাকে পূর্বের কাজের সাথে। উল্লাস জনপ্রিয় হওয়ার পর ফিডব্যাকের জন্যে পরের অ্যালবামের ব্যাপারে আরো বেশি দায়িত্বশীল হয়ে উঠতে হলো। ১৯৯০ সালে এলো ফিডব্যাকের ৩য় অ্যালবাম ‘মেলা’, আর বাংলাদেশ পেল তার সর্বকালের সেরা উৎসবের গানটি।

মাকসুদুল হকের লেখা ও ফিডব্যাকের সুর সংমিশ্রণে গানটি বিটিভির আনন্দমেলা অনুষ্ঠানে প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ল। শুধু মেলা গানটিই নয়, এই অ্যালবামের ‘মৌসুমি-২’, ‘গোধূলি’, ‘পালকি’, ‘স্বদেশ’, ‘মন বুঝিয়া’ গানগুলোও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। আর বলাই বাহুল্য, ‘মেলা’ হয়ে ওঠে ফিডব্যাকের ব্যান্ড অ্যালবামগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যবসা সফল অ্যালবাম।

কলকাতার এইচ.এম.ভি থেকে প্রকাশিত ফিডব্যাকের অ্যালবাম জোয়ার; Source: youtube.com

বাংলাদেশে ফিডব্যাকের এতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে কলকাতার সুপরিচিত অডিও প্রকাশনা সংস্থা এইচ.এম.ভি ফিডব্যাকের জনপ্রিয় গানের সংকলনে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করে। ১৯৯২ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের কোনো ব্যান্ডের অডিও অ্যালবাম প্রকাশ হয়। অ্যালবামটিতে ফিডব্যাকের জনপ্রিয় অনেকগুলো গান, যেমন- মৌসুমি ১ ও ২, এইদিন চিরদিন, ঐ দূর থেকে দূরে, মাঝি, মাঝি তোর রেডিও, চিঠি, জীবনজ্বালা ও মেলা গানগুলো পুনরায় সংগীত আয়োজন করে গাওয়া হয় আর অ্যালবামের নাম দেয়া হয় ‘জোয়ার’। এই অ্যালবাম প্রকাশিত হওয়ার পর কলকাতায় হাজার বাঙ্গালী শ্রোতা যেন বাংলা গানের এক নতুন স্বাদ খুঁজে পেল।

বঙ্গাব্দ ১৪০০ প্রকাশে ফিডব্যাকের সদস্যরা; Source: surodhoni.com

১৯৯৪ সালে এলো ‘বঙ্গাব্দ ১৪০০’ অ্যালবামটি। অ্যালবামটির গানের কথা ও সুরে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। পুরোপুরি রোমান্টিক ঘরানা থেকে অনেকটাই সরে এসে সমাজের বিভিন্ন অসংগতির প্রতি অনেক বেশি জোর দেওয়া হয় গানের কথায়। গানগুলো তাদের আগের অ্যালবামগুলো থেকে অনেকটাই আলাদা করে সাজানো হয়।

সামাজিক কোষ্ঠকাঠিন্য, মামা, বিদ্রোহী, উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গানগুলো সরাসরি সামাজিক রোষানলের প্রতিপক্ষ হয়ে উচ্চারিত গান। প্রেমের গানের মধ্যে রয়েছে গীতিকবিতা-১, ভীরু মন, আশা ও ধন্যবাদে ভালোবাসার মতো গানগুলো। তবে প্রেম ও বিদ্বেষের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক চিন্তা ভাবনা থেকে গাওয়া পালকি-২ (এমনি করে সবাই যাবে), এবং আপন দেশে চল গান দুটিও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

ফিডব্যাকের সদস্যরা; Source: youtube.com

ফিডব্যাকের প্রতিটি অ্যালবামে কথা ও সুরে ব্যাপক বৈচিত্র্য সর্বদাই ছিল লক্ষণীয়। এই জন্যেই হয়তো সমসাময়িক অনেক ব্যান্ডগুলোর মধ্যে ফিডব্যাক ছিল অনেকটাই আলাদা। বাণিজ্যিকীকরণের পেছনে না ছুটে সর্বদাই চেষ্টা করেছেন গানের মাধ্যমে সমাজের পরিবর্তন ও শেকড়ের টান খুঁজে নেওয়ার। সেই ইচ্ছে থেকেই হয়তো একসময়ের ইংরেজী গান গাওয়া ব্যান্ড পুরোদমে বাঙালিয়ানা ছড়িয়ে দিতে দিতে নিজেদের নিয়ে গেলেন সংগীতের শেকড়ে।

শুরু করলেন বাউল গানের উপর একটি ফিউশনধর্মী গান করার চেষ্টা। এমন চেষ্টা এর আগে কোনো ব্যান্ড দল কখনো সাহস করেনি। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শুধুমাত্র একটি গান দিয়ে ‘দেহঘড়ি’ নামে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করা হয়। গানটিতে ফিডব্যাকের সাথে গান করেন বিখ্যাত বাউল শিল্পী আব্দুল রহমান বয়াতি।

বাউলিয়ানা অ্যালবামের প্রচ্ছদ; Source: surodhoni.com

১৯৯৬ সালে বাউলদের গান নিয়ে ফিডব্যাক এলো একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম নিয়ে। অ্যালবামের ১০টি গানের মধ্যে শুধু একটি গান পিয়ারু খানের লেখা। বাকি গানগুলো জনপ্রিয় সব বাউলদের গান নিয়ে তৈরি করা হয়। বাউল গানকে যুবসমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জন্যেই ফিডব্যাকের এমন প্রয়াস। এই অ্যালবামের উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে রয়েছে করিমনা, লোকসান, গুরুর ভাব, শ্যামকালিয়া ইত্যাদি। গানগুলো বাংলাদেশে বাউল সংগীত নিয়ে ফিডব্যাকের এক অনবদ্য কাজ।

ফিডব্যাকের প্রাক্তন শিল্পী মাকসুদ; Source: bdmorning.com

কিন্তু ফিডব্যাকের সুখের সময় খুব বেশিদিন দীর্ঘায়িত হলো না। দলের অন্যতম সদস্য মাকসুদ সমাজের বিভিন্ন অসংগতি নিয়ে অনেক বেশি সোচ্চার ছিলেন। তাই তার গানের মাধ্যমকেই সমাজ সংস্কারের অন্যতম হাতিয়ার করে নিতে চাইলেন। কিন্তু ফিডব্যাকের ছত্রছায়ায় থেকে তেমনটা করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই তিনি দল ত্যাগ করে ‘মাকসুদ এবং ঢাকা’ নামে একটি আলাদা দল করেন।

ফিডব্যাকের অ্যালবাম আনন্দের প্রচ্ছদ; Source: youtube.com

মাকসুদ চলে যাওয়ার পর ১৯৯৯ সালে ‘আনন্দ’ এবং ২০০০ সালে কলকাতার এইচ.এম.ভি থেকে ‘এই শতাব্দীর ফিডব্যাক নামে দুটি অ্যালবাম বের হয়। ‘আনন্দ’ অ্যালবাম থেকে উল্লেখ করার মতো গান হলো ‘আশা’, ‘চোখের পাতায় ভাসে’, ‘জীবনটা যেন গল্প’ ইত্যাদি।

মাকসুদের ফিডব্যাক ত্যাগের পর ব্যান্ডটি যেন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে। দলে তখনও বিদ্যমান ফুয়াদ নাসের বাবু, পিয়ারু খান ও লাবু রহমান। কিন্তু ফিডব্যাক যেন অনেকটাই ম্লান হয়ে পড়েছিল। ব্যান্ডের এমন অযাচিত ভাঙ্গনে শ্রোতাকূলও যেন কিছুটা অভিমানী হয়ে পড়েছিল ব্যান্ডটির উপর।

কন্ঠশিল্পী রাশেদকে নিয়ে ফিডব্যাকের অ্যালবাম ‘শূন্য’; Source: youtube.com

২০০২ সালে অভিজ্ঞ শিল্পী রেশাদকে নিয়ে বের করলেন ‘শূন্য-২’। এই অ্যালবামে ফিডব্যাক নিয়ে আসলো মেলা সিরিজের দ্বিতীয় গান ‘মেলা-২’। কিন্তু তা সত্ত্বেও অডিও বাজারে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি অ্যালবামটি।

কিন্তু রেশাদ খুব বেশিদিন ফিডব্যাকের সাথে যুক্ত ছিলেন না। ২০০৩ সালের শেষের দিকে ব্যান্ডে মূল কন্ঠশিল্পী হিসেবে যোগ দেন শাহনুর রহমান লুমিন। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত নিয়মিত আছেন ফিডব্যাকের সঙ্গে। সর্বশেষ ফিডব্যাকের সাথে যোগ দেন গিটারিস্ট এবং কন্ঠশিল্পী হিসেবে রায়হান আল হাসান। তার গাওয়া ‘নিঝুম রোদে’ গানটি শ্রোতামনে বেশ সাড়া ফেলেছে।

ফিডব্যাকের বর্তমান সদস্যরা; Source: prothomalo.com

২০১৫ সালে আসে ফিডব্যাকের সর্বশেষ ডিজিটেল অ্যালবাম ‘এখন’। একটি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির সাথে ‘বাংলাদেশ’, ‘নিঝুম রোদে’, ‘হৃদয় হদয়ে’, ‘উড়ু উড়ু মনটা’, ‘মনে হয়’ ‘ফসলের গান’, ‘এক আকাশ’ ও ‘প্রতারণা’ নিয়ে অ্যালবামটি প্রকাশ করা হয়।

ফিডব্যাকের প্রত্যাবর্তন হয় ডিজিটাল অ্যালবাম ‘এখন’ দিয়ে; Source: shangetangon.com

ফিডব্যাকের বর্তমান দলের সদস্যরা হলেন লাবু রহমান (গিটার ও ভোকাল), শাহানুর রহমান লুমিন (ভোকাল), এনাম এলাহী টন্টি (ড্রামস ও পারকাশন), রায়হান আল হাসান (ভোকাল ও অ্যাক্যুস্টিক গিটার), ফোয়াদ নাসের বাবু (কি বোর্ডস) ও মোহাম্মদ দানেশ (বেজ গিটার)।

ফিডব্যাকের সদস্যরা; Source: jagonews24.com

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ব্যান্ড সংগীতের উত্থানে ফিডব্যাকের একটি অনন্য ভূমিকা রয়েছে। ফিডব্যাকের মতো খুব অল্প সংখ্যক ব্যান্ড নিয়মিত শ্রোতাদের জন্যে গানের অ্যালবাম উপহার দিয়ে এসেছেন।

তবে ২০০০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের সংগীত জগতে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। গানের কথা, সুর ও সঙ্গীতায়োজনে ব্যাপক পরিবর্তন চলে আসে। ফলে তরুণ সমাজের সাথে ফিডব্যাকের কিছুটা দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। পাশাপাশি নকল, গ্রস্থস্বত্বাপহরণ ও রয়্যালিটির সঠিক নির্দেশনা না থাকার কারণে অন্যান্য ব্যান্ডের মতো ফিডব্যাকেরও যথেষ্ট ক্ষতিসাধন হয়।

তবে আধুনিকতাকে মেনে নিয়ে ফিডব্যাক নিজেদেরকে যুগের সাথে মানিয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে ডিজিটাল মিডিয়াতে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে নতুন গানের উপস্থাপনায়। আর এ কথাও অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের স্বর্ণযুগ নির্মাণে এই ব্যান্ডের অবদান শ্রোতামনে সর্বদাই স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ফিচার ইমেজ- prothomalo.com

Related Articles