Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্র্যাম্পাস: দুষ্টু শিশুদের শাস্তিদাতা সান্তা ক্লজ

সান্তা ক্লজ সম্পর্কে তো কম-বেশি সকলেরই জানা আছে। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ডিসেম্বরের তুষারশুভ্র মাসের ২৫ তারিখে তার আগমন ঘটে। যারা ভালো কাজ করে তাদের পুরস্কৃত করেন এই বুড়ো দাদু। ছোট বাচ্চাদের কাছে সান্তা ক্লজ মানেই তাদের পছন্দের গিফট নিয়ে আসা এক বন্ধু। তবে তারা জানে, এই উপহার পেতে হলে তাদেরকে অবশ্যই ভালো কাজ করতে হবে, নতুবা কোনো কিছুই তাদের ভাগ্যে জুটবে না। কিন্তু মাঝে মাঝে অনেকের মনে হতে পারে, এই সান্তা ক্লজ উপহার না দিয়ে দুষ্ট বাচ্চাদেরকে নিয়ম না মানার জন্য একটু ভয় দেখালে ভালোই হতো। আর এই ‘মনে হওয়া’ ব্যাপারটি সত্যিকারেই সম্ভব হয় ইউরোপের কিছু দেশে, বিশেষ করে জার্মানিতে।

হ্যাঁ! এমন এক সান্তা ক্লজের কথাই বলছি, যার আগমন এই ডিসেম্বরেই ঘটে, তবে তিনি উপহার দিতে নয়, বরং দুষ্ট শিশুদের শাস্তি দিতে আসেন। তার পোশাক-পরিচ্ছদ কুৎসিত এবং ভয়ঙ্কর। অর্থাৎ সান্তা ক্লজের মন্দ সংস্করণ! তার নাম ‘ক্র্যাম্পাস’। আর যে উৎসবে এই ক্র্যাম্পাসের আগমন ঘটে তার নাম ক্র্যাম্পাসনাট বা ক্র্যাম্পাস নাইট। এর মানে ক্রিসমাসের মতো আনন্দ না ছড়িয়ে ভয় ছড়ানো হয় এই উৎসবে।

ক্র্যাম্পাসনাট; Image source: rove.me

একটু সহজ ভাষায় বললে, এই ক্র্যাম্পাস নাইট হলো হ্যালোইন এবং ক্রিস্টমাসের মিশ্রিত সংস্করণ। শত শত বছর আগে থেকে ইউরোপের বিভিন্ন অংশে এই ক্র্যাম্পাসনাট উদযাপন করা হয়। প্রতি বছর ডিসেম্বরের ৫ তারিখ সন্ধ্যায়, বিশেষ করে জার্মানির ব্যাভারিয়া অঙ্গরাজ্যে, ক্র্যাম্পাসনাটের আয়োজন দেখা যায়। এ সময় সেখানকার পুরুষেরা কুৎসিত শয়তানের মতো রূপ ধারণ করে। আর সাজসজ্জার ব্যাপারে তারা নির্ভর করে পৌরাণিক কাহিনীর উপর।

ক্র্যাম্পাস; Image source: ranker.com

ক্র্যাম্পাস’ হলো একধরনের পৌরাণিক দৈত্য, যা দেখতে শয়তান এবং ছাগলের সম্মিলিত কোনো রূপ বলেই বোধ হবে। গ্রিক পুরাণের কিছু প্রাণীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিল রয়েছে এই ক্র্যাম্পাসের সাথে, যার রয়েছে বড় বড় বিষদাঁত, মাথায় বিশালাকারের শিং এবং কোমরে বাঁধা থাকে একটি ঘণ্টা। তার হাতে থাকে বার্চ বা ভুজ গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি চাবুক, যা ক্র্যাম্পাস দুষ্ট বাচ্চাদেরকে শাস্তি দেওয়ার কাজে ব্যবহার করে। আর গায়ে ভেড়ার বা ছাগলের চামড়া দিয়ে তৈরি একটা মোটা চাদর জড়ানো থাকে।

এসব বিষয়ের সাথে মিল রেখেই ক্র্যাম্পাসনাটে পুরুষেরা ক্র্যাম্পাসের চেহারার মতো মুখোশ এবং সাজসজ্জার কাজটি সেরে নেয়। মুখোশটি সাধারণত তৈরি হয় কাঠ দিয়ে। এই মুখোশ বা চাদর ইউরোপে বেশ চড়া মূল্যেই বিক্রি করা হয়। তবে সুলভমূল্যে চাইলে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে নকল পশমের চাদর এবং মুখোশের বদলে সাধারণ রঙ। এভাবেই যুগের পর যুগ ক্র্যাম্পাস নাইটে এরকম রূপধারণের ব্যাপারটি চলে আসছে। অবশ্য আধুনিক যুগে নারীরাও ক্র্যাম্পাসের মতো সাজে সজ্জিত হয়। তবে এক্ষেত্রে তাদের সাজসজ্জা এবং নামের কিছুটা পরিবর্তন থাকে। যেমন- এই নারী ক্র্যাম্পাসদের বলা হয় ‘ফ্রাউ পার্চটা’। দীর্ঘদেহী ফ্রাউ পার্চটাও একটি পৌরাণিক চরিত্র, যাকে জার্মানবাসী উর্বরতা ও যুদ্ধের দেবী হিসেবে মান্য করে। তাদেরকে ক্রিসমাস উইচও বলা হয়।

ফ্রাউ পার্চটা; Image source: boredomtherapy.com

উল্লেখ্য, ক্র্যাম্পাস শব্দটি এসেছে জার্মান শব্দ ‘ক্র্যাম্পেন’ থেকে, যার অর্থ থাবা। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, ৫ ডিসেম্বরের সন্ধ্যায় ক্র্যাম্পাস তার চাবুক দিয়ে সেসব শিশুকে শাস্তি দেয়, যারা কোনো খারাপ কাজ করেছে। পরে তাদেরকে বস্তায় করে নিয়ে যায় নিজেদের ডেরায়। সেখানে সেই শিশুদেরকে মেরে ফেলা হয় বা খেয়ে ফেলে এ পৌরাণিক দৈত্যরা। ক্র্যাম্পাস হলো সেইন্ট নিকোলাসের প্রতিরূপ, যিনি একজন ইউরোপিয়ান উপহারদাতা। আর তার আগমন ঘটে এর পরের দিনই।

৬ ডিসেম্বরকে বলা হয় ‘সেইন্ট নিকোলাস ডে’। ভালো এবং সৎ মানুষদেরকে, বিশেষত শিশুদেরকে পুরস্কৃত করার জন্যই তার এই আগমন। অর্থাৎ সান্তা ক্লজের সমতুল্য এই সেইন্ট নিকোলাস। ঐতিহ্যগতভাবে, ক্র্যাম্পাস এবং সেইন্ট নিকোলাস একসাথে একটি দলের মতো কাজ করে। ক্র্যাম্পাস একদিকে খারাপ কাজ ও দুষ্টুমির জন্য শিশুদের শাস্তি দেন, আর অন্যদিকে সেইন্ট নিকোলাস ভালো ও সৎ বাচ্চাদের পুরস্কৃত করেন। অর্থাৎ সান্তা ক্লজের বিপরীত হলো ক্র্যাম্পাস এবং সেইন্ট নিকোলাস সান্তা ক্লজের মতোই।

সেইন্ট নিকোলাস; Image source: newauthors.wordpress.com

ক্র্যাম্পাস নামক এই দৈত্য সম্পর্কে একটি আজব ব্যাপার হলো, এর সাথে পেনসিলভানিয়া ডাচ কমিউনিটির একটি চরিত্র ‘পেলসনিকেল’ বা ‘বেলজনিকেল’ এর বেশ মিল রয়েছে। এজন্য ধারণা করা হয়, এই ঐতিহ্যটির সাথে জার্মানবাসী যখন আমেরিকায় বসবাস করছিল তখন পরিচিত হন। আবার নর্স পুরাণ মতে, এই ক্র্যাম্পাস হচ্ছে হেলের পুত্র।

এর প্রচলন আসলে কোথা থেকে তা নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ইতিহাসবিদের মতে, ক্র্যাম্পাস নাইট খ্রিস্টান ধর্ম প্রবর্তনের আগের কোনো ঐতিহ্যের অংশ। তাদের মতে, পৌত্তলিক পুরাণ থেকেই এর আগমনের খুঁটিনাটি সব পাওয়া যাবে। খ্রিস্টান ধর্ম প্রবর্তনে পূর্বে ইউরোপে কোন ধরনের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বা সংস্কৃতি কিংবা কার পূজা করা হতো এবং কী রকম ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহারের প্রচলন ছিল তা অনেকটাই ঝাপসা সকলের নিকট।

ক্র্যাম্পাসনাট ২০১৮; Image source: events.travelisthenewclub.com

কিছু ইতিহাসবিদের মতানুসারে, ১১ শতকের দিকে মধ্যযুগীয় বিভিন্ন পথনাট্যে প্রথমবারের মতো শিংযুক্ত শয়তানদের দেখা যায়। আঞ্চলিক লোকজনের সঙ্গে সহজে মিশতে পারার জন্য কিংবা পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা তাদের এ সকল প্রতীক বা ঐতিহ্যকে ব্যবহার করতে শুরু করেন। আর এখানেই এটি খ্রিস্টান নাকি পৌত্তলিকের সংস্কৃতি তা নিয়ে একটু গণ্ডগোল বেঁধে যায়।

সময়ের সাথে উইক্যান দেবী পরিবর্তন হতে হতে বর্তমানের ক্র্যাম্পাসের আকার ধারণ করেছে বলেও অনেকে মনে করে থাকেন।
ক্র্যাম্পাস নাইটের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় অংশ হলো ‘ক্র্যাম্পাসলফ’ বা ‘ক্র্যাম্পাস রান’। প্রায় ১,০০০ পুরুষ এই পৌরাণিক দৈত্যের সাজে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। যেসকল পুরুষ এই দৌড়ে অংশ নেয় তাদের বয়স সাধারণত ২০-৪০ বছরের মধ্যে হয়।

ক্র্যাম্পাসলফ; Image source: rt.com

ক্র্যাম্পাসনাট সম্পর্কে আরেকটি বিশেষ তথ্য হলো, এই সংস্কৃতি বেশ কয়েকবার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় কিংবা তা পালনে বাধা দেওয়া হয়। এর ভয়ঙ্কর অস্তিত্ব বা উৎসব বহু বছরের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই ধরনের কর্কশ উৎসব পালনে প্রথমেই বাধা দেয় ক্যাথলিক চার্চসমূহ। তাছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপের ফ্যাসিবাদীদের নিকট এই সংস্কৃতি জঘন্য বলে মনে হয়। এরই জের ধরে তারা এর প্রচলন বন্ধে উঠে-পড়ে লাগে। তবে গত কয়েক বছরে এর পুনরুত্থান ঘটে। জার্মানি (মূলত ব্যাভারিয়া অঙ্গরাজ্য), অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, স্লোভেনিয়া, চেক প্রজাতন্ত্রে নতুন করে এর উদযাপন লক্ষ্য করা যায়।

এর খ্যাতি বর্তমানে আমেরিকাতেও বেশ বেড়ে গিয়েছে। স্যান ফ্রান্সিস্কো এবং পোর্টল্যান্ডে এর জাঁকজমকভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তাছাড়া ওহাইয়ো প্রদেশের ক্লিন্টোভিলে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো ক্র্যাম্পাস প্যারেড করা হয়। এরপর থেকেই এখানে প্রতি বছর এই উৎসব পালন করা হয়। আর সিয়াটল ও ফিলাডেলফিয়ায় ক্রিস্টমাস সিজনের শুরু হয় ক্র্যাম্পাসনাট দিয়েই। অস্ট্রিয়ায় ২০১৩ সালে ২০০ ক্র্যাম্পাসের অংশগ্রহণে প্রথমবারের মতো ক্র্যাম্পাস নাইট পালন করা হয়। তবে বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় অনেকটাই বাণিজ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে এই উৎসবটি। চকলেট, মদ, ক্ষুদ্র প্রস্তরমূর্তি, মুখোশ ও শিং বিক্রির একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র। সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিষয়গুলো ধীরে ধীরে অনেকটা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। এমনকি আমেরিকায় এই ক্র্যাম্পাসনাট তার অনন্য ঐতিহ্যের জন্য খ্যাতি লাভ করলেও এখন এর মূল উদ্দেশ্য ও সংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে।

This article is in Bangla language. It's about a mythical beast ‘Krampus’ who is known as the evil santa. Sources have been hyperlinked in this article.
Featured image: historythings.com

Related Articles