Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

লালন সাঁইজী: ধন্য ধন্য বলি তারে

তিনি বিশ্বাস করতেন সকল মানুষের হৃদয়ে বাস করে এক মনের মানুষ, আর মনের মানুষের কোনো জাত, ধর্ম, বর্ণ বা কুল থাকে না। মানুষের দৃশ্যমান শরীর আর অদৃশ্য এই মনের মানুষ সম্পূর্ণ আলাদা সত্ত্বা। তিনি মনের অন্তরালের এই সত্ত্বাকে তুলনা করেছেন এক অচিন পাখির সাথে, যা খাঁচারূপী দেহের ভিতর অনায়সে আসা-যাওয়া করে কিন্তু একে বন্দী করা যায় না। দার্শনিক এই সাধক ছিলেন বাউল গানের অগ্রদূত ”বাউল সম্রাট’” নামে খ্যাত লালন শাহ্‌। তিনি লালন ফকির বা লালন সাঁই নামেও পরিচিত। শিষ্যরা তাকে ‘সাঁইজী’ নামে ডাকে। গান্ধীজীরও প্রায় ২৫ বছর পূর্বেই তাকে ভারতীয় মহাদেশে প্রথম ‘মহাত্মা’ উপাধি দেওয়া হয়।

লালন ফকির; Source:bdnews24.com

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী লালন ছিলেন একাধারে বাউল সাধক, সমাজ সংস্কারক, দার্শনিক এবং মানবতাবাদী। অসংখ্য গানের গায়ক, গীতিকার এবং সুরকার। তৎকালীন সময়ে মানুষের নিপীড়ন, জাতিভেদ, ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার, আত্মকেন্দ্রিকতা সমাজ জীবনে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সমাজের সেসব কুসংস্কারকে তিনি বিভিন্ন আঙ্গিকে তার গানের মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছিলেন। যে কারণে লালনের সঙ্গীতে আকৃষ্ট হয়েছিলেন বহু ঐতিহাসিক, সম্পাদক, বুদ্ধিজীবী, লেখক, সর্বোপরি গ্রামের সাধারণ মানুষও। তিনি তার গানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ভেদে মানবতাকেই সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছেন। অসাম্প্রদায়িক মনোভাবই ছিল তার রচনার মূলমন্ত্র। তার রচিত গান যুগে যুগে প্রভাবিত করেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো বহু খ্যাতনামা কবিকেও।

লালন সাঁইজীর বাল্য জীবন সম্পর্কে খুব স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে তার স্বরচিত অসংখ্য গানে আর কিছু তথ্যসূত্রের মাধ্যমে তার জীবনী সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তথ্যসূত্র অনুযায়ী, ১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ড উপজেলার অন্তর্ভুক্ত হারিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আবার কিছু লালন বিশেষজ্ঞের মতে, তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার ভাড়ারা গ্রামে জন্মেছিলেন। পিতা শ্রী মাধব কর আর মাতা শ্রীমতী পদ্মাবতীর সংসারের একমাত্র সন্তান তিনি, প্রকৃত নাম লালন চন্দ্র কর। শৈশবেই পিতাকে হারান তিনি। ফলে অল্প বয়সেই লেখাপড়া ছেড়ে সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। মাতৃভক্ত লালন মায়ের সেবার উদ্দেশ্যে বিশাখাকে বিয়ে করে সংসারে মনোনিবেশ করেন। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি অনুরাগী ছিলেন তিনি। গ্রামে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পালাগান, কবিগান বা কীর্তনে তার গান শুনে মুগ্ধ হতো মানুষ।

জ্যোতিন্দ্রনাথ ঠাকুরের অঙ্কিত লালন সাঁইয়ের ছবি; Source:wikipedia.com

পুণ্য লাভের উদ্দেশ্যে তরুণ বয়সে প্রতিবেশী ও সঙ্গীসাথী নিয়ে তীর্থ ভ্রমণে বের হন তিনি। পথিমধ্যে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হন। অসুখের তীব্রতা বাড়লে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। তার সাথীরা তাকে মৃত কল্পনা করে নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়ে ফিরে আসে। মৃত্যুর খবরে মা ও স্ত্রী মুষড়ে পড়ে। পরবর্তীতে সমাজের চাপে, রীতি অনুযায়ী অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে বাধ্য হন তারা।

অপরদিকে, নদীর জলে ভেসে ভেলা অপর পাড়ে পৌঁছালে এক মুসলিম নারী, মতিজান তার হৃদস্পন্দন আছে দেখে তাকে বাড়ি নিয়ে যান। সেখানেই মতিজান ও তার স্বামী মলম শাহের শুশ্রূষার ফলে নতুন জীবন ফিরে পায় লালন। দুর্ভাগ্যবশত গুটিবসন্ত রোগে এক চোখ হারান তিনি। সুস্থ হয়ে হৃষ্ট চিত্তে গ্রামে ফিরে আসেন। তার অপ্রত্যাশিত আগমণে স্ত্রী ও মাতার হৃদয় আনন্দে আপ্লুত হয়ে উঠে। কিন্তু সেই আনন্দ কিছুক্ষণের মাঝেই হাহাকারে পরিণত হয়। তার ফিরে আসার সংবাদে গ্রামের মানুষ তাকে দেখতে ছুটে আসে। সমাজপতিরা তাকে জীবিত মেনে নিতে অস্বীকার জানায়। মুসলিম ঘরে জলপান করায় বিচ্যুত করা হয় পরিবার তথা সমাজ থেকে। জাতি, ধর্মের দোহাই দিয়ে তাকে মাতৃভূমি ত্যাগ করতে হয় যা তিনি সহ্য করতে পারেননি। স্ত্রীকে সাথে নিতে চাইলে সমাজের শাসন আর ধর্মের বেড়াজাল ভেদ করে যাওয়ার মনোবল জড়ো করতে পারেননি বিশাখা। লালন চলে যাওয়ার অল্প কিছুদিনের মাঝেই শোকে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

লালন ফকির নিয়ে রচিত ‘মনের মানুষ’ ছবিতে লালন ও বিশাখা; Source: blogger

ঘর-বাড়ি, পরিবার ছেড়ে, সমাজের উঁচু-নিচু জাত প্রথার প্রতি বিতৃষ্ণা যেন নতুন এক লালনের জন্ম দেয়। পরিচয় ঘটে একজন মরমী সাধক সিরাজ সাঁইয়ের সাথে। তার সান্নিধ্যে লালনের আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশ ঘটে। সিরাজ সাঁইকে গুরু মেনে তিনি লালন শাহ্‌ থেকে হয়ে উঠলেন লালন সাঁই। এই জাত ধর্ম নিয়ে তার আক্ষেপ থেকে সৃষ্ট গান-

“জাত গেল জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সবই দেখি তা না না না
আসবার কালে কি জাত ছিলে ?
এসে তুমি কি জাত নিলে ?
কি জাত হবে যাবার কালে?
সে কথা ভেবে বলো না”

গুরুর নির্দেশে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার ছেউরিয়া গ্রামে কালীগাঙ্গের ঘন জঙ্গলে আম গাছের নিচে তপস্যা শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার তপস্যার খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামে তখন কারিকর সম্প্রদায়ের বাস ছিল। তারাই অনুমতি নিয়ে গুরুর জন্য সেখানে আখড়া তৈরি করে দেয়। আধ্যাত্মিক সাধনার সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে হিন্দু-মুসলিম পরিশেষে সর্বস্তরের মানুষ তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে শুরু করতে শুরু করে। শিষ্যদের নিয়ে যশোর, ফরিদপুর, পাবনা, রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় তিনি গানের মাধ্যমে তার মতবাদ প্রচার শুরু করেন। তার আসম্প্রদায়িক মনোভাব, সমাজের লৌকিকতার বিরুদ্ধে রচিত গান সাধারণ মানুষের মন জয় করে। জীবনের বাকি সময় তিনি সেখানেই কাটিয়ে দেন।

সিরাজ সাঁইয়ের দীক্ষায় বাউল লালন সাঁই; Sourvoicebd-weebly-com

মাতৃভক্ত লালন তার সব সাধনার মাঝেও মায়ের স্থান হৃদয়ে রেখে কাজ করে গেছেন। মায়ের মৃত্যু সংবাদে তিনি প্রয়োজনীয় সবকিছুর জোগাড় নিজ আখড়া থেকেই পাঠিয়ে দেন, যদিও সমাজের রীতিনীতির বেড়িবাঁধ অতিক্রম করে তিনি সেখানে উপস্থিত হতে পারেননি।

মতাদর্শ প্রচার করতে গিয়ে লালন ও তার শিষ্যেরা পদে পদে পদদলিত হয়েছেন। কোথাও কোথাও বাউলদের চুল কেটে অথবা হাতের একতারা ভেঙে তাদের বাঁধা দিয়ে গেছেন তাদের অসম্প্রদায়িক মনোভাবে ক্ষিপ্ত ব্যক্তিরা। কিন্তু এত বাধা তাদের একচুলও বিচ্যুত করতে পারেনি মতাদর্শ থেকে। লালনের মৃত্যুর পরও মলম শাহের দেওয়া ১৬ বিঘা জমি নিলামে উঠলে, ইসমাইল শাহ্‌ সেটা কিনে সাঁইজীর শেষ স্মৃতি রক্ষা করেন। এভাবে সাঁইজীর ভক্তরা যুগে যুগে তার মতাদর্শ এবং দেখিয়ে দেয়া পথ অনুসরণ করে তাকে হৃদয়ের মণিকোঠায় বাঁচিয়ে রেখেছেন।

উপমহাদেশে প্রথম ‘মহাত্মা’ উপাধিতে ভূষিত লালন সাঁই; Source:dailyasianage.com

‘গ্রাম বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদক কাঙাল হরিনাথ একবার জমিদারের অত্যাচারের বর্ণনা পত্রিকায় তুলে ধরলে জমিদারের লাঠিয়াল বাহিনী তাকে মারতে তেড়ে আসে। তখন বাউল লালন সাঁই তার শিষ্যদের নিয়ে তাদের প্রতিহত করে কাঙাল হারিনাথকে রক্ষা করেন। হারিনাথের মাধ্যমে লালনের পরিচয় ঘটে বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের সাথে।

অনেক লালন গবেষকদের মতে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথেও তার পরিচয় ছিল এমন তথ্য পাওয়া যায়, কিন্তু সেটা সঠিক নয়। তবে মৃত্যুর পূর্বদিন জ্যোতিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে তার দেখা হয় এবং তিনিই একমাত্র সাঁইজীর জীবিত অবস্থার ছবি অঙ্কন করেন, তবে ভক্তদের মতে সে ছবি সাঁইজীর প্রকৃত মুখ ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়নি।

‘মনের মানুষ’ ছবিতে লালন সাঁইয়ের চিত্রাঙ্কন দৃশ্য; Source:alchetron.com

লালন সাঁই সাধক পুরুষ হলেও তিনি সংসার বিরাগী ছিলেন না। পিয়ারী নামে তার এক পালিত কন্যা ছিল এবং মৃত্যুর পূর্বে ভোলাই শাহ্‌ নামক ব্যক্তির সাথে তার বিবাহ দেন তিনি। এছাড়া তার নির্দেশে আখড়ায় সাধকদের সাধকসঙ্গিনীও থাকতো।

লালন রচিত গানের কোনো লিখিতরূপ ছিল না তাই সঠিক সংখ্যা অনুমান সম্ভব হয়নি। তিনি হঠাৎ করেই মুখে মুখে গান বেঁধে গাইতে শুরু করতেন। ‘পোনা মাছের ঝাঁক এসেছে‘ বললেই ভক্তেরা একতারা আর ডুগডুগি হাতে বাদ্য বাজান শুরু করত। ভক্তদের হিসেবে তার রচিত গানের সংখ্যা অনুমানিক দশ হাজারের মতো। পরবর্তীতে মানিক শাহ্‌ ও মনিরুদ্দিন শাহ্‌ সাঁইজীর গান খাতায় লিখে সংগ্রহ শুরু করেন। ফলে সেসব গান বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।

কুষ্টিয়া জেলায় অবস্থিত লালন সাঁইয়ের মাজার; Source:bdnewshour24

১৮৮০ সালের ১৭ অক্টোবর (১২৯৭ সালের ১ কার্তিক) নিজ আখড়ায় সারারাত শিষ্যদের নিয়ে গান বাজনা করে ‘আমি চলিলাম‘ বলে তিনি আসর থেকে বিদায় নেন। তার কিছুক্ষণ পর সত্যিই তার সকল শিষ্যদের কাঁদিয়ে ১১৬ বছর বয়সে বাংলার বাউল সম্রাট সাধক লালন শাহ্‌ দেহত্যাগ করেন।

তিনি নিজেকে কখনো হিন্দু বা মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেননি। তিনি মানুষে বিশ্বাস করতেন। জীবদ্দশায় হিন্দু-মুসলিম যেকোনো রীতি পালনে তিনি অনিচ্ছা প্রকাশ করতেন। তাই মৃত্যুর পর তার ইচ্ছা অনুযায়ী তার আখড়ার একটি ঘরে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। মৃত্যুর ১২ দিন পর কথাসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন সম্পাদিত পত্রিকা ‘হিতকরী’তে রাইচরণ নামক লেখকের লিখিত একটি রচনায় তাকে ‘মহাত্মা’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

নিজ আখড়ার একটি ঘরে সাঁইজীর সমাধি; Source:wikipedia

লালন সাঁইয়ের মৃত্যুর ২ বছর পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার আখড়ায় যান, সেখানে তিনি তার দর্শনে অনুপ্রাণিত হয়ে লালনকে নিয়ে প্রায় ১৫০টির মতো গান রচনা করেন। আমেরিকান কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ তার আদর্শে রচনা করেন ‘After lalon’ নামে একটি কবিতা। ১৯৬৩ সালে তার আখড়ায় ‘লালন লোকসাহিত্য কেন্দ্র‘ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৮ সালে তা পরিবর্তিত হয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘লালন একাডেমী‘। বর্তমানে তার গান লালনগীতি বা লালনসঙ্গীত নামে দেশ বিদেশ সর্বত্র সমাদৃত হয়।

আনুমানিক ২৩৫ বছর পূর্বে কুষ্টিয়া জেলায় এক ঘন জঙ্গলে যে সাধনার শুরু হয় তা ছিল আজকের সমাজেরই মূল ভিত। লালন তৎকালীন সমাজের ধর্মীয় বেড়াজাল, জাত, বর্ণের উঁচু নিচু প্রভেদ দূর করতে সাধনা শুরু করেন। যে দেশে একই আকাশের নিচে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না, সবাই এক, তেমনি একটি দেশ চেয়েছিলেন লালন। একতারা হাতে মাঠে-ঘাটে মানুষের মূল্যবোধ পরিবর্তনের জন্য মানবতার গান গেয়েছেন। গোঁড়া ধর্মীয় সমাজপতিরা তাকে ‘নাস্তিক’ বলে সম্বোধন করলেও তিনি তার মতবাদ ছড়িয়ে দিয়েছেন মানুষের হৃদয়ে। তাই লালন চলে গেলেও আজও মানুষ তাকে স্মরণ করে। প্রতি বছর মৃত্যুবার্ষিকীতে পাঁচদিন ব্যাপী চলে ‘লালন উৎসব”। বাউল গানের ইতিহাস আরো প্রাচীন হলেও লালন এর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন মানুষের মাঝে প্রচারের মাধ্যমে। মানব মুক্তির উদ্দেশ্যে রচিত গানের জন্য আজও বিশ্ব দরবারে তিনি দাপটের সাথে সমাদৃত। লালন ভক্তরা এখনো তার উদ্দেশ্যে গেয়ে যায় তার রচিত গান-

“খাঁচার ভিতর অচিন পাখি
কেমনে আসে যায়।
তারে ধরতে পারলে মনবেড়ি
দিতাম পাখির পায়”

ফিচার ইমেজ- anandabazar.com

Related Articles