Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দেশ-বিদেশের ঐতিহ্যবাহী ট্যাটুর গল্প

বহু প্রাচীনকাল থেকে মানুষ শরীরে নানা রকম নকশা, উল্কি বা ট্যাটু করে আসছে। প্রায় ৫,২০০ হাজার বছরের পুরনো ব্রোঞ্জ যুগের মমির শরীরেও পাওয়া গেছে ট্যাটু। এ থেকে বোঝা যায় ঠিক কতটা পুরানো শিল্প এটি। ধারণা করা হয়, নব্যপ্রস্তর যুগ থেকে ছিল শরীরে ট্যাটু আঁকানোর এই প্রচলন।

নানা কারণে মানুষ যুগ যুগ শরীরে এসব ট্যাটু আঁকিয়েছে। কখনো সামাজিক পদমর্যাদার চিহ্ন হিসেবে, কখনো ভালোবাসার প্রকাশ রূপে, আবার কখনো ধর্মীয় বিশ্বাসে। একসময় চীনে মেয়েরা নিজেদের কুৎসিত দেখানোর জন্য এবং তৎকালীন রাজাদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য শরীরে ট্যাটু আঁকাতো। কিন্তু বর্তমানে ট্যাটু করা হচ্ছে ফ্যাশন হিসাবে, শরীরের অলংকরণ হিসাবে। বহু নামীদামী ব্যক্তি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষজন শখের বশে শরীরে আঁকছে ট্যাটু।

বহু প্রাচীন কাল থেকে শুরু হয়েছে শরীরে ট্যাটু আঁকানোর প্রচলন; Source: pinterest.com

ট্যাটু আঁকার এই সংস্কৃতি পৃথিবীর বহু দেশে অনেক আগে থেকেই প্রচলিত রয়েছে। নানা রকম নকশার এসব ট্যাটু আঁকানোর পিছে নানা দেশে রয়েছে নানা গল্প, নানা ঐতিহ্য। চলুন জেনে নেই এমনই কিছু দেশের ঐতিহ্যবাহী ট্যাটুর গল্প।

স্ক্যান্ডিনেভিয়া

আপনি যদি কখনো সুইডেনের মতো কোনো স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশে বেড়াতে যান তাহলে হয়তো অবাক হয়ে যাবেন। কারণ সেখানের প্রায় প্রতিটি মানুষের শরীরেই আঁকা রয়েছে ট্যাটু। সত্যি বলতে, স্ক্যান্ডিনেভিয়াতে শরীরে ট্যাটু করা খুবই স্বাভাবিক এক ব্যাপার। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ট্যাটু আঁকানোর রেকর্ড রয়েছে সুইডেনের। আমাদের দেশের মেয়েরা যেমন নাক কিংবা কানে ছিদ্র করেন, ঠিক তেমনি স্ক্যান্ডিনেভিয়ানরা শরীরে আঁকান ট্যাটু।

নর্ডিক চিহ্নযুক্ত স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ট্যাটু; Source: flicker.com

এসব ট্যাটুর বেশিরভাগ নকশা এসেছে নর্ডিক লেখা থেকে। প্রাচীন উত্তর ইউরোপীয় ভাষার প্রতিটির শব্দের সাথেই জড়িয়ে আছে বিভিন্ন নর্ডিক উপকথা। বিভিন্ন দেবতার নাম ও তাদের অর্থের সাথে সম্পর্কযুক্ত এসব ট্যাটু।

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ভাইকিং ট্যাটু; Source: kickassthings.com

কুখ্যাত জলদস্যু ভাইকিংরা ভবিষ্যৎবাণী জানার জন্য এসব শব্দ ব্যবহার করতো। এসব শব্দকে তারা মন্ত্রপূত মনে করতো। তারা তাদের রক্ষাকবচ হিসাবে শরীরে আঁকাতো এসব শব্দ দিয়ে তৈরি নকশা। তারা মনে করতো, এসব ট্যাটু তাদেরকে নানা রকম বিপদ থেকে রক্ষা করবে।

স্ক্যান্ডিনেভীয় ট্যাটুর বিশেষ দিক

স্ক্যান্ডিনেভীয় বেশিরভাগ ট্যাটুর নকশা হয় বিমূর্ত ভাবের। এগুলোর বেশিরভাগই ভাইকিং ও তাদের সমুদ্রযাত্রার কাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আঁকা হয়। স্ক্যান্ডিনেভিয়ানরা সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি তাদের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা দূর করার জন্য শরীরে আঁকান এসব ট্যাটু।

চীন

বেশির ভাগ চীনের অধিবাসীই মনে করেন, ট্যাটু মূলত বিভিন্ন অপরাধী, সন্ত্রাসী দল, ডাকাত এদের সাথে সম্পর্কিত। চীনারা বিশ্বাস করে তাদের শরীর তাদের পিতামাতা ও তাদের পূর্বপুরুষদের পক্ষ থেকে একটি উপহার। ট্যাটু আঁকানোর মত শরীরের কোনো অংশের পরিবর্তন করা এখানে বড় ধরনের অপরাধ হিসাবে দেখা হয়।

চীনা ড্রাগন ট্যাটু; Source: pinterest.com

এসব সত্ত্বেও বহু চীনা লোক শরীরে ড্রাগন ও সাপের ট্যাটু করান। তারা বিশ্বাস করেন, ড্রাগন হলো তাদের পূর্বপুরুষ এবং নিজেদের রক্ষাকর্তা। তারা এসব প্রাণিকে বিভিন্ন দেবতার প্রতীক মনে করেন। তাই এসব ড্রাগনের ট্যাটু আঁকানোর সময় পালন করা হয় বিশেষ সতর্কতা। এ ধরনের ট্যাটু আঁকানোর আগে চাইনিজরা আই-চিং (ভবিষৎবাণীর বিশেষ বই) বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেন। কারণ এ ধরনের ট্যাটু তাদের চরিত্রের সাথে না মিললে ভয়ানক ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করেন তারা।

চাইনিজ ট্যাটুর বিশেষ দিক

রক্ষাকবচ হিসাবে ড্রাগন কিংবা সাপের ট্যাটু ছাড়াও চীনের বহু অধিবাসী ও পর্যটক শরীরে চাইনিজ অক্ষরের ট্যাটু করে থাকেন। এসব চাইনিজ অক্ষর কিংবা বাক্য মানব জীবন দর্শনের সম্পর্কিত হয়ে থাকে।

জাপান

ট্যাটু আঁকানো জাপানের একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প। বহু যুগ যুগ ধরে জাপানে প্রচলিত রয়েছে ট্যাটু করার এই সংস্কৃতি।

জাপানিজ ট্যাটুতেও আছে ড্রাগনের প্রভাব; Source: pinterest.com

শরীরের বিশেষ বিশেষ স্থানে ট্যাটু করার প্রচলন রয়েছে জাপানে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ‘হাফ-ব্লেড’ পজিশনিং। কাঁধ ও বাহুর উপরের অংশ জুড়ে বুকের সামনে দিয়ে আঁকানো ট্যাটুকে বলা হয় ‘হাফ-ব্লেড’। দারুণ সুন্দর আর বৈচিত্র্যময় নকশাযুক্ত হয় এসব ট্যাটু। কখনো কখনো বিভিন্ন লোককাহিনী কিংবা গৌতম বুদ্ধের প্রতিকৃতিও ফুঁটিয়ে তোলা হয় এসব ট্যাটুর নকশায়।

যোদ্ধার প্রতিকৃতি যুক্ত জাপানিজ ট্যাটু; Source: pinterest.com

জাপানের সন্ত্রাসী দল ‘ইয়াকুজা’র সদস্যরা শরীরে এ ধরনের ট্যাটু করার জন্য কুখ্যাত।

জাপানিজ ট্যাটুর বিশেষ দিক

জাপানের প্রায় সবখানেই ট্যাটুর জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু কারো শরীরে যদি ট্যাটু থাকে তবে তাকে জাপানিজ জন-স্নানাগারে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। জাপানে বহু চাকরির ক্ষেত্রে শরীরে ট্যাটু করা ব্যক্তিকে চাকরির আবেদনযোগ্য নয় বলে ধরা হয়।

ভারত ও বাংলাদেশ

ভারত কিংবা বাংলাদেশে স্থায়ী ট্যাটু তেমন একটা জনপ্রিয় না হলেও এই দু’দেশেই  মেহেদী দিয়ে অস্থায়ীভাবে শরীর রাঙানো পুরানো একটি ঐতিহ্য।

মেহেদী রাঙা হাত; Source: pinterest.com

বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে মেয়েরা হাতে মেহেদী দিয়ে সুন্দর রঙিন নকশা আঁকে এ দু’দেশে। বিশেষ করে বিয়ের আগে বিয়ের কনের হাতে ও পায়ে মেহেদী দিয়ে নকশা আঁকানো হয়। এ সময় কনের বান্ধবীরাই কনের হাতে এসব নকশা আঁকিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে মেহেদীর রঙ যত গাঢ় হয় ততই ভালো। কারণ মেহেদীর রঙ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই উঠে যায়।

বিয়ের মেহেদীর সাজ; Source: hennatrails.files.wordpress.com

মেহেদী ছাড়াও ভারতের কিছু প্রদেশের মানুষ বহু আগে থেকে শরীরে স্থায়ী ট্যাটু আঁকায়। ট্যাটুর নকশা হিসাবে তারা সংস্কৃত অক্ষর ব্যবহার করে থাকে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেই ফ্যাশন হিসেবে স্থায়ী ট্যাটুর প্রচলন বাড়ছে।

উপমহাদেশীয় ট্যাটুর বিশেষ দিক

ভারতের কিছু স্থানে মেহেদী আঁকানো এতটাই জনপ্রিয় যে সেসব স্থানের মানুষ মেহেদী ছাড়া বিয়ে সম্পূর্ন হয় না এমনটি মনে করেন। বিয়ের আগের রাতে কনের একটি হাতে তার হবু শাশুড়ি মেহেদী দিয়ে নকশা আঁকানোর সূচনা করেন। এরপর দক্ষ শিল্পী দিয়ে কনের বাকি হাত ও পায়ে মেহেদী আঁকানো হয়। আঁকানো সম্পূর্ণ হতে লাগে প্রায় ছয় থেকে সাত ঘন্টা।

থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ডে ট্যাটু আঁকানোর ক্ষেত্রে রয়েছে বিশাল ইতিহাস। থাইল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্যাটু আঁকানো হয় ‘ওয়াট ব্যাং ফেরা’ মন্দিরে। প্রতি বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে এ মন্দির ভরে যায় হাজার হাজার মানুষে। তার কেউ এ সময় মন্দিরে পূজার উদ্দেশ্যে আসে না। তারা আসে মন্দিরের সন্ন্যাসীদের কাছ থেকে ট্যাটু আঁকিয়ে নিতে।

মন্দিরের সন্ন্যাসীরা আঁকছেন ট্যাটু; Source: photos.smugmug.com

থাইল্যান্ডের মানুষ শরীরে এসব ট্যাটু আঁকান সৌন্দর্যের পাশাপাশি রহস্যময় শক্তি পাওয়ার আশায়। তারা বিশ্বাস করেন, সন্ন্যাসীদের আঁকানো এসব ট্যাটু তাদেরকে খারাপ আত্মা, শয়তান ও খারাপ নারীদের হাত থেকে রক্ষা করে। এ ধরনের ট্যাটু করার পর ট্যাটু ধারণকারীকে দুটি জিনিস মেনে চলতে হয়। প্রথমটি হলো, ট্যাটু আঁকানোর পর থেকে সে আর তার পিতামাতাকে কোনো কাজে দোষারোপ করতে পারবে না। দ্বিতীয়টি হলো, সে কোনো পরস্ত্রীর সাথে প্রতারণা করতে পারবে না।

থাইল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী ট্যাটু; Source: dailymail.co.uk

প্রতিবছর বহু পর্যটক এই ট্যাটু আঁকানো জন্য থাইল্যান্ডে আসেন। তবে সাবধান, সন্ন্যাসীদের আঁকানো এসব ট্যাটুর জন্য আপনার তীব্র ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে।

থাইল্যান্ডের ট্যাটুর বিশেষ দিক

থ্যাইল্যান্ডের এই ট্যাটুগুলো করা হয় বাঁশের তীক্ষ্ম ফলা দিয়ে। এক্ষেত্রে কোনো ট্যাটু গান ব্যবহার করা হয় না। তাই যিনি এই ট্যাটু আঁকছেন তাকে হতে হয় অনেক বেশি সতর্ক এবং দক্ষ। তাকে জানতে হয় ঠিক কত জোরে চাপ দিলে কালি চামড়ার নিচে সঠিক স্থানে পৌছাবে।

This article is in Bangla language. It's about some traditional tattoos around the world.
For references please check the hyperlinks inside the article.

Featured Image: wallpapersfan.com

Related Articles