Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গভীর অরণ্যের মানজো সম্প্রদায়: ‘মানুষ’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়াই যাদের নিত্যদিনের লড়াই

আফ্রিকার প্রাচীনতম দেশ ইথিওপিয়া। ইথিওপিয়ায় ৭০টিরও বেশি জাতিগত ও ভাষাগত জনগোষ্ঠীর বসবাস। দেশটির কোথাও উঁচু পাহাড়-পর্বত, কোথাও গভীর অরণ্য আবার কোথাও ঊষর মরুভূমি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে রয়েছে গভীর ‘শেকা অরণ্য’৷ এই শেকা অরণ্যেই কমপক্ষে ১০টি জাতিগোষ্ঠী বসবাস। তাদের মধ্যে অন্যতম ‘মানজো সম্প্রদায়’। চরম অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার এই জনগোষ্ঠীকে স্থানীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ কাফফা সম্প্রদায়ের লোকেরা ‘অর্ধ-মানুষ’ বা ‘পশুরূপী মানুষ’ হিসাবে বিবেচনা করেন।  

ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে কাফফা প্রদেশের অবস্থান। শেকা অরণ্য এই প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে শেকা ইউনেস্কোর বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের অন্তর্ভুক্ত বনাঞ্চল। বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হচ্ছে এমন বনাঞ্চল যেখানে মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে বিশেষ সুসম্পর্ক বজায় থাকে। ১৯৭১ সাল থেকে ইউনেস্কো এই বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রমের যাত্রা শুরু করেছে। ২০১২ সালে শেকা অরণ্যকে ইউনেস্কো তাদের এই বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের অন্তর্ভুক্ত করে। এই বনকে ইথিওপিয়ার ফুসফুসও বলা হয়। প্রায় ২৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই বনেই মানজো সম্প্রদায়ের বসবাস।

শেকা অরণ্যের মানচিত্র; Image Source: Unesco

২০০৭ সালের এক আদমশুমারিতে দেখা যায়, কাফফা প্রদেশের জনসংখ্যা প্রায় ৯ লাখ। এর মধ্যে মানজো সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। ২০০৯ সালে ইয়োশিদা নামক এক গবেষক তার গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, মানজো সম্প্রদায়ের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার। এরা সবাই ‘কাফি নোনো’ বা ‘কাফা’ ভাষায় কথা বলে।

১৯৭৪ ডোনাল্ড লেভিনের নামক এক গবেষক এবং ১৯৭৯ সালে কোচিটোর নামক আরেক গবেষক তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন, কাফফা প্রদেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও ভারতীয় উপমহাদেশের মতো বর্ণপ্রথা রয়েছে। কাফফা সমাজে মোট তিন বর্ণের মানুষ রয়েছে; ক্যাপচো, কেমো ও মানজো। এদের মধ্যে ক্যাপচো উচ্চ বর্ণের অন্তর্ভুক্ত, সমাজের সম্ভ্রান্ত ও শাসক শ্রেণী এদের অন্তর্ভুক্ত। মধ্য অবস্থানে রয়েছে কেমো, কেমোরা মূলত কৃষ্ণাঙ্গ কৃষক শ্রেণী। আর সবার নিচে রয়েছে মানজো, এরা প্রধানত শিকারি শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এই কথিত নিম্নবর্ণের মানজো সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে থাকছে আজকের লেখায়।

মানজো নারী; Image Source: medianorth.co.ke

প্রাচীনকাল থেকেই মানজো জনগোষ্ঠী শেকা অরণ্যে বসবাস করে আসছেন। বনে বসবাস করার কারণে বনকে ঘিরেই ছিল তাদের জীবনযাপন। পশু শিকার করে সেদ্ধ বা কাঁচা খেয়ে ফেলাই ছিল তাদের অন্যতম অভ্যাস। বন ছেড়ে তারা কখনো লোকালয়ে আসতেন না। গাছের সাহায্যেই তারা তাদের আবাস্থল তৈরি করে নিতেন। তাদের উপরে কারো প্রভাব ছিল না, তারাও কারো উপরে নির্ভরশীল ছিলেন না।

সমস্যা দেখা দিলো যখন ইথিওপিয়ার ‘কাফফা সাম্রাজ্যে’র গোড়াপত্তন ঘটল। ১৩৯০ সাল বৃহত্তর ইথিওপিয়ায় কাফফা সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন ঘটে এবং ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত এই সাম্রাজ্য বহাল ছিল। কাফফা সম্রাটরা মানজো সম্প্রদায়ের লোকদের আর নিরিবিলি বনে বসবাস করতে দিতে চাইলেন না; মানজোদেরকে সাম্রাজ্যের সীমান্ত পাহাড়ার দায়িত্বে নিয়োগ করা শুরু হলো। তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সীমান্ত পাহাড়া দেওয়া ছিল নিচু স্তরের লোকদের কাজ; তার উপরে আবার মানজোদের বসবাস বনের মধ্যে। সব মিলিয়ে কাফফা সাম্রাজ্যের সবচেয়ে নিম্নশ্রেণীর খেতাব পেয়ে গেল মানজো সম্প্রদায়ের লোকেরা। সেই সূত্র ধরে মানজোরা এখনো নিম্ন শ্রেণীর মানুষ হিসাবে বিবেচিত হয়।

কাফফা সাম্রাজ্যের সীমান্ত পাহাড়া দেয়ার দায়িত্বে নিযুক্ত হতেন মানজোদের; Image Source: medianorth.co.ke

মানজোদের দুঃখের গল্পটা সেখানেও শেষ নয়। সাম্রাজ্য পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব পালন করলেও তাদের আবাসস্থল বনেই থেকে যায়। বনেই তাদের জীবনযাপন। নিম্ন শ্রেণীর মানুষ হিসেবে বিবেচিত হলেও তারা বেশ সুখী জীবনযাপন করতো। সাম্রাজ্যের পতন হয়ে গেলে তারা ফের রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে; বনের সন্তানরা বনে ফিরে যায়। নতুন করে সঙ্কটটা তৈরি হয়, যখন বনের উপরে নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হতে থাকে।

বাংলায় প্রবাদ আছে, ‘কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ’। মানজোদের অবস্থা যেন সর্বনাশের দিকে, বন সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে আমরা হয়তো প্রকৃতি রক্ষা করতে পেরেছি। সর্বশেষ শেকা অরণ্যে ইউনেস্কো কতৃক বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ঘোষণা হওয়ায় মানজোরা ভূমির অধিকার হারিয়ে ফেলে। বনের মধ্যে তাদের চাষাবাদ নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি গাছ কাটার অধিকারও তাদের নেই। ফলে জীবনযাপনও প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তবুও বন থেকে তারা মৃত গাছ নিয়ে আসে; তা পুড়িয়ে কয়লা বানায় এবং সেই কয়লা বিক্রি করে নিজেদের দৈনন্দিন চাহিদা খরচ মেটায়।

শেকা অরণ্যের বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ অন্তর্ভুক্ত এলাকার একটি চিত্র; Image Source: Embassy of Ethiopia

তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিলাভের ফলে তাদের জীবনসঙ্কটে কিছুটা আলোর রেখা বিচ্ছুরিত হচ্ছে। বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে ‘মেক্লা’ নামক একটি দাতব্য সংস্থা মানজোদের গরু কিনে দিচ্ছে; তা পালন ও বংশ বিস্তার ঘটিয়ে মানজোদের ভাগ্য বদলের চেষ্টা করা হচ্ছে। 

আমরা শুরুতে বলেছিলাম, স্থানীয় কাফফা জনগোষ্ঠীর লোকেরা মানজো সম্প্রদায়ের লোকদের ‘অর্ধ মানুষ’ বা ‘পশু তুল্য মানুষ’ মনে করে। কিভাবে এমন বর্ণবাদ প্রভাব বিস্তার করে আছে তা নিয়ে টেকলে এবং ইয়োশিডা নামক দুইজন গবেষক গবেষণা চালিয়েছেন। তাদের গবেষণায় যেসব বিষয় উঠে এসেছে তা নিয়ে আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করবো।

‘মেক্লা’ নামক একটি দাতব্য সংস্থা মানজোদের গরু প্রদান করছে; Image Source: international-climate-initiative.com

খাদ্যাভ্যাস

মানজোদের ‘অর্ধ মানুষ’ হিসেবে গণ্য করার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ তাদের খাদ্যাভ্যাস। তারা বাঁদরের মাংস খেয়ে থাকেন। এছাড়াও শূকর, বানর, শজারু ইত্যাদি পশুর মাংসও তারা ভক্ষণ করে থাকেন। আরও লক্ষণীয় ব্যাপার হল, তারা পশুর মাংস সেদ্ধ করে খাওয়ার পাশাপাশি কাঁচা অবস্থায় খেতেও অভ্যস্ত। তাদের দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা এমন খাদ্যাভ্যাসের সাথে লোকালয়ের মানুষের খাদ্যাভ্যাসের মিল নেই; বিশেষত কাঁচা মাংস খেয়ে ফেলার বিষয়টি। এ কারণে মানজো সম্প্রদায়ের মানুষদের লোকালয়ের মানুষরা পশুর সাথে তুলনা করে থাকে। 

শিক্ষা

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাদের নিকট একটি আধুনিক বিষয়। বনবাসীদের এ সম্পর্কে ধারণা না থাকাই স্বাভাবিক। তেমনি মানজো সম্প্রদায়ের লোকদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, অপরদিকে লোকালয়ের মানুষদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে লোকালয়ের মানুষরা মানজোদের ‘অর্ধ মানুষ’ হিসাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে এটাওি স্বাভাবিক। 

ধর্মীয় কারণ

কাফফা প্রদেশের অধিকাংশ মানুষ খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী। মানজোদের মধ্যেও অধিকাংশ খ্রিস্টান কিন্তু লোকালয়ের অধিবাসীরা তাদের আগে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে- এমন পরিস্থিতিতে মানজোদের ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি খ্রিস্ট ধর্ম বিস্তারের পাশাপাশি কিছু নিয়ম কানুনেরও বিস্তার ঘটেছে। কিন্তু মানজোরা নিজেদের মধ্যে সেসবের বিস্তার ঘটিয়েছে কম। তারা তাদের স্বাভাবিক বন্য জীবনযাপন ধরে রেখেছে। এছাড়া বহুবিবাহ ও স্বাস্থ্য সচেতনতা না থাকা মানজোদের লোকালয়ের মানুষদের সাথে দূরত্ব তৈরি করেছে, যা তাদের সামাজিক স্বীকৃতির অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মানজো শিশু; Image Source: actionaid.org

রাজনৈতিক কারণ

কাফফা সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক চর্চাও মানজোদের অবহেলার অন্যতম কারণ। কাফফা সাম্রাজ্যের অধীনে সীমান্ত পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব পালন করলেও তারা ছিল সকল ধরনের নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত। তাদের জন্য শিক্ষা গ্রহণের কোনো সুযোগ ছিল না। কোনো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও তাদের অংশগ্রহণের অনুমতি ছিল না। অর্থাৎ তখন যেহেতু তারা সব কিছুতে অচ্ছুৎ ছিল তাই এখনও তারা সকল প্রকার সামজিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবে এমন একটি ধারণা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে গড়ে উঠেছে। 

নির্যাতন

মানজো সম্প্রদায়ের লোকেরা লোকালয়ে আসলে তাদের উপরে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালায় স্থানীয় কাফফা জনগোষ্ঠীর লোকজন। কখনো কখনো বনের ভিতরে গিয়ে মানজো সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। মানজোদের উপরে নির্যাতন নিয়ে বিশিষ্ট গবেষক ইয়োশিডা লিখেছেন 

মানজোরা কাফফাদের সাথে মিলে যায় এমন পোশাক পরে রাস্তায় বের হতে পারতেন না। কোনো কাফফা কোনো মানজোকে লোকালয়ে দেখলে তার উপরে মানসিক অত্যাচার চালায়; তাকে উদ্যেশ্য করে বলে, ‘শোস্কি কিব্বো’, যার অর্থ, ‘তোমার সাথে দেখা হওয়ার আগে আমার কেন মৃত্যু হলো না’। কখনো কখনো কখনো আমাদের উপরে শারীরিক অত্যাচারও চালানো হয়।  

সীমান্ত প্রহরীর পোশাকে একজন মানজো সদস্য; Image Source: exhibitions.nypl.org

‘মানুষ’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার লড়াই

এমন বাস্তবতাকে সামনে রেখে মানজো সম্প্রদায়ের লোকেরা এখনও মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। লোকালয়ে যেমন তারা অচ্ছুৎ, ঠিক বনও তাদের জন্য দিন দিন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিকে সামনে রেখে মানজোরা ‘মানুষ’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার লড়াইয়ে নেমেছে। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ অগ্রগামী হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করছে। কয়েকটি সাহায্য সংস্থা মানজো শিশুদের শিক্ষার জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে, অপর্যাপ্ত হলেও কিছু শিশু স্কুলে গমন করতে শুরু করেছে। মানজোদের এই মানসিক পরিবর্তনকে তুলে ধরতে গিয়ে বিশিষ্ট গবেষক ইয়োশিডা লিখেছেন :

এতকিছুর মধ্যেও কিছু মানজো যুবক উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে। তারা তাদের নিজস্ব অভ্যাস ও প্রথাকে ঠিক রেখেই সকল প্রকার বৈষম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তারা স্থানীয় সরকার ও লোকালয়ের মানুষের অত্যাচারের প্রতিবাদ জানায়। নিজেদের ভাষা টিকিয়ে রাখার জন্য মানুষকে সচেতন করে তোলে। জেলা প্রশাসকরা তাদের সাথে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা আদায়ের চেষ্টা করে। প্রাদেশিক সরকার ও স্থানীয় সরকার তাদের কথাকে গুরুত্ব দিতে চান না এই অভিযোগে যে- তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়। এজন্য মানজোদের সেই যুবকরা রাজনীতিতেও সচেতন ও সক্রিয় হতে চায়। তারা নিজেদের মধ্যে শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে চায়। 

মানজোদের আবাস্থল এই শেকা অরণ্যে, যা দিন দিন তাদের জন্য সঙ্কীর্ণ হয়ে যাচ্ছে; Image Source: Quora

গবেষক ইয়োশিডা স্থানীয় কাফফা জনগোষ্ঠী ও মানজোদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক কিভাবে তৈরি করা যায়- এ বিষয়ে উভয় পক্ষের লোকদের সাথে কথা বলেছেন। উভয় পক্ষেরই একাংশ চায় তাদের মধ্যকার এই অচ্ছুৎ সম্পর্ক দূর হয়ে যাক। তবে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত এই বৈষম্য দূর করা খুব সহজ কাজ নয়; বিশেষত স্থানীয় সরকারও যখন মানজোদের উপরে নির্যাতনের সাথে জড়িত। তবে, মানজোদের নিয়ে এখন বেশ কিছু দাতব্য সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। তারা একটি সামাজিক সহাবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তেমনি একটি দাতব্য সংস্থায় কাজ করছেন সিস্ত নামের এক গবেষক, তিনি বলেন-

গত কয়েক বছরে অত্র এলাকার পরিস্থিতির অনেক উন্নতি ঘটেছে। কিছু আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা দীর্ঘদিন এখানকার বৈষম্য, বিশেষত মানজোদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করেছে। 

পৃথিবীর সকল জাতিগোষ্ঠীরই কিছু নিজস্ব প্রথা, ধর্ম, অভ্যাস ও সংস্কৃতি থাকে। যেমন বাংলাদেশের মুসলমানদের কাছে গরুর মাংস প্রিয় একটি খাবার এবং শুকর খাওয়া তাদের জন্য হারাম। আবার পাশের দেশ ভারতের চিত্র ঠিক তার উল্টো। সেখানকার হিন্দু জনগোষ্ঠী শূকরের মাংস খেতে পছন্দ করেন এবং গরুর মাংস খাওয়া তাদের জন্য অপরাধ। এখন এই বিপরীতধর্মী অভ্যাসকে সামনে রেখে আমরা কি কাউকে ‘অর্ধ মানুষ’ বা ‘পশুর ন্যায় মানুষ’ বলতে পারি? মানজোদের অবস্থাও আমাদের সেই স্থান থেকে ভাবতে হবে। মানজোরা তাদের দীর্ঘদিনের প্রথা, অভ্যাস ধরে রেখেই নিজেদের মানবাধিকারটুকু ফিরে পাক, পূর্ণ মানুষের মর্যাদা পাক এটাই আমাদের কামনা। 

ফিচার ইমেজ: medianorth.co.ke

Related Articles