Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

৭৩ হাজার বছর আগের চিত্রকর্মটি কি পৃথিবীর প্রাচীনতম শিল্প?

শিল্প-সাহিত্য সভ্যতার অন্যতম মাপকাঠি। বিশেষত আমরা যখন কোনো প্রাচীন সভ্যতার নৃতাত্ত্বিক পর্যালোচনা করে থাকি, তখন তাদের ব্যবহৃত ও তৈরিকৃত বিভিন্ন জিনিসের ধ্বংসাবশেষ আমাদের গবেষণার প্রধান তথ্য-উপাত্তে পরিণত হয়। তেমনই তিনটি প্রাচীন চিত্রকর্ম নিয়ে আমাদের আজকের লেখা। এর মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় আবিষ্কৃত একটি চিত্রকর্ম। নৃবিজ্ঞানীরা যে চিত্রকর্মটি প্রায় ৭৩ হাজার বছর আগের বলে অনুমান করছেন। সংশ্লিষ্ট গবেষকগণ চিত্রকর্মটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম শিল্পকর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করছেন, যখন আরেকটি পক্ষ শিল্প হিসেবে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন।

ইন্দোনেশিয়ার সুলভেসি দ্বীপের একটি গুহার দেয়ালে আবিষ্কৃত চিত্রকর্মে শূকর ও মানুষের হাতের ছবি; Image Source: nationalgeographic.com

এর আগে ইন্দোনেশিয়া ও স্পেন থেকে আবিষ্কৃত দুটি পৃথক চিত্রকর্মকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার সুলভেসি দ্বীপ থেকে আবিষ্কৃত হয় প্রায় ৪০,০০০ বছর আগের একটি চিত্রকর্ম। চিত্রকর্মটিতে মানুষের একটি হাত ও শূকরের ছবি দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ম্যাক্সিম আউবার্টের নেতৃত্বে এই শিল্পকর্মটি আবিস্কার করা হয়।

আগের ছবিটি সহজে বোঝার জন্য এই ছবিটি সবার জন্য কার্যকর হতে পারে, এখানে শূকর ও হাতের চিহ্ন স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে- সেই সাথে চিত্রগুলোর বয়স উল্লেখ করা হয়েছে; Image Source: nationalgeographic.com

তবে আবিষ্কৃত শূকর ও মানুষের হাত একই সময়ের চিত্রকর্ম নয় বলে মতামত নৃবিজ্ঞানীদের। তাদের মতে, মানুষের হাতের ছাপটি অধিক প্রাচীন। গবেষণায় দেখা যায়, শূকরের চিত্রটি ৩৫,৫০০ বছর আগের এবং মানুষের হাতের ছাপটি ৩৯,৯০০ বছর আগের। একই স্থানে দুই সময়ের চিত্র থাকায় গবেষকদের ধারণা, সেখানকার প্রাচীন অধিবাসীরা চিত্রশিল্পে বেশ অগ্রসর ছিল।

আবিষ্কৃত চিত্রকর্মে যখন মানুষের হাতের চিত্র আঁকা হয়, তার প্রায় ৪,৪০০ বছর পর সেই একই চিত্রের উপরে শূকরের ছবি আঁকা হয়। এতে গবেষকদের ধারণা তৈরি হয় যে, তাদের আঁকাআঁকির জন্য নির্দিষ্ট জায়গাও ছিল- আর তা হচ্ছে গুহায় তৈরি দুর্গের দেয়াল। শুধু একটি চিত্রকর্মই নয়- পরবর্তীতে এর আশেপাশে আরও ৭টি চিত্রকর্ম খুঁজে পাওয়া যায়; সেগুলোর মধ্যে বেশ সাদৃশ্যও বিদ্যমান; এসব চিত্রে শতাধিক হাতের চিত্র পাওয়া যায়। 

ইন্দোনেশিয়ার সুলভেসি দ্বীপ থেকে আবিষ্কৃত আরেকটি চিত্রকর্ম, যেখানে অনেকগুলো হাতের ছাপ ও একটি হরিণ দেখা যাচ্ছে। চিত্রটির সঠিক বয়স জানা না গেলেও এটি আগের ছবির সমসাময়িক বলে ধারণা গবেষকদের; Image Source: nationalgeographic.com 

তবে এই চিত্রকর্মের একক স্বীকৃতি নেই। কেননা স্পেনে আবিষ্কৃত চিত্রকর্মটিও প্রায় সমসাময়িক। অনেকের মতে, আরও ৮০০ বছরের বেশি পুরাতন। অর্থাৎ প্রায় ৪০,৮০০ বছর আগের একটি চিত্রকর্ম আবিষ্কৃত হয়েছে সেখানে। স্পেনের ইআই ক্যাসটিলো গুহায় এই চিত্রকর্মটি পাওয়া যায়। ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ও বিশিষ্ট নৃবিজ্ঞানী অ্যালিস্টার পাইক এই গবেষণা কর্মের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। এই চিত্রকর্মটিতেও মানুষের হাতের ছাপ পাওয়া যায়। ফলে গবেষকদের মধ্যে এমন ধারণাও তৈরি হয় যে, শিল্পকলার অংশ হিসেবে মানুষ সবার আগে হাত আঁকা শিখেছিল। 

স্পেনের ইআই ক্যাসটিলো গুহা থেকে আবিষ্কৃত চিত্রকর্ম- যেখানে অনেকগুলো হাতের ছাপ দেখা যাচ্ছে; Image Source: nationalgeographic.com 

প্রাচীনতম চিত্রকল্পের ইতিহাস এখানেই শেষ নয়। আলোচিত স্পেনের চিত্রকল্পটির চেয়ে প্রাচীন আরও দুইটি চিত্রকল্পের দাবিদার খোদ স্পেনেই রয়েছে। এর মধ্যে একটি ৪২,৩০০ বছরের পুরাতন এবং আরেকটি ৪৩,৫০০ বছরের পুরনো চিত্রকর্ম। এ চিত্রকর্ম দুটি আধুনিক মানুষের আগের ‘নিয়ান্ডারথাল’ নামক হোমো সেপিয়েন্সদের আঁকা। স্পেনের মালাগায় একটি গুহা থেকে এই চিত্রকর্ম দুটি আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু নৃবিজ্ঞানী অ্যালিস্টার পাইকের মতে, এ দুটি চিত্রকর্মের গবেষকরা যথার্থ তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ফলে তার আবিষ্কৃত চিত্রকর্মটিই সবচেয়ে প্রাচীন।

স্পেনের মালাগায় একটি গুহা থেকে আবিষ্কৃত প্রায় ৪৩,৫০০ বছরের পুরাতন চিত্রকর্ম; Image Source: newscientist.com

কিন্তু এসব তর্ক-বিতর্কে নতুন করে হাজির হলেন আরেকদল নৃবিজ্ঞানী। তারা জানালেন, প্রায় ৭৩,০০০ বছর আগের একটি চিত্রকর্মের কথা। সম্প্রতি বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘ন্যাচার’-এ তারা চিত্রকর্মটি নিয়ে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে পুরো নৃবিজ্ঞান জগতে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন। গবেষক দলে রয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার ইউনিভার্সিটি অফ দ্য উইথওয়াটারস্যান্ডের গবেষক ক্রিস্টোফার এস হেন্সিলউড ও লুকা পোলারোলো, ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অফ বারোডোর গবেষক ফ্রান্সেসকো ডি ইরিকো, লোর ডেট ও অ্যালাইন কুইফেলেক এবং নরওয়ের ইউনিভার্সিটি অফ বার্গেনের গবেষক ক্যারেন এল ভ্যান নইকার। তারা দক্ষিণ আফ্রিকার বোলমস গুহা থেকে মধ্য প্রস্তর যুগে অঙ্কিত একটি চিত্রকর্ম আবিষ্কার করেন।   

এই নৃবিজ্ঞানীগণ মাইক্রোস্কোপ ও রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে চিত্রকর্মটি নিয়ে গভীর গবেষণা চালান। এরপর তারা পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। আরো বিশদ গবেষণায় তারা নিশ্চিত হন যে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন চিত্রকর্ম। ‘ন্যাচার’ ম্যাগাজিন অবলম্বনে প্রাণ ও প্রকৃতি বিষয়ক গণমাধ্যম ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফি’ -তে একটি নিবন্ধ লিখেছেন ইরিন ব্ল্যাকমেওর। রোর বাংলার পাঠকদের জন্য সেখান থেকে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।

দক্ষিণ আফ্রিকার বোলমস গুহা থেকে আবিষ্কৃত ৭৩,০০০ বছর আগের চিত্রকর্ম; Image Source: nationalgeographic.com

বিজ্ঞানীরা মূলত কী আবিষ্কার করলেন?

প্রত্নতাত্ত্বিকরা সিলক্রিটের মসৃণ স্ফূলিঙ্গ সমৃদ্ধ একটি ধূসর পাথরের সন্ধান পেয়েছেন। যা গঠনগতভাবে মসৃণ প্রকৃতির। পাথরটির গায়ে রয়েছে প্রচণ্ড তাপে খোদাইকৃত নকশা। পাথরটি বালু ও নুড়ি পাথরের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। এক থেকে দেড় ইঞ্চি মাপের নকশাগুলো আগুনের তাপে খয়েরি রঙ ধারণ করেছে। ধূসর, লাল, খয়েরি ও সাদা বর্ণের সমন্বয়ে চিত্রকর্মটি একটি রঞ্জক পদার্থের ন্যায় রূপ ধারণ করেছে। চিত্রকর্মটির আশেপাশে গবেষণা চালিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিকরা আরও অনেকগুলো চিত্রকর্মের সন্ধান পেয়েছেন। 

চিত্রকর্মটির গঠন; Image Source: nature.com

চিত্রকর্মটি কোথা থেকে আবিষ্কৃত হলো?

গবেষক দলটি বোলমস গুহার বাম পাশ থেকে এই স্ফূলিঙ্গ সমৃদ্ধ পাথুরে চিত্রকর্মটি আবিষ্কার করেন। বোলমস গুহাটি দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম রাজধানী কেপটাউন থেকে প্রায় ১৮৫ মাইল পূর্বে ভারত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত। গুহাটির প্রবেশপথ দেখলেই অনুমান করা যায়, এখানে এক সময়ে গুহামানবদের বসবাস ছিল। তাছাড়া গুহার অভ্যন্তরে পশু শিকার করার যন্ত্র ও খাদ্য মজুদ রাখার জায়গার সন্ধান পাওয়া যায়। 

প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুমান, প্রায় ৭০,০০০ বছর আগে কোনো এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে গুহার মুখটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সেখানে বসবাসরত মানুষও মৃত্যুবরণ করে। এরপর সমুদ্রের পানি বৃদ্ধি ও বালু ওঠানামাকে কেন্দ্র করে গুহার মুখটি কয়েক দফায় উন্মুক্ত হয় এবং আবার বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু চিত্রকর্মটি গুহার দেয়ালে অবিকল থেকে যায়। চিত্রকর্মের অন্যতম আবিষ্কারক ক্রিস্টোফার এস হেন্সিলউড এ বিষয়ে বলেন

“চিত্রকর্মটি পুরোপুরি অক্ষতভাবেই সংরক্ষিত হয়েছে।”

গুহাটিতে চিত্রকর্মের পাশাপাশি মানুষের ব্যবহৃত আরও বিভিন্ন দ্রব্যাদি পাওয়া যায় যেমন কার্তুজ, পুতি, বর্শা, বল্লম, গিরিমাটি, বিভিন্ন ধরনের হস্তনির্মিত বস্তু প্রভৃতি।  

বোলমস গুহার বাইরের দৃশ্য; Image Source: phys.org

চিত্রকর্মটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? 

গবেষকগণ জানিয়েছেন- 

“চিত্রকর্মটি আপতদৃষ্টিতে প্রাচীন মানবদের একটি যৌথ প্রয়াস বলে প্রতীয়মান হচ্ছে, অর্থাৎ এটি অংকনের সাথে অনেকজন শিল্পীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।”

চিত্রকর্মটি গবেষকদের বেশ অবাক করে দিয়েছে- কেননা আদিযুগের শিল্পকর্ম সম্পর্কে নৃবিজ্ঞানীদের যে অনুমান ছিল এই চিত্রকর্মটি সেই অনুমান ভেঙ্গে দিয়েছে। নৃবিজ্ঞানীদের এতকাল অনুমান ছিল, মধ্যপ্রস্তর যুগ বা প্রাচীন যুগের মানুষ যেসকল শিল্পকর্ম করতে পারে তা পশুপাখির হাড় কিংবা হাড়ের উপরে পাথর দ্বারা খোদাইকৃত কোনো শিল্পকর্ম হবে; কিন্তু নতুন আবিষ্কৃত এ চিত্রকর্মে দেখা যায়, পাথরের উপরে আগুনের স্ফুলিঙ্গ দ্বারা খোদাইকৃত শিল্প।

তাছাড়া চিত্রটির ধরনও ব্যবহারিক দিক বিবেচনায় আধুনিক শিল্পের মতো। ফলে দেখা যাচ্ছে, আধুনিক শিল্পের উৎপত্তি এতকাল যেভাবে ৪০,০০০ বছরের পুরাতন বলে অভিহিত করা হতো, এখন দেখা যাচ্ছে তার ইতিহাস আরও পুরনো। অর্থাৎ প্রায় ৭০,০০০ বছর আগেই আধুনিক শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। 

গবেষক ক্রিস্টোফার এস হেন্সিলউড চিত্রটির বিস্ময়কর দিকের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন-

“চিত্রটি দেখতে অনেকটা চার পা বিশিষ্ট টেবিলের মতো। এ ধরনের প্যাটার্ন ইউরোপে আধুনিক সভ্যতা বিকাশের শুরুর দিকের চিত্রকর্মে দেখা যায়।”

সর্বোপরি গবেষকরা মনে করছেন, এটি পুরো নৃতাত্ত্বিক গবেষণার জগতকে নতুন ভাবে ধাক্কা দিতে পারে। এই আবিষ্কার ইউরোপিয়ান শিল্পের বিকাশ ও আফ্রিকান মানুষের ‘পিছিয়ে থাকার পূর্বানুমান’ ভেঙে দিতে পারে।     

বোলমস গুহার অভ্যন্তরে মাটি খুঁড়ে চিত্রকর্ম আবিষ্কারের সময়ে গভীর মনোযোগী দুই নৃবিজ্ঞানী; Image Source: sciencenordic.com

বিশেষজ্ঞগণ কি এই দাবির সাথে ঐক্যমত পোষণ করছেন? 

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার এমিরাটস প্রফেসর ও বিশিষ্ট নৃবিজ্ঞানী মারগ্রেট কেনেডি এই চিত্রকর্মটিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ সময়ের সংগ্রহ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। মারগ্রেট কেনেডি দীর্ঘদিন যাবত প্রাচীন গুহা ও দুর্গের বিভিন্ন শিল্পকর্ম নিয়ে বিস্তর কাজ করছেন। তিনি বলেন- 

“তাদের আবিষ্কারের পরিপ্রেক্ষিত খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারা অনেক বছর যাবত বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। সকল তথ্য-উপাত্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করে দেখছেন তারা। মানবজাতির ইতিহাসে এই গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

কেনেডি আরও বলেন-  

“তারা তাদের গবেষণায় আফ্রিকাকেন্দ্রিকতা গুরুত্বপূর্ণ করে দেখছেন। এটি নতুন একটি চ্যালেঞ্জ। কেননা, আচরণগত আধুনিকতার উৎপত্তি ইউরোপ থেকে হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। তবে এটা ঠিক যে, ইতোমধ্যে আফ্রিকা থেকে প্রাচীনকালীন আধুনিক মানব ফসিল উদ্ধার করা হয়েছে।”

তার মতে-

“কোনোকিছুর এককেন্দ্রিক গবেষণা ভালো নয়। আফ্রিকাকেন্দ্রিকতা আমাদের ভাবনায় নয়া মাত্রা যুক্ত করতে পারে। কেননা মানুষের উৎপত্তি ও বিকাশের ইতিহাস অত্যন্ত জটিলতাপূর্ণ। এর কোনো নির্দিষ্ট উৎপত্তিস্থল নেই।”

অর্থাৎ আফ্রিকার এই চিত্রকর্মটির সাথে বিশেষজ্ঞগণ এখনই সরাসরি ঐক্যমত পোষণ করতে রাজি হচ্ছেন না; আবার এর গুরুত্বও অস্বীকার করতে পারছেন না। সবার স্বীকৃতি আদায়ে হয়তো চিত্রকর্মটির সাথে যুক্ত গবেষকদের আরও লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

বোলমস গুহার অভ্যন্তর থেকে বাহিরের দৃশ্য; এটি গুহার প্রবেশ পথও বটে; Image Source: nationalgeographic.com

গবেষকরা এটিকে চিত্রকর্ম বললেও আসলেই কি বিষয়টি শিল্পকর্ম পর্যায়ের? 

পরিশেষে তর্কের বিষয় হচ্ছে, আবিষ্কৃত চিত্রকর্মটিকে কি আদৌ শিল্পকর্মের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা যায়; নাকি এটি সাধারণ কোনো চিত্র মাত্র? 

বিষয়টি নিয়ে গবেষক ক্রিস্টোফার এস হেন্সিলউড বলেন- 

“আমরা জানি, অনেকেই এটিকে শিল্পকর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চাইবেন না। তারা বলবেন, এখানে শিল্পের সকল উপাদান উপস্থিত নেই। কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার শিল্পের একক কোনো সংজ্ঞায়ন করা অত্যন্ত জটিল কাজ। আপনি কি পিকাসোর কাজকে শিল্প বলতে পারবেন? নাকি অ্যাবস্ট্রাক্ট বলবেন?”

তিনি বলেন,

“যারা বলতে চান, এটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়ে যাওয়া কোনো চিত্র, তাদের খেয়াল রাখা উচিত যে, পাথরের উপরে স্ফুলিঙ্গের নকশাগুলো সব জায়গায় সমান মাপের। সেগুলো সমান ভাবে প্রতিবার একটি অন্যটিকে অতিক্রম করেছে। প্রাকৃতিকভাবে এমন কোনো চিত্র তৈরি হওয়া সম্ভব নয়।”

কিন্তু মারগ্রেট কেনেডি মনে করেন, ক্রিস্টোফার এস হেন্সিলউড ও তার দলের দাবির মধ্যে বাড়াবাড়ি রয়েছে। তিনি বলেন-

“হেন্সিলউড এবং তার দল একটি নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে; বিশেষত যখন এটি আঁকার উপাদান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। তারা বলেন এটি গৈরিক মাটি ও রঙ্গিন খড়ি পুড়িয়ে তৈরি করা হয়েছে। অথচ প্রাকৃতিকভাবেও এমন চিত্র তৈরি হতে পারে। তাদের প্রমাণ করতে হবে এটি প্রাকৃতিক নয়- মানুষের আঁকা।”

বোলমস গুহা থেকে আবিষ্কৃত আরও কিছু চিত্রকর্ম; Image Source: nature.com

কেনেডি প্রশ্ন তোলেন, এত প্রাচীনকালে মানুষ গৈরিক মাটির ব্যবহার শিখল কীভাবে? তখন অ্যাবস্ট্রাক্ট এর ধারণা কীরূপ ছিল? টাইম মেশিনের যথার্থ ব্যবহার ছাড়া এসব আমরা কিছুই জানতে পারবো না।  

ফলে জটিলতা কিছুটা থেকেই যাচ্ছে। তবে সম্ভাব্য সকল প্রশ্নের জবাব সংশ্লিষ্ট গবেষকগণ দিয়ে যাচ্ছেন। পরিশেষে গবেষকদের দাবির অন্যতম বিরোধিতাকারী ও বিশিষ্ট নৃবিজ্ঞানী কেনেডির উক্তি দিয়েই আলোচনা শেষ করা যাক।

“সবকিছুর পরও, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি আমাদের গবেষণাকে নতুন করে ভাবাচ্ছে। বিশেষত আফ্রিকার প্রাচীন মানব সভ্যতার শিল্পের উচ্চতা নিয়ে।”

ফিচার ইমেজ- nationalgeographic.com

Related Articles