বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। আক্রান্ত হচ্ছে একের পর এক দেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ কে ইতিমধ্যে প্যানডেমিক ঘোষণা করেছে। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে মানুষ। করোনাভাইরাসকে ঠেকাতে আদাজল খেয়ে নেমেছে আক্রান্ত দেশগুলো। সব ধরনের গণ জমায়েত নিষিদ্ধ করে জনসাধারণকে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হচ্ছে। ফলে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজ, বন্দর, থিয়েটার প্রভৃতি। জনমানবশূন্য এসব জায়গায় এখন বিরাজ করছে ভূতুড়ে পরিবেশ। তবে কিছু আশাজাগানিয়া চিত্রও আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। সব মিলিয়েই আমাদের আজকের আর্টিকেল। তো পাঠক, চলুন দেরি না করে দেখে আসি সেসব চিত্র।
হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে জনশূন্য লিস্ট ফেঁরেঞ্চ একাডেমি অব মিউজিক হলরুমে অর্কেস্ট্রা বাজাচ্ছেন মেট হ্যামোরী। ছবিতে তার ছায়া দেখা যাচ্ছে।
যে সানফ্রানসিসকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সর্বদাই ভিড় লেগে থাকে, যাত্রীর অভাবে সেটি এখন ভূতুড়ে।
মূহুর্মূহু করতালির শব্দে উচ্চকিত থাকা ষাঁড়ের লড়াইয়ের আঙিনা এখন নীরব, নিশ্চুপ। দক্ষিণ কোরিয়ার খয়ংসাং প্রদেশে।
লন্ডনের কোভেন্ট গার্ডেনে রেস্টুরেন্টের চেয়ারগুলোয় ধুলো পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।
বেলজিয়াম সরকার দেশের সব স্কুল, ক্যাফে, রেস্তোরাঁ বন্ধ ঘোষণা করার পর ব্রাসেলসের এক স্কুলের চিত্র।
মিলানের ড্যুয়োমো স্কয়ার। জনমানবশূন্য চত্বরে কবুতরদের স্বচ্ছন্দ বিচরণ।
নেই কোনো কোলাহল। ক'দিন আগেও যাত্রীদের ভিড়ে মুখরিত থাকা বার্সেলোনার এস্তাসিও ডি ফ্যানসা রেলওয়ে স্টেশন এখন বিরান।
করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করার উদ্দেশ্যে পুরো ইতালি লক ডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতেও। ভেনিসের শেয়ার বাজার চত্বর। লক ডাউনের তৃতীয় দিনে।
করোনার প্রভাব পড়েছে ব্যাংককেও। জনশূন্য ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দর।
জনশূন্য বাস্ক সিটি অব ভিটোরিয়া চত্বরে (ইতালি) একজন নারী একাকী হেঁটে যাচ্ছেন।
বলিভিয়ার সরকার দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। যার ফলে বন্ধ হয়েছে স্কুল সহ সব ধরনের জমায়েত। তাই শ্রেণীকক্ষ এখন শিক্ষার্থীশূন্য।
লড়াই করে দর্শকদের বিনোদন দেওয়াই তাদের পেশা। কিন্তু বার এখন পর্যটক শূন্য। তাই বলে কি থেমে থাকলে চলে? থাইল্যান্ডের পাতায়াতে পর্যটক শূন্য এক বারে লড়াইরত দুই মোয় থাই যোদ্ধা।
নেই কোনো পর্যটক, নেই কোনো কোলাহল। ভেনিসের গ্র্যান্ড ক্যানাল এখন নিভৃতে বহমান।
থাইল্যান্ডের ফুকেটে চেয়ার পাতা সমুদ্র সৈকত এখন ধু ধু বালুময়।
বিভিন্ন দেশ সেদেশে অন্যান্য দেশের নাগরিকদের প্রবেশাধিকারে বিধিনিষেধ আরোপ করছে। তার প্রভাব পড়ছে বিমান চলাচলেও। সিঙ্গাপুর থেকে ব্যাংককগামী কোনো এক বিমানের অভ্যন্তরীণ চিত্র।
কেরালা রাজ্য সরকার ১৬ মার্চ পর্যন্ত সব সিনেমা হল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তারই ফলস্বরুপ কোচিতে জনশূন্য সিনেমা হল।
পর্যটকশূন্য সাগ্রাদা ফেমিলিয়া ব্যাসিলিকা, বার্সেলোনা, স্পেন।
করোনা রোধে সৌদি সরকার উমরাহ স্থগিত ঘোষণা করেছে। এরপর মসজিদুল হারামের মূল অংশে প্রবেশ সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দিয়ে পুরো চত্বর জীবাণুমুক্ত করা হয়।
দর্শনার্থী শূন্য হানি বিন আরওয়ার মাজার যেটি ইরাকের নাজাফ শহরে অবস্থিত। এটি শিয়াদের নিকট পবিত্র স্থান।
ইতালির মিলানে অবস্থিত কোনো এক সুপার মার্কেট। ক্রেতারা সব পণ্য কিনে সুপার মার্কেট শূন্য করে দিয়েছে!
এ যেন এক ভূতুড়ে রাস্তা। কোনো জনমানব নেই। থাকবেই বা কী করে? সব মানুষ যে গৃহবন্দী। ইতালির সান ফিওরানোতে।
যে স্টেডিয়াম কয়েকদিন আগেও মানুষের চিৎকারে গমগম করত তা এখন জনশূন্য। জার্মানির মোনশিনগ্লাডবাখেতে বুরুশিয়া মোনশিনগ্লাডবাখ এবং এফ সি কোলোনের মধ্যকার ম্যাচ চলাকালে।
ফুটবল ম্যাচের দর্শক যখন প্রয়াত সমর্থকের ভাস্কর্য! ভ্যালেন্সিয়া বনাম আটলান্টা ম্যাচ চলাকালে।
ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কয়ার বন্ধ হওয়ার পরের দিন। এখানে পোপ ফ্রান্সিস প্রতি সপ্তাহে সমবেত খ্রিস্টানদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করে থাকেন।
আলোর রোশনাই, জাঁকজমকপূর্ণ গ্যালারী, সুবিন্যস্ত আসন- সব আছে। নেই শুধু দর্শক। ১০ মার্চে ন্যাশনাল থিয়েটার অব প্রাগের অভ্যন্তরীণ চিত্র।
পাঠক, অনেক তো দেখা হল নিরাশার চিত্র। চলুন এবার কিছু আশাজাগানিয়া চিত্র দেখি।
ইতালির ব্রেশার স্পেডালি সিভিল হাসপাতালে রাত-দিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্মীরা।
হাসপাতালে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাইরে তাঁবু গাড়া হয়েছে। দম ফেলার সময় নেই ডাক্তার, নার্সদের। এক তাঁবু থেকে আরেক তাঁবু, এক রোগী থেকে আরেক রোগী- এভাবেই যাচ্ছে সময়।
হাড়ভাঙা খাটুনির পর শরীরে নেমে এসেছে রাজ্যের ক্লান্তি!
কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে কাটানো দিনগুলোতে এই স্বাস্থ্যকর্মীই ছিলেন সার্বক্ষণিক সেবায় নিয়োজিত। তাই সু্স্থ হয়ে বাড়ি ফেরার আগে আন্তরিক আলিঙ্গনে সিক্ত করলেন সেই মানুষটিকে।
ওয়াশিংটনের লাইফ কেয়ার সেন্টার অব কার্কল্যান্ডে করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন উনিশ জন। তাই আলাদা থাকতে হচ্ছে জেন ক্যাম্পবেল এবং ডরোথি ক্যাম্পবেল এর। কাচের দেয়াল তাদেরকে আলাদা করতে পারলেও হৃদয় থেকে কি আলাদা করতে পেরেছে?
নিজে সচেতন হয়ে এবং অন্যকে সচেতন করার মাধ্যমেই প্রতিরোধ করতে হবে করোনাভাইরাসকে। মনে রাখতে হবে, আতঙ্ক কোনো সমাধান বের করতে পারেনা। বরং এতে মানুষের স্বাভাবিক বিবেক-বুদ্ধিও লোপ পায়। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতাই হোক করোনা প্রতিরোধের অস্ত্র।
This article is in Bengali language which is about the effect of corona virus worldwide in photos. Necessary references have been hyperlinked inside.
Featured Image: REUTERS/Guglielmo Mangiapane