Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গোলাম মুর্শেদ: বাংলাদেশের টেক ইন্ডাস্ট্রিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের ছুটে চলা

বাংলাদেশেরই কোনো বিরাট গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিতে একজন প্রকৌশলী হয়ে যোগ দিয়ে মাত্র দশ বছরেই তাদেরই ম্যানেজিং ডিরেক্টর হয়ে যাওয়া- এমন গল্প কিন্তু প্রতিদিন পাবেন না। আজকের গল্প সেরকমই একজন গোলাম মুর্শেদকে নিয়ে। শুনবেন কীভাবে নিজের পরিশ্রম আর অসামান্য মেধা দিয়ে মাত্র কয়েক বছরেই উন্নতির শিখরে উঠেছেন তিনি, কীভাবে এগিয়ে নিয়েছেন কোম্পানিকে, কী-ই বা ভাবছেন আশেপাশের মানুষ আর দেশকে নিয়ে।

ফিরে যাই ২০১০ সালের ৩ ডিসেম্বরে। আইইউটি থেকে সবে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষ হয়েছে তার। ভার্সিটির হল ছেড়ে থাকা হচ্ছে উত্তরার এক মেসে। একদিকে পড়ালেখা শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই অনেক বন্ধুর চাকরি পেয়ে যাওয়ার সংবাদ, অন্যদিকে আইএলটিএস দিয়ে দিয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার পরামর্শ। চারদিকে আবার মাল্টিন্যাশনাল গ্রুপগুলোতে কাজ করার ক্রেজ। সব মিলিয়ে হতাশাতেই ভুগছিলেন বলা যায়।  সেই সময়ই খবর পেলেন, দেশের একটি উদীয়মান কোম্পানি সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা তরুণদের দারুণ আকর্ষণীয় বেতনে ডাকছে। “ভালো বেতন পেলে কেন নয়?” ভেবে সন্ধ্যায় পাঠিয়ে দিলেন সিভি, আর ইন্টারভিউর জন্য ডাক পড়লো পরদিন সকালেই। ভেবেছিলেন, ছোট অফিস ঘরের মতো কোথাও কথা হবে চাকরিদাতাদের সাথে। অস্বাভাবিক ছিল না ভাবনাটা, সেই কোম্পানির ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসার মোটে ৩ বছর গেল, খুব যে আহামরি উন্নতি হয়েছে ব্যবসার, তা-ও নয়। কিন্তু গাজীপুরের চন্দ্রায় গিয়ে সেই ভুল ভাঙল ভালোভাবেই; বিরাট কারখানা আর কর্মযজ্ঞ দেখে কোম্পানির প্রতি আগ্রহ আরো বাড়লো। উত্তরার সেই মেসের চারজন সিভি জমা দিয়েছিলেন, তিনজনের চাকরি হয়ে গেল লিখিত আর মৌখিক পরীক্ষা শেষে।

Image Courtesy: Walton

এই ছিল গোলাম মুর্শেদের ওয়ালটনে যোগ দেওয়ার গল্পের শুরু। চাকরির শুরুতে ছিলেন কোম্পানির এয়ার কন্ডিশনারের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগে। ডিজাইনিংয়ের কাজটা ছিল মূলত ডেস্ক জব। চেয়ারে বসে কম্পিউটারের স্ক্রিনে ডিজাইন করার ব্যাপারটায় তেমন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করায় কর্তৃপক্ষকে বলে প্রোডাকশন বিভাগে চলে যান। শুরুতেই পেয়ে যান প্রোডাকশন ইনচার্জের দায়িত্ব।

সেই শুরু। ওয়ালটন এসির প্রোডাকশনের সূচনা তার হাত ধরেই। সেখানেই পেরিয়ে যায় দুই বছর। এরপর আরো ডায়নামিক ও চ্যালেঞ্জিং কিছু করার আগ্রহবোধ করায় নিজেই কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে ফ্রিজ প্রোডাকশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল লাইনের দায়িত্ব নেন। চ্যালেঞ্জ নিতে যে তিনি সম্পূর্ণ সক্ষম, তার প্রমাণ পাওয়া যায় অল্প দিনের মধ্যেই; দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মধ্যেই সেই প্রোডাকশন লাইনের উৎপাদন হয়ে যায় প্রায় দ্বিগুণ।

গোলাম মুর্শেদ; Image Courtesy: Walton

এই জায়গায় তার কাজের বয়স যখন দুই বছর, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের তৎকালীন ম্যানেজিং ডিরেক্টর তাকে নিযুক্ত করলেন আরো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। এবার কাজের ক্ষেত্র পাল্টে গোলাম মুর্শেদ নিলেন বিজনেস অপারেশনের দায়িত্ব। সেখানে কাজ করলেন তিন বছর, এবং ছিলেন পুরোমাত্রায় সফল। এই সফলতা, চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ক্ষমতা আর বড় পরিসরে কাজ করতে চাওয়ার ইচ্ছা দেখে এরপর তাকে ওয়ালটন ফ্রিজ ডিপার্টমেন্টের সিইও (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) হিসেবেই দায়িত্ব দেয় কর্তৃপক্ষ।

গল্প এখানেই শেষ না, বরং বলতে পারেন নতুন এক সূচনা। কীভাবে? শুনে আসি গোলাম মুর্শেদের নিজের মুখেই, “ফ্রিজ ওয়ালটনের মুনাফা আয়ের প্রধান পণ্য। যাকে আমরা বলি ‘ক্যাশকাউ’। রেফ্রিজারেটর প্রোডাক্টের সিইও হিসেবে প্রথম দুই বছর আমার রেভিনিউ আর্নিং খুব ভালো ছিল। প্রফিট মার্জিন গ্রোথ খুব ভালো ছিল।” সিইও হিসেবে নিজেকে এর চেয়ে ভালোভাবে প্রমাণের আর বাকি কিছু ছিল না সেই জায়গা থেকে।

এরই মধ্যে ওয়ালটন কোম্পনি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। গোলাম মুর্শেদ প্রথমে পদায়ন পান অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে। তিন মাস পর পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দায়িত্ব নেন ম্যানেজিং ডিরেক্টরের। বর্তমানে তিনি ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

গোলাম মুর্শেদ; Image Courtesy: Walton

গ্র্যাজুয়েশনের মাত্র ১৭ দিনের মাথায় যোগদান করে কালক্রমে সেই কোম্পানিরই ম্যানেজিং ডিরেক্টর হয়ে ওঠা- ছবির গল্পের মতো শোনালেও পুরোটাই গোলাম মুর্শেদের অসামান্য শ্রম আর অধ্যবসায়ের ফসল। সফলতার চাবিকাঠি হিসেবে তার মতামত হলো, “সফলতার জন্য প্রথমেই হতে হবে স্থিতিশীল। একজায়গায় থিতু হয়ে কাজ করে যেতে হবে, সময় দিতে হবে। অস্থির হওয়া যাবে না।“ 

শুধু পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ই নয়, গোলাম মুর্শেদের ঝুলিতে রয়েছে নেতৃত্ব দেওয়ার অসামান্য ক্ষমতাও। জোর খাটিয়ে বা ইস্পাত কঠিন হাতে নিজের টিমকে পরিচালনা নয়, বরং কাউকে না দমিয়ে সবাইকে সাথে নিয়েই এগিয়ে যাবার যে মানসিকতা, তার নমুনা পাওয়া যায় কোম্পানি পরিচালনায় তার মূলনীতিতেও। কাউকে জোরজবরদস্তি করে নয়, বরং বুঝিয়ে কোম্পানির উন্নতিই তার লক্ষ্য।

কক্সবাজারে ‘মিট দ্য পার্টনার্স’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন জনাব গোলাম মুর্শেদ; Image Courtesy: Walton

আরেকটা গুণের কথা না বললেই না, সেটা হলো তার অসাধারণ বিনয়। ম্যানেজিং ডিরেক্টর হলেও বাকিদের এখনো সহযোদ্ধা হিসেবেই দেখেন, নিজের ও ওয়ালটনের উন্নতির কৃতিত্বের অংশীদার হিসেবেও অকুন্ঠ প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জানান বাকিদের। প্রতিনিয়তই বলেন, অন্যদের সহযোগীতা ছাড়া তার একার পক্ষে এতদূর আসা কখনোই সম্ভব ছিলো না।

গোলাম মুর্শেদের স্বপ্ন, শিক্ষার্থী এবং তরুণ প্রজন্ম সারাদিন বইয়ে ডুবে না থেকে শিক্ষাজীবনেই ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পাক, সেটা যাতে তিনি তাদের বোঝাতে পারেন। এতে যেমন শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করেই পুরোদমে চাকরিতে ঢুকে যেতে পারবে, সেই সাথে বিদেশে ব্রেইন ড্রেইন কমে আসবে বহুলাংশে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই নিজের বিশ্ববিদ্যালয় আইইউটি-র সাথে কথা বলেছেন তিনি, যারা তাকে গ্রিন সিগনালও দিয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বহুমুখী পরিকল্পনাও তার রয়েছে। রয়েছে খুব শীঘ্রই কর্মক্ষেত্রে পিএইচডি সম্পন্নের পরিবেশ সৃষ্টি করাও।

২০ মার্চ ২০২১-এ ‘ওয়ালটন ডে’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন জনাব গোলাম মুর্শেদ; Image Courtesy: Walton

শিক্ষার্থীরা যেন যেকোনো কোম্পানিতেই, ফ্যাক্টরিতেই পিএইচডি সম্পন্ন করতে পারে- দেশে এমন সুযোগ তৈরি করতে আগ্রহী তিনি। যেকোনো ওয়ার্কপ্লেসে কেউ তিন বছর কাজ করলেই তার যদি কিছু আউটপুট আসে বা ব্র্যান্ড ভ্যালুতে কিছু যুক্ত করে, তাহলে তাকে পিএইচডির মর্যাদা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তার। ফলে উচ্চশিক্ষা নিতে আর বিদেশে দৌড়াতে হবে না, বাঁচবে সময় ও শ্রম, সেই সাথে লাভবান হবে দেশ। দেশের মেধা দেশেই রাখতে এই প্রক্রিয়াটি তিনি তার কোম্পানি ওয়ালটন দিয়েই শুরু করবেন বলে ঠিক করেছেন।

প্রতিষ্ঠানের বিশেষ প্রোগ্রামে; Image Courtesy: Walton

কোম্পানি নিয়ে তার লক্ষ্য, ওয়ালটনকে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সেরা ৫টি ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডের একটিতে পরিণত করা। এটাই তার ভিশন ও মিশন। এ জন্য যা করা প্রয়োজন, সেই পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

ব্যক্তিগতভাবে তিনি কাউকে অনুসরণ বা অনুকরণ পছন্দ করেন না। এমনকি কারো মতো হতে হবে, এই বিষয়ই পছন্দ নয় তার। তার মতে, প্রতিটি মানুষের উচিত স্বকীয়তা বজায় রেখে চলা। কাউকে অনুসরণ করতে গিয়ে স্বকীয়তা বিলিয়ে দিতে হবে- এই ধারণায় বিশ্বাসী নন তিনি। সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানোর জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয় বলে মনে করেন তিনি।

স্কুল জীবনে জনাব গোলাম মুর্শেদ; Image Courtesy: Walton

প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা চাপাইনওয়াবগঞ্জ সদরে। নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (আইউটি)তে ভর্তি হন। খেলাধুলা পছন্দ করলেও মূলত কাজই এখন তার প্রধান নেশা। সাদামাটা জীবনে শখের মধ্যে আছে ফটোগ্রাফি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পর এখনও করেন ফটোগ্রাফি, এক বছরের কোর্সও করেছেন এই বিষয়ে।

ফটোগ্রাফির শখ রয়ে গেছে আজও; Image Courtesy: Walton

অবসর সময় কাটান বই পড়ে, কম জানা বিষয়গুলো আরো ভালোভাবে জানা কিংবা নতুন কিছু জানার উদ্দেশ্যে। চেষ্টা করেন পরিবারকে যথেষ্ট সময় দিতে। 

This is a Bengali article depicting the journey of Mr. Golam Murshed, the Managing Director of Walton Hi-Tech Industries Ltd. 

Feature Image: Walton

Related Articles