Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সুন্দরবন: পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট

আপনাকে যদি বাংলাদেশের কিছু দর্শনীয় স্থানের নাম বলতে বলা হয়, তাহলে আপনার মস্তিস্কে প্রথম যে কয়েকটি স্থানের নাম আসবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সুন্দরবন। রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অসংখ্য পশু-পাখির অনন্যসাধারণ সমাগম এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের পাশাপাশি এ বনে রয়েছে অবিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যা ভ্রমণপিপাসুদের নজর কাড়তে বাধ্য।

পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের মোহনায় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা এবং ভারতের কিছু অংশ মিলিয়ে গড়ে উঠেছে অবিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি। বাংলাদেশের ৬০১৭ কিলোমিটার ও ভারতের অংশ মিলিয়ে এর মূল আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। একটি অবিচ্ছিন্ন ভূমিখন্ডের মধ্যে সুন্দরবন গড়ে উঠলেও দেশ বিভাজনের রোষানলে পড়ে তা দুই খন্ডে বিভাজিত হয়েছে, যার এক অংশ ‘সুন্দরবন’ (বাংলাদেশ) এবং অপর অংশ ‘সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান’ (ভারত) নামে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্তি লাভ করেছে। অর্থাৎ সুন্দরবন দুটি আলাদা নামে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় দু’বার অঙ্গীভূত হয়েছে।

সুন্দরবনের মূল ১০ হাজার বর্গকিঃমিঃ ভূমিখন্ড; ছবি কৃতজ্ঞতা: Abhijit Choudhury

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও গঠন

অনেকে মনে করেন সাগরের বন (সমুদ্র-বন) বা এখানকার আদিবাসী চন্দ্র-বান্ধে থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে। তবে সর্বাধিক স্বীকৃত ব্যাখ্যা হচ্ছে সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ ‘সুন্দরী’র নামানুসারে হয়েছে সুন্দরবনের নামকরণ

সুন্দরবনের উৎপত্তি সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না, তবে ধারণা করা হয়, হিমালয়ের ভূমিক্ষয়জনিত পলি, বালি ও নুড়ি হাজার বছর ধরে বয়ে চলা পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র কর্তৃক উপকূলে চরের সৃষ্টি করেছে। অপরদিকে সমুদ্র তীরবর্তী হওয়ায় লবণাক্ত জলের ধারায় সিক্ত হয়েছে এ চর এবং জমা হয়েছে পলি। কালাতিক্রমে সেখানে জন্ম নিয়েছে বিচিত্র জাতের কিছু উদ্ভিদ এবং গড়ে উঠেছে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা লবণাক্ত পানির বন।

সুন্দরবনের প্রধান উদ্ভিদ ‘সুন্দরী’ বৃক্ষের নামানুসারে হয়েছে সুন্দরবনের নামকরণ; ছবিসূত্র bajroshakti.com

জলাশয় ও বন্যপ্রাণীতে পরিপূর্ণ সুন্দরবনে খুব সহজে জরিপকাজ পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। ১৭৫৭ সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সুন্দরবন অঞ্চলের স্বত্বাধিকার গ্রহণ করলে সর্বপ্রথম এর মানচিত্র তৈরি হয়। সেসময় সুন্দরবনের আয়তন ছিল প্রায় ১৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এরপর ধীরে ধীরে সুন্দরবনের আশেপাশে জনবসতি গড়ে উঠলে এর আয়তন ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক এর স্বত্বাধিকার গৃহীত হলে প্রথম জরিপ পরিচালিত হয় ১৮২৯ সালে। নানান চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৮৭৮ সালে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয় এবং পরের বছর এর দায়-দায়িত্ব বন বিভাগের উপর অর্পণ করা হয়। এভাবে চলতে চলতে ‘৪৭ এ ভারত স্বাধীনতা লাভের পর দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই ভাণ্ডার।

উদ্ভিদ ও প্রাণী

পৃথিবীর অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বনভূমির উদ্ভিদের তুলনায় সুন্দরবনের উদ্ভিজ্জের মধ্যে ব্যাপক পরিমাণে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। কেননা সুন্দরবনের বুক চিরে শুধুমাত্র নোনা পানি নয়, ক্ষেত্রবিশেষে প্রবাহিত হয় স্বাদু পানির ধারা। এই বৈশিষ্ট্যই সুন্দরবনকে পৃথক করেছে বিশ্বব্যাপী অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বন থেকে।

সুন্দরবনের নামকরণের প্রধান হেতু এর সুন্দরী গাছ। বলাই বাহুল্য, এ বনে সবচেয়ে বেশি নয়নগোচর উদ্ভিদ সুন্দরী বৃক্ষ। এছাড়া গেওয়া, গরান এবং কেওড়া সুন্দরবনের বনজ বৈচিত্র্যের ধারক। এখানকার সিংহভাগ উদ্ভিদ চিরসবুজ হওয়ায় এদের সবার শারীরবৃত্তিক ও গঠনগত অভিযোজন প্রণালী প্রায় একই ধরনের।

সুন্দরবনের চিরসবুজ উদ্ভিজ্জ; ছবিসূত্র: xnmoin.blogspot.com

১৯০৩ সালে ডি. প্রেইন সুন্দরবনের ওপর একটি গ্রন্থ লেখেন। সেখানে দেখা যায় সুন্দরবনে ২৪৫ শ্রেণীর ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এবং এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ম্যানগ্রোভ বনের ৫০ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ৩৫ প্রজাতির দেখা মেলে আমাদের সুন্দরবনেই। ম্যানগ্রোভ বনের বৈশিষ্ট্যধারী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদেরও প্রাধান্য রয়েছে সুন্দরবনে। এর মধ্যে শন, নল খাগড়া এবং গোলপাতা অন্যতম।

সুন্দরবনের বিখ্যাত গোলপাতা গাছ; ছবি কৃতজ্ঞতা: Faizul Latif Chowdhury

প্রাণী বৈচিত্র্যের মধ্যে সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য প্রাণীর নাম হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার যার আবাসস্থল সুন্দরবন। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীব্যাপী বিস্তৃত সকল বাঘের তুলনায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার সবচেয়ে সুদর্শন।

সুন্দরবনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার; ছবিসূত্র: sundarbantours.com

পঞ্চাশের দশকে বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই বাঘের বিচরণ লক্ষ্য করা যেতো। ঢাকার মধুপুর এবং গাজীপুরে সর্বশেষ রয়েল বেঙ্গল টাইগার পরিলক্ষিত হয় ১৯৬৬ সালে। এরপর বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে বাঘের সংখ্যা কমতে থাকে। এবং বর্তমানে এই বাঘের একমাত্র আবাসস্থল সুন্দরবন। তবে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যাও দিন দিন কমে আসছে। ২০০৪ সালের শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি, কিন্তু ২০০৬ সালের বেসরকারি এক শুমারিতে দেখা যায় এর সংখ্যা মাত্র ২০০-২৫০টি যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বাঘের সংখ্যা এক হাজার চারশতেরও অধিক। এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালের শুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা মাত্র ১০৬! সুন্দরবনের অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে কচ্ছপ, কাছিম, গিরগিটি, অজগর, হরিণ, কুমির উল্লেখযোগ্য।

এ বনভূমিতে আছে প্রায় ৫০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। এর মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, রেসাস বানর, বন বিড়াল, লেপার্ড, সজারু, উদ এবং বন্য শূকর প্রধান।

সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ; ছবিসূত্র: bdreports24.com

বাংলার বড় বিড়াল; ছবিসূত্র: greennewsbd.com

সুন্দরবনে প্রায় ২৭০ প্রজাতির আবাসিক এবং ৫০ প্রজাতির বিচরণশীল পাখির দেখা মেলে। নয় প্রজাতির মাছরাঙাসহ সুন্দরবনে রয়েছে কাঠঠোকরা, ভগীরথ, পেঁচা, মধুপায়ী, বুলবুল, শালিক, ফিঙে, বাবুই, ঘুঘু, বেনে বৌ, হাঁড়িচাঁচা, ফুলঝুরি, মুনিয়া, টুনটুনি এবং নানা ধরনের ছোট ছোট গায়ক পাখি।

সুন্দরবনে বৃষ্টিস্নাত এক ‘গ্রেটার ইয়োলোনেইপ’ বা বড় হলদেসিঁথি কাঠঠোকরা; ছবিসূত্র: dhakatouristclub.com

সুন্দরবনে মাছরাঙা; ছবিসূত্র: vromonbuddy.com

প্রায় ৫০ প্রজাতির সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে সাত মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট মোহনার কুমির সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। কুমির ছাড়াও রয়েছে টিকটিকি জাতীয় সরীসৃপ, কচ্ছপ। সুন্দরবনে হাঁটার সময় পায়ের ওপর দিয়ে কোনো কিছু বেয়ে চলে গেলে মোটেই অবাক হবেন না যেন! কেননা সমগ্র সুন্দরবন জুড়ে প্রচুর সাপের আনাগোনা পরিলক্ষিত হয়। সাপের মধ্যে শঙ্খচূড় (King cobra), রাসেলস ভাইপার, অজগর, ব্যান্ডেড ক্রেইট উল্লেখযোগ্য।

সুন্দরবনে জলভাগের প্রহরী কুমির; ছবিসূত্র: shobujbangladesh24.com

শঙ্খচূড় (King Cobra); ছবিসূত্র: protikhon.com

সমগ্র সুন্দরবন জুড়েই রয়েছে অসংখ্য নদী-নালা এবং সেখানে রয়েছে প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ। কালা হাঙর, ইলশা কামট, ঠুঁটি কামট, কানুয়া কামট, পারশে ইত্যাদি মাছের প্রাচুর্য দেখা যায় এ বনের জলাশয়ে। মৎস্য সম্পদের পাশাপাশি এখানে প্রায় আট প্রজাতির উভচর প্রাণীও অস্তিত্বশীল রয়েছে।

নানান প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট হুমকির মুখে সুন্দরবনের প্রায় ২৯ প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাঘরোল, চিতা বিড়াল, ভোঁদড়, গণ্ডার, ইরাবতী (ডলফিন), শুশুক, নীল গাই, নেকড়ে, সমুদ্র ঈগল, সাদা পেঁচা, দৈত্য বকসহ নাম না জানা নানান প্রজাতির প্রাণী।

সুন্দরবন থেকে বিলুপ্তিপ্রাপ্ত গণ্ডার; ছবি কৃতজ্ঞতা:  J. Wolf

সুন্দরবন থেকে বিলুপ্ত শুশুক; ছবিসূত্র: bangla.bdnews24.com

অর্থনীতি ও পর্যটন কেন্দ্র

সুন্দরবনের রয়েছে অপরিমেয় অর্থনৈতিক গুরুত্ব। স্থায়ী এবং অস্থায়ী মিলে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের বসবাস এই সুন্দরবনকে ঘিরে। এই একমাত্র বনকে কেন্দ্র করেই তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কেউ হয়তো বনের ভেতর গাছ কেটে জ্বালানির ব্যবস্থা করে, কেউ গোলপাতা নিয়ে ঘরের ছাদ ছেয়ে দেয়, মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ করে উপজীবিকা নির্বাহ করে। আমাদের দেশের কাঠ এবং জ্বালানির প্রায় ৪৫% আসে সুন্দরবনের বুক থেকে। এছাড়াও বন থেকে প্রাপ্ত আয়ের প্রায় ৪১% আসে এই অরণ্যভূমি থেকেই।

পর্যটন কেন্দ্রের উপযোগিতা থেকেও পিছিয়ে নেই সুন্দরবন। প্রতি বছর দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন সুন্দরবনে। বিদেশি পর্যটকদের সমাগমের ফলে বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রাও যোগ হয় আমাদের জাতীয় আয়ের হিসাবে।

মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বিভিন্ন বন্যজন্তুর পদচারণায় সমৃদ্ধ এ বন পর্যটকদের জন্য আজও এক দুঃসাহসিক আকর্ষণ। খুব সহজে এর মোহিনীশক্তি থেকে নিজেকে দূরে রাখা সম্ভব হয় না। সুন্দরবনের মধ্যে কটকা, হিরণ পয়েন্ট, দুবলার চর এবং টাইগার পয়েন্ট হচ্ছে পর্যটকদের জন্যে মূল আকর্ষণীয় স্থান। এসব স্থানে চিত্তাকর্ষক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি বন্য প্রাণীর বিচরণ সহজেই চোখে পড়বে পর্যটকদের। আর পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের সাথে পর্যটকদের জন্য রয়েছে অতিথি কেন্দ্রের মতো সুব্যবস্থা। তাই আপনিও চাইলে সহজেই ঘুরে আসতে পারেন বাংলার আমাজন তথা সুন্দরবন থেকে।

পর্যটকদের সুবিধার্থে সুন্দরবনের মধ্যস্থ সরুপথ; ছবিসূত্র: travelobd.com

সুন্দরবনের মাঝে নৌকায় ভ্রমণ এবং বন পরিদর্শন; ছবিসূত্র: pinterest.com

ঝুঁকির মুখে সুন্দরবন

২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর সুন্দরবনের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। ইউনেস্কোর করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সিডরে সুন্দরবনের প্রায় ৪০% অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে অনেক পশু-পাখি জীবন হারিয়েছে এবং প্রচুর গাছপালা নষ্ট ও ধ্বংস হয়েছে।

সিডরে ক্ষতিগ্রস্থ সুন্দরবন; ছবিসূত্র: ajkerkhobor24.com

২০১৪ সালে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ডুবে যায়। এতে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ লিটারেরও বেশি জ্বালানী (ফার্ণেস অয়েল) তেল শ্যালা নদী দিয়ে সমগ্র সুন্দরবনে ছড়িয়ে যায়। এতে করে সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্যের ওপর নেমে আসে এক গাঢ় অন্ধকার। সুন্দরবনের এই অঞ্চলে ইরাবতী, ইন্দো-প্যাসিফিক হাম্প ব্যাক্ট ডলফিন, ফিনলেজ ডলফিন, ইন্দো-প্যাসিফিক বটল নোস ডলফিন, স্পিনার ডলফিন, পরপয়েজ ডলফিন, স্পটেড ডলফিন, গেংগেজ রিভার ডলফিন ছাড়াও ব্রাইডস হোয়েস নামে এক প্রজাতির তিমির বিচরণ ছিল। এ ঘটনায় এ সকল প্রাণীর জীবন হুমকির মুখে পতিত হয়।

সুন্দরবনে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবিতে পানি আর তেল মিশে একাকার; ছবিসূত্র: news.bdfish.org

সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনের জন্য সবচেয়ে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রামপাল পাওয়ার প্রজেক্ট। সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে নির্মিত হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র যাকে সুন্দরবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিহিত করেছে ইউনেস্কো। এবং সুন্দরবন থেকে দূরে অন্য কোথাও এই প্রকল্প স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি প্রদান করে আন্তর্জাতিক পরিবেশভিত্তিক এ সংস্থা।

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কা করে ইউনেস্কো একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে কয়লা পোড়ানো হবে সে কয়লার ছাই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে নিঃসৃত বর্জ্য সেখানকার জলাভূমির জন্য হুমকি স্বরূপ। এই প্রকল্পকে ঘিরে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে যে সকল জাহাজ চলাচল করবে এবং আশেপাশে যে শিল্পায়ন গড়ে উঠবে তা সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দিবে বলেও আশঙ্কা করা হয় সে প্রতিবেদনে।

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল অথবা সুন্দরবন থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে না নিলে সুন্দরবনের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন হবে উল্লেখ করে সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার কথা জানিয়েছে ইউনেস্কো।

রামপাল থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবন

একজন মা যেমন তার সন্তানকে সকল ঝড়-ঝাপ্টা, বিপদ-আপদে গভীর মমতায় আগলে রাখে, ঠিক তেমনি সুন্দরবনও আগলে রাখে বাংলাদেশকে। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য অক্সিজেনের সিংহভাগই আসে সুন্দরবনের বনাঞ্চল থেকে। তাই মানবকল্যাণের স্বার্থে সুন্দরবনের বেঁচে থাকা জরুরি। কেননা সুন্দরবন বেঁচে থাকলেই বাঁচবে বাংলাদেশ, বাঁচবে এদেশের জীব-বৈচিত্র্য, এদেশের মানুষ।

Related Articles