Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নৌকা স্কুল: বন্যা কবলিত অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে যেভাবে

মোসাম্মৎ রেখা; বয়স সাত বছর, বাড়ি নাটোরের চলনবিলে। ঘন ঘন বন্যা তাদের ছোট্ট গ্রামকে প্রায়ই বিচ্ছিন্ন করে দেয় দূরবর্তী যোগাযোগ থেকে। শিক্ষার সুযোগ তাই এখানে অপ্রতুল। ফলে রেখার বড় যে ভাই-বোনেরা আছেন, তারা প্রাথমিক শিক্ষাও পাননি। কিন্তু রেখার জীবন তার বড় ভাই-বোনের মতো হয়নি। তার মতো চলন বিলের শিশুরা এখন প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। তাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে নৌকা স্কুল নামের এক উদ্যোগ।

সংকটের গভীরে

জলবায়ু পরিবর্তন ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ জুড়ে তার প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। জাতিসংঘ বলছে, একটি ঘনবসতিপূর্ণ এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উষ্ণায়নের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। ঘন ঘন ধ্বংসাত্মক ঝড় এবং ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নিচু ভূমির দেশটির লক্ষ লক্ষ মানুষকে নদীর পানির উচ্চ প্রবাহ, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি, এবং ক্রমবর্ধমান চরম আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হচ্ছে। 

এই শতকের শেষ নাগাদ বাংলাদেশের দুই কোটি মানুষের ‘জলবায়ু-শরণার্থী‘ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জাতিসংঘের একটি প্যানেল সতর্ক করেছে, নদীগুলো শহরকে গ্রাস করছে। সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি উপকূলীয় মানুষদের ভিটেমাটি ছাড়া করবে। নদীভাঙনের মতো ঘটনায় নদীগর্ভে বিলীন অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বার্তা সংস্থা এএফপির সাথে কথা বলছিলেন স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা আজিজুল আজম। জানালেন, নদীভাঙন বন্যা কবলিত অঞ্চলের নিয়মিত ঘটনা। নদীতীরের ১৬ ফুট পর্যন্ত একদিনে বিলীন হয়ে যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে নদীভাঙন ঘটছে এমন অবশ্য বলা যাবে না। বাংলাদেশের মতো ব-দ্বীপ রাষ্ট্রে এটি স্বাভাবিক ঘটনাই হওয়ার কথা। ভাঙন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ দ্রততায় ঘটছে- এজন্য নিশ্চিতভাবেই দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন। সংকট মোকাবিলায় তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার তীব্র চেষ্টায় এখানকার মানুষ।

আশার আলো যখন নৌকা স্কুলে

আমরা এখন বর্ষা মৌসুমেও ক্লাস করতে পারি, যখন আমাদের বাড়ি পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকে। ” বলছিল রেখা। নৌকা স্কুল বা ভাসমান স্কুল নামের চমৎকার এক উদ্যোগ বদলে দিয়েছে বন্যাদুর্গত এই অঞ্চলের শিশুদের জীবন। শুধু শিশুদের জীবন বললে বোধহয় ভুল হবে, বদলাচ্ছে এ দেশের আগামীর ভবিষ্যতের পথরেখাও। ‘শিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা’ নামের একটি দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে এখন ২৬টি নৌকা স্কুল পরিচালিত হচ্ছে চলন বিল এলাকায়। অন্যান্য দাতব্য সংস্থাও একই উদ্যোগ নিয়ে এগোচ্ছে দেশের অন্যান্য প্রান্তেও। বর্তমানে বিশ্বের আটটি দেশে শিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থার মতো ভাসমান স্কুল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

নৌকা স্কুল; Image source : Shidhulai Swanirvar Sangstha

দুই সন্তানের জননী মোসাম্মৎ ঝর্ণা ছোটবেলা থেকেই পানিবেষ্টিত এক এলাকায় বড় হয়েছেন। অনাকাঙ্ক্ষিত ঝড়ের ঢেউ এবং ক্রমবর্ধমান বন্যার কারণে নিকটস্থ স্কুলে যাওয়া অসম্ভব ছিল তার।

তিনি এখন বাড়ির কাছে নোঙর করা নৌকা স্কুলে খুঁজে পেয়েছেন আশার আলো। নিজের সেই শিক্ষা গ্রহণের বয়স না থাকলেও ঝর্ণা তার সন্তানদের পাঠাচ্ছেন নৌকা স্কুলে। “আমার মেয়েসহ আমার সন্তানদের শিক্ষিত করার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে,” তিনি এএফপিকে বলছিলেন। “আমি তাদের আমার মতো অশিক্ষিত দেখতে চাই না।” এমন করেই বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলোয় বদলাতে শুরু করেছে জীবনের গতি। 

শুরুর ভাবনা কেমন ছিল? 

মোহাম্মদ রেজওয়ান পেশায় একজন স্থপতি। তার বেড়ে ওঠা বন্যাপ্রবণ এলাকাতেই। ছোটবেলা থেকেই তাই তার সখ্য এ অঞ্চলের জীবন ও জীবিকার সাথে। রেজওয়ান নিজের চোখে দেখেছেন, এ অঞ্চলের মানুষ বন্যার কারণে জীবনযাত্রায় চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। শিক্ষার সুযোগ একেবারেই সীমিত ছিল শিশুদের জন্য। বর্ষা মৌসুমে (জুন-অক্টোবর) রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারে না। যার ফলে বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। রেজওয়ান বলছিলেন, “আমাদের পরিবারের একটি ছোট নৌকা ছিল যা বর্ষা মৌসুমে আমার স্কুলে যাতায়াত নিশ্চিত করেছিল।” কিন্তু রেজওয়ান দেখেছেন- তার অনেক বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়রা স্কুলে যেতে পারেনি। ব্যাপারটি তার পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। রেজওয়ান পরে ভেবেছিলেন, সঠিক পরিবহনের অভাবে যদি শিশুরা স্কুলে আসতে না পারে, তাহলে তাদের বিকল্প উপায়ে স্কুলে যেতে হবে, নৌকায় করে।

মোহাম্মদ রেজওয়ান © Mahmud Hossain Opu for NPR 

ততদিনে বুয়েট থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় পড়াশোনা শেষ করে ফেলেছেন রেজওয়ান। ফিরে আসেন নিজ গ্রামে। তিনি স্কুল এবং হাসপাতাল নির্মাণে তার জীবন উৎসর্গ করার কথা ভাবছিলেন। কিন্তু তারপর তিনি বুঝতে পারলেন যে এলাকার মানুষ শীঘ্রই পানির নিচে তলিয়ে যাবে। তিনি নৌকা তৈরির কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু ভাসমান সম্প্রদায়ের উপর তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তিনি কোনো বিনিয়োগকারী খুঁজে পাননি সেসময়। রেজওয়ান দমে যাননি। একজন সামাজিক উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯৯৮ সালে অলাভজনক ‘শিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা’ প্রতিষ্ঠা করেন রেজওয়ান। সেসময় তার কাছে ছিল স্কলারশিপ থেকে পাওয়া মাত্র ৫০০ ডলার, কিছু জমানো টাকা, আর একটি পুরনো কম্পিউটার। অনুদানের প্রস্তাবনা লেখার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না তার। শুধু ইন্টারনেটে ঘেঁটে নানা লেখা পড়ে ইমেইল করেছেন শত শত দাতা সংস্থার কাছে। সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতে প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। এভাবেই চারটি বছর কেটেছে। ২০০২ সালে প্রথম স্কুল তৈরি শুরু করেন তিনি। শুরুটা এভাবেই।

স্বপ্ন তখন সত্যি…

২০০২ সাল। প্রথম নৌকা স্কুলটি তৈরি হবে। রেজওয়ান স্বল্প বিনিয়োগের টাকায় স্বল্প ব্যয়ে স্থানীয় উপকরণ খুঁজতে শুরু করলেন। তিনি তার এলাকায় একটি পুরনো নৌকার হাল সংগ্রহ করেন, এবং সেগুলোর অবশিষ্টাংশ থেকেই শুরু করেন তার স্বপ্নের উদ্যোগের বাস্তবায়ন। 

প্রথমে এটি একাকী উদ্যোগ ছিল। এলাকার লোকেরা সন্দিহান ছিল, কিন্তু তারা সম্ভাবনায় জাগ্রত হয়েছিল। নৌকার মাঝি, শিক্ষক এবং নানা কাজের স্বেচ্ছাসেবকরা একে একে এগিয়ে আসতে শুরু করল। তারা বুঝতে পেরেছিল, এবং বিশ্বাস করেছিল যে এটি তাদের নিজস্ব প্রকল্প।

রেজওয়ান বলছিলেন, “আমি নদীর তীরে উঠানে একটি মিটিংয়ে এলাকার সদস্যদের সাথে আমার প্রাথমিক ধারণা নিয়ে কথা বলেছিলাম। এলাকার মানুষজন সম্পূর্ণভাবে প্রকল্পের নকশা তৈরি এবং তা বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করেছে। তারা নৌকা থামার স্থান এবং সময়সূচী নির্ধারণের সাথেও জড়িত ছিল। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দক্ষ স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় স্থানীয় বিষয়বস্তু তৈরি করেছি।” এমন করে এগিয়েছে নৌকা স্কুলের স্বপ্নযাত্রা। 

পাঠদানে মুখরিত নৌকা স্কুল; © Mahmud Hossain Opu for NPR

শিশুরা নৌকা স্কুলে বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং চিত্রাঙ্কন শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে। সাধারণত ৬-১০ বছর বয়সী শিশুরাই এখানে পড়তে আসে। প্রতিদিন সকালে নৌকা নদীর ধারের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীদের তুলে নেয়। এরপর নৌকাটি নদীর তীরে চলে যায়, এবং ক্লাস শুরু হয়। সকালের সেশন শেষ হলে শিশুদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয় নৌকা স্কুল। একই প্রক্রিয়ায় দিনে আরো দুটি শিফটে শিশুরা শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পায়। প্রতি শিফটে ৩০ জন করে দিনে একেকটি নৌকা স্কুলে ৯০ জনের ক্লাস করার সুযোগ রয়েছে। শুধু পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমেই নয়, নৌকা স্কুলে শিশুদের শিক্ষাদানের চেষ্টা করা হয় বিনোদনের মাধ্যমেও। দেখানো হয় মিনা কার্টুন। এই কার্টুনের মাধ্যমে সামাজিক নানা সমস্যার সমাধানও দেখানো হয় শিক্ষার্থীদের। 

নৌকা স্কু্লে বর্তমানে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরে শিক্ষার্থীদের একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হতে হয়। যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী তাদের পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে, তাদের বৃত্তি হিসাবে সৌর লণ্ঠন দেওয়া হয়। এটি একটি বিশাল উপহার, কারণ বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বিদ্যুৎবিহীন বাড়িতে থাকে। 

ছোট আকারের নৌকাগুলোয় শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ আছে, আছে শিক্ষকদের লেখার জন্য ব্ল্যাকবোর্ড। আছে লাইব্রেরিও। বৃহদাকারের নৌকাগুলোয় এর বাইরে নানা সুবিধা রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। এখানে খেলার জন্য জায়গা রাখা হয়েছে। আছে ছোটখাট বিনোদন উপকরণও। তবে শিশুদের আগ্রহের জায়গা জুড়ে আছে ল্যাপটপ কক্ষ। আলাদা একটি কক্ষে বেশ কয়েকটি ল্যাপটপ রয়েছে, শিশুরা সেসব ব্যবহারের সুযোগ পায়, জানার সুযোগ পায় এই বিশ্বজগৎ। নৌকার ছাদে থাকা সোলার প্যানেলের মাধ্যমে নৌকার যাবতীয় বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো হয়। 

কম্পিউটারে মনোযোগ শিক্ষার্থীদের; Image source : Shidhulai Swanirvar Sangstha

বাধা পেরিয়ে আস্থার প্রতিচ্ছবি 

রেজওয়ান জানালেন, গ্রামীণ বাংলাদেশে এই স্কুলগুলোর গতিশীলতার আরেকটি সুবিধা তারা পেয়েছেন। “গ্রামাঞ্চলে বাবা-মায়েরা বেশিরভাগই স্কুলগামী মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন।” তিনি বলেন, “যদি তাদের স্কুলে যেতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়, তাহলে অভিভাবকরা তাদের স্কুলে যেতে দিতেন না। কিন্তু এখানে শিক্ষা তাদের দোরগোড়ায় আসে, তাই তারা নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত নয়।” 

মেয়েরাও কেন পিছিয়ে থাকবে শিক্ষার আলো থেকে! Image source : Shidhulai Swanirvar Sangstha 

তৃতীয় শ্রেণী পড়ুয়া নীলার কথাই ধরা যাক। নীলার মা মুসা খাতুন বলছিলেন, যদি এটি ভাসমান স্কুল না হতো, তাহলে নীলার পক্ষে হয়তো শিক্ষার আলো পাওয়া সম্ভব হতো না। মুসা তার মেয়ের অন্যরকম এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন। তাদের পরিবারের কেউ কখনো স্কুল কিংবা কলেজে যায়নি, তবুও মুসা খাতুন জোর দিয়ে বলেন, তার মেয়ে ডাক্তার হবে। এমন স্বপ্ন দেখার সুযোগ এনে দিয়েছে নৌকা স্কুলের মতো অভূতপূর্ব উদ্যোগ। 

শুধুই প্রাথমিক শিক্ষা নয়…

নৌকা স্কুলগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহারের চেষ্টা করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা। এজন্য দিন-রাতের প্রায় বেশিরভাগ সময়ই ব্যস্ত থাকে এই নৌকাগুলো। সকাল থেকে বিকেল অবধি কান পাতলেই নৌকাগুলো থেকে ভেসে আসে শিক্ষার্থীদের কোলাহল। শিক্ষকরা পড়াচ্ছেন, লিখছেন ব্ল্যাকবোর্ডে। শিক্ষার্থীরা বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়ছে, লিখছে। স্কুল ছুটির পর গ্রামের নারীদের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের সুযোগ আছে এই স্কুলে। আলাদা পাঁচটি ভাসমান চিকিৎসা ক্লিনিকও পরিচালনা করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে একটি ভাসমান খেলার মাঠ (একইসাথে লাইব্রেরির ব্যবস্থাও আছে) চালু করেছে। রাতে স্কুলে আসে গ্রামের যুবকেরা। জলবায়ুর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কীভাবে নতুন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায় সেটাই শেখে তারা। এক স্কুল নানাভাবে তাই অবদান রাখছে এ অঞ্চলের জীবনযাত্রায়। 

এগিয়ে যাওয়া নিরন্তর

শিধুলাইয়ের সমস্ত পরিষেবা বিনামূল্যে দেয়া হয়। রেজওয়ান বলছিলেন, শিধুলাইয়ের কর্মসূচির জন্য অর্থ প্রদানের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র দাতাদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করেন তারা।

নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ- এই তিন জেলায় সংস্থাটির ২৬টি নৌকা স্কুলে এখন বছরে পড়াশোনা করছে প্রায় ২,৩৪০ জন শিক্ষার্থী। স্কুলের কার্যক্রম চলে সারা বছরই। 

রেজওয়ানকে জিজ্ঞেস করা হয়, নৌকা স্কুলের উদ্যোগ গ্রহণের ২০ বছর পেরিয়ে আসার পর নিজেকে কতটা সফল ভাবছেন তিনি। পরিসংখ্যানে নজর দিতে বলে তিনি জানান, উদ্যোগ গ্রহণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ২৩,৬৩০ জন শিক্ষার্থী এই স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে পড়াশোনা শেষ করেছেন ২১,০২২ জন। এদের মধ্যে ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পরবর্তীতে চাকরি পেয়েছেন। অন্যরা কৃষিকাজ এবং ব্যবসায় নাম লিখিয়েছেন। 

রেজওয়ান নৌকা স্কুল নিয়ে তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানালেন রোর বাংলাকে। বলছিলেন, “আমাদের লক্ষ্য ২০২৭ সাল নাগাদ আমাদের আরও ১২টি নতুন নৌকা স্কুল তৈরি করা, সেখানে পড়াশোনার সুযোগ পাবে আরও ১,০৮০ জন শিক্ষার্থী। ” রেজওয়ান জানান, তার লক্ষ্য ২০২৭ সালের মধ্যে ভাসমান খেলার মাঠের সংখ্যা পাঁচে উন্নীত করা। 

সামনের দিনগুলোয় জলবায়ু আরও গুরুতর, এবং ঘন ঘন বন্যা-ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এবং উপকূল হয়ে উঠবে আরো ঝুঁকিপূর্ণ। এই প্রেক্ষাপটে ভাসমান সম্প্রদায়কে একটি বিকল্প হিসেবে ভাবছেন মোহাম্মদ রেজওয়ান। তিনি বলেন, “মানুষকে বুঝতে হবে এবং শিখতে হবে কীভাবে বাঁচতে হয় এবং পানিতে ফসল ফলাতে হয়। সম্পদ আমাদের কাছে আসার জন্য আমাদের অপেক্ষা করা উচিত নয়- কারণ এতে সময় লাগতে পারে।” তার মতে, আমাদের নৌকা স্কুলের মতো সমাধান নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত।

আমরা চাই সকল শিশু স্কুলে যাক, এবং গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা সারা বিশ্বে বন্যাপ্রবণ এলাকায় তাদের শিক্ষা চালিয়ে যাক। আমরা দেখতে চাই- অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের স্কুলে যেতে উৎসাহিত করছেন। আমরা দেখতে চাই যে মেয়ে এবং নারীরা তাদের সম্প্রদায়ের শিক্ষা ও তথ্য সুবিধার পূর্ণ সুবিধা গ্রহণ করছে।” বলছিলেন রেজওয়ান। তিনি স্বপ্ন দেখেন, এ অঞ্চলের মানুষের কষ্টের দিন একসময় ফুরিয়ে আসবে। দারিদ্র্যের সাথে তাদের আর যুদ্ধ করতে হবে না। ছেলেমেয়েরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে আলো আনবে এই অঞ্চলের প্রতিটি ঘরে। স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে তাই নিরন্তর পথচলা রেজওয়ানের।

This article is about an initiative called Boat School. Details have been given about the positive impact of this school on the life of the flood prone areas of Bangladesh. The sources are hyperlinked in the feature. 

Feature image : Shidhulai Swanirvar Sangstha

Related Articles