Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এলন মাস্ক: ব্যতিক্রমধর্মী এক উদ্ভাবকের গল্প

“যে সমস্যা তোমাকে নাকানি চুবানি না খাওয়ায়, তা কোনো সমস্যাই নয়। তোমার যদি কোনো কাজ জরুরি মনে হয়, তাহলে সেই কাজে বিফল হবে জেনেও জান প্রাণ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত।”

খুব উপদেশ বাক্য দেওয়া হচ্ছে বলে নিশ্চয়ই মুখ ঘুরিয়ে নেবেন না। কথাগুলো কিন্তু আমার নয় মোটেও। এই শতকের সেরা উদ্ভাবক এবং প্রযুক্তি ব্যবসায়ীর জীবন থেকে নেওয়া খুব চড়া মূল্যের সিক্রেট বললেও খুব একটা ভুল হবে না।

বর্তমান উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তির যুগে পৃথিবীর হাওয়া বদলে দেওয়ায় বিশ্বাসী এক প্রযুক্তিবিদ এলন মাস্ক। হ্যাঁ, সফল এক কোটিপতি প্রযুক্তিবিদ ও উন্মাদ ব্যবসায়ীর গল্প শোনাবো আজ। উন্মাদ কেন বলছি? জানতে হলে চোখ রাখতে হবে বাকি রহস্য-গপ্পোতে। তার জীবন থেকে নেওয়া কথাগুলো সত্যিই যে কারো জীবনে অনুপ্রেরণা জোগায়। কিন্তু যিনি কথাগুলো বলেছেন, তিনি নিজে কথাগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছিলেন তো?

এর উত্তর লুকিয়ে আছে তার সফল কর্মের পেছনেই। তিনিই সেই ব্যক্তি এলন রীভ মাস্ক, যিনি টেসলা মোটরস, সোলার সিটি এবং স্পেস এক্স, এই তিনটি বড় বড় নামজাদা কোম্পানির কর্ণধার। তাকেই বলা হয় ২১ শতকের প্রযুক্তির বরপুত্র। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, তার কথাগুলোর ধার কতটা শান দেওয়া!

এলন রীভ মাস্ক

মাত্র ৪৫ বছর বয়সেই তিনি পৃথিবীর পরিবেশ নিয়ে ধ্যান ধারণার উর্ধ্বে উঠে পৃথিবীর ভোল পাল্টে দেওয়ার প্রযুক্তিতে বদ্ধ পরিকর। তাকে কেউ উন্মাদ ভাবুক, আবার কেউ কেউ প্রযুক্তির ‘শেষ কথা’ ভেবে প্রশংসায় উন্মুখ হোক- তা তাকে খুব বেশি একটা ভাবায় না।

এলন রীভ মাস্কের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায় ১৯৭১ সালের ২৮ জুন। তার বাবা এরল মাস্ক ছিলেন সাউথ আফ্রিকান, কিন্তু মা ছিলেন কানাডিয়ান। এলন মাস্কের ছেলেবেলা কাটে তার ভাই কিম্বাল এবং বোন টস্কার সাথে। ইঞ্জিনিয়ার বাবা এবং ডায়েটিশিয়ান মায়ের জ্যেষ্ঠ সন্তান তিনি। মাত্র ১০ বছর বয়সী ইন্ট্রোভার্ট গোছের এলন নিজেই আবিষ্কার করলেন কম্পিউটারের প্রতি তার এক বিশেষ রকম টান কাজ করে। নিজে নিজেই তাই শিখে নিলেন প্রোগ্রামিং। তার সুফল পাওয়া শুরু করলেন মাত্র ১২ বছর বয়সেই। হ্যাঁ, খুদে প্রতিভা সম্পন্ন এলন নিজেই তৈরি করলেন কম্পিউটার গেম ‘ব্লাস্টার’। মাত্র ১২ বছর বয়সেই নিজের বানানো গেম বিক্রি করে তার জীবনের প্রথম আয় ৫০০ ডলার।

শৈশবের এলন মাস্ক

অতঃপর ১৯৮৯ সালের ১৯ বছর বয়সে কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। কিন্তু দু’বছর পর তা ছেড়ে ১৯৯২ সালে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফুল ফ্রি স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। অবশেষে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পাশাপাশি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হার্টন স্কুল থেকে অর্থনীতিতেও স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন।

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে অবশেষে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স এবং ম্যাটারিয়াল সায়েন্সের উপর উচ্চতর ডিগ্রী নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ঠিক দু’দিন পরেই তার ভাই কিম্বাল মাস্ককে সাথে নিয়ে প্রথম আইটি কোম্পানি জিপ২ কর্পোরেশান চালু করার লক্ষ্যে স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে আসেন।

কিম্বাল মাস্ক

এ ঘটনার বহু আগে থেকেই অবশ্য তিনি তার জীবনযুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। পড়াশুনার পাট চুকিয়ে শুরু করলেন সকালে কম মাইনের চাকরি করে জীবিকার্জন। তাতেই কিন্তু তিনি থেমে থাকেন নি, সারারাত একটি স্টেডিয়ামের লকার রুমে কাজ করে এলন খুলে বসেন পেপ্যাল। তার প্রথম কোম্পানি জিপ২ একটি অনলাইন সিটি গাইড হিসেবে নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং দ্য শিকাগো ট্রিবিউন উভয়ের নতুন ওয়েবসাইটের জন্য তথ্য সরবরাহ করছিল। ১৯৯৯ সালে কম্প্যাক কম্পিউটার কর্পোরেশনের একটি বিভাগ ‘অল্টা ভিস্টা’ নগদ ৩০৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং স্টক অপশনে ৩৪ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে জিপ২ কিনে নিয়েছিল।

আজকের অনলাইন দুনিয়ার ইন্টারনেট পেমেন্টের পদ্ধতি মূলত এই প্রযুক্তিবিদ এলন মাস্কের মস্তিষ্ক প্রসূত। ভার্চুয়াল ওয়ালেটের উৎপত্তি কিন্তু পেপ্যালের হাত ধরেই। আজকের আধুনিক বিশ্বে এক অভিনব সাড়া জাগিয়েছে তার কোম্পানি পেপ্যাল। পেপ্যালের নাম পূর্বে ছিল ‘এক্স ডট কম’। শুরুর এক বছরের মাথায় ২০০১ সালে নাম পাল্টে হয় পেপ্যাল।

পেপ্যাল চেয়ারম্যান এবং চীফ এক্সিকিউটিভ হিসেবে ডানে এলন মাস্ক।

পরবর্তীতে ২০০২ সালে eBay কোম্পানি এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে পেপ্যাল কিনে নেয়, যেখানে এলনের শেয়ারে প্রাপ্ত অর্থ ছিল ১৮০ মিলিয়ন ডলার। অথচ অদ্ভুত হলেও সত্য যে, তার মূল ভালোবাসা তখনও ছিল পরিবেশ এবং মহাকাশের উপরেই। তারই পথে ছুটে যেতে কোম্পানি বিক্রি করে যে মোটা অর্থ তিনি পেয়েছিলেন তার অধিকাংশই ব্যয় করেছেন সৌরশক্তির পেছনে। তার স্বপ্ন ছিল কার্বনের কালো থাবা মুক্ত এক পৃথিবীর, যেখানে মানুষ বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারবে, গড়ে তুলবে সুন্দর এক পৃথিবী। তারই মনের কোনায় জমে থাকা সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ধীরে ধীরে তৈরি করলেন সোলার সিটি।

সোলার সিটি

তার তৈরি সোলার সিটির সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে গড়ে ওঠে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি। সোলার সিটির বদৌলতে সবখানে পৌঁছে যেতে থাকে সুলভ মূল্যের বিদ্যুৎ। বর্তমানে আমেরিকার বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে, তার একটা বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে এলন মাস্কের সোলার সিটি। বলুন তো, তাঁকে কি শুধুমাত্র একজন ব্যবসায়ী বলা যায়? নাকি ব্যবসায়ী, উদ্ভাবকের পাশাপাশি একজন মানবিক প্রযুক্তিবিদও বলবেন?

এখানেই কিন্তু তিনি থিতু হয়ে বসে থাকেন নি। পেপ্যালের পুরো অর্থ তিনি সোলার সিটিতেই শুধু ব্যয় করেন নি। আজকের যে ‘টেসলা’ নামের ইলেকট্রিক গাড়ির কোম্পানির কথা শোনা যায়, তা-ও তার তৈরি। ইলেকট্রিক গাড়ির পুরোনো ভার্সনে অনেক আধুনিকতার অভাব ছিল। তিনি সেসব কিছুকে ডিঙ্গিয়ে লাক্সারি আর সৌন্দর্য বিচারে এক ধাপ এগিয়ে তৈরি করলেন ‘টেসলা রোডস্টার’।

২০০৮ সালের ‘টেসলা রোডস্টার’

এই ‘টেসলা রোডস্টার’ আরাম, সৌন্দর্য, ব্যয়বহুলতা এবং গতি- সবদিক থেকেই যেকোনো দামী গাড়ির তুলনায় কোনো দিক থেকেই কম নয়। তাছাড়া আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তেই তিনি তৈরি করলেন গাড়ি চার্জ করার পাম্প, যেখানে কিনা বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় তার সেই সোলার সিটি থেকেই। এলনের ‘টেসলা রোডস্টার’ গাড়ির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- একবার সম্পূর্ণ চার্জ করার পর তা একটানা ৪৫০ কিলোমিটার চলতে সক্ষম ছিলো।

টেসলা সুপার চার্জার

অবশ্য এই গাড়িকে বাজারে আনতে তার কম ধকল পোহাতে হয়নি। এলনের রাজকোষ প্রায় শুন্য হওয়ার পথ ধরেছিল এই গাড়ির নির্মাণ ব্যয় বহন করতে গিয়ে। ঠিক সেই সময় তার মাথায় এসে ভর করে অন্য চিন্তা। নাসা বা ইসরো যে রকেটগুলো মহাকাশে পাঠায়, সেগুলো অনেকটা ওয়ান টাইম। অর্থাৎ একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়ার মতো, যাকে বলে ইউজ এন্ড থ্রো টাইপ। রকেটগুলো পৃথিবীর বলয় থেকে একটা টার্গেটে পৌঁছার পরপরই ধ্বংস হয়ে যায়। সে কথা মাথায় রেখে এলন হাত দেন তার ড্রিম প্রজেক্টে, যার নাম ‘স্পেস এক্স’।

স্পেসেক্স লোগো।

তিনি তৈরি করলেন পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট। রকেট মহাকাশে পাঠাতে যে জ্বালানি প্রয়োজন হয়, তা প্রচুর ব্যয়সাপেক্ষ। মাথা খাটিয়ে তিনি তৈরি করলেন ভাসমান গোছের এক হেলিপ্যাড।

এলন মাস্কের তৈরিকৃত পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট

কম জ্বালানি পুড়িয়ে পৃথিবীর অদূরে কোনো মহাসাগরের নিকটবর্তী এলাকায়, যেখানে সাধারণত রকেট ব্লাস্ট হয়, সেই স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে এই হেলিপ্যাড। এতে করে রকেট সেখানে ল্যান্ড করার সুযোগ থাকবে। এই নতুন সম্ভাবনায় নাসাও এখন এলনের সাথে আশাবাদী ও চুক্তিবদ্ধ। তাদের চিন্তা এখন অ্যাস্ট্রোনটদের কীভাবে এমন রি-ইউজেবল রকেটে করে পাঠানো যায়।

১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সালে রকেট ফালকন ৯ এর সফল উড্ডয়ন

তাছাড়া এলনের নতুনতম আবিষ্কার হলো সৌর শক্তি চালিত হাই স্পিড মোটর ‘হাইপারলুপ’।

হাইপারলুপের খসড়া স্কেচ

ইলনের এই হাইপারলুপ মোটরের সাহায্যে লস এঞ্জেলস থেকে সানফ্রান্সিসকো পর্যন্ত ৬১৪ কিলোমিটার পথ যেতে সময় নেবে মাত্র ৩০ মিনিট।

হাইপারলুপের ধারণামূলক চিত্র

যুগান্তকারী এসব আবিষ্কার কিন্তু কেবল মাত্র তার স্বর্ণ মস্তিষ্ক থেকে জন্ম নিয়েই বসে থাকেনি, কাজেও ফলপ্রসূতা কম নয়। আজকের এই পর্যায়ে পৌঁছাতে অনেক চড়াই উৎরাই পার হতে হয়েছে এলনের। অনেক বাধা এসে দ্বার রুদ্ধ করে দিতে চেয়েছিল তার। কিন্তু তিনি হার মেনে নেয়ার পাত্র নন মোটেই। অনেক কঠিন সময়ে হিসাব বদলে নিয়ে তৈরি করেছেন নিত্য নতুন সব আইডিয়া। তেমনই এক সময়ে গুগলের মতো কোম্পানির কাছে লগ্নি চান তিনি, পেয়েও যান ভাগ্যক্রমে। হাইপারলুপের আইডিয়া তার মগজ উদ্ভূত হলেও অর্থের অভাবে তিনি তা বানাতে পারেন নি। কিন্তু তাতে কি? নিজের তৈরি ডিজাইন গোটা দুনিয়ার সামনে মেলে দিলেন তিনি। তার মূল উদ্দেশ্য- যারা পারবে, তারা তা বানিয়ে নেবে। এখানেই এলন মাস্ক বাকি ব্যবসায়ীদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

পৃথিবীর সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামিয়েই তিনি কখনো থেমে থাকেননি। সাথে সাথে খুঁজে বের করে নিয়েছেন তার সমাধানও। কথিত আছে- কর্ম প্রণোদিত এলন এ স্তরে পৌঁছেও সপ্তাহে ৮০-১০০ ঘন্টা কাজে সময় দেন। মাঝে মাঝে কাজ করতে করতেই বাড়ির রাস্তা ভুলে ঘুমিয়ে পড়েন তার ‘টেসলা’ ম্যানুফ্যাকচারিং অফিসেই।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, সমস্যা তাকে নাকানি চুবানি খাওয়ালেও তিনি কিন্তু সমস্যাকে কখনও সমস্যা ভাবেন নি। তাই পাশের বন্ধু কি করছে, না করছে তা না ভেবে এলনের মতো আত্মবিশ্বাসী হওয়াই শ্রেয়। শখের দাম কিন্তু লাখ টাকা!

This article is in Bangla language. It is based on the biography of Elon Musk, an entrepreneur, investor, and business magnate; the founder, CEO, and Chief Engineer at SpaceX; the owner of Twitter; early-stage investor, CEO, and Product Architect of Tesla, Inc.; founder of The Boring Company; and co-founder of Neuralink and OpenAI, and currently the richest man on the earth. 

References:

১) theodysseyonline.com/elonmusk

২) biography.com/people/elon-musk-20837159

৩) astrumpeople.com/elon-musk-biography/

Related Articles