Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ঐশ্বরিয়া রায় বচ্চনের জানা-অজানা

বলিউড জগতের এক লাস্যময়ী রমণী হিসেবে ঐশ্বরিয়া রায় বচ্চনকে আমরা সবাই চিনি। বিশ্বসুন্দরী, দক্ষ অভিনেত্রী, বচ্চন পরিবারের গৃহবধূ, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর- অনেকগুলো পরিচয় আছে তার। বহু গুণে গুণান্বিত এই তারকার জীবনের কিছু কথা নেয়া যাক আজ।

Source: thefamouspeople.com

নারীদের সাফল্যের ঝুড়িতে তিনি এনে দিয়েছেন আরো নতুন কিছু অর্জন। তার জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র বলিউড পাড়াতেই সীমাবদ্ধ নয়, টলিউড, হলিউড জগতেও রয়েছে তার সাফল্যময় বিচরণ।

মায়ের সাথে ঐশ্বরিয়া রায়; Source: thefamouspeople.com

ঐশ্বরিয়া রায়ের জন্ম ১৯৭৩ সালের ১ নভেম্বর। ভারতের কর্ণাটকের কৃষ্ণরাজ ও বৃন্দা রায় দম্পতির কোল আলো করে আসে ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান। সদ্যজাত শিশুর নাম রাখা হয় ঐশ্বরিয়া এবং পদবী হিসেবে নামের শেষে যুক্ত হয় রায়। পরিবারের দ্বিতীয় এবং কনিষ্ঠ সন্তান হিসেবে তিনি ছিলেন সকলের আদরের। ঐশ্বরিয়া রায়ের আদিত্য রায় নামে বড় এক ভাই আছেন। তার বাবা কৃষ্ণরাজ রায় পেশায় একজন মেরিন বায়োলজিস্ট ছিলেন এবং মা বৃন্দা রায় একজন গৃহিণী। আদিত্য বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে মার্চেন্ট নেভিতে কর্মরত আছেন। ২০১৭ সালের ১৮ মার্চ তার বাবা মৃত্যুবরণ করেন।

ভাইয়ের সাথে; Source: thefamouspeople.com

কর্ণাটকে অবস্থিত আরিয়া বিদ্যা মন্দির স্কুলে ভর্তির মাধ্যমে ঐশ্বরিয়া রায়ের শিক্ষাজীবনের শুরু। সাড়ে তিন বছর বয়সে তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। প্রত্যেক ক্লাসে প্রথম স্থানটি সবসময় তার দখলেই থাকত, ব্যতিক্রম ঘটেছিল শুধুমাত্র দশম শ্রেণীতে। দশম শ্রেণীতে তিনি প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। তার জীবনের ১৩ বছর কাটিয়েছেন এই স্কুলে। স্কুলের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সুধা তালওয়ার বলেন, “ঐশ্বরিয়া একজন মেধাবী ছাত্রী ছিল এবং শুধুমাত্র পড়াশোনাতেই নয় ,নাচ -গানেও তার যথেষ্ট প্রতিভা ছিল।

বাবা-মা ও স্বামীর সাথে; Source: thefamouspeople.com

স্কুল শেষে এবার কলেজে ভর্তি হওয়ার পালা। ইতোমধ্যে কৃষ্ণরাজ রায় তার পুরো পরিবার সহ মুম্বাইয়ে চলে আসেন। আর ঐশ্বরিয়া রায়কে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয় জয় হিন্দ কলেজে। এখানে এক বছর পড়াশোনার পর তাকে ভর্তি করানো হয় ডিজি রুপারেল কলেজে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় শতকরা ৯০ ভাগ নম্বর পেয়ে তিনি উত্তীর্ণ হন। এরপর স্থপতি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তিনি ভর্তি হন রচনা সংসদ একাডেমি অফ আর্কিটেকচারে। কিছুদিন পর মডেলিংয়ের হাতছানিতে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে মডেলিংয়ের জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর আর কখনো গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা হয়ে ওঠে নি।

শৈশবে তিনি পাঁচ বছর উচ্চাঙ্গ নৃত্য ও সঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ১৯৯৩ সালে আমির খানের সাথে পেপসির একটি বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের মাধ্যমে মডেলিংয়ের জগতে পা রাখেন। এরপর ১৯৯৪ সালে মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং ‘মিস ইন্ডিয়া ওয়ার্ল্ড’-এর মুকুট অর্জন করেন, যার ফলে তিনি বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। সৌন্দর্য এবং বুদ্ধিমত্তায় সবাইকে ছাড়িয়ে তিনি অর্জন করেন বিশ্বসুন্দরীর খেতাব।

বিশ্বসুন্দরীর মুকুট মাথায়; Source: thefamouspeople.com

বিশ্বসুন্দরীর এই খেতাব তার ক্যারিয়ার জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট ছিল। এরপর তাকে আর কখনো পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অভিনয় জগতে একের পর এক ব্লকব্লাস্টার সিনেমা উপহার দিয়েছেন সবাইকে। ১৯৯৭ সালে প্রথম অভিনয় করেন মণি রত্নমের ‘ইরুভার’ নামক একটি তামিল সিনেমায় এবং একই বছর বলিউডেও পা রাখেন ‘অউর পেয়ার হো গ্যায়া’ এই সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে।

Source: thefamouspeople.com

এরপর ১৯৯৮ সালে ‘জিনস’ নামে আরেকটি তামিল ছবিতে অভিনয় করেন এবং সিনেমাটি ব্যবসাসফল হয়। এই ছবিতে ঐশ্বরিয়া রায়ের অভিনয় দেখে সকলেই তার অভিনয়শৈলী ও নাচের দক্ষতার প্রশংসা করেছেন। এ তো গেলো তামিল ইন্ডাস্ট্রিতে তার প্রথম সফল ছবির কথা। এবার বলিউড পাড়ায় আসা যাক। ১৯৯৯ সালে সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’ সিনেমায় অভিনয় ঐশ্বরিয়া রায়কে প্রথম সাফল্য এনে দেয়। এই সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন সালমান খান ও অজয় দেবগন। দ্বিতীয় সাফল্য আসে একই বছর সুভাষ ঘাইয়ের ‘তাল’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে। এই ছবিতে তিনি অক্ষয় খান্না ও অনি কাপুরের সাথে কাজ করেছিলেন। প্রতিটি ছবিতেই তিনি তার অভিনয় ও নাচের দক্ষতা দিয়ে সকলের মন জয় করেছেন।

হাম দিল দে চুকে সানাম; image source: pinterest.com

২০০০ সালে প্রথমবারের মতো তিনি শাহরুখ খানের বিপরীতে অভিনয় করেন ‘জোশ’ সিনেমায়। এই ছবিটি নিয়ে সকলের মিশ্র অভিব্যক্তি থাকলেও ছবিটি ব্যবসাসফল ছিল। সেই বছরেই ‘ঢাই আকসার প্রেম কাহানি’-তে অভিষেক বচ্চনের সাথে জুটিবদ্ধ হন এবং ‘মোহাব্বতে’ সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন। অবশ্য ‘ঢাই আকসার প্রেম কাহানি’ ফ্লপ হয়। এরপর আরো একটি ফ্লপ সিনেমার খাতায় তার নাম ওঠে- ‘হাম কিসিসে কম নেহি হে’।

২০০২ সালে তিনি আবারো শাহরুখ খানের সাথে সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘দেবদাস’ সিনেমায় জুটিবদ্ধ হন। দুর্দান্ত অভিনয়ের মাধ্যমে জয় করেন সকলের হৃদয় এবং সিনেমাটিও ব্যাপক সাফল্য পায়। পরবর্তীতে ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শন করা হয়। এরপর ২০০৪ সালে চুক্তিবদ্ধ হন একটি থ্রিলার মুভির জন্য, ছবিটির নাম ছিল ‘খাকি’। ছবিটি মোটামুটি সাফল্য পায় এবং একই বছর আবারো একটি ফ্লপ ছবি মুক্তি হয়, ‘কিউ হো গ্যায়া না?’। এই ছবিতে তার সাথে কাজ করেছিলেন বিবেক ওবেরয়।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে; Source: thefamouspeople.com

২০০৪ সাল, ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘রেইনকোট’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে আবার ফিরে আসেন সাফল্যের দোরগোড়ায়। এই ছবিটি জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার পায়। ২০০৫ সালে ‘শব্দ’ এবং ‘বান্টি অউর বাবলি’-এই দুটি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন। এখানে উল্লেখ্য, ‘বান্টি অউর বাবলি’ সিনেমায় তিনি ‘কাজরা রে’ আইটেম গানে অভিনয় করেন। ২০০৬ সালে ঐশ্বরিয়া অভিনীত দুটি সিনেমা মুক্তি পায়। ‘উমরাও জান’ ও ‘ধুম-২’। ‘ধুম-২’ একটি ব্লকব্লাস্টার সিনেমা ছিল। ২০০৭ সালে তার অভিনীত মণিরত্নমের ‘গুরু’ সিনেমাটি ব্যাপক সাফল্যের মুখ দেখে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বেশ সুনাম অর্জন করে। এরপরের সময় খুব একটা ভালো যায়নি, একের পর এক ফ্লপ ছবি তার ক্যারিয়ারে যুক্ত হয়।

যোধা আকবর; Source: thefamouspeople.com

২০০৮ সালে ‘যোধা আকবর’ তার অভিনীত আর একটি ব্যবসা সফল সিনেমা। একই বছর তিনি বিগ বি এবং অভিষেক বচ্চনের সাথে ‘সরকার রাজ’ নামক একটি সিনেমায় অভিনয় করেন। ২০০৯ সালে অভিনয় করেন ‘দ্য পিংক প্যান্থার-২’ সিনেমায়। ২০১০ সালে সুপারস্টার রজনীকান্তের সাথে ‘এনথেরান’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এরপর ২০১৫ সালে অভিনয় করেন ‘জাজবা’ সিনেমায়। পরের বছর অভিনয় করেন সরবজিৎ মুভিতে। এই ছবিটিতে তার অভিনয় ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। ঐশ্বরিয়া রায়ের সর্বশেষ অভিনীত সিনেমা মুক্তি পায় ২০১৬ সালে- ‘অ্যা দিল হ্যায় মুশকিল’।

ব্রাইড এন্ড প্রেজুডিস; Source: thefamouspeople.com

হলিউডের ‘ব্রাইড এন্ড প্রেজুডিস’ ও ‘প্রোভোকড’ সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছিলেন। ‘ব্রাইড এন্ড প্রেজুডিস’ তার ক্যারিয়ারের একটি অন্যতম সাফল্য। ‘প্রোভোকড’-এ এক নির্যাতিত নারী কী করে প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে, তা অনেক বাস্তব অভিনয়ের মাধ্যমে দেখিয়েছেন তিনি।

ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চোখের বালি’-তে তার অভিনয় একেবারেই অন্য ধাঁচের ছিল। রবি ঠাকুরের বিনোদিনীকে যেন সিনেমাটির সময় তিনি পূর্ণাঙ্গভাবেই ধারণ করতে পেরেছিলেন। বিনোদিনীর প্রেম, ক্ষোভ, বঞ্চনা সকলই ঐশ্বরিয়ার অভিনয় ও অভিব্যক্তির মধ্য দিয়ে দর্শক সমাজের মন ছোঁয়। অভিনয় জীবনে তিনি একবার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। ২০০৩ সালে ‘খাকি’ সিনেমায় অভিনয়ের সময় তার পায়ে ফ্র্যাকচার হয়ে যায়।

অভিনয় দিয়ে তিনি আপামর জনসাধারণের মন জয় করেছেন, ঘরে তুলেছেন সম্মানজনক সব পুরস্কার। ১৯৯৯ এবং ২০০২ সালে ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’ এবং  ‘দেবদাস’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। ‘মোহাব্বতে’ সিনেমার জন্য পেয়েছেন সেরা সাপোর্টিং অভিনেত্রীর পুরস্কার।

২০০৯ সালে তার অসামান্য অভিনয় দক্ষতার কারণে তিনি ভারত সরকারের কাছ থেকে পদ্মশ্রী সম্মাননা অর্জন করেন। ২০১২ সালে অর্জন করেন ফ্রান্সের অরড্রি ডেস আর্টস অ্যাট ডেস লেট্রিস পুরস্কার। এখানেই শেষ নয়, ২০০৪ সালে বিখ্যাত মাদাম তুসোর জাদুঘরে তার প্রতিমূর্তি স্থাপন করা হয়। নেদারল্যান্ডের কেউকেনহফ গার্ডেনে তার নামে একটি টিউলিপ ফুলের নাম রাখা হয়। ফ্রান্সেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে।

বিখ্যাত আন্তর্জাতিক কান চলচ্চিত্র উৎসবে তাকে জুরি বোর্ডের একজন হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বিখ্যাত অপেরাহ উইনফ্রে শোতে তিনি বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। তিনিই একমাত্র ভারতীয়, যিনি এই দুর্লভ সম্মানের অধিকারী। ঐশ্বরিয়া রায় পুরো বিশ্বের কাছে সমানভাবে পরিচিত এবং জনপ্রিয়।

ল’রিয়ালের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর; Source: www.thefamouspeople.com

ঐশ্বরিয়া রায় ল’রিয়ালের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। এছাড়া টাইটান ঘড়ি, কোকাকোলা, ল্যাকমে বিউটি প্রোডাক্ট, নক্ষত্র ডায়মন্ড, কল্যাণ জুয়েলার্স সহ নানান প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বেশ কয়েকটি সম্পর্কে জড়িয়েছেন। ১৯৯৯ সালে তিনি অভিনেতা সালমান খানের সাথে প্রণয়ে আবদ্ধ হন এবং ব্যক্তিগত কিছু কারণে ২০০২ সালে সম্পর্কে ইতি টানেন তারা। প্রায় দু’বছর বাদে ২০০৪ সালে তিনি আরেক বলিউড অভিনেতা বিবেক ওবেরয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ান। এই সম্পর্কটিও খুব বেশি দূর গড়ায়নি।

Source: thefamouspeople.com

পরিশেষে ‘ধুম-২’ তে অভিনয়ের সময় তিনি অভিষেক বচ্চনের সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে আবদ্ধ হন। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে তাদের বাগদানের ঘোষণা দেয়া হয় এবং সে বছরই ২০ এপ্রিল মুম্বাইতে তাদের বিবাহের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

Source: thefamouspeople.com

ঐশ্বরিয়া রায় থেকে তিনি ঐশ্বরিয়া রায় বচ্চন হন, বচ্চন পরিবারের পুত্রবধূ হিসেবে তার গৃহপ্রবেশ হয়। ২০১১ সালের ১৬ নভেম্বর বচ্চন পরিবারে নতুন  কন্যাসদস্য আসে, নাম রাখা হয় আরাধ্য।

Source: thefamouspeople.com

ঐশ্বরিয়া রায় বচ্চন, সাবেক এই বিশ্বসুন্দরী নিজের সৌন্দর্য ও অভিনয়শৈলী দিয়ে আজ একজন ইন্টারন্যাশনাল আইকনে পরিণত হয়েছেন। তার ও তার পরিবারের জন্য রইল অনেক শুভকামনা।

ফিচার ইমেজ- thefamouspeople.com

Related Articles