Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

একজন অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের কথা

হঠাৎ একদিন ছেলেটির বাবা তার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ভবিষ্যতে তার ছোট ছেলেটির কোন পেশা বেছে নেয়া উচিত? শিক্ষক জবাব দিয়েছিলেন একটি মাত্র বাক্যে, “যে পেশাই হোক, তাতে কিছু এসে যায় না, কারণ কোনোটিতেই ও কিছু করতে পারবে না।” এমন অকাট্য উত্তর সেদিনের সেই প্রধান শিক্ষকের! শুধু তাই নয় একবার স্কুল থেকে “Your presence in the class is disrupting and affects the other students” বলে  তাকে  স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুল থেকে তিরস্কার করে।

ছেলেবেলার আইনস্টাইন

সেই ছেলেই বড় হয়ে এমন অসাধ্য সাধন করলেন, বিজ্ঞান জগতে মহাবিপ্লব বললেও অত্যুক্তি হয় না। বিশ্ব ও জগত সম্পর্কে নিউটনের ধারণাকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়ে আবিষ্কার করলেন ‘থিওরি অফ রিলেটিভিটি’- আপেক্ষিকতাবাদ। তিনি বলেন, এই যে চোখের সামনে আমরা বস্তুর গতি ও শক্তি, ‘টাইম’ ও ‘স্পেস’ অর্থাৎ সময় ও স্থানকে দেখছি, কোনোটাই ‘অ্যাবসলিউট’ বা অপরিবর্তনীয় নয়, ধ্রুব নয়, সবই আপেক্ষিক। বস্তুর গতি আর তার সাথে পর্যবেক্ষকের অবস্থানের পরিবর্তনে বদলে যায় সবকিছু। শুধু বদলায় না আলোর গতিবেগ।

‘কিছুই হবে না’ বলে ঘোষণা করে দেওয়া মাস্টার মশাইয়ের সেই ছাত্রটি আর কেউ নন, তিনি মহাবিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন।

১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ জার্মানির মফস্বল শহরে উলম-এ এক ইহুদি পরিবারে আইনস্টাইনের জন্ম। বাবা হেরম্যান আইনস্টাইন ছিলেন ছোট ব্যবসায়ী। উলমে ব্যবসা ভালো চলছিল না বলে অ্যালবার্টের জন্মের এক বছর পরেই হেরম্যান মিউনিখে গিয়ে তার ভাই জ্যাকবের সঙ্গে নতুন করে ব্যবসা শুরু করেন।

আইনস্টাইনের বাবা হেরম্যান আইনস্টাইন এবং মা পলিন আইনস্টাইন

অ্যালবার্টের ছেলেবেলা কেটেছিল মিউনিখেই। খুব ছোট থেকেই ভাবুক প্রকৃতির ছিলেন। কথা বলতে শুরু করেন সাধারণ শিশুদের চেয়ে তুলনায় একটু বেশি বয়সে। আর পড়তে শেখেন সাত বছর বয়সে। চার বছর পর্যন্ত যখন তিনি কথা বলছিলেন না, তখন তার মা-বাবা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। একদিন হঠাৎ খাবার টেবিলে চুপচাপ থাকা আইনস্টাইন বলে উঠলেন, “স্যুপটা খুবই গরম!” তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, “এতদিন কেন কথা বলোনি?” উত্তর এলো “এতদিন তো সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল“, আইনস্টাইন তার জীবনের দ্বিতীয় বাক্যটি বললেন।

তিন বছরের ছোট বোন মাজা’র স্মৃতিচারণায় জানা গেছে , ছ’-সাত বছর বয়সেই কখনও কখনও রেগে যেতেন অ্যালবার্ট। হাতের জিনিস ছুড়ে ফেলে দিতেন। একবার তো রাগের চোটে বাগানের নিড়ানি দিয়ে বোনের মাথায় এক ঘা বসিয়ে দিয়েছিলেন। এরকম দু’একটি ঘটনা ছাড়া সাধারণভাবে শিশু অ্যালবার্ট স্বভাবে ছিলেন শান্তই।

আইনস্টাইন ও তার ছোট বোন মাজা

অ্যালবার্টকে প্রথম স্কুলে পাঠানো হয় পাঁচ বছর বয়সে। ১০ বছর বয়সে ভর্তি হন হাই স্কুল লুটিগোল্ড জিমনেশিয়ামে। স্কুলের ধরা-বাধা পড়াশুনা তার কখনোই ভালো লাগেনি। স্কুলের পড়াশুনায় খুব একটা ভালো ছিলেন না। ক্যাথলিক স্কুলের অতিরিক্ত কড়াকড়িও তার ভীষণ অপছন্দ ছিল। তাই শেষ বয়সে সেই অভিজ্ঞতা স্মরণ করতে গিয়ে আইনস্টাইন একবার বলেছিলেন, “প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের মনে হতো এক-একজন সার্জেন্ট, আর জিমনেশিয়ামের টিচাররা ছিলেন একেবারে মিলিটারী ল্যাফটেন্যান্ট।” আসলে কোনো ব্যাপারে কর্তৃত্বের বাড়াবাড়ি তিনি একেবারেই সহ্য করতে পারতেন না।

অ্যালবার্ট বরাবরই স্বাধীনচেতা ছিলেন। এই গুণটি তিনি পান পারিবারিক সূত্রে। মাত্র চার বছর বয়সে মিউনিখের পথে ঘাটে অবাধ ঘুরে বেড়ানোর ছাড়পত্র পেয়েছিলেন মায়ের কাছ থেকেই। আবার ১৫ বছর বয়সে ব্যবসার খাতিরেই মিউনিখের পাট চুকিয়ে বাবা যখন ইতালিতে চলে গেলেন, তখন হাই স্কুলের পড়া শেষ করার জন্য তাকে রেখে যাওয়া হলো মিউনিখের এক হোস্টেলে। বাবা-মা’র ইচ্ছে ছিল ছেলে তাড়াতাড়ি স্বাবলম্বী হয়ে উঠুক। এ বিষয়ে মা পলিনের ছিল কড়া নজর।

স্কুল জীবনে আইনস্টাইনের প্রতিভার কোনো প্রতিফলনই দেখা যায় নি। প্রথাগত লেখাপড়ায় তার মন ছিল না বলেই হয়তো এমনটা হয়েছিলো। ছ’বছর বয়সে একরকম জোর করেই মা তাকে বেহালা শেখানোর ব্যবস্থা করেন। নেহাত অনিচ্ছার সাথে শুরু করলেও একসময় এই বাজনাটার প্রতি আইনস্টাইন আকৃষ্ট হন। বেহালা হয়ে ওঠে তার আজীবন সঙ্গী।

বেহালা ছিল তার আজীবনের সঙ্গী

শৈশবে আরেকটি ছোট ঘটনা আইনস্টাইনের জীবনে গভীর ছাপ ফেলেছিল। বছর পাঁচেক বয়স তখন। অসুস্থ হয়ে তিনি একেবারেই শয্যাশায়ী। বাবা এনে দিলেন একটি ছোট কম্পাস। শিশু অ্যালবার্ট সেটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যত দেখে, ততই অবাক হয়ে যায়। যন্ত্রটি যে দিকেই ঘোরানো হোক না কেন, কম্পাসের কাঁটা ঠিক উত্তরমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। শিশুটি ভাবে- কোনো অজানা রহস্যময় শক্তিই হয়তো এর কারণ। অ্যালবার্ট ভাবে, স্কুলের পড়ায় এই মজা নেই কেন? এ ধরনের প্রশ্নের মধ্যেই হয়তো সুপ্ত ছিল ভবিষ্যতের আপেক্ষিক তত্ত্ব চিন্তার বীজ।

বাবার দেয়া আইনস্টাইনের চিন্তার জগৎকে নাড়িয়ে দেয়

কৈশোর থেকেই গণিতের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল আইনস্টাইনের। বীজগণিতে তার আগ্রহ জাগিয়ে তোলেন কাকা জ্যাকব। মজা করে তিনি বলতেন, “আমরা এমন একটি ছোট্ট জন্তু শিকারে বেরিয়েছি, যার নাম জানা নেই। তাই তার নাম দেওয়া হল ‘×’; এবার তাকে ধরো, তারপর ঠিক নামটি দিয়ে দাও।

কাকা জেকবের আনন্দদায়ক পাঠদানে আইনস্টাইনের বীজগণিতের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া

বালক আইনস্টাইনের জিজ্ঞাসু মনে বিজ্ঞান বিষয়ে কৌতুহল সৃষ্টির পেছনে ছিল আরও দুজন মানুষের বিশেষ অবদান। একজন হলো তার নিজের মামা সিজার কচ্। অন্যজন হলো এক ডাক্তারির ছাত্র, নাম ম্যাক্স তালমুদ। তালমুদ প্রতি বৃহস্পতিবার তাদের বাড়িতে সান্ধ্য ভোজে যোগ দিতেন। ১২ বছরের অ্যালবার্টকে তিনি একটি জ্যামিতির বই উপহার দিয়েছিলেন। এই বইটিই যে তার বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার পথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সে কথা আইনস্টাইন একাধিকবার উল্লেখ করেছেন।

মেডিকেল ছাত্র ম্যাক্স তালমুদ, আইনস্টাইনের বিজ্ঞানী হওয়ার পিছনে রয়েছে যার অনন্য ভূমিকা

কিশোর অ্যালবার্টের সাথে তালমুদ বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে আলোচনা করতেন। তালমুদ লিখেছেন, “জ্যামিতির বইটি কয়েক মাসের মধ্যেই মধ্যেই আয়ত্ত করে ফেলেছিল অ্যালবার্ট। এরপর উচ্চতর গণিত নিয়েও পড়াশোনা শুরু করে, সেসব বইয়ের হদিস আমিই তাকে দিয়েছিলাম।

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে আইনস্টাইনকে আগ্রহী করে তোলেন ম্যাক্স তালমুদ

হাই স্কুলের পড়া শেষ না করেই অ্যালবার্ট চলে যান ইতালিতে বাবা-মা’র কাছে। হেরম্যান চেয়েছিলেন ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক হয়ে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দিক। তাই অ্যালবার্টকে জুরিখের টেকনিক্যাল স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় তিনি অকৃতকার্য হন। বিজ্ঞান ও গণিতে ভালো নম্বর পেলেও ভাষা ও ইতিহাসে উৎরোতে পারেননি। পরের বার অবশ্য একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে সরাসরি ভর্তি হয়ে যান। কিন্তু স্নাতক স্তরেও পাঠক্রমের বাধা-ধরা পড়ায় তার মন ছিল না। নিজের খেয়াল খুশিতে চলতেন। বাইরের ভারী ভারী বই পড়তেন আর ভাবতেন।

জুরিখ টেকনিক্যাল স্কুল

পরীক্ষার ফল মোটেই ভাল হলো না, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। যা হোক, একটা চাকরি চাই। এ সময়েই এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সুপারিশে সুইজারল্যান্ডের বার্নে পেটেন্ট অফিসে আইনস্টাইন একটি চাকরি পান। তার প্রধান কাজ ছিল পেটেন্ট সংক্রান্ত আবেদনগুলি পরীক্ষা করা। আইনস্টাইন সুইস পেটেন্ট অফিসে ছিলেন ১৯০২ সাল থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত। চাকরি পাওয়ার পরই ১৯০৩ সালে তিনি বিয়ে করেন টেকনিক্যাল স্কুলের সহপাঠিনী মাভিয়া ম্যারিককে।

আইনস্টাইন ও মাভিয়া ম্যারিক

বার্নেই সংসার পাতেন তারা দুজনে। মাভিয়ার গর্ভে জন্ম নেয় আইনস্টাইনের দুই সন্তান হ্যান্স আলবার্ট আইনস্টাইন ও এডওয়ার্ড আইনস্টাইন। কিন্তু এই বিয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পাঁচ বছর পরে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯১৯ সালে আইনস্টাইন আবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তার চাচাতো বোন এলসা আইনস্টাইনের সাথে।

আইনস্টাইন ও তার চাচাতো বোন এলসা

এসময় কয়েকজন বুদ্ধিজীবী বন্ধু মিলে একটি গোষ্ঠীও গড়ে তোলেন, যেখানে পদার্থবিদ্যার সাম্প্রতিক গবেষণা ও আবিষ্কার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হত। ঘনিষ্ঠতম বন্ধু ছিলেন মাইকেলেঞ্জেলো বেসো, যিনি মজা করে ঐ গোষ্ঠীর নাম দিয়েছিলেন ‘অলিম্পিয়া অ্যাকাডেমি’। এই পর্বেই আইনস্টাইনের বিজ্ঞান ভাবনা ও গবেষণা উৎকর্ষের শীর্ষ বিন্দুতে পৌঁছায়।

অলিম্পিয়া অ্যাকাডেমির পাঠচক্রের সদস্যরা

মজার কথা হলো, ল্যাবরেটরিতে প্রথাগত গবেষণা তিনি কখনই করেননি। মস্তিষ্ক ছিল তার ল্যাবরেটরি। আর যন্ত্রপাতি বলতে ছিল পেন্সিল আর কলম। তার পরীক্ষা সব ছিল চিন্তার জগতে, যাকে বলা হয় ‘থট এক্সপেরিমেন্ট’।

এ সময়েই পর পর আইনস্টাইনের কয়েকটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে ছিল ডক্টরেট ডিগ্রীর জন্য থিসিস, ‘ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্ট’ অর্থাৎ আলোক তড়িৎ প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ এবং ‘স্পেশাল থিওরি অফ রিলেটিভিটি’ বা বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদ। জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ডক্টরেট পেয়ে যান সহজেই।

১৯২১ সালে ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্টের কাজের জন্যেই নোবেল পুরস্কার পান। তবে ১৯০৫ সালে তার প্রকাশিত বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদ বিজ্ঞানী মহলে তাকে খ্যাতি এনে দেয়।  এ সমস্ত গবেষণাপত্র অতি উচ্চ গণিতের ভাষায় লেখা, গণিতের বিশেষ জ্ঞান ছাড়া যা বোঝা সম্ভব নয়। তবে বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মূল কথাটি কঠিন নয়। যার সার কথা হলো- আলোর গতিবেগই চরম এবং ধ্রুব। আলোর উৎস বা পর্যবেক্ষকের অবস্থান ও গতিবেগ বদলালেও আলোর বেগ একই থাকে।

১৯২১ সালে ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্টের কাজের জন্য আইনস্টাইন নোবেল পুরস্কার পান

বস্তুর গতিবেগ যতই বাড়ে, ততই তার দৈর্ঘ্য কমে আর ভর বাড়তে থাকে, কমতে থাকে সময়ের চলন। গতিশীল বস্তুর সাথে জুড়ে দেওয়া ঘড়ি ক্রমশ ‘ধীরে’ চলবে।

অতি বেগবান কোনো মহাকাশযানের যাত্রীরা কয়েক বছর ঘুরে পৃথিবীতে ফিরে এসে দেখবেন তাদের আত্মীয় স্বজনেরা কেউ আর বেঁচে নেই। অথচ তাদের নিজেদের বয়স তেমন কিছুই বাড়েনি। এই তত্ত্বেই আছে বস্তু ও শক্তির সম্পর্ক নির্ণায়ক বিখ্যাত সমীকরণ E=mc^2, যেখানে E হলো বস্তুর মধ্যে নিহিত শক্তি, m বস্তুর ভর এবং c আলোর গতিবেগ।

১৯১৬ সালে আইনস্টাইন আবিষ্কার করলেন আরেকটি যুগান্তকারী আবষ্কার, ‘জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি’ বা সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব। তাতে তিনি মহাকর্ষের সম্পূর্ণ নতুন সংজ্ঞা দিয়েছেন। বলেছেন, মহাকর্ষ বা অভিকর্ষ হলো ‘স্পেস টাইম’ অর্থাৎ সময় ও স্থান মিলিয়ে এক বিশেষ ক্ষেত্রের বিকৃতি থেকে উদ্ভূত টান।

ক্লাসরুমে আপেক্ষিকতা তত্ত্ব বোঝাচ্ছেন আইনস্টাইন

পেটেন্ট অফিসের সংকীর্ণ গণ্ডি ছেড়ে বিভিন্ন সময়ে নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন আইনস্টাইন। ১৯৩৩ সালে হিটলার জার্মানিতে ক্ষমতায় আসার সময় তিনি বার্লিন একাডেমি অব সায়েন্সের অধ্যাপক ছিলেন। ইহুদী হওয়ার কারণে আইনস্টাইন সে সময় দেশ ত্যাগ করে আমিরেকায় চলে আসেন এবং আর জার্মানিতে ফিরে যাননি। এ সময় পদার্থবিজ্ঞানী বন্ধু লিও শিলার্ড ও ইউজিন উইগনার আইনস্টাইনকে জানান যে, হিটলারের অধীনস্ত বিজ্ঞানীরা ইউরোনিয়াম নিয়ে গবেষণা করছে। ফলে জার্মানিতে পারমাণবিক বোমা তৈরির বিরাট সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তার আগেই যেন আমেরিকা এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয় সেজন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে বিজ্ঞানীদের তরফ থেকে চিঠি পাঠানোর ব্যবস্থা করার জন্য তারা আইনস্টাইনকে অনুরোধ জানান।

ঐ সময়েই এ বিষয়ে একটা খসড়া তৈরি করা হয় এবং আইনস্টাইনের স্বাক্ষরে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের নিকট পাঠানো হয়। এর ফলশ্রতিতে ম্যানহাটন প্রজেক্ট নামে নিউক্লিয়ার বোমা তৈরির একটা বৃহৎ কর্মসূচি শুরু করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে।

এই চিঠি কাহিনীর উদ্যোক্তা আইনস্টাইন নন, মূল হলেন হাঙ্গেরীয় পদার্থবিজ্ঞানী লিও শিলার্ড

আইনস্টাইন প্রথমে এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত থাকতে চাননি। তিনি বিশ্বাসই করতেন না তার E=mc^2 সূত্রটি পরীক্ষাগারে প্রমাণ করা সম্ভব, আর সেটা দিয়ে পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব হবে। ওপেনহাইমার তাকে পুরো প্রক্রিয়াটা বোঝালেন। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতা নিয়ে তিনি আতঙ্কিত হয়ে উঠলেন। তিনি এই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলেও জামার্নিকে রুখে দেওয়ার তাগিদ থেকে প্রকল্পের সাথে যুক্ত হন, যেটাকে তিনি তার জীবনের বড় ভুল হিসেবে অভিহিত করেন। তবে এ প্রকল্পের সাথে সরাসরি কখনো যুক্ত ছিলেন না বলে বিভিন্ন সময়ে তিনি উল্লেখ করেন।

আমেরিকার নাগরিকত্ব প্রদান অনুষ্ঠানে আইনস্টাইন

১৯৪০ সালে আমেরিকার নাগরিকত্ব পান আইনস্টাইন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে চুল সাদা হয়ে যাওয়া মানুষটি এক সময় বিজ্ঞান মনীষী হিসেবে স্বীকৃত হন সারা বিশ্বে। বাকি জীবন তিনি এখানেই কাটান। ১৯৫৫ সালে মারা যাওয়ার আগপর্যন্ত তার ৫০টিরও অধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৯ সালে টাইম সাময়িকী আইনস্টাইনকে ‘শতাব্দীর সেরা ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করে। তিনি বিজ্ঞান ভাবনায় এতই মগ্ন থাকতেন যে, কথিত আছে, বাইরে বেরিয়ে কখনও কখনও বাড়ি ফেরার পথও হারিয়ে ফেলতেন তিনি।

তথ্যসূত্র

১) en.wikipedia.org/wiki/Albert_Einstein

২) nobelprize.org/nobel_prizes/physics/laureates/1921/einstein-bio.html

৩) history.com/topics/albert-einstein

৪) global.britannica.com/biography/Albert-Einstein

৫) biographyonline.net/scientists/albert-einstein.html

৬) simplyknowledge.com/popular/biography/albert-einstein

Related Articles