Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যারন পল: বাথরুমের মেঝেতে জন্মেছিলেন যে তারকা

বিশ্বব্যপী তুমুল জনপ্রিয় ‘ব্রেকিং ব্যাড’ টিভি সিরিজের অন্যতম প্রধান চরিত্র জেসি পিংকম্যানের ভূমিকায় দুর্দান্ত অভিনয় করা ব্যক্তির নাম অ্যারন পল। দক্ষ অভিনয় নৈপুণ্যের গুণে তিনি তিনবার প্রাইমটাইম অ্যামি অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার বিরল রেকর্ড গড়েছেন। চলুন অল্প কথায় জেনে নেয়া যাক এই মেধাবী অভিনেতা সম্পর্কে।

সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও প্রাথমিক জীবন

১৯৭৯ সালের ২৭ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহোর এমেটে জন্মগ্রহণ করেন অ্যারন পল। তার বাবা রবার্ট স্টারটিভ্যান্ট ছিলেন একজন ব্যাপ্টিস্ট মিনিস্টার, মা ডারলা স্টারটিভ্যান্ট গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে ছোট ছিলেন অ্যারন। নির্ধারিত সময়ের এক মাস আগেই বাসার বাথরুমে পলের জন্ম হয়। সেসময় তাঁর বাবা শহরে ছিলেন না বলে মা একদম একা ছিলেন বাসায়।

টিনএজার অ্যারন পল; source: pictures.zimbio.com

১৯৯৮ সালে স্নাতক শেষ করেন তিনি। তারপর জমানো মাত্র ছয় হাজার ডলার নিয়ে ১৯৮২ মডেলের টয়োটা করোলা গাড়িতে করে মাকে সহ রওনা হন লস অ্যাঞ্জেলেসের উদ্দেশে; লক্ষ্য অভিনয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়বেন, কারণ অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন ছিল পলের ছোটবেলা থেকেই। যখন তিনি সবেমাত্র অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র, তখন থেকেই অভিনেতা হবার ব্যাপারে জীবনের লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন তিনি।

অভিনেতা হওয়ার সংগ্রাম

দু’চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসে এলেন ঠিকই, কিন্তু চটজলদি অভিনয় জগতে ঢোকার সুযোগ মিলল না। আপাতত হলিউডে ইউনিভার্সাল স্টুডিওর মুভি থিয়েটারে একজন মামুলি টিকেটম্যান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেন অ্যারন পল। পাশাপাশি চেষ্টা চালিয়ে গেলেন কীভাবে কোথায় অভিনয় করার সুযোগ পাওয়া যেতে পারে।

এর আগে ১৯৯৬ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে এসে একটি ইন্টারন্যাশনাল মডেলিং ও ট্যালেন্ট হান্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিযোগিতায় রানার্স আপ হয়ে এক ম্যানেজারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। সেই সূত্রে কাজ করেছিলেন কিছু মিউজিক ভিডিও ও প্রচুর সংখ্যক টিভি বিজ্ঞাপনে

থটলেস মিউজিক ভিডিওতে অ্যারন পল; source: pbs.twimg.com

তাই অভিজ্ঞতার ঝুলি নেহায়েত খালি নয়। সেটার জোরেই হয়তো কয়েকটি টিভি সিরিজের একটি করে পর্বে নিজের অভিনয় দেখানোর সুযোগ পেয়েছিলেন অ্যারন। কিন্তু অভিনয় করে খ্যাতি অর্জনের লক্ষ্যে থাকা অ্যারন তো এত অল্পতেই থেমে যাবার লোক নন। বিভিন্ন টিভি সিরিজের ২-১টি পর্বে অভিনয়ের পাশাপাশি কাস্টিং ডিরেক্টরদের সাথে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন নিয়মিত। তবে বাধ সাধে তার নামের শেষ অংশ। ‘স্টারটিভ্যান্ট’ শব্দটি কাস্টিং ডিরেক্টরগণ উচ্চারণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন না। নিজের ক্যারিয়ারের পথচলাকে মসৃণ করতে অ্যারন নিজের নাম থেকে পারিবারিক উপাধিটি বাদ দিয়ে স্রেফ ‘অ্যারন পল’ নাম ধারণ করেন।

ভাগ্য সহায় হতে শুরু করে অ্যারনের। ছোট পর্দার পাশাপাশি বড় পর্দায় অভিনয়ের সুযোগ পেতে থাকেন। যদিও সেগুলো খুব ছোট ছোট চরিত্র। যেমন: টম ক্রুজ অভিনীত মিশন ইম্পসিবল সিরিজের ৩য় সিনেমায় ছোট্ট একটি চরিত্রে তাকে দেখা গিয়েছিল।

মিশন ইম্পসিবল সিনেমায় টম ক্রুজের সাথে একটি দৃশ্যে অ্যারন পল; source: i.imgur.com

প্রচুর কাজ করছিলেন অ্যারন, কিন্তু তারপরও নিজেকে ঠিক লাইমলাইটে আনতে পারছিলেন না সেভাবে। একগাদা ছোট ছোট কাজ করার চেয়ে একটি বড় কাজে বেশি পরিচিতি পাওয়া যায়। ‘বিগ লাভ’ নামের টিভি সিরিজটি অ্যারনকে সেই পরিচিতি পাইয়ে দিল। স্কট কুইটম্যান পরিচালিত এই সিরিজের ১৪টি পর্বে অভিনয় করার সুযোগ পান অ্যারন পল। এর আগে কখনও তিনি কোনো সিরিজের এতগুলো পর্বে কাজ করার প্রস্তাব পাননি।

ব্রেকিং ব্যাডের জেসি পিংকম্যান: জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া চরিত্র

‘বিগ লাভ’ টিভি সিরিজে লম্বা সময় অভিনয়ের সুবাদে বেশ পরিচিতি অর্জন করেন অ্যারন। তারই ধারাবাহিকতায় সুযোগ পান ‘ব্রেকিং ব্যাড’ টিভি সিরিজে। ‘বিগ লাভ’ সিরিজে অভিনয় করা অবস্থাতেই তার কাছে ‘ব্রেকিং ব্যাড’ সিরিজের স্ক্রিপ্ট আসে। তাকে জানানো হয়, পুরো এক সিজন অভিনয় করতে হবে। অ্যারন যেন এরকম একটা সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন! অফারটি লুফে নিতে দেরি করেননি। তবে তাঁর মনে সন্দেহও ছিল এই সিরিজটি কখনও টিভিতে প্রচারিত হবে কিনা সেটা নিয়ে।

“স্ক্রিপ্টটা পড়ে মনে হচ্ছিল এটা আমার পড়া সেরা স্ক্রিপ্ট। কিন্তু টিভিতে আদৌ প্রচার হবে কিনা যথেষ্ট সন্দিহান ছিলাম, কারণ স্ক্রিপ্টটা শুরু থেকেই বেশ ঝাঁঝালো ছিল।”

সব সন্দেহের অবসান ঘটিয়ে ২০০৮ সালে ব্রেকিং ব্যাডের প্রথম পর্ব এএমসি টিভিতে প্রচারিত হয় এবং দর্শকদের মনে এতোটাই জায়গা করে নেয় যে, আমেরিকান টিভি সিরিজের ইতিহাসের একটি মাইলফলক হয়ে যায় ব্রেকিং ব্যাড। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৫ সিজনে মোট ৬২ পর্ব প্রচারিত হয়।

ব্রেকিং ব্যাড সিরিজের ৪র্থ সিজনে অ্যারন পল; source: media.melty.fr

শুরুতে সিরিজটির লেখক ও পরিচালক ভিন্স গিলিগ্যানের পরিকল্পনা ছিল, তিনি অ্যারন পলের ‘জেসি পিংকম্যান’ চরিত্রেটিকে ২য় সিজনের আগে, অর্থাৎ ১ম সিজনে মেরে ফেলবেন। কিন্তু সিরিজের আরেকটি প্রধান চরিত্র ‘ওয়াল্টার হোয়াইট’; যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন ব্রায়ান ক্রান্সটন, তাঁর সাথে অ্যারনের দুর্দান্ত অভিনয় রসায়ন দেখে পরিচালক সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। অ্যারনের চরিত্রটিকে নিয়ে নতুন করে লেখেন তিনি, যার সুবাদে অ্যারন পলকে ‘ব্রেকিং ব্যাড’ সিরিজের সবগুলো পর্বেই অভিনয় করতে দেখা গেছে।

অ্যারন পলের ক্যারিয়ারের রূপরেখা বদলে যায় এই টিভি সিরিজের কারণে। আমেরিকায় তো বটেই, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হন তিনি। বগলদাবা করেন প্রাইমটাইম অ্যামি অ্যাওয়ার্ড। টানা পাঁচ বছর মনোনয়ন পেয়ে তিনবারই পুরষ্কার জিতে নেন এই তরুণ অভিনেতা, যা তার প্রাপ্তির ঝুলিতে একটি রেকর্ড হয়ে রয়েছে!

হলিউড সিনেমায় শক্ত পদার্পণ

ব্রেকিং ব্যাডের জেসি পিংকম্যান চরিত্রে অভিনয়ের বদৌলতে অ্যারন পল পরিণত হলেন হালের ক্রেজে। বাইরের কিছু প্রজেক্ট করার পাশাপাশি দুটো ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিনেমাতেও অভিনয় করেন; স্ম্যাশড (২০১০) ও ডিকোডিং অ্যানি পার্কার (২০১৩)। তবে হলিউডের রূপালি পর্দায় মূল চরিত্রে তার আগমন ঘটে ‘নীড ফর স্পিড’ সিনেমার মাধ্যমে। পুরো বিশ্ব জুড়ে জনপ্রিয় রেসিং গেম সিরিজ ‘নীড ফর স্পিড’ অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমায় তাকে ‘টবি মার্শাল’ চরিত্রে নেয়া হয়।

এক্সোডাস: গডস অ্যাণ্ড কিংস সিনেমায় জশুয়া চরিত্রে অ্যারন পল; source: i.imgur.com

এরপর একে একে বিভিন্ন হলিউড সিনেমায় নিয়মিত অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাকে। তার মধ্যে বাইবেলের উপর ভিত্তি করে নির্মিত এক্সোডাস: গডস অ্যাণ্ড কিংস, ঈগল ইন দ্য স্কাই, ট্রিপল নাইন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

অন্যান্য

এছাড়াও ২০১৩ সালে তিনি নেটফ্লিক্সে নিজে ‘বোজ্যাক হর্সম্যান: অ্যা টেল অব ফিয়ার’ ও ‘লোথিং অ্যাণ্ড অ্যানিম্যালস’ নামের দুটো অ্যানিমেটেড সিরিজ চালু করেন।

২০১৪ সালে ‘ডব্লিউ ডব্লিউ ই র’-তে নিজের সিনেমা ‘নীড ফর স্পিড’-এর প্রচারণা করতে আসেন তিনি। রেসলার ডলফ জিগলারকে সাথে নিয়ে একটি রেসিং কারে করে রেসলিং এরিনায় রাজকীয়ভাবে প্রবেশ করেন এবং পুরো রেসলিং ম্যাচ জুড়ে জিগলারের পক্ষ নিয়ে ধারা বর্ণনা করেন অ্যারন পল। প্রতিপক্ষ রেসলার আলবার্তো দ্যঁ রিও-র মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করে তিনি জিগলারকে ম্যাচ জিততে সহায়তাও করেন।

ব্যক্তিগত জীবন

প্যারিসে ২০১২ সালের জানুয়ারীর ১ তারিখে লরেন পারসেকিয়েনেরর সাথে আংটি বদল হয় তার। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে মে মাসের ২৬ তারিখে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। ২০১৩ সালে স্ত্রীকে নিয়ে কাইণ্ড ক্যাম্পেইন নামের একটি অলাভজনক অ্যান্টিবুলিং প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৮ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা যোগাড় করতে সাহায্য করেন তিনি।

অ্যারন পল ও তার স্ত্রী লরেন পারসেকিয়েন; source: celebitchy.com

ফিচার ইমেজ: schmoesknow.com

Related Articles