আসগর ফরহাদি: সহানুভূতির ফেরিওয়ালা

চলচ্চিত্র জগতে ইরানের অবস্থান দীর্ঘদিন ধরেই অত্যন্ত সম্মানের। প্রায় প্রতি বছরই ইরানি চলচ্চিত্রগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সম্মানের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং সম্মানজনক পুরস্কার অর্জন করে। আর এ সম্মান তারা অর্জন করে অশ্লীলতাকে বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় না দিয়ে, স্রোতের অনুকূলে গা না ভাসিয়েই।

আশির দশক থেকেই আব্বাস কিয়োরোস্তামি, মজিদ মাজিদি, জাফর পানাহি প্রমুখ ইরানি নির্মাতাদের চলচ্চিত্রগুলো বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়ে আসছিল। কিন্তু বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার অস্কার কখনো ইরানের ভাগ্যে জোটেনি। ১৯৯৮ সালে মজিদ মাজিদির ‘চিলড্রেন অফ হ্যাভেন’ অস্কারে শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল, কিন্তু হেরে যায় সে বছরের আরেক মাস্টারপিস, ইতালিয়ান চলচ্চিত্র ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’-এর কাছে।

‘দ্য পাস্ট’ চলচ্চিত্রের জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসবে আসগর ফরহাদি; Source: AFP

ইরানের অস্কার ভাগ্য ঘুরে দাঁড়ায় যে ব্যক্তিটির হাত ধরে, তিনি হচ্ছেন আসগর ফরহাদি। ২০১১ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইরানের দ্বন্দ্ব চরমে, যখন অনেকেই ধারণা করছিলেন ইরান-আমেরিকা যুদ্ধ আসন্ন, তখন আমেরিকার মাটিতে, আমেরিকান অ্যাকাডেমির সিদ্ধান্তে শ্রেষ্ঠ বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র ক্যাটাগরিতে অস্কার জয় করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় আসগর ফরহাদির ‘এ সেপারেশন’ চলচ্চিত্রটি।

অস্কারের ৮৪ বছরের ইতিহাসে ওটাই ছিল কোনো মুসলিম রাষ্ট্রের প্রধান কোনো ক্যাটাগরিতে অস্কার বিজয়। ৬ বছর পর আবারও চমক দেখান ফরহাদি। ২০১৭ সালে তার তৈরি ‘দ্য সেলসম্যান’ আবারও বেস্ট ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্মে অস্কার লাভ করে।

ফরহাদির চলচ্চিত্রকার হয়ে ওঠা

আসগর ফরহাদির জন্ম ১৯৭২ সালে, ইরানের ইস্পাহান প্রদেশে। ছোটবেলা থেকেই তিনি সিনেমার প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। তার বয়স যখন মাত্র ১৪ বছর, তখনই তিনি ইস্পাহানের ইরানী যুব সিনেমা সংঘে যোগদান করেন এবং ৮ মি.মি. ও ১৬ মি.মি. ক্যামেরায় কয়েকটি শর্টফিল্ম নির্মাণ করেন।

১৯৯৮ সালে তিনি তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থিয়েটারের উপর ব্যাচেলর ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে তেহরানের তারবিয়াত মোদাররেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মঞ্চ নির্দেশনার উপর মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন ফরহাদি। শিক্ষা জীবনেই তিনি ছয়টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এছাড়াও এ সময় তিনি ইরানের ন্যাশনাল ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন, IRIB এর জন্য কিছু রেডিও নাটকের চিত্র্যনাট্য রচনা এবং দুটি টিভি সিরিয়াল নির্মাণ করেন। এগুলোর মধ্যে একটি ছিল A Tale of a City, যা সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে।

এ সেপারেশন চলচ্চিত্রের শ্যুটিংয়ের সময়; Source: Sony Pictures

A Tale of a City নির্মাণের সময়ই তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজকদের নজরে পড়েন। তারা ফরহাদির রেডিওর জন্য লিখিত চিত্রনাট্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রনাট্য লেখার অনুরোধ জানাতে থাকেন। ২০০১ সালে ফরহাদি Low Heights সিনেমার চিত্রনাট্য রচনার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রের রূপালি জগতে প্রবেশ করেন। ২০০৩ সালে তিনি পরিচালনা করেন নিজের প্রথম চলচ্চিত্র Dancing in the Dust। এই সিনেমাটি ইরানের ফজর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এবং রাশিয়ার মস্কো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয় এবং প্রশংসা ও পুরস্কার অর্জন করে।

এরপর তিনি একে একে নির্মাণ করেন Beautiful City (2004), Fireworks Wednesday (2006), About Elly (2009), A Separation (2011), The Past (2013) এবং The Salesman (2016)। তার পরিচালিত মাত্র সাতটি চলচ্চিত্রের মধ্যে তিনটি ইরানের পক্ষ থেকে অস্কারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নির্বাচিত হয় এবং এর মধ্যে দুটিই অস্কার জয় করে।

ফরহাদির সিনেমার বৈশিষ্ট্য

আসগর ফরহাদি তার চলচ্চিত্রে পরিবার এবং সমাজের জটিল সম্পর্কগুলো তুলে ধরেন, কিন্তু তিনি কোনো সমাধান দেন না। সেটা তিনি দর্শকদের বিচারের উপরেই ছেড়ে দেন। তার ‘এ সেপারেশন’ চলচ্চিত্রে নাদের এবং সিমিনের বিবাহ বিচ্ছেদের পর তাদের মেয়ে তেরমেহ শেষ পর্যন্ত কার কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, সেটি দেখানোর আগেই তিনি সিনেমা শেষ করে দেন।

‘দ্য সেলসম্যান’-এ রানার স্বামী এমাদের প্রতিশোধপরায়ণতা, রানার ক্ষমাশীলতা অথবা আগন্তুকের অসহায়ত্ব- এ তিনের মধ্যে কোনটি সমর্থনযোগ্য, সেটিরও কোনো সদুত্তর তিনি দেন না। কারণ তার মতে, পৃথিবী সাদা-কালো না, এখানে একই সাথে একাধিক চরিত্র একাধিক বিষয়ে সঠিক বা ভুল হতে পারে।

দ্য সেলসম্যান চলচ্চিত্রের জন্য অভিনেত্রী তারানেহ আলিদুস্তির চিত্রধারণকালে; Source: knightleyemma.com

দর্শকদেরকে পরিস্কারভাবে ভালোমন্দ চিনিয়ে না দেওয়া, অথবা কোনো একটি চরিত্রের পক্ষে দর্শকদের সমর্থন তৈরির চেষ্টা না করা প্রসঙ্গে ফরহাদি বলেন, “আমি দর্শকদের উপর আমার বিচারবোধ চাপিয়ে দিতে পছন্দ করি না।” তিনি মানুষের জীবনের জটিল সম্পর্কগুলো নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন, কিন্তু একই সাথে মনে করেন, দর্শকদেরকে একটি গোটা সিনেমা দেখানোর পর এক লাইনে একটি মেসেজ দিয়ে দেওয়াটা দর্শকদের জন্যই অপমানজনক।

তার মতে, বর্তমান বিশ্বে উত্তরের চেয়ে প্রশ্নের প্রয়োজন অনেক বেশি। সব কিছুর উত্তর দিয়ে দেওয়া হলে মানুষ প্রশ্ন করার, চিন্তা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। সিনেমা হলেই যদি মানুষকে সমস্যার সমাধান দেখিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সিনেমাটা হলের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু যদি দর্শকদের মনের মধ্যে প্রশ্নগুলো জাগ্রত রাখা যায়, তাহলে সিনেমাটা মূলত শুরুই হয় সেটা দেখার পর থেকে। মানুষের মনে সিনেমার কাহিনী, চরিত্রগুলোর বক্তব্য, তাদের সমস্যাগুলো আলোড়ন সৃষ্টি করতে থাকে।

অধিকাংশ নির্মাতাই তাদের চলচ্চিত্রে ভালো এবং মন্দের ক্লাসিক্যাল দ্বন্দ্ব তুলে ধরতে পছন্দ করেন, যেখানে শেষ পর্যন্ত ভালোর জয় হয়। কিন্তু এদিক থেকে ফরহাদি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তার চলচ্চিত্রে দ্বন্দ্ব হয় ভালো এবং ভালোর মধ্যে, যেখানে দর্শকের পক্ষে কোনো একটি পক্ষকে সমর্থন করা কঠিন হয়ে পড়ে। কোন চরিত্রের কোন কাজটি ভালো আর কোন কাজটি মন্দ; যে কাজটি মন্দ, সেটির পেছনের কারণ কী, এসব দর্শককে প্রতিনিয়তই ভাবাতে থাকে।

অ্যাবাউট এলি চলচ্চিত্রের শ্যুটিংকালে কলাকুশলীদের সাথে; Source: Cinema Guild

আসগর ফরহাদির অধিকাংশ চলচ্চিত্রেই কাহিনী কোনো একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। ঐ দুর্ঘটনার ফলে সৃষ্টি হয় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সন্দেহ, দ্বন্দ্ব, বের হয়ে আসতে থাকে তাদের চরিত্রের আসল রূপগুলো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই দুর্ঘটনার সাথে যুক্ত থাকে বহিরাগত কোনো একটি চরিত্র, যার প্রভাবে পারিবারিক বন্ধনের মধ্যে ফাটল ধরে অথবা পরিবারের সদস্যদের মধ্য ঘাত-প্রতিঘাত তৈরি হয়।

‘অ্যাবাউট এলি’তে সেপিদেহদের পরিবারের সাথে বেড়াতে যাওয়া এলির সমুদ্রে ডুবে যাওয়াকে কেন্দ্র করেই সিনেমার ক্লাইম্যাক্স তৈরি হয়। ‘এ সেপারেশন’-এ গৃহকর্তা নাদেরের ধাক্কা খেয়ে নতুন গৃহপরিচারিকা রাজিয়ার গর্ভপাতের পর নাদের এবং সিমিনের ডিভোর্স দ্রুত পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। ‘দ্য সেলসম্যান’-এ ঘরের মধ্যে আগন্তুকের হাতে রানার আক্রান্ত হওয়ার পর স্বামী এমাদের প্রতিশোধস্পৃহা আর রানার ক্ষমা করার ইচ্ছার দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েই তাদের পারিবারিক সম্পর্ক নতুন রূপ পায়।

চলচ্চিত্র উৎসবে অভিনেত্রী তারানেহ আলিদুস্তির সাথে; Source: complex.com

ফরহাদি তার চলচ্চিত্রে কাউকে হিরো হিসেবে উপস্থান করে বাহবা দেওয়ার চেষ্টা করেন না, আবার কাউকে ভিলেন হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে ঘৃণার পাত্র বানাতে চান না। তিনি যেটা চান, সেটা হচ্ছে, চরিত্রগুলোর প্রতি সহানুভূতি তৈরি করা। এই ‘সহানুভূতি থিমটির প্রতি ফরহাদি অতিরিক্ত মাত্রায় দুর্বল। তার প্রায় সবগুলো চলচ্চিত্রের মূলভাবই হলো সহানুভূতি।

চলচ্চিত্রে দর্শকদের মধ্যে সহানুভূতি সৃষ্টি করাটা তার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। ‘দ্য সেলসম্যান’ চলচ্চিত্র এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এখানে যে আগন্তকটি এমাদের ঘরে ঢুকে রানার উপর আক্রমণ করে, তার প্রতিও যেন দর্শকদের ঘৃণার বদলে সহানুভূতি তৈরি হয়, সেজন্য তিনি চরিত্রটিকে বয়স্ক এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ করে তৈরি করেছেন।

দ্য সেলসম্যান চলচ্চিত্রের শ্যুটিংকালে অভিনেতা শাহাব হোসেনির সাথে; Source: slantmagazine.com

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, চরিত্রে প্রতি এই সহানুভূতি সৃষ্টি হওয়াটা আমাদেরকে আমাদের নিজেদের চরিত্রের ভালো-মন্দ দিকগুলো বুঝতে সাহায্য করে। সহানুভূতি সৃষ্টির প্রতি তার এই অতিরিক্ততা দুর্বলতা তিনি নিজেও জানেন। সাক্ষাৎকারে কৌতুকচ্ছলে তিনি বলেন, তিনি চান তার মৃত্যুর পর যেন কবরে মাথার উপরের ফলকে ‘সহানুভূতি’ শব্দটা লেখা থাকে।

ইরানি সেন্সরবোর্ড বনাম ফরহাদি

ইরানি চলচ্চিত্রের সেন্সরবোর্ড বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এবং কঠোর সেন্সরবোর্ড। সরকার বিরোধী এবং ধর্মবিরোধী বক্তব্য প্রচারের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ তো আছেই, তদুপরি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অশ্লীল অথবা অনৈতিক কিছু প্রদর্শনের ক্ষেত্রেও ইরানে খুবই কার্যকর এবং কঠোর নীতিমালা আছে। ইরানি চলচ্চিত্রে নারী-পুরুষের সম্পর্ক, নারীদের পোশাক-আশাক প্রদর্শনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। নাচ-গান তো দূরের কথা, নারীদেরকে হিজাব ছাড়া প্রদর্শনও সেখানে নিষিদ্ধ। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরকে চুমু খাওয়া, আলিঙ্গন করার দৃশ্যও সেখানে দেখানো যায় না।

দ্য সেলসম্যান চলচ্চিত্রের জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসবে স্ত্রীর সাথে; Source: Getty Images

তবে এই সেন্সরশিপ আসগর ফরহাদির মতো মেধাবী এবং সৃজনশীল পরিচালকের কাজের পথে তেমন কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। সেন্সরশিপ সম্পর্কে ফরহাদির ব্যাখ্যা চমৎকার। তিনি মনে করেন, সেন্সরের মুখোমুখি হওয়া শিল্প হচ্ছে অনেকটা পাথরের মুখোমুখি হওয়ার পানির প্রবাহের মতো। পানির সামনে পাথর রেখে প্রবাহ আটকে রাখা যায় না, পানি সব সময়ই বিকল্প পথ খুঁজে বের করে এগিয়ে যায়, শিল্পকেও সেরকম সেন্সরশিপ দিয়ে বাধাগ্রস্ত করা যায় না।

এমনিতে ফরহাদি সেন্সরশিপ পছন্দ করেন না। তিনি মনে করেন, এটা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে। কিন্তু একই সাথে তিনি স্বীকার করেন, স্বল্পমেয়াদে এটা উপকারীও হতে পারে। তার মতে, সেন্সরশিপ শিল্পের পথে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ তৈরি করার মধ্য দিয়ে নিজের অজান্তেই নির্মাতাদেরকে আরও সৃজনশীল হয়ে উঠতে সাহায্য করে।

এ সেপারেশন চলচ্চিত্রে জন্য বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে মেয়ে এবং অন্য অভিনেত্রীদের সাথে; Source: AFP

আসগর ফরহাদি সাধারণত রাজনৈতিক বক্তব্য এড়িয়ে চলেন, তাই সেন্সর বোর্ডের সাথে তার সম্পর্ক মোটামুটি ভালোই। যদিও ২০১০ সালে ‘এ সেপারেশন’ নির্মাণকালে অল্প কিছুদিনের জন্য সেন্সর বোর্ড তার চলচ্চিত্র নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ইরানের অন্য দুই বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার জাফর পানাহি এবং মোহসেন মাখমালবাফের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছিলেন, যারা দুজনেই সরকারের কঠোর সমালোচক। পরবর্তীতে তিনি ক্ষমা চাওয়ায় এক মাস পর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং তাকে ‘এ সেপারেশন’ শেষ করার অনুমতি দেওয়া হয়।

স্বীকৃতি

আসগর ফরহাদির সবচেয়ে বিখ্যাত এবং প্রশংসিত কাজ ‘এ সেপারেশন’। তবে এর আগে ‘অ্যাবাউট এলি’ চলচ্চিত্রটি দিয়েই তিনি সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। চলচ্চিত্রটি ইরানের হয়ে অস্কারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। অস্কার না জিতলেও এটি বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সহ অনেক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা পরিচালক, সেরা চলচ্চিত্র সহ বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করে

দ্য সেলসম্যান চলচ্চিত্রের জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসবে তারানেহ আলিদুস্তি এবং শাহাব হোসেনির সাথে; Source: Reuters

তার ‘এ সেপারেশন’ চলচ্চিত্রটি অস্কার এবং গোল্ডেন গ্লোবে সেরা বিদেশি চলচ্চিত্র ছাড়াও অনেকগুলো আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করে। সমালোচক রজার এবার্ট বছরের সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন এই সিনেমাটিকে। শুধু পুরস্কার না, এ সেপারেশন দর্শকদের মধ্যেও বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। দর্শকদের ভোটে ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেজ, IMDB এর সর্বকালের সেরা ২৫০ চলচ্চিত্রের তালিকায় এখন এর অবস্থান ১০৯ নম্বরে

এ সেপারেশনের পর ফরহাদি ফ্রান্স থেকে ‘দ্য পাস্ট’ নামে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেন। সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করলেও সেটির জনপ্রিয়তা বা সাফল্য ছিল তুলনামূলকভাবে কম। এরপর ২০১৬ সালে আবারও ইরান থেকে নির্মাণ করেন ‘দ্য সেলসম্যান’ এবং জয় করেন সেরা বিদেশি চলচ্চিত্র ক্যাটাগরিতে তার ও ইরানের দ্বিতীয় অস্কার। অবশ্য এবারের অস্কার অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছয় দেশের নাগরিকদের প্রবেশ নিষেধ সংক্রান্ত বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে।

এ সেপারেশন চলচ্চিত্রের জন্য পুরস্কার গ্রহণকালে অভিনেতা পেয়মান মোয়াদী এবং অভিনেত্রী লাইলা হাতেমীর সাথে; Source: zimbio.com

ব্যক্তিগত জীবনে ফরহাদির পরিবারে স্ত্রী ও দুই সন্তান আছে। ফরহাদির স্ত্রীর নাম পারিসা বাখতাভার। তার মেয়ে সারিনা ফরহাদি, এ সেপারেশন চলচ্চিত্রে তেরমেহ চরিত্রে অভিনয় করেছিল। বর্তমানে ফরহাদি স্পেনের বিখ্যাত পরিচালক পেদ্রো আলমোদোভারের সাথে যৌথ প্রযোজনায় একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যাতে অস্কারজয়ী অভিনেতা-অভিনেত্রী হাভিয়ের বারডেম এবং পেনেলোপি ক্রুজের অভিনয় করার কথা আছে।

আসগর ফরহাদি হচ্ছেন অস্কারের ইতিহাসে ইতালিয়ান পরিচালক ফেদেরিকো ফেলিনি ও সুইডিশ পরিচালক ইঙ্গমার বার্গম্যানের পর ভিত্তোরিও-ডি-সিকার সাথে যৌথভাবে তৃতীয় বিদেশী পরিচালক, যিনি তার দেশকে সর্বাধিক অস্কার এনে দিয়েছেন। এ সেপারেশনের সাফল্যের পর ২০১২ সালে টাইম ম্যাগাজিন আসগর ফরহাদিকে বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় স্থান দিয়েছিল।

ফিচার ইমেজ- Getty Images

Related Articles