Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বাস করুন বা না করুন, আমি রবার্ট রিপ্লি বলছি!

১৯২৯ সালের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মজীবী মধ্যবয়স্ক নাগরিকের দিনের শুরু হয় টাটকা সংবাদ সম্বলিত পত্রিকার পাতার সাথে এক কাপ ধোঁয়াওঠা চায়ের কাপের মাধ্যমে। প্রথম পাতার লাল কালিতে ফুটিয়ে তোলা শিরোনাম, দেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর, আন্তর্জাতিক খবরাখবর পাঠের পর কর্মজীবী নাগরিকরা সামান্য বিনোদনের আশায় পত্রিকার মাঝের রঙিন পাতায় চোখ বোলায়। বিনোদন পাতার অন্যান্য ফিচারের তুলনায় সর্বডানের উপরদিকের কলামে মোটা হরফে লেখা ‘বিলিভ ইট অর নট‘-এর প্রতি সবার ঝোঁক তুলনামূলক বেশি থাকে। আর থাকবে নাইবা কেন? দেশ-বিদেশের অদ্ভুতুড়ে সব খবর সংগ্রহ করে রবার্ট রিপ্লি নামক এক ভদ্রলোক এই ফিচার সংকলন করে থাকেন। নিত্যদিনের একঘেয়ে সংবাদের হাঁপিয়ে ওঠা মানুষের জন্য রিপ্লির ফিচার ছিল ত্রাণকর্তার মতোই। নভেম্বরের ৩ তারিখও অন্যান্য দিনের ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু সেদিনের  ‘বিলিভ ইট অর নট’-এর কলামে কর্মজীবী মানুষ ছাপিয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরও চোখ আটকে গেলো। রিপ্লি তার ফিচার দিয়ে যেন বোমা ফাটিয়ে দিলেন। তিনি তার ফিচারে লিখেছেন, বিশ্বাস করুন বা না করুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দেশ, যার কোনো জাতীয় সঙ্গীত নেই

The Star-Spangled Banner নামক যে গানটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে, তা অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র জাতীয়তাবাদের সঙ্গীত হিসেবে বিখ্যাত ছিল। কিন্তু কংগ্রেস তখনও সেই গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেনি। তাই রিপ্লির ফিচারের প্রতিবাদ করার মতো কোনো যুক্তি ছিল না রাজনীতিবিদগণের নিকট। দুয়েকদিন এদিক ওদিক কানাঘুষা চলার পর ব্যাপারটি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হার্বার্ট হুভারের কার্যালয় পর্যন্ত পৌঁছে গেলো। ওদিকে জনগণ একটি জাতীয় সঙ্গীতের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন সমাবেশ কর্মসূচি পালন করতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি প্রগতিশীল দেশের নাগরিক হয়ে কিনা কোনো জাতীয় সঙ্গীত নেই তাদের! এর একটা বিহিত করা দরকার। শেষ পর্যন্ত দুই বছরের জল্পনা-কল্পনা শেষে ৩ মার্চ, ১৯৩১ তারিখে রাষ্ট্রপতি The Star-Spangled Banner-কে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীতের স্বীকৃতি প্রদান করেন। রবার্ট রিপ্লি অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন। এই ঘটনার পর যারা তাকে চিনতো না, তারাও ঘাড় ঘুরিয়ে মন্তব্য করতো, “রবার্ট রিপ্লি একজন মানুষ বটে। ভদ্রলোক বিনোদনের মাধ্যমে পুরো দেশের ইতিহাসই বদলে দিয়েছে।” 

রিপ্লির কালজয়ী ফিচার; Source: Pinterest

রবার্ট রিপ্লি ব্যক্তিগত জীবনে একজন ব্যতিক্রমধর্মী মানুষ হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। সবসময় ভিন্নধারার চিন্তাভাবনা এবং সৃজনশীলতার দ্বারা সবাইকে মুগ্ধ করতে সিদ্ধহস্ত এই ফিচার লেখককে বিশ্বজোড়া খ্যাতি প্রদান করেছে তার অনবদ্য সৃষ্টি ‘বিলিভ ইট অর নট’।

রিপ্লির পথচলা

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা রোজা শহরে ১৮৯০ সালের কোনো একদিন আইজ্যাক রিপ্লি এবং লিলি রিপ্লির ঘর আলো করে জন্ম নিলো এক ফুটফুটে শিশু। শিশুর জন্মতারিখ নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো নির্ভরযোগ্য দলিল না পাওয়া যাওয়ায় তা আজও আমাদের অজ্ঞাত। সেই শিশুর নাম রাখা হয় লেরয় রবার্ট রিপ্লি। কিন্তু পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং প্রতিবেশীরা তাকে রবার্ট রিপ্লি নামেই চিনতো। কাঠমিস্ত্রি পিতা এবং গৃহিণী মাতার দরিদ্র পরিবারে রবার্ট ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে থাকেন। রবার্ট জন্ম নেয়ার বেশ কয়েক বছর পূর্বে আইজ্যাক এবং লিলি রিপ্লি ভাগ্যের সন্ধানে এই শহরে পদার্পণ করেছিলেন। ছোটবেলা থেকে রবার্ট ছিল অত্যন্ত শান্ত এবং লাজুক ধরনের। দিনের বেশিরভাগ সময় একান্ত মনে চুপচাপ বসে থাকতে পছন্দ করতেন তিনি। তবে একবার ভ্রমণের নেশা পেয়ে গেলে তাকে আটকে রাখা মুশকিল ছিল।

শিশু রবার্ট রিপ্লি; Source: Ripley’s Believe It Or Not

একসময় স্কুলে যাওয়া শুরু করলেন তিনি। পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী রবার্ট স্কুলে সবার প্রিয় ছাত্রে পরিণত হন। তখন তিনি দিনের পুরোটা সময় দু’ভাগে ভাগ করে তার সবচেয়ে পছন্দের দুই কাজ- চিত্রাংকন এবং বেসবল খেলার পেছনে ব্যয় করা শুরু করেন। দুর্ভাগ্যবশত বেসবল খেলার সময়ে ডান হাতে মারাত্মক জখম হয়। যার ফলে এখানেই তার সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় জীবনের যবনিকাপাত ঘটে। সবকিছু যখন ঠিকমতো চলছিলো, ঠিক তখন তার জীবনে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে। ১৯০৫ সালে পিতা আইজ্যাক মৃত্যুবরণ করলে অর্থাভাবে তাকে স্কুল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। স্কুলের বইখাতার বদলে তার হাতে উঠে আসে দৈনিক পত্রিকার বাণ্ডিল। সকাল সকাল হালকা নাস্তা সেরে রবার্ট বেরিয়ে পড়তেন শহরের পথে। এদিক ওদিক ছুটতেন পত্রিকা হাতে। পত্রিকা বিক্রেতা রবার্ট শত ব্যস্ততার মাঝেও সময় বের করে আঁকার চর্চা অব্যাহত রাখতেন। তার আঁকার হাত ছিল চমৎকার। পত্রিকার লোকদের সাথে পরিচিতি থাকার সুবাদে তিনি তার আঁকা বিভিন্ন চিত্র পত্রিকায় ছাপানোর জন্য পাঠানো শুরু করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সী রবার্টের বিভিন্ন চিত্র সান ফ্রান্সিসকোর বহু পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯১৩ সালে তিনি কার্টুনিস্ট হিসেবে ভাগ্য পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে স্বপ্নের শহর নিউ ইয়র্কে পাড়ি জমান।

বিশ্বাস অবিশ্বাসের মাঝে সফলতা

নিউ ইয়র্কে এসে রবার্ট দ্য গ্লোব‘ পত্রিকায় দৈনিক কার্টুনিস্ট হিসেবে চাকরি লাভ করেন। সেখানে ক্রীড়া বিষয়ক বিভিন্ন সংবাদের কার্টুন সংস্করণ ছাপাতেন তিনি। প্রায় পাঁচ বছর ধরে নিষ্ঠার সাথে এই বিভাগে কাজ করার পর তিনি কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েন। হয়তো একঘেয়ে কাজের ফাঁদে বন্দি হয়ে পড়েছিলেন প্রতিভাবান এই কার্টুনিস্ট। একদিন দুপুরের আহার শেষে সবাই যখন আলাপচারিতায় মত্ত, তখন তিনি ক্রীড়া কলাম সম্পর্কিত কার্টুন আঁকায় ব্যস্ত ছিলেন। তবে সেদিন তিনি অন্যান্য দিনের ন্যায় গতানুগতিক কোনো কার্টুন আঁকেননি। নিজের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে তিনি ক্রীড়া বিভাগের সব অদ্ভুতুড়ে অর্জনকে ফিচার করে বেশ কয়েকটি তথ্যবহুল কার্টুন এঁকে ফেলেন। ‘চ্যাম্পস এন্ড চাম্পস’ শিরোনামে ১৯১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর ‘দ্য গ্লোব’ পত্রিকায় রবার্ট রিপ্লির সেই কার্টুনগুলো প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হয়। প্রকাশনার পর পাঠকদের নিকট বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে ফিচারগুলো। রবার্ট নিজেও এই বিষয়ে কাজ করা বেশ উপভোগ করছিলেন। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

অদ্ভুত সব তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রিপ্লি নানা দেশ ভ্রমণ করেন; Source: Afflictor

সেদিন থেকে নিয়মিত প্রকাশ পেতে থাকে রবার্ট রিপ্লির ক্রীড়া ফিচারগুলো। টানা দশমাস ধরে প্রকাশিত হওয়ার পর রবার্ট এবার আরো নতুন ফিচার নিয়ে কাজ করতে চাইলেন। সম্পাদক রবার্টকে অনুমতি প্রদানের পর তিনি কাজে নেমে পড়েন। এবার তিনি শুধু ক্রীড়া বিভাগে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে ইচ্ছুক ছিলেন না। বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অদ্ভুত ঘটনা এবং মানুষদের তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করলেন তিনি। এর কিছুদিন পর সেগুলোর কার্টুন ফিচার হিসেবে বের হয় রবার্ট রিপ্লির বিখ্যাত বিলিভ ইট অর নট’ সিরিজ। সাদা-কালো কালিতে আঁকা চমৎকার সব কার্টুন এবং মজাদার সব অজানা তথ্যের সম্ভারে পরিপূর্ণ এই ফিচার পুরো নিউ ইয়র্ক বাজিমাত করে ফেলে। প্রথম দিকে কয়েকমাস পর পর প্রকাশিত হলেও পাঠক সমাজের বাড়তি চাহিদার সাথে তাল মেলাতে ‘দ্য গ্লোব’ রিপ্লিকে নিয়মিত ফিচার প্রকাশ করতে অনুরোধ করে।

রবার্ট রিপ্লি এবং তার ফিচার বিলিভ ইট অর নট; Source: Reborn

কিন্তু এক নিউ ইয়র্ক শহরে আবদ্ধ থাকলে তো চলবে না। এর জন্য প্রয়োজন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ এবং সমাজের সাথে নিবিড় গণসংযোগ। এই উদ্দেশ্যে ১৯২২ সালেদ্য গ্লোব’-এর অর্থায়নে রবার্ট সর্বপ্রথম তার ফিচারের তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিশ্বভ্রমণে বের হন। নিউ ইয়র্কের বন্দরে জাহাজ ছাড়ার সাথে সাথে শুরু হয় এক কিংবদন্তির অবিস্মরণীয় যাত্রা।

নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা

দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বভ্রমণ করা রবার্ট ততদিনে বহুজনের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। এর প্রতিদানস্বরূপ ১৯২৬ সালে ‘ইভনিং পোস্ট’ পত্রিকা থেকে রবার্ট রিপ্লিকে বেশ ভালো পারিশ্রমিক এবং সম্মাননার চাকরির আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিনি সানন্দে এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। সে বছরই নতুন কর্মস্থলে তার জীবনের নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেন তিনি। পত্রিকা থেকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে তার ফিচার প্রকাশিত হতে থাকে। একদিকে তার জনপ্রিয়তা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছিলো, তেমনি প্রতিনিয়ত তার ডাকবাক্সে শত শত দুয়োধ্বনির চিরকুট জমা হতে থাকলো। অনেকেই রবার্টের অদ্ভুতুড়ে ফিচারকে সুশীল সমাজের জন্য অনুপযুক্ত সংবাদ হিসেবে গণ্য করতো। কিন্তু লোকে কী ভাবছে, তা নিয়ে রবার্ট একমুহূর্ত সময় নষ্ট করতে ইচ্ছুক ছিলেন না। বছরের বেশিরভাগ সময় তিনি তার সহকারী সমেত বিশ্বভ্রমণ করতেন এবং বহু অজানা তথ্য সংগ্রহ করতেন। আর বছরের বাকিটা সময় তিনি ব্যক্তিগত অবকাশ যাপনের উদ্দেশ্যে নিউ ইয়র্কের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎ করতেন। বন্ধুবান্ধব এবং কর্মক্ষেত্রের সহকর্মীরা ততদিনে তাকে রিপ্লি নামে ডাকা শুরু করে। তাই বংশপদবী রিপ্লি নামকেই নিজের নাম হিসেবে গ্রহণ করে নেন তিনি।

রিপ্লি তার ফিচারগুলো বাছাই করে একটি বই প্রকাশ করে ফেলেন; Source: Simon & Schuster

১৯২৯ সালে উইলিয়াম র‍্যান্ডলফ হার্স্টের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘কিং ফিচার সিন্ডিকেট’ নামক একটি সংস্থা রিপ্লিকে সমসাময়িক কর্মীদের তুলনায় বেশ মোটা অংকের সম্মানী প্রদান করে নিজেদের দলে ভেড়ায়। এর ফলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হন রিপ্লি। পূর্বের ন্যায় আর মাত্র একটি দুটি পত্রিকায় ‘বিলিভ ইট অর নট‘-কে সীমাবদ্ধ থাকতে হলো না। সিন্ডিকেটের  ক্ষমতাবলে সারা দেশের শত শত পত্রিকায় একযোগে রিপ্লির ফিচার প্রকাশিত হতে থাকলো। সে বছর রিপ্লি নিজের ফিচারগুলোর মাঝে বাছাই করে Believe It or Not!’ শিরোনামে একটি পূর্ণাঙ্গ বই প্রকাশ করেন। প্রকাশনার হিসাব অনুযায়ী, প্রথম ছ’মাসে রিপ্লির বইটির প্রায় ৫ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছিলো। অল্প সময়ের মাঝে সফল রিপ্লির এতদিনের অর্জন তাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তাই তিনি এবার আরো বড় কিছু করার পরিকল্পনা শুরু করেন।

নিষ্ঠার সাথে তথ্য যাচাই করে যাচ্ছেন রবার্ট রিপ্লি; Source: Press Democrat

‘অডিটোরিয়াম’ এবং আধুনিক মার্কো পোলোর জয়জয়কার

পত্রিকার পাতায় আঁকিবুঁকি তো অনেক হলো; এবার নাহয় আধুনিকতার সাথে তাল মেলানো হোক! এই মন্ত্রে বিশ্বাস করে রবার্ট রিপ্লি তার অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড-কারখানা নিয়ে সশব্দে হাজিরা দিলেন বেতার কেন্দ্রের অফিসে। NBC বেতার ১৯৩০ সালে রিপ্লির উপস্থাপনায় ‘বিলিভ ইট অর নট’ নামক একটি নতুন ধারার তথ্যবহুল বিনোদন অনুষ্ঠান প্রচার করা শুরু করে। বেতারেও সফলতা পেলেন তিনি। তারপর টোয়েন্থিথ সেঞ্চুরি ফক্সের পরিবেশনায় রিপ্লি তার ফিচারকে রূপালি পর্দায় চিত্রায়িত করার প্রয়াস নিয়ে তৈরি করেন বেশ কয়েকটি শর্ট ফিল্ম। রিপ্লির জনপ্রিয়তা বিভিন্ন গণমাধ্যমের বদৌলতে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়লো। এই সুবাদে কিং সিন্ডিকেট রিপ্লির সাথে দ্বিগুণ পারিশ্রমিকের বিনিময়ে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করে নেয়।

শুরু হলো রিপ্লির শর্ট ফিল্ম; Source: Ripleys

তারপর রিপ্লির মাথায় নতুন বুদ্ধি এলো। তিনি চিন্তা করলেন শুধু পত্রিকার পাতায় লিপিবদ্ধ অদ্ভুত মানুষ এবং বস্তু সম্পর্কে জানা যথেষ্ট নয়। যদি মানুষ বাস্তবে এসব অদ্ভুত বস্তুর সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে পারতো, তাহলে ব্যাপারটি আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। এই ধারণাকে পুঁজি করে রিপ্লি জাদুঘর ঘরানার সাতটি বিশাল সংগ্রহশালা নির্মাণ করেন। এদের নাম দেয়া হয় ‘Odditorium‘ বা অডিটোরিয়াম। ইংরেজি শব্দ Odd অর্থাৎ ‘অদ্ভুত’ থেকে এই নামকরণ করেন তিনি। বাস্তবিকভাবে রবার্ট রিপ্লির সেই বিশাল অদ্ভুত সংগ্রহশালা একবার চোখ বুলিয়ে দেখার পর যে কেউ এর নামকরণ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করবে না। ১৯৩৩ সালের শিকাগো বিশ্ব মেলাতে সর্বপ্রথম রিপ্লির সংগ্রহশালার উদ্ভোধন করা হয়। সারাবছর দেশ-দেশান্তরে ঘুরে বেড়িয়ে তথ্য সংগ্রহ করতেন বলে সমালোচকরা তাকে ‘আধুনিক যুগের মার্কো পোলো’ উপাধিতে ভূষিত করেন। অডিটোরিয়াম, পত্রিকা, বেতার এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার আয়ের ফলে রিপ্লি খুব দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হন। ব্যক্তিগতভাবে শৌখিন রিপ্লি এবার নিউ ইয়র্কের উত্তরে একটি দ্বীপ ক্রয় করে ফেলেন। এর ফলে অনেকেই বিস্মিত হয়ে পড়ে। অদ্ভুত লোকটা আরো কতকিছু যে করবে!

প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষের সমাগমে মুখর শিকাগোর অডিটরিয়াম; Source: Ripleys

অদ্ভুত রিপ্লির আকস্মিত প্রয়াণ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রিপ্লির অবাধ বিশ্বভ্রমণে ব্যাঘাত ঘটে। নিজের দ্বীপের মাঝে বন্দী রিপ্লি যেন দমবন্ধ হয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছিলেন। সেসময় তার স্বাস্থ্যের আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটে। বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রিপ্লি পুনরায় উজ্জীবিত হয়ে উঠেন। NBC-এর স্টুডিওতে নিয়মিত অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে থাকেন তিনি। ১৯৪৯ সালের ২৪ মে তিনি ‘বিলিভ ইট অর নট’-এর ১৩তম পর্বের রেকর্ড চলাকালীন অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু রিপ্লির সময় তখন শেষ। টানা তিনদিন চিকিৎসা শেষে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পিতামাতার সমাধির পাশেই সমাধিত হন এই কিংবদন্তি।

পত্রিকার পাতায় রিপ্লির প্রয়াণ বার্তা; Source: Ripleys

রিপ্লির মৃত্যুর পর তার সহায়-সম্পত্তি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানায় অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হয়। তাদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে মৃত্যুর বহু বছর পরেও পৃথিবীর বুকে লাখো পত্রিকার কলাম, বইয়ের দোকানের তাকে, স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার পর্দায় সগৌরবে টিকে আছে রিপ্লির সৃষ্টি ‘বিলিভ ইট অর নট’। আর আপনি বিশ্বাস করুন বা না করুন, রিপ্লির এই ফিচারগুলো তাকে অনন্তকাল মানুষের মনে বাঁচিয়ে রাখবে।

ফিচার ইমেজ: NPR

Related Articles