“আচ্ছা তোমরা কি ব্যাটম্যানের ক্রিয়েটরের সাথে দেখা করতে চাও?”
ডিসি কমিকসের লেখক অটো বিন্ডারের মুখে এ কথা শুনে যেন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না মাইকেল উসলান। ছোটবেলা থেকেই তিনি ব্যাটম্যান চরিত্রটিকে ভালোবেসে এসেছেন। তাই সে চরিত্রটির স্রষ্টার সাথে দেখা হওয়ার সৌভাগ্যটা স্বপ্নের চাইতে কম কিছু ছিল না ১৪ বছরের কিশোর উসলানের কাছে। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন বব কেইনের সাথে দেখা হতে চলেছে তার।
অটো বিন্ডার একটু সরে গিয়ে তার পাশে বসা লোকটির দিকে ইঙ্গিত করলেন। “তোমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই, ইনি হলেন ব্যাটম্যানের ক্রিয়েটর বিল ফিঙ্গার।”
বিল ফিঙ্গার! অবাক হলেন মাইকেল উসলান। কারণ ছোটবেলা থেকে পড়ে আসা সব ব্যাটম্যান কমিকের গায়ে কেবল একটি নাম দেখেছিলেন তিনি, বব কেইন। তিনি এর আগে কখনো বিল ফিঙ্গারের নামই শুনেননি। তবে তাকে দোষ দেওয়া যায় না। কারণ তখনো এবং এরপর আরো অনেক বছর ধরেই গথামে ব্যাটম্যানের আসল পরিচয়ের মতো ব্যাটম্যান সৃষ্টির আসল গল্পটিও সবার অজানা ছিল।
“জানো, সিগ্যাল এবং শাস্টারের নতুন একটি চরিত্র এসেছে, নাম সুপারম্যান। যার বদৌলতে তারা দুজনেই প্রতি সপ্তাহে আটশো ডলার কামাচ্ছে।” ১৯৩৯ সালের কোনো এক শুক্রবারে ডিসি কমিকের এডিটর ভিন সুলিভান আড্ডার ফাঁকে এই তথ্যটি জানান বব কেইনকে। বব তখন ডিসি কমিকে একজন কার্টুনিস্ট হিসেবে কাজ করত। তাই সে বেশ ভালো করেই অবগত ছিল কমিক ইন্ড্রাস্ট্রিতে ঠিক কতটা আলোড়ন ফেলেছে ভিন গ্রহের এই সুপারম্যান চরিত্রটি। সুপারম্যানের সফলতা কখনো প্রভাবিত করেনি ববকে। তবে এই চরিত্রটি সিগ্যাল এবং শাস্টারের জীবনে যে সৌভাগ্য বয়ে এনেছে, সেটা তাকে ভাবিয়ে তুললো।
বব তার জীবনের প্রায় সব সাক্ষাৎকারেই একটি বিষয় উল্লেখ করেছেন, তার ছোটবেলার সংগ্রামের কথা। বব কেইন, জন্মসুত্রে যার নাম রবার্ট কান, ১৯১৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন দরিদ্র এক ইহুদি পরিবারে। তিনি দেখেছেন পরিবার সামলাতে তার বাবাকে কতটা খাটতে হতো। তাই সুপারম্যান থেকে সিগ্যাল এবং শাস্টারের আয়ের খবর জানতে পেরে তিনিও ভাবলেন, ঈশ্বর, যদি আমিও এত টাকা আয় করতে পারতাম!
তখন সুলিভ্যান তাকে বললেন, “আমরা এমন আরো সুপারহিরো খুঁজছি। তোমার কি মনে হয়, তুমিও এমন কোনো সুপারহিরো নিয়ে আসতে পারবে আমাদের কাছে?” এই সূযোগ হাতছাড়া করতে চাইলেন না কেইন। তিনি বললেন, “এত টাকা আয় করার জন্য আমি আগামী সোমবারেই নতুন সুপারহিরো নিয়ে আপনার কাছে আসছি।”
সেদিন বেশ কিছু ফ্ল্যাশ গর্ডন এবং সুপারম্যান ড্রয়িং নিয়ে ব্রঙ্কসে নিজের বাসায় গিয়েই কাজ শুরু করেন বব কেইন এবং নতুন একটি সুপারহিরোর ডিজাইন করতে সক্ষম হন, যার নাম রাখেন ব্যাট-ম্যান। তার আত্মজীবনী ‘ব্যাটম্যান এন্ড মি’-তে উল্লেখ করেন এই ব্যাট-ম্যান সৃষ্টিতে মোট তিনটি বিষয় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল। এক, লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা অরনিথপটার, যার আদলে তিনি ব্যাট-ম্যানের ডানা এঁকেছিলেন। দুই, ১৯৩০ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা দ্য ব্যাট হুইসপারসের ভিলেইন বাদুড়ের কস্টিউম পরতো, সেখান থেকে তিনি ব্যাট-ম্যানের কস্টিউমের ধারণা নেন। তিন, তার ছোটবেলার খুব প্রিয় একটি মুভি ছিল মার্ক অফ জোরো, যেটায় ডগলাস ফেয়ারব্যাংক অভিনিত চরিত্রটি ছিল ধনী এক ব্যাক্তি, যিনি রাত নামলেই মুখোশ পরে শহরের অপরাধ দমনে নেমে পড়তেন। ব্যাটম্যানের দ্বি-স্বত্বার ভাবনাটি সেখানটি থেকেই নেওয়া।
কিন্তু তার প্রথম ব্যাট-ম্যানের ড্রয়িংয়ে ব্যাট-ম্যানের গায়ে ছিল অনেকটাই সুপারম্যানের আদলে লাল রেড ইউনিয়ন স্যুট, মুখে ছিল জোরোর মতো ডমিনো মাস্ক, পিঠে ছিল অরনিথপটারের মত দেখতে শক্ত ডানা, হাতে ছিল না কোনো গ্লাভস। তিনি বুঝতে পারলেন তিনি যে চরিত্র নিয়ে ভাবছেন তার জন্য এটা যথেষ্ট নয়। তিনি জানতেন তখন কার সাহায্য তার প্রয়োজন, বিল ফিঙ্গারের।
মিলটন ফিঙ্গারের জন্ম ডেনভারের এক ইহুদি পরিবারে, ১৯১৪ সালে। পরিবারের স্বপ্ন ছিল তিনি বড় হয়ে ডাক্তার হবেন, আর তার স্বপ্ন ছিল তিনি একজন আর্টিস্ট হবেন। কিন্তু মহামন্দায় ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতির কারণে সেগুলো স্বপ্নই থেকে যায়। তাই হাই স্কুল শেষ করেই তিনি কাজ খুঁজতে শুরু করেন। কিন্তু সেই সময়টায় ইহুদিদের সহজে কেউ কাজে নিতে চাইতো না দেখে মিল্টন তার নাম পরিবর্তন করে রাখেন বিল।
বব কেইন এবং বিল ফিঙ্গার একই স্কুলে পড়লেও তাদের প্রথম দেখা হয় একটি পার্টিতে। বব তখন কার্টুনিস্ট ছিলেন এবং বিল একটি জুতোর দোকানে কাজ করতেন। ছোটবেলা থেকেই সাহ্যিতের প্রতি বিলের অন্যরকম একটা ভালোবাসা ছিল। যার কারণে তিনি পড়তে খুব ভালোবাসতেন এবং লেখক হওয়ার একটা সুপ্ত ইচ্ছা ছিল তার মনে। তার কাছে বেশ কিছু গল্পের ধারণা ছিল যা তিনি তুলে ধরেন বব কেইনের কাছে। এরপর দুজন প্রায়ই এগডার অ্যালান পো পার্কে দেখা করতেন এবং গল্প নিয়ে আলোচনা করতেন। এরমধ্যেই ববের আঁকা দুটো কমিকের গল্পও লিখেছিলেন বিল।
সেদিন বব কেইনের ফোনকল পেয়ে বিল ছুটে যান সেখানে। তারপর দুজনেই চরিত্রটি নিয়ে ভাবতে থাকেন। বিল একপর্যায়ে ডিকশনারি থেকে বাদুড়ের একটি ছবি নিয়ে ববকে দেখিয়ে বলেন, চলো আমরা তার প্রায় পুরো মুখটা ঢেকে দিই এবং দুটি কান যুক্ত করি যাতে তা দেখতে বাদুড়ের মতো মনে হয় এবং অপরাধীদের মনে ভয় জাগাতে পারে। এরপর বিলের মনে হলো স্যুটের লাল রঙ রাতের একজন ক্রাইম ফাইটিং সুপারহিরোর জন্য উপযুক্ত না। তাই লালের পরিবর্তে সেখানে ধূসর রঙ ব্যবহার করা হলো। ববের ব্যবহার করা ডানাটিও পছন্দ হয়নি বিলের। তিনি ববকে বললেন, আমরা এই ডানা সরিয়ে একটি কালো রঙের কেইপ ব্যবহার করি। যেটা তার পিছনে উড়বে এবং দেখতে ডানার মতোই মনে হবে।
কেউ যদি ব্যাটম্যানকে নাও চিনে, তাহলেও ব্যাটম্যানকে দেখা মাত্রই তার মনে ব্যাটম্যানের ব্যাক্তিত্ব বা কাজ সম্পর্কে একটি প্রচ্ছন্ন ধারণা সৃষ্টি হবে। যার পুরোটাই বিল ফিঙ্গারের সৃষ্টি।
শুরুতেই বলা মাইকেল উসলান, যিনি ব্যাটম্যান ফিল্ম ফ্র্যাঞ্চাইজের প্রডিউসার, তার গল্পটি ১৯৬৫ সালের নিউ ইয়র্ক কমিকনের। অর্থাৎ ব্যাটম্যান সৃষ্টির ২৬ বছর পরেও ব্যাটম্যানের স্রষ্টা হিসেবে কেউ বিল ফিঙ্গারের নাম জানতো না! মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এর কারণ কী? যার উত্তর খুবই সহজ, বব কেইন সেটা চাননি!
সোমবার সকালেই বব কেইন ব্যাটম্যানের সেই স্কেচটি নিয়ে হাজির হন এডিটর ভিন সুলিভ্যানের কাছে। সুলিভ্যান দেখার সাথে সাথেই সেটি পছন্দ করে ফেলেন, “এটা আমাদের আমাদের ম্যাগাজিনগুলোয় প্রাণ নিয়ে আসবে।” তিনি স্কেচটি প্রকাশক জ্যাক লিবোউইজকে দেখান। জ্যাক প্রথমে চরিত্রটি নিয়ে কিছুটা সন্দিহান ছিলেন, কিন্তু শেষে ডিটেকটিভ কমিকসে ব্যাটম্যানের গল্প ছাপাতে রাজি হন। সেজন্য তারা বব কেইনের সাথে একটি চুক্তি করেন।
বব সেদিন চরিত্রটি সৃষ্টিতে বিলের অবদান নিয়ে প্রকাশক বা এডিটরকে কিছুই বলেননি। তিনি ব্যাটম্যানকে তার একান্তই নিজস্ব সৃষ্টি হিসেবে উপস্থাপন করেন। কিন্তু ব্যাটম্যানকে কমিকের পাতায় জীবন্ত করতে প্রয়োজন ছিল গল্পের। তাই বব আবারো ফিরে যান বিল ফিঙ্গারের কাছে। তবে ব্যাটম্যানকে নিয়ে বিল এবং ববের মধ্যে কোনো চুক্তি হয়নি। বিষয়টা এমন ছিল, বিল ব্যাট-ম্যানের জন্য গল্প লিখবেন, বব সেগুলো এঁকে জমা দিবেন। এতে বব যে অর্থ পাবেন তার কিছু অংশ তিনি বিলকে দেবেন।
বিল ফিঙ্গার তখন পাল্প ফিকশনের দ্য শ্যাডোর একটি গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেন ব্যাটম্যানের প্রথম গল্প ‘দ্য কেইস অফ দ্য কেমিক্যাল সিন্ডিকেট’। এই গল্পটির মাধ্যমেই ১৯৩৯ সালের মে মাসে প্রকাশিত ডিটেকটিভ কমিকের ২৭তম ইস্যুতে কমিকে প্রথমবারের মতো আবির্ভুত হয় দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট ডিটেক্টিভ খ্যাত সুপারহিরো ব্যাটম্যান। সে ইস্যুতে বড় করে লেখা ব্যাট-ম্যান শিরোনামের নিচেই ছোট্ট করে লেখা ছিল বাই রবার্ট কেইন। অর্থাৎ একেবারে প্রথম গল্প থেকেই বিল ফিঙ্গার এবং ব্যাটম্যানে তার অবদান সবার অজানাই রয়ে গেল।
১৯৬৫ সালে নিউ ইয়র্কের ব্রডওয়ে সেন্ট্রাল হোটেলে অনুষ্ঠিত কমিক কনকে বলা হয় প্রথম অফিশিয়াল কমিক কন। কারণ সেই কমিকনেই প্রথমবারের মতো ফ্যানদের পাশাপাশি অংশগ্রহণ করেছিলেন কমিক আর্টিস্ট ও রাইটাররা। মাইকেল উসলানের মতো প্রায় ২০০ জন কমিক ভক্ত সেদিন উপস্থিত ছিলেন, যারা নিজেদের ভাগ্যবান দাবি করতেই পারেন। কারণ সেটাই ছিল বিল ফিঙ্গারের প্রথম এবং শেষবারের মতো কমিক ভক্তদের সামনে আসা।
সেদিন প্রথমবারের মতো বিল ফিঙ্গার সবার সামনে তুলে ধরেন কীভাবে তিনি বব কেই্নের ব্যাটম্যান এবং ব্যাটম্যানের গল্পের জনপ্রিয় চরিত্রগুলো সৃষ্টি করেছেন, তাদের নামকরণ করেছেন, কীভাবে তিনি প্রথম ব্যাটম্যানের গল্প লিখেছেন। তার এই বক্তব্যে ভক্তরা বেশ অবাক হয়, কারণ এর আগ পর্যন্ত তারা জানতো বব কেইন ব্যাটম্যানের একমাত্র স্রষ্টা এবং তিনিই এতদিন ধরে ব্যাটম্যানের গল্পগুলো লিখে এবং এঁকে আসছেন।
জেরি বেইলস, যাকে ফাদার অফ কমিক ফ্যানডম বলা হয়, তিনি সেই কমিকনের একজন মডারেটর ছিলেন। জেরি আরো আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যে একজন মানুষের পক্ষে প্রতি মাসে প্রতিটি ব্যাটম্যানের গল্প লেখা বা আঁকা সম্ভব নয়। তাই তিনি ডিসি কমিকের কাছে চিঠি লিখে জিজ্ঞেস করেন বব কেইন এসব কীভাবে করছে। ডিসি কমিক তখন তাকে উত্তরে জানায় এ কাজে আরো বেশ কিছু রাইটার ও আর্টিস্ট যুক্ত আছে, তার মধ্যে বিল ফিঙ্গারের নামটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়। তাই জেরির মনে হলো, সব ভক্তদের অবশ্যই বিল ফিঙ্গারের অবদান জানা উচিত। তাই তিনি বিল ফিঙ্গারের সাক্ষাৎকার নিয়ে দুই পৃষ্ঠার একটি আর্টিকেল লিখেন যার নাম, ‘ইফ দ্য ট্রুথ বি নোন অর এ ফিঙ্গার ইন এভরি প্লট’। মূলত এই আর্টিকেলটি প্রথমবারের মতো লিখিতভাবে বিল ফিঙ্গারকে ব্যাটম্যানের স্রষ্টা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বব কেইন যতবার কোনো সাক্ষাতকার দিয়েছেন, কখনো তিনি বিল ফিঙ্গারের অবদান বা নাম পর্যন্ত উচ্চারন করেননি। তিনি সবসময় বিলের অংশটুকু বাদ দিয়ে ব্যাটম্যান সৃষ্টির গল্প সবাইকে শোনাতেন। তবে তিনি বিল ফিঙ্গারকে স্মরণ করেন তার আত্মজীবনীতে।
আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং সহকর্মী না ফেরার দেশে চলে গিয়েছে, কিন্তু আমাকে স্বীকার করতেই হবে, বিল ফিঙ্গারের যে খ্যাতি এবং স্বীকৃতি পাওয়ার কথা ছিল তার কিছুই সে পায়নি… আমি আমার স্ত্রীকে প্রায়ই বলি, যদি আমি আরো ১৫ বছর আগে ফিরে যেতে পারতাম, সে মারা যাওয়ার আগে, তাহলে আমি তাকে বলতাম, আমি এখনই তোমার নাম লিখে দিচ্ছি, এটা তোমার প্রাপ্য।
কিন্তু যদি আমরা পেছনে ফিরে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, বিল ফিঙ্গারের খ্যাতি বা স্বীকৃতি না পাওয়ার পেছনে অন্যতম বড় কারণ ছিলেন বব কেইনই। কারণ ১৯৬৫ সালে যখন জেরি বেইলসের আর্টিকেলটি প্রকাশিত হয় তখন বব চাইলেই সে কথাগুলো মেনে বিলকে ব্যাটম্যানের স্রষ্টা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারতেন। কিন্তু বব জেরির বক্তব্য মেনে না নিয়ে ফ্যান ম্যাগাজিন ব্যাটম্যানিয়ার এডিটর বিলজো হোয়াইটের কাছে একটি চিঠি লিখেন। তিনি দৃঢ়তার সাথেই সে চিঠিতে বলেন,
আমার মনে হচ্ছে বিল ফিঙ্গার বোঝাতে চাইছে আমি নই, বরং সে নিজেই ব্যাটম্যানের পাশাপাশি রবিনসহ অন্যান্য সব ভিলেইন এবং চরিত্র সৃষ্টি করেছে। এ বক্তবটি প্রতারণামূলক এবং পুরোপুরি মিথ্যা… সত্য হলো বিলের যতটুকু প্রাপ্য, সে তার চাইতে বেশি কৃতিত্ব অর্জন করতে চাইছে, এবং আমি এখানেই বিলের বক্তব্যকে ভুল প্রমাণ করব। ব্যাটম্যানের গল্প লেখার জন্য বিলকে ডাকার আরো অনেক আগেই ব্যাটম্যানের ফিগার এবং কস্টিউম কেমন হবে তা আমি নিজেই পুরোটা ধারণা করেছিলাম। টাইটেল, মাস্টহেড, ফরমেট এবং কনসেপ্টের পাশাপাশি ব্যাটম্যানের ফিগার এবং কস্টিউম আমার তৈরি করা। রবিন, দ্য বয় ওয়ান্ডারও আমার সৃষ্টি, বিলের নয়।
অর্থাৎ বব কেইন চাননি ব্যাটম্যানের নামের পাশে স্রষ্টা হিসেবে অন্য কারো নাম থাকুক। তাই তিনি বিল ফিঙ্গারকে ব্যাটম্যানের একজন ‘ঘোস্ট রাইটার’ বাদে অন্য কোনো স্বীকৃতি দেননি। বব কেইনের হয়ে ব্যাটম্যান লেখা এবং আঁকার জন্য বিল বাদেও অনেকেই যেমন শেলডন মলডফ, জেরি রবিনসন, জর্জ রুশোজ, ডিক স্প্র্যাং, মর্ট মেসকিন ঘোস্ট রাইটার এবং আর্টিস্ট হিসেবে ছিলেন। ঘোস্ট রাইটার বা আর্টিস্টদের কাজই হলো তারা যার হয়ে কাজ করছেন তার কথামত গল্প লেখা এবং ছবি আঁকা। এখানে তাদের নতুন কিছু সৃষ্টি করার তেমন সূযোগ নেই। কিন্তু বিল ফিঙ্গার ব্যাটম্যানের শুধুমাত্র একজন ঘোস্ট রাইটার ছিলেন না।
বিল ফিঙ্গারই ছিলেন ব্যাটম্যান। আপনি ব্যাটম্যানের যে ভাল দিকটির কথা ভাববেন, সেটাই বিলের অবদান। –কারমাইন ইনফান্তিনো
আট বছরের ব্রুস ওয়েইন যখন তার চোখের সামনে বাবা-মাকে খুন হতে দেখে, সে প্রতিজ্ঞা করে সে তার বাকি জীবন গথামকে অপরাধমুক্ত করতে লড়বে। ব্রুস ওয়েইনের ব্যাটম্যান হয়ে উঠার এই অসাধারণ গল্পটি প্রকাশিত হয় ডিটেকটিভ কমিকের ৩৩ তম ইস্যুতে, যা লিখেছেন বিল ফিঙ্গার। ব্রুস ওয়েইন নামটিও বিল ফিঙ্গারের দেওয়া, যা রবার্ট ব্রুস এবং এন্থনি ওয়েইনের সাথে মিল রেখে রাখা হয়।
প্রথমদিকে ব্যাটম্যানের শহর নিউ ইয়র্ক হলেও বিল ফিঙ্গারই তা পরিবর্তন করে গথাম সিটি রাখেন। তিনি এমন একজন সুপারহিরোকে তুলে ধরেন যে দেখতে ভিলেইনের মতো, যার কোনো সুপার পাওয়ার নেই কিন্তু সে শার্লক হোমসের মতো একজন গোয়েন্দা। বিল ফিঙ্গারই প্রথমবারের মতো গল্পে ব্যাটমোবিল বা ব্যাটকেইভ শব্দগুলো ব্যবহার করেন। তিনি ব্যাটম্যানের ডাক নাম রাখেন ডার্ক নাইট। ব্যাটম্যানের অন্যান্য জনপ্রিয় চরিত্র, যেমন: জোকার, রবিন, কমিশনার গর্ডন, ক্যাটওমেন, টু-ফেস, স্কেয়ারক্রোদের প্রথম গল্প লিখেছিলেন তিনি। অর্থাৎ বিল ব্যাটম্যানের জন্য একটি আলাদা জগৎ সৃষ্টি করেছেন।
বিল ফিঙ্গার সে সময়ের অন্যান্য লেখকের চাইতে কিছুটা ভিন্নভাবে ভাবতেন। তার গল্পে প্রায় দেখা যেত ব্যাটম্যান আর রবিন স্বাভাবিকের চাইতে বড়, যেমন বিশাল টাইপরাইটারের উপর ব্যাটম্যান রবিন ভিলেইনদের সাথে লড়ছে বা ভিলেইন বিশাল কাঁটাচামচ নিয়ে ব্যাটম্যানের উপর হামলা করছে। গোল্ডেন এজ কমিকের এই বিষয়গুলো এখন বিলুপ্ত হলেও তখন তা বেশ উপভোগ্য ছিল। বিল ফিঙ্গার তার গল্প লিখতে বেশ গবেষণা করতেন। তিনি একটি নোটবুক রাখতেন, যার নাম তিনি দিয়েছিলেন 'গিমিক বুক'। যখনই কোনো গল্পের চিন্তা মাথায় আসতো তিনি তা টুকে নিতেন। কখনো তিনি বাসে চড়ে নিউ ইয়র্ক ঘুরতেন এবং মানুষের জীবন থেকে গল্প নেওয়ার চেষ্টা করতেন।
ডিসি কমিকস যখন জানতে পারল বব কেইন নয়, বরং বিল ফিঙ্গার ব্যাটম্যানের গল্পগুলো লিখছেন, তখন তারা বিলকে কোম্পানিতে নিয়ে আসে। তখন তিনি আরো বেশ কিছু চরিত্রে কাজ করার সুযোগ পান, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কমিকের প্রথম গ্রিন ল্যান্টার্ন অ্যালেন স্কট, ওয়াইল্ডক্যাট এবং রেডহুড (জেসন টড)। এছাড়াও তিনি সুপারম্যান, সুপারবয়, ওয়ান্ডার ওম্যান, গ্রিন এরো, ভাইকিং প্রিন্স ইত্যাদি চরিত্রের বেশ কিছু গল্প লিখেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ব্যাটম্যানের প্রায় সত্তর বছরের ইতিহাসে (২০১৫ সাল পর্যন্ত) কখনোই ব্যাটম্যানের পাশে লেখক হিসেবে বিল ফিঙ্গারের নামটি দেখা যায়নি।
তবে বিল ফিঙ্গার ১৯৬৬ সালে অ্যাডাম ওয়েস্টের ব্যাটম্যান টিভি সিরিজের একটি এপিসোডের স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন। দ্য ক্লক কিংস ক্রেজি টাইমস নামের সেই এপিসোডটি ছিল এতদিন পর্যন্ত তার একমাত্র ব্যাটম্যান ক্রেডিট। এর বাইরে এই টিভি সিরিজটি তাকে বেশি কিছু দিতে পারেনি। অন্যদিকে ৬০ এর দশকে যখন ব্যাটম্যানের কমিক বিক্রি আশংকাজনক হারে কমছিল এই টিভি সিরিজই বাঁচায় ব্যাটম্যানকে। অন্যদিকে বব কেইনকে করে তোলে প্রথম কমিকবুক তারকা।
কমিকের সিলভার এজ সময়টাতে কমিক ইন্ড্রাস্ট্রিতে যুক্ত হচ্ছিলেন অনেক নতুন মুখ, যাদের বেশিরভাগই কমিকবুক ফ্যান। যার ফলে ১৯৬০ এর মাঝামাঝিতে বিল ফিঙ্গারের মতো গোল্ডেন এজ রাইটারদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। বিল আর ব্যাটম্যানের গল্প লেখার সুযোগ পাননি। তিনি ৭০ এর দশকে ডিসি কমিকসে রহস্য গল্প লিখতেন। কিন্তু সেখান থেকে যে অর্থ পেতেন সেটা খুবই সামান্য। তাই ডিসির পাশাপাশি আরো বেশ কিছু জায়গায় লেখালেখি করতেন। ম্যানহাটনের একটি ছোট এপার্টমেন্টে একা থাকতেন তিনি। তখন তার অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তিনি সময়মত বাসা ভাড়া শোধ করতে হিমশিম খেতেন।
১৯৭৪ সালের ১৮ই জানুয়ারি, বিলের সেদিন দুটি গল্প জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটি শেষ করেই তিনি বাসায় ফিরে যান। তার বন্ধু চার্লস সিনক্লেয়ার তার সাথে দেখা করতে এসে বেশ কয়েকবার দরজায় নক করেও সাড়া পাননি। তাই তিনি ডুপ্লিকেট চাবি ব্যবহার করে বাসার ভেতরে ঢুকে দেখতে পান বিল ঘুমিয়ে আছে। বেশ কয়েকবার ধাক্কা দিয়েও যখন তাকে জাগানো গেল না তখন চার্লস বুঝতে পারলেন বিল মারা গেছেন।
বেচারা বিল একাকী মারা গেল… আমি তখন ভাবছিলাম এটা একটা দুঃখজনক সমাপ্তি। পৃথিবী একজন অসাধারণ মানুষকে হারালো।
বিল মারা যাওয়ার পর কোনো পত্রিকায় তার মৃত্যুসংবাদ ছাপা হয়নি, তার কোনো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়নি, তার কবরের কোনো সমাধীস্তম্ভও নেই। বিল এমনভাবে বিদায় নিলেন, যাতে মনে হচ্ছিল তিনি পৃথিবীর মানুষের কাছে কিছুই না।
বিল ফিঙ্গার ব্যাটম্যানের চূড়ান্ত সফলতা দেখে যেতে পারেননি এবং দুঃখের বিষয় সেটার অংশীদারও হতে পারেননি। আমি বলছি ১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া টিম বার্টনের মুভি ব্যাটম্যানের কথা। সুপারম্যান মুভির সফলতার হাত ধরেই ওয়ার্নার ব্রাদার্স সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাটম্যানের লাইভ একশন মুভির। ৩৫ মিলিয়ন ডলারে নির্মিত এই মুভিটি সে বছর বক্স অফিসে রাজত্ব করে আয় করে ৪১১ মিলিয়ন ডলার। এই মুভিটির মাধ্যমেই পুরো বিশ্বে সাড়া জাগায় ব্যাটম্যান। বিল ফিঙ্গারের দ্বিতীয় স্ত্রী লিন সিমন্স সে সময় চেষ্টা করেছিলেন মুভিতে যাতে বিলকে কো ক্রিয়েটরের সম্মান দেওয়া হয়। এ নিয়ে তিনি বেশ কয়েকবার ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু সফল হননি।
বিল ফিঙ্গারের গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারত। বিশ্বের ব্যাটম্যান ফ্যানরা কখনোই জানতো না কে এই বিল ফিঙ্গার, তার কৃতিত্ব কী। কিন্তু সবার গল্পেই একজন হিরো থাকে, এবং দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস মুভির শেষ অংশে ব্যাটম্যান বলে, "অ্যা হিরো কেন বি এনিওয়ান"। তেমনই বিল ফিঙ্গারের গল্পে হিরো হিসেবে আবির্ভূত হন মার্ক টাইলার নোবেলম্যান।
মার্ক টাইলার একজন লেখক এবং অবশ্যই কমিকভক্ত। তিনি বেশ কিছু বই লিখেছিলেন যার মধ্যে অন্যতম সুপারম্যানের স্রষ্টা জেরি সিগ্যাল এবং জোয়ি শাস্টারকে নিয়ে লেখা, দ্য বয়েজ অফ স্টিল। যখন তিনি বিল ফিঙ্গার সম্পর্কে জানতে পারলেন তখন তিনি বিলের জন্য কিছু একটা করতে চাইলেন। সেই কিছু একটা হলো ব্যাটম্যানের স্রষ্ট্রা হিসেবে বিলের নাম যুক্ত করা। যা মোটেই সহজ কোনো কাজ নয়। কারণ ৭০ বছর ধরে যেটা প্রতিষ্ঠিত, আর যেটায় জড়িত বিলিয়ন ডলারের ইন্ড্রাস্ট্রি তা পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। কিন্তু মার্ক এগিয়ে গেলেন। আর তাকে সাহায্য করেছিলেন কমিকবুক রাইটার রয় থমাস, কমিকস হিস্টোরিয়ান আরলেন শুমার, প্রডিউসার মাইকেল উসলান, আর্টিস্ট জেরি রবিনসন এবং কারমিন ইনফান্তিনো।
২০০৭ সালে মার্ক খুঁজে বের করেন বিল ফিঙ্গারের একমাত্র সন্তান ফ্রেডরিখ ফিঙ্গারের একমাত্র মেয়ে এথিনা ফিঙ্গারকে, কারণ ব্যাটম্যানের স্রষ্টা হিসেবে যদি বিলের নাম দাবি করতেই হয় তাহলে আইন অনুযায়ী বিলের বংশধরকেই তা করতে হবে। এথিনা প্রথমে এ বিষয়ে এতটা উৎসাহী ছিলেন না। কারণ তার বাবা এর আগেও বেশ কয়েকবার ডিসি কমিকসের সাথে যোগাযোগ করেন, কিন্তু কোনো ফল হয়নি। মার্কের অনুরোধে এথিনা ডিসির সাথে যোগাযোগ করেন। তবে এবার ডিসি সাড়া দেয়। ব্যাটম্যানের জন্য বিল ফিঙ্গারের অবদান তারা স্বীকার করে নেয়। এরপর ডিসির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং মুভির প্রিমিয়ারেও যাওয়ার সূযোগ হয় এথিনার।
একসময় মনে হচ্ছিল ডিসি কমিকস বিষয়টাকে মেনে নিতে যাচ্ছে। কিন্তু ডার্ক নাইট রাইজেস মুক্তির পর তারা কিছু টাকার বিনিময়ে এথিনার মুখ বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। এর মাঝেই বিল ফিঙ্গারের জীবন এবং ব্যাটম্যানে তার ভূমিকা নিয়ে লেখা মার্ক টাইলার নোবেলম্যানের বই 'বিল দ্য বয় ওয়ান্ডার: দ্য সিক্রেট কো-ক্রিয়েটর অফ ব্যাটম্যান' প্রকাশের পর ফ্যানরাও বিল ফিঙ্গারকে তার প্রাপ্য সম্মান এনে দিতে মার্ক এবং এথিনার সাথে যুক্ত হলেন। এথিনা এর মধ্যেই নিয়মিত কমিক কনভেনশনগুলোতে অংশ নেয়া শুরু করেন। শেষে ২০১৫ সালে ওয়ার্নার ব্রাদারস এথিনার পক্ষের আইনজীবীদের সাথে আলোচনায় বসে এবং সেপ্টেম্বরের ১৮ তারিখ ডিসি এন্টারটেইনমেন্ট থেকে জানানো হয়, ব্যাটম্যানের জন্য বিলের অবদান অনস্বীকার্য। তাই টিভি সিরিজ গথাম, এবং মুভি ব্যাটম্যান ভি সুপারম্যান: ডন অফ জাস্টিস থেকে সবসময় বিল ফিঙ্গারের নাম বব কেইনের সাথেই ব্যাটম্যানের ক্রিয়েটর হিসেবে উল্লেখ থাকবে।
তবে বিল ফিঙ্গারের নাম প্রথম দেখা যায় ব্যাটম্যান এন্ড রবিন ইটারনাল #৩ এবং ব্যাটম্যান: আরখাম নাইট জেনেসিস #৩ এই দুটি কমিক বইয়ে। অবাক লাগতেই পারে এটি ভেবে শুরু থেকেই ব্যাটম্যানের গল্প লিখে আসলেও এই প্রথম কোন ব্যাটম্যানের কমিক বইতে বিল ফিঙ্গারের নাম দেখা গিয়েছিল।
বব কেইনের একটি ধারণা থেকেই জন্ম ব্যাটম্যানের। যে ব্যাটম্যান পৃথিবীর অন্যতম পরিচিত এবং জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্রগুলোর মধ্যে একজন। কিন্তু শুরু থেকেই বিল ফিঙ্গার না থাকলে ব্যাটম্যানের এই যাত্রা এতটা সহজ হতো না। হয়ত অজস্র গোল্ডেন এজ সুপারহিরোদের মতো একটা সময় কালের গর্ভে হারিয়ে যেত। সহজভাবে বললে বিল ফিঙ্গার না থাকলে আমরা ব্যাটম্যানকে পেতাম কিনা সন্দেহ। আর প্রায় আশি বছর পর ব্যাটম্যানের স্রষ্টার স্বীকৃতি পাওয়াটা বিল ফিঙ্গারের গল্পের একটা সুন্দর সমাপ্তি এনে দিল।
মার্ক টাইলার নোবেলম্যান প্রথমে জেনেছিলেন বিল ফিঙ্গারকে পটারস ফিল্ডে (যেখানে স্বজনহীন মানুষদের কবর দেওয়া হয়) সমাহিত করা হয়েছিল। কিন্তু পরে ফ্রেডরিখ ফিঙ্গারের দুজন পরিচিত লোক তাকে ভিন্ন একটি গল্প বলেন। বিল মারা যাওয়ার পরেরদিন ফ্রেড হাসপাতালে গিয়েছিলেন এবং যথাযথভাবে তার বাবার শবদাহ করেন। এরপর তিনি সে ভষ্ম নিয়ে অরেগনের সমুদ্রতীরে যান। সেখানে বালির উপর তিনি একটি বিখ্যাত ব্যাট-সিম্বল আঁকেন, এবং ছাইগুলো তার মাঝে ছিটিয়ে দেন। একসময় ঢেউ এসে সেগুলো সাগরে নিয়ে যায়।
This Bangla article is about Bill finger and the creation of Batman. Though Bill was the orginal Batman writter and the creator of Batman, he never recieved any credit for it.
Necessary references have been hyperlinked. Other references are:
1. Bill the Boy Wonder: The Secret Co-Creator of Batman by Marc Tyler Nobleman
2. Batman and Me by Bob Kane
3. Batman: The Complete History by Les Daniels
4. Comic Book History Of Comics by Fred Van Lente
5. Alter Ego by Roy Thomas
Featured Image © Marc Tyler Nobleman and DC Comics, Edited by writter