Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নাসার টুইন স্টাডি ও স্কট ক্যালির মহাশূন্যে এক বছর

মার্কিন নভোচারী স্কট ক্যালি। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে টানা একবছর অবস্থান করেছেন নাসার ‘টুইন স্টাডি’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে। নৌবাহিনীর প্রাক্তন এই পাইলটের জীবনী নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।

প্রাথমিক জীবন

স্কট জোসেফ ক্যালি ও তার জমজ ভাই (আইডেন্টিক্যাল টুইন) মার্ক ক্যালি ১৯৬৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নিউ জার্সির অরেঞ্জ-এ জন্মগ্রহণ করেন। বাবা রিচার্ড ক্যালি ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার। স্থানীয় মাউন্টেন হাই স্কুলে দু’ভাই পড়ালেখা করেন। স্কুলের পাঠ চুকিয়ে বাল্টিমোরের ইউনিভার্সিটি অভ মেরিল্যান্ডে ভর্তি হন ক্যালি।

তার লেখা স্মৃতিকথা, ‘এনডুরেন্স: মাই ইয়ার ইন স্পেস, আ লাইফটাইম অভ ডিসকভারি’ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, কলেজের প্রথমদিকের দিনগুলো তার খুব একটা ভালো কাটেনি। পড়ালেখা নিয়ে কোনো কূল পাচ্ছিলেন না তিনি। হাই স্কুলের রেজাল্ট আর স্যাট (SAT) টেস্টের স্কোর দুটোই ছিল হতাশাজনক। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত ছিলেন ক্যালি। এইসময় টম উলফের লেখা ‘দ্য রাইট স্টাফ’ (The Right Stuff) বইটি পড়ার সুযোগ হয় তার। এই বই তার জন্য পুরোদস্তুর মোটিভেশন হিসেবে কাজ করে।

আমার মনে হলো অবশেষে আমি আমার করণীয় খুঁজে পেলাম। আমি চেয়েছিলাম একজন নৌ-পাইলট হতে। ‘দ্য রাইট স্টাফ’ বইটা আমার জীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে।

ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন থেকে ক্যালির সেলফি; © Scott Joseph Kelly

নিজের জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পেয়ে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর কাজ শুরু করেন স্কট ক্যালি। নিউ ইয়র্ক মেরিটাইম অ্যাকাডেমিতে চলে যান। ১৯৮৭ সালে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এরপর এভিয়েশন সিস্টেমের ওপর স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য তিনি ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অভ টেনেসিতে।

নেভি ক্যারিয়ার

মার্কিন নেভিতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে ক্যালি ফ্লোরিডার ফ্লাইট স্কুলে যোগদান করেন। পরে বিভিন্ন সময় অনেক ধরনের জেট চালানোর অভিজ্ঞতা হয় তার। ১৯৮৯ সালে তিনি নাভাল এভিয়েটর হিসেবে এফ-১৪ টমক্যাট ফাইটার জেট চালনার দায়িত্ব পান। ১৯৯০ সালের শেষের দিকে স্কট ক্যালি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ইউএসএস আইসেনহাওয়ারে ক্যারিয়ার-বেইজড ফাইটার পাইলট হিসেবে যোগদান করেন।

১৯৯৩ সালে ক্যালি ভার্জিনিয়ার নাভাল টেস্ট পাইলট স্কুলে যোগদানের জন্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ সালের ২৫ অক্টোবর কারা হাল্টগ্রীন নামক ইউএস নেভির একজন নারী বৈমানিক তার এফ-১৪ যুদ্ধবিমান নিয়ে সমুদ্রে বিধ্বস্ত হলে সেই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। তিনি তখন যুদ্ধবিমানে ডিজিটাল ফ্লাইট কন্ট্রোল সংযোজনের সুপারিশ করলে পরবর্তীতে তা করা হয় এবং ডিজিটাল ফ্লাইট কন্ট্রোল চালিত প্রথম এফ-১৪ যুদ্ধবিমানের পাইলট হিসেবে আকাশে ওড়েন ক্যালি।

এফ-১৪ টমক্যাট ফাইটার জেট; Source: U.S. Air Force photo by Tech. Sgt. Rob Tabor

স্কট ক্যালি তার নেভি ক্যারিয়ারে ৮,০০০ ঘন্টারও বেশি সময় ফ্লাই করেন। ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর ২০১২ সালে নৌবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।

নাসার ডাকে মহাশূন্যে

স্কট ক্যালি ও তার ভাই মার্ক ক্যালি ১৯৯৬ সালে নভোচারী হওয়ার জন্য নাসায় আবেদন করেন এবং সৌভাগ্যক্রমে দুজনেই নির্বাচিত হন। স্কট ক্যালি তার নভোযাত্রিক ক্যারিয়ারে চারবার মহাশূন্যে উড়াল দেন।

১ম মিশন: এসটিএস ১০৩ (STS 103)

এসটিএস ১০৩ ছিল ক্যালির প্রথম মিশন। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাসে পরিচালিত এই মিশনটির উদ্দেশ্য ছিল হাবল স্পেস টেলিস্কোপে নতুন যন্ত্রাংশ ও উন্নত প্রযুক্তি সংযোজন করা। স্পেস শাটল ডিসকভারির পাইলট হিসেবে এই মিশনে দায়িত্ব পালন করেন ক্যালি।

এসটিএস-১০৩ মিশন সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর স্কট ক্যালি যান রাশিয়ার স্টার সিটিতে, যেখানে তিনি রাশান-মার্কিন স্পেস অপারেশনের ডিরেক্টর অভ অপারেশনের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের বেশ কিছু মিশনে ব্যাকআপ ক্রু হিসেবেও কাজ করেন। ২০০৩ সালে কলম্বিয়া স্পেস শাটল দুর্ঘটনার পর ক্যালি সার্চ অ্যান্ড রিকভারি অপারেশন পরিচালনা করেন।

ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন; © NASA/Crew of STS-132

২য় মিশন: এসটিএস ১১৮ (STS 118)
স্পেস শাটল এনডেভারের কমান্ডার হিসেবে মহাশূন্যে দ্বিতীয় মিশন সম্পন্ন করেন স্কট ক্যালি। কলম্বিয়া দুর্ঘটনার  পর এই মিশনটি শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়। ২০০৭ সালে পরিচালিত ১২ দিন ব্যাপী এই মিশনে চারটি এক্সট্রাভেহিকুলার অ্যাক্টিভিটির (EVA: Extravehicular Activity) মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের কিছু সংস্কারকাজ পরিচালনা করা হয়। ইভিএ হচ্ছে মহাশূন্যে অবস্থানকালে স্পেসশিপ বা মহাকাশ স্টেশন থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে প্রয়োজনে কোনো কাজ সম্পাদন করা। অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র ‘গ্র্যাভিটি’ শুরু হয়েছে একটি ইভিএ দৃশ্য সহযোগে।

৩য় মিশন: এক্সপেডিশন ২৫ ও ২৬ (Expedition 25 and 26)
২০১০ সালের অক্টোবর মাসে এক্সপেডিশন ২৫ ও এক্সপেডিশন ২৬ নামক দুটো মহাকাশ মিশন পরিচালনা করে নাসা। সয়ুজ টিএমএ-১৯/২০ স্পেসক্রাফট ব্যবহৃত এই মিশনে প্রায় ১১৫টির মতো বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এই মিশনে ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ক্যালি।

৪র্থ মিশন: নাসার টুইন স্টাডি (Twin Study)

মানুষ অনেক আগেই চন্দ্রজয় করেছে। ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বিভিন্ন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রগুলো। মঙ্গলে ইতোমধ্যে মনুষ্যনির্মিত রোবট পাঠানো হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে হয়তো মানুষের পদধূলি পড়বে মঙ্গলের বুকে। সেই লক্ষ্যে নাসা কাজ করে যাচ্ছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু মঙ্গলে পৌঁছাতে হলে মানুষকে প্রায় একটানা একবছর বা তারও বেশি মহাশূন্যে ভ্রমণ করতে হবে। সুতরাং দীর্ঘসময় মহাশূন্যে অবস্থান করলে মানবশরীরের ওপর কী কী প্রভাব পড়তে পারে তা যাচাই করে নেওয়া অতীব জরুরি। আর সেই লক্ষ্যেই মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা তাদের ‘টুইন স্টাডি‘ গবেষণাটি পরিচালনা করে।

এই গবেষণায় ক্যালি ভ্রাতৃদ্বয়কে টেস্ট সাবজেক্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেহেতু তারা আইডেন্টিক্যাল টুইন, তাই তারাই এই গবেষণার জন্য পছন্দের শীর্ষে ছিলেন। উল্লেখ্য, স্কট ক্যালির ভাই মার্ক ক্যালি নিজেও একজন নভোচারী। টুইন স্টাডি প্রকল্পের অংশ হিসেবে স্কট ক্যালিকে প্রায় একবছরের জন্য মহাশূন্যে তথা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে পাঠানো হয়। অন্যদিকে মার্ক ক্যালি পৃথিবীতে অবস্থান করেন গ্রাউন্ড সাবজেক্ট হিসেবে। এই গবেষণাটির উদ্দেশ্য ছিল মহাশূন্যে দীর্ঘকাল অবস্থান করলে মাইক্রোগ্র্যাভিটির কারণে মানব শরীরে কী কী পরিবর্তন হয় তা খুঁজে বের করা এবং তার সাথে পৃথিবীতে অবস্থান করা ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার তুলনা করা।

মাইক্রোগ্র্যাভিটি হচ্ছে মহাশূন্যে বিদ্যমান ন্যূনতম গ্র্যাভিটি (অনেকেই মনে করেন, মহাশূন্যে কোনো গ্র্যাভিটি নেই। কিন্তু এই ধারণাটি ভুল, বরং খুবই অল্প পরিমাণ গ্র্যাভিটি ভূপৃষ্ঠ হতে ১২০-৩৬০ মাইল উচ্চতা পর্যন্ত মহাশূন্যে বিদ্যমান থাকে আর তার কারণেই স্পেস শাটল বা স্পেস স্টেশনগুলো পৃথিবীর চারদিকে কক্ষপথে ঘুরতে পারে)।

আইএসএস থেকে পৃথিবীর ছবি তুলেছেন ক্যালি; © Scott Kelly/Instagram

২৭ মার্চ ২০১৫ সালে ক্যালি তার রাশান সহযাত্রী মিখাইল করনিয়েনকোর সাথে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দেন। এই যাত্রায় ক্যালিকে দুটো মিশন পরিচালনা করতে হয় এবং দ্বিতীয় মিশনটির কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সহকর্মী টিমোথি কোপরা ও জেল লিন্ডগ্রেনের সাথে একাধিক এক্সট্রাভেহিকুলার অ্যাক্টিভিটিও সম্পন্ন করেন ক্যালি। ২০১৬ সালের ২ মার্চ ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে টানা ৩৪০ দিন কাটানোর পর পৃথিবীতে ফিরে আসেন ক্যালি।

মার্ক ক্যালি (বাঁয়ে) ও স্কট ক্যালি; © NASA

নাসার টুইন স্টাডি বেশ চমকপ্রদ ফলাফল প্রদর্শন করে। শরীরের ওপর দুর্বল মহাকর্ষীয় বলের কারণে স্কট ক্যালি কক্ষপথে থাকাকালে লম্বায় দুই ইঞ্চি বেশি বৃদ্ধি পান। অবশ্য পৃথিবীতে ফেরার পর তার উচ্চতা পুনরায় আগের মতো হয়ে যায়। জিনগত দিক থেকে স্কট ক্যালির জিনের গঠন তার ভাই মার্ক ক্যালির মতো থাকলেও স্কটের ‘জিন এক্সপ্রেশন’-এ কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। নাসার এক বিবৃতিতে বলা হয়, মার্ক ও স্কট ক্যালি এখনো আইডেন্টিক্যাল টুইন। স্কটের ডিএনএ মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়নি। স্কটের জিন এক্সপ্রেশনে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে, যা হচ্ছে মূলত কিভাবে মানবদেহ কোনো পরিবেশের প্রতি সাড়া দেয়। অবশ্য এই পরিবর্তন খুবই যৎসামান্য।

স্কট ক্যালি আরও লক্ষ্য করেন, মহাশূন্যে থাকাকালে তার সময় যেভাবে প্রবাহিত হয়েছে তা তার ভাই মার্কের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন। ফলে দেখা গেল, স্কট তার ভাই মার্কের তুলনায় বয়সে সামান্য তরুণ হয়ে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন। অবশ্য নিজের ওপর চালানো এসব বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষা নিয়ে তেমন একটা অসন্তুষ্ট নন স্কট ক্যালি।

আমি বাকি জীবন টেস্ট সাবজেক্ট হয়েই থাকব। আমি আর মার্ক টুইন স্টাডি প্রকল্পে আরও অনেকবার অংশ নেব… মানুষের জ্ঞান অর্জনের জন্য এটুকু অবদান রাখতে পারার ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ…।

ব্যক্তিগত জীবন

লেসলি ইয়ানডেলের সাথে ১৯৯২ সালে প্রথমবারের মতো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন স্কট ক্যালি। দুই কন্যা সামান্থা ও শারলটের জন্ম হয় এই দম্পতির ঘরে। ২০০৯ সালে বিবাহবিচ্ছেদের পর ক্যালি ২০১৮ সালে অ্যামিকো কডেরারকে দ্বিতীয়বারের মতো বিয়ে করেন।

২০১৬ সালে নাসা থেকে অবসর নেন স্কট ক্যালি। এরপর তিনি ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস ফর আউটার স্পেস অ্যাফেয়ার্সে কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে নিয়মিত মহাশূন্য ও মহাশূন্য ভ্রমণ নিয়ে বক্তব্য দেন ক্যালি।

বারাক ওবামার সাথে; Source: Official White House Photo by Pete Souza

সম্মাননা ও পুরস্কার

চারবারে মোট ৫২০ দিন মহাশূন্যে কাটানো স্কট ক্যালি তার কর্মজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখ করার মতো রয়েছে ‘লিজিয়ন অভ মেরিট’, ‘দ্য নেভি এন্ড মেরিন কোর কমেন্ডেশন মেডেল’, ‘দ্য নাসা ডিস্টিংগুইশড সার্ভিস মেডেল’ ইত্যাদি। এছাড়া রাশিয়ান ফেডারেশনের কাছ থেকে তিনি ‘দ্য মেডেল ফর মেরিট ইন স্পেস এক্সপ্লোরেশন’ পদক লাভ করেন। ২০১৫ সালে টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে তার স্থান হয়। স্কট ক্যালি ‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন অভ স্পেস এক্সপ্লোরার্স’-এর সদস্য।

This is a Bengali language biography of Scott Joseph Kelly, a retired American astronaut. Necessary references are hyperlinked.
Featured Photo © KIRILL KUDRYAVTSEV/AFP/Getty

Related Articles