Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বেইল বৃত্তান্ত: অলৌকিক ক্ষমতাবিহীন এক সুপারহিরোর উপাখ্যান

“ঐ বয়সে (১৩) কিছুতে কিছু যায় আসে না। ‘জন ম‍্যালকোভিচ? সে আবার কে? স্পিলবার্গ, তো কী হয়েছে?’ কুছ পরোয়া নেই ঐ বয়সে। এজন্যই খুব সহজ ছিল ব্যাপারটা, প্রতিযোগিতার চিন্তা ছিল না কিংবা ছিল না সেসব জিনিস, যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে মাথায় ঢুকে পারফর্মেন্স খারাপ করে দেয়।”

আশির দশকের কথা। পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ তখন বেশ জনপ্রিয়। তার মুভি বরাবরই প্রায় সকল শ্রেণীর মানুষকেই টানার ক্ষমতা রাখে, ফলে সব ধরনের দর্শকই তার সিনেমার অপেক্ষায় থাকতো। তাই ১৯৮৭ সালের দিকে যখন তার ‘এম্পায়ার অফ দ্য সান’ সিনেমাটি মুক্তি পেলো, চলচ্চিত্র অনুরাগীরা তখন যারপরনাই খুশি হয়েছিলেন। দৃষ্টিনন্দন সেই সিনেমাটি দর্শক থেকে শুরু করে সমালোচকদের প্রশংসার পাশাপাশি বাগিয়ে নিয়েছিল ছয় ছয়টি অস্কার নমিনেশন

অধিকাংশ চলচ্চিত্র আলোচনায় আসে মূলত চিত্রনাট্য, পরিচালক কিংবা মূল নায়কের স্টারডমের সৌজন্যে। তবে এখানে ঘটলো একটু ব্যতিক্রম ব্যাপার। স্পিলবার্গের এই সিনেমা নির্মাণের সময় এর কাস্ট তেমন আলোচনায় আসেনি, বরং সিনেমা মুক্তির পর জন ম্যালকোভিচ আর বেন স্টিলারদের রেখে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় ব্রিটিশ এক কিশোর অভিনেতা। সে-ই যেন ছিল সিনেমাটির প্রাণ। কিন্তু প্রধান চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করার পরেও তার ভাগ্যে জোটেনি একটি মনোনয়ন। অথচ কিশোর ডিক্যাপ্রিওসহ প্রায় চার হাজারেরও বেশি শিশু অভিনেতার অডিশন নেওয়ার পর স্ত্রীর পরামর্শে স্পিলবার্গ কাস্ট করেছিলেন সেই ছেলেটিকে। প্রতিভাবান সেই বিস্ময় বালকটি আর কেউ নন, তিনি আমাদের অতি পরিচিত ক্রিশ্চিয়ান বেইল

ক্রিশ্চিয়ান বেইল; Source: Biography.com | Edited by writer

কিশোর বয়সেই জনপ্রিয়তা অর্জন করে নেওয়া কালজয়ী এই অভিনেতার জন্ম ১৯৭৪ সালের ৩০ জানুয়ারি। বিনোদনের জগতে বেশ দীর্ঘ সময় ধরে পদচারণায় মুখর এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মা জেনি ছিলেন সার্কাসের পারফর্মার। তার দাদা ছিলেন সুপরিচিত একজন স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান এবং কাজ করেছেন স্বয়ং জন ওয়েইনের ডাবল হিসেবে। বেইলের বাবা ছিলেন একজন কমার্শিয়াল পাইলট। তার তিন বোনের মধ্যে একজন সুরকার, একজন পরিচালক ও অভিনেত্রী; শুধুমাত্র তৃতীয়জনই ছিলেন বিনোদন জগতের বাইরে, তিনি একজন কম্পিউটার অপারেটর।

শো-বিজ সাম্রাজ্যে পদার্পণ

ছোট্ট বেইলের অভিনয় জীবনের শুরু হয় মাত্র নয় বছর বয়সে, আর সব অভিনেতার মতো ছোট পর্দায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। ১৯৮৩ সালে একটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তিনি পা রাখেন শো-বিজনেসে এবং ১৯৮৫ সালের দিকে মি. বিন খ্যাত রোয়ান অ্যাটকিনসনের সাথে অভিনয় করেন ‘দ্য নার্ড’ নামের একটি মঞ্চ নাটকে। অভিনয়ের জগতে আসার মাত্র দু’বছরের মধ্যেই সাফল্য ধরা দেয় কিশোর বেইলের হাতে। ১৯৮৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘এনেস্তেশিয়া: দ্য মিস্টেরি অফ এনা’ নামের এক টেলিভিশন ড্রামায় কাজ করার সময় তার পরিচয় হয় পরিচালক স্পিলবার্গের স্ত্রী এমি আর্ভিনের সাথে। এরপর আরও দুটি টেলিভিশন ড্রামাতে অভিনয় করার পরপরই এমির ফোন পেয়ে অডিশন দেন ‘এম্পায়ার অফ দ্য সান’ সিনেমার জন্যে, পেয়েও যান সিনেমার মূল কিশোর চরিত্রটি।

জিম গ্রাহাম’ নামের বারো বছর বয়সী বিগড়ে যাওয়া এক বালকের রোমহর্ষক সব অ্যাডভেঞ্চারের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘এম্পায়ার অফ দ্য সান’ চলচ্চিত্রটি। ১৯৪১ সালে জাপান যখন সাংহাইয়ে আক্রমণ চালায়, তখনই বাবা-মার কাছ থেকে আলাদা হয়ে যায় ছেলেটি এবং জাপানী সৈন্যরা তাকে বন্দী করে নিয়ে যায় ‘সু চাউ’ ক্যাম্পে। অনেক অভিজ্ঞ অভিনেতার পক্ষেও হয়তো এই চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলা কষ্টকর হতো, কেননা জিম চরিত্রটি ছিল সিনেমার কেন্দ্রবিন্দু এবং সিনেমার প্রায় প্রত্যেকটি দৃশ্যেই তাকে দেখা গিয়েছিল। শত আলোচনা আর চাপের মধ্যে থেকেও কিশোর বেইল চরিত্রটি রূপায়ন করেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। অস্কারে মনোনয়ন না পেলেও ‘ন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ’ তাকে সেরা কিশোর অভিনেতার বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত করে। এই নিয়ে ১৯৯৮ সালে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন লেখার শুরুতেই উল্লেখ করা সেই অমূল্য কথাগুলো।

‘এম্পায়ার অফ দ্য সান’ সিনেমার সেটে স্পিলবার্গের সাথে বালক ক্রিশ্চিয়ান বেইল; Source: CBS News

খুব অল্প সময়েই বেশ জনপ্রিয় হয়ে যান তের বছর বয়সী বেইল। কিন্তু সেটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার জন্য। দুর্দান্ত অভিনয়ের কারণে ব্যাপক প্রশংসার পাশাপাশি সবার মনোযোগ চলে আসে তার উপর, যা তের বছর বয়সী বেইল মোটেও উপভোগ করেননি। এই নিয়ে ই!অনলাইন নামের পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন,

“আমি তখন খুবই ছোট, তাই এত খ্যাতি এবং প্রশংসার জন্যে আসলে প্রস্তুত ছিলাম না। সবাই যখন আমার দিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে তাকাতে শুরু করলো, তখন আমার মনে হতো আমি যদি ১৩ বছর বয়সী শিশুর মতো আচরণ করি, তাহলে তারা আমার উপর হতাশ হবে। ব্যাপারটা আমার জন্যে খুবই অস্বস্তিকর ছিল।”

রিপোর্টারদের করা ব্যক্তিগত প্রশ্নগুলোতে তিনি খুব বিব্রত বোধ করতেন, তাই ক্যামেরা দেখলেই পালিয়ে যেতেন এবং প্রায়ই বাথরুমে গিয়ে লুকিয়ে থাকতেন। এমনকি অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেন। কিন্তু অভিনয় যে তার রক্তে মিশে ছিল। রক্তের টান কি চাইলে ছেড়ে দেওয়া যায়?

ট্রেজার আইল্যান্ড সিনেমার দৃশ্যে বেইল © TNT Network

তাই কেনেথ ব্রানাহর ডাকে দু’বছর পর আবারও ফিরে আসেন অভিনয়ে। বয়স তখন তার ১৬, স্কুলে যাওয়াও ছেড়ে দিয়েছেন। তাই ঠিক করেন এবার পুরোদমে অভিনয়ে মনোনিবেশ করবেন। ব্রানাহ পরিচালিত শেক্সপিয়ারের নাটক ‘পঞ্চম হেনরি’র উপর ভিত্তি করে নির্মিত সেই সিনেমাতে তিনি অভিনয় করেন ছোট একটি চরিত্রে এবং পরের বছর সুযোগ হয় ‘ট্রেজার আইল্যান্ড’ নামের টেলিভিশন সিনেমায় অভিনয় করার। এই সিনেমার মুক্তির কিছুদিন পর তার মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে তিনি বাবার সাথে বোর্নমাউথে চলে আসেন।

সুইং কিডস সিনেমায় ক্রিশ্চিয়ান বেইল (বামে) © Buena Vista Pictures

নব্বইয়ের দশকের পুরোটা সময়জুড়ে তিনি ক্রমাগত বেশ কিছু সিনেমাতে অভিনয় করেন। শুরুর দিকে তাকে হিস্টোরি ধাঁচের সিনেমায় অভিনয় করতে দেখা যায়। ১৯৯২ সালে তিনি অভিনয় করেন শিশুশ্রমিক ও পত্রিকার হকারদের নিয়ে নির্মিত ‘নিউজিস’ নামের এক মিউজিকাল ড্রামায়। এর পরের বছর অভিনয় করেন নাৎসি আমলের জার্মানির কিছু অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের নিয়ে নির্মিত ‘সুইং কিডস’ সিনেমায়। ছবিগুলোতে অভিনয় করার সময় প্রচুর খাটুনি করতে হয়েছিল তার; মাসের পর মাস তাকে নাচ এবং মার্শাল আর্ট শিখতে হয়।

অভিনয়ের নেশায় উন্মত্ত বেইল

বেইলের বয়স যখন বিশের কোঠায়, তখন তার মাথায় ভূত চাপে সময়োপযোগী সিনেমায় অভিনয় করার। শুরুটা হয় ‘লিটল ওম্যান’ সিনেমা দিয়ে, ১৯৯৪ সালে উইনোনা রাইডারের পরামর্শে তিনি সেই সিনেমার প্রধান পুরুষ চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপরই আরও বেশ কিছু সিনেমাতে মিল্ড-ম্যানার্ড-জেন্টলম্যান জাতীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৯৬ সালে ‘দ্য সিক্রেট এজেন্ট’ সিনেমায় স্টিভ চরিত্রে এবং একই সালে ‘দ্য পোট্রে অফ অ্যা লেডি’ সিনেমাতে এডওয়ার্ড রজিয়ে চরিত্রে অভিনয় করার ডাক পান। মাঝামাঝি সময়টাতে ‘পোকাহনটাস’ সিনেমাতে থমাসের চরিত্রে কণ্ঠ দেন। এরপর তার ঝোঁক তৈরি হয় বিতর্কিত ও চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে দিকে। ১৯৯৮ সালে ‘ভেলভেট গোল্ডমাইন’ নামের একটি ইন্ডি সিনেমাতে তিনি অভিনয় করেন সমকামী সাংবাদিকের চরিত্রে. পরবর্তীতে ‘ববি প্লাট’ নামের এক মানসিক প্রতিবন্ধী যুবকের চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ভালোই প্রশংসিত হন।

লিটল চিল্ড্রেন সিনেমার দৃশ্যে বেইল © Colombia Pictures

নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকের কথা; কিশোর বেইল ততদিনে পরিণত হয়েছেন ছয় ফুট দীর্ঘ সুদর্শন এক যুবকে। তার তৈরি হয়েছে বিশাল এক সমর্থকগোষ্ঠী, যারা নিজেদের পরিচয় দেয় ‘বেইলহেড’ বলে। কিন্তু তখনও তার ব্যক্তিগত জীবন ভক্তদের কাছে রহস্য; এর পেছনের কারণ সেই পুরনো অভ্যাস, তার ক্যামেরা বিমুখতা। ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে তিনি সাক্ষাৎকার দিতে চাইতেন না, আর দিলেও ব্যক্তিগত প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যেতেন। তার ধারণা ছিল সার্বিকভাবে একজন ‘রহস্যমানব’ থাকাটাই তার জনপ্রিয়তার পেছনে প্রধান কারণ। এই ব্যাপারে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ব্রেন্ডন লেমনের কাছে তিনি বলেন,

“আমি ছবির প্রচারণার স্বার্থেই শুধু সাক্ষাৎকার দেই এবং সেখানে ছবি নিয়েই কথা বলি; নিজের সম্পর্কে কিছু বলা থেকে বিরত থাকি।”

একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই বেইল নামকরা অভিনেতাদের খাতায় নিজের নামটিও লিখিয়ে নেন। গত দশকে তার অভিনয় দেখে দর্শকরা তখন মুগ্ধ এবং সমালোচকদের চোখে তিনি একজন উদীয়মান তারকা। সেই সময়টাতেই তার অভিনয় জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে। ২০০০ সালে, লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও আর এডওয়ার্ড নর্টনদের রেখে পরিচালক মেরি হ্যারন নিজেই বেইলকে বেছে নেন ‘আমেরিকান সাইকো’ বইয়ের উপর ভিত্তি করে নির্মিত একই নামের সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করার জন্য। চরিত্রটি ছিল ‘প্যাট্রিক বেইটমেন’ নামের এক সিরিয়াল কিলারকে ঘিরে। বইটির প্রথম প্রকাশের পর কিছু বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল বলে সমালোচকরা ধরে নেন, সিনেমাটিও সমানভাবে বিতর্কিত হবে। শত গুঞ্জনের মাঝেও বেইল বিতর্কিত এই চরিত্রে অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেন এবং মুক্তির পর সিনেমাটি মিশ্র রিভিউ পেলেও বেইল বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসা পান।

আমেরিকান সাইকো সিনেমায় ক্রিশ্চিয়ান বেইল © Lionsgate Films

সেই সাফল্যের হাত ধরে তার কাছে আসে বেশ কয়েকটি বিগ বাজেট সিনেমার চরিত্র। সেই বছরই তিনি অভিনয় করেন ‘শ্যাফট’ সিনেমায় এবং ২০০২ সালে অভিনয় করেন ‘দ্য রেইন অফ ফায়ার’ ও ‘ইকুইলিব্রিয়াম’ সিনেমায়। তবে তার সামনে অপেক্ষা করছিল আরও চ্যালেঞ্জিং কিছু চরিত্র। ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য মেশিনিস্ট’ সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন ইনসোমনিয়া আক্রান্ত ‘ট্রেভর রেজনিক’ নামের এক মেশিনিস্টের চরিত্রে। এই চরিত্রে অভিনয় করার সময় তিনি নিজের ওজন কমিয়ে ৫৫ কেজিতে নিয়ে আসেন। বেইলের এই কঙ্কালসার অবস্থা স্তব্ধ করে দিয়েছিল সমালোচক এবং দর্শকদের। এছাড়া ট্রেভর চরিত্রে তার অনন্যসাধারণ অভিনয় সবাইকে চমৎকৃত করে। এই চরিত্র দিয়েই বেইল নিজেকে নিয়ে যান ভিন্ন এক উচ্চতায়, জায়গা করে নেন মেথড অভিনেতাদের কাতারে।

ট্রেভর রেজনিক চরিত্রে © Paramount Classics

তার সাফল্যের তখন সবেমাত্র শুরু। শীঘ্রই তার হাতে আসে ইতিহাসের সবচেয়ে আইকনিক সুপারহিরোর চরিত্র।

বেইল এবং ব্যাটম্যান

ব্যাটম্যান বেইল © Warner Bros

‘দ্য মেশিনিস্ট’ সিনেমার জন্যে অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমানোর ফলে বেইল তখন বাস্তব জীবনেও ইনসোমনিয়ায় ভুগছেন। এছাড়া সিনেমা মুক্তির কিছুদিন আগে তার বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এতকিছুর মধ্যে তিনি আদৌ নতুন কোনো চরিত্রে অভিনয় করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত কিনা, সে ব্যাপারে তিনি নিজেও নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু চরিত্রটি ছিল ‘ব্যাটম্যান’– দ্য গ্রেটেস্ট সুপারহিরো অফ অল টাইম। সেই সুযোগ কি আর হাতছাড়া করা যায়? অডিশন দিলেন চরিত্রটির জন্যে। জেক ইলেনহল, জশোয়া জ্যাকসন, কিলিয়ান মার্ফিদের পেছনে ফেলে বেইল জিতে নিলেন সেই রেস। স্ক্রিপ্ট পাবার পর শুরু হলো নতুন উদ্যমে ওজন বাড়ানোর কাজ। প্রস্তুতির জন্যে পরিচালক নোলান তাকে সময় দিয়েছিলেন মাত্র ছয় মাস। ব্যাটম্যান নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটির পাশাপাশি ব্যক্তিগত প্রশিক্ষকের সাহায্যে এই ৬ মাসেই তিনি ওজন বাড়িয়ে ৫৫ কেজি থেকে ১০০ কেজিতে নিয়ে যান। কিন্তু চরিত্রের জন্য দরকার ছিল ৮৬ কেজি। ক্রুর এক সদস্য তাকে দেখে ঠাট্টা করে বলেন, “আমরা ফ্যাটম্যান না ব্যাটম্যানের ছবি বানাবো”। পরে খুব অল্প সময়ে তিনি ওজন আরও ১৪ কেজি কমিয়ে নেন।

৫৫ কেজি থেকে ৮৬ কেজিতে রূপান্তর; Image Source: Warner Bros.

‘ব্যাটম্যান বিগিনস’ সিনেমার টেস্টিং প্রসেসের সময় ব্যাটম্যান আর বেইলের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নোলান বলেন,

“স্ক্রিনটেস্টের পূর্বেই ক্রিশ্চিয়ান বুঝে ফেলেছিল শুধু অভিনয় দিয়ে হবে না, চরিত্রের জন্যে প্রয়োজন বিপুল পরিশ্রম, যার স্বামর্থ্য তার ছিল।”

চিত্রনাট্যকার ডেভিড এস. গয়ার বলেন,

“কিছু অভিনেতা হয়তো শুধু ব্রুস ওয়েইন চরিত্র অথবা শুধু ব্যাটম্যান চরিত্র অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবে। কিন্তু এদের দুজনের ব্যক্তিত্বের ভিন্নতা নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারার মতো একজনই আছে, আর সে হচ্ছে ক্রিশ্চিয়ান বেইল।”

বেইল নিজেও ব্যাটম্যানের ভূমিকায় অভিনয় করার ব্যাপারটা উপভোগ করেন। ব্যাটম্যানের নানারকম গ্যাজেটের মধ্যে তার সবচেয়ে পছন্দের ছিল ব্যাটমবিল। এই নিয়ে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “প্রত্যেকবার এই জিনিসটা থেকে বের হওয়ার সময় আমার বুক ধড়ফড় করতো।” বেইলের চলচ্চিত্র জীবনের সর্বোচ্চ খ্যাতি আসে ‘ব্যাটম্যান বিগিনস’ সিনেমাতে অভিনয়ের মাধ্যমেই। ছবিটি দর্শক থেকে শুরু করে সমালোচকদের কাছেও বেশ সমাদৃত হয় এবং বক্স অফিসেও বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে।

অস্কার এবং ক্রিশ্চিয়ান বেইল

একজন অভিনেতার জনপ্রিয়তার জন্যে একটি চরিত্রই যথেষ্ট, আর সেটা যদি হয় ব্যাটম্যান, তাহলে তো আর কথাই নেই। কিন্তু তবুও থেমে থাকেননি বেইল। কাজে লেগে পড়েন তিনি নতুন উদ্যমে। পরের বছরই অর্থাৎ ২০০৬ সালে আবার কাজ করেন নোলানের সাথে ‘দ্য প্রেস্টিজ’ সিনেমায়, এক অবসেসিভ ম্যাজিশিয়ানের চরিত্রে। একই বছরে তিনি কাজ করেন যুদ্ধভিত্তিক সিনেমায় রেসকিউ ডনে। এই সিনেমায় কাজ করার সময় তাকে আবার ২৫ কেজির মতো ওজন কমাতে হয়।

‘৩:১০ টু ইয়ামা’ এবং ‘দ্য প্রেস্টিজ’ সিনেমায় বেইল; Source: Warner Bros.

২০০৭ সালে তিনি ‘৩:১০ টু ইয়ামা’ সিনেমায় কাজ করেন এক স্ট্রাগলিং র‍্যাঞ্চারের চরিত্রে। একই বছর হিথ লেজারকেট ব্লেঞ্চেটের সাথে অভিনয় করেন ‘আই এম নট দেয়ার’ সিনেমায়। এরপর ২০০৮ সালে আবার ফিরে আসেন ব্যাটম্যান হয়ে, ‘দ্য ডার্ক নাইট’ সিনেমা দিয়ে। সিনেমাটি মুক্তি পাবার কিছুদিন আগে মারা যান সিনেমায় জোকার চরিত্রে অভিনয় করা হিথ লেজার। এই ট্র্যাজেডির মধ্য দিয়েও শিল্পসম্মত সেই সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী আয় করে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে বেইল অভিনয় করেন ‘টার্মিনেটর স্যালভেশন’ সিনেমায় ‘জন কনর’ নামের বিদ্রোহী নেতার চরিত্রে এবং ‘পাবলিক এনেমিস’ সিনেমাতে অভিনয় করেন জনি ডেপের বিপরীতে এক এফ.বি.আই এজেন্ট হিসেবে।

২০১০ সালে তিনি অভিনয় করেন ডেভিড ও’রাসেল পরিচালিত ‘দ্য ফাইটার’ চলচ্চিত্রে, সম্ভাবনাময় এক বক্সারের মাদকাসক্ত ভাইয়ের চরিত্রে। সিনেমায় তার অসাধারণ অভিনয় এবারে তাকে এনে দেয় শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার অস্কার। পরের বছর, ২০১১ সালে চীনা পরিচালক ঝ্যাং ইমুর সাথে কাজ করেন ‘ফ্লাওয়ারস অব ওয়ার’ সিনেমায়। ২০১২ সালে শেষবারের মতো পর্দায় হাজির হন ব্যাটম্যান হয়ে, ‘দ্য ডার্ক নাইট ট্রিলজি’র শেষ সিনেমা ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস’ এ।

দ্য ডার্ক নাইট রাইজেসের শুটিং সেটে বেইল এবং নোলান © Screencrush

২০১৩ সালের শুরুতে তিনি অভিনয় করেন ‘আউট অফ দ্য ফার্নেস’ সিনেমাতে এবং পরে দ্বিতীয়বারের মতো ডেভিড ও’রাসেলের সাথে কাজ করেন ‘আমেরিকান হাসল’ চলচ্চিত্রে। চরিত্রের খাতিরে তাকে এবার প্রায় বিশ কেজি ওজন বাড়াতে হয়। সে কষ্ট অবশ্য পুরোপুরি বৃথা যায়নি। সমালোচকদের প্রশংসাতো আছেই, ৮৬তম অস্কারে সিনেমাটি মনোনয়ন পায় ১০টি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে। বেইল নিজেও প্রধান চরিত্রে অস্কার এবং গোল্ডেন গ্লোব নমিনেশন পান। ২০১৫ সালে তিনি আবারও অস্কার এবং গোল্ডেন গ্লোব নমিনেশন পান ‘দ্য বিগ শর্ট’ সিনেমায় মাইকেল বারি চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে।

সর্বমোট ৪টি অস্কার এবং ৫টি গোল্ডেন গ্লোব নমিনেশন পেয়েছেন তিনি, এর মাঝে জিতে নিয়েছেন ১টি অস্কার ও ২টি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড। এছাড়া তার ঝুলিতে রয়েছে আরও ৬৩টি পুরষ্কার এবং ৮২ বারের নমিনেশন।

মেথড এক্টিংয়ে বেইল

বেইলের বডি ট্রান্সফরমেশন; Source: App al Cinema

বেইলের মেথড এক্টিংয়ের ধরনটা ভিন্নমাত্রার। সাধারণত অভিনয়শিল্পীরা যেখানে বাস্তব জীবনে চরিত্রের গভীরে ডুবে জীবনযাপন করার মাধ্যমে পর্দায় সেই চরিত্রটিকে জীবন্ত করে তোলার চেষ্টা করেন, বেইল সেখানে আরেক কাঠি সরেস। চরিত্রের খাতিরে কখনও তিনি ওজন কমিয়ে নিয়ে গেছেন ৫৫ কেজিতে, আবার কখনও সেটা বাড়িয়েছেন ৯২ কেজি পর্যন্ত। ২০০০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আমেরিকান সাইকো’ সিনেমার জন্য তাকে ওজন বাড়াতে হয়েছিল ৮১ কেজি পর্যন্ত। ২০০৩ সালে ট্রেভর রেজনিক চরিত্রের জন্য সেই ওজন কমিয়ে নিতে হয়েছে ৫৫ কেজিতে। এর পরের বছর ‘ব্যাটম্যান বিগিনস’ এর জন্য ছয় মাসে ওজন বাড়িয়ে নিয়ে গেছেন ৮৬ কেজিতে। এভাবে আরও বেশ কয়বার তাকে ওজন বাড়াতে এবং কমাতে হয়েছে।

  • আমেরিকান সাইকো: ৮১ কেজি
  • রেইন অফ ফায়ার: ৮৩ কেজি
  • দ্য মেশিনিস্ট: ৫৫ কেজি
  • ব্যাটম্যান বিগিন্স: ৮৬ কেজি
  • রেসকিউ ডন: ৬১ কেজি
  • দ্য ডার্ক নাইট: ৮৬ কেজি
  • দ্য ফাইটার: ৬৬ কেজি
  • দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস: ৯০ কেজি
  • আউট অফ দ্য ফার্নেস: ৬৬ কেজি
  • আমেরিকান হাসল: ৯২ কেজি

ক্রিশ্চিয়ান বেইল থেকে ডিক চ্যানি; Source: Screenrant

আমেরিকান হাসলের পর তিনি ওজন আবার স্বাভাবিক করে নেন, পরের দু’বছর কোনো সিনেমার জন্যে সেই ওজনের তেমন তারতম্য করতে হয়নি।

ব্রিটিশ এই অভিনেতা এখন পর্যন্ত অভিনীত সব সিনেমা হয়তো সেভাবে আলোচিত হয়নি, কিন্তু প্রত্যেকটি চরিত্রেই তার অভিনয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন দর্শক এবং সমালোচক দু’দলই। কেননা এই ভদ্রলোক যতবারই সুযোগ পেয়েছেন, অবাক করেছেন ততবারই। তার অভিনয়ের ধরনটাই যেন একেবারে ভিন্ন-কেতার; অঙ্গভঙ্গি, কথা বলার ধরন কিংবা মেথড অ্যাক্টিং, যেটার কথাই ধরুন; কোনো দিক থেকেই তার জুড়ি নেই।

বেইলের জানা-অজানা

  • বাবার চাকরির কারণে তার শৈশব কেটেছে ভিন্ন তিনটি দেশে (ইংল্যান্ড, পর্তুগাল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)।
  • ‘এম্পায়ার অব দ্য সান’ সিনেমার সেটে তার পরিচয় হয় ড্রিউ ব্যারিমোরের সাথে। বেইলের বয়স তখন তেরো এবং ড্রিউর বয়স বারো। পরে তারা দু’জনেই স্বীকার করেন যে, সেই সময় তারা পরস্পরের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন।
  • ব্যাটম্যান/ব্রুস ওয়েইন চরিত্রে অভিনয় করা প্রথম নন-আমেরিকান অভিনেতা তিনি এবং সবচেয়ে কমবয়সী অভিনেতা হিসেবে সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
  • Bateman এবং Batman তার অভিনয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দুই চরিত্র। চরিত্র দুটির নাম প্রায় একই রকম। পার্থক্য শুধু ‘e’ তে।
  • তিনি একজন চমৎকার অশ্বারোহী এবং বইয়ের পোকা।
  • সহজেই মানুষের কথার টান ধরে ফেলতে পারেন তিনি।
  • বেইল একজন পেট লাভার। তার দুটি কুকুর এবং তিনটি বিড়াল রয়েছে, সবগুলোকেই তিনি কুড়িয়ে পেয়েছেন।
  • ব্যক্তিগত জীবনে হিথ লেজার তার খুব কাছের বন্ধু ছিলেন।
  • ক্যাসিনো রয়্যাল সিনেমার জেমস বন্ড চরিত্রের জন্যে তাকে বিবেচনা করা হয়েছিল।
  • ২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো এবং ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বার বাবা হন বেইল। তার মেয়ের নাম এমেলিন এবং ছেলের নাম জোসেফ। তবে কখনও প্রকাশ্যে তিনি তার ছেলে-মেয়ের নাম নিশ্চিত করেননি।

Christian Charles Philip Bale is an English actor who is known for his intense method acting style, often transforming his body drastically for his roles. Bale is the recipient of many awards, including an Academy Award and two Golden Globes, and was featured in the Time 100 list of 2011.

Related Articles