বুনো পশ্চিমের কোনো শহরের এক গনগনে মধ্যদুপুর। ঠোঁটের ফাঁকে চেপে ধরে রাখা চুরুট, মাথায় কাউবয় হ্যাট আর চোখে ক্রুর দৃষ্টি নিয়ে ঘোড়ায় চেপে আসছেন একজন গানস্লিঙ্গার কাউবয়। ধু ধু তেপান্তরের মাঝে চলতে হঠাৎই কান ফাটানো গুলির আওয়াজে কুপোকাত করে ফেললেন শত্রুকে। ডুয়েল কিংবা মুখোমুখি লড়াইয়ের কুইক ড্র, কোনোটাতেই তাকে ঘায়েল করার উপায় নেই। এরকম রোমাঞ্চকর কোনো দৃশ্যের বর্ণনা পড়ার সময়ে অবশ্যম্ভাবীভাবে যার চেহারা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনে ভেসে উঠবে, তিনি ওয়েস্টার্ন জনরার আরেক প্রতিশব্দ, ক্লিন্ট ইস্টউড।
মজার ব্যাপার, তার নামের (Clint Eastwood) অক্ষরগুলোকে ভিন্নভাবে সাজালে যে শব্দটি পাওয়া যায় তা হলো, ‘Old West Action’।
বহুল বিস্তৃত ক্যারিয়ারজুড়ে ভিন্ন ভিন্ন বহু চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। ডলারস ট্রিলজি দিয়ে শুরু করে পরপর তিন দশকে বক্স অফিসে সেরা তারকাদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে নিজের পরিচালিত ছবিগুলো দিয়ে অস্কার বাগিয়ে নিয়েছেন দুবার। সেকারণেই ‘ব্যাক টু দ্য ফিউচার’ মুভিতে টাইম ট্র্যাভেল করে অতীতে চলে যাওয়া মার্টি ম্যাকফ্লাই নিজের পরিচয় দেয় তার নামে। ‘ব্রুস অলমাইটি’ মুভিতে সর্বক্ষমতার অধিকারী ব্রুস সবার প্রথমেই হতে চায় ক্লিন্ট ইস্টউডের অভিনীত হ্যারি ক্যালাহান। প্রভাবশালী এই ব্যক্তিত্বের জীবনের জানা-অজানা বিভিন্ন তথ্য নিয়েই আমাদের আজকের এই আয়োজন।
১৯৩১ সালের ৩০ মে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে জন্ম নেন ক্লিন্ট ইস্টউড। জন্মের সময় তার ওজন কত ছিল জানেন? ১১ পাউন্ড ৬ আউন্স! সেজন্যই শক্তিদেবতার নামানুসারে হাসপাতালে তার ডাকনাম দেয়া হয়েছিল ‘স্যামসন’। ক্যালিফোর্নিয়ার পাইডমন্টের মধ্যবিত্ত দম্পতি ক্লিন্টন ইস্টউড এবং রুথ উড নিজেদের আদরের ছেলেকে ভর্তি করতে চেয়েছিলেন সেখানকার হাই স্কুলে। কিন্তু ছন্দবদ্ধ জীবনে মনে হয় ছোটবেলা থেকেই অরুচি ছিল তার, তাই একবার নিজের সাইকেল চালিয়ে তছনছ করে দেন সেই স্কুলের খেলার মাঠ। পরে ওকল্যান্ড হাই স্কুলে পড়লেও গ্র্যাজুয়েশন করেছিলেন কি না, তার ব্যাপারেও সন্দেহ আছে অনেকের। ছোটবেলায় নাকি শখের বশে ১৩টা সাপ পুষেছিলেন তিনি।
তার এক সহপাঠী বলেছিলেন, “ক্লিন্ট ছিল এরোপ্লেনের পার্টসের বিশেষজ্ঞ। ও স্কুলের বাইরের কাজকারবারেই বেশি মজা পেত।” পরবর্তীতে অরিগন এবং টেক্সাসের বনগুলোতে অগ্নি নির্বাপণের কাজ করেন। সেসময় নাকি সিয়াটল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু কোরিয়ান যুদ্ধ শুরু হবার কারণে যুক্তরাষ্ট্র আর্মিতে যোগ দেন। অবশ্য সম্মুখসমরে যাওয়া হয়নি তার, সময় কেটেছে ফোর্ট অর্ডে সাঁতার প্রশিক্ষক এবং লাইফগার্ড হিসেবে।
সেখান থেকে ফিরে আসার সময়ে, পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকে একবার প্লেন ক্র্যাশে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন ইস্টউড। গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়ায় ক্যালিফোর্নিয়ার পয়েন্ট রেয়েসের কাছাকাছি সাগরে আছড়ে পড়ে বিমানটি। এ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে পরে ইস্টউড বলেছিলেন, "সময়টা ছিল অক্টোবর-নভেম্বর, সাগরের পানি ছিল খুবই ঠাণ্ডা। অনেক বছর পরে জানতে পেরেছিলাম যে, সেই সাগর ছিল হাঙরদের প্রজনন ভূমি। ভাগ্য ভালো যে, সেসময় একথা জানতাম না। জানলে ভয়ে সেখানেই মরে যেতাম!" ইস্টউড আর সেই বিমানচালক প্রায় তিন মাইল সাঁতরে তীরে উঠেছিলেন।
পঞ্চাশের দশকে কিছু সাধারণ মুভি আর টিভি সিরিজ বাদে বলার মতো তেমন কোনো সাফল্য ছিল না তার। সেসময় নিজের খরচ চালানোর জন্য হলিউডের আলিশান বাড়িগুলোয় সুইমিং পুল খননের কাজ করতেন তিনি।
আরভিং গ্লাসবার্গ নামে ইউনিভার্সাল স্টুডিওর এক সিনেমাটোগ্রাফার ছিলেন তার বন্ধু। তার সাথে দেখা করতে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে ক্যামেরার সামনে স্ক্রিন টেস্ট দেন ইস্টউড। আমরা সবসময়ে যেমন আত্মবিশ্বাসে টগবগ করতে দেখি তাকে, সেসময় কিন্তু তেমনটা ছিলেন না তিনি। বলা যায়, অনেকটাই নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন। ইউনিভার্সালের এক্সিকিউটিভেরা বলেছিলেন, “ও ছিল একেবারে নবীশ, কোনদিকে ফিরতে হবে, কীভাবে চলতে হবে, কিছুই বুঝছিল না।”
তারপরেও ইউনিভার্সাল স্টুডিও দেড় বছরের জন্য চুক্তি করে তার সাথে। যে কাঠখোট্টা অভিনয় কিংবা ফিসফিসিয়ে সংলাপ বলাকে ট্রেডমার্ক বানিয়েছেন তিনি, সেটা কিন্তু প্রথমদিকে সেটা একেবারেই হজম হয়নি ইউনিভার্সাল কর্তৃপক্ষের। সেকারণেই চুক্তি আর বাড়ায়নি তারা।
সেই কথা স্মরণ করতে গিয়ে আরেক অভিনেতা বার্ট রেনল্ডস বলেছিলেন,
আমি আর ক্লিন্ট একই দিনে বাদ পড়েছিলাম। স্টুডিও এক্সিকিউটভেরা বলেছিল, ওর অ্যাডাম'স অ্যাপল বেশি চোখা। এ-ও বলেছিল যে, ও কথা বেশি ধীরে বলে আর ওর ভাঙা দাঁতটা ঠিক করা লাগবে। তারপর আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে বাদ দিচ্ছেন কেন? তখন ওরা বললো, আরে! আপনি তো অভিনয়ই করতে পারেন না। আমি ক্লিন্টকে বললাম, তোমার কপাল খারাপ। আমি চাইলে অভিনয় শিখে নিতে পারব, তুমি তো চাইলেও গলার অ্যাডাম'স অ্যাপল বাদ দিতে পারবে না।
অস্কারজয়ী মুভি নির্মাতা বিলি ওয়াইল্ডারের 'দ্য স্পিরিট অফ সেন্ট লুইস' মুভিতে জেমস স্টুয়ার্টের করা চরিত্রটির ভূমিকায় অভিনয় করার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু ইউনিভার্সালের কাছে দেয়া তার স্ক্রিন টেস্ট দেখে পিছিয়ে যান বিলি। সেই টেস্টের পরে নিজের অনেক উন্নতি হয়েছে, এ নিয়ে ওয়াইল্ডারের কাছে চিঠি লিখলেও তেমন একটা কাজ হয়নি।
পঞ্চাশের দশকে তিনি কাজ করেছিলেন ‘রিভেঞ্জ অফ দ্য ক্রিয়েচার’, ‘টারান্টুলা’, ‘ডেথ ভ্যালি ডেজ’ এরকম কিছু মধ্যমমানের চলচ্চিত্রে। ১৯৫৮ সালে তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে মুভি হিসেবে বিবেচিত, ‘অ্যামবুশ অ্যাট সিমারোন পাস’ এ অভিনয় করেন তিনি। সেটিও কিন্তু একটি ওয়েস্টার্ন মুভিই ছিল। সেই ১৯৫৮ সালেই সিবিএস টেলিভিশনের সেটে এক বন্ধুর কাছে দেখা করতে যাবার সময়ে তার ভাগ্য পাল্টে যায়। সেখানকার এক কর্মকর্তার কাছে ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার ইস্টউডকে দেখে একজন সাক্ষাৎ কাউবয় মনে হয়েছিল। 'রহাইড' নামের ওয়েস্টার্ন টিভি সিরিজের রাউটি ইয়েটসের চরিত্রটি তাই সহজেই পেয়ে যান তিনি। মাথা গরম কাউবয়ের ভূমিকায় অনায়াসেই মানিয়ে নেন নিজেকে, পেয়ে যান ক্যারিয়ারের ব্রেকথ্রো। কোনো পুরস্কার না জিতলেও সেই টিভি সিরিজটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল, চলেছিল টানা আট বছর। সেখান থেকেই তার সাফল্যের শুরু। কিন্তু তারপরেও, সেসময় ত্রিশ বছর বয়সী ইস্টউডের কাছে সেই চরিত্রটি একেবারেই ছেলেমানুষী মনে হয়েছিল।
১৯৬৩ সালে সের্গিও লিওন নামের তৎকালীন অচেনা এক ইতালীয় পরিচালক তার নতুন ওয়েস্টার্ন মুভির প্রধান চরিত্রকে খুঁজছিলেন। জেমস কোবার্ন আর চার্লস ব্রনসন ছিলেন তার প্রথম পছন্দ। ‘দ্য গ্রেট এস্কেপ’ খ্যাত কোবার্ন এই মুভির জন্য ২৫,০০০ ডলার দাবি করলে প্রযোজকেরা পিছিয়ে যান। এদিকে চার্লস ব্রনসনের কাছে স্ক্রিপ্টটা একেবারেই যাচ্ছেতাই লেগেছিল। এরিক ফ্লেমিং, হেনরি ফন্ডা, রিচার্ড হ্যারিসনের মতো নামকরা অভিনেতাদেরকে প্রথমে এই চরিত্রটি করার প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু তাদের কারোর কাছেই এই স্প্যাগেটি ওয়েস্টার্নকে তেমন একটা সম্ভাবনাময় বলে মনে হয়নি।
‘রহাইড’ সিরিজের নাইস গাই ইমেজ ঝেড়ে ফেলায় বদ্ধপরিকর ইস্টউড ভিন্নধর্মী কোনো চরিত্র খুঁজছিলেন। সেসময় এজেন্সি তাকে এই কাহিনী পড়ে দেখতে বলে। পড়ামাত্র তিনি বোঝেন, স্ক্রিপ্টটি তার পছন্দের আকিরা কুরোসাওয়ার ‘ইয়োজিমবো’ ছবির কাহিনী। অ্যান্টিহিরো চরিত্রটি খুবই পছন্দ হয় তার। চুক্তিবদ্ধ হবার সময়ে পারিশ্রমিকের পাশাপাশি তাকে একটি মার্সেডিজ গাড়িও উপহার দেয়া হয়। প্রথমে তার কাঠখোট্টা অভিনয়কে এই চরিত্রের সাথে একেবারেই মানানসই মনে হয়নি সের্গিও লিওনের কাছে। ইতালীয় ভাষা জানা ইস্টউড অবশ্য অচিরেই লিওনের প্রিয়পাত্রে পরিণত হন।
নিজের স্টাইল দিয়েই বাউন্টি হান্টারের চরিত্রটিকে আইকনিক করে তোলেন তিনি। ‘ডলারস ট্রিলজি'র তিনটি মুভি ছিল: ‘এ ফিস্টফুল অফ ডলারস (১৯৬৪)’, ‘ফর এ ফিউ ডলারস মোর (১৯৬৫)’ এবং ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি (১৯৬৬)’। অজস্র ওয়েস্টার্ন মুভির ভিড়ে শীর্ষের দিকে জায়গা করে নেয়াটা কিন্তু খুব সোজা ছিল না।
রহস্যময়, চুপচাপ, কিন্তু দুর্ধর্ষ এই গানস্লিঙ্গারকে সবাই ‘দ্য ম্যান উইথ নো নেম’ বলেই চিনতো। তবে তাকে মাঝে মাঝে ব্লন্ডি বলেও ডাকা হত। গুলি করা বাদে বাকি সব কাজ বাঁহাতে করত ব্লন্ডি, তাই তার আরেক নাম ছিল মনকো। স্প্যানিশ ভাষায় এর অর্থ ‘এক হাতওয়ালা’। বাস্তব জীবনেও ইস্টউড বাঁহাতি। তিনটি মুভিতে একই পঞ্চো পরেছিলেন তিনি। এ পঞ্চোটিকে কখনো ধোপার কাছেও পাঠাননি তিনি! তার ভয়, ধুতে গেলে জিনিসটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
‘ইয়োজিমবো’ ছবির আনঅফিশিয়াল রিমেক হওয়ায় কিছুটা সমালোচনায় পড়েছিল ‘অ্যা ফিস্টফুল অফ ডলারস’। কিন্তু সেই মুভিটির কাহিনী আবার ১৯২৯ সালের মার্কিন রহস্যোপন্যাস ‘দ্য রেড হার্ভেস্ট’ এর সাথে মিলে যায়। তাই লিওনের মতে, তিনি ঘরের কাহিনীকেই ঘরে ফিরিয়ে এনেছেন!
ইস্টউডের এজেন্ট বলেছিলেন, ‘ডলারস ট্রিলজিতে অভিনয় করাটা হবে একটি ভুল পদক্ষেপ। এই ‘ভুল পদক্ষেপ (ব্যাড মুভ)’ কথাটাকে স্প্যানিশে বলে ‘ম্যালপ্যাসো’ আর সেই নামেই নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম তিনি রাখেন ম্যালপ্যাসো প্রোডাকশন হাউজ। ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্টিত হওয়া এই প্রোডাকশন হাউজ থেকেই পরবর্তীতে তার বেশিরভাগ মুভি মুক্তি পায়। সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া প্রথম মুভি ছিল ‘হ্যাং ‘এম হাই(১৯৬৮)’। ফেঁসে যাওয়া নিরপরাধ এক ব্যক্তির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ইস্টউড। দুর্দান্ত সব অ্যাকশনের কারণে ব্যাপকভাবে দর্শকপ্রিয়তা পায় ওয়েস্টার্ন মুভিটি।
ইস্টউডের আরেকটি খ্যাতনামা চরিত্র হলো ‘ডার্টি হ্যারি (১৯৭১)’ মুভির হ্যারি ক্যালাহান। সেজন্য পরিচালকের প্রথম পছন্দ ছিলেন স্টিভ ম্যাককুইন এবং ফ্র্যাঙ্ক সিনাত্রা। সদ্যই একই পুলিশের ভূমিকায় অভিনয় করার কারণে না করে দেন ম্যাককুইন। এদিকে সিনাত্রা বলেন, তিনি পিস্তল ধরতে পারবেন না। ব্যাপারটা শুনে বেশ হাস্যকর লেগেছিল ইস্টউডের কাছে, খুশিমনেই দুর্ধর্ষ এই পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। অ্যাকশন মিস্ট্রি মুভিটি ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে। মুভিটি নির্মাণের সময়ে কিছুদিনের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন পরিচালক ডন সিগেল। তার অনুপস্থিতিতে বেশ কিছুদিন পরিচালকের দায়িত্ব নেন ইস্টউড, সেসময়েই নিজের পরিচালক প্রতিভা প্রথম কাজে লাগান তিনি।
মুভির শেষে হ্যারি তার পুলিশ ব্যাজ ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এ দৃশ্যে ইস্টউডের আপত্তি ছিল। কিন্তু সিগেল বলেন, বিচার ব্যবস্থার দুর্নীতির প্রতি হতাশা থেকেই হ্যারি একাজ করেছে। সেই মুভির ভিলেন স্করপিওর কাহিনী সাজানো হয়েছিল সত্যিকারের খুনি জোডিয়াক কিলারের আদলে। আবার সেখানে দেখানো অপহরণের আদলে ১৯৮১ সালে একটি কপিক্যাট ক্রাইমও সংঘটিত হয়েছিল। পরবর্তীতে মুক্তি পাওয়া ডার্টি হ্যারি সিরিজের অন্যান্য মুভিগুলো হলো: ‘ম্যাগনাম ফোর্স (১৯৭৩)’, ‘দ্য ইনফোর্সার (১৯৭৬)’, ‘সাডেন ইমপ্যাক্ট (১৯৮৩)’, দ্য ডেড পুল (১৯৮৮)’।
১৯৭১ সালে মুক্তি পায় তার পরিচালিত প্রথম মুভি, সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ঘরানার ‘প্লে মিস্টি ফর মি’। একই বছর ডন সিগেলের পরিচালনায় অভিনয় করেন গথিক মিস্ট্রি জনরার ‘দ্য বিগাইল্ড’ মুভিটিতে। 'ফায়ারফক্স (১৯৮২)' নামের অ্যাকশন অ্যাডভেঞ্চারে সোভিয়েত ইউনিয়নে মিশনে যাওয়া এক পাইলটের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ডন সিগেলের সাথে ‘ডার্টি হ্যারি’ এবং ‘দ্য বিগাইল্ড’ ছাড়াও অভিনয় করেছেন ‘কুগানস বাফ’, ‘টু মিউলস ফর সিস্টার সারা’ এবং প্রিজন থ্রিলার ‘এস্কেপ ফ্রম আলক্যাত্রাজ’ মুভিতে। বিশেষ করে শেষের মুভিটি তার ক্যারিয়ারের সেরা কাজগুলোর একটি। পাশাপাশি ওয়েস্টার্ন অ্যাকশন ভক্তদের জন্য কাজ করে গেছেন নিয়মিতই। ‘হাই প্লেনস ড্রিফটার (১৯৭৩)’, ‘দ্য আউটল জোসি ওয়েলস (১৯৭৬)’, ‘পেল রাইডার (১৯৮৫)' মুভিগুলো কোনোটিই কোনোটির চাইতে কম রোমাঞ্চকর নয়।
ইস্টউডের জনপ্রিয় মুভিগুলোর তালিকায় 'দ্য এইগার স্যাঙ্কশন (১৯৭৫)' এর নাম আসবে না। মাত্র তিনদিন পাহাড়ে চড়ার কোর্স করেই এই মুভির ভয়ানক সব স্টান্টে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। একটি বিপজ্জনক দৃশ্যের প্রয়োজনে মাটি থেকে ১,০০০ ফুট উচ্চতায় থাকা অবস্থায় সেফটি লাইন কেটে কেবলমাত্র একটি দড়ি দিয়ে ঝুলে শুটিং করেছিলেন তিনি।
১৯৯০ সালে তিনি একজন পুলিশের ভূমিকায় অভিনয় করেন ‘দ্য রুকি (১৯৯০)’ নামক অ্যাকশন ড্রামাতে। নবীশ পুলিশ চার্লি শিনের সাথে পার্টনার হয়ে বিভিন্ন অপরাধ দমন করতে দেখা যায় তাকে। এছাড়াও ‘ইন দ্য লাইন অফ ফায়ার (১৯৯৩)' মুভিতে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তাপ্রধানের ভূমিকায় দেখা যায় তাকে। সেই মুভিতে আরো ছিলেন জন মালকোভিচ, প্রেসিডেন্টের গুপ্তঘাতকের ভূমিকায়।
'আনফরগিভেন (১৯৯২)' মুভির স্ক্রিপ্ট ক্লিন্ট ইস্টউডের হাতে এসেছিল ১৯৭৬ সালে। কিন্তু এর কাজে হাত দেননি তিনি। কারণ তার ইচ্ছা ছিল, এই মুভির মাধ্যমেই নিজের ওয়েস্টার্ন ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটানো। ব্যাপারটি কতটা কাব্যিক, তা এই মুভির ভক্তমাত্রই বুঝতে পারবেন। অবসরপ্রাপ্ত গানস্লিঙ্গারের ভূমিকায় ইস্টউড আরেকটি আইকনিক মুভি উপহার দেন, পেয়ে যান জীবনের প্রথম অস্কারও। সেই মুভিতে আরো ছিলেন জেন হ্যাকম্যান এবং তার প্রিয় বন্ধু মরগ্যান ফ্রিম্যান।
‘ব্রিজেস অফ ম্যাডিসন কাউন্টি’ উপন্যাসটা পড়ার পরে তার কাছে মনে হলো, মূল চরিত্র কোনো একজন নারীকে দিয়ে করানো উচিত। যেই ভাবা সেই কাজ, এর ভূমিকায় নিয়ে নিলেন মেরিল স্ট্রিপকে। ১৯৯৫ সালের এই মুভিটি বানাতে বানাতে তার মনে হয়েছিল, “এ ধরনের রোমান্টিক মুভি বানানো আসলেই বেশ কঠিন। মারামারি আর খুনোখুনির কাহিনীতে ফিরে যেতে তর সইছে না।”
এরপর কিছুসময় ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে গেলেও ২০০৩ সালে তিনি দুর্দান্তভাবে প্রত্যাবর্তন করেন ৬টি বিভাগে অস্কার মনোনয়ন পাওয়া ‘মিস্টিক রিভার’ দিয়ে। তিন বন্ধুর কৈশোরে ঘটে যাওয়া এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার সাথে তাদের মাঝবয়সে এসে ঘটা আরেকটি দুর্ঘটনা একসূত্রে গেঁথে যায় এই মিস্ট্রি থ্রিলার মুভিতে। শন পেন এবং টিম রবিন্সকে অস্কার জিতিয়ে দেয়া মুভিটিতে আরো ছিলেন কেভিন বেকন, মার্সিয়া গে হার্ডেন, লরেন্স ফিশবার্ন, লরা লিনি প্রমুখ।
পরের বছরে পরিচালক হিসেবে নিজের দ্বিতীয় অস্কার জিতে নেন ‘মিলিয়ন ডলার বেবি’র মাধ্যমে। ৭৪ বছর বয়সে অস্কার জিতে গড়ে ফেলেন সবচেয়ে বেশি বয়সী পরিচালক হিসেবে অস্কার জেতার রেকর্ড। হিলারি সোয়্যাঙ্ক এবং মরগান ফ্রিম্যানের পাশাপাশি তিনি নিজেও অভিনয় করেছিলেন এখানে। ৪টি ক্যাটাগরিতে অস্কার জেতা মুভির কাহিনী আবর্তিত হয়েছিল এক নবীশ বক্সার এবং তার ট্রেনারকে নিয়ে। ভয়ানক এক ঘটনায় অচিরেই অবশ্য স্পোর্টস ড্রামাটির কাহিনীর মোড় পাল্টে যায়। ইস্টউডের মতে, “এটা কোনো বক্সিং মুভি না, এটা বাবা আর মেয়ের ভালোবাসার মুভি। ওয়ার্নার ব্রাদারস অবশ্য চাচ্ছিল ডার্টি হ্যারি সিরিজের নতুন পার্ট বানাতে!”
২০০৬ সালে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধভিত্তিক দুটি মুভি একই সাথে মুক্তি দেন। জাপানের আইয়ো জিমা দ্বীপের যুদ্ধটি জাপানিজদের চোখ দিয়ে দেখানো হয় ‘লেটারস ফ্রম আইয়ো জিমা’ মুভিতে, আর আমেরিকানদের পক্ষ থেকে দেখানো হয় ‘ফ্ল্যাগস অফ আওয়ার ফাদার’ মুভিতে। মূলত যুদ্ধবিরোধী মেসেজ দেয়াই ছিল ইস্টউডের উদ্দেশ্য।
২০০৮ সালে তিনি সত্য ঘটনার ওপর অবলম্বন করে নির্মাণ করেন ‘চ্যানজেলিং’। সন্তান হারানো এক মায়ের ভূমিকায় দারুণ অভিনয় করে অস্কার মনোনয়ন পেয়ে যান অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ইস্টউডের কাছে তার পারফরম্যান্স এতটাই ভালো লেগেছিল যে তিনি বলেছিলেন, জোলি তাকে ক্যাথরিন হেপবর্ন কিংবা ইনগ্রিড বার্গম্যানকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
একই বছর আসে ‘গ্র্যান টরিনো’। মুভির মূল চরিত্র ওয়ার ভেটেরান ওয়াল্টের ভূমিকায়ও অভিনয় করেন তিনি। একদিন ওয়াল্টের গাড়ি চুরি করতে আসে এক এশিয়ান কিশোর। রাগের মাথায় তাকে বন্দুক নিয়ে তাড়া করলেও পরে ঠিকই তার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায় তার।
২০০৯ সালে তিনি উপহার দেন তার পরিচালক ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মুভি, বায়োগ্রাফিকাল স্পোর্টস ড্রামা ‘ইনভিক্টাস’। মরগ্যান ফ্রিম্যান এই মুভিতে দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তী নেলসন ম্যান্ডেলার ভূমিকায় অভিনয় করেন। আর ম্যাট ডেমন অভিনয় করেন ১৯৯৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে রাগবি বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়কের ভূমিকায়।
২০১১ সালে তার পরিচালনায় আসে বায়োগ্রাফিকাল ড্রামা ‘জে এডগার’। এফবিআই প্রধান জে এডগার হুভারের ভূমিকায় অভিনয় করেন লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও। তার ব্যাপারে ইস্টউড বলেন, “লিওনার্দো চাইলেই মেকানিক্যাল মুভি করে বহু আয় করতে পারে। কিন্তু সে চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসে।”
এরপর আরো দুটি বায়োগ্রাফিক্যাল মুভি তিনি উপহার দেন আমাদেরকে, ২০১৪ সালের ‘আমেরিকান স্নাইপার’ এবং ২০১৬ সালের ‘সালি’। ‘আমেরিকান স্নাইপার’ মুভিতে আমেরিকান সেনা ক্রিস কাইলের ভূমিকায় অভিনয় করে দারুণ প্রশংসিত হন ব্র্যাডলি কুপার। ফ্যান্টাসি সুপারহিরো মুভিদের ছাড়িয়ে সেই বছরের আমেরিকান বক্স অফিসের শীর্ষে ছিল এই মুভিটি। তবে ইরাক যুদ্ধে আমেরিকান সেনাদের নির্মম আচরণকে না দেখিয়ে দর্শকের কাছে তাদেরকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে উপস্থাপন করার অভিযোগও উঠেছিল মুভিটির বিরুদ্ধে।
টম হ্যাংক্সের ‘সালি’ মুভিটিও দর্শক সমালোচকের মাঝে দারুণভাবে সাড়া ফেলে। হাডসন নদীতে জরুরি অবতরণের মাধ্যমে দেড় শতাধিক যাত্রীকে বাঁচিয়ে দেয়া পাইলট সালেনবার্গের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন হ্যাংক্স।
২০১৮ সালে তার পরিচালনায় আসে প্যারিস বোমা হামলার ওপর কেন্দ্র করে নির্মিত ‘১৫:১৭ টু প্যারিস’ এবং ‘ক্রাইম ড্রামা ‘দ্য মিউল’। ‘দ্য মিউল’ মুভিটি পরিচালনার পাশাপাশি এই নব্বই বছর বয়সে এসে ড্রাগ পাচারকারীর ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে।
এই নব্বই বছরে এসেও ইস্টউডের সুঠাম নিরোগ শরীর দেখে অবাক হন অনেকে। এর পেছনে কিন্তু খুব সাদামাটা ফর্মুলাই কাজে লাগিয়েছেন তিনি। নিজের ফিটনেসকে খুবই গুরুত্ব দেন তিনি। নিয়মিত সকালে উঠে ইলিপটিক্যাল এক্সারসাইজ করেন তিনি। এছাড়াও সন্ধ্যায় কার্ডিও ব্যায়াম এবং স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করা বাদ দেন না কখনোই। এছাড়াও তিনি দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে যোগব্যায়াম করার মাধ্যমে নিজের দুশ্চিন্তাকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন সবসময়।
ষাটের দশকে যখন ড্রাগের রমরমা ব্যবসা প্রথম শুরু হয়েছিল, তখন কিন্তু তরুণ ইস্টউড ঠিক হলিউডের প্রাণকেন্দ্রেই থাকতেন। কিন্তু কোনো ধরনের ড্রাগকেই ধারেকাছে ঘেঁষতে দেননি তিনি। শুধু তা-ই না, ওয়েস্টার্ন ছবিগুলোয় হরহামেশাই সিগার ফুঁকতে দেখা গেলেও বাস্তব জীবনে ইস্টউড একজন অধূমপায়ী। সের্গিও লিওনের বারবার টেক নেয়া একেবারে অপছন্দ ছিল তার, সেই সাথে অপছন্দ ছিল সিগারেট খাওয়া। তাই তিনি বলতেন, “এবারের টেকে যদি না হয়, তাহলে কিন্তু আমি বমি করে দেবো!”
সেজন্যই হয়তো ক্যামেরার পেছনে থাকা ক্লিন্ট ইস্টউড অন্য আর দশজন পরিচালকের থেকে একেবারেই অন্যরকম। বেশিরভাগ সময়ে সিনেমার দৃশ্য এক বা দুই টেকেই ওকে করে দেন। একবার অভিনেতা ম্যাট ডেমন তাকে আরেকবার টেক নিতে বললে তিনি রেগে উঠে বলেন, "কেন? সবার সময় নষ্ট করার জন্য?" এছাড়াও তিনি কখনোই অ্যাকশন কিংবা কাট বলেন না। তার মতে, "অ্যাকশন বললে শুধু মানুষ কেন, ঘোড়ারাও নার্ভাস হয়ে যায়।" কাজ শেষ হলে বলে দেন “যথেষ্ট হয়েছে!”
নিজের ছবির সেটে কখনো অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরদের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে না দিয়ে নিজেই সবকিছুর নেতৃত্ব দেন তিনি। মুভির প্রযোজক কিংবা স্টুডিও এক্সিকিউটিভদেরকে নিজের সিনেমার ব্যাপারে কখনো নাক গলাতে দেন না তিনি। একবার স্ক্রিপ্ট লেখা শেষ হলে কখনোই তার মধ্যে কোনো কিছু পাল্টাতে দেন না। এছাড়াও তিনি ইম্প্রুভড টেক দিতে উৎসাহিত করেন। ফিল্মের ভাষায় একে বলে ‘ওয়াইল্ড টেক’। “আমি প্রথমবার সংলাপ দেবার সময়ে অভিনেতার অভিব্যক্তি দেখতে চাই। যদি তাতে কাজ হয়ে যায়, তাহলে তো হলোই। এভাবেই মুভি বানানোর আমেজ চলে আসে কলাকুশলীদের মধ্যে।”
নিজের গোছানো কাজের জন্যও বরাবরেই পরিচিত তিনি। মুভির বাজেট আর শিডিউল সবসময়েই সীমার মধ্যেই থাকে সেজন্য। এমনকি, ‘অ্যাবসলুট পাওয়ার’ মুভির কাজ শিডিউলের বেশ আগেই শেষ করে ফেলেছিলেন। একবার 'অ্যা পারফেক্ট ওয়ার্ল্ড' মুভি বানানোর সময়ে কেভিন কস্টনার আসতে একটু দেরি করছিলেন। তখন তার মাঠ দিয়ে হেঁটে আসার দৃশ্য একজন এক্সট্রাকে দিয়েই শুটিং করে ফেলেন ইস্টউড। কস্টনার অবশ্য ব্যাপারটায় খুশি হননি।
ইস্টউডের ফিলোসফি অনুযায়ী,
পরিচালকের অতি-বিশ্লেষণ যেকোনো মুভিকে নষ্ট করে দিতে পারে। একে বলে ‘প্যারালাইসিস অফ অ্যানালাইসিস’। পরিচালক যদি আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ না করে, তাহলে বাকি সবাই দ্বিধায় পড়ে যেতে বাধ্য। আমার কাছে ফিল্ম বুদ্ধিনির্ভর নয়, বরং আবেগনির্ভর একটা মাধ্যম।
তার পরিচালিত মুভিতে অভিনয় করে মোট এগারোজন অভিনেতা অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তারা হলেন জেন হ্যাকম্যান, মেরিল স্ট্রিপ, শন পেন, টিম রবিন্স, মার্সিয়া গে হারডেন, হিলারি সোয়্যাংক, মরগান ফ্রিম্যান, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, ম্যাট ডেমন, ব্র্যাডলি কুপার এবং তিনি নিজে। এদের মাঝে অস্কার জিতে নেন পাঁচজন- 'আনফরগিভেন' এর জন্য জেন হ্যাকম্যান, ‘মিস্টিক রিভার’ এর জন্য শন পেন এবং টিম রবিন্স, ‘মিলিয়ন ডলার বেবি’র জন্য মরগান ফ্রিম্যান এবং হিলারি সোয়্যাঙ্ক।
তার প্রিয় অভিনেতাদের তালিকায় আছেন জেমস ক্যাগনি, গ্যারি কুপার, হামফ্রে বোগার্ট, রবার্ট মিচাম এবং জেমস স্টুয়ার্ট। প্রিয় মুভিগুলোর মধ্যে রয়েছে 'দ্য থার্টি নাইন স্টেপস (১৯৩৫)', 'সার্জেন্ট ইয়র্ক (১৯৪১)', 'দ্য অক্স-বো ইনসিডেন্ট (১৯৪৩)', চ্যারিয়টস অফ ফায়ার (১৯৮১)'।
চারবার অস্কারজয়ী ইস্টউডের ঝুলিতে আছে হলিউডের খ্যাতনামা সব চলচ্চিত্র। তবে তার যে মুভিটি বক্স অফিসে সবচেয়ে বেশি আয় করেছে তার নাম হলো 'এভরি হুইচ ওয়ে বাট লুজ' এবং এর সিক্যুয়েল 'অ্যানি হুইচ ওয়ে ইউ ক্যান'। শিশুতোষ অ্যাডভেঞ্চার মুভিগুলোর কাহিনী ছিল ক্লাইড নামের এক ওরাংওটাংকে নিয়ে।
জীবনে দুবার বিয়ে করেছেন ইস্টউড। তবে ছয়জন নারীর সাথে আট সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। তারা হলেন লরি, কিম্বার, কাইল, অ্যালিসন, স্কট, ফ্রান্সেসকা, মরগান এবং ক্যাথরিন ইস্টউড। এদের মধ্যে একমাত্র স্কট ইস্টউডই অভিনয়ের পথে পা মাড়িয়েছেন। 'দ্য লংগেস্ট রাইড', 'সুইসাইড স্কোয়াড'সহ বিভিন্ন মুভিতে দেখা গেছে তাকে।
রাফ অ্যান্ড টাফ ইস্টউডকে দেখে গায়ক মনে না হওয়াটাই স্বাভাবিক। তিনি যে একজন প্রতিভাবান জ্যাজ পিয়ানিস্ট, এ কথা শুনলে হয়তো অনেকেই অবাক হবেন। 'ব্রংকো বিলি' মুভির জন্য মারলে হ্যাগার্ডের সাথে গাওয়া ‘বাররুম বাডিস’ গানটি ১৯৮০ সালে কান্ট্রি মিউজিকে চার্টের শীর্ষস্থান দখল করেছিল। 'রহাইড (১৯৬৩)', 'পেইন্ট ইওর ওয়াগন (১৯৬৯)', 'প্লে মিস্টি ফর মি (১৯৭১)'সহ নিজের বিভিন্ন প্রজেক্টেও গান গেয়েছেন তিনি। নিজের বেশিরভাগ মুভির মিউজিকের কাজই তার করা।
ক্রিস্টোফার রিভের আগে 'সুপারম্যান (১৯৭৮)' মুভিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ এসেছিল ক্লিন্ট ইস্টউডের সামনে। কিন্তু এককথায় না করে দেন তিনি। তার ভাষ্যে, "সুপারম্যান? নাহ, সেটা আমার জন্য নয়। এমন না যে, সুপারহিরো মুভির ব্যাপারে অরুচি আছে আমার, কিন্তু এসব চরিত্র ঠিক আমার সাথে যায় না।" সিদ্ধান্তটি ঠিক ছিল নিঃসন্দেহে, ম্যান অফ স্টিলের ভূমিকায় রিভ ছিলেন অনন্য। আর ইস্টউডকে কেপ আর টাইটস পরা অবস্থায় কল্পনা করতেও হাস্যকর ঠেকছে!
এছাড়াও, ১৯৬৭ সালে শন কনারি যখন জেমস বন্ড চরিত্র আর করবেন না বলে জানান, তখন প্রযোজকদের নজর ছিল ক্লিন্ট ইস্টউডের দিকেই। বেশ লোভনীয় প্রস্তাব পাবার পরেও টাইপক্যাস্ট হবার শঙ্কা থাকায় তিনি না করে দেন তাদেরকে। তার ছেড়ে দেয়া আরেকটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র হলো ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার এপিক ওয়ার মুভি ‘অ্যাপোক্যালিপ্স নাউ’। এই মুভিতে মার্টিন শিনের করা চরিত্রটি ইস্টউডকে করতে বলা হলে তিনি সোজা বলে দেন, “ফিলিপাইনের জঙ্গলের মধ্যে ১৬ সপ্তাহ ধরে শুটিং করতে পারব না আমি।” বাস্তবে মুভিটির শুটিং শেষ করতে সময় লেগেছিল ৩৪ সপ্তাহ! দেশের বাইরে যাওয়া লাগবে বলে ‘সরসেরার (১৯৭৭)’ মুভিটি করার প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন তিনি। এছাড়াও 'ডাই হার্ড সিরিজ' যে বইয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত, সেই বইয়ের স্বত্ত্ব ছিল ইস্টউডের কাছে। জন ম্যাকক্লেইনের ভূমিকায় অভিনয় করার ইচ্ছা থাকলেও পরে আর তা হয়ে ওঠেনি। যে চরিত্রের জন্য আজ আমরা সিলভেস্টার স্ট্যালোনকে একনামে চিনি, সেই ‘র্যাম্বো’র জন্যও ভাবা হয়েছিল তাকে।
১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ার সমুদ্রতীরবর্তী শহর কারমেল বাই দ্য স্যার মেয়র ছিলেন তিনি। মজার ব্যাপার, সেই শহরের রাস্তায় আইসক্রিম বিক্রি করা নিষিদ্ধ ছিল। মেয়র হয়ে প্রথমেই সেই প্রাচীন আইন বদলে ফেলেন তিনি।
বিমান দুর্ঘটনার শিকার হলেও ফ্লাইট ফোবিয়া কখনোই ছিল না তার। উল্টো বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৯৮৯ সালে পাইলটের লাইসেন্স পর্যন্ত বাগিয়ে নেন তিনি। সেই থেকে বিভিন্ন জায়গায় তিনি নিজেই হেলিকপ্টার চালিয়ে যাতায়াত করেন, ট্র্যাফিক জ্যাম এড়ানোর জন্য।
হাই স্কুল পাশ করা নিয়ে সন্দেহ থাকলে কী হবে, একটা সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি কিন্তু ঠিকই আছে তার। ২০০০ সালে ওয়েসলেইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এটি পান তিনি। ২০০১ সালে গরিলাজ নামের একটি ব্যান্ড তাকে নিয়ে একটি গান লিখে ফেলে। অবধারিতভাবেই গানটির নাম ছিল ‘ক্লিন্ট ইস্টউড’। ফ্রান্সের সাথে সরাসরি কোনো সম্পর্ক না থাকলেও ২০০৭ সালে সেখানকার সর্বোচ্চ সম্মাননা লিজিয়ন অফ অনার পান ইস্টউড। তার কাজ সবসময়েই সেখানে বেশ ভালো সাড়া ফেলত, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লপ হওয়া মুভিগুলোও।
একই ছবিতে অভিনয় এবং পরিচালনার জন্য অস্কার মনোনয়ন পাওয়া সাতজনের মধ্যে একজন তিনি। অন্যেরা হলেন অরসন ওয়েলস, লরেন্স অলিভিয়ের, উডি অ্যালেন, ওয়ারেন বেটি, কেনেথ ব্র্যানাং এবং রবার্তো বেনিনি। তার প্রথম দিককার মুভিগুলোতে ভায়োলেন্সের ছড়াছড়ি ছিল। কিন্তু পরের দিকে এসে তিনি নির্মাণ করেছেন ‘আনফরগিভেন’, ‘অ্যা পারফেক্ট ওয়ার্ল্ড’, ‘অ্যাবসলুট পাওয়ার’, ‘মিস্টিক রিভার’, ‘মিলিয়ন ডলার বেবি’, ‘গ্র্যান টরিনো’ এর মতো মুভিগুলো, যেগুলোয় ভায়োলেন্সের ভয়ানক পরিণাম দেখানো হয়েছে।
ইস্টউডকে অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, "এই বয়সেও তোমাকে এত ভালো দেখাচ্ছে কীভাবে?" এর প্রশ্নে তার জবাব একটাই, "আমি বাইরের বুড়ো মানুষটাকে কখনো মনের ভেতরে ঢুকতে দেই না।"
জীবনের শুরুর দিকে নিজের কাজের তেমন কোনো থই পাচ্ছিলেন না তিনি। নিজের স্বকীয়তাকে বজায় রেখেই কিন্তু সেরা বহুমুখী প্রতিভাদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। যে কাঠখোট্টা অভিনয়ের জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন, তাকেই এখন অনেকে অনুকরণ করছে। বিনোদন দিয়ে যেমন দর্শকের মন জয় করেছেন, তেমনি শিল্পের সমঝদার হয়ে সমালোচকদের প্রশংসাও অর্জন করেছেন। এভাবেই আমাদের এই ‘ম্যান উইথ নো নেম’ দশকের পর দশকজুড়ে প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন হলিউডে।
This article is in Bengali Language. It is the biography of legendary hollywood actor/director Clint Eastwood. For references please check the hyperlinked texts in the article.
Source:
1. Clint Eastwood - Biography
2. Clint Eastwood - Britannica
3. Biography of Clint Eastwood: Actor and Director - ThoughtCo
4. 42 Sharp Shooting Facts About Clint Eastwood - Factinate
Featured Image: Universal Pictures