Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফ্রেডারিক ফরসাইথ: ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম থেকে ইনভেস্টিগেটিভ উপন্যাস

ভক্তদের সব সময়ই একটা বিশ্বাস ছিল যে, ব্রিটিশ বেষ্ট সেলার ঔপন্যাসিক ফ্রেডারিক ফরসাইথ বাস্তবেও ছিলেন একজন গোয়েন্দা, কিন্তু বরাবরই তিনি ব্যাপারটিকে নাকচ করে দিয়েছেন। কিন্তু অবশেষে ঠিক ৪৫ বছর পর তিনি তার আত্নজীবনী ‘The Outsider: My life in intrigue’-তে স্বীকার করলেন যে তিনি আসলেই ব্রিটিশ সামরিক গোয়েন্দাসংস্থা MI6 এর একজন এজেন্ট ছিলেন।

ভক্তদের অনুমানই সঠিক ছিলো, কারণ ফ্রেডারিকের উপন্যাসে থাকে অনেক ফ্যাক্ট এবং ইনফরমেশন। যেখানে থাকে ইতিহাস ও স্থানকালের নির্ভুল বর্ণনা, যেটা শুনে বাস্তব বলেই মনে হয়। আর এতোটা বাস্তব সম্মত বর্ণনা তখনই সম্ভব যদি লেখকের নিজেরই গোয়েন্দাগিরির অভিজ্ঞতা থাকে। ৭০ এর দশকে ফ্রেডারিকের বইগুলোতে গুপ্তচরবৃত্তির একটা বড় ভূমিকা থাকতো, যার মধ্যে রয়েছে “দি ফোর্থ প্রটোকল” এবং “দি ডেভিলস অলটারনেটিভ”, যেগুলো থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া যেতো যে তার বাস্তব জীবনেও গুপ্তচরবৃত্তির অভিজ্ঞতা থাকতে পারে।

কর্ম জীবন শুরু করেন রয়েল এয়ার ফোর্সের জেট পাইলট হিসেবে; Source: Frederick forsyth’s facebook page

বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী ফ্রেডারিক ফরসাইথ। ছোটবেলায় তার স্বপ্ন ছিলো জঙ্গী বিমানের পাইলট এবং আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা হওয়া, দুটো ইচ্ছাই তার পূরণ হয়েছিলো। ইংল্যান্ডের অ্যাশফোর্ড শহরে ১৯৩৮ সালে জন্ম, তার বাবা ছিলেন চামড়ার ব্যবসায়ী। স্পেনের ইউনিভার্সিটি অব গ্রানাডা থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি যোগ দেন ব্রিটিশ রয়েল এয়ারফোর্সে। সেখানে তিনি জঙ্গী বিমানের পাইলট হন। ন্যাশনাল সার্ভিস সমাপ্ত করার পরে ১৯৬১ সালে তিনি রয়টার্সে যোগ দেন সাংবাদিক হিসেবে, এরপর ১৯৬৫-তে যোগ দেন বিবিসিতে কূটনৈতিক সংবাদদাতা হিসেবে। বিবিসির সংবাদদাতা হিসেবে তিনি ১৯৬৭ সালে নাইজেরিয়ার বায়াফ্রাতে যান সেখানে চলমান গৃহযুদ্ধ কভার করতে, যে যুদ্ধে ব্রিটিশ সরকার পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু সেই যুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের কূটনৈতিক ও সামরিক ব্যর্থতা বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশ পায়।

তৎকালীন ভিয়েতনামে চলমান মার্কিন আগ্রাসনের জন্যে সারা বিশ্বে আমেরিকা সমালোচিত হচ্ছিল। ফলে একই সমালোচনা এড়াতে ব্রিটিশ সরকারের অনুদানে চালিত বিবিসি ফ্রেডারিককে নাইজেরিয়া থেকে ফিরে আসতে বলে, যদিও তিনি চাচ্ছিলেন রিপোটিং চালিয়ে যেতে। ফ্রেডারিক বুঝতে পারছিলেন যে “নিউজ ম্যানেজমেন্ট” হচ্ছে। তিনি ঘৃণাভরে সেই নির্দেশ অমান্য করেন এবং বিবিসির চাকরী ছেড়ে দিয়ে ফ্রীল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে আরো দুই বছর নাইজেরিয়া থেকে যান যুদ্ধ কভার করতে। রণাঙ্গনে পার করা এই দুই বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি ১৯৬৯ সালে প্রকাশ করেন তার প্রথম বই “দি বায়াফ্রা ষ্টোরি”।

ফ্রেডারিক ফরসাইথের অন্যতম জনপ্রিয় তিন উপন্যাস

মহাবিশ্বে শুধু দুই ধরনের মানুষ আছে, শিকার এবং শিকারী। এর মধ্যে সে-ই বেঁচে থাকে যে শক্তিশালী, ফ্রেডারিকের উপন্যাসে বার বার এই কথাই ঘুরেফিরে আসে। উপন্যাস লিখতে ফ্রেডারিক ফরসাইথ প্রচুর সময় ব্যয় করেন রিসার্চে। তার প্রত্যেকটি উপন্যাসের পেছনে থাকে অত্যন্ত সাবধানী অনুসন্ধান। ফ্যাক্টস খুঁজে বের করতে তিনি এতো গভীরে চলে যান যেমনটা চলে যান গোয়েন্দারা কোনো রহস্য উন্মোচনের জন্যে।

‘মহাবিশ্বে শুধু দুই ধরনের মানুষ আছে, শিকার এবং শিকারী’ এই কথাই ঘুরেফিরে উঠে আসে তার লেখায়; Source: Terence Spencer

১৯৬২ সালে ফরাসি রাষ্ট্রপতি চার্লস দ্য গলের উপর ঘটে যাওয়া হত্যাচেষ্টা তিনি সাংবাদিক হিসেবে কাভার করেন। এ ঘটনা নিয়ে তিনি তার সাংবাদিকতার প্রথম দিকে অনেক সময় ব্যয় করেন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার যে কৌশল তিনি রিপোর্টিংয়ে ব্যবহার করতেন, সেই একই কৌশল প্রয়োগ করে তিনি লিখলেন “দি ডে অফ দি জ্যাকেল”। যেখানে ফরাসি বিদ্রোহী গুপ্ত সংগঠন ওএএস এর ১৯৬২ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট চার্লস দ্যা গল এর উপর চালানো হত্যাচেষ্টার বাস্তব কাহিনীকে তিনি ফিকশনে রূপান্তরিত করেন।

তার অনেকগুলো উপন্যাস পরবর্তীতে মুভি এবং টিভি সিরিয়ালে রূপান্তরিত হয় যার মধ্যে রয়েছে দি ডে অব দি জ্যাকেল, দি অডেসা ফাইল, দি ডগস অব ওয়ার, দি ফোর্থ প্রোটোকল, আইকন ইত্যাদি। তিনি হলিউডের অনেক মুভিতে চিত্রনাট্য লেখক হিসেবেও কাজ করেছেন। চিত্রনাট্য লেখক হিসেবে ফ্রেডারিক ফরসাইথ অনেক উচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্তদের মধ্যে একজন। এছাড়াও তিনি ইংরেজি দৈনিক দি ডেইলি এক্সপ্রেসে কলাম লেখেন এবং মাঝেমাঝে টিভি টকশোতে রাজনৈতিক বিষয়ে আলাপচারিতায় অংশ নেন।

দি ডে অব দি জ্যাকেল

২২ আগষ্ট ১৯৬২ সালে ফরাসি সামরিক বাহিনীর ভেতরকার এক গুপ্ত সংগঠন OAS (Organization Armée Secrète) তৎকালীন প্রেসিডেন্ট চার্লস দ্য গলকে হত্যার চেষ্টা চালায়। দলনেতা ফরাসি এয়ারফোর্স কর্ণেল জ্যঁ বাস্তিন থায়েরির নেতৃত্বে একদল সেনাসদস্য মেশিনগান সজ্জিত হয়ে প্রেসিডেন্টের গাড়ীবহরে হামলা করে। উদ্দেশ্য ছিল প্রেসিডেন্টকে হত্যা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। কিন্তু OAS এর ইতিপূর্বে করা অসংখ্য প্রচেষ্টার মতো এটিও ব্যর্থ হয়। কিন্তু এই ব্যর্থতাই দুয়ার খুলে দেয় আরেক নতুন ষড়যন্ত্রের।

এমন এক পটভূমি নিয়েই শুরু হয় ফ্রেডারিক ফরসাইথের প্রথম বেষ্ট সেলার উপন্যাস “দি ডে অব দি জ্যাকেল”। মূলত ২২ আগষ্ট ১৯৬২ সালে প্রেসিডেন্ট গলের উপর ঘটে যাওয়া হামলা এবং এই ঘটনার আগের ইতিহাসকে উপজীব্য করে ফ্রেডারিক বাস্তব ঘটনার সূত্র ধরে উপন্যাস রচনা করেন, যা বিশ্বে থ্রিলার ভক্তদের এক নতুন জমজমাট কাহিনী উপহার দেয়।

সাংবাদিকতায় পাওয়া তথ্য দিয়ে লেখা শুরু করলেন তার প্রথম উপন্যাস ‘দি ডে অব জ্যাকেল’; Source: Getty Image

ফ্রেডারিকের এই বইকে বলা হয় গুপ্তহত্যাকারীদের জন্যে অবশ্যপাঠ্য এক পাঠ্যবই। কারণ উপন্যাসটিতে রয়েছে কিভাবে এক গুপ্তঘাতক অত্যন্ত কৌশলের সাথে সবরকম নিরাপত্তার জাল এড়িয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী পর্যন্ত পৌঁছে যায় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে। অস্ত্র সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রচুর ছদ্মবেশ নিয়ে পুলিশ গোয়েন্দাদের বারবার বোকা বানিয়ে উপন্যাসের মূল চরিত্র “জ্যাকেল” এগিয়ে চলে অপ্রতিরোধ্যভাবে, ঠিক যেন তাকে থামানোই সম্ভব নয়। এ উপন্যাসটি প্রকাশের সাথে সাথেই বেষ্ট সেলার হয় এবং ফ্রেডারিক পান “এডগার অ্যালেন পো এওয়ার্ড”, বইটি বিবিসির “The big read” এর তালিকাভুক্তও হয়।

The day of the jackal (1973) চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য

বইটি যুগে যুগে অনেক গুপ্তঘাতকদের প্রেরণা হিসেবেও কাজ করেছে। ভেনুজুয়েলার ডানপন্থি সন্ত্রাসী ইলিচ রামিরেজ সানচেজ, ২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশকে হত্যাচেষ্টকারী ভ্লাদিমির আরুথিনিয়ান প্রত্যেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের বাসা থেকে “দি ডে অব দি জ্যাকেল” বইটি পাওয়া যায়, যেটা নাকি তাদের “অনুপ্রেরণা” জুগিয়েছিল !
এমনকি নিউজিল্যান্ডের এমপি ডেভিড গ্যারেট যৌবনে একই পদ্ধতিতে জাল পাসপোর্ট বানিয়েছিলেন যে পদ্ধতি উপন্যাসে বিবৃত রয়েছে। এছাড়াও বিশ্বে অনেক গ্রেপ্তারকৃত কন্ট্রাক্ট কিলারদের গ্রেপ্তারের পরে জানা গিয়েছিল, যে তারা অনুপ্রাণিত হয়েছে ফ্রেডারিক ফরসাইথের এই উপন্যাস পড়ে। বইটিকে বলা হয় “গুপ্তঘাতকদের জন্যে পাঠ্যবই”।গল্পটি পরে ১৯৭৩ সালে একটি সুপারহিট মুভিতে রূপান্তরিত হয়। এছাড়াও ১৯৯৭ সালে একই কাহিনীর উপর The Jackal নামে ব্রুস উইলিস অভিনীত আরেকটি মুভি নির্মিত হয়।

দি অডেসা ফাইল

২২ নভেম্বর ১৯৬৩-তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডির মৃত্যু সংবাদের মুহুর্ত থেকে উপন্যাসের শুরুটা হলেও এর কাহিনীর পটভূমি জড়িয়ে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইহুদী নিধনের মর্মান্তিক এক কাহিনী নিয়ে। হিটলারের জার্মান বাহিনীর ভেতরে ছিল আলাদা এক এলিট ইউনিট যার নাম ছিল SS, ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত নাৎসি শাসনামলে SS এর দায়িত্ব ছিল যারা বেঁচে থাকার উপযুক্ত নয় অর্থাৎ ইহুদী নারী-পুরুষ, শিশু সবাইকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া।

মূলত যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই জার্মান বাহিনী বুঝতে পেরেছিল যে তারা হেরে যাচ্ছে এবং তাদেরকে ভবিষ্যতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ফলে তারা ধনসম্পদ, টাকা-পয়সা নিয়ে গোপনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে সাউথ আমেরিকার দেশগুলোতে পালিয়ে যেতে থাকে। যে সংগঠনটি এদের পালাতে সাহায্য করে ছিল তার নাম ছিল ODESSA-Organisation Der Ehemaligen SS Angehorigen, এর ইংরেজী হলো Organization of former member of SS অর্থাৎ অডেসা হলো গোপন গোয়েন্দা সংস্থা যা প্রাক্তন SS সদস্যদের নিয়ে গঠিত।

যৌবনে দি অডেসা ফাইল উপন্যাস হাতে ফ্রেডারিক ফরসাইথ (ফটোকার্টেসী-Getty)

উপন্যাসের নায়ক বা মূল চরিত্র ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক পিটারের হাতে জার্মান ইহুদী বন্দিশিবিরে থাকা এক বৃদ্ধ ইহুদীর ডায়েরী ঘটনাচক্রে হাতে চলে আসে। সেই ডায়েরী থেকে সে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প অর্থাৎ ইহূদীবন্দী শিবিরে জার্মান এসএস বাহিনীর অত্যাচারের বিবরন পায়। এবং এই সূত্র ধরে সাংবাদিক পিটার মিলার খুঁজে বের করে মোষ্ট ওয়ান্টেট এক SS অফিসারকে।

এই উপন্যাসটি লিখতে ফ্রেডারিক ফরসাইথ SS এর অনেক সাবেক সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে অনেক গোপন তথ্য যোগাড় করেন, যা তিনি ব্যবহার করেন এই উপন্যাসে। যদিও স্বভাবতই তথ্যদাতাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই তাদের নাম গোপন রাখেন ফ্রেডারিক। এ উপন্যাসটিও বেষ্ট সেলার হয় এবং ১৯৭৪ সালে সুপারহিট মুভিতে রূপান্তরিত হয় যেটার নাম ভূমিকায় ছিলেন জন ভয়েট।

দি ডগস অব ওয়ার

দি ডগস অব ওয়ার’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য

ভাড়াটে সৈন্যদের জগৎ সম্পর্কে আমাদের প্রায় সবই অজানা, কিন্তু সেই অজানা জগৎ সম্পর্কে জানা যেতে পারে ‘দি ডগস অব ওয়ার’ উপন্যাসটি পড়লে যেখানে এক ব্রিটিশ ব্যবসায়ী জাঙ্গারো নামে এক কল্পিত আফ্রিকান দেশের দুর্বল সরকারের পতন ঘটাতে এক সামরিক অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। উদ্দেশ্য হলো অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতন ঘটিয়ে ঐ দেশের খনিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নেয়া।

উপন্যাসের প্লটের জন্যে ফ্রেডারিক ফরসাইথ যে সবসময় বাস্তব ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত, সেটা আগেই বলা হয়েছে। কিন্তু দি ডগস অব ওয়ারের প্লটের জন্যে তিনি যা করেছিলেন, তা এক কথায় অভিনব এবং খুবই বিপদজনক। তিনি গবেষণার অংশ হিসেবে আফ্রিকার ইকুয়াটরিয়াল গিনিতে ইগবো সম্প্রদায়, যাদের প্রতি ফ্রেডারিকের সহানুভূতি ও সমর্থন ছিল, তাদেরকে নিয়ে একটি সামরিক অভ্যুত্থান করার পরিকল্পনা করেছিলেন অথবা সামরিক অভ্যুত্থানের ভান করেছিলেন। ঐ অভিযানের জন্যে সম্ভাব্য খরচ তিনি হিসাব করেছিলেন প্রায় ২,৪০,০০০ মার্কিন ডলার।

ঐ ঘটনার পাঁচ বছর পর ফ্রেডারিক লন্ডন টাইমস-এ ফিচার হিসাবে তার গবেষণা প্রকাশ করেন যেখানে তিনি স্বীকার করেন যে, তিনি অভ্যুত্থান ঘটানোর জন্যে একটি কমিশন গঠন করেছিলেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে ঐ অভিযানের জন্যে যাবতীয় আয়োজন, অস্ত্র সংগ্রহ, পেশাদার সৈন্যসংগ্রহ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে সরেজমিনে কাজ করেন। এসব কর্মকান্ড ছিল খুবই বিতর্কিত বিষয়, এগুলো বাস্তব ঘটনা নাকি ফিকশন তা আলাদা করা খুবই মুশকিল, কেননা ২০০৫ সালে ইউকে ন্যাশনাল আর্কাইভ কর্তৃক প্রকাশিত কিছু দলিলপত্রে দেখা যায় ১৯৭৩ জিব্রাল্টারের কিছু লোক আসলেই পার্শ্ববর্তী ইকুয়াটোরিয়াল গিনিতে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিল যখন ফ্রেডারিক ওখানে রিসার্চ করছিলেন। কিন্তু স্পেনীয় কর্তৃপক্ষ কয়েকজন পেশাদার সৈনিককে গ্রেপ্তার করলে অভ্যুত্থান চেষ্টা নসাৎ হয়ে যায়।

উপন্যাসে বিবৃত পেশাদার সৈনিক মাইক হোর, বব ডেনার্ড, জ্যাক শ্রেম প্রত্যেকেই বাস্তব জীবনেও পেশাদার সৈনিক। এসব ঘটনার সময় ফ্রেডারিক কিছু অস্ত্র ব্যবসায়ীর সংস্পর্শে আসেন এবং নিজেও কিছুটা জীবন সংশয়ের মতো ঝুঁকিতে পড়েন। পরবর্তীতে ফ্রেডারিক বলেছিলেন অস্ত্র ব্যবসায়ীরা তার দেখা সবচেয়ে ভয়ংকর মানুষ। এই উপন্যাসটি নিয়েও পরবর্তীতে মুভি তৈরী হয় যেটাতে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেন ক্রিষ্টোফার ওয়াকেন। এই বইটিকেও বলা হয় সামরিক অভ্যুত্থানকারীদের জন্যে একটি পাঠ্যবই।

Frederick Forsyth lived like James Bond- টেলিগ্রাফ পত্রিকা (ফটোকার্টেসী-Getty)

ফ্রেডারিক ফরসাইথ সেটাই লিখেছিলেন, যেগুলোর ভেতর দিয়ে তিনি গিয়েছিলেন। টেলিগ্রাফ পত্রিকার ভাষায় “Frederick Forsyth lived like James Bond”। সোভিয়েত জমানায় চেক রিপাবলিকে (তৎকালীন চেকোশ্লোভাকিয়া) সিক্রেট পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে তিনি এক সুন্দরী রমণীর সাথে রাত কাটান, পরে তিনি যখন মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলেন “Where is the secret police?” মেয়েটি জবাব ছিল “That’s me!”। ঠিক পর্দার পাতায় জেমস বন্ডের নাটকীয় অভিযান বাস্তবে করতে হয়েছিলো তাকে।

জীবনের এই পর্যায়ে উপন্যাস লেখা ছেড়ে দেয়ার কারণ হিসেবে তার মন্তব্য, “I ran out of things to say” অর্থাৎ আমি যা দেখেছি, তার সবই লেখা হয়ে গিয়েছে। সশরীরে ঘটনাস্থল ভ্রমণ ও গবেষণা না করে তিনি লিখতে বসেন না। উপন্যাসের স্থান-কালের নির্ভুল বর্ণনা দিতে বৃদ্ধ বয়সেও তিনি ছুটে গিয়েছেন আফগানিস্তান, সোমালিয়া, ইসলামাবাদ। যৌবনে সাংবাদিকতার দিনগুলোতে হরহামেশা তিনি সন্ত্রাসী-চোরাচালান গোষ্ঠীর ভেতর মিশে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ফ্রেডারিকের উপন্যাসের এতো বাস্তবভিত্তিক বর্ণনার বোধহয় এটিই কারণ!

Related Articles