Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গৌতম আদানি: ভার্সিটি ড্রপ আউট থেকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী

গৌতম আদানি; ১৫০ বিলিয়ন ডলারের অধিক সম্পত্তি নিয়ে বর্তমানে তিনি এশিয়ার শীর্ষ ধনীর স্থলে অভিষিক্ত হবার পাশাপাশি এবং বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী ব্যক্তির জায়গা দখলে নিয়েছেন। তার হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত ভারতের বহুজাতিক কোম্পানি ‘আদানি গ্রুপ’ বর্তমানে পুরো ভারতে তুমুল ব্যবসা করে যাচ্ছে। বৃহত্তর ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে আদানি গ্রুপের ছায়া পড়েছে মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতেও।

১৯৮৮ সালে আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে আদানি গ্রুপ তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে। এরপর থেকে আদানি গ্রুপকে আর কখনো পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে বন্দর, জ্বালানি শক্তি, কয়লা খনন, রিয়েল এস্টেটের মতো সেক্টরে নিজেদের ব্যবসায়িক আধিপত্য বজায় রেখেছে আদানি গ্রুপ।

এমনকি বর্তমানে ভারতের সর্ববৃহৎ বেসরকারি বন্দর অধীনে থাকার পাশাপাশি বৃহত্তম খনি কারবার, গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন, ভোজ্য তেল আমদানিকারক, দেশের বৃহত্তম প্রাইভেট থার্মাল পাওয়ার প্রডিউসারও হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে আদানি গ্রুপ। কীভাবে উত্থান হলো এই আদানি গ্রুপের? কীভাবে গৌতম আদানি হয়ে উঠলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবেরদের একজন? আদানি গ্রুপের সফলতার নানা অধ্যায় নিয়েই আজকের এই আলোচনা।

গৌতম আদানি; Image Source: Shailesh Raval/The The India Today Group via Getty Images

১৯৬২ সালের ২৪ জুন। গুজরাটের আহমেদাবাদের এক জৈন পরিবারে বস্ত্র ব্যবসায়ী শান্তিলাল আদানির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন গৌতম আদানি। তার বাবা-মা গুজরাটের উত্তরে অবস্থিত থরাদ শহর থেকে আহমেদাবাদে এসে বসতি গেড়েছিলেন। ছেলেবেলা থেকেই আদানি ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্বভাবের। তবে পড়ালেখা বা বাবার ব্যবসা, কোনোটাতেই বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না তার। সেজন্য কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ মারালেও সেখানে বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেননি। গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নকালে ড্রপ আউট হয়ে পড়ালেখার সাথে চিরতরে সম্পর্কের ইতি টানেন।

ছোট থেকেই তিনি মনে-প্রাণে চাইতেন কোনোভাবে একদিন বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেবেন। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন তার দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গিয়েছিল। উদ্যোক্তা হবার ইচ্ছা তাকে এতটাই পেয়ে বসেছিল যে, ১৯৭৮ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে অল্প কিছু অর্থ পকেটে গুঁজে ভাগ্যান্বেষণে আহমেদাবাদ ছেড়ে মুম্বাই চলে আসেন।

গৌতম আদানির যৌবনকালের ছবি; Image Source: Priti Adani via Twitter.

মুম্বাই এসে তিনি ‘Mahendra Brothers Exports Private Limited’ নামক এক ডায়মন্ড ব্রোকারেজ ফার্মে ডায়মন্ড সর্টার হিসেবে কাজ শুরু করেন। মহেন্দ্র ব্রাদার্সে কাজের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে পরবর্তীতে তিনি নিজেই জাভেরি বাজারে নিজের ডায়মন্ড ব্রোকারেজ ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমেই শুরু হয় আদানির ব্যবসায়ী জীবনের পথচলা। কঠোর পরিশ্রমের দরুন এই ফার্মে সফলতার মুখ দেখেন তিনি। মাত্র ২০ বছর বয়সেই লাখপতির খাতায় নাম উঠে যায় তার।

তখন আহমেদাবাদে গৌতম আদানির বড় ভাই মনসুখ আদানি একটি প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি কিনে নেন এবং তা পরিচালনায় সাহায্যের জন্য গৌতমকে ফিরে আসতে বলেন। ভাইয়ের ব্যবসা উঠাতে ১৯৮১ সালে আবারও জন্মস্থান আহমেদাবাদে ফিরে যান গৌতম। সেখানে ভাইয়ের ব্যবসা সামলানোর এক ফাঁকে তিনি খেয়াল করেন, স্থানীয় বাজারে পিভিসির (পলিভিনাইল ক্লোরাইড) বেশ চাহিদা থাকলেও তা পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করা হচ্ছে না। সেখান থেকেই বাণিজ্যিকভাবে পিভিসি আমদানির চিন্তা মাথায় আসে তার। পাড়ি জমান সুদূর দক্ষিণ কোরিয়ায়। কোরিয়া থেকে ফিরে ১৯৮৮ সালে ‘Adani Exports Ltd.’ নামে আরেকটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন গৌতম আদানি, পরবর্তীতে যার নাম পাল্টে রাখা হয় ‘Adani Enterprises Ltd.’।

আদানি গ্রুপের বিভিন্ন শাখা প্রতিষ্ঠান; Image Source: Adani Group.

১৯৯০ এর দশকে ভারতের অর্থনীতি পুরাতন কাঠামোর খোলস ভেঙে নতুন স্পন্দনে চলতে শুরু করলে তা আদানির ব্যবসাতে ইতিবাচক প্রভাবকের মতো কাজ করে। তখন ব্যবসায় উন্নতিসাধনের পাশাপাশি নিজ ব্যবসাকে উড়ন্ত চিলের ডানার মতো মেলে ধরেন আদানি। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন গুজরাট সরকার ওই রাজ্যের মুন্দ্রা বন্দর বেসরকারি কোম্পানি দ্বারা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এমনই একটি সুযোগে দাও মারার অপেক্ষায় ছিলেন আদানি। অন্যদের মতো মুন্দ্রা বন্দরের জন্য আবেদন করে আদানি গ্রুপও। সকলকে পেছনে ফেলে ১৯৯৫ সালে চুক্তিটি জিতে নেয় তারা। এই বন্দরের পাশেই ‘Mundra Port & Special Economic Zone Ltd’ ইকোনমিক জোনের অবস্থান ছিল। কন্ট্রাক্ট পাওয়া পর এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘Adani Ports & Special Economic Zone Ltd (APSEZ)’।

মুন্দ্রা বন্দর; Image Source: Adani Ports & SEZ.

২০১৩-১৪ সালে এটি প্রথম ভারতীয় বন্দর হিসেবে বছরে ১০০ মিলিয়ন টন পণ্য পরিবহনকারী বন্দরের কৃতিত্ব অর্জন করে। এই বন্দর বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে বৃহৎ মাল্টি-পোর্ট অপারেটর। ২০৩০ সালের মধ্যে মুন্দ্রাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা বন্দরের তালিকার শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর গৌতম আদানি। শুধু মুন্দ্রাই নয়, তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ভারতের আরও ডজনখানেক ছোট ছোট বন্দর। ভারতে যত পণ্য আমদানি–রপ্তানি হয়, তার ২৪ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে আদানির মালিকানায় থাকা বন্দরগুলো। ভারতের বন্দরসমূহ থেকে আয়ের ৫০ শতাংশ আসে আদানির অধীনস্থ এসব বন্দর থেকে।

আদানি পোর্টস অ্যান্ড লজিস্টিক; Image Source: Adani Ports & SEZ.

১৯৯৬ সালে আদানি গ্রুপের শাখা সংস্থা হিসেবে ‘Adani Power Ltd’ নামে আরেকটি জ্বালানি বিষয়ক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ভারতের সর্ববৃহৎ বেসরকারি জ্বালানি উৎপাদক প্রতিষ্ঠান। ভারতের এক–তৃতীয়াংশেরও বেশি কয়লা আমদানি করে আদানির নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ২২% আসে তার প্রতিষ্ঠানের কয়লা থেকে। এছাড়াও ‘Adani Green Energy Ltd’ হলো বর্তমান ভারতের সবচেয়ে বড় সৌরশক্তি উৎপাদক প্রতিষ্ঠান।

আদানি পোর্টস অ্যান্ড লজিস্টিক; Image Source: Adani Ports & SEZ.

আদানি গ্রুপের অধীনে ‘Adani Enterprise Ltd’, ‘Adani Ports & SEZ Ltd’, ‘Adani Green Energy Ltd’, ‘Adani Transmission Ltd’, Adani Total Gas Ltd’, ‘Adani Power Limited’, ‘Adani Wilmer Ltd’ নামে মোট ৭টি শাখা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ২০১৫ সালে আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের শাখা সহায়ক সংস্থা হিসেবে আদানি গ্রিন এনার্জি প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোলার বিড জিতে নেয়। একই মাসে আদানি গ্রুপ মুম্বাইয়ের ‘ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট’-এর ৭৪% শেয়ার কিনে নেয়। ২০২১ সালে ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আদানি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে আদানি গ্রুপ নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের পেছনে ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে।

আদানি গ্রুপের বিভিন্ন সাবসিডারিস; Image Source: Business Inspection BD.

ফোর্বসের এক সূত্রমতে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গৌতম আদানি ৯০.১ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ সম্পত্তি নিয়ে মুকেশ আম্বানিকে পেছনে ফেলে (৮৯.২ বিলিয়ন ডলার) ভারতের শীর্ষ ধনীর সিংহাসনে আসীন হন। পাশাপাশি হয়ে ওঠেন বিশ্বের শীর্ষ দশ ধনীর একজন। Financial Express জানায়, ঐ বছর মে মাসে আদানি গ্রুপ সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সিমেন্ট কোম্পানি হোলসিমের ভারতীয় সাবসিডিয়ারিকে ১০.৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ক্রয় করে নেয়।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের শুরুতেও আদানি গ্রুপের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১৩৭ বিলিয়ন ডলার। পরিসংখ্যান লেখচিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, আদানি গ্রিন ও আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ার ১০০০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল। অন্যদিকে আদানি গ্রুপ, আদানি ট্রান্সমিশন, আদানি পোর্টস এন্ড লজিস্টিকের শেয়ার যথাক্রমে ৭৩০%, ৫০০%, এবং ৯৫% হারে বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে, আদানির ভোজ্য তেল ও খাদ্যদ্রব্য স্টক মার্কেটে যুক্ত হলে আদানি গ্রুপের কোষাগারে আরও ৩৬,৫০০ কোটি রূপি নতুনভাবে যুক্ত হয়। ফলে আদানির মোট সম্পদের পরিমাণ এক লাফে প্রায় ৮৯৪% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, যা ছিল আদানিকে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় স্থান দেবার অন্যতম নিয়ামক।

পরিসংখ্যান গ্রাফে আদানি গ্রুপের রাজস্ব; Image Source: Bloomberg.

আদানি গ্রুপের ব্যবসা খুব দ্রুত ফুলে-ফেঁপে ওঠার বহু কারণের একটি হলো, সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। একটু পেছনে তাকালে দেখা যাবে, শুরুতেই নিজেদের হীরা ব্যবসার সাথে গৌতম আদানি ভাইয়ের প্লাস্টিক ব্যবসাতেও মনোনিবেশ করেন, এবং শূন্যস্থান বুঝতে পারেন। পিভিসি আমদানির পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রেও নিজের ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকেন। যেহেতু বাংলাদেশের মতো ভারতও কৃষিপ্রধান দেশ, তাই এদিকে নজর দিয়ে তিনি ব্যবসায় উন্নতির বিরাট এক সুযোগ পেয়েছেন।

২০১৫ সালে বিজেপি সরকার বিশেষ কিছু খাতকে অগ্রাধিকারে রেখে ঘোষণা দিয়েছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের অর্থনীতিকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। আদানি মূলত ওই খাতগুলোর দিকে বিশেষ নজর দিয়ে সরকারের লক্ষ্যের সাথে একটি সামঞ্জস্য তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

ভবিষ্যতে ভারতের উৎপাদনভিত্তিক অর্থনীতিতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে, এই ধারণা থেকে আদানি পাওয়ার লিমিটেড থার্মাল পাওয়ার প্রোডাকশন ব্যবসা শুরু করেছে। বর্তমানে কোম্পানিটির মোট ১২,৪১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে৷ ভারতে ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়তে পারে, এই লক্ষ্য মাথায় রেখে থার্মাল পাওয়ার জেনারেটরের পাশাপাশি, সৌর ও নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করা হয়।

আদানি গ্রুপের সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট; Image Source: Adani Green.

২০১৫ সালে আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড জাপানের ‘Soft Bank Group’ এবং ‘Bharti Enterprise’ এর জয়েন্ট ভেঞ্চার ‘SB Energy’ গ্রুপকে ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয়। এর মাধ্যমে আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড হয়ে ওঠে ভারতের সর্ববৃহৎ নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদক প্রতিষ্ঠান।

আদানি গ্রুপের এই সাজানো-গোছানো এবং পরিপাটি সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে যে অর্থনৈতিক সহায়তার দরকার ছিল, তা মূলত সম্ভব হয়েছিল গ্রুপের কোম্পানিগুলো নিজেদের মধ্যে একে অন্যকে লোন বিনিময় কিংবা একে অন্যের স্টেক কিনে নেওয়ার মাধ্যমে। ২০১৪ সালে আদানি ট্রান্সমিশন গ্রুপের আর্থিক সহায়তার দরকার পড়লে, আদানি এন্টারপ্রাইজ লোন এবং ইক্যুইটির মাধ্যমে আদানি ট্রান্সমিশন গ্রুপকে সেই অর্থের যোগান দেয়। এই ফান্ডিং করতে গিয়ে আদানি গ্রুপের একটি শাখা সংস্থা ‘Adani Properties’ আদানি ট্রান্সমিশনের ৯.০৫% মালিকানা কিনে নিয়েছিল।

আদানি ট্রান্সমিশন যখন ব্যবসায় উত্তরোত্তর উন্নতি করতে থাকে এবং মার্কেটে অন্তর্ভুক্ত হয়, তখন কোম্পানিগুলোতে থাকা সিস্টার কনসার্নের শেয়ার বিক্রি করার মাধ্যমে শাখা সংস্থাগুলো তাদের অর্থ ফেরত পেয়ে যায়। এক্ষেত্রে যে প্রতিষ্ঠানটি মালিকানা কিনেছিল, সেটি শেয়ার মার্কেটে থাকা দাম অনুযায়ী তার বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পায়। যেমন- আদানি ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে মালিকানা নেওয়া কোম্পানিগুলো চার বছরে চারগুণ অর্থ ফেরত পেয়েছিল। এভাবে আদানি গ্রুপের কনসার্নগুলো একে অপরকে লোন প্রদান এবং মালিকানা কিনে নেওয়ার মাধ্যমে গ্রুপের অন্যান্য শাখা ও সহায়ক প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে। গ্রুপের সাতটি সিস্টার কনসার্ন (শাখা প্রতিষ্ঠান) মার্কেটে তালিকাভুক্ত থাকার কারণে বিনিয়োগের তুলনায় বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ ফেরত পেয়েছে, যা আদানি গ্রুপের উত্থানের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করেছে।

CJSC ADANI Technologies; Image Source: Grand Reit.

আদানি পাওয়ার থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে এক চুক্তি সম্পাদন হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ২৫ বছর ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডা জেলায় অবস্থিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনে নেবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ ভারত সফরে গৌতম আদানি এবং শেখ হাসিনার মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর গৌতম আদানি এক টুইট বার্তায় লিখেন,

“আমরা ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের মধ্যেই আমাদের ১৬০০ মেগাওয়াট গোড্ডা বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং ট্রান্সমিশন লাইন চালু করতে বদ্ধ পরিকর।”

গৌতম আদানি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; Image Source: AFP.

২০১২ সালে ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকায় ভারতের তৃতীয় সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হিসাবে স্থান পেয়েছিলেন গৌতম আদানি। ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেড লিমিটেডের ৬৬%, আদানি পাওয়ারে ৭৩% এবং আদানি ট্রান্সমিশন লিমিটেডের ৭৫% অংশীদার ছিলেন।

ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী, গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত গৌতম আদানির মোট সম্পদ ছিল ৮.৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে তিনি প্রায় ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ সম্পদের মালিক। পাঁচ বছরে আদানির সম্পদ প্রায় ১৭.৮৫ গুণ বেড়েছে।

ভারতে তালিকাভুক্ত আদানি গ্রুপের শাখা কোম্পানির শেয়ারের দাম হু-হু করে বাড়তে থাকায় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির জায়গা দখল করেন আদানি। এপ্রিলে এসে আদানির সম্পদের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। ওই মাসের শেষে ওয়ারেন বাফেটকে পেছনে ফেলে বিশ্বের পঞ্চম ধনী ব্যক্তি হয়ে ওঠেন আদানি। জুলাই মাসে টপকান বিল গেটসকে, এরপর জেফ বেজোসকে ছাড়িয়ে হয়ে ওঠেন বিশ্বের তৃতীয় ধনকুবের। ওই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ফরাসি শিল্পপতি, বিলাসবহুল ফ্যাশন সংস্থা লুই ভুটনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বার্নার্ড আর্নল্টকে পিছনে ফেলে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনীর কাতারে উঠে আসেন আদানি। এদিন ৫.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাড়ার মাধ্যমে তার মোট সম্পদ পৌঁছায় ১৫৫.৫ বিলিয়ন ডলারে। তখন তার সামনে শুধু বাকি থাকে টেসলার মালিক ইলন মাস্ক (২৭৩.৫ বিলিয়ন ডলার)।

মূলত, আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ার বৃদ্ধির কারণেই সম্পদ বাড়ে গৌতম আদানির। এত যশ-প্রতিপত্তি থাকলেও আদানি নিতান্তই সহজ-সরল এবং অন্তর্মুখী একজন মানুষ। ২০২২ সালের জুন মাসে নিজের ৬০ তম জন্মদিনে আদানি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে ৭.৭ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অর্থসাহায্য এবং অনুদানের বিষয়টি দেখভাল করে থাকে আদানি পরিবারের দাতব্য সংস্থা আদানি ফাউন্ডেশন। এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বে বর্তমানে বহাল আছেন গৌতমের স্ত্রী প্রীতি আদানি। ফাউন্ডেশনটি ভারতের প্রান্তিক অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

References:

  1. .
  2. https://www.adani.com/about-us/one-vision-one-team/gautam-adani

This article is in Bangla language. It contains the story of Gautam Adani.

References:

1. Gautam Adani’s rise - Business Insider India.
2. Gautam Adani - Forbes
3. Gautam Adani - Adani.com
4. Gautam S adani - Bloomberg Billionaires Index.
5. Gautam Adani - Business Insider.
6. Meteoric rise in Adani’s wealth - New Indian Express.
7. How India's Gautam Adani became the world's third richest person - The National News.
8. গৌতম আদানি - বিবিসি
9. আদানি বনাম আম্বানি: ভারতীয় দুই ধনকুবেরের দ্বৈরথ - প্রথম আলো
10. কে এই গৌতম আদানি? - কালের কণ্ঠ
11. Gautam Adani briefly becomes world's second richest man - Hindustan Times

Feature Image: @gautam_adani/Twitter

Related Articles