Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জর্জ আর আর মার্টিন: গেম অফ থ্রোনসের জনকের ২২টি অজানা দিক

জন স্নো, মাদার অফ ড্রাগন আর রেড কুইন- এই চরিত্রগুলো যেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। ফ্যান্টাসি ঘরানার টিভি সিরিজ ‘গেম অফ থ্রোনস’ এর দর্শকপ্রিয়তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এইচবিও চ্যানেলে প্রতি পর্ব প্রচারের সময় গড়পড়তা ১০ মিলিয়ন আমেরিকান দর্শক টিভি সেটের সামনে বসেন প্রিয় সিরিজটি দেখার জন্য। আরেক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষ অবৈধভাবে ডাউনলোড করে দেখে ‘গেম অফ থ্রোনস’। এমন সফল সিরিজটি যার বই অবলম্বনে বানানো হয়েছিল তার পুরো নাম জর্জ আর আর মার্টিন। লেখককে আমরা না হয় জর্জ মার্টিন হিসেবে সম্বোধন করলাম।

জর্জ মার্টিন আর অভিনেতা পিটার ডিংকলেজ; Source: nerdist.com

গণমাধ্যমে রসিকতা করে একবার বলা হয়েছিল, “জর্জ আর আর মার্টিন একজন সিরিয়াল কিলার”। মূলত তার বইয়ের সিরিজ ‘এ সং অফ আইস এন্ড ফায়ার’ এর পাঠকপ্রিয় চরিত্রগুলোকে তিনি কাহিনী পরিক্রমার এক পর্যায়ে হুট করে মেরে ফেলার কারণেই এমন নির্দোষ অপবাদ পেয়েছিলেন এই ৬৯ বছর বয়সী লেখক।

লেখক আর তার বই; Source: pinterest

জর্জ মার্টিনের বাইশটি অজানা দিক 

১) ছোটবেলা থেকেই মার্টিন গল্প লেখার হাত মকশো করেছিলেন। অতিপ্রাকৃত গল্প লিখে তিনি সেগুলো প্রতিবেশী বাচ্চাদের কাছে বিক্রি করার চেষ্টা করতেন। প্রতি গল্পের দাম নির্ধারণ করেছিলেন ১ পেনি! পরবর্তীতে গল্পের দাম বেড়ে হয়েছিল ১ নিকেল।

২) গল্প বিক্রির ব্যবসা ভালোই জমিয়ে ফেলেছিলেন কিশোর মার্টিন। কিন্তু ঝামেলায় পড়লেন যখন প্রতিবেশী এক বন্ধুর মা তার বাবা-মার কাছে বিচার দিতে আসে। তার অভিযোগ, মার্টিনের গল্প পড়ে ভয়ে তাদের ছেলে রাতে ঘুমাতে পারছে না! মার্টিনকে অগত্যা তার ব্যবসা বন্ধ করতে হল।

৩) নিউ জার্সিতে এক গরীব ঘরে জর্জ মার্টিন এর জন্ম।

৪) বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন এই বেস্টসেলার লেখক।

৫) বেশ কয়েকটি সফল বই লেখার পর জর্জ মার্টিন সুযোগ পান বিখ্যাত টিভি সিরিজ ‘দ্য ট্যোয়ালাইট জোন’ এর কাহিনি লেখার জন্য।

জর্জ মার্টিন যখন তরুণ; Source: pinterest

৬) জর্জ মার্টিন এর বইগুলোতে প্রতিটি অধ্যায় ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের দৃষ্টিভঙ্গিতে বর্ণনা করা হয়। টিভি সিরিজের কাহিনিকার হিসেবে কাজ করার সুবাদে তার লেখার ভঙ্গিমায় এই স্টাইল রপ্ত করেন তিনি।

৭) মার্টিনের প্রকাশনা সংস্থা হারপার কলিন্স ‘এ গেম অফ থ্রোন্স’ বইটির সাফল্য সম্পর্কে সন্দিহান ছিল। তারা ধারণা করেছিল এই বই ৫,০০০ কপির বেশি বিক্রি হবে না। আজ অবধি এই সিরিজটির বই ৭০ মিলিয়ন কপিরও বেশি বিক্রি হয়েছে। হারপার কলিন্স নিশ্চয়ই তাদের ভুল ভবিষ্যদ্বাণীতে খুশি হয়েছে!

৮) জর্জ মার্টিনের প্রথম বুক ট্যুরে কোনো পাঠক আসেন নি। মার্টিন যখন মিসৌরীতে তার প্রথম বুক ট্যুরে এক লাইব্রেরিতে গিয়েছিলেন, সেখানে ৪ জন দর্শনার্থী ছিলেন, যারা মার্টিন কক্ষে প্রবেশ করার সাথে সাথে বেরিয়ে যান!

৯) ২৩ বছর আগে জর্জ মার্টিন  তার ‘এ সং অফ আইস এন্ড ফায়ার’ সিরিজটি লেখা শুরু করেছিলেন। এখন পর্যন্ত সিরিজের সবগুলো বই মিলিয়ে তিনি ১.৮ মিলিয়ন শব্দ লিখেছেন, অর্থাৎ প্রায় ১৮ লক্ষ শব্দ!

১০) জর্জ মার্টিন এনএফএল ফুটবল দল ‘নিউ ইয়র্ক জায়ান্টস’ এর পাড় সমর্থক।

ছবিঃ azquotes.com

১১) জর্জ মার্টিন তার ফ্যান্টাসি সিরিজটি সম্পর্কে বলেছিলেন, “এই সিরিজটি এতই বিশাল যে এর কাহিনি অবলম্বনে সিনেমা বানানো সম্ভব নয়। গেম অফ থ্রোন্সের জগত এতই পরিব্যাপ্ত যে দুই ঘণ্টার সিনেমায় তা ধারণ করা অসম্ভব”।

১২) ‘এ সং অফ আইস এন্ড ফায়ার’ নিয়ে সিনেমা বানাতে চেয়েছিল বেশ কয়েকটি প্রযোজনা সংস্থা। কিন্তু জর্জ মার্টিন তো নাছোড়বান্দা। সিনেমায় রুপান্তরের ব্যাপারে তিনি আগ্রহী ছিলেন না। অতঃপর এইচবিও তার কাছে টিভি সিরিজ বানানোর প্রস্তাব নিয়ে আসে এবং তিনি রাজি হয়ে যান। এরপর কী হল তা তো আমরা সবাই জানি!

১৩) ‘গেম অফ থ্রোন্স’ এর দুই প্রযোজক ডেভিড বেনিয়ফ আর ডাব্লিউ বি ওয়াইসের সাথে জর্জ মার্টিনের প্রথম আলোচনা হয় বইগুলো টিভি সিরিজে রুপান্তরের সম্ভাবনার ব্যাপারে। তাদের সেই আলোচনা হয়েছিল পাক্কা চার ঘণ্টা।

১৪) আলোচনায় প্রযোজক আর লেখক একমত হতে পারছিলেন না। বইয়ের একটি চরিত্র ছিল ‘লেডি স্টোনহার্ট’। মার্টিন চাইছিলেন সে চরিত্রটা টিভির পর্দায় আসুক, প্রযোজকরা এই মতে সায় দেন নি। সর্বপ্রথম এই ব্যাপারটি নিয়েই লেখক আর নির্মাতাদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়।

১৫) যদিও জর্জ মার্টিন টিভি সিরিজ নির্মাণের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, সিরিজের কাহিনিবিন্যাস শেষ পর্যন্ত নির্মাতাদের সিদ্ধান্তেই সাজান হয়, এ ক্ষেত্রে মার্টিন কোনো বিরোধিতা করতে পারেন না।

ডেভিড বেনিয়ফ আর ডাব্লিউ বি ওয়াইস; Source: এইচবিও

১৬) একবার জর্জ মার্টিনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “বইয়ের কোন অংশটা লেখা তার কাছে সবচেয়ে কঠিন ছিল”? তার উত্তর, “দ্য রেড ওয়েডিং”।

১৭) ভক্তরা লেখকদের নানা অদ্ভূত প্রশ্ন করে থাকে। ‘গেম অফ থ্রোন্স’ এর কোন চরিত্রের সাথে আপনার মিল রয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে জর্জ মার্টিন এর উত্তর, স্যামওয়েল টার্লি।

১৮) ‘গেম অফ থ্রোন্স’ ভক্তদের কাছে টিভি সিরিজটির অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে ড্যেনিরিস টারগারিয়েন আর তার পোষ্য ড্রাগনগুলো। কিন্তু এমন যদি হতো যে বই বা সিরিজে কোনো ড্রাগনের অস্তিত্বই নেই? লেখক কিন্তু এমনটাই চেয়েছিলেন। আগুনমুখো ড্রাগন নামের অলৌকিক প্রাণীকে তিনি বইয়ের মধ্যে রাখতে চাননি। মার্টিনের এক লেখক বন্ধু ছিলেন, তার নাম ‘ফিলিস আইনস্টাইন’। এই বন্ধুটিই মার্টিনকে পরামর্শ দেন ফ্যান্টাসি বইগুলোতে ড্রাগন নিয়ে আসার জন্য। আপনারা মার্টিনের সেই বন্ধুকে ধন্যবাদ দিতেই পারেন!

এমিলিয়া ক্লার্ক আর জর্জ মারটিন; Source: IMDB

১৯) জর্জ মার্টিন মারভেল কমিক্সের অন্ধভক্ত। ছোটবেলা থেকেই মারভেল কমিক্স পড়ার নেশা ছিল তার।

২০) মারভেল কমিক্সের প্রাণপুরুষ স্ট্যান লির অনুরাগী জর্জ মারটিন। অসংখ্য বিখ্যাত কমিকস চরিত্রের স্রষ্টা স্ট্যান লি, বই লিখে জনপ্রিয়তা পাওয়ার আগে তার সাথে বেশ কয়েকবার দেখাও করেছিলেন তিনি।

২১) ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্যানুসারে, জর্জ মার্টিন প্রতি বছর ১৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেন।

২২) তরুণ বয়সে জর্জ মার্টিন দাবা টুর্নামেন্ট আয়োজন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মার্কিন দাবাড়ু ববি ফিশার সে সময়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন, সেই উন্মাদনাকে পুঁজি করেন মার্টিন দাবার আসর আয়োজন করতেন। প্রতি শনি আর রবিবার দাবা খেলার আসর বসতো, আয়োজক হিসেবে মার্টিনকে শুধু এই দু’দিনই কাজ করতে হতো। সপ্তাহের বাকি ৫ দিন তার হাতে থাকতো অখন্ড অবসর। এই অবসরকে কাজে লাগিয়ে তিনি তার লেখক সত্ত্বার উন্মেষ ঘটান। নিয়মিত লিখতেন তিনি। একসময়ে দাবার জনপ্রিয়তা কমে যায়, মার্টিনও অন্য জীবিকার দিকে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু ইতিমধ্যে তার লেখার হাত পাকিয়ে ফেলেছেন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে হাজার পৃষ্ঠার একেকটা ফ্যান্টাসি বই লিখতে পেরেছিলেন তিনি। রসিকতা করে তাই লেখক বলেছিলেন, “দাবা না থাকলে গেম অফ থ্রোন্সও থাকতো না”!

এমি এ্যাওয়ার্ড হাতে জর্জ মারটিন; Source: screener

গেম অফ থ্রোনসের শেষ সিজন মুক্তি পাবে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে। এই দীর্ঘ বিরতিতে জর্জ মার্টিনের লেখা মূল বইগুলো পড়ে ফেলতে পারেন। প্রিয় চরিত্রগুলোকে আরো গভীরভাবে জানতে পারবেন তাহলে। নীলক্ষেত বা যেকোনো অভিজাত বইয়ের দোকানে পাবেন ‘এ সং অফ আইস এন্ড ফায়ার’ সিরিজের বইগুলো।

Related Articles