Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অভিনয় থেকে অবসরে অস্কারে হ্যাট্রিক জয়ী ড্যানিয়েল ডে লুইস

সেরা অভিনেতার পুরস্কার স্বরূপ তিনটি একাডেমি অ্যাওয়ার্ড, সাথে বোনাস হিসেবে ব্রিটেনের রানীর কাছ থেকে নাইটহুড উপাধি- অভিনয় শিল্পী ড্যানিয়েল ডে লুইস এর ঝোলায় রয়েছে এমন দুর্দান্ত সব সম্মান। অথচ হঠাৎই এমন বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ষাট বছরে পা দেয়া এই হলিউড মহারথী। সম্প্রতি তিনি ঘোষণা দিয়েছেন অভিনয় থেকে অবসর নেয়ার ব্যাপারে। ইতিহাসে একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে সেরা অভিনেতার ক্যাটাগরিতে তিন-তিনটি অস্কারের জন্য মঞ্চে উঠেছেন ড্যানিয়েল ডে লুইস। এমন দুর্লভ কীর্তি ঘটিয়ে ফেলেছেন যে শিল্পী, চলুন তার জীবন সম্পর্কে কিছু জেনে নেয়া যাক।

১৯৫৭ সালে এক সচ্ছল ব্রিটিশ পরিবারে ড্যানিয়েল ডে লুইসের জন্ম। কবি বাবা আর অভিনেত্রী মায়ের সংসারে ছোটবেলাতেই সৃজনশীলতার হাতেখড়ি হয় ড্যানিয়েলের। স্কুলে তেমন সপ্রতিভ না হলেও, প্রতিভার বিচ্ছুরণ টের পাওয়া গিয়েছিলো বটে। কিশোর বয়সেই অভিনয় করার নেশা পেয়ে বসে তাকে। শুরুটা হয় থিয়েটার দিয়ে। ব্রিস্টল থিয়েটার স্কুলে সুযোগ পেয়ে যান অভিনয় শেখার। টানা কয়েক বছর অভিনয়ের দীক্ষা গ্রহণ এবং স্টেজ পারফরমেন্স করার পর বড় পর্দায় অভিনয় করার ইচ্ছা পূরণ হয় ড্যানিয়েলের। ১৯৮২ সালের নন্দিত চলচ্চিত্র ‘Gandhi’-তে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।

Gandhi সিনেমায় ড্যানিয়েল ডে লুইস। ছবিসূত্র: moviefancentral.com

এরপর বেশ কয়েকটি সিনেমায় দেখা যায় ড্যানিয়েলের উপস্থিতি। মঞ্চ নাটকেও নিয়মিত ছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারের এই সময়টাতে তিনি নিজেকে গড়ে তুলতে থাকেন একজন বহুমাত্রিক অভিনেতা হিসেবে। মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের সময় যে তাত্ত্বিক কৌশল ব্যবহার করতেন, সেলুলয়েডের পর্দায় একইরকম অভিনয় করে এই শিল্পকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি। অভিনয় শৈলীর বিখ্যাত কলা ‘মেথড এক্টিং‘ প্রয়োগ করেন ড্যানিয়েল। প্রসঙ্গত, চরিত্রের প্রয়োজনে নিজের শারীরিক, মানসিক এবং আবেগের পরিবর্তন করাই ‘মেথড এক্টিং’-এর উদ্দেশ্য।

১৯৮৮ সালে ‘The Unbearable Lightness of Being’ সিনেমার মাধ্যমে প্রথম মুখ্য চরিত্রে অভিষেক ঘটে ড্যানিয়েল ডে লুইসের। এই সিনেমায় কাজ করার জন্য তিনি চেক ভাষা রপ্ত করেন। আট মাস চরিত্রের অনুকরণে জীবনযাপন করেন ড্যানিয়েল।

The Unbearable Lightness of being ছবির দৃশ্যে ড্যানিয়েল ডে লুইস। ছবিসূত্র: imdb.com

ড্যানিয়েল প্রথম বাজিমাৎ করেন ‘My Left Foot’ ছবির মাধ্যমে। ‘ক্রিস্টি ব্রাউন নামের একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী, তার একমাত্র সচল অঙ্গ বাম পা দিয়ে তিনি ছবি আঁকেন, লেখালেখি করেন’- এমন এক চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এই চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য ব্যাপক পরিশ্রম করেন ড্যানিয়েল। পর্দার চরিত্র হুইলচেয়ারে চলাফেরা করে, তিনিও হুইলচেয়ারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে ক্রিস্টি ব্রাউনকে নিজের ভেতর পুরে নেন। শুটিং শেষ হয়ে গেলেও হুইলচেয়ারের চাকা ঠেলে চলাফেরা করেছেন তিনি। এমনকি স্বেচ্ছায় নিজের পাঁজরে আঘাত করে পক্ষাঘাতগ্রস্ত চরিত্রের কাছাকাছি যেতে চেয়েছেন। এমন অসহনীয় খাটুনি বৃথা যায় না। ছবি মুক্তির পরের বছর, ১৯৯০ সালে ড্যানিয়েল ডে লুইসের ঘরে আসে অস্কার আর বাফটা এ্যাওয়ার্ড। তবে প্রথম অস্কার পেয়েই কিন্তু হারিয়ে যাননি এই গুণী চরিত্রাভিনেতা। তখন তো কেবল শুরু!

My Left Foot (১৯৮৯) ছবিতে ড্যানিয়েল ডে লুইস। ছবিসূত্র: thefancarpet.com

My Left Foot এর সাফল্যের পর ড্যানিয়েল হলিউড থেকে বিরতি নিয়ে আবারও মঞ্চে কয়েক বছর কাজ করেন। ১৯৯২ সালে ক্যামেরার সামনে ফিরে আসেন ‘The Last of the Mohicans’ সিনেমা নিয়ে। এতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। সিনেমাটি ব্যবসাসফল হয়, দর্শকদের মুখরিত প্রশংসা তো ছিলই।

The Last of the Mohicans (১৯৯২) ছবির পোস্টারে ড্যানিয়েল ডে লুইস। ছবিসূত্র: yesmovies.to

ড্যানিয়েলের দ্বিতীয় অস্কার মনোনয়ন আসে ১৯৯৪ সালে, ‘In the Name of the Father’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া এ সিনেমার প্রেক্ষাপট আয়ারল্যান্ডের অস্থির রাজনীতি। এবারে অবশ্য ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেতা’র অস্কারটা পেয়েছিলেন টম হ্যাংকস, ‘ফিলাডেলফিয়া’ সিনেমার জন্য। এসময় পরপর বক্স অফিস মাত করা সিনেমায় কাজ করে যাচ্ছিলেন ড্যানিয়েল। ‘The Crucible’ (১৯৯৬) সিনেমার সেটে তার সাথে পরিচয় হয় রেবেকা মিলারের, যিনি পরবর্তীতে ড্যানিয়েলের জীবনসঙ্গিনী হন। ১৯৯৬ সালে বিয়ে করেন এই জুটি।

নিউ ইয়র্কের রাস্তায় স্ত্রী রেবেকার সাথে ড্যানিয়েল ডে লুইস। ছবিসূত্র: laineygossip.com

স্পোর্টস/ড্রামা ঘরানার সিনেমা ‘The Boxer’ এর শুটিং শেষ করে এক অদ্ভূত সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন ড্যানিয়েল। হলিউডের আলো ঝলমলে জগত ছেড়ে তিনি চলে যান ইতালি। নিজেকে জনপ্রিয়তার স্পট লাইট থেকে পুরোপুরি দূরে সরিয়ে নেন। ক্যামেরার সামনে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন যে ব্যক্তি, তিনি ভোল পাল্টে বনে গেলেন জুতার কারিগর। ইতালিতে এক মুচির সহকারী হিসেবে কাজ করতে থাকেন তিনি। ইতালির সেই অনাড়ম্বর সময় নিয়ে ড্যানিয়েল একদমই কথা বলতে পছন্দ করেন না। কিন্তু যার রক্তে অভিনয়, সে কি ক্যামেরা ছেড়ে বাঁচতে পারে? কিংবদন্তি পরিচালক মারটিন স্করসিজ বানাবেন এক গ্যাংস্টার সিনেমা। সে সিনেমায় যুক্ত হলো ড্যানিয়েলের নাম। ২০০২ সালে ‘Gangs of New York’ সিনেমায় ‘বিল দ্য বুচার’ চরিত্রে অভিনয় করেন ইতালি ফেরত ড্যানিয়েল, যার জন্য আরো একটি অস্কার মনোনয়ন জোটে তার ভাগ্যে।

প্রথম অস্কার ট্রফি হাতে ধরেছিলেন ১৯৮৯ সালে। এরপর ১৮ বছরের অপেক্ষা। ২০০৭ সালে There Will be Blood’ সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয় তাকে এনে দেয় আকাঙ্ক্ষিত দ্বিতীয় অস্কার। দুই বছর ধরে সিনেমাটির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন এই কর্মঠ শিল্পী। এলোপাতাড়ি ভাবে সিনেমা সাইন না করে, এভাবেই বিরতি নিয়ে বিচক্ষণতার সাথে ছবি বাছাই করতেন ড্যানিয়েল।

There Will be Blood (২০০৭) ছবিতে ড্যানিয়েল ডে লুইস। ছবিসূত্র: lcorchestra.co.uk

ড্যানিয়েল ডে লুইসের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সিনেমা ছিলো ‘Lincoln’। স্টিভেন স্পিলবার্গ ঠিক করলেন আব্রাহাম লিংকনকে নিয়ে জীবনীমূলক সিনেমা বানাবেন, নাম ভূমিকার জন্য শত অভিনেতার তালিকা থেকে তিনি বেছে নিলেন ব্রিটিশ ড্যানিয়েলের নাম। একজন ইংরেজ হয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চরিত্রে অভিনয় করাটা চাট্টিখানি কথা নয়। ড্যানিয়েল তাই আটঘাট বেঁধে নামেন তার সেরাটা দেবার জন্য। ব্রিটিশ উচ্চারণ ভঙ্গিমা থেকে বেরিয়ে এসে তিনি প্রেসিডেন্ট লিংকনকে রুপ দিলেন একেবারে তার মতো করেই। সমালোচকরাও বিস্মিত, এ যেন ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা লিংকনের অবয়ব। চুল, দাড়ি বা হাঁটার ভঙ্গি, সব ক্ষেত্রেই ড্যানিয়েল হয়ে ওঠেন প্রেসিডেন্ট লিংকনের ‘মিরর ইমেজ’। ২০১৩-তে তাই তৃতীয়বারের মতো অস্কারের সোনালি ট্রফি ড্যানিয়েল ডে লুইসের হাতেই শোভা পেল।

ছবিতে পর্দার লিংকন আর বাস্তবের লিংকন। ছবিসূত্র: televisor.com

২০১৪ সালে ড্যানিয়েলের প্রাপ্তির মুকুটে যুক্ত হয় আরেকটি পালক। বাকিংহাম প্যালেস প্রাঙ্গনে প্রিন্স উইলিয়াম কর্তৃক তিনি নাইটহুড সম্মানে ভূষিত হন। তিনটি অস্কার আর নাইটহুড, ড্যানিয়েলকে ঈর্ষা করেন না এমন অভিনেতা খুঁজে পাওয়া যাবে না হলিউডে!

প্রিন্স উইলিয়ামের কাছ থেকে ড্যানিয়েল ডে লুইসের নাইটহুড গ্রহণ ও আলাপচারিতা। ছবিসূত্র: parismatch.com

হঠাৎ করেই চলতি বছরের জুন মাসে ড্যানিয়েলের পক্ষ থেকে এলো এক আকস্মিক বিবৃতি। তার মুখপাত্র সবাইকে চমকে দিয়ে ঘোষণা দেন, “ড্যানিয়েল ডে লুইস আর অভিনেতা হিসেবে কাজ করবেন না। তিনি তার সহকর্মী আর দর্শকদের কাছে কৃতজ্ঞ। এটি একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং ভবিষ্যতে এ ব্যপারে তিনি আর কোন মন্তব্য করতে ইচ্ছুক নন।” স্বাভাবিকভাবেই বিনোদন জগতে আলোড়ন ওঠে এমন ঘোষণার পর। অভিনয় ছেড়ে দেয়া মানে কি হলিউড থেকে প্রস্থান? নাকি ড্যানিয়েল কি দর্শকের সামনে অন্য কোন অবতারে হাজির হবেন? হতে পারে, পরিচালক হিসেবে? সব প্রশ্নের উত্তর সময়ই বলে দেবে।

পাঠকদের জানিয়ে রাখি, ড্যানিয়েল ডে লুইসের শেষ সিনেমা ‘Phantom Thread’ মুক্তি পাচ্ছে এ বছর বড়দিনে।

 

ফিচার ছবিসূত্র: independent.co.uk

Related Articles