Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বের বুকে বাংলার গর্ব জামাল নজরুল ইসলাম

বিজ্ঞানী হিসেবে যে কয়েকজন ব্যক্তি বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের নামকে উজ্জ্বল করেছেন, তাদের মাঝে অন্যতম জামাল নজরুল ইসলাম। বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনেক বিষয়েই হয়, কিন্তু তার গবেষণার মতো কাব্যিক গবেষণা খুব কমই হয়। সামগ্রিক মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ কী হবে তথা মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি কী, তা নিয়ে জামাল নজরুল ইসলাম করেছেন বিশ্বমানের গবেষণা। বর্তমানে অনেকেই মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে গবেষণা করছেন কিন্তু তিনি যে সময়ে করেছেন, তখন খুব বেশি কেউ এই ক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা করেনি। স্টিফেন হকিং মহাবিশ্ব নিয়ে বেশ কিছু কাজ করেছেন, কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নামে বই লিখে দুনিয়াজুড়ে বিখ্যাতও হয়েছেন। তবে জামাল নজরুল ইসলাম মহাবিশ্বের উচ্চমার্গীয় বিষয় নিয়ে বই প্রকাশ করেছেন তারও আগে। স্টিফেন হকিংয়ের প্রথম বই A Brief History of Time প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৮ সালে এবং জামাল নজরুল ইসলামের প্রথম বই The Ultimate Fate of The Universe প্রকাশিত ১৯৮৩ সালে।

দেশের মানুষের কাছে একটি সময় পর্যন্ত খুব বেশি পরিচিত ছিলেন না তিনি। তবে তার সম্পর্কে যে-ই জেনেছে সে-ই ভালোবেসে ফেলেছে প্রথমবারে। ১৯৮১ সালে লন্ডনের লাখ টাকা বেতনের চাকরি এবং উন্নত সুযোগ-সুবিধা ছেড়ে মাত্র ৩ হাজার (২৮ শত) টাকা বেতনের চাকরি নিয়ে তিনি চলে আসেন মাতৃভূমি বাংলাদেশে। বাংলাদেশের বিজ্ঞান শিক্ষা এবং বিজ্ঞান গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তিনি। বাংলার সন্তানদেরকে বিজ্ঞান শিক্ষা এবং গবেষণায় উজ্জীবিত করার মাধ্যমে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন জামাল নজরুল ইসলাম। তার কর্মকাণ্ড ও চিন্তাধারায় বিভিন্ন দিক থেকে উপকৃত হয়েছে বাংলাদেশ। স্বচ্ছ মনন ও মহৎপ্রাণ এই বিজ্ঞানীর জীবনের কিছু দিক তুলে ধরার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা করা হলো এই লেখায়।

জামাল নজরুল ইসলাম (১৯৩৯ – ২০১৩); © bdnews24

জন্ম ও শৈশব

জামাল নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে। জন্মস্থান ঝিনাইদহ হলেও তার শিকড়ের ঠিকানা চট্টগ্রামে। চাকরিসূত্রে বাবা ঝিনাইদহ অবস্থান করছিলেন বলে জন্মস্থান হয়েছে সেখানে। বংশগত দিক থেকে ছিলেন অভিজাত পরিবারের সন্তান, তৎকালে ঢাকার নবাব বাড়ির পাশাপাশি যোগাযোগ ছিল জর্ডানের বাদশার পরিবারের সাথে। তবে বংশ হিসেবে অভিজাত হলেও ছিল না অভিজাত্যের অহংকার।

চার ভাই আর চার বোন নিয়ে ছিল তাদের পরিবার। ভাইদের নামগুলোতে একজনের সাথে আরেকজনের খুব মিল- কামাল জিয়াউল ইসলাম, তারেক মইনুল ইসলাম, হেলাল শমসের ইসলাম ও জামাল নজরুল ইসলাম। বাবা মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম ছিলেন ঝিনাইদহ জেলার সাব জজ (মুন্সেফ)। মাতা রাহাত আরা বেগম ছিলেন একজন সাহিত্য অনুরাগী লেখক, গানও গাইতেন ভালো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকটি উর্দুতে অনুবাদ করে বেশ প্রশংসা অর্জন করেছিলেন রাহাত আরা। তাদের বাসায় যাতায়াতও ছিল অনেক উঁচু দরের মানুষের। তাদের কলকাতার বাসায় কবি কাজী নজরুল ইসলামও যাতায়ত করতেন। কবির নামের সাথে মিল রেখেই তার বাবা-মা তার নাম রেখেছিলেন ‘জামাল নজরুল ইসলাম’।

অধ্যাপক ইসলামের জীবনে তার মা ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। কিন্তু দুঃখের বিষয়, শিশু জামাল নজরুল ইসলামকে মাত্র ১০ বছর বয়সে রেখেই ১৯৪৯ সালে তিনি চলে যান পৃথিবী ছেড়ে। শিশু বয়সে মাকে হারালেও সারা জীবন কখনো ভোলেননি মায়ের গাঢ় স্মৃতির কথা।[1]

শিক্ষা ও গবেষণা

শৈশবে কলকাতার একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন জামাল নজরুল ইসলাম। সেখান থেকে আসেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তির সময় তার মেধা দেখে অভিভূত হন প্রধান শিক্ষক। মেধায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ডাবল প্রমোশন দিয়ে তুলে দেন ষষ্ঠ শ্রেণীতে। এখানে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে চলে যান পাকিস্তানের লরেন্স কলেজে। লরেন্স কলেজ থেকে এ লেভেল এবং ও লেভেল সম্পন্ন করে ভর্তি হন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। সেখান থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বি.এসসি অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান লন্ডনের বিশ্ববিখ্যাত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে কৃতিত্বের সাক্ষর রেখে ১৯৬৪ সালে ‘এপ্লায়েড ম্যাথম্যাটিকস এন্ড থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স’-এর উপর পিএইচ.ডি সম্পন্ন করেন তিনি।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়; © Nick Ansell/ Business Insider

শিক্ষা ও ডিগ্রি অর্জনের ব্যাপারগুলো ঘটে যাচ্ছিল খুব দ্রুত। ২০ বছর বয়সেই তিনি দু’বার বি.এসসি করে ফেলেন (লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজে ২য় বার বি.এসসি করেছিলেন)। ছোটবেলায় যেমন ডাবল প্রমোশন পেয়ে সিক্সে ওঠে গিয়েছিলেন তেমনই পোস্ট ডক্ট্ররাল করার সময়ও ‘ডাবল প্রমোশন’ পেয়েছিলেন। ডক্টরেট সম্পন্ন হবার আগেই পোস্ট ডক্টরাল গবেষণায় যোগ দেন তিনি। সাধারণত ডক্টরেট সম্পন্ন হবার আগে পোস্ট ডক্টরেট গবেষণা করা যায় না। কিন্তু তিনি নির্ধারিত সময়ের আগেই পিএইচ.ডির কাজ শেষ করে ফেলেন। কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলেও থিসিস জমা দেবার সময় না হওয়াতে পিএইচ.ডি সম্পন্ন হতে দেরি হয় তার। তাই তিনি বিশেষ বিবেচনায় পোস্ট ডক্টরাল গবেষণার সুযোগ পেয়েছিলেন।[2]

বিজ্ঞানে খুব উঁচু মানের পারদর্শিতা দেখালে কিংবা খুব বড় ধরনের প্রভাব ও অবদান রাখলে ডক্টর অব সায়েন্স (ডি.এসসি) প্রদান করা হয়। সহজ কথায় এ ধরনের ব্যক্তিরা হলেন শিক্ষকদের শিক্ষক, সেরাদের সেরা। আমাদের জামাল নজরুল ইসলামও ১৯৮২ সালে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি কর্তৃক ডি.এসসি ডিগ্রিতে ভূষিত হয়েছিলেন।

চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠন বিশদ বাংলার মাসিক মুখপত্র বিশদ সংবাদ-এর এক সাক্ষাৎকারে নিজের সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন

১৯৫৭ সালে আমি কলকাতা থেকে অনার্স শেষ করে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে গণিতশাস্ত্রে ট্রাইপস করতে যাই। সাধারণত এটা তিন বছরের কোর্স, তবে আমি দুই বছরেই শেষ করি। ওখানে আমার সহপাঠী ছিল পরবর্তীকালে ভারতের বিখ্যাত গণিতবিদ নারলিকার। আরেকজন সহপাঠী ছিলেন ব্রায়ান জোসেফসন, যে তার পিএইচ ডি থিসিসের জন্য মাত্র ৩৩ বছর বয়সে, ১৯৭৩ সালে, পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পায়। আমার এক বছরের সিনিয়র ছিলেন জেমস মার্লি, যিনি ১৯৯৬ সালে অর্থনীতিশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পান। অমর্ত্য সেন যে-বছর নোবেল পুরস্কার পান সে বছর অর্থাৎ ১৯৯৮ সালে রসায়নে নোবেল পেয়েছিলেন জন পোপল। তিনি কেমব্রিজে আমার শিক্ষক ছিলেন। আমি এগুলো বলছি সেই সময়ে আমাদের লেখাপড়ার পরিমণ্ডলটা কতটা সমৃদ্ধ ছিল সেটা বোঝানোর জন্য। যা বলছিলাম, আমার পিএইচ ডি থিসিস ছিল পার্টিকেল ফিজিক্স বা মৌলিক কণার ওপর। এর তিন-চার বছর পরই আমি আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি নিয়ে কাজ করা শুরু করি। পরবর্তীকালে এর সঙ্গে যুক্ত হয় কসমলোজি। বলতে পারেন, এই তিনটিই হচ্ছে আমার আগ্রহ ও কাজের মূল ক্ষেত্র। পরে অবশ্য আমি ফ্লুইড ডিনামিক্স বা তরল গতিবিদ্যা নিয়েও কাজ করেছি।[3]

বই ও গবেষণা

জামাল নজরুল ইসলাম বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে উল্লেখযোগ্য বই লিখেছেন ৬টি। তবে বই, গবেষণা ও সম্পাদনার বিস্তারিত তালিকা করলে তা অনেক দীর্ঘ হবে। এদের মাঝে ৩টি বই বিশ্ববিখ্যাত। ক্যামব্রিজ ও হার্ভার্ড সহ বেশ কয়েকটি নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বই পাঠ্য হিসেবে পড়ানো হয়। তার লেখা বই দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স ফরাসি, জাপানী, পর্তুগিজ, ইতালিয়ান সহ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বাংলাতেও এই বইটির অনুবাদ কাজ চলছে, যদিও অনেক আগেই এই কাজ সম্পন্ন হওয়া উচিৎ ছিল।

‘দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স’ই তার প্রথম বই, যা ১৯৮৩ সালে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। শিক্ষা ও মননশীল প্রকাশনা জগতে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস অনেক বিখ্যাত। মানের দিক থেকে উন্নত বলে তাদের গ্রহণযোগ্যতাও বিশ্ববিদিত। ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত এই বইটি তাকে বিশ্বজোড়া খ্যাতি ও গ্রহণযোগ্যতা এনে দেয়।

দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স বইয়ের প্রচ্ছদ; © Cambridge University Press

বইটির বিষয়বস্তু মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ তথা মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি। বইটি প্রকাশের আগে ‘স্কাই এন্ড টেলিস্কোপ’ নামে একটি বিখ্যাত ম্যাগাজিনে মহাবিশ্বের অন্তিম পরিণতি নিয়ে তিনি একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেন। মূলত সম্পূর্ণ বইটির সারমর্ম নিহিত আছে এই প্রবন্ধে। এ সম্বন্ধে জামাল নজরুল ইসলাম তার বইয়ে যে মুখবন্ধ লিখেছেন, সেটি এখানে তুলে দেবার প্রয়োজন বোধ করছি। পাঠকের সুবিধার জন্য সেটিকে বাংলায় অনুবাদ করে দেয়া হলো।

১৯৭৭ সালে “মহাবিশ্বের সম্ভাব্য অন্তিম পরিণতি- Possible ultimate fate of the universe” শিরোনামে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র লিখেছিলাম। কোয়ার্টারলি জার্নাল অব রয়্যাল এস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটিতে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছিল। আমার কিছু সহকর্মীর নিকট গবেষণাপত্রটি বেশ আগ্রহোদ্দীপক ও চমৎকার বলে মনে হয়েছে। এর পরপরই বিজ্ঞানের জগতে আবির্ভাব ঘটেছে স্টিভেন ওয়াইনবার্গের সাড়া জাগানো বই দ্য ফার্স্ট থ্রি মিনিটস। একদিকে আমার গবেষণাপত্র নিয়ে সহকর্মীরা বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে, অন্যদিকে মহাবিশ্বের শুরুর দিক নিয়ে ওয়াইনবার্গ বই লিখেছেন। এই দুই দিক মিলিয়ে ভাবলাম, মহাবিশ্বের শেষ পরিণতি নিয়ে একটি বই লিখলে চমৎকার হয়। এর পরপরই স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ নামে একটি জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী থেকে আমাকে একটি অনুরোধ করা হয়। মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি নিয়ে আমার গবেষণাপত্রটি যেন সকলের উপযোগী করে সহজসাধ্য ভাষায় লিখে দেই তাদের জন্য। ঐ সাময়িকীতে লেখাটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৯ সালের জানুয়ারি সংখ্যায়। লেখার শিরোনাম ছিল ‘The ultimate fate of the universe’।

এটি প্রকাশের পর যে সাড়া পেয়েছি তা-ই আমাকে এই বিষয়ে একটি বই লিখতে প্ররোচিত করেছে। এই বিষয়ের উপর বিস্তারিত আলোচনা করে একটি বই লিখে ফেললে মন্দ হয় না। এসব ঘটনার মিলিত ফলাফলই হচ্ছে বর্তমান এই বই।[4]

স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ ম্যাগাজিনে জামাল নজরুল ইসলামের প্রবন্ধ; © Sky and Telescope

স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ ম্যাগাজিনের জানুয়ারি ১৯৭৯ সংখ্যার প্রচ্ছদ, এই সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল জামাল নজরুল ইসলামের প্রবন্ধ; © Sky and Telescope

এরপর তার উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে Rotating Fields in General Relativity এবং An Introduction to Mathematical Cosmology

বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণার জন্য লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি এক অনন্য নাম। রয়্যাল সোসাইটির প্রসিডিংসয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করা মানে আক্ষরিক অর্থেই রাজকীয় কাজ সম্পন্ন করা। জামাল নজরুল ইসলাম এই প্রসিডিংসয়ে ধারাবাহিকভাবে পরপর ছয়টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এখানে গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে গেলে আবার রয়্যাল সোসাইটির কোনো ফেলো সদস্যের রিকমেন্ডেশন লাগে। জামাল নজরুল ইসলামের ক্ষেত্রে রিকমেন্ডেশন করেছিলেন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ও ফ্রেড হয়েল। পরপর প্রকাশ করা ছয়টি গবেষণাপত্রের বিষয় ছিল অন রোটেটিং চার্জড ডাস্ট ইন জেনারেল রিলেটিভিটি। সাধারণ আপেক্ষিকতা ও চার্জিত বস্তু নিয়ে করা গবেষণার উপর ভিত্তি করেই লিখেন রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি নামের বইটি। ১৯৮৫ সালে এটি ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য প্রসিডিংসয়ে প্রকাশিত তার এই গুরুত্বপূর্ণ ও উঁচু মানের গবেষণার জন্য ১৯৮২ সালে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি তাকে অত্যন্ত সম্মানজনক ডিগ্রি ডক্টর অব সায়েন্স প্রদান করে।[5]

রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি বইয়ের প্রচ্ছদ; © Cambridge University Press

‘অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি’ তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বই। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বইটির গ্রহণযোগ্যতা ও চাহিদা ব্যাপক।

এরপর বাংলায় উল্লেখযোগ্য বই লিখেছেন ‘কৃষ্ণ বিবর’, ‘মাতৃভাষা ও বিজ্ঞান চর্চা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ’ এবং ‘শিল্প সাহিত্য ও সমাজ’। তার লেখা ‘ভাষা শহীদ গ্রন্থমালা’ নামে চমৎকার একটি সিরিজ প্রকাশ করেছিল বাংলা একাডেমি। অনেকটা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের Very Short Introduction সিরিজের মতো। ভাষা শহীদ গ্রন্থমালা সিরিজের অধীনে প্রকাশিত বইগুলোতে সংক্ষেপে কিন্তু পরিপূর্ণভাবে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হতো। জামাল নজরুল ইসলামের কৃষ্ণ বিবরও এই সিরিজেরই একটি বই। আশি পৃষ্ঠার মতো পরিধির এই বইটিতে কৃষ্ণ বিবর তথা Black Hole সম্পর্কে অনেক কিছু উঠে এসেছে, আকারে সংক্ষিপ্ত কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি বই। তার চেয়েও বড় কথা হলো, ১৯৮৫ সালের সময়ে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের এমন উচ্চমার্গীয় বিষয়ে আস্ত একটি বই উপহার দিয়েছেন তিনি। তখনকার সময়ে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার অবস্থা খুবই বেহাল ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বাংলা ভাষায় এমন একটি বই পাওয়া আসলেই আবেগের ও আনন্দের।

ভাষা শহীদ গ্রন্থমালার বেশ কিছু বইয়ের মাঝে জামাল নজরুল ইসলামের কৃষ্ণ বিবর; © Sirajam Munir Shraban

বিজ্ঞানের বাইরেও ছিল তার সরব পদচারণা। গণিত, পদার্থবিজ্ঞানের পাশাপাশি জীববিজ্ঞান, সঙ্গীত ও অর্থনীতিতেও ছিল তার বিচরণ। এসব বিষয়ে তার লেখা বই ও গবেষণাগুলোই প্রমাণ। তার লেখা ‘শিল্প সাহিত্য ও সমাজ’ এবং ‘মাতৃভাষা ও বিজ্ঞানচর্চা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ’ বই দুটিতেও তার লেখা ও পদচারণার পরিধি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

বিশদ আড্ডায় তিনি বলছেন-

এখন তো আমার অনেক বয়স হয়েছে, ফলে আমার কাজের ক্ষেত্রটাও অনেক বিস্তৃত হয়েছে। আমি যেটাকে রসিকতা করে বলি, ‘ওয়াইডার, বাট নট নেসেসারিলি ডিপার’।

অধ্যাপক ইসলাম আরো দুটি বই লিখেছিলেন। ১. অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল ইকনোমিক্স ও ২. কনফাইনমেন্ট অ্যান্ড শ্রোডিংগার ইকুয়েশন ফর গাউস থিওরিস। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেগুলো তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে বইগুলো প্রকাশের প্রক্রিয়া চলছে।[6]

জামাল নজরুল ইসলামের An Introduction to Mathematical Cosmology বইয়ের প্রচ্ছদ; © Cambridge University Press

ইংরেজভূম ত্যাগ ও দেশে প্রত্যাবর্তন

বিদশের মাটিতে লেখাপড়া ও গবেষণা করেছেন ঠিকই, উন্নত সুযোগ সুবিধাও পেয়েছেন, কিন্তু তার স্থায়ীভাবে বিদেশে থেকে যাবার ইচ্ছে ছিল না কখনোই। বাংলাদেশের অনেক মেধাই বিদেশে দিন পার করেছে, দিন পার করছে। তাদের অনেকেরই ইচ্ছে আছে দেশে চলে আসার, কিন্তু চাইলেই কি আর আসা যায়? দেশপ্রেম কম থাকুক আর বেশি থাকুক, দিন শেষে সকলেরই তো টাকার প্রয়োজন। বিজ্ঞানী হলেও তো সে একজন মানুষ, বিজ্ঞানী হলেও তো তার একটি পরিবার আছে।

বাংলাদেশের মেধাগুলো বাইরে চলে যাচ্ছে বলে আমরা আহাজারি করতে জানি কিন্তু তাদেরকে উপযুক্ত প্রাপ্য দিয়ে রাখতে জানি না। মেধাগুলো পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে অনেক আওয়াজ উঠে কিন্তু তাদেরকে দেশে রেখে দেবার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করি না। বিদেশে গবেষণা সেরে কেও কেউ নিজ উদ্যোগে দেশে আসতে চাইলে তার যথাযথ মূল্যও দিতে জানি না। বাইরে থেকে কেউ দেশে চলে আসলে তাকে অর্থনৈতিকভাবে সমস্যায় পড়তে হয়। জামাল নজরুল ইসলামের বেলাতেও যদি এই সমস্যা হতো, তাহলে তিনি হয়তো দেশে থেকে যেতে পারতেন না। ভাগ্যক্রমে তিনি ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের এবং তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি ছিল শক্ত। জামাল নজরুল ইসলাম তার এক লেখায় নিজেই বলেছেন, তার পক্ষে দেশে ফিরে আসা সম্ভব হবার পেছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তার পরিবারের শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তি।

তারপরেও জামাল নজরুল ইসলামের দেশে প্রত্যাবর্তন এতটা সহজ ছিল না। তাকেও নিজের দেশের মাটিতে অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ১৯৮১ সালের দিকে দেশে ফিরে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ সময় তার বেতন ছিল আটাশ শ’ টাকা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কিছুতেই রাজি হয়নি তাকে তিন হাজার টাকা বেতন দিতে। এই বেতনেই তিনি অধ্যাপনা করে যান। এখানে এক বছর অধ্যাপনা করার পর গবেষণার কাজে এবং পারিবারিক প্রয়োজনে আবার লন্ডনে ফিরে যাবার প্রয়োজন দেখা দেয় তার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণার জন্য বাইরে গেলে কর্তৃপক্ষ ছুটি প্রদান করে এবং ফিরে আসা পর্যন্ত চাকরি বলবৎ থাকে। এর জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটির আবেদন করেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দিচ্ছিল না। উপায় না দেখে চাকরি ছেড়ে চলে যান তিনি। দুই বছরে সেখানে তার গবেষণা সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৮৪ সালে তিনি সেখানকার বাড়ি-ঘর বিক্রি করে স্থায়ীভাবে দেশে চলে আসেন। এরপর অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বেতন বাড়িয়ে তিন হাজার টাকায় উন্নীত করে আর মাঝখানের সময়টিকে শিক্ষা ছুটি হিসেবে গ্রহণ করে।[7]

Source: The Daily Star

দেশের মাটিতে তার ভোগান্তি এত অল্প ছিল না অবশ্যই। পরিস্থিতি কেমন নেতিবাচক ছিল সে সম্পর্কে একটু ধারণা পাওয়া যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এম হারুন অর রশিদের একটি লেখায়। হারুন অর রশিদ নিজেও অনেক গুণী ব্যক্তিত্ব। জামাল নজরুল ইসলাম ও হারুন অর রশিদের মাঝে ছিল বন্ধুত্বের সম্পর্ক। অধ্যাপক ইসলামের মৃত্যুর পর তাকে স্মরণ করে কালি ও কলম নামের এক সাহিত্য ম্যাগাজিনে তিনি লিখেছেন-

জামালের সঙ্গে আমার সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠতা হয় ১৯৮৪ সালে, যখন তিনি কেমব্রিজ থেকে চট্টগ্রামে চলে আসার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। একদিন তিনি টেলিফোনে আমাকে লন্ডন থেকে জানালেন যে, তিনি বাংলাদেশে চলে আসতে চান। আমি বলেছিলাম, ‘এটা নিশ্চয়ই খুব ভালো সিদ্ধান্ত। তবে তিনি যদি তাঁর দরখাস্তটি অবিলম্বে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন, তাহলে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আলাপ করে যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দিতে পারি।’

তারপর তিনি যা বলেছিলেন তা আমি শুনতে মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি বললেন, তিনি ঢাকায় যাবেন না, তিনি চট্টগ্রামে যাবেন। কেননা সেখানে রয়েছে তাঁর পৈতৃক ভবন। আমি তাঁকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে, মনে হয় না, চট্টগ্রামে তিনি খুব ভালো ছাত্র পাবেন এবং হয়তো সেখানে তাঁর গবেষণাকর্ম ব্যাহতই হবে। কিন্তু তিনি সে-কথা মোটেই  কানে তুললেন না।  তাঁর কথা ছিল একটাই যে, আমি যেন তাঁর দরখাস্তটি নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে অবিলম্বে দেখা করি। আমি তাই করেছিলাম। এক সকালে ট্রেনে চট্টগ্রামের টিকিট কিনে চট্টগ্রাম পৌঁছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বলেছিলাম, ‘জামাল নজরুল ইসলাম এদেশের সম্পদ – তাঁকে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা আপনাদেরই সৌভাগ্য।’ উপাচার্য করিম সাহেব আমার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত হলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, জামাল নজরুল ইসলামের জন্য একটি অধ্যাপক পদ পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অবিলম্বে সৃষ্টি করে তাঁকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হবে।

দুঃখের বিষয়, ঢাকায় ফিরে এসে কয়েকদিন পরে খবর পেলাম যে কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পদ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না। তাই কিছুদিন পরে গণিত বিভাগেই একটি পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং তাও দ্বিতীয়বার আমার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ করার পর। যা হোক, শেষ পর্যন্ত সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং অকুণ্ঠ সহযোগিতা অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যোগদান করতে সমর্থ হয়েছিলেন।[8]

অধ্যাপক এ এম হারুন অর রশিদ; Source: gunijan.org

বেলাশেষে

জামাল নজরুল ইসলাম যা করেছেন, তা সবাই করতে পারে না। বাংলাদেশে বিজ্ঞান গবেষণার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নেই। তার উপর অধ্যাপক ইসলামের মতো মাপের বিজ্ঞানীদের জন্য তো নয়ই। এদিক থেকে বিবেচনা করে অনেকেই বলে থাকেন, অধ্যাপক ইসলামের বিদেশে থেকে যাওয়া উচিৎ ছিল। অন্তত বিজ্ঞানী হিসেবে, বিজ্ঞান গবেষক হিসেবে উপযুক্ত পরিবেশ পেতেন সেখানে। কিন্তু যে মন নিজেকে আলোকিত করার চেয়ে অন্যকে আলোকিত করার জন্য নিবেদিত, তার কাছে কি আর এমন কথা বলে পারা যাবে? নিজে একা বড় ধরনের কিছু করা কিংবা নোবেল প্রাইজ পাবার চেয়ে মাতৃভূমির পিছিয়ে থাকা হাজার হাজার শিক্ষার্থীদেরকে এগিয়ে নেওয়া বেশি প্রশান্তির ছিল তার কাছে। এতগুলো বছরে তার মাধ্যমে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী উপকৃত হয়েছে, তার মোট পরিমাণ মাপা সম্ভব নয়। অধ্যাপক ইসলাম যদি বিদেশে থেকে নিজের গবেষণায় লেগে থাকতেন তাহলে যে অর্জন হতো, তার সুদে-মূলে কয়েক গুণে ফিরে এসেছে এসব শিক্ষার্থীর মাঝে।

দেশে ফিরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার জন্য উন্নত মানের একটি গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর অধীনে অনেক শিক্ষার্থী মাস্টার্স ও পিএইচ.ডি. করেছে এবং তাদের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই।

জামাল নজরুল ইসলাম; Source: Youtube/ Imam Mohammad Bokhary

দেশের জন্য, দেশের বিজ্ঞানচর্চার জন্য তিনি যে পরিমাণ আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, তা সত্যিই অনন্য। নিভৃতচারী ও প্রচারবিমুখ এই গুণী বিজ্ঞানী ২০১৩ সালে ৭৪ বছর বয়সে পরলোকগত হন। তার মৃত্যুতে এই দেশ তথা এই পৃথিবী আসলেই একজন আলোকিত নক্ষত্রকে হারিয়েছে। কিছু কিছু ব্যক্তিত্ব আছে যাদের আবেদন কখনো ম্লান হয় না। শেষ বয়সে পৌঁছালে অনেকেরই আবেদন কমে যায় কিন্তু জামাল নজরুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশের বিজ্ঞান জগতের অভিভাবক। এধরনের ব্যক্তিত্বকে এই দেশ আরো শত শত বছর পেতে চায়। একজন জামাল নজরুল ইসলাম চলে গেছেন, এ দেশে যেন আরো শত জামাল নজরুল ইসলামের জন্ম হয়।

তথ্যসূত্র

[1] ছিদ্দিকী, শরীফ মাহমুদ (২০১৪), বিশ্বনন্দিত বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম, অনুপম প্রকাশনী
[2] ছিদ্দিকী, শরীফ মাহমুদ (২০১৪), পূর্বোক্ত
[3] বিশদ আড্ডা, মাসিক বিশদ সংবাদ, আগস্ট ২০০৭, http://arts.bdnews24.com/?p=346
[4] Islam, Jamal Nazrul (1983), The Ultimate Fate of the Universe, Cambridge University Press
[5] ছিদ্দিকী, শরীফ মাহমুদ (২০১৪), পূর্বোক্ত
[6] ক্যামব্রিজ থেকে বিজ্ঞানী জামাল নজরুলের আরেকটি বই বেরোচ্ছে, কালের কণ্ঠ, http://www.kalerkantho.com/home/printnews/132586/2011-02-24
[7] বিশদ আড্ডা, মাসিক বিশদ সংবাদ, আগস্ট ২০০৭, http://arts.bdnews24.com/?p=346
[8] মাসিক কালি ও কলম, বৈশাখ ১৪২০

ফিচার ছবি- জাকারিয়া হাসান

Related Articles