Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জেন গুডাল: যার জীবন কেটেছে শিম্পাঞ্জিদের সাথে বন্ধুত্ব করে

জেনের বয়স তখন ৫ কি ৬ বছর। হঠাৎ একদিন সকালের নাস্তার পর থেকে তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। বাবা-মায়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ। প্রতিবেশীদের বাড়িতে খোঁজ নেয়া হয়ে গেলে চিন্তা রূপ নেয় ভয়ে। সর্বদা বাড়ির উঠোনে পোষা প্রাণী নিয়ে খেলা করা শিশুটি কোনো অপহরণকারীর পাল্লায় পড়লো না তো! দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো, বাড়িতে আত্মীয়স্বজনের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। ১০ ঘন্টা হয়ে এলো, গুডালের কোনো খোঁজ নেই এখনো। সকলের ভেতরের চাপা ভয়টা যখন কান্নায় পরিণত হবার উপক্রম, তখনই নাটকীয়ভাবে দৃশ্যপটে উপস্থিত গুডাল, হাতে তার একটি মুরগীর ডিম! তার মা মার্গারেট কাঁদতে কাঁদতে তাকে জড়িয়ে ধরে অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, “কোথায় ছিলে তুমি এতক্ষণ?” জেনের এবার বিস্মিত হবার পালা। কারণ, সারাদিন তো সে বাড়ির বাইরেই যায়নি, তাকে নিয়ে এতো ভয় কীসের? “আমি তো মুরগীর ঘরে ছিলাম, মুরগী কীভাবে ডিম পাড়ে তা দেখতেই বসে ছিলাম!

শিশু জেন গুডাল; Source: australiazoo.com.au

কারো শৈশব সর্বোচ্চ যতটা আনন্দময় হতে পারে, জেন গুডালের শৈশব ততটাই আনন্দময় ছিল। তার বাবা-মা অন্যদের মতো সন্তানের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কিছু চাপিয়ে দিয়ে, সন্তানকে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত করবার স্বপ্ন কখনোই দেখতেন না। ইচ্ছে হলে খাবো, পড়বো, নয়তো ঘুরে বেড়াবো, খেলবো, পোষা প্রাণীর সাথে খুনসুটি করবো- এভাবেই কেটেছে গুডালের শৈশব। যখন যা চেয়েছেন, তা পেয়েছেন। যখন যা করেছেন, তৃপ্তি সহকারেই করেছেন। শিশুকাল থেকেই পশুপাখির সাথে তার ঘনিষ্ঠতা দেখে তার বন্ধুদের মধ্যে অনেকে তাকে ‘টারজান’ বলেও ডাকতো! বাড়িতে তার বেশির ভাগ সময়ই কাটতো পোষা কুকুর, বিড়াল আর খরগোশের সাথে খেলা করে। খেলাটা শুধু নিছক খেলাই ছিল না, তার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষাও ছিল বটে। আর এই শিক্ষা গ্রহণ করতে করতেই তো সেবার মুরগীর ঘরে ঘরে হারিয়ে গেলেন আনমনে!

পশুপাখির প্রতি জেনের আকর্ষণ ছিল এমনই বেশী। তবে একে আকর্ষণের চেয়ে ভালোবাসা বলাটাই অধিক সমীচীন হবে হয়তো। তার পরিবারের সদস্যরা পাঁচ বয়সী জেনের ভবিষ্যৎ সেদিনই কিছুটা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। আর জেন পেরেছিলেন সম্পূর্ণরূপে। গৃহেই তিনি সেরেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা। তবে শৈশবে সবচেয়ে বেশি পড়েছেন ডক্টর ডুলিটল, দ্য জাঙ্গল বুক আর টারজানের মতো বই। এই তিনটি বইয়ের নামই কেন উল্লেখ করা হয়েছে ধরতে পারছেন কি? তিনটি বই-ই তো প্রাণ-প্রকৃতির অত্যন্ত নিকটে। আর জেন এসব বই পড়তে পড়তে কল্পনার হাওয়াই জাহাজটা আকাশে উড়িয়ে দিতেন, যা কখনোবা আফ্রিকার কোনো গহীন অরণ্যে, কখনো বা আমাজনের কোনো নির্জন স্থানে গিয়ে ল্যান্ড করতো। সেখানে তিনি নানান প্রজাতির প্রাণীর সাথে খেলা করতেন আর টারজানের মতো বন্ধুত্ব গড়ে তুলতেন! ভাগ্যিস জেনের স্বপ্নের হাওয়াই জাহাজটা মাঝপথে ক্র্যাশ করেনি!

“ডেভিড গ্রেবিয়ার্ডই প্রাণীজগতে আমার প্রথম বন্ধু।”- জেন গুডাল

ডেভিড গ্রেবিয়ার্ডের সাথে জেন; source: janegoodall.org

জেন গুডালই সম্ভবত প্রথম ব্যক্তি যিনি কোনো শিম্পাঞ্জির নামকরণ করেছিলেন মানুষের নামে। অবশ্য গ্রেবিয়ার্ডের প্রতি তার এত ভালোবাসার একটা কারণও রয়েছে। শিম্পাঞ্জি নিয়ে কাজ করতে তিনি যে অভয়ারণ্যে গিয়েছিলেন, সেখানের শিম্পাঞ্জিগুলো মানুষের সাথে একেবারেই মিশতো না। তার উপর প্রাপ্তবয়স্ক শিম্পাঞ্জিগুলো ছিল ভীষণ শক্তিশালী এবং আক্রমণাত্মক। কিন্তু জেন তাতে ভয় পাননি বিন্দুমাত্র। কারণ তার ভেতরে যে বাস করতো একটি ‘টারজান’! গ্রেবিয়ার্ড নামক শিম্পাঞ্জিটিই জেনকে প্রথম সহজভাবে মেনে নেয় এবং গ্রেবিয়ার্ডের দেখাদেখি জেনের সাথে বন্ধুত্ব করতে এগিয়ে আসে আরো অনেক শিম্পাঞ্জি।

মানুষের সাধারণ জ্ঞান বলে, যেকোনো ধরনের যন্ত্রের নির্মাণ এবং ব্যবহার কেবল মানুষের দ্বারাই সম্ভব। কিন্তু জেনের বন্ধু গ্রেবিয়ার্ড এই ধারণা বিস্ময়করভাবে পাল্টে দিল। বিজ্ঞানমহলে প্রতিষ্ঠিত হলো এক অদ্ভুত সত্য- শিম্পাঞ্জিও যন্ত্র নির্মাণ এবং ব্যবহার করতে পারে! হ্যাঁ, প্রাণীটির এই বিস্ময়কর ক্ষমতা জেন গুডালই প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন। রুটিনমাফিক গ্রেবিয়ার্ডের সাথে দেখা করতে গিয়ে একদিন তিনি লক্ষ্য করেন, উইপোকার ঢিবি থেকে উইপোকা বের করার জন্য অদ্ভুত উপায়ে ঘাসের ব্যবহার করছে প্রাণীটি! চকিত জেন ব্যাপারটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করবার জন্য দূরেই দাঁড়িয়ে রইলেন ঠায়। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, শিম্পাঞ্জিটি গাছের পাতা ছিড়ে তা দ্বারা বিশেষ উপায়ে ঢিবি থেকে উইপোকা বের করে নিয়ে আসছে!

নিজের তৈরি যন্ত্র দ্বারা উইপোকার ঢিবি থেকে উইপোকা বের করছে একটি শিম্পাঞ্জি; source: .bbc.com

শিম্পাঞ্জির সাথে জেন গুডালের জীবনভর সখ্যতার এটা ছিল শুরু। শিম্পাঞ্জির এমন অদ্ভুত ক্ষমতা দেখে এই প্রাণী নিয়ে কাজ করার আগ্রহ আরো বহুগুণে বেড়ে যায় তার। শিম্পাঞ্জির যান্ত্রিক ক্ষমতা আবিষ্কারের কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলেন যে, একদল শিম্পাঞ্জি মিলে একটি বানর শিকার করে সেটির মাংস খাচ্ছে। তবে এর চেয়েও মজার একটি মানবীয় বৈশিষ্ট্য তিনি খুঁজে পান এই পশুর মধ্যে। আর তা হচ্ছে, এরা দলবেঁধে থাকতে ভালোবাসে এবং প্রতিটি দলই নিজেদের নির্দিষ্ট পরিমাণ এলাকা দখল করে রাখে। যদি একদলের কোনো সদস্য আরেক দলের এলাকায় প্রবেশ করে, তাহলে সে সদস্যটিকে আটক করে শাস্তি দেয়া হয়। অধিকাংশ সময়ই অনুপ্রবেশকারী শিম্পাঞ্জিটিকে ছেড়ে দেয়া হলেও কখনোবা হত্যাও করা হয়!

জেন গুডালের একজন প্রাণীবিদ কিংবা নির্দিষ্ট করে বললে একজন শিম্পাঞ্জি প্রেমিক হয়ে ওঠার পেছনে ব্যাপকভাবে কাজ করেছে তার ঔদাসীন্য। তার বাবা হার্বার্ট মরিস ছিলেন একজন টেলিফোন ইঞ্জিনিয়ার, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ আর্মির সাথে ফ্রান্সে চলে যান মরিস। তখন জেন সপরিবারে বোর্নমাউথে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। এ সময় তার বয়স মাত্র ছয় বছর। তিনি নিজ চোখে দেখেছেন যুদ্ধের বিভীষিকা, দূরে দেখেছেন নাৎসিদের বোমা পড়ছে, শুনেছেন তার বিস্ফোরণের ভয়ানক আওয়াজ, অনুভব করেছেন কম্পন, পত্রপত্রিকায় দেখেছেন মানুষের হাহাকার। এতসব দেখার পর শিশুমনে কেমন করে তা দাগ কাটে তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তার মা মার্গারেট। কিন্তু সব দুশ্চিন্তার অবসান ঘটিয়ে তিনি দেখালেন এক পরম ঔদাসীন্য! এত হানাহানি আর রক্তপাত দেখেও নিজের পোষা প্রাণীদের সাথে দিব্যি সুখী জীবন যাপন করেছেন ছয় বছর বয়সী জেন!

জেনের এলিগেটর ক্লাবের সদস্যরা; source: pinterest.com

বয়স বাড়ার সাথে জেনের পশুপ্রেমও বাড়তে থাকে। মাত্র ১২ বছর বয়সে প্রাণপ্রকৃতি বিষয়ক গবেষণার জন্য তিনি একটি ঘরোয়া ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম দেন ‘এলিগেটর ক্লাব’! ক্লাবের প্রেসিডেন্ট তিনি নিজে এবং সাধারণ সদস্য তার বোন ও দুই বন্ধবীসহ মোট ৩ জন। এই ক্লাবের কার্যক্রম নিয়মিত চলতো, বক্তৃতা হতো, আলোচনা হতো। এসব আলোচনা বা বক্তৃতা জেনই পরিচালনা করতেন এবং ক্লাবের জন্য নিজ হাতে ম্যাগাজিন রচনা করতেন। এই কাজগুলো নিতান্ত শিশুসুলভ হলেও এর গুরুত্ব অন্য জায়াগায়। এই ব্যাপারগুলোই জেনের গভীর পশুপ্রেমের ইঙ্গিতবাহী। দিন বাড়তে থাকে, জীববিজ্ঞানের প্রতি তার ভালোবাসা বাড়তে থাকে, আর বাড়তে থাকে অন্যান্য বিষয়ের প্রতি অনীহা। সে কারণেই স্কুলজীবনটা খুব একটা ভালো কাটেনি তার।

কলেজে পড়ালেখা শেষে সাংবাদিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে আগ্রহী ছিলেন জেন গুডাল। তিনি ভেবেছিলেন, সাংবাদিক হয়ে জীবিকার্জন করবেন আর অবসর সময়ে নিজের প্রিয় বিষয়ে পড়ালেখা করবেন। কিন্তু তার জীবনের চিত্রনাট্য লেখা ছিল অন্যরকমভাবে। অর্থের অভাবে যেখানে ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে পারেননি তিনি, সেখানে নিজের স্বপ্নের আফ্রিকায় ভ্রমণ তো তার জন্য দিবাস্বপ্নেরই সামিল ছিল। ১৯৫৫ সালে সে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরের বার্তা বয়ে আনে তার বন্ধুর একটি চিঠি। সে চিঠিতে দু’বছর পর জেনকে কানাডা যাবার আমন্ত্রণ জানানো হয়। জেন সাগ্রহে সে চিঠির উত্তর লিখে পাঠান, তিনি আসছেন। পরবর্তী দুই বছর তিনি অত্যন্ত মিতব্যায়ী হয়ে দিনাতিপাত করেন কেনিয়া যাবার খরচ যোগাতে।

গোম্বি রিজার্ভে জেন; source: sciencefriday.com/

তিন সপ্তাহের জাহাজ ভ্রমণ শেষে, ১৯৫৭ সালের মার্চে কেনিয়ার রাজধানী শহর নাইরোবিতে পৌঁছেন জেন। সেখানে একটি অফিসে চাকরি নেন তিনি। এই চাকরিই মূলত তাকে তার স্বপ্নযাত্রায় গাঁ ভাসাতে সহায়তা করেছিল। কেননা তার অফিসে তার বস ছিলেন বিখ্যাত জীবাশ্মবিদ লুইস লিকি। জেনের পশুপাখি নিয়ে আগ্রহের কথা জানতে পেরে চমৎকৃত হন লিকি। “শিম্পাঞ্জি হচ্ছে মানুষের একটি প্রাচীন পূর্বপুরুষ।”- চার্লস ডারউইনের এই তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন লিকি। তিনি তার নিজস্ব যুক্তি দিয়ে জেনকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম হন। এর মাঝে একবার লিকি ও তার স্ত্রীর সাথে তানজানিয়ায় ফসিল নিয়ে গবেষণা করতেও গিয়েছিলেন জেন। সেখানেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নে যে তিনি শিম্পাঞ্জি নিয়ে কাজ করবেন। ১৯৬০ সাল থেকে তিনি তানজানিয়ার ‘গোম্বি স্ট্রিম শিম্পাঞ্জি রিজার্ভ’ এ কাজ শুরু করেন।

গবেষণার জন্য গোম্বির এই বাড়িটিতে দীর্ঘকাল বসবাস করেছেন জেন; source: janegoodall.at

গোম্বি রিজার্ভে কাজ করেই শিম্পাঞ্জি সম্পর্কিত বেশ কিছু বৈপ্লবিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন জেন। লিকির সহায়তায় তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইথোলজি’ বা প্রাণীর আচরণ বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতে যান। ১৯৬৫ সালে ‘বিহেভিয়ার অব ফ্রি রেঞ্জিং শিম্পাঞ্জিস’ শিরোনামে তার গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়। এই গবেষণা তাকে খ্যাতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দুটোই এনে দেয়। প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্যই পরবর্তীতে তিনি একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ গবেষক হিসেবে কাজ করতে সক্ষম হন। অবশ্য এর আগেই, ১৯৬৩ সালে ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফি’ তাকে ব্যাক্তিগত গবেষণা করার জন্য অর্থায়ন করে। সেখান থেকে তিনি প্রকাশ করেন ‘মাই লাইফ এমং ওয়াইল্ড শিম্পাঞ্জিস’। পরের বছর তাকে নিয়ে ‘মিস গুডাল অ্যান্ড দ্য ওয়াইল্ড শিম্পাঞ্জিস’ নামক একটি ডকুমেন্টারি সিরিজ বের করে ন্যাট জিও, যা কিনা ব্যাপক সফলতা লাভ করে।

“শিম্পাঞ্জির অবাচনিক যোগাযোগ ঠিক আমাদের মতো।”- জেন গুডাল

জেন তার পরবর্তী গবেষণাগুলোতে শিম্পাঞ্জি সম্পর্কিত আরো অনেক মজাদার তথ্য বের করে আনেন। এর মধ্যে একটি ব্যাপার হচ্ছে, শিম্পাঞ্জি মানুষের মতোই কিছু সামাজিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। এদের মধ্যেও স্বামী-স্ত্রী কিংবা মা-সন্তানের রয়েছে শক্ত বন্ধন। এরাও একে অপরকে জড়িয়ে ধরে, চুমু খেয়ে ভালোবাসা জ্ঞাপন করে, চড় মেরে তিরস্কার করে, সন্তানকে শত্রুর মোকাবিলা করার শিক্ষা দেয়। তাছাড়া শিম্পাঞ্জির মাতৃত্ব ঠিক সহজাত নয়, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বলা চলে। জেনের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, একজন বয়ঃবৃদ্ধ শিম্পাঞ্জি তার মেয়েকে কীভাবে সন্তানের যত্ন নিতে হয়, তা প্রত্যহ শিক্ষা দিচ্ছে।

জেন গুডাল ইনস্টিটিউট তথা শিম্পাঞ্জি ইডেন; source: chimpeden.com

১৯৭৭ সালে, শিম্পাঞ্জি নিয়ে দীর্ঘকালীন গবেষণার জন্য ‘জেন গুডাল ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে জেনের ক্যারিয়ারের গতিপথ পাল্টে যায়। বিশ্বজুড়ে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করেন তিনি। শিম্পঞ্জি নিয়ে মৌলিক গবেষণা, প্রাণীবিজ্ঞানে অবদান আর পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনের জন্য অজস্র সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন জেন। ‘গোল্ড মেডাল অব জ্যুলজিক্যাল সোসাইটি’, ‘ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন অ্যাওয়ার্ড’, ‘আলবার্ট শোয়েটজার মেডাল’, ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি সেন্টেনিয়াল অ্যাওয়ার্ড’, ‘বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন অ্যাওয়ার্ড’, ‘ফ্রেঞ্চ লিজিয়ন অব অনার’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাম।

শৈশবের জুবিলি খেলনাটি এখনো সযত্নে রেখে দিয়েছেন জেন; source: pinterest.com

১৯৩৪ সালের ৩ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন ভ্যালেরিয়া জেন মরিস গুডাল। তার বাবার কিনে দেয়া জীবনের প্রথম খেলনাটি ছিল কাকতালীয়ভাবে একটি শিম্পাঞ্জির পুতুল, যার নাম ছিল ‘জুবিলি’। জন্মের শহরকে ভালোমতো দেখার সুযোগ হয়নি জেনের। কারণ তার জন্মের এক বছর পরই তার পরিবার লন্ডন ছেড়ে ওয়েব্রিজে চলে যায়। তার যখন ৫ বছর, তার পরিবার আরো একবার বাসস্থান পরিবর্তন করে। এবার একেবারে স্বদেশ ছেড়ে ফ্রান্সে। অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু সাথে সাথেই তারা লন্ডনের ফোকস্টোনে চলে আসে।

source: CNN.com

১৯৬৪ সালে জেন, চলচ্চিত্র নির্মাতা হুগো ভ্যান লাভিককে বিয়ে করেন। ১০ বছর সংসার করার পর হুগোর সাথে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটান জেন। পরের বছরই বিয়ে করেন ড্যারেক ব্রাইসেশনকে। দুর্ভাগ্যক্রমে ১৯৮০ সালে ড্যারেক দুর্ঘটনায় মারা যান। তাতে একাকী জেন গুডাল ভেঙে পড়েননি, ভাঙবেনও না আর। তিনি জীবনভর কাজ করেছেন শিম্পাঞ্জি নিয়ে, এখনো করে চলেছেন নিরলসভাবে।

ফিচার ছবি: janegoodall.org.au

Related Articles