Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জোনাস সাল্ক: পোলিও ভাইরাসকে চিরতরে বিদায় দিয়েছিলেন যে মানুষটি

কলম্বিয়া ব্রডকাস্ট সিস্টেমের কিংবদন্তীতুল্য একজন সাংবাদিক হলেন এডওয়ার্ড আর. মারো। ১৯৫৫ সালের ১২ এপ্রিল তিনি জোনাস সাল্ক নামক এক বিশিষ্ট ব্যক্তির ইন্টারভিউয়ের আয়োজন করেন। ইন্টারভিউ চলাকালে একপর্যায়ে এডওয়ার্ড প্রশ্ন করে বসেন, “আপনার আবিষ্কারটি কার নামে স্বত্ত্বায়িত করা হয়েছে?” প্রশ্ন শুনে সাল্ক খানিকটা নড়েচড়ে বসেন, তিনি বলেন, “এর স্বত্ত্বাধিকারী হলো সাধারণ জনগণ”। প্রশ্নকর্তা অবাক হবার ভঙ্গি করলে সাল্ক তখন তার জবাবটি ব্যাখ্যা করা শুরু করেন, তিনি বলেন, “এই আবিষ্কারটির পেছনে রয়েছে লাখো মানুষের দানকৃত অর্থ, সেই অর্থে গবেষণা হয়েছে, সাধারণ জনগণের অর্থেই এর ট্রায়ালের আয়োজন সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে, সাধারণ জনগণ ছাড়া এর মালিকানা আর কাকে হস্তান্তর করা যেতে পারে! এই আবিষ্কারটির কোনোরূপ স্বত্ত্বাধিকার অধিগ্রহণ করা হয়নি, আপনি কি সূর্যকে স্বত্ত্বায়িত করতে পারবেন?”

জোনাস সাল্ক নামের এই ভদ্রলোক খুবই সাদাসিধে একজন মানুষ ছিলেন, পেশায় ছিলেন একজন চিকিৎসক। এই মানুষটির কর্মক্ষেত্রের প্রায় পুরোটাই কেটেছে মানবজাতির জন্যে হুমকিস্বরূপ ভাইরাসগুলোর বিরুদ্ধে গবেষণার মধ্য দিয়ে। জীবনের শেষদিকে এইডস এবং এইচআইভি ভাইরাস নিয়েও কিছু গবেষণা করেছেন তিনি। মানুষটি বেঁচে নেই, কিন্তু তার কাজগুলো বেঁচে রয়েছে, তার নিজ হাতে গড়ে তোলা ‘সাল্ক ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল স্টাডিজ’-এ আজও চলছে মানবজাতির কাছে হুমকিস্বরূপ ভাইরাসগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রচেষ্টা।

জোনাস সাল্ক; Source: biography.com

বিংশ শতাব্দীতে সমাধা হওয়া বড় বড় সমস্যাগুলোর মাঝে একটি ছিলো পোলিও ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার। ১৯৫৩ সালে জোনাস সাল্ক নামক একজন চিকিৎসক ও গবেষক প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেন যে, তিনি পোলিও ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছেন যা সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং পূর্ণরূপে কার্যক্ষম। এই ঘোষণা তখন ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে, সাধারণ মানুষ আশার আলো খুঁজে পায়। সেই সময়টায় পোলিও নামক ভাইরাসের আক্রমণে সংঘটিত হওয়া প্যারালাইসিস ছিলো মানুষের কাছে বিভীষিকাময়। পোলিও ভাইরাসের প্রধান শিকারই ছিলো শিশুরা। তাই একে ডাকা হতো ‘শিশুদের প্যারালাইসিস’ বলে।

পোলিও ভাইরাস; Source: virology.wisc.edu

এই পোলিও ভাইরাসের আক্রমণ এতটাই ভয়াবহ ছিলো যে, কোনোরূপ পূর্বলক্ষণ ছাড়াই এটি আক্রমণ করে বসতো। বিজ্ঞানীরা এটাও জানতেন না যে, কোন মাধ্যমে এই রোগ মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে। এমনই ভয়ংকর এক রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়েছে, এই সংবাদ পৌঁছানো মাত্র মানুষের মাঝে উত্তেজনা তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক।

১৯১৪ সালের ২৮ অক্টোবর, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন জোনাস সাল্ক। তার বাবা স্থানীয় এক গার্মেন্টসে চাকুরী করতেন, পরিবারে অর্থের টানাপোড়ন ছিলো যদিও। তবু তার বাবা-মায়ের কাছে সন্তানের শিক্ষাকে নিশ্চিত করাটাই ছিলো মুখ্য উদ্দেশ্য। তার বাবা-মা সবসময় চাইতেন তিনি যেন মন দিয়ে পড়াশোনা করেন। ৩ ভাইয়ের মাঝে তিনিই সর্বপ্রথম কলেজে পড়াশোনার করার সুযোগ পান।

বিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে তিনি ভর্তি হলেন নিউ ইয়র্কের সিটি কলেজে। এখান থেকেই তিনি বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি ভর্তি হন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে, এম. ডি কোর্সে। এম. ডি কোর্সের পড়াশোনা শেষে তিনি ইন্টার্ন করেন মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে, সেখানে ২ বছর ইন্টার্নশিপ শেষে তিনি মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো নির্বাচিত হন। এখান থেকেই শুরু হয় তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস নিয়ে চিকিৎসক থমাস ফ্রান্সিস জুনিয়রের সাথে গবেষণা শুরু করেন তিনি। ফ্রান্সিস জুনিয়রের কাছ থেকেই তিনি একটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক তৈরির পদ্ধতি শিখেছিলেন।

ভাইরাস নিয়ে গবেষক হিসেবে সাল্কের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। ১৯৪২ সালে তিনি শুরু করেছিলেন এই যাত্রা। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানবজাতিকে কীভাবে রক্ষা করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন তিনি। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথে সেই সময় একটি গবেষক দল চেষ্টা করছিলো কীভাবে ইনফ্লুয়েঞ্জা সৃষ্টিকারী ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানবদেহে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। এই গবেষক দলে জোনাস সাল্কও নিজেকে জুড়ে নেন। ১৯৪৭ সালে তিনি তার নিষ্ঠা আর পরিশ্রমের যোগ্যতাবলে পিটার্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরাস বিষয়ক গবেষণাগারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। পিটার্সবুর্গে দায়িত্বে পেয়েই তিনি শুরু করেন পোলিও ভাইরাস নিয়ে গবেষণা।

পোলিও ভাইরাসে আক্রান্ত ফ্র্যাংকলিন রুজভেল্ট; Source: wikipedia.com

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাংকলিন রুজভেল্ট নিজেও ছিলেন পোলিও ভাইরাসের শিকার। তিনি তখনও রাষ্ট্রপতি হননি, ১৯২১ সালে ৩৯ বছর বয়সী রুজভেল্ট যখন গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে, তখন তার মাঝে পোলিও ভাইরাসের লক্ষণ প্রথম প্রকাশ পায়। পোলিওর কোনো চিকিৎসা তখনো না থাকায়, এই ভাইরাসের আক্রমণে রুজভেল্টের পা দুটো পুরোপুরি অক্ষম হয়ে পড়ে। ডেমোক্রেটিক ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে সদ্য নমিনেশন পাওয়া এই রাজনীতিবিদকে সরে আসতে হয় রাজনীতি থেকে।

পরবর্তীতে অবশ্য পায়ে ব্রেইস ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি হাঁটাচলা শুরু করতে পেরেছিলেন, তখন আবারও প্রবেশ করেন রাজনীতিতে। ধারণা করা হয়, তিনিই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি শারীরিক অক্ষমতা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।

মার্চ অব ডাইমের প্রচারপত্র; Source: pinterest.com

যা-ই হোক, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের ৫ বছর পর, ১৯৩৮ সালে গড়ে তুলেন ‘ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইনফ্যান্টাইল প্যারালাইসিস’। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পোলিও ভাইরাসে আক্রান্তদের সহায়তার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। পরবর্তীতে জোনাস সাল্ক কর্তৃক পোলিও প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হলে, সেই প্রতিষেধককে সর্বসাধারণের ব্যবহারোপযোগী করে তোলার জন্য যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পাদিত হয়, তাতে বিরাট ভূমিকা পালন করে রুজভেল্ট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই ফাউন্ডেশনটি। সাল্কের প্রতিষেধকটি মানুষের দেহে পরীক্ষা করে দেখতে যে অর্থ প্রয়োজন হয়েছিলো তার সিংহভাগই আসে ‘মার্চ অব ডাইম ফাউন্ডেশন’ থেকে, যা ‘ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইনফ্যান্টাইল প্যারালাইসিস’ এর পরিবর্তিত নাম।

তৎকালীন বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে, একটি পূর্ণাঙ্গ কার্যক্ষম প্রতিষেধক কেবলমাত্র জীবন্ত কিন্তু ক্ষতি করতে অক্ষম ভাইরাস দিয়েই প্রস্তুত করা সম্ভব। বিজ্ঞানীবর্গের এই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে, সাল্ক প্রস্তুত করেন সম্পূর্ণ ভিন্নরূপী এক প্রতিষেধক। তিনি পোলিও ভাইরাস নিয়ে তাতে ফরমালিন মিশ্রিত করার মাধ্যমে সেগুলোর প্রজনন ক্ষমতাকে পুরোপুরিরূপে ধ্বংস করে দেন। ভাইরাসের এই মৃত অংশটুকুই সুস্থ মানুষের দেহে প্রবেশ করিয়ে তিনি দেখতে পান, দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে খুব সুন্দরভাবে এটি ফাঁকি দিয়ে অ্যান্টিবডি প্রস্তুত করতে সক্ষম। অন্যান্য ভাইরাসের ক্ষেত্রে একই কাজ করা হতো, কিন্তু সেক্ষেত্রে দুর্বল জীবন্ত ভাইরাস ব্যবহার করবার নিয়ম ছিলো। সাল্কের পোলিও প্রতিষেধকে আর সেটির প্রয়োজন হয়নি।

অ্যালবার্ট সাবিন; Source: circulatingnow.nlm.nih.gov

পোলিশ গবেষক অ্যালবার্ট সাবিনও তখন গবেষণা করছিলেন পোলিও ভাইরাসের প্রতিষেধক নিয়ে, তিনি অবশ্য অণুজীববিদ্যার হিসেব মেনে জীবন্ত ভাইরাস ব্যবহার করার মাধ্যমে কাজটি করবার চেষ্টা করছিলেন। সাল্কের গবেষণা জনসমক্ষে প্রকাশিত হলে, তিনি এই প্রতিষেধককে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি তাচ্ছ্বিল্যের সাথে এটাও বলেন যে, জোনাস সাল্ক একজন রসুইখানার রসায়নবিদ মাত্র।

সফলভাবে বানরের শরীরে এই প্রতিষেধক পরীক্ষা করার পর সাল্ক ভাবেন, এটিই উপযুক্ত সময় মানুষের দেহে পরীক্ষা করার। ১৯৫২ সালে তিনি বেশ কিছু শিশুদেহে এই প্রতিষেধকটি ইঞ্জেকশনের সাহায্যে প্রবেশ করান। একইসাথে তিনি তার নিজের দেহে, নিজের স্ত্রী ও ৩ ছেলের দেহে এই প্রতিষেধক সেবন করান। অবশেষে কারো মাঝেই যখন কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয় না তখন ১৯৫৩ সালের ২৬ মার্চ তিনি জাতীয় রেডিওতে তার এই সফলতার গল্প তুলে ধরেন।

১৯৫৪ সালে অবশেষে শুরু হয় পোলিও ভ্যাক্সিনের পরীক্ষণ কার্যক্রম, জাতীয়ভাবে ৬-৯ বছর বয়সী ১০ লক্ষ শিশু নিয়ে এই পরীক্ষাপর্ব শুরু করা হয়েছিলো। ১৯৫৫ সালের ১২ এপ্রিল এই প্রতিষেধক পরীক্ষণের ফলাফল ঘোষিত হয়। বলা হয়, এই প্রতিষেধকটি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং পরিপূর্ণরূপে কার্যক্ষম। এই ঘোষণার পরবর্তী সময়ে বাজারজাতকরণ শুরু হয় প্রতিষেধকটিকে, সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

সাল্ক আবিষ্কৃত প্রতিষেধকটির সফলতা যেন অ্যালবার্টি সাবিন সাহেবের আর সহ্য হচ্ছিলো না। তিনি এক ইন্টারভিউতে এমনও মন্তব্য করেন যে, এই প্রতিষেধকটি পোলিও ভাইরাসকে প্রতিরোধ করবার চেয়ে উল্টো অধিক মানুষকে আক্রমণ করবার সুযোগ করে দেবে। পারতপক্ষে এমনটি হয়নি, বরং সাল্কের প্রতিষেধকটি এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেই সমানভাবে কার্যকর।

Source: asianexpress.co.uk

আমরা জানি, পোলিও প্রতিষেধকই একমাত্র প্রতিষেধক যা মুখে খাওয়ানো হয়, অন্যসব প্রতিষেধকের মতো করে ইঞ্জেকশন ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু জোনাস সাল্ক আবিষ্কৃত প্রতিষেধকটি কিন্তু সেই সময় ইঞ্জেকশনের সাথেই দিতে হতো। বাজারে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রে ঢালাওভাবে এর প্রসার নিশ্চিত করে তৎকালীন সরকার। পরবর্তীতে আলবার্ট সাবিন কর্তৃক আবিষ্কৃত হয় ওরাল পোলিও প্রতিষেধক যা মুখে সেবন করা সম্ভব।

ওরাল পোলিও প্রতিষেধক বাজারে আসে ১৯৬১ সালে। এর জন্য কোনো ইঞ্জেকশন দেওয়া কিংবা তুলা-জীবাণুনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন না হওয়ায় এটিকে অধিক সুবিধাজনক মনে করা হয়। এই প্রতিষেধক প্রস্তুত করতেও খরচ কম হতো, ছোট ছোট চিনির কিউবে প্রতিষেধক দিয়ে বাজারজাত করা হয়েছিলো। এ সকল কারণেই সাল্ক আবিষ্কৃত প্রতিষেধকটিকে হঠিয়ে জায়গা করে নেয় সাবিনের ওরাল প্রতিষেধক।

জোনাস সাল্ক যেহেতু কখনো এই প্রতিষেধকটির স্বত্ত্ব সংগ্রহ করবার চেষ্টা করেননি, সেহেতু এই প্রতিষেধক থেকে অর্থ আয়েরও কোনো সুযোগ ছিলো না। তিনি বরং ঘোষণা করেন যে, এই প্রতিষেধকটি যত দ্রুত মানুষের উপকারে কাজে লাগানো যায় ততই মঙ্গল।

রাতারাতি জাতীয় নায়ক বনে যাওয়া সাল্কের প্রতি ছিলো মানুষের মনে পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা; Source: achievement.org

বর্তমানে আমাদের দেশে যে সাল্ক আবিষ্কৃত প্রতিষেধকটি আর ব্যবহৃত হয় না, তা নিশ্চয়ই পাঠকবৃন্দ বুঝে নিয়েছেন। সাবিন আবিষ্কৃত প্রতিষেধকটি সবদিক থেকে সুবিধাজনক, উপরন্তু এত এত ইঞ্জেকশনের ভিড়ে এই এক প্রতিষেধক যার ক্ষেত্রে ইঞ্জেকশন ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। এসকল বিষয়কে লক্ষ্য রেখেই আমাদের দেশে প্রচলিত হয়ে এসেছে ওরাল পোলিও প্রতিষেধকটি।

সাবিনের প্রতিষেধক ব্যবহার করেও দেখা গেছে যে, প্রতি বছর প্রায় ১২ জন পোলিওতে আক্রান্ত হয়। এই ১২ জনের হিসেবটিকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ ওরাল পোলিও প্রতিষেধকের পরিবর্তে সাল্ক আবিষ্কৃত প্রতিষেধক ব্যবহারের জন্য পোলিওমুক্ত দেশগুলোর প্রতি আহবান জানায়।

সাল্ক ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল স্টাডিজ; Source: sciencemag.org

১৯৬৩ সালে সাল্ক গড়ে তোলেন এক গবেষণা কেন্দ্র, সাল্ক ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল স্টাডিজ। সেখানে সাল্ক ক্যান্সার সহ আরো বহু প্রাণঘাতী রোগ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানকার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী জীবনে তিনি এইডস ও এইচআইভি ভাইরাস নিয়েও কিছু গবেষণা করেন।

স্বীয় কাজ নিয়ে তিনি লিখেছেন বেশ কিছু বই। সেগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ১৯৭২ সালে প্রকাশিত ‘ম্যান আনফোল্ডিং’। এছাড়াও তার ছেলে জোনাথনের সাথে মিলে তিনি লিখেছিলেন ‘দ্য সারভাইবাল অব দি ওয়াইজেস্ট’; যা প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে।

Source: salk.edu

জোনাস সাল্ক মারা যান ৮০ বছর বয়সে, ১৯৯৫ সালের ২৩ জুন, ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত নিজ বাড়িতে। প্রতিষেধক নিয়ে সারাজীবন কাজ করার মাধ্যমে তিনি সম্মানিত এক স্থান করে নিয়েছেন চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে। চিকিৎসাশাস্ত্রে সর্বদা এই মানুষটিকে স্মরণ করা হবে পোলিও প্রতিষেধকের আবিষ্কারক হিসেবে, যে মানুষটি চিরতরে বিদায় দিয়েছিলেন পোলিওর মতো মারাত্মক এক ভাইরাসকে।

ফিচার ইমেজ: history.com

Related Articles