Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যাপল ডিজাইনার জনি আইভ: পর্দার পেছনের মানুষটি

আপনি হয়তো অ্যাপলের প্রাণপুরুষ ‘স্টিভ জবস’ নামটি শুনেছেন, আপলের বর্তমান সিইও (CEO) টিম কুক নামটিও হয়তো আপনার অজানা নয়। কিন্তু আপনি কি স্যার জোনাথন আইভ বা জনি আইভ নামটি শুনেছেন?

অ্যাপলের বর্তমান সিডিও (CDO) এবং সেই স্টিভ যুগ থেকে অ্যাপলের ডিজাইন টিমের কাণ্ডারি হিসেবে যে মানুষটি কাজ করে এসেছেন, যার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নকশা এবং সত্যিকারের অবয়ব তৈরি হয়েছে অসংখ্য অ্যাপল পণ্যের, পর্দার পিছনের সেই মানুষটিই জনি আইভ।

মেধাবী ছাত্রজীবন

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন জনি আইভ। হাই স্কুলের পাঠ শেষে তাঁর সুযোগ আসে বিখ্যাত ‘রয়্যাল কলেজ অব আর্ট’ এ গাড়ি ডিজাইনিংয়ের উপর পড়াশোনা করার। কিন্তু অত্যন্ত মেধাবী এবং দৃঢ়চেতা জনির নাকি গাড়ির আওয়াজ ভালো লাগে না! তিনি পড়াশোনা করলেন ‘শিল্প নকশার’  উপরে। তিনি নিউক্যাসেল পলিটেকনিক (পরবর্তীতে নর্থাম্ব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষিত হয়) থেকে প্রথমে সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া রয়্যাল কলেজ অব আর্টস, দ্য নিউ রোডস আইল্যান্ড স্কুল অব ডিজাইন এবং নর্থাম্ব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেন পিএইচডি ডিগ্রি। ছাত্রাবস্থায়ই আবিস্কার করে ফেলেন একটি শ্রুতি-সাহায্য যন্ত্রের নকশা, যা প্রদর্শিত হয় লন্ডনের ডিজাইন জাদুঘরে। এসময় তিনি রয়্যাল সোসাইটি অব আর্টস থেকে দু-দু’বার জিতে নেন স্টুডেন্ট ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড। এর পরপরই এখান থেকে অর্জন করেন রয়্যাল ডিজাইনারের সম্মান। কিন্তু বেশি গুণ থাকলে যা হয় আর কী! ডিগ্রি অর্জনের পরে কোন শাখায় কাজ করবেন, সেটিই ভেবে পাচ্ছিলেন না। অবশেষে অনেক নকশা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হলেন এই জনি, শেষে কাজ শুরু করলেন তারই কলেজ স্পন্সর, ডিজাইন এজেন্সি ‘লন্ডন ওয়েভার গ্রুপের’ সাথে।

যুবক জনি আইভ; source: telegraph.co.uk

অ্যাপল ক্যারিয়ার

শিল্প নকশা বিভাগের একজন খণ্ডকালীন পরামর্শদাতা হিসেবে জনির অ্যাপল ক্যারিয়ার শুরু। ১৯৯২ সালের মধ্যেই তিনি পুরোদমে চাকরি শুরু করেন অ্যাপলে। ক্যারিয়ারের প্রথমদিকে কাজ করেন ২য় প্রজন্মের নিউটন এবং মেসেজ প্যাড ১১০ নিয়ে। ইতোমধ্যেই অ্যাপলে ফিরে আসেন স্টিভ জবস। স্টিভের সাথে মতের মিল না হওয়ায় একপর্যায়ে প্রায় চাকরিই ছেড়ে দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু বসের অনুরোধে শেষপর্যন্ত থেকে যান তিনি অ্যাপলে।

আইভের নকশায় ৫ম প্রজন্মের আইপড; source: wikimedia.org

  • ১৯৯৭ সালে অ্যাপলের ‘শিল্প নকশা’ বিভাগের প্রধান হন আইভ। তারপর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি অ্যাপলকে। অ্যাপলের আজকের আকাশছোঁয়া সাফল্যের শুরুটা মূলত তখন থেকেই।
  • ঐ সময়টায় জনি কাজ শুরু করেন আইম্যাকের নকশা নিয়ে, যা মূলত অ্যাপলের বর্তমান নকশা ধারার প্রথম পণ্য। আইম্যাকের ঐ নকশা দ্বার খুলে দেয় প্রথমে আইপডের এবং পরবর্তীতে বর্তমান আইফোনের যুগান্তকারী নকশার। আইভের প্রধান লক্ষ্য ছিল অ্যাপলের প্রতিটি পণ্যের নকশার ক্ষেত্রে একটা ‘নিজস্ব মৌলিকত্ব’ বজায় রাখা। এটি করতে গিয়ে তাকে রাতের পর রাত কাজ করে যেতে হয়েছে।
  • শিল্প নকশার পাশাপাশি ২০১২ সালে জনি আইভকে অ্যাপলের হিউম্যান ইন্টারফেস (HI) বিভাগের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। আইওএস ৭ উন্মোচনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই পর্দার পেছনের ব্যক্তিকে বলা হয়েছিল ‘সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অব অ্যাপল’।

২৬ মে, ২০১৫; জনি আইভকে পদোন্নতি দিয়ে করা হয় অ্যাপলের চিফ ডিজাইন অফিসার(CDO)। তিনি এখন অ্যাপলের চার C- লেভেল অফিসারের একজন, যার নিয়ন্ত্রণে আছে অ্যাপলের পুরো নকশা বিভাগ।

অ্যাপল স্টোর এবং অ্যাপল পার্ক

এ পর্যন্ত অসংখ্য অ্যাপল পণ্যের নকশা করেছেন জনি আইভ। মূলত, অ্যাপল পণ্যের ‘দৃষ্টি নান্দনিকতা’র বিষয়টির দেখভালের মূল দায়িত্বই তাঁর। আধুনিক সব অ্যাপল স্টোর এবং অ্যাপল পার্কের নকশা মূলত তিনিই করেছেন। ‘সহজ সরল কিন্তু আভিজাত্যপূর্ণ নান্দনিকতা’- তাঁর ডিজাইনিং বৈশিষ্ট্য।

অ্যাপল স্টোর; source: theverge.com

নিজস্ব অফিস

জেনে হয়তো কিছুটা অবাকই হবেন, অ্যাপলের নকশা বিভাগে একমাত্র জনি আইভের নিজস্ব একখানা অফিস আছে! তার অফিসে প্রবেশাধিকার খুবই সীমিত সংখ্যক মানুষের। যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড থেকে বাছাই করা অত্যন্ত মেধাবী ১৫ জন ডিজাইনার নিয়ে তার অ্যাপলের ডিজাইন টিম গঠিত। এই ডিজাইন টিম একসাথে কাজ করছে প্রায় দুই যুগ ধরে। অ্যাপলে বিপ্লবের মূল হোতা মূলত এই ডিজাইন টিমটি। এক সিইও এবং এই ডিজাইন টিমের সদস্যরা বাদে তার অফিসে প্রবেশাধিকার নেই অন্য কারো। এমনকি জনি আইভের নিজের সন্তানদেরও না। গোপনীয়তার বিষয়ে তারা পুরোপুরি সজাগ, কেননা অ্যাপলের গুরুত্বপূর্ণ সব পণ্যের নকশা তৈরি থেকে শুরু করে ভবিষ্যতের জন্য সব প্রোটোটাইপের নকশা নিয়ে কাজ করা হয় এখানেই। কাজেই নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি।

ড্রোন থেকে তোলা নির্মাণাধীন অ্যাপল পার্ক; source: businessinsider.com

‘রয়্যাল কলেজ অফ আর্ট’ ক্যারিয়ার

২৫ মে, ২০১৭; জনি আইভকে রয়্যাল কলেজ অফ আর্টের ‘আচার্য’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জনি আইভ ১ জুলাই থেকে কলেজটির আচার্য হিসেবে কর্মরত আছেন। পাঁচ বছর মেয়াদি এই পদে তাঁর দায়িত্ব হল কলেজের মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করা এবং কলেজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। এই দায়িত্ব সম্পর্কে জনি বলেন-

‘রয়্যাল কলেজ অফ আর্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরে আমি অত্যন্ত খুশি। এই কলেজ শত শত গুণী শিল্পী এবং নকশাবিদ তৈরি করেছে বছরের পর বছর ধরে। আমি সত্যিই অনেক আনন্দিত’।

সাফল্য

প্রায় ৫,০০০ এর মতো প্যাটেন্ট করা আছে আইভের নামে। ‘রুচিশীল এবং দৃষ্টিনন্দন নকশা’ প্রণয়নে তার জুড়ি মেলা সত্যিই কষ্টকর। ডিজাইনিংয়ের জন্য জীবনে অসংখ্য স্বীকৃতি পেয়েছেন এই ব্যক্তি। এর মধ্যে অন্যতম-

  • ডিজাইনার অব দ্য ইয়ার, ২০০৩ (ডিজাইন মিউজিয়াম অফ লন্ডন থেকে)
  • দ্য ডিজাইন অ্যান্ড আর্ট ডিরেকশন প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড, ২০০৫
  • প্রোডাক্ট ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড (কুপার-হিউইট ন্যশনাল ডিজাইন মিউজিয়াম)
  • ২০১২ সালে ডি অ্যান্ড এডি (D & AD) জনি এবং তার টিমকে বিগত ৫০ বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ টিম হিসেবে ঘোষণা করে। সারা পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন জাদুঘরে এই টিমের কাজ স্থান পেয়েছে পাকাপাকিভাবে। এর মধ্যে আছে নিউ ইয়র্কের ‘মিউজিয়াম অব আর্ট’ এবং প্যারিসের ‘পম্পিড্যু’।
  • ২০১৩ সালে তিনি নকশা এবং উদ্যোগে তার অভাবনীয় অবদানের জন্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সম্মানজনক ‘নাইট কমান্ডার’ উপাধি লাভ করেন।

‘জনি আইভ-স্টিভ জবস’ সম্পর্ক

অ্যাপলে কর্মজীবনের শুরুর দিকে স্টিভ জবসের কারণে জনি আইভ চাকরিই ছেড়ে দিচ্ছিলেন প্রায়। কিন্তু মজার বিষয় হল, পরবর্তীতে এই দুজনই হয়ে ওঠেন খুব কাছের বন্ধু। স্টিভ জবস এক সাক্ষাৎকারে জনি আইভকে তাঁর ‘আত্মার বন্ধু’ হিসেবে অভিহিত করেন। ব্যক্তিগত জীবনে কাজপাগল এই দুজনার জীবনে খুব একটা বন্ধুবান্ধবের স্থান নেই। হয়তো একসাথে কাজ করার কারণেই আস্তে আস্তে খুব ভালো বন্ধুতে পরিণত হন এই দুজনে।

জনি আইভ-স্টিভ জবস বন্ধুত্ব; source: nextshark.com

জবসের মৃত্যুর চার বছর পর ‘ভ্যানিটি ফেয়ার নিউ এস্টাবলিশমেন্ট সামিট’ এ স্টিভ জবসের ভূয়সী প্রশংসা করেন জনি আইভ। তিনি বলেন

‘স্টিভ আমাকে প্রতিদিনই একটা প্রশ্ন করতো। আজ ক’বার তুমি ‘না’ শব্দটি শুনেছো? এটি আসলে ও আমাকে আরো বেশি ফোকাসড হবার জন্য করতো। স্টিভ মনে করতো, যে জীবনে যত বেশি না শব্দটি শুনেছে, সে জীবনে তত বেশিই ফোকাসড। ওই আমাকে ‘না’ বলতে শিখিয়েছে ‘।

ব্যক্তিগত জীবন

ব্যক্তিগত জীবনে জনি আইভ ব্রিটিশ লেখক এবং ইতিহাসবিদ হেদার পেগের সাথে বিবাহবন্ধনে আবন্ধ। এই দম্পতির দুই যমজ সন্তান রয়েছে।

ফিচার ইমেজ-  Time Magazine

Related Articles