Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সর্বকালের সেরা আইকিউধারীর জীবনের গল্প

আলবার্ট আইনস্টাইনের আই কিউ ছিল আনুমানিক ১৬০, আইজ্যাক নিউটনের ১৯০ এবং মার্ক জাকারবার্গের আইকিউ ১৫২। এরা বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম প্রতিভাবান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু পৃথিবীতে এমন একজন ছিলেন যার আইকিউ ছিল ২০০-এরও উপরে। নাম তার উইলিয়াম জেমস সিডিস। যিনি ছিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে।

জন্ম থেকেই তিনি ছিলেন আশ্চর্য প্রতিভার অধিকারী, গণিতশাস্ত্রে তুখোড় পারদর্শী হওয়া ছাড়াও ছিলেন বহুভাষী এবং লেখক। তবে খুব কম মানুষই তার সম্পর্কে জানে।

শৈশব

উইলিয়াম জেমস সিডিস; Image Source: Findagrave.com

১৮৯৮ সালে নিউ ইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন উইলিয়াম। তার পিতামাতা উভয়ই ছিলেন বেশ মেধাবী। পিতা বরিস সিডিস ছিলেন সে সময়ের সেরা একজন মনোবিজ্ঞানী, তিনি হার্ভার্ড থেকে ৪ টি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। তার মা সারাহ ছিলেন একজন ডাক্তার। বাবা-মার মেধার কল্যাণে সন্তানও যে প্রতিভার ছোঁয়া পাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনি, কিন্তু তার প্রতিভা যে অসাধারণকেও ছাড়িয়ে যাবে তা কারো কল্পনায় ছিল না। বাবা-মা দুজনই ছেলের প্রতিভায় ছিলেন আনন্দিত, তাই ছেলের পিছনে অর্থ ব্যয়ে কোনো সংকোচ বোধ করেননি। শেখার জন্য বইসহ বিভিন্ন জিনিসের কমতি ছিল না উইলিয়ামের, তার শেখার আগ্রহ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছিল। মাত্র দেড় বছর বয়সে তিনি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকা সাবলীলভাবে পড়তে পারতেন।

বরিস সিডিস; Image Source: All that Interesting

উইলিয়ামের পিতা ছিলেন একজন বহুভাষী, তার এই গুনটি তিনি তার সন্তানকেও দিতে চেয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৬ বছর বয়সে তিনি ৮টি ভাষায় কথা বলতে শিখে যান। যার মাঝে ছিল ফ্রেঞ্চ, জার্মান, রুশ, হিব্রু, তুর্কি ও আর্মেনিয়ান। এত ভাষাতেও যেন তার মন ভরেনি, তিনি এরপর তার নিজের ভাষা তৈরি করেন। যার নাম ছিলো ‘ভেন্ডারগুড’। যদিও পরবর্তী বয়সে তিনি এটি ব্যবহার করেছিলেন কিনা তা অস্পষ্ট থেকে গিয়েছে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী এই মানুষটি লিখেছিলেন কবিতা, একটি উপন্যাস, এমনকি সম্ভাব্য ইউটোপিয়ার জন্য একটি সংবিধানও।

পত্রিকার শিরোনামে সিডিস; Image Source: Findagrave

মেধা সম্পর্কে তার বাবা সবসময় সজাগ ছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে তিনি ৯ বছর বয়সী উইলিয়ামকে হার্ভার্ডে ভর্তি করার জন্য নিয়ে যান, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ভর্তি করতে অসম্মতি প্রকাশ করে। ২ বছর পর ১৯০৯ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাকে গ্রহণ করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে উইলিয়াম সবচেয়ে কনিষ্ঠ ছাত্র হিসেবে ক্লাস শুরু করে। এরপর ১৯১০ সালে তার গণিতের জ্ঞান এতটাই শীর্ষে পৌঁছে যায় যে, ক্লাসের পরিবর্তে তিনি তার অধ্যাপকদের লেকচার দেওয়া শুরু করেছিলেন। ১৯১৪ সালে তিনি তার স্নাতক সম্পন্ন করেন, তখন তার বয়স ছিল ১৬।

নিঃসঙ্গ জীবন

খ্যাতি মানুষকে অবসাদগ্রস্ত করে ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন অল্প বয়সেই এর প্রকাশ পায়। স্নাতকের কিছুদিন পরেই তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমি নিখুঁত জীবনযাপন করতে চাই। নিখুঁত জীবনের একমাত্র উপায় হচ্ছে নিঃসঙ্গতায় বাস করা। কোলাহল আমার সবসময় অপছন্দের।” এছাড়া বৈবাহিক জীবন নিয়েও তার কোনো আগ্রহ ছিল না। নারী সঙ্গ তার জীবনে কোনো প্রভাব ফেলেনি। তার এই পরিকল্পনা মোটামুটি ভালোই কাজ করেছিল। কিছু সময়ের জন্য তিনি রাইস ইন্সটিটিউটে গণিত শিক্ষা প্রদান করেন। কিন্তু তাকে বিতাড়িত করা হয়, কারণ বেশিরভাগ ছাত্রই তার চেয়ে বয়সে বড় ছিল।

অযাচিত খ্যাতি ছাড়াও, জন্মের পর থেকে তিনি যে চাপের মুখোমুখি হয়ে আসছিলেন এই সিদ্ধান্তটি তারই প্রতিফলন। সে সময় আমেরিকায় সঠিক শিক্ষা দিয়ে শিশুদের উন্নত পথে পরিচালিত করার একটি বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। উইলিয়ামের বাবাও তাই তার সন্তানকে সমাজে উজ্জ্বল করার জন্য অতি উৎসাহী ছিলেন। সেটি অর্জনের লক্ষ্যে তিনি তার সন্তানের উপর মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি ব্যবহার করেন। শৈশবে উইলিয়ামের তা ভালো লাগলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার এই ধারণা পরিবর্তন হতে থাকে। একসময় তিনি তার পিতাকে দোষারোপ করেন। ১৯২৩ সালে তার পিতা মারা গেলেও উইলিয়াম তার পিতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যাননি।

কারাবরণ

প্রতিভাবান মানুষেরা সাধারণ জীবনযাপনের জন্য নানা পন্থা অবলম্বন করেন। তিনি একটা সময় কম টাকার কেরানীর কাজ করতেন। তা সত্ত্বেও তার মেধার পরিচয় লোকজন পেতে থাকে। যার ফলে তিনি পুনরায় তার চাকুরী পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। ১৯২৪ সালে তিনি সাংবাদিকের চোখে পড়ে যান। সে সময় তিনি সপ্তাহে ২৩ ডলারের চাকরি করতেন। এই খবর পত্রিকার শিরোনাম দখল করে কিন্তু এবার তার মেধার উপহাস করা হয়। বলা হয় তার শৈশবের মেধা হারিয়ে গিয়েছে। তার পরবর্তী জীবনে এটি ভুল প্রমাণিত হয় এবং সে সময় তিনি ছদ্মনামে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন।

পুনরায় পত্রিকার শিরোনামে; Image Source: Findafrave

তিনি ছিলেন সমাজতান্ত্রিক মনোভাবের অধিকারী এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রতিবাদীদের একজন। ১৯১৯ সালে বোস্টনে তিনি বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন এবং তা পরবর্তীতে সহিংসতায় পরিণত হয়। এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণের জন্য তাকে ১৮ মাসের সাজা দেয়া হয়। তবে কোনো উপায়ে তার বাবা-মা তাকে জেল থেকে বের করিয়ে আনেন এবং ২ বছরের জন্য স্যানিটারিয়ামে আটকে রাখেন।

অবিশ্বাস্য আইকিউ

উইলিয়াম সিডিসের আইকিউ নিয়ে কয়েক বছর ধরে অনেক জল্পনা-কল্পনা চলে। সময়ের স্রোতে তার আইকিউ পরীক্ষার রেকর্ডও হারিয়ে যায়, যার ফলে আধুনিক ইতিহাসবিদদের অনুমানের পথে হাঁটতে হয়েছে।  

১০০ আইকিউকে মাঝামাঝি বলে বিবেচনা করা হয় এবং ৭০ এর নিচে প্রায়শই নিম্নমান ধরা হয়। ১৩০ এর উপর যেকোনো স্কোরকে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত কিংবা অতি উন্নত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিছু ঐতিহাসিক আইকিউ পুনরায় বিশ্লেষণ করা হয়েছে যেমন আলবার্ট আইনস্টাইনের ১৬০, লিওনার্দো দা ভিঞ্চির ১৮০ এবং আইজ্যাক নিউটনের ১৯০। উইলিয়াম জেমস সিডিসের আইকিউ ২৫০ থেকে ৩০০ এর মধ্যে বলে ধারণা করেন ইতিহাসবিদরা।

দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু

উইলিয়ামের জীবন কেটেছে অসুখী এবং নিঃসঙ্গ অবস্থায়। জেল হওয়ার পর থেকে তিনি আরও নিঃসঙ্গতায় চলে যান। তিনি বলেছিলেন, “আমি একটি অ্যাডিং মেশিন চালাতে চাই, কিন্তু তারা আমাকে একা তা করতে দেবে না।”

১৯৩৭ সালে শেষবারের মত তিনি সাড়া ফেলেন যখন দ্য নিউ ইয়র্কার তার বিষয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। তিনি গোপনীয়তা ভঙ্গের জন্য মামলা করেন কিন্তু বিচারক মামলাটি খারিজ করে দিয়েছিলেন। আপিলে হেরে যাওয়ার পর আর বেশিদিন বাঁচার সৌভাগ্য হয়নি তার।

উইলিয়ামের সমাধিপ্রস্তর; Image Source: Findagrave

১৯৪৪ সালে ব্রেইন হ্যামরেজ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আধুনিক ইতিহাসের প্রচণ্ড আইকিউধারী এই মানুষটি তার শেষ পরিচয় দিয়ে গেলেন সামান্য এক অফিসের কেরানী হিসেবে।

Related Articles