Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চলে গেলেন ব্রিটেনের শ্রেষ্ঠ জীবিত গণিতজ্ঞ স্যার মাইকেল আতিয়াহ

গত শুক্রবার, ১১ জানুয়ারি, রয়্যাল সোসাইটির সাবেক প্রেসিডেন্ট, ব্রিটেনের শ্রেষ্ঠ জীবিত গণিতজ্ঞ, স্যার মাইকেল আতিয়াহ ৮৯ বছর বয়সে মারা গিয়েছেন। তিনি অবসর নেয়ার আগে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। জ্যামিতি এবং বীজগাণিতিক টপোগণিতে অসামান্য অবদান রেখেছেন তিনি।

বীজগাণিতিক টপোগণিত মূলত সমীকরণ এবং জ্যামিতিক আকৃতির মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে কাজ করে। বিষয়টি এতই দুর্বোধ্য যে, হাতেগোনা অল্প ক’জন ছাড়া বাকি গণিতবিদরাও এ নিয়ে হিমশিম খেয়ে যান। স্যার আতিয়াহ এ বিষয়ের একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। এক্ষেত্রে ফ্রেডরিখ হার্যবুচের সাথে যুগ্মভাবে করা তার প্রথম বড় ধরনের কাজ ছিল ‘কে-তত্ত্ব’ (K-Theory) নামে নতুন একধরনের বিশ্লেষণ পদ্ধতি গড়ে তোলা। একইসাথে বিজ্ঞানী আই এম সিঙ্গারের সাথে যুগ্মভাবে ‘ইনডেক্স থিওরেম’ নামের আরেকটি বিশ্লেষণ পদ্ধতি গড়ে তুলেছিলেন তিনি। এই পদ্ধতিগুলো যে শুধু গণিতের জগতেই বিশাল কিছু ছিল তা নয়, বরং পদার্থবিজ্ঞান, বিশেষ করে ‘কণা-পদার্থবিজ্ঞান’-এ বিশাল অবদান রেখেছে। সুপার স্পেস, সুপার গ্র্যাভিটি এবং মৌলিক কণাদের স্ট্রিং থিওরি ইত্যাদি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব গড়ে উঠেছে স্যার আতিয়াহর কাজের উপরে ভিত্তি করেই।

তার ভাই জো তাকে নিয়ে বলছিলেন,

বর্তমান সময়ের অনেক গণিতজ্ঞ আমাকে বলেছেন, স্যার আইজ্যাক নিউটনের পরে তিনিই ছিলেন ব্রিটেনের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ।

স্যার আতিয়াহ (প্রথম সারিতে, বাম থেকে পঞ্চম), ব্রিটেনের রানীর সাথে। সেই সাথে আছেন ডিউক অফ এডিনবার্গ এবং অর্ডার অফ মেরিটের অন্যান্য সদস্য; Image Source: John Stillwell/PA

মাইকেল ফ্র্যান্সিস আতিয়াহর জন্ম ১৯২৯ সালের ২২ এপ্রিল, লন্ডনে। তাঁর বাবার জাতীয়তা ছিল লেবানিজ, পেশায় সরকারি চাকরিজীবী। স্কটিশ বংশোদ্ভূত মা ছিলেন পেশায় আর্টিস্ট। বৈচিত্র্য শুধু বাবা-মায়ের জাতীয়তা এবং পেশাতেই ছিল না, ছিল শৈশব জুড়েই। পড়াশোনা করেছেন মিশরে, তারপর ভর্তি হয়েছেন ম্যানচেস্টার গ্রামার স্কুলে। তবে সে সময় বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী ছিলেন না একেবারেই।

তার ভাষায়,

স্কুলে থাকতে বিজ্ঞান আমার একদম ভালো লাগত না। হাতে-কলমে ব্যবহারিক কিছু করতে গেলে সমস্যা হত, এজন্য পদার্থবিজ্ঞান নিয়েও আগ্রহ পেতাম না তেমন। আমার বয়স যখন পনের, তখন কিছুদিন খুব মন দিয়ে রসায়ন নিয়ে কাজ করেছিলাম, কিন্তু অজৈব রসায়নের কাজ করতে গেলে যে পরিমাণ মুখস্ত করতে হয়, সেটা আমার সহ্য হত না।

সেজন্যেই পরে গণিতে মন দিয়েছিলেন।

আপনি যদি মূলনীতিগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারেন, তাহলেই হয়েছে। অনেক বেশি মুখস্ত করার কিংবা হাতে-কলমে কাজকর্ম করার কোনো দরকার নেই।

পথচলা শুরুর কিছুদিন পরেই নিজের প্রথম মৌলিক গবেষণাপত্র লিখে ফেললেন তিনি। তখনো তিনি ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের কেবল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ব্যাটে-বলে ভালই মিলল, পরীক্ষায় ডাবল ফার্স্ট পাওয়ার পর চিন্তা করলেন, এ নিয়ে আরেকটু কাজ করে দেখা যেতে পারে। আরেকটু কাজ মানে ছক্কা, একেবারে ডক্টরেট! তারপর, ১৯৫৪ সালে যোগ দিলেন সেই একই কলেজে। এদিকে, কমেনওয়েলথ চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৫৫ সাল কাটিয়েছেন প্রিন্সটনের ইন্সটিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডিজে।

প্রিন্সটন থেকে আবার ফিরলেন কেমব্রিজে, মন দিলেন শিক্ষকতায়। তারপর, ১৯৬১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট ক্যাথেরিন কলেজে রিডারশিপ পদে যোগ দেন তিনি। ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রিডারশিপ পদটির অবস্থান সিনিয়র লেকচারার আর প্রফেসরের মাঝে। কাজটা প্রফেসরের মতোই, তবে এই পদটিতে শুধু তারা থাকেন, যাদের বেশ ভালো কোনো মৌলিক গবেষণা আছে। এর বছরখানেক পরেই, মাত্র ৩২ বছর বয়সে রয়্যাল সোসাইটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন স্যার আতিয়াহ।

১৯৬৩ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত জ্যামিতির স্যাভিলিয়ান (Savilian) প্রফেসর হিসেবে অধ্যাপনা করেন অক্সফোর্ডে। ‘৬৯ সালে তিনি প্রিন্সটনের ইন্সটিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডিজে গণিতের প্রফেসর হয়ে যান। তিন বছর পরে আবারও ফিরে এলেন ইংল্যান্ডে। রয়্যাল সোসাইটির রিসার্চ প্রফেসর হিসেবে যোগ দিলেন অক্সফোর্ডে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এই অক্সফোর্ডই ছিল তার ঘাঁটি।

১৯৯০ সালে স্যার আতিয়াহকে মাস্টার অফ ট্রিনিটি কলেজ পদের জন্য নির্বাচন করা হয়। একইসাথে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রতিষ্ঠিত আইজ্যাক নিউটন ইন্সটিটিউট ফর ম্যাথমেটিক্যাল সায়েন্স- এর প্রথম মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তাকে।

এ পর্যায়ে একটি কথা বলে নেয়া যেতে পারে। গবেষণার বিষয় দুর্বোধ্য হলেও বেশিরভাগ গবেষকের মতো স্যার আতিয়াহ মোটেও অমিশুক ছিলেন না। মানুষের কাছে পৌঁছানো এবং তাদের সাথে সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে দারুণ উৎসাহী ছিলেন তিনি। সেই সাথে একটি কথা খুব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন। বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানীদের মাঝে নৈতিকতা থাকাটা আবশ্যক।

তিনি মনে করতেন, বিজ্ঞানের প্রয়োগ কোথায় হচ্ছে এবং তা থেকে যে প্রযুক্তি বানানো হচ্ছে, সেসব মানুষের উপকারে আসছে নাকি ক্ষতি করছে— এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের চিন্তা-ভাবনা করার সাথে সাথে মুখ খুলে মতামত দেয়াও দরকার। এবং বিজ্ঞানীদের অবশ্যই সরকারের সাথে নিরাপদ দূরত্ব রাখা উচিৎ, যাতে তারা স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারেন এবং মতামত দিতে পারেন।

১৯৯১ সালে স্যার আতিয়াহ রয়্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। এই পদটিতে একসময় স্যার আইজ্যাক নিউটনের মতো মানুষ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। মাত্র পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকালে তিনি এই পদের যথার্থ ব্যবহার করেছেন। যেমন, ব্রিটেন সরকার বিজ্ঞানের পেছনে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে এ ব্যাপারে কাজ করার জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেন তিনি। সরকার নিউক্লিয়ার প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ শুরু করলে সরাসরি সরকারের সমালোচনা করেন স্যার আতিয়াহ। তিনি বলেন,

এই ব্যাপারটা মৌলিকভাবেই অদরকারি এবং ভুল কাজ। এক্ষেত্রে যে পরিমাণ রিসোর্স (অর্থ, মানব সম্পদ, সময় ইত্যাদি) ব্যয় করা হচ্ছে, পুরোটাই আসলে অপচয়।

স্যার মাইকেল আতিয়াহ, ২০০৪; Image Source: JAMES FRASER

স্যার মাইকেল আতিয়াহ তার জীবদ্দশায় বেশ কিছু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। গণিতে কোনো নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয় না, তবে এর সমমর্যাদার যে পুরষ্কারটি দেয়া হয়, তার নাম ফিল্ড মেডাল প্রাইজ । ১৯৬৬ সালে মস্কোর ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অফ ম্যাথমেটিশিয়ানস— এ তাকে ফিল্ড মেডাল সম্মাননায় ভূষিত করা হয়

১৯৬৮ সালে রয়্যাল সোসাইটি অফ অক্সফোর্ড প্রদত্ত রয়্যাল মেডাল সম্মাননা দেয়া হয় তাকে। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে কোপ্লে (Copley) মেডাল এবং ২০০৪ সালে অ্যাবেল প্রাইজ পেয়েছেন।

দশটির বেশি দেশে স্যার আতিয়াহ ফরেইন মেম্বার অফ ন্যাশনাল একাডেমিক হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন। সেই সাথে পৃথিবীর ২০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানজনক ডিগ্রি দিয়েছে।

বেশ কিছু মৌলিক গবেষণা পত্র আছে তার। কিন্তু গবেষণাতেই কাজ সীমাবদ্ধ না রেখে সেসব নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য বইও লিখেছেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: We are all Mathematicians (2007) এবং The Geometry and Physics of Knots (1992)।

১৯৯৫ সালে বিয়ে করেছিলেন লিলি ব্রাউনকে। তিন সন্তান হয় তাদের। ২০১৮ সালের মার্চে ৯০ বছর বয়সে লিলি ইহলোক ত্যাগ করেন।

তিনি এমনকি বিখ্যাত গাণীতিক সমস্যা, Riemann hypothesis নিয়েও কাজ করার চেষ্টা করেছেন। একটি প্রমাণ দিয়েছিলেন, তবে সেটি সঠিক ছিল না। যে মানুষটি গণিতকে আজীবন বুকের গভীরে লালন করে গেছেন, সেই মানুষটি আজ আর নেই। স্টিফেন হকিংয়ের পর পৃথিবী আরো একজন দারুণ মেধাবীকে হারালো।

স্যার আতিয়াহ, যেখানেই থাকুন, গণিতের ভাষায় বলি: আপনার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক!

This article is in Bangla language. It is about Mathematician Sir Michael Atiyah who died recently. Necessary references have been hyperlinked.

Featured Image: James Fraser

Related Articles