অ্যামনেশিয়াক স্পাই বললে সবার আগেই আমাদের মনে ভেসে আসবে তার কথা। এমআইটির করিডরে ঝাড়ু দিয়ে বেড়ানো এক তুখোড় ম্যাথ প্রডিজির চরিত্রটি বেরিয়েছে তারই কলমের ডগা থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে তিন সহোদর ভাইকে হারানো এক হতভাগা সৈন্য কিংবা মঙ্গলের বুকে আটকে পড়া এক বুদ্ধিদীপ্ত উদ্ভিদবিজ্ঞানী; এরকম বৈচিত্র্যময় নানা চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি দর্শকের মন জয় করে চলেছেন দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে।
বলছিলাম প্রতিভাধর অভিনেতা ম্যাট ডেমনের কথা। বলতে গেলে চলচ্চিত্রের এমন কোনো জনরা নেই, যাতে তিনি পা ফেলেননি। সুপারহিরো মুভি করা বাকি ছিল বটে, তবে সম্প্রতি ফক্স এবং মার্ভেলের দুই মুভিতে মজার দুটি ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করে সেই ঘাটতিটাও কিছুটা পুষিয়ে দিয়েছেন। আর জেসন বর্ন কিন্তু জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে অনেক সুপারহিরোর চেয়ে কম যায় না।
ম্যাট ডেমনের জন্ম ১৯৭০ সালের ৮ই অক্টোবর, ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে। বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হবার পরে তিনি মায়ের সাথে চলে যান কেমব্রিজ শহরে, সেখানেই কাটিয়েছেন তার জীবনের শুরুর দিকটা। শিক্ষক মায়ের সাথে থাকার কারণে পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলেন বরাবরই, তবে স্কুলজীবনেই অংশ নিয়েছেন থিয়েটারের বেশ কিছু কাজে। অনেকেই হয়তো খ্যাতনামা অভিনেতা এবং পরিচালক বেন অ্যাফ্লেকের সাথে ডেমনের ঘনিষ্ঠতার কথা জানেন। বেন ছিলেন তার দূর সম্পর্কের ভাই। কেমব্রিজে একসাথে বেড়ে ওঠার সময়েই তাদের বন্ধুত্বের সূত্রপাত হয়েছিল।
নিজের আপন ভাই কাইলের চেয়ে বেন এবং তার ভাই ক্যাসি অ্যাফ্লেকের সাথেই বেশি ঘনিষ্ঠতা ছিল তার। ভবিষ্যতের ‘ব্যাটম্যান’ বেন নাকি ছোটবেলায় তাকে বুলিং-এর হাত থেকেও বাঁচিয়েছিলেন। ছুটির দিনে একসাথে টিভিতে গডজিলা আর কুং ফু মুভি দেখতে দেখতেই হয়তো তাদের মাথায় ঢুকেছিল মুভির পোকা। দুজনে মিলে একসাথে স্বপ্ন দেখতে থাকেন বড় অভিনেতা হবার, এমনকি হলিউডের অডিশনে যাবার খরচ জোগানোর জন্য টাকা জমানোও শুরু করেন।
স্কুল পাশ করে ম্যাট ইংরেজিকে মেজর নিয়ে পড়া শুরু করেন বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু অভিনয়ের নেশায় পেয়ে বসে আবার। শেষ পর্যন্ত ১২ ক্রেডিট বাকি থাকতেই হার্ভার্ডে পড়ার পাট চুকিয়ে ফেলেন তিনি। এর অনেক বছর পরে, ২০১৬ সালে সেই হার্ভার্ডেই তাকে গ্রাজুয়েশন স্পিচ দিতে ডাকা হয়েছিল।
যাই হোক, মুভির প্রতি ঝোঁক কিন্তু তার শিক্ষক মা একটুও ভালো চোখে দেখেননি। একপর্যায়ে বেন আর ক্যাসি অ্যাফ্লেকের সাথে থাকা শুরু করেন ম্যাট। দুজন একসাথে এক্সট্রার ভূমিকায় অভিনয় করেন ১৯৮৯ সালের 'ফিল্ড অফ ড্রিমস' মুভিতে।
স্কুল ড্রামা ‘স্কুল টাইজ (১৯৯০)’ তে অভিনয়ের সুযোগ পেলেও তাকে পুরোদমে হলিউডে ঢুকতে সাহস যুগিয়েছিলে ‘জেরোনিমো (১৯৯৩)’ মুভিটির সাফল্য। ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় তার ওয়ারড্রামা মুভি কারেজ আন্ডার ফায়ার (১৯৯৬)। যুদ্ধ থেকে ফেরত এক ড্রাগ অ্যাডিক্ট সৈন্যের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য তিনি নিজে নিজেই ৪০ পাউন্ড ওজন কমিয়ে শারীরিকভাবে বেশ কিছু সমস্যার শিকার হন। তবে সমালোচকদের নজর কাড়েন ভালোমতোই। এই আত্মনিবেদনের কল্যাণে লিগ্যাল ড্রামা ‘দ্য রেইনমেকার’ এ সুযোগ পেলেও তার হাত থেকে আরেকটু হলে ফসকে যাচ্ছিল ‘সেভিং প্রাইভেট রায়ান’। কারণ টম হ্যাংকসের কাছে তার লিকলিকে চেহারা প্রথম দফায় একেবারেই পছন্দ হয়নি!
এতকিছুর মাঝেও কিছু একটা ঘাটতি থেকে যাচ্ছিল। হার্ভার্ডে পড়ার সময়ে ড্রামা ক্লাসের অ্যাসাইনমেন্ট হিসাবে একটা এক অঙ্কের একটা নাটক লিখেছিলেন ম্যাট। বেনের সাথে মিলে সেটাকে একটা চিত্রনাট্যে রূপ দেন তিনি। কাহিনীর মূল চরিত্র চোখের পলকে যেকোনো সমীকরণের সমাধান বের করে ফেলতে পারলেও হার্ভার্ডের আইভি লিগ স্কুলগুলোয় ঝাড়ুদার হিসেবে কাজ করে। ছোটবেলা থেকে বাড়ির কাছের হার্ভার্ড আর এমআইটির তুখোড় ছাত্রদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই এই কাহিনী লিখেন তারা। তবে হলিউডের যে কেউই জানে যে, স্ক্রিপ্ট লেখা হয়তো সহজ, কিন্তু সেটাকে মুভিতে রূপ দেওয়া প্রায় অসাধ্য একটি কাজ।
দুই বন্ধু ঘুরতে লাগলেন প্রযোজকদের দ্বারে দ্বারে, একসময় পরিচয় হলো ভবিষ্যতের পরিচালক বন্ধু কেভিন স্মিথের সাথে, কিন্তু স্মিথ এই স্ক্রিপ্টের গুরুত্ব বুঝে পিছিয়ে গেলেন। স্ক্রিপ্টটির সুনাম ছড়িয়ে পড়ায় প্রযোজক প্রতিষ্ঠানগুলোয় কিছুটা কাড়াকাড়ি পড়ে যায়, কিন্তু তারা যে ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না, তা ধরে ফেলেন ম্যাট এবং বেন। কীভাবে? মজা করে তারা স্ক্রিপ্টের মাঝামাঝি দুই বন্ধু উইল এবং চাকির একটি সমকামী দৃশ্য ঢুকিয়ে দেন, কিন্তু কেউই সে ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন তোলেনি। অবশেষে একজন প্রযোজক এ ব্যাপারে তার খটকার কথা জানালে তার প্রতিষ্ঠানের কাছেই মুভি বানানোর দায়িত্ব তুলে দেন তারা।
তারপরে স্ক্রিপ্টেও আসে কিছুটা পরিবর্তন, ব্রেইনিয়াক উইল হান্টিং আর এনএসএর গোয়েন্দাদের ঘিরে বানানো থ্রিলধর্মী কাহিনীকে পালটিয়ে উইলের সাথে তার থেরাওউস্টের সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। মাঝপথে একবার হাল ছেড়ে বোস্টনে ফিরেও গিয়েছিলেন তারা! এদিকে ‘দ্য গডফাদার’ খ্যাত ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার থ্রিলার ড্রামা ‘দ্য রেইনমেকার(১৯৯৭)’ এর মূল চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান ম্যাট। এভাবে হলিউডের লিডিং অভিনেতাদের একজন হিসেবে নিজের অবস্থানটা কিছুটা পাকাপোক্ত হয় তার। পাঁচ বছর চেষ্টার পরে অবশেষে যেদিন শ্যুটিং শুরু হয়েছিল, সেদিন তাদের দুইজনের চোখেই পানি এসে গিয়েছিল। আর এভাবেই জন্ম নেয় হলিউডের সেরা অনুপ্রেরণামূলক চলচ্চিত্রের একটি, ‘গুড উইল হান্টিং’।
গল্প এখানেই শেষ নয়, বিশ্বজুড়ে সফল হবার পরে ‘গুড উইল হান্টিং’ অস্কারে পেয়ে যায় আটটি মনোনয়ন। রবিন উইলিয়ামস জিতে নেন তার জীবনের একমাত্র সোনার মূর্তি। সেই সাথে ম্যাট ডেমন এবং বেন অ্যাফ্লেক ব্যাগে ভরেন সেরা চিত্রনাট্যকারের অস্কার।
বোস্টনের এই দুই স্বপ্নবাজ তরুণের হলিউড জয়ের গল্প অনেকটা রূপকথার মতোই শোনায়। অবশ্য রাজ্যজয়ের চেয়ে ধরে রাখা কঠিন। ২০০০ এর দিকে বেন যখন ‘পার্ল হারবার’, ‘আরমাগেডন’ দিয়ে হল কাঁপাচ্ছেন, তখন ম্যাটের সময় বেশ খারাপ যাচ্ছিল। আবার ২০০৭ এ ম্যাট যখন বড় ফ্র্যাঞ্চাইজিতে কাজ করে সাফল্যের শীর্ষে, তখন বেনের অভিনয় ক্যারিয়ারের সূর্য প্রায় অস্তমিত হয়ে যাচ্ছিল। পরবর্তীতে অবশ্য তিনি পরিস্থিতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে ফেলেন পরিচালনা দিয়ে, এবং অভিনয় জীবনেও আসে পুনরুত্থান। তার পরিচালিত ছবি ‘আর্গো’ জিতে নেয় অস্কার। এরকম সুখ-দুঃখের মুহূর্তগুলোয় বরাবরেই একে অপরের পাশে ছিলেন তারা, আত্ম অহমিকা কখনোই তাদের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। অ্যালকোহলে আসক্তির কারণে রিহ্যাবে থাকার সময়ে কিংবা ‘জিমি কিমেল শো’তে ‘ব্যাটম্যান ভার্সাস সুপারম্যান’ এর প্রচারণা চালানোর সময়েও বেনের সঙ্গী ছিলেন ম্যাট।
‘গুড উইল হান্টিং’ এর রেশ থাকতে থাকতেই ১৯৯৮ সালে মুক্তি পায় কিংবদন্তী পরিচালক স্টিভেল স্পিলবার্গের দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধভিত্তিক ওয়ার ড্রামা ‘সেভিং প্রাইভেট রায়ান’। কালজয়ী এই মুভিতে টম হ্যাংকসের পাশাপাশি আরও কয়েকজন জনপ্রিয় অভিনেতার সাথে অভিনয় করেন তিনি। টম হ্যাংকস জীবনের বেশিরভাগ সময়েই মূল চরিত্রে অভিনয় করলেও ম্যাট ডেমনের ক্যারিয়ারের সেরা অর্জনের একটি হলো তার সাথেই 'সেভিং প্রাইভেট রায়ান' সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করা।
একই বছরে তিনি এডওয়ার্ড নরটনের সাথে থ্রিলার ড্রামা ‘রাউন্ডারস’ এ আবারো এক ব্রেইনিয়াক জিনিয়াসের ভূমিকায় অভিনয় করেন। এবারে অবশ্য কোনো অঙ্কের সমীকরণ মেলানো লাগেনি, তার চরিত্রের মূল দায়িত্ব ছিল হাই স্টেক পোকার নিয়ে মাথা ঘামানো। ‘রাউন্ডারস’ মুক্তির সময়ে তেমন একটা আলোচনায় না আসলেও পরবর্তীতে সবার বেশ পছন্দনীয় একটি মুভি হয়ে দাঁড়ায়।
এরপরে বেন এবং ম্যাট একসাথে দুই ফলেন অ্যাঞ্জেলের ভূমিকায় অভিনয় করেন তাদের বন্ধু কেভিন স্মিথের স্যাটায়ার 'ডগমা'তে। ১৯৯৯ সালে তিনি ক্যারিয়ারের সেরা আরেকটি কাজ করেন অ্যান্থনি মিংহেলার ‘দ্য ট্যালেন্টেড মিস্টার রিপ্লি’ মুভিতে। প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথের উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে বানানো এই মুভির জন্য পিয়ানো বাজানো শেখেন তিনি, জুড ল এর সাথে একটি জ্যাজ গানের পারফরম্যান্সও আছে এখানে। আত্মবিশ্বাসহীন কিন্তু কুশলী সাইকোপ্যাথ টম রিপ্লির জন্য দর্শকের মনে কিছুটা মায়া না এসে পারে না। একই মুভি জুড লকে এনে দেয় সেরা পার্শ্ব অভিনেতার অস্কার মনোনয়ন।
এরপরে ম্যাট ডেমনের ক্যারিয়ার কিছুটা স্থবির হয়ে পড়ে। 'দ্য লিজেন্ড অফ ব্যাগার ভেন্স' মুভিতে তিনি অভিনয় করেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ফেরত এক হতাশ সৈন্যের ভূমিকায়। তার সহশিল্পী ছিলেন উইল স্মিথ এবং চার্লিজ থেরন। এরপর বিলি বব থর্নটনের ওয়েস্টার্ন অ্যাডাপ্টেশন 'অল দ্য প্রিটি হর্সেস' মুভিতে দুর্ভাগ্যবশত মেক্সিকোর জেলে আটকে পড়া এক কাউবয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। দু'টি মুভিই আশানুরূপ সাড়া ফেলতে ব্যর্থ হয়।
তবে এই ব্যর্থ সময়ের স্থায়িত্ব ছিল খুবই স্বল্প সময়ের জন্য। অচিরেই তিনি যুক্ত হন দুর্দান্ত দুই ফ্র্যাঞ্চাইজের সাথে, যা তাকে পাকাপাকিভাবে হলিউডের একজন সুপারস্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়।
খ্যাতনামা লেখক রবার্ট লুডলামের বিশ্বসেরা স্পাই থ্রিলার বইয়ের ওপর ভিত্তি করে মুভি নির্মাণের প্রস্তুতি চলছিল অনেক আগে থেকেই। মূল চরিত্রের জন্য ব্র্যাড পিট, রাসেল ক্রো এমনকি সিলভেস্টার স্ট্যালোনকেও চিন্তা করা হয়েছিল। অভিনয়ে সহজাত দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও মূলত ড্রামা মুভিতে কাজ করে আসা ম্যাট ডেমনকে একজন ঠাণ্ডা মাথার অ্যাসাসিনের ভূমিকায় কতটা মানাবে, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন অনেকেই। কিন্তু ১৬০+ আইকিউকে কাজে লাগিয়ে ঠিকই অ্যাকশন প্যাকড মুভির সাথে মানানসই ম্যানারিজমগুলো আয়ত্ত করে ফেলেন ডেমন। শ্বাসরুদ্ধকর অ্যাকশনগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য নিজের ব্যক্তিত্বকে ভেঙে ফেলেন তিনি। পরিচালক ডাগ লিম্যানের কথা মেনে বক্সারের মতো হাঁটাচলা শুরু করেন তিনি। জেসন বর্নের অনন্য কমব্যাট স্টাইল শেখেন ছয় মাস ধরে, সেই সাথে প্রশিক্ষণ নেন আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর। বাস্তবধর্মী অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলোকে ফুটিয়ে তোলার চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল প্রায় সংলাপবিহীন জেসন বর্নের মানসিক অবস্থা ফুটিয়ে তোলাটা।
সাধারণত সমালোচকদের কেউই অ্যাকশন মুভির মূল চরিত্রের কাছ থেকে উচ্চমানের অভিনয় আশা করেন না। অ্যাকশন মুভি জনরায় আমূল পরিবর্তন হয়তো আসেনি, কিন্তু পিয়ার্স ব্রসন্যানের জেমস বন্ড আর ড্যানিয়েল ক্রেগের জেমস বন্ডের মধ্যে চোখে পড়ার মতো ব্যবধানটা গড়ে তুলতে বাধ্য করেছে বর্নের বাস্তবধর্মিতা। অ্যাকশন তারকাদের কিছুটা একপেশে অভিনয়ের ভিড়ে ম্যাট ডেমন তাই উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।
‘দ্য বর্ন আইডেন্টিটি (২০০২)’ এর সফলতার পরে ম্যাট ডেমনের প্রশংসা করে এক সমালোচক বলেছিলেন -
A Star is bourne
আদতেই তাই। এরপর ২০০৪ ও ২০০৭ সালে ‘দ্য বর্ন সুপ্রিমেসি’ এবং ‘দ্য বর্ন আল্টিমেটাম’ হলিউডের শীর্ষ অভিনেতাদের একজন হিসেবে তার অবস্থান আরো পাকাপোক্ত করে দেয়। ধুন্ধুমার গাড়ি চেজ আর হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাটে নতুন মাত্রা এনে দেয় নতুন পরিচালক পল গ্রিনগ্রাসের শেকি ক্যামেরা স্টাইল। সেই সাথে দুর্দান্ত অভিনয় আর কাহিনীর কারণে সিকুয়েল দুইটি ছাড়িয়ে যায় প্রথম মুভিকে। এই ফ্র্যাঞ্চাইজ কখনোই স্রেফ পপকর্ন অ্যাকশন ফ্লিকের তালিকায় ঢুকবে না, সমালোচকেরা সবসময়ে একে এক উচ্চমানের থ্রিলারের দৃষ্টিতেই দেখে যাবেন।
জর্জ ক্লুনি, ব্র্যাড পিট, জুলিয়া রবার্টসের পাশাপাশি মাল্টিস্ট্যারার ‘ওশান’স ইলেভেন’ এ অভিনয় করাটাও তার জীবনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। শুধু অভিনয়ের ক্ষেত্রে নয়, বাস্তব জীবনেও তারা সবাই ভালো বন্ধুতে পরিণত হন। ভবিষ্যতে বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে কাজ করার মূল ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন এই ট্রিলজিই।
সবার মধ্যকার বন্ধুত্ব অনস্ক্রিনে ফুটে উঠেছিলো ভালোভাবেই, সেই সাথে ছিল স্টিভেন সোডারবার্গের দুর্দান্ত ফিল্মমেকিং। এর ফলে হাইস্ট কমেডি মুভিগুলো আরো বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এখানে ম্যাট ডেমনের অভিনীত লিনাস ক্যাল্ডওয়েল চরিত্রটি ছিল একজন উঠতি কনম্যানের। লাস ভেগাসের ক্যাসিনো লুটে নেবার পরিকল্পনা করা মাস্টারমাইন্ড ড্যানিয়েল ওশান আর রাস্টি রায়ানসহ আরো আটজনের সাথে জোট বাঁধে সে। কিন্তু সোজাপথে কখনোই এসব কাজে সফল হওয়া যায় না, আর সেখানেই আসে লিনাসের গুরুত্ব। হাইস্ট মুভিপ্রেমীদের কাছে সবসময়েই স্মরণীয় হয়ে থাকবে এই ট্রিলজি।
ফ্যারেলি ব্রাদার্সের কমেডি মুভি 'স্টাক অন ইউ' এর শ্যুটিং হবার কথা ছিল হাওয়াইতে। ভাগ্যক্রমে মুভিটির শ্যুটিং হয় মায়ামিতে, আর সেখানেই স্ত্রী লুসিয়ানা বারোজোর সাথে প্রথম দেখা হয় ডেমনের। দুই মেরুর মানুষ হওয়া সত্ত্বেও এক সন্তানের মা লুসিয়ানার মাঝেই নিজের সোলমেটকে খুঁজে পান ম্যাট, ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে বিয়ে হয় তাদের। পরবর্তীতে জন্ম নেয় তাদের তিন কন্যাসন্তান - ইসাবেলা, জিয়া এবং স্টেলা। এলেনের কাছে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, "আমার সৌভাগ্য যে আমি একজন সাধারণ নাগরিকের প্রেমে পড়েছি। সাংবাদিকেরা আমার জীবন নিয়ে যতোই ঘাঁটাঘাঁটি করুক, একজন সাধারণ চার সন্তানের বাবা হিসেবেই আমার পরিচয় পাবে।"
২০০৫ সালের ‘দ্য ব্রাদার্স গ্রিম’ মুভিতে তিনি জার্মানির বিখ্যাত গ্রিম ভাতৃদ্বয়ের একজন উইলেম গ্রিমের ভূমিকায় অভিনয় করেন। তার বড় ভাই জ্যাকব গ্রিমের চরিত্রে ছিলেন হিথ লেজার। একই বছরের প্রশংসিত পলিটিকাল থ্রিলার ‘সিরিয়ানা’ মুভিতে একজন এনার্জি অ্যানালিস্টের ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ২০০৬ সালে মুক্তি পায় সত্যি ঘটনার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত ‘দ্য গুড শেপার্ড’। যে সিআইএর সাথে জেসন বর্নের ইঁদুর-বিড়াল দৌড় চলছিল এতদিন, সেই সিআইএরই একজন অফিসারের ভূমিকায় তিনি অভিনয় করেন এই মুভিতে।
এরপর ‘দ্য ডিপার্টেড’ এ এক সাইকোপ্যাথ আন্ডারকভার এজেন্টের ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। সে বছরের অস্কারে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার জেতা তারকাসমৃদ্ধ এই মুভিতে আরও অভিনয় করেন জ্যাক নিকলসন, লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও, মার্ক ওয়ালবার্গ, মার্টিন শিনের মতো শক্তিমান অভিনেতারা। এতজনের ভিড়েও এই ক্রাইম থ্রিলার মুভিই অবশেষে পরিচালক মার্টিন স্করসেজিকে তার জীবনের প্রথম অস্কার এনে দেয়।
২০০৪ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত পরপর এতগুলো ব্লকবাস্টার ছবি উপহার দেয়ায় ফোর্বস তাকে সেসময়কার সবচেয়ে ব্যবসাসফল অভিনেতা হিসেবে অভিহিত করে।
২০০৯ সালের ‘দ্য ইনফরম্যান্ট!’ মুভিতে তিনি আরেকবার আন্ডারকভার এজেন্টের ভূমিকায় অভিনয় করেন, তবে স্টিভেন সোডারবার্গের এই মুভিটি ছিল ডার্ক কমেডি। মূল চরিত্রে মার্ক হুইটেকারের সাথে চেহারার মিল আনার জন্য তিনি প্রায় ৩০ পাউন্ড ওজন বাড়িয়ে ফেলেন। কিছুটা গুরুতর এবং কিছুটা হাস্যকর এই চরিত্রের জন্য বাগিয়ে নেন গোল্ডেন গ্লোবে সেরা অভিনেতার মনোনয়ন।
একই বছর তিনি অস্কার মনোনয়ন বাগিয়ে নেন ক্লিন্ট ইস্টউডের ‘ইনভিক্টাস’ মুভির জন্য। এখানে রাগবি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে শিরোপা এনে দেওয়া ক্যাপ্টেন ফ্রান্সিস পাইনারের ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। বর্ণবাদ যুগ পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গদের একতাবদ্ধ করার ক্ষেত্রে এই শিরোপার গুরুত্ব ছিল অনেক। মুভিতে নেলসন ম্যান্ডেলার ভূমিকায় অভিনয় করেন মরগান ফ্রিম্যান।
জেমস ক্যামেরন তাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন ‘অ্যাভাটার’ মুভির প্রধান চরিত্রটি করার জন্য। এমনকি মুভির লভ্যাংশের ১০ শতাংশও দেবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাকে। পরবর্তীতে ২.৭৮ বিলিয়ন আয় করা এই মুভি ফিরিয়ে দেবার জন্য তেমন একটা আক্ষেপ নেই তার। অবশ্য তার বন্ধু জন ক্রাসিনস্কি মজা করে বলেছেন, ‘অ্যাভাটার’ করলে এতদিনে তিনি মহাকাশে বাড়ি তুলে ফেলতে পারতেন।
'ইনভিক্টাস' এর পরের কয়েক বছর বিভিন্ন ঘরানার নানা মুভিতে অভিনয় করেন তিনি। এগুলোর মধ্যে ছিল - থ্রিলার ঘরানার ‘গ্রিন জোন (২০১০)’, ‘কন্টাজিয়ন’ কিংবা ‘দ্য অ্যাডজাস্টমেন্ট ব্যুরো (২০১১)’ কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয়ের ওয়েস্টার্ন ‘ট্রু গ্রিট (২০১০)’ সায়েন্স ফিকশন ‘ইলিসিয়াম (২০১৩)’, বায়োপিক ‘বিহাইন্ড দ্য ক্যান্ডেলেবরা (২০১৩)’, ফ্যামিলি ড্রামা ‘উই বট অ্যা জু (২০১০)’। ২০১৪ সালে ক্রিস্টোফার নোলানের এপিক সায়েন্স ফিকশন 'ইন্টারস্টেলার' মুভিতে মহাকাশবিজ্ঞানী ডক্টর ম্যানের ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি।
তবে তাকে আবারো সাফল্যের শীর্ষে তুলে দেয় ২০১৫ সালের ‘দ্য মার্শান’। রিডলি স্কটের এই সায়েন্স ফিকশন অ্যাডাপ্টেশন তাদের বাস্তবধর্মী উপস্থাপনের কারণে নাসার কাছেও প্রশংসিত হয়। প্রমত্ত এক ঝড়ে মহাকাশযান থেকে মঙ্গলের বুকে ছিটকে পড়া জীববিজ্ঞানী মার্ক ওয়াটনির ভূমিকায় ম্যাট ডেমনের প্রাণবন্ত অভিনয় দারুণভাবে প্রশংসিত হয়। মঙ্গলের রুক্ষ পরিবেশে একা টিকে থাকার কাহিনীটি অন্যান্য সার্ভাইভাল ড্রামা থেকে আলাদা মাত্রা পায় মার্ক ওয়াটনির সেন্স অফ হিউমারের কারণে। ২০১৬ সালে নয় বছর পর তিনি আরেকবার জেসন বর্ন রূপে ফিরে আসেন ‘জেসন বর্ন’ মুভিতে। টেকনোলজিকাল থ্রিলারধর্মী কাহিনী নিয়ে আগানো মুভিটি বাণিজ্যিকভাবে সফল হলেও আগের মুভিগুলোকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। তবে ম্যাট ডেমন বরাবরের মতোই দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন।
৮৯তম অস্কারে ৬টি মনোনয়ন পাওয়া 'ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি' এর প্রযোজকদের একজন ছিলেন তিনি, এই মুভি বেনের ভাই ক্যাসি অ্যাফ্লেককে জিতিয়ে দেয় সেরা অভিনেতার অস্কার। এরপরে ‘দ্য গ্রেট ওয়াল’, ‘সাবারবিকন’, ‘ডাউনসাইজিং’ এর মতো ভিন্নধর্মী কিছু প্রজেক্ট বেছে নেন তিনি। সেইসাথে ‘থর রাগনারক’ এবং ‘ডেডপুল ২’ এর ছোট দুইটি ক্যামিও দর্শককে দারুণ দুই ইস্টার এগ উপহার দিয়েছে। ‘থর রাগনারক’ এ তার চরিত্রে ছিলে দেবতা লোকির ভূমিকায় অভিনয় করা এক মঞ্চাভিনেতার। মজার ব্যাপার, সেই ১৯৯৯ এর ‘ডগমা’ মুভিতেও তিনি লোকির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। আবার ‘ডেডপুল ২’ এ করা চরিত্রটির নাম ছিল ডিকি গ্রিনলিফ, যেটি ‘দ্য ট্যালেন্টেড মিস্টার রিপ্লি’তে তার ভুয়া পরিচয়ের রেফারেন্স। অবশ্য এরকম ক্যামিও দেওয়ার স্বভাব তার আগে থেকেই। ‘দ্য ব্রাদার্স গ্রিম’এ পরচুলা পরার কারণে আসল চুল কামিয়ে ফেলেছিলেন, সেই চেহারা নিয়েই ‘ইউরো ট্রিপ’ মুভিতে মজার এক ক্যামিও দিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে বাস্তব ঘটনার ওপর নির্মিত ‘ফোর্ড ভার্সাস ফেরারি’, মুভিটি দর্শক সমালোচকদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে ইতিমধ্যেই। ম্যাট এবং তার সহ অভিনেতা ক্রিশ্চিয়ান বেল দুইজনেই সামনের অস্কারে মনোনয়ন পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামনে বেন অ্যাফ্লেকের সাথে ‘দ্য গ্রেট ডুয়েল’ নামের একটি মুভি নির্মাণেরও কথাবার্তা চলছে।
সুপরিচিত অভিনেতা হওয়া সত্ত্বেও ম্যাট ডেমনকে অনেক সময় আরেক হলিউড তারকা মার্ক ওয়ালবার্গের সাথে মিলিয়ে ফেলেন অনেকে। দুইজনেই বোস্টনের অধিবাসী হলেও তাদের চেহারায় কিন্তু তেমন একটা মিল নেই। এ ব্যাপারে মজা করে নিজেদের মাঝে একটা চুক্তি করে নিয়েছেন তারা। কোনো ভক্ত যদি তাদের কাছে ভুলবশত অটোগ্রাফ চেয়ে বসেন, তারা সেই ভক্তের ভুল ভাঙিয়ে নিরাশ করেন না কখনো।
ওশান'স ট্রিলজির লিনাস চরিত্রটি মার্ক ওয়ালবার্গের করার কথা থাকলেও সেটি পরে চলে যায় ম্যাট ডেমনের কাছে। আবার তীব্র ভায়োলন্সের কারণে 'ফোর ব্রাদার্স' মুভিটি ফিরিয়ে দেন ম্যাট, সেই চরিত্রটি পরে করেন মার্ক। আর তারা দুইজনেই একসাথে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন অস্কারজয়ী 'দ্য ডিপার্টেড' মুভিতে। আবার নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে ম্যাট ডেমনের সাথে সম্পর্ক ছিল অভিনেত্রী উইনোনা রাইডারের। তাদের মধ্যে বিচ্ছেদের পরে উইনোনার সাথে কিছুদিনের জন্য সম্পর্ক ছিল ওয়ালবার্গের!
কিছুদিন আগে ম্যাট ডেমনকে নিয়ে মজার এক তথ্য বের হয়। সেই ‘সেভিং প্রাইভেট রায়ান’ থেকে শুরু করে ‘ইন্টারস্টেলার’ বা ‘দ্য মার্শান’ পর্যন্ত বিভিন্ন মুভিতে তাকে উদ্ধার করতে নাকি আনুমানিক ৯০০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে!
নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন তিনি এখনো। সেজন্যই পারেন শর্ট নোটিশে হলিউড থেকে নিউ ইয়র্কে উড়ে এসে ১৪ মিনিট লম্বা একটা স্কেচের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলতে। মাত্র একদিনের প্রস্তুতি নিয়ে লাইভ অডিয়েন্সের সামনে আমেরিকান বিচারক ব্রেট ক্যাভানোকে ব্যঙ্গ করে করা স্যাটায়ার পারফরম্যান্সটি ‘স্যাটারডে নাইট লাইভ’ এর সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিওগুলোর একটা। এমি ২০১৯ এ একটি মনোনয়নও পেয়ে যান সেজন্য।
অভিনয়ের পাশাপাশি তার জনপ্রিয়তার পেছনে আরেকটি বড় ভূমিকা রেখেছে তার বন্ধুসুলভ আচরণ। বেন অ্যাফ্লেক, ক্যাসি অ্যাফ্লেক, জর্জ ক্লুনি, ব্র্যাড পিট, জিমি কিমেল থেকে শুরু করে হালের জনপ্রিয় অভিনেতা ক্রিস হেমসওয়ার্থ কিংবা জন ক্রাসিনস্কিরও ভালো বন্ধুতে পরিণত হয়েছেন তিনি। ‘জিমি কিমেল শো’তে তাকে নিয়ে করা লং রানিং জোকের কথা অনেকেরই জানা। শুধু শোতে নয়, দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা তাদের খুনসুটি পৌঁছে গেছে অস্কার কিংবা গোল্ডেন গ্লোবের মঞ্চেও।
‘গুড উইল হান্টিং’, ‘বর্ন ফ্র্যাঞ্চাইজ’, কিংবা ‘দ্য ট্যালেন্টেড মিস্টার রিপ্লি’তে নাম ভূমিকায় বাজিমাত করলেও বেশিরভাগ সময়ে চরিত্রাভিনেতা হওয়াটাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। নিজেকে একজন তারকা হিসেবে উপস্থাপন না করে বরাবরেই চেষ্টা করে গেছেন নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার। নিশ্চিত বক্স অফিস সাফল্যের বদলে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়াটাই তার কাছে বেশি উপভোগ্য মনে হয়েছে। এ কারণেই স্টারডম কখনো তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি, সবচেয়ে বেশি আয় করা অভিনেতাদের একজন হয়েও যেকোনো ইন্ডি মুভির ছোটখাটো চরিত্রেও মানিয়ে যেতে পেরেছেন সহজেই। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাঁচবার পেয়েছেন অস্কার মনোনয়ন, এমি মনোনয়ন পেয়েছেন সাতবার।
শত ব্যস্ততার মাঝেও সময় দিয়েছেন বিভিন্ন দানশীল কাজে। আফ্রিকার অসহায় জনগণের মাঝে স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা ছড়িয়ে দেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত ওয়ান ক্যাম্পেইনে যোগ দিয়েছিলেন আগেই। পরে আফ্রিকায় নিরাপদ পানি জোগান দেবার জন্য নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন এইচটুও আফ্রিকা ফাউন্ডেশন নামক এনজিও প্রতিষ্ঠান। আফ্রিকাসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য সহ-প্রতিষ্ঠা করেছেন ওয়াটারডটওআরজি। যুক্ত আছেন ফিডিং আমেরিকার সাথেও।
কিছুটা শান্তশিষ্ট ভাবভঙ্গী থাকার কারণে তার ওয়াইল্ড পার্সোনালিটির কথা অনেকেই জানেন না। কে জানে, একারণেই হয়তো ‘দ্য ট্যালেন্টেড মিস্টার রিপ্লি’, ‘ইন্টারস্টেলার’, ‘দ্য ডিপার্টেড’ এর দুমুখো চরিত্রগুলো এত অনায়াসে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন তিনি। মুভি থেকে মুভিতে তাকে খুব একটা খোলস বদলাতে দেখা না গেলেও সূক্ষ্ম অভিব্যক্তির সাহায্যে যেকোনো চরিত্রের সাথে মিশে যাবার ক্ষমতা আছে তার। একারণেই সব জনরার মুভিতে স্বাচ্ছন্দ্য পদচারণা করেছেন আর দর্শককে উপহার দিয়েছেন বেশ কিছু স্মরণীয় চরিত্র। ব্যক্তিজীবনেও সবসময়ে এখনকার মতোই সুখী থাকবেন আর সেইসাথে আরো বহুদিন আমাদেরকে বৈচিত্র্যময় নানা চরিত্র উপহার দিয়ে যাবেন, তার একজন ভক্ত হিসেবে এমনটাই কামনা করছি।
বিশ্বের চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/
সিনেমা সম্পর্কে আরও জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলোঃ
১) নতুন সিনেমা সময়ের প্রয়োজন
২) সিনেমা থেকে চিত্রালী
৩) সিনেমা হলে তালা
This article is in Bengali Language. It is a biography of Matt Damon, one of the most bankable stars in Hollywood. For references please check the hyperlinked texts in the article.
Featured Image: Witario Zunino/ Getty Images