স্প্যানিশ লোকগাথার এল ডোরাডো, আমাজনদের রাজধানী থেমিস্কিরা, প্লেটোর আটলান্টিস কিংবা হিমালয়ের রহস্যময় নগরী শাম্ভালা- এই পৌরাণিক সাম্রাজ্যগুলো হাজার বছর ধরে অভিযাত্রীদের রাতের ঘুম হারাম করে এসেছে। বর্ণনা যতই কাল্পনিক বা অবাস্তব লাগুক, স্বপ্নিল অভিযাত্রীকের নিকট তা ছিল চিরন্তন সত্য। শুধু যোগ্যদের নিকট ধর্ণা দেবে, এমন চিন্তা মাথায় রেখে অনেকেই ঘরছাড়া হয়েছেন। বছরের পর বছর ধরে অনুসন্ধানের পর অনেকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন। আবার অনেকেই ফিরতে পারেননি। যদি অভিযাত্রীদের নামের তালিকা করা হয়, তাহলে হয়তো সেটা নিয়ে বেশ কয়েক ভলিউম বই লিখে ফেলা যাবে। তাদের অভিযান নিয়ে শত শত সিনেমা তৈরি করে ফেলা যাবে। কিন্তু আমাদের আজকের আলোচনায় উঠে আসবে শুধু একজন অভিযাত্রীর নাম। আজ আমরা এমন একজন অভিযাত্রী নিয়ে কথা বলবো, যার অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল এমন এক গুপ্ত নগরীর খোঁজ করা, যার সন্ধান তিনি ছাড়া আর কেউ পাবেন না। আটলান্টিকের ওপাড়ের দেশ ব্রাজিলের গহীন অরণ্যে লুকিয়ে থাকা সেই নগরীর নাম ‘Z’ (জেড)। আর জেড নগরীর সন্ধানে বের হওয়া সেই অভিযাত্রীর নাম পার্সি ফসেট।
একজন পার্সি ফসেট
কে এই পার্সি ফসেট? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে যে কেউই প্রথমত হিমশিম খেতো। এর কারণ, পার্সি ফসেট এমন কোনো কাজ নেই যেটা করতে পারতেন না। একদিকে যেমন রাজকীয় ভূগোল সমাজের একনিষ্ঠ কর্মী তিনি, আরেকদিকে তিনি সেনাবাহিনীর দক্ষ গোলন্দাজ। এমনকি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে উত্তর আফ্রিকায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযানেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। কর্মস্থলের তালিকা দেখলে তাকে বেশ গম্ভীর মনে হলেও বাস্তবে তিনি ছিলেন মিশুক মানুষ। মানুষের সাথে মেশা ছাড়াও তিনি সুযোগ পেলে বন-জঙ্গলে অভিযানে বেরিয়ে যেতেন। আর অভিযান থেকে ফিরে এসে শোনাতেন অদ্ভুত সব গল্প। যেমন, একবার তিনি দাবি করলেন, দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনে তিনি নিজের বন্দুক দিয়ে প্রায় ৬২ ফুট লম্বা অ্যানাকোণ্ডাকে গুলি করেছেন। তিনি এমন সব প্রাণীর কথা বর্ণনা করতেন যা এখন পর্যন্ত কেউ দেখেনি। অনেকে তার কথা হেসে উড়িয়ে দিলেও তারা সবাই একবাক্যে মেনে নিতেন, পার্সি ফসেট একজন দক্ষ অভিযাত্রী।
১৮৬৭ সালের ১৮ আগস্ট ইংল্যাণ্ডের ডেভন কাউন্টিতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতা ছিলেন ব্রিটিশ অভিজাত সমাজের সদস্য। কিন্তু দিনের অভিজাত রাতের আঁধারে সম্পূর্ণ বদলে যেতেন। নেশা এবং জুয়া খেলার আসরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকতেন তিনি। পার্সি ফসেট বাবার ব্যর্থ জীবনের দিকে তাকিয়ে শিক্ষা নিলেন। তিনি পিতার পথে পা বাড়াননি। ১৮৮৬ সালে তিনি ব্রিটিশ রয়্যাল আর্টিলারিতে যোগ দেন এবং ভারতবর্ষের সিংহলে (বর্তমান শ্রীলঙ্কা) বদলি হন। এখানে তিনি নিনা এগনেস পেটারসন নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে জ্যাক এবং ব্রায়ান নামক দুই পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।
অভিযাত্রার হাতেখড়ি
গোলন্দাজ বাহিনীর সেনা হলেও পার্সি ছিলেন বেশ কৌতূহলী মানুষ। সিংহলের গহীন বনাঞ্চলে তিনি লুকনো গুপ্তধনের আশায় অভিযান পরিচালনা করতেন। বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করতেন শখের বশে। যত দিন যেতে থাকে, তিনি তত অভিযানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তাই ১৯০৬ সালে যখন রাজকীয় ভূগোল সমাজ থেকে তাকে দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণের প্রস্তাব দেওয়া হয়, তিনি মুহূর্তের মধ্যে রাজি হয়ে যান। বিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে এখনকার মতো স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ছিল না। তাই তখনও পৃথিবীর বহু অঞ্চলের মানচিত্র তৈরি করা সম্ভব হয়নি। পার্সিকে দায়িত্ব দেয়া হয় আমাজনের বিপদজনক অঞ্চলে জরিপ এবং মানচিত্র অঙ্কনের কাজ পরিচালনা করার। এভাবে পার্সি ফসেটের অভিযাত্রিক জীবনের সূচনা ঘটে।
দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে অবস্থানকালে তিনি আমাজন বন নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। আমাজনের বিশাল অনাবিষ্কৃত জগত দেখে তিনি একে নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা করতে থাকেন। ১৯১১ সালের দিকে হিরাম বিংহ্যাম কর্তৃক ইনকা সভ্যতার গুপ্ত নগরী মাচুপিচু আবিষ্কৃত হলে তিনি আমাজনের গহীনে এরূপ লুকানো নগরী থাকার সম্ভবনার কথা জানান। তাছাড়া তিনি স্প্যানিশ এল ডোরাড এবং চিলির স্বর্ণ নগরী সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন। আমাজনের আদিম অধিবাসীরাও পূর্বপুরুষদের মুখে শোনা বিভিন্ন কাহিনী ফসেটকে বর্ণনা করে। সবকিছু মিলিয়ে তিনি ১৯১২ সালে ‘জেড’ নগরী তত্ত্ব প্রদান করেন। পুত্র ব্রায়ান ফসেটের নিকট লেখা এক পত্রে তার জেড নগরী তত্ত্বের কথা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেন,
জেড নগরী গঠনগত দিক থেকে অনেকটা মিশরীয় সভ্যতার মতো হবে। আমাজনের বিভিন্ন অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া বিভিন্ন নিদর্শন এবং আবাসন ধ্বংসাবশেষ দেখে আমার মনে হয়, জেডের নাগরিকরা ইউরোপীয় এবং এশীয় বর্ণমালার কিছুটা মাঝামাঝি সংস্করণের বর্ণমালা ব্যবহার করতো। এখানকার স্থানীয় অধিবাসীরাও তাদের পূর্বপুরুষদের মুখ থেকে এক অদ্ভুত নগরীর কথা শুনেছে। সেখানকার নাগরিকরা অদ্ভুত উপায়ে উজ্জ্বল আলো জ্বালিয়ে স্থানীয়দের ভয় দেখাতো... তাদের দালানগুলো দেখতে মিশরের মন্দিরের মতো দেখাতো। পদমর্যাদা অনুযায়ী নাগরিকদের বিভিন্ন অঞ্চলে আবাসনের অনুমতি দেয়া হতো। নিচু শ্রেণীর মানুষের বসবাসের জন্য নগরীর দক্ষিণে আরেকটি ছোট শহর থাকার কথা জানা যায়।
পার্সি ফসেট নিজ দায়িত্বে বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করেন সেই গুপ্ত নগরীর সন্ধানে। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হন। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠলে তিনি অভিযানের ঝুলি বন্ধ করে ইংল্যাণ্ড ফিরে যান। গোলন্দাজ হিসেবে যোগদান করেন যুদ্ধে।
পাণ্ডুলিপি নং ৫১২
বিশ্বযুদ্ধ শেষে পার্সি ফসেট ফিরে যান ব্রাজিলে। সরকারি কাজের পাশাপাশি তিনি তখনও সময় করে জেড নগরী নিয়ে গবেষণা করতেন। ১৯২০ সালের দিকে জেড নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তিনি একটি পর্তুগিজ পাণ্ডুলিপির সন্ধান পান। রিও ডি জেনেইরো লাইব্রেরির ৫১২ নং হিসেবে লিপিবদ্ধ সেই পাণ্ডুলিপিতে এক পর্তুগিজ অভিযাত্রী আমাজনের মেটো গ্রোসো অঞ্চলে দেয়ালঘেরা এক অদ্ভুত নগরীর সন্ধান পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। ১৭৫৩ সালে লিখিত পাণ্ডুলিপিতে তিনি সেই নগরীকে স্বর্ণ-রৌপ্যে সমৃদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করেন। নগরীর বাসভূমি বহুতল দালানের মতো উঁচু ছিল। প্রশস্ত রাজপথ বিশিষ্ট এবং একটি বিশাল হ্রদের পাশে অবস্থিত এই নগরীকে তিনি গ্রিক সভ্যতার মতো সমৃদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। পাণ্ডুলিপির বর্ণগুলো পার্সির মনে দাগ কেটে যায়। তিনি নতুন করে অভিযান পরিচালনার স্বপ্ন দেখতে থাকেন।
সমসাময়িক অন্যান্য ভূগোলবিদরা আমাজনের অভ্যন্তরে এরকম বিশাল নগরী থাকার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ফসেট কারো কথা কানেই তুললেন না। ১৯২১ সালে তিনি পর্যাপ্ত অর্থ সংগ্রহের পর জেড নগরীর সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। তার সঙ্গী হিসেবে একদল অভিযাত্রীও যোগ দেন সেবার। কিন্তু আমাজনের বৈরী পরিবেশ তাদের বারবার আঘাত করছিলো। বিষাক্ত সরীসৃপ, হিংস্র জন্তু, ভয়ংকর রোগের আক্রমণে সেবারের যাত্রা কয়েক মাসের বেশি স্থায়ী হতে পারেনি।
জেডের সন্ধানে শেষবার
বারবার ব্যর্থ হওয়া পার্সি ফসেট এবার ঠিক করলেন পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েই যাত্রা করবেন। এবার যেভাবেই হোক, জেড নগরীর বুকে পদার্পণ না করে ফিরছেন না। বিভিন্ন ব্রিটিশ পত্রিকা সংস্থা এবং ধনী সমাজ থেকে ফসেটের নিকট অর্থ সাহায্য পাঠানো হলো। তার সঙ্গী হিসেবে এই যাত্রায় বন্ধু রালেই রিমেল, বড় ছেলে জ্যাক ফসেট এবং স্থানীয় কিছু শ্রমিক যোগদান করেন। পার্সি ফসেটের বিখ্যাত যাত্রা শুরু হয় ১৯২৫ সালের ২০ এপ্রিল। স্থানীয় কর্মচারীদের বিদায় দেয়ার সময় তিনি বলে যান, যদি কোনো কারণে তিনি ফিরে না আসেন, তাহলে যেন কেউ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা না করে। এর কারণ, যে পথ দিয়ে তারা এগিয়ে যাবেন, তা বেশ বিপদজনক এবং দুর্গম। মে মাসের ২৫ তারিখ ফসেট বাহিনী এক অনাবিষ্কৃত অঞ্চলে গিয়ে পৌঁছালেন। এখানে তার পূর্বে কেউ পদার্পণ করেনি বলে দাবি করেন তিনি। এখানে বসে তিনি একটি চিঠি লিখেন। সেখানে তিনি তার পরবর্তী গন্তব্যস্থল হিসেবে আমাজন নদীর দক্ষিণে জিঙ্গু অঞ্চলের নাম উল্লেখ করেন। তার চিঠি নিয়ে একজন শ্রমিক গ্রামে ফিরে যায়।
যাত্রাকালে ফসেট নিয়মিত চিঠি প্রেরণ করতে থাকেন। এভাবে চললো পাঁচ মাস। পাঁচ মাসের মাথায় তার শেষ ডাকে তিনি জানান, তারা আমাজনের এমন একটি অঞ্চলে পৌঁছেছেন, যেখানে বহিরাগত কেউ এর আগে প্রবেশ করেনি। তিনি এই অঞ্চলের নাম দেন ‘Dead Horse Camp’ বা মৃত ঘোড়ার ক্যাম্প। এখানে তার ঘোড়া অজ্ঞাত কারণে মৃত্যুবরণ করলে তিনি এই নাম দেন। তিনি তার স্ত্রীকে জানান,
কয়দিনের মাথায় আমরা এই অঞ্চল অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাবো। আমার মন বলছে এবার কোনোভাবেই আমরা ব্যর্থ হতে পারি না।
কোথাও কেউ নেই
এরপর হঠাৎ করে তার চিঠি আসা বন্ধ হয়ে গেলো। অনেকে মনে করলেন, হয়তো তিনি গভীর জঙ্গলে পৌঁছে গেছেন যেখানে কোনো অধিবাসী বাস করে না। এভাবে দেখতে দেখতে এক বছর কেটে গেলো। সবাই অধীর আগ্রহে তার চিঠির জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো। কিন্তু দেখতে দেখতে দ্বিতীয় বছরও কেটে গেলো। অথচ অভিযাত্রীদের পরিকল্পনা মোতাবেক এক বছরের মাথায় ফিরে আসার কথা। ইংল্যাণ্ডে ফসেট পরিবার এবং তার বন্ধুরা চিন্তায় পড়ে গেলেন। তারা উদ্ধার অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলেন।
প্রথম উদ্ধার অভিযানে আলবার্ট ডি উইন্টন নামক এক সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। যদিও পার্সি ফসেট বারবার নিষেধ করেছিলেন এই ব্যাপারে। তার কথা না শোনার পরিণতিও সুখের হলো না। আলবার্ট ডি উইন্টনও আর ফিরে আসতে পারলেন না। সেবার মোট ১৩ বার পার্সি ফসেটের খোঁজে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে একশ’র চেয়ে বেশি লোক প্রাণ হারায়। অনেকে আর ফিরে আসতে পারেনি। কিন্তু তারপরেও হাজার হাজার অভিযাত্রী পার্সি ফসেটের খোঁজে যাওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছিলো। নিজের প্রাণের চেয়ে সবাই পার্সির শেষ পরিণতি অনুসন্ধানে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছিলো। কিন্তু কয়েক দশক ধরে খোঁজ নেওয়ার পরেও তার দেখা মেলেনি।
কী হয়েছিলো পার্সির?
উদ্ধার অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পর অনেকে মেনে নিলো যে, পার্সি ফসেট আর ফিরছেন না। কিন্তু কী হয়েছিলো তার শেষ পরিণতি, সেটা কারো জানা ছিলো না। অনেকে মনে করেন, আমাজনের কুখ্যাত ম্যালেরিয়ার কোপে পড়ে পিতা-পুত্র দুজনেই প্রাণ হারিয়েছেন। বন্য প্রাণীর আক্রমণের সম্ভাবনাও একদম ফেলে দেওয়ার মতো না। বিশেষ করে জাগুয়ারের আক্রমণে অনেকেই আমাজনের গহীনে প্রাণ হারিয়েছেন। তবে সোজাসাপটা বিশ্লেষণ ছাড়াও অনেকে তার নিখোঁজ হওয়ার পেছনে পার্সি ফসেটকেই দায়ী করেছেন। পার্সি ফসেট হয়তো স্বেচ্ছায় হাওয়া হয়ে গেছেন, যেন তার অভিযাত্রা বছরের পর বছর ধরে মানুষের আলোচনার অংশ হিসেবে টিকে থাকে। ১৯৫১ সালে অরলাণ্ডো ভিয়াস-বোয়াস নামক এক অভিযাত্রী আমাজনের গহীনে মানুষের হাড়, মাথার খুলির সন্ধান পান। তিনি প্রাথমিকভাবে সেগুলো পার্সি ফসেটের বলে দাবি করলেও, গবেষণাগারের পরীক্ষায় তা ভুল প্রমাণিত হয়।
কিন্তু ২০০৫ সালে ডেভিড গ্রান নামক এক সাংবাদিকের মাধ্যমে বেশ চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ঘাটন হলো। তিনি পার্সি ফসেটের চিঠির সূত্র ধরে আমাজনের ভেতর এগিয়ে যান। তার যাত্রাপথে দেখা হয় কালাপানো ইন্ডিয়ান গোত্রের সাথে। গোত্রের স্থানীয়রা তাকে পার্সি ফসেটের ন্যায় এক উদ্ভ্রান্ত অভিযাত্রিকের কথা বলে। তাদের মতে, পার্সি ফসেট তাদের সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য করে সামনের পথ ধরে এগিয়ে যান। কিন্তু সেখানে ‘ফায়ার্স ইন্ডিয়ান’ নামক এক হিংস্র গোত্রের নিবাস ছিল। তারা দাবি করেন, পার্সি ফসেট ফায়ার্স ইন্ডিয়ানদের হাতে ধরা পড়েন এবং তাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু এই ঘটনার সত্যতা যাচাই করা এখন আর সম্ভব নয়। ডেভিড গ্রান পরবর্তীতে পার্সি ফসেটকে নিয়ে ‘দ্য লস্ট সিটি অফ জেড’নামে একটি বই লেখেন। বইটির উপর ভিত্তি করে হলিউডে একটি সিনেমা নির্মিত হয়।
পার্সি ফসেটকে অনেক সমালোচক বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ অভিযাত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। অনেকের চোখে তিনি আত্মভোলা এবং উন্মাদ। নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ৯৪ বছর পড়েও তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। আর কোনো অভিযাত্রী আমাজনের পথে পথে ঘুরে তার গুপ্ত নগরী ‘জেড’-এর সন্ধানও করেননি। কিন্তু জেড নগরী কি আসলেই ছিল? সেটা কেউ সঠিকভাবে বলতে পারে না। কারণ, আমাজনের বিশাল জগতের অনেক অংশ এখনও অনাবিষ্কৃত। হয়তো একদিন জানা যাবে, পার্সি ফসেটের জেড নগরী বলতে কিছু ছিল না। আবার এর বিপরীতও ঘটতে পারে। সে পর্যন্ত শুধু অপেক্ষার পালা।
This is a Bangla article about Percy Fawcett. He was an adventurer who believed there was a very civilized city inside the deep forest of Amazon. He went to search the city and never returned. He used to call this city as 'Z'.
Reference: Necessary references are hyperlinked.
Feature Image: Ancient Origin