Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রাসপুতিন: ঘোড়াচোর থেকে রাশিয়ার ‘ম্যাড মংক’

রাসপুতিন নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে জটাবাঁধা বিশাল দাড়িওয়ালা কোনো ব্যক্তি, মুখভর্তি আঁকাবাঁকা দাঁত আর চোখের অন্তর্ভেদী দৃষ্টিসম্পন্ন কেউ। সম্মোহন করা, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ঐ চোখের উপর নজর পড়লে যে কারোরই মনে হবে তার মনের সব গোপন কথা আর গোপন নেই, যার ফাঁদে পড়েছিলেন ভিক্টোরিয়ান গাউন পড়া আর মণিমুক্তার মালা পরে থাকা রুশ অভিজাত মহিলারা।

রাশিয়ার ইতিহাসের বেশ বড় একটা সময় ধরে রাসপুতিন নামের অর্থ ‘লম্পট’ মনে করা হতো! আর এই রাসপুতিন এমন একজনের নাম যিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ে রাশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি, যাকে সম্মান করে চলতো রাশিয়ার জারও! রাসপুতিন ছিলেন একজন ধর্ষক, ধর্মকে ব্যবহার করে নিজের লালসাকে চরিতার্থ করা একজন ‘পাগলাটে সন্ন্যাসী’ যিনি রাশিয়ার রাজপরিবারকে নাচিয়েছেন যেমনটা একজন পিয়ানিস্ট তার পিয়ানোর চাবিগুলো নাচিয়ে থাকেন। যদিও রাসপুতিন নামের অর্থ মোটেই লম্পট নয়, তা-ও অনেকেই এভাবেই রাসপুতিনকে তুলে ধরতে পছন্দ করেন। এদিকে রাসপুতিনের জাদুকরী ক্ষমতার উপর বিশ্বাস করা লোকের সংখ্যাও কম নয়। তাই রাসপুতিন সম্পর্কিত সব ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণা, গুজবকে একপাশে সরিয়ে রেখে জেনে আসা যাক তার আসল পরিচয়।

অন্তর্ভেদী দৃষ্টিসম্পন্ন রাসপুতিন; Source: rbth

সাইবেরিয়ার বোকা

পোকরোভসকোয়ে, এই বিশাল নামের আড়ালে লুকিয়ে থাকা সাইবেরিয়ার ছোট্ট গ্রাম রাসপুতিনের সময়ের আগপর্যন্ত ছিল আসলেই বেশ ছোট। সাইবেরিয়ার কোনায় পড়ে থাকা মাত্র দু’শ ঘর আর টেনেটুনে এক হাজার বাসিন্দার এই শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশের এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেন গ্রিগরি ইয়েফিমোভিচ রাসপুতিন। এফিম রাসপুতিন আর আনা ভাসিলিয়েভনার আগের চার সন্তানই মারা গিয়েছে রোগশোকে ভুগে আর প্রতিকূল পরিবেশে, নয় সন্তানের মধ্যে বয়সের দিক থেকে পঞ্চম গ্রিগরিই শেষমেশ টিকে থাকলেন শীতল সাইবেরিয়ায়।

ছোটবেলা থেকেই রাসপুতিন একটু অন্যরকম ছিলেন। তার নিজের ভাষায়, দুর্বল, হাড্ডি-চর্মসার আর সঙ্গিহীন, যার সময় কাটতো বনের মধ্যে পশুদের সাথে কথা বলে আর ঈশ্বরের সাথে আলাপ করে! স্কুলে পড়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য না থাকা রাসপুতিনের অদ্ভুত আচরণ আর বেশভূষার কারণে শীঘ্রই গ্রামবাসীর উপহাসের শিকার হলেন রাসপুতিন, গ্রামবাসীরা তাকে খ্যাপাতে শুরু করলো ‘বোকা গ্রিশকা’ নামে। কিন্তু রাসপুতিন কি আসলেই বোকা ছিলেন? নিজের বাবাসহ অন্যান্য কৃষকদের কৃষিকাজ তার কাছে মনে হতো বিরক্তিকর আর পণ্ডশ্রম। তাই তিনি ঝুঁকে পড়লেন ঘোড়া কিংবা আস্তাবলের বেড়া চুরিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে, যা তার একঘেয়ে জীবনে সামান্য হলেও রঙের ছোঁয়া এনে দিতো!

রাসপুতিন বিয়ে করেছিলেন ১৯ বছর বয়সে, স্ত্রী ফিওডোরোভনা দুবরোভিনার গর্ভে জন্মেছিল তিন সন্তান। কিন্তু তারা কেউই এই উদাসমনা ব্যক্তিকে সংসারী করতে পারেননি। মদ খাওয়া আর চুরি-চামারি করেই দিন কাটিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি, এমন সময় বেশ বড়সড় একটা দাও মারার চেষ্টা করলেন। কিন্তু বিধি বাম, ধরা পড়ে গেলেন, ধরে নিয়ে আসা হলো স্থানীয় বিচারকের সামনে। বিচারক আর কী শাস্তি দিবেন? যে শাস্তিই দেওয়া হোক না কেন, রাসপুতিনকে দুই-তিন দিন পরেই দেখা যাবে আস্তাবলের কাছে উঁকিঝুঁকি মারতে! সমাধান দিলেন রাসপুতিন নিজেই, তীর্থযাত্রী হিসেবে পায়ে হেঁটে যেতে হবে ৫২৩ কিলোমিটার দূরের ভারখোতুরইয়ের বিখ্যাত অর্থডক্স গির্জায়! এটাই তার শাস্তি। মেনে নিলেন বিচারকসহ অন্যান্য গ্রামবাসীরা। সাইবেরিয়ার প্রান্তরে একা একা হেঁটে ফিরে আসবে এতটা পথ? তা-ও আবার কোনো ধরনের টাকা-পয়সা ছাড়াই! দুবরোভিনা ভাবলেন, এটাই হচ্ছে স্বামীর সাথে তার শেষ দেখা! গ্রামবাসীরাও যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।

সন্তানদের সাথে ‘বোকা গ্রিশকা’; Source: Wikimedia Commons

পাগলাটে ভবঘুরে

রাসপুতিন এখন পুরোদস্তুর ভবঘুরে, গ্রাম থেকে গ্রামে হাঁটছেন খালি পায়ে। খাবারের আশায় পথে দেখা হয়ে যাওয়া আগন্তুকদের কাছে একমুঠো খাবার চাইছেন, আর নিজের জীবনের পুরো আশা ছেড়ে দিয়েছেন ঈশ্বরের উপর– বেঁচেও তো যেতে পারেন তিনি। এভাবে ঘোরাঘুরির পর অবশেষে ভারখোতুরইয়েতে পৌঁছালেন। বিশাল দাড়ি গোফ আরো বিশাল হয়ে উঠেছে, ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত রাসপুতিন দেখা পেলেন এক অশিক্ষিত সন্ন্যাসীর। ব্রাদার ম্যাকারির কাছ থেকে দীক্ষা নিলেন, তবে তার সাথে থাকতে হলে কঠোর সাধনা করতে করতে হবে। ছেড়ে দিতে হবে মদপান আর যৌন ক্রিয়াকলাপ।

রাসপুতিন খুব দ্রুতই ব্রাদার ম্যাকারির অনুকরণ করা শুরু করেন। রাশিয়ার ধর্মীয় মানসপটে তখন ‘কৃষক পুরোহিত’-রা আলোচনায় আসতে শুরু করেছে। সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে অভিজাত পরিবারের লোকেরাও বিশ্বাস করতে শুরু করলেন শুধুমাত্র কৃষকরাই, যারা শিক্ষার আলো কিংবা অন্যান্য পার্থিব শিক্ষার হাত থেকে বঞ্চিত, শুধুমাত্র তাদের কাছেই অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারে! এই অতীন্দ্রিয় ক্ষমতাসম্পন্ন কৃষকরা (যাদেরকে স্টারেটস নামে ডাকা হতো) ক্রমেই হয়ে উঠলেন সমাজের ভবিষ্যদ্বক্তা, ধর্মীয় গুরু, সহজ কথায় নবী! পরের দুই বছর রাসপুতিন ঘুরে বেড়ালেন রাশিয়ার এমাথা থেকে ও’মাথা, এমনকি চলে গিয়েছিলেন অর্থোডক্স গির্জার কেন্দ্রবিন্দু গ্রিসের আথোস পর্বত পর্যন্তও!

যুবক রাসপুতিন; Source: Wikimedia Commons

আধ্যাত্মিক গুরুর পুনরাবির্ভাব

দুই বছর এভাবে ঘোরাঘুরি করার পর ‘বোকা গ্রিশকা’-র পোকরোভসকোয়েতে পুনরাগমন ঘটলো ‘ব্রাদার গ্রিগরি’ হিসেবে, একজন আত্মস্বীকৃত ‘পবিত্র মানুষ’ পরিচয়ে। কিছুদিনের মধ্যেই রাসপুতিন তার কিছু অনুসারী পেয়ে গেলেন, বেশিরভাগই অল্পবয়সী মহিলারা, যারা রাসপুতিনের সাথে গোপনে দেখা করতেন তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতার পরিচয় পাওয়ার জন্য। রাসপুতিন এসব গোপন মিটিং-এ কী করতেন? তিনি কী ‘খিলিস্টি’ দলে যোগ দিয়েছিলেন, যারা বিশ্বাস করতো যে পবিত্রতা অর্জনের একমাত্র পথ নিকৃষ্টতম যৌনাচার করা?

ধর্মপ্রাণ রাসপুতিনের আধ্যাত্মিক তপস্যা তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার উপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। ১৯০২ সালে, ৩৩ বছর বয়সী রাসপুতিন তার নতুন আস্তানা গাড়লেন কাজান শহরে, মস্কো থেকে প্রায় ৫০০ মাইল পূর্বের এই শহরে সচ্ছলদের সংখ্যা কম নয়। কাজানে এসে রাসপুতিন আরো সামাজিক হয়ে উঠলেন। মেশা শুরু করলেন সমাজের অভিজাত পরিবারের নারীদের সাথে যারা তাদের সমস্যার সমাধানের জন্য নিজেদের সবকিছু উজাড় করে দিতে দ্বিধা করতেন না। রাসপুতিন নিজের হাতের উপর তাদের হাত রেখে তার অন্তর্ভেদী দৃষ্টি দিয়ে চোখের দিকে তাকিয়ে তাদের আত্মার ভিতরের অন্ধকার দিক খুঁজে বের করতেন। রাসপুতিনের প্রতি তাদের ভক্তির মাত্রা বোঝাতে তারা পোশাকআশাকসহ বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার উপহার দিতেন, এবং এমন গুজবও ছড়িয়েছে যে তাদের মধ্যে অনেকেই রাসপুতিনের সাথে বিছানাও ভাগাভাগি করতেন।

এদিকে গ্যাভ্রিল নামের এক বিখ্যাত অর্থোডক্স মঠের প্রধানের সাথে বন্ধুত্ব হলো রাসপুতিনের। এই গ্যাভ্রিলই রাসপুতিনকে রাজধানী সেইন্ট পিটার্সবার্গে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। ইতিমধ্যেই কাজান শহরে যথেষ্ট যশ-খ্যাতি পেয়ে গিয়েছেন রাসপুতিন। আরোগ্যকর্তা, ভাববিলাসী আর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ধর্মীয় গুরু হিসেবে রাসপুতিনের খ্যাতি রাজধানীতেও পৌঁছিয়ে গিয়েছে। রাসপুতিনকে রুশ অর্থোডক্স ধর্মের মহাঋষি হিসেবে কল্পনা করা অভিজাত পরিবারের ভক্তরাও তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করলেন। তার অবাধ যৌনাচারের গুজবও নতুনভাবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো, কিন্তু তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতার ডালপালার নিচে তা চাপা পড়তে বেশি সময় লাগেনি।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রাসপুতিনকে বন্ধু হিসেবে আলিঙ্গন করে নিলেন ফিওফান, যিনি হলেন সেইন্ট পিটার্সবার্গের অর্থোডক্স গির্জার প্রধান, এবং রাশিয়ার জার নিকোলাস এবং জারিনা আলেকজান্দ্রিয়া ফিয়োডোরোভনার কনফেসর (যে ব্যক্তি পাপের স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন)।

ভক্তদের সাথে রাসপুতিন এবং রাসপুতিনের বাবা (ডান থেকে তৃতীয়); Source: Wikimedia Commons

রাজকীয় অধ্যায়

এদিকে রুশো-জাপানীয় যুদ্ধে হতাশাজনকভাবে হারার পর রাশিয়ার রাজনৈতিক অবস্থা টালমাটাল হয়ে উঠলো। রয়্যাল প্যালেসের এক শান্তিপূর্ণ কুচকাওয়াজের সময় হঠাত করে প্রাসাদরক্ষীরা সৈন্যদের উপর গুলি চালানো শুরু করলো। ‘ব্লাডি সানডে ম্যাসাকার’ নামে পরিচিত এই গণহত্যাকে কেন্দ্র করে কিছুদিন পরেই এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটে।

এরকম হাঙ্গামাপূর্ণ পরিস্থিতেই, আলেকজান্দ্রা চারজন ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন, এবং শেষমেশ একজন উত্তরাধিকার, অ্যালেক্সেই। কিন্তু অ্যালেক্সেই আবার হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত, রক্ত জমাট না বাঁধার এক মারণঘাতী রোগে। যখন ডাক্তাররাও হাল ছেড়ে দিলেন, নিকোলাস আর আলেকজান্দ্রার আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো আরোগ্যকর্তার কাছে যাওয়া ছাড়া আর উপায় থাকলো না। এমন সময় ফিওফান তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন স্বয়ং রাসপুতিনকে।

ভারখোতুরইয়েরের মঠ থেকে আনা ছোটখাটো একটা রেলিক (কোনো ঐতিহাসিক বস্তুর ধ্বংসাশেষ) হাতে জারের প্রাসাদে আবির্ভাব ঘটলো রাসপুতিনের। তার ব্যক্তিত্ব দিয়ে প্রভাবিত করে খুব সহজেই অসুস্থ অ্যালেক্সেই-এর সাথে দেখা করার অনুমতি পেয়ে গেলেন রাসপুতিন। অসুস্থ ছেলেকে দেখে রাআসপুতিন তার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা শুরু করলেন, তার প্রার্থনা শুরু হতেই অ্যালেক্সেই শান্ত হয়ে পড়লো এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে যখন ঘুম থেকে উঠলো, শরীর থেকে তার অসুস্থতার সবকিছুই বিদায় নিয়েছে!

রাসপুতিনের প্রার্থনা কিংবা সম্মোহন, যা-ই হোক না কেন, রাশিয়ায় রাজত্ব করা রোমানোভ পরিবার রাসপুতিনকে নিজেদের ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে মেনে নিলেন। রাসপুতিনের যৌনাচার সম্পর্কিত গুজব সম্পর্কে ভালোই জানতেন জারিনা, তাই নিজেদের মিটিংগুলো গোপনভাবেই সেরে নিতেন। কিন্তু গুজব ছড়িয়ে পড়লো কিছুদিনের মধ্যেই, ম্যাড মংকের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন জনসাধারণের বিরাগভাজন জার নিকোলাস এবং তার ‘জার্মান’ স্ত্রী।

জারিনা আলেকজান্দ্রা ফিয়োডোরোভনা ও তার সন্তানদের সাথে রাসপুতিন; Source: Famous Biographers

ষড়যন্ত্র… অতঃপর মৃত্যু

রাশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে বিপ্লবের হাওয়া। বিপ্লবী আর রাজবংশের সমালোচকরা নিকোলাসের ভুল সিদ্ধান্তগুলোর কারণ হিসেবে দায়ী করলেন এই অতিপ্রাকৃত মূর্তিকে। রাসপুতিনের যৌনাচারগুলোর গুজবগুলো তুলে ধরা হলো আরো অশ্লীলভাবে। রাজপরিবারের উপর রাসপুতিনের প্রভাব ছিলো ব্যাপক। আলেকজান্দ্রা তার অনেক মন্ত্রীকে হঠাৎ করে বরখাস্ত করে তাদের জায়গায় অন্যান্যদেরকে বসিয়ে দেওয়ার পর রোমানোভ পরিবারের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা এর কারণ হিসেবে সরাসরি দায়ী করলো রাসপুতিনকে।

রাসপুতিনের বিরুদ্ধে এই উন্মাদনা চরম আকার ধারণ করলো, সময়টা তখন ১৯১৬। রোমানোভদের সাথে তার এই মাখামাখি রাগিয়ে দিলো জারের ভাইঝির স্বামী প্রিন্স ফেলিক্স ইউসুপোভকে। ইউসুপোভ আরো কয়েকজন অভিজাত ব্যক্তিদেরকে নিয়ে রাসপুতিনকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আঁটলেন। ইউসুপোভের নিজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, রাসপুতিনকে ডিনার করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলো যেখানে থাকবে ইউসুপোভ এবং তার সহকারীদের স্ত্রীরা। রাসপুতিনের জন্য আলাদাভাবে বানানো বিশেষ কেক এবং তার ওয়াইনের গ্লাসে আগেই একজন মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সায়ানাইড লাগিয়ে রাখা হয়েছিলো। কিন্তু রাসপুতিনের বদহজমের কারণে সায়ানাইডের প্রভাব খুব একটা পড়েনি।

সায়ানাইড ব্যর্থ হওয়ার পর ইউসুপোভ সরাসরি রাসপুতিনের পিঠে রিভলবার দিয়ে গুলি করলেন, তারপরেও রাসপুতিন বেঁচে রইলেন! এদিকে বাকিরাও রাসপুতিনের উদ্দেশ্যে গুলি করে, তাকে কার্পেটে মুড়িয়ে বরফগলা নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। লাশের ময়নাতদন্ত হওয়ার পর ডাক্তাররা ঘোষণা করলেন রাসপুতিনের মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে, রিভলবারের গুলিতে নয়!

রাসপুতিনের মৃতদেহ; Source: Wikimedia Commons

রাসপুতিন একবার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তিনি যদি আততায়ীদের হাতে মারা যান, তবে রোমানোভ পরিবারও ধ্বংস হয়ে যাবে। এটা সহজেই অনুমান করা গিয়েছিলো যে, রোমানোভরা ক্ষমতায় বেশিদিন টিকে থাকতে পারবে না, কিন্তু রাসপুতিনের ভবিষ্যদ্বাণী প্রমাণ করতেই যেন উরাল পর্বতে নির্বাসিত পুরো পরিবারের সাতজনকেই গুলি করে মেরে ফেলে রক্ষীরা।

রাসপুতিনের গল্পের কতটুকু নিজের জীবনী আর কতটুকু বলশেভিক বিপ্লবীদের প্রোপাগান্ডা তা কখনোই পরিমাপ করা সম্ভব নয়। রাসপুতিনের বাস্তব জীবনের গল্প হারিয়ে গিয়েছে ইতিহাসের পাতায়, কিন্তু তার ধোঁয়াশাপূর্ণ চরিত্র- ক্ষমতার সুতোয় টান দেওয়া এক রহস্যময় ধর্মীয় গুরু, চিরকাল বেঁচে থাকবে।

তথ্যসূত্র:

১. Rasputin: The Untold Story – Joseph T. Fuhrmann – Wiley Publications

২. Rasputin and the Fall of the Romanovs – Colin Wilson – Granada Publishing

ফিচার ইমেজ: Reddit

Related Articles