Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সেলিম দ্য গ্রিম: অটোম্যান খেলাফতের জন্ম যার হাতে

এখন থেকে অটোম্যান সম্রাট পবিত্র নগরী মক্কা, মদিনা ও জেরুজালেমের সম্মানিত রক্ষাকর্তা। সেই সাথে প্রভূত সম্পদের অধিপতি এবং প্রাচ্যের সবচেয়ে লোভনীয় অঞ্চলের শাসক। বাণিজ্যের জন্য প্রচলিত যোগাযোগের পথগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অংশ তার নিয়ন্ত্রণে।    (Cambridge History of Turkey, Vol-2, Page- 32)  

সত্যিকার অর্থেই অটোম্যান সিংহাসনে তার আরোহনের ঘটনা গোটা সাম্রাজ্যের জন্য মাইলফলক। ১৫২০ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিস্তৃত সাম্রাজ্যের আয়তনের সত্তর ভাগ বেড়েছে তার আমলেই। কেবল পারস্যের শাহ কিংবা মিশরীয় মামলুকদের মতো দাপুটে শাসকদের পদানত করেই ক্ষান্ত হননি। বংশধরদের প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন সুন্নি মুসলিম বিশ্বের মোড়ল হিসেবে। তার হাতে ধরেই পরবর্তী শাসকেরা একাধারে সুলতান ও খলিফার পদমর্যাদা অর্জন করতে পেরেছে।

অটোম্যান সাম্রাজ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান সেলিম দ্য গ্রিমের; Image source: allaboutturkey.com

সুলতান প্রথম সেলিম। মাত্র আট বছরের শাসনকালে যিনি আমূল বদলে দিয়েছিলেন ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক মানচিত্র। বদলে দিয়েছেন অটোম্যান ইতিহাসের ভবিষ্যত। একদিকে দানিয়ুব থেকে আরব সাগর; অন্যদিকে কৃষ্ণসাগর থেকে নীলনদ। সাম্রাজ্য যেন পরিপূর্ণ সমর কুশলতায় যেকোনো শত্রুর মুখোমুখি হতে সক্ষম।

সেলিম দ্য গ্রিম

১৪৭০ সালের ১০ই অক্টোবর সুলতান দ্বিতীয় বায়েজিদের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন সেলিম। মা গুলবাহার সুলতানা দুলকাদির বেলিকের রাজকন্যা। নানা বজকুর্ত বে সে অঞ্চলের একাদশতম শাসক। ‍দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং সাহসী হিসেবে বড় হতে থাকেন তিনি। প্রথম দিকেই শিক্ষা দেওয়া হয় ধর্ম ও যুদ্ধবিদ্যায়। প্রখ্যাত পণ্ডিত মাওলানা আব্দুল হালিমের তত্ত্বাবধানে জ্ঞান অর্জন করেন প্রয়োজনীয় নানা বিষয়ে। পিতা দ্বিতীয় বায়েজিদের শাসনকালে ট্রাবজোন (আনাতোলিয়ার কৃষ্ণসাগর অঞ্চল)-এর গভর্নর নিযুক্ত হন। সময় এলো যোগ্যতার পরীক্ষা দেবার। সেই সাথে সুযোগ প্রশাসনিক ও সামরিক অভিজ্ঞতা লাভের। 

পিতার মৃত্যুর পর ভাইদের সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হয়। ক্ষমতায় আসেন ১৫১২ সালে। প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দিতে নিষ্ঠুর সব পদক্ষেপের কারণে লাভ করেন ইয়াভুয বা Grim উপাধি। স্বীয় সিদ্ধান্ত পূরণ করার ক্ষেত্রে তার আপোষহীন নীতি অটোম্যান সাম্রাজ্যকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে গেছে। আট বছর শাসনের পর ২২শে সেপ্টেম্বর ১৫২০ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সিংহাসনের জন্য প্রতিযোগিতা

সুলতান বায়েজিদের মৃত্যুর পর সেলিম সুলতান হিসেবে সিংহাসন নিলেন। উত্তরাধিকারী অপর পুত্র আহমদের প্রতি ছিল বায়েজিদের সুনজর। সেখানে সেলিমের ক্ষমতায় আসাটা পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। প্রথম দফায় পিতা জয়ী হলেও পুত্র দ্রুত জেনেসারি বাহিনীর সহযোগিতায় সিংহাসনচ্যুত করেন পিতাকে। বেচারা বায়েজিদ মাত্র এক মাস পরেই মারা যান। সেলিমের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় শুধুমাত্র ইউরোপীয় অংশের উপর। প্রায় সমগ্র আনাতোলিয়া তখনো নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল অপর ভাই আহমদ। জ্যেষ্ঠ ভাই কোরকুতের দখলে তখন সারুখান। 

পিতা দ্বিতীয় বায়েজিদের সুনজর ছিলো অপর পুত্র আহমদের প্রতি; Image Source: hurriyetdailynews.com

সেলিমের সিংহাসন আরোহণে বিদ্রোহী হয়ে উঠলো ভাইয়েরা। বসফরাসের পূর্বতীর পর্যন্ত এগিয়ে আসা আহমদের সাথে তুমুল সংঘর্ষ হয় সেলিমের। পরাজিত আহমদ পালিয়ে আশ্রয় নিলেন পারস্যের সাফাভি শাসক শাহ ইসমাইলের দরবারে। এ দরবার অটোম্যান সাম্রাজ্যের চিরশত্রু। আনাতোলিয়ায় থাকা পাঁচজন ভ্রাতুষ্পুত্রকে ব্রুসায় ধরে আনলেন সেলিম। সিংহাসনের সম্ভাব্য দাবিদার মনে করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো।

বড় ভাই কোরকুত এই নিষ্ঠুরতা দেখেই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু আকস্মিক আক্রমণ করে ফেললেন সেলিম। দ্বিতীয় দফায় আহমদ সৈন্য সংগ্রহ করে সেলিমের সাথে মোকাবেলায় আসেন। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হলোনা। বীরত্বের সাথে যুদ্ধ চালিয়েও পরাজয় ও বন্দীত্ব বরণ করতে হলো। আহমদকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে অবসাট ঘটে অটোম্যান গৃহবিবাদের। সেলিম সিংহাসনে বসেন ঘরোয়া সমস্ত প্রতিযোগীকে দমন করে।

পারস্যের সাথে টানাপোড়েন

পারস্যের মসনদে তখন সাফাভি বংশের শাসক শাহ ইসমাইল। পারস্য ও অটোম্যানদের সীমানা পাশাপাশি হওয়ায় প্রায়ই বিরোধ লেগে থাকতো। অন্যদিকে সাফাভিদের শিয়া মতাদর্শের সাথে অটোম্যানদের সুন্নি মতাদর্শের বিরোধ, যা পিতা বায়েজিদের সময় থেকেই চলে আসছে। আহমদের সাথে সংঘর্ষের সময় আনাতোলিয়ার শিয়ারা আহমদকে সমর্থন দেয়। আহমদ নিজেও শিয়া মতবাদে দীক্ষা নেন বলে প্রচলিত আছে। 

পাশাপাশি সংলঘ্ন দুই সাম্রজ্যে দুইজন উচ্চাভিলাষী শাসক; Image source: themaparchive.com

সুপরিকল্পিতভাবে সেলিম এশিয়া মাইনরের প্রায় চল্লিশ হাজার শিয়াকে হত্যা করে ভবিতব্য শত্রুদের উৎপাটন করেন। ফলে দুই উচ্চাভিলাষী শাসকের মধ্যে সংঘর্ষ সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় মাত্র। যেমনটা দাবি করা হয়েছে-

সেলিম প্রকৃত অর্থেই ভীত ছিলেন এই ভেবে যে, অটোম্যান বিরোধী প্রচারণা ক্রমে বিপ্লবে রূপান্তরিত হতে পারে।  (A History of the Ottoman Empire, Douglas A. Howard, Page- 162)

সেলিমের দুই ভ্রাতুষ্পুত্র আশ্রয় নেয় শাহ ইসমাইলের দরবারে। তাদের ফেরত চেয়ে পত্র পাঠান। পারস্য থেকে অপমানজনক ভাষায় পত্রের জবাব এলে হত্যা করা হয় দূত। প্রতিশোধ হিসেবে শাহ ইসমাইলও দরবারের একজন তুর্কি দূত হত্যা করেন। পরিণামে ভয়ানক ক্রুদ্ধ হয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন সুলতান সেলিম।

চালদিরানের যুদ্ধ

১৫১৪ সালের মার্চ মাসে এক লাখ চল্লিশ হাজার সৈন্য নিয়ে সিভার্সে জমায়েত হন। পারস্যের রাজধানী তাব্রিজ দখলের অভিপ্রায়ে রওনা হন ২০শে এপ্রিল। খবর পেয়ে শাহ ইসমাইল আশি হাজার সৈন্যের বাহিনী প্রস্তুত করেন প্রতিরোধের নিমিত্তে। শক্তি ও সজ্জায় পারসিক বাহিনী অটোম্যান বাহিনী থেকে পিছিয়ে ছিল। তথাপি সেলিমের অগ্রাভিযানকে বাঁধাগ্রস্ত করার জন্য শাহ অগ্রবর্তী এলাকা পুড়িয়ে দিলেন। যাত্রার কষ্ট ও খাদ্য সংকটের মধ্য দিয়ে বহু সৈন্য হারিয়েও এগিয়ে এলেন সেলিম। 

অটোম্যান গোলার সামনে বিধ্বস্ত হয়ে যায় পারসিক বাহিনী; Image source: PBase.com

১৫১৪ সালের ২৩শে আগস্ট চালদিরান প্রান্তরে উভয় বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়। সেলিমের কামান ও গোলার সামনে টিকতে পারেনি শাহের অশ্বারোহী বাহিনী। প্রায় পঁচিশ হাজার পারসিক সৈন্য নিহত হয়। বাকিরা পলায়ন করে। শাহ ইসমাইলও গুরুতর আহত অবস্থায় পলায়ন করেন। তার পরিবার-পরিজন হয় বন্দী। তাব্রিজ প্রবেশ করার পরেও সেলিম পুরো পারস্য অধিকার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সৈন্যদের অস্বীকৃতির কারণে দিয়ারবেকির ও কুর্দিস্তান দখল করেই রাজধানীতে ফিরে যান।

মামলুকদের সাথে টানাপোড়েন

বিগত বিজয়ের কারণে সেলিমের খ্যাতি ও মর্যাদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। অটোম্যান বাহিনী ছিল অনেকটাই ক্লান্ত আর সেলিম নিজেও নিরুৎসাহিত। তারপরেও মিশরীয় মামলুকদের সাথে সম্পর্কের পাল্লা ঋণাত্মক দিকে নামতে থাকে। পারস্য অভিযানে থাকার সময়ে মামলুক সুলতান কানসোহ আল ঘোরী সিরিয়া সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ঘটান।

মামলুক সাম্রাজ্যে তখন বিশাল অঞ্চল নিয়ে বিস্তৃত; Image source: epicworldhistory.blogspot.com

প্রকৃতপক্ষে প্রতিবেশী পারস্য আক্রান্ত হওয়াটা মিশরের জন্য উদ্বেগের কারণ ছিল। শাহ ইসমাইল চালদিরানে পরাজিত হবার পর মামলুক সুলতানের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। জবাবে কানসোহ আল ঘোরী ১৫১৬ সালে আলেপ্পোর দিকে সসৈন্যে যাত্রা করেন। নামমাত্র আব্বাসীয় খলিফা মুতাওয়াক্কিলসহ একটা শান্তিমিশন গঠন করেন। যদিও তার প্রধান উদ্দেশ্য শাহ ইসমাইলকে সহযোগিতা করা। সেলিম গুপ্তচর মারফত আগেই জেনে যান পুরো ঘটনা। ফলে শান্তি মিশনের কথায় কর্ণপাত করলেন না।

শান্তি মিশনের যুদ্ধংদেহী ভাব দেখে ক্ষোভে সেলিম তাদের মাথা মুড়িয়ে দেন। অপমানিত ঘোরী জবাবে নিজের কাছে আসা সেলিমের প্রেরিত তুর্কি দূতকে অপমান ও বন্দী করে রাখলেন। ক্রোধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলেন সুলতান সেলিম। ঘোরী নিজের ভুল বুঝতে পেরে দূতকে মুক্ত করে সন্ধির প্রস্তাব পাঠালেন। কিন্তু সেলিম অটল থাকলেন যুদ্ধের অভিপ্রায়ে।      

মারজ্ দাবিকের যুদ্ধ ও মিশর দখল

১৫১৬ সালের ২৪শে আগস্ট। আলেপ্পোর নিকটবর্তী মারজ্ দাবিক-এ মুখোমুখি হয় দুই পক্ষ। সব দিকেই মামলুক বাহিনী তুর্কি বাহিনীর থেকে দুর্বল। তাদের কোনো গোলন্দাজ ছিল না। উপরন্তু আলেপ্পোর গভর্নর ও মামলুক বাহিনীর বামপাশের অধিনায়ক খয়ের বে তুর্কি বাহিনীতে যোগ দেওয়ায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেও পরাজিত হন ঘোরী। ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। 

একটা যুদ্ধ বদলে দেয় মধ্যপ্রাচ্যের সমীকরণ; Image source: wikipedia.org

আলেপ্পো বিজয়ের পর বিনা বাঁধায় দামেস্ক ও বৈরুত অধিকার করলেন সেলিম। সমগ্র সিরিয়া দখলের পর দৃষ্টি দিলেন মিসরের দিকে। সেনা নায়ক সিনান পাশা গিয়ে দখল করলো গাজা। এ সময় কানসোহ আল ঘোরীর পালক পুত্র ও ক্রীতদাস তুমান বে মিসরের সিংহাসনে। তাকে অনেকেই মেনে নিতে না পারায় খোদ মিশরেই তখন অন্তঃকোন্দল।

১৫১৭ সালের ২২ জানুয়ারি। অটোম্যান সুলতান সেলিম কায়রোর সন্নিকটে উপস্থিত। বিপুল বিক্রমে বাঁধা দিতে গিয়েও ধসে পড়লো তুমান বের প্রতিরোধ ব্যবস্থা। পরাজিত হয়ে পলায়ন করলেন মামলুক সুলতান। সুলতান কায়রো অধিকার করে নির্বিচারে মামলুকদের হত্যা করার আদেশ দিলেন। কিছুদিন পর তুমান বে শক্তি সঞ্চয় করে আবার আক্রমণ চালালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। তুর্কি বাহিনীর ব্যাপক হতাহত হলেও দিনশেষে তুমান বে দ্বিতীয়বারের মতো পরাজিত ও বন্দী হন। 

মিসর অধিকার সেলিমকে উন্নীত করে অনন্য উচ্চতায়; Image source: egypttoday.com

সাহসিকতায় মুগ্ধ সেলিম তুমান বে কে মিশরের গভর্নর করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খয়ের বের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ড দেন। মামলুক বংশের চূড়ান্ত পতন ঘটে এর মধ্য দিয়ে। মিশর, সিরিয়া, আরব ও জেরুজালেম অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনে আসে।

অটোম্যান খেলাফত

শেষ আব্বাসীয় খলিফা আহমদ আল মুতাওয়াক্কিল ছিলেন মামলুক সুলতানদের হাতের পুতুল। সুলতান তাকে বন্দী করেন এবং কনস্টানটিনেপোলে নিয়ে যান। মিশরের দায়িত্ব দেন খয়ের বে ও চল্লিশ সদস্য বিশিষ্ট এক পরিষদের উপর। খুব শীঘ্রই মুতাওয়াক্কিলকে খলিফার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সেই থেকেই মুসলিম খেলাফত মিসর থেকে অটোম্যান তুরস্কে স্থানান্তরিত হয়। যা ১৯২৪ সালে খেলাফতের পতন পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল।

শেষের দিনগুলো

সেলিম মিশর থেকে রাজধানীতে ফিরে আসেন ১৫১৮ সালে। পুত্র সোলায়মান এবং পিরি পাশা যথাক্রমে আড্রিয়ানোপোল ও কনস্টান্টিনেপোল যোগ্যতার সাথে শাসন করছেন। পরিশ্রান্ত সুলতান পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। নতুন উদ্যমে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীকে ঢেলে সাজাতে লাগলেন।

১৫১৯ সালের মধ্যে ১৫০টি বৃহদাকার যুদ্ধজাহাজ ও ১০০টি লম্বা নৌকার নির্মাণকাজ শেষ হলো। সেই সাথে ছিল গোলন্দাজ বাহিনী। কিন্তু নতুন কোনো অভিযানে বের হবার আগেই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ৫৪ বছর বয়সে মারা যান ১৫২০ সালে। 

বিশাল ভূখণ্ডের অধিকারী পরিণত হলেন প্রথম অটোম্যান খলিফায়; Image: gloriousottomanhistory.blogspot.com

যে কথা বলা হয়নি

জহিরুদ্দিন মুহাম্মদ বাবুরের সাথে প্রথম দিকে সেলিমের সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না। বাবুরের প্রধান বিদ্রোহী উবায়দুল্লাহ খান অটোম্যান দরবারে আশ্রয় পায়। কিন্তু ১৫১৯ সালের দিকে বোঝাপড়া হয়। বাবুরের কাছে উস্তাদ আলী কুলি খান, মুস্তফা রুমিসহ বেশ কয়েকজন অটোম্যান সমরকুশলীকে পাঠান সুলতান সেলিম। পরবর্তীতে ভারত আক্রমণে বাবুরের কামানের ব্যবহার তারই পরিণাম.

ইউরোপে অভিযান প্রেরণের চেয়ে সেলিম মুসলিম বিশ্বে আধিপত্য বিস্তারের দিকে বেশি মনোযোগী ছিলেন। তার তীব্র নিষ্ঠুরতার মধ্য দিয়েই সেই সাম্রাজ্যের নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন, যার ভিত রচনা করে গিয়েছিলেন পূর্বপুরুষ উসমান। এই জন্যই বলা হয়,

সেলিম ছিল সাম্রাজ্যর সবচেয়ে সফল ও শ্রদ্ধার্ঘ্য শাসক। শক্তিমত্তা এবং পরিশ্রম দিয়েই তার প্রমাণ দিয়ে গেছেন। তার পুত্র সুলতান সোলায়মানের আমলে অটোম্যান সাম্রাজ্য যে সাফল্যের শীর্ষে উন্নীত হয়েছিল, তার পাটাতন প্রস্তুত করেছিলেন মূলত পিতা সেলিম।    (Necdet Sakaoğlu, Bu Mülkün Sultanları, Page-127)

Related Articles