Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

স্যার রোনাল্ড রস (১ম পর্ব): বহুমুখী প্রতিভাধর একজন চিকিৎসক

১৮৯৫ সাল, ভারত উপমহাদেশে তখন ইংরেজ রাজত্ব। লন্ডন থেকে যাত্রা করেছে যাত্রী বোঝাই একটি জাহাজ; সব যাত্রী একজন মানুষের উপর বিরক্ত। মানুষটি যাকে সামনে পাচ্ছেন, আঙুলে সূঁচ ফুঁটিয়ে কয়েক ফোঁটা রক্ত বের নিচ্ছেন। সে রক্ত অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রেখে কীসব যেন খুঁজেও বেড়াচ্ছেন। ইংরেজ সামরিক বাহিনীর একজন চিকিৎসক তিনি, তৎকালীন ইংরেজ অধীনস্থ ভারতে নিযুক্ত ছিলেন। সাময়িক ছুটি শেষে কর্মস্থল ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে ফিরে যাচ্ছিলেন এই চিকিৎসক; নাম রোনাল্ড রস।

স্যার রোনাল্ড রস; Image Source: Keystone Features/Hulton Archive/Getty Images

ম্যালেরিয়া কীভাবে মানুষ হতে মানুষে সংক্রমিত হয়, এর উত্তর তখনো চিকিৎসাশাস্ত্রে অজানা। উত্তর খুঁজতেই কোমর বেঁধে নেমেছেন ব্রিটিশ এই চিকিৎসক। একের পর এক যাত্রীদের সবার রক্ত পরীক্ষা করে যাচ্ছেন, যদি ম্যালেরিয়ার সেই ক্ষুদ্র জীবগুলোর সন্ধান পান আরো একটিবার, এ আশায়। শুধু তা-ই নয়, জাহাজটি যেখানে যেখানে নোঙর করছে, স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে গিয়ে তিনি খোঁজ করছেন, যদি একজন অন্তত ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর দেখা মেলে।

চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রতি এমন অনুরাগ কখনোই ছিল না রোনাল্ডের। চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনাই করতে চাননি তিনি। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন, উঁচুমানের একজন লেখক হবেন, ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে তার লেখাগুলো। যদিও লেখালেখি করে বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি তিনি, তবু আপনমনে সারাজীবনই লিখে গেছেন। অবসর সময়ে কবিতা, উপন্যাস, এমনকি মঞ্চনাটিকাও লিখেছেন বেশ কিছু; তিনি ছিলেন একজন শখের চিত্রশিল্পী, বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পছন্দ করতেন, ছোটবেলা থেকেই গণিতে ছিলেন তুখোড়। স্কুলে পড়ার সময়ে একবার গণিত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে একটি বই পুরস্কার হিসেবে পান, ‘Orbs of Heaven’। বইটি পড়ে এতটাই অভিভূত হয়ে যান তিনি যে একটা সময় সিদ্ধান্ত নেন, গণিতেই উচ্চতর শিক্ষা নেবেন।

স্যার রোনাল্ড রস রচিত উপন্যাস ‘Child of Ocean‘ এর পাণ্ডুলিপি;
Image Source: Royal College of Physicians and Surgeons of Glasgow

ছবি আঁকার হাতও দারুণ ছিল রোনাল্ডের। মাত্র ১৬ বছর বয়সে, বিখ্যাত ইতালীয় চিত্রকর রাফায়েলের চিত্রকর্ম ‘টর্চ বেয়ারার’ এর হুবহু অনুকরণ চিত্র অঙ্কন করে পুরো ইংল্যান্ডের মাঝে চিত্রপ্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে নিয়েছিলেন। কিন্তু বাবার কাছে লেখক হবার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তার বাবা জোর গলায় জানিয়ে দেন, অবশ্যই চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করে একজন চিকিৎসক হতে হবে, চিকিৎসক হয়ে চাকরিও করতে হবে ব্রিটিশ অধীনস্থ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে।

একজন লেখক কিংবা চিত্রকর হবার স্বপ্ন এখানেই ধূলিস্যাৎ হয়ে যায় রোনাল্ডের। তিনি জানতেন, আর যা-ই হোক, ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীর জাঁদরেল অফিসার স্যার ক্যাম্পবেল রসের কথা নড়চড় হবার নয়। তাই বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই উঠেপড়ে লাগেন তিনি। ইচ্ছার বিরুদ্ধে, ভুল পথে এগিয়েও যে কেবলমাত্র অধ্যবসায়ের জোরে সফলকাম হওয়া যায়, তারই এক দৃষ্টান্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী রোনাল্ড রস।

ভারতে সিপাহী বিদ্রোহের মাত্র তিনদিন পর ১৮৫৭ সালের ১৩ই মে, হিমালয় পর্বতের কাছে আলমোরা নামক এক অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন রোনাল্ড রস। আট বছর বয়সেই তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ইংল্যান্ডে। সেখানেই তিনি বোর্ডিং স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। পরে ১৮৭৫ সালে বাবার ইচ্ছায় যোগদান করেন লন্ডনের সেইন্ট বার্থোলোমিউ হাসপাতালে। চিকিৎসাশাস্ত্রের পড়াশোনায় কখনোই মন বসত না তার, অধিকাংশ সময় কাটতো কবিতা লিখে কিংবা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে। কোনোরকমে মেডিকেল স্কুল পাশ করে একজন চিকিৎসক হিসেবে সনদপ্রাপ্ত হন তিনি।

বাবার স্বপ্ন পূরণে চিকিৎসকের চাকরির জন্য আবেদন করেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। পরীক্ষায় যথারীতি অকৃতকার্য হন তিনি, তার বাবা যাবতীয় খরচ বন্ধ করে দেবার হুমকি দিলে তিনি সামান্য বেতনে একটি জাহাজের চিকিৎসক হিসেবে চাকরি নেন। পরের বছর তিনি আবারো ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরির পরীক্ষা দেন। এবার ভাগ্য সহায় হয় তার, সেই পরীক্ষায় ২২ জন কৃতকার্যের মাঝে ১৭তম স্থান অর্জন করেন তিনি। সামরিক বাহিনীর মেডিকেল স্কুলে চারমাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে অবশেষে ১৮৮১ সালে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে যোগদান করেন ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে।

চাকরির শুরুতেই রোনাল্ড নিয়োগ পান ভারতের মাদ্রাজ শহরে। সেখানেই তিনি ম্যালেরিয়া আক্রান্ত অনেক সৈনিকের চিকিৎসা করেন। সে সময়ে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় কুইনাইনই সফলভাবে ব্যবহৃত হতো। শুধু তা-ই নয়, এখনো ম্যালেরিয়ার ওষুধগুলো কুইনাইন থেকেই প্রস্তুত করা হয়। ম্যালেরিয়া আক্রান্তদের চিকিৎসায় রোনাল্ডের কোনো ত্রুটি ছিলো না, সফলভাবেই চিকিৎসা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি লক্ষ করেন যে, অনেক ম্যালেরিয়া আক্রান্ত সৈনিক মারা যাচ্ছে সময়মতো চিকিৎসার অভাবে।

চিকিৎসাশাস্ত্রে একথা নতুন নয় যে, রোগের প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। তাই রোনাল্ডও ভাবতে শুরু করেন, কোনোভাবে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করা যায় কি না।

সামরিক পোশাকে স্যার রোনাল্ড রস; Image Source: Library & Archives Service blog

১৮৮৩ সালে ভারপ্রাপ্ত সার্জন পদে বদলি হয়ে রোনাল্ড ব্যাঙ্গালুরুতে আসেন। থাকবার জন্য তাকে যে বাড়ি দেয়া হয়, তা নিঃসন্দেহে বেশ আরামদায়ক ছিল। কিন্তু সন্ধ্যা নেমে এলেই মশার উপদ্রবে আর বসা যেত না। একদিন তিনি লক্ষ করেন, তার জানালার বাইরে একটা ড্রাম রাখা। ড্রামের উপরে প্রচুর মশার আনাগোনা। তিনি বাইরে যান বিষয়টা দেখতে। ড্রামে তাকিয়ে দেখতে পান, ভেতরে পানি জমে রয়েছে, আর তাতে প্রচুর মশার লার্ভা ভাসমান। তিনি ড্রামের পানি ফেলে দেবার ব্যবস্থা করেন। তাকে অবাক করে দিয়ে কিছুদিনের মাঝেই মশার উপদ্রব আগে থেকে কমে যায়। এ থেকে তিনি ভাবেন যে, মশার জন্মস্থানগুলো যদি খুঁজে খুঁজে ধ্বংস করা যায়, তাহলে হয়তোবা মশাবাহী এই ম্যালেরিয়াকে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

ব্যাপারটি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচরে আনা হলেও, রোনাল্ডের পরামর্শকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। শুধু তা-ই নয়, রোনাল্ডের গবেষণাকাজেও কর্তৃপক্ষের বিরূপ হস্তক্ষেপ ছিল সারাজীবন। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে রোনাল্ডকে নিজ উদ্যোগে ও খরচে গবেষণা চালিয়ে যেতে হয়েছিল। এতকিছুর মাঝেও রোনাল্ডের শখের চর্চাগুলো বজায় ছিল। তিনি গণিতচর্চা করতেন, গণিতে নতুন কিছু করতে চাইতেন; এছাড়াও অবসর সময়ে গান, কবিতা, নাটক, উপন্যাস লিখে লিখে নিজ খরচে বই আকারে প্রকাশও করতেন।

ভারতে কর্মরত অবস্থায় ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে প্রচুর মানুষের মৃত্যু দেখতে হয় রোনাল্ডকে। তাই তিনি ম্যালেরিয়াকে কীভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব, তা নিয়েও ভাবতেন নিয়মিত। ম্যালেরিয়ার উপর তিনি একটি কবিতাও রচনা করেছিলেন।

In this, O Nature, yield I pray to me.

I pace and pace, and think and think, and take

The fever’d hands, and note down all I see,

That some dim distant light may haply break.

The painful faces ask, can we not cure?

We answer, No, not yet; we seek the laws.

O God, reveal thro’ all this thing obscure

The unseen, small, but million-murdering cause.

ব্যাঙ্গালুরুতে একটানা সাত বছর কাজ করতে করতে একসময় বিরক্ত হয়ে ওঠেন তিনি, সবকিছুর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে বসেন। সাময়িক ছুটি নিয়ে যাত্রা করেন ইংল্যান্ডে। এতদিনে এটা তিনি বুঝে গেছেন, লেখালেখির জগতে বিশেষ সুবিধা তিনি করতে পারবেন না। দীর্ঘ সময় ধরে লিখেও পরিবার আর বন্ধুবান্ধবের বাইরে পাঠকসমাজের মনোরঞ্জন করতে পারেননি তিনি। তাই তিনি যাচ্ছেন ইংল্যান্ডে, উদ্দেশ্য, ‘গণস্বাস্থ্য’ বিষয়ে ডিপ্লোমা অর্জন। এতে করে ল্যাবরেটরিতে জীবাণু নিয়ে গবেষণা করবার একটা প্রশিক্ষণও হয়ে যাবে তার।

শিল্পীর কল্পনায় গবেষণারত স্যার রোনাল্ড রস; Image Source: Wellcome Library, London

প্রথম পর্বে আমরা জানলাম, নিয়তি কীভাবে রোনাল্ড রসকে ধীরে ধীরে চিকিৎসাশাস্ত্রের দিকে ধাবিত করে নিয়ে এসেছে, কীভাবে রোনাল্ডের মনে তৈরি করেছে এর প্রতি অনুরাগ। ম্যালেরিয়াকে রুখতে হলে জানা প্রয়োজন, ম্যালেরিয়া কীভাবে সংক্রমিত হয় মানুষে। এ ব্যাপারে সামান্যই জানতেন তৎকালীন চিকিৎসকেরা। দ্বিতীয় পর্বে আমরা জানব, শত বছর আগে এ নিয়ে গবেষণার পরিবেশ যেখানে ছিল অপ্রতুল, সামরিক কর্তৃপক্ষ যেখানে বারংবার বাধা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে রোনাল্ডের সামনে; সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে কীভাবে কঠোর এক মনোভাব নিয়ে তিনি লেগে ছিলেন এর শেষটা দেখবার জন্যে। অনেকবার ভেঙে পড়েছেন, হতাশ হয়েছেন, ব্যর্থতাগুলো তবু তাকে কাবু করতে পারেনি।

This is the 1st part of the biography and lifeworks of Sir Ronald Ross, remarkably known for discovering the complete life cycle of malaria parasite and successful prevention criteria of mosquito breeding. He also founded the epidemiological tools for malariometry, won Nobel Prize in Medicine for astonishing works no malaria parasite.

All the references are hyperlinked inside the article.

Featured Image: Wellcome Library, London

Related Articles