Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কিছু বিষাদগ্রস্ত স্মৃতি, এক মুঠো ভালোবাসা আর নিখাদ বন্ধুত্বের আখ্যান

কিছু বই আছে, যা শেষ করার পর কিছুক্ষণ হাতে নিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করে। কারণ দু’মলাটে বন্দী চরিত্রগুলো কিছু সময়ের জন্য খুব বেশি আপন হয়ে যায়, আর আপনজনদের মায়া ত্যাগ করতে ইচ্ছে করে না হুট করে। তেমনই কখন যে লেইলার জীবনের সাথে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম, টের পাইনি। শারীরিক-মানসিক নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করে, সমাজের বাঁকা দৃষ্টির শিকার হয়ে, নানা কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে বিষিয়ে ওঠা লেইলাকে একটা সময় বড্ড পরিচিত কেউ বলে ভ্রম হয়, যার জীবনের গল্পটা ধীরে ধীরে জানতে পারছি পাতার পর পাতা উল্টে।

উচ্ছল, প্রাণবন্ত লেইলা; দুনিয়াকে দেখার-জানার-শোনার অদম্য আগ্রহকে পুষে রাখা লেইলাকে জোর করে পরিয়ে দেয়া হয় গোঁড়ামির শেকল। শৈশবেই আপন চাচার হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে বড় হওয়া লেইলা পরিবারের উপর এক বুক অভিমান নিয়ে নতুন জীবনের আশায় পাড়ি জমায় ইস্তানবুলে। পেছনে ফেলে আসে কৈশোরের ভালোবাসা সিনান, ফেলে আসে চার দেয়ালের বদ্ধ পরিবেশ, ধর্মীয় শাসন নামের অবিচারের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে।  

লেইলার জীবনের শেষ ১০:৩৮ মিনিটকে তুলে এনেছেন লেখিকা, Image Source: Alice Lippart

 

কপালে যে সুখ লেখা নেই তা মনে হয় মেয়েটা আন্দাজ করতে পারেনি।

অন্ধকার এক সময়ে ইস্তানবুলে এসে হাজির হয় সে। নিজের অজান্তেই বিক্রি হয়ে যায় বেশ্যাপল্লীতে। খদ্দেরদের তৃষ্ণা মেটাবার উপায়গুলো অনিচ্ছাসত্ত্বেও রপ্ত করে নেয়, পরিণত হয় ‘মিষ্টি মা’ ওরফে ‘তেতো মা’ নামক মক্ষীরাণীর প্রিয়পাত্রীতে। লেইলা আফিয়া কামিল থেকে পরিণত হয় মোহনীয় টাকিলা লেইলাতে। একদিন পতিতাবৃত্তির অন্ধকার জগতেও এক টুকরো আলো হয়ে আসে এক বিদ্রোহী রাজপুত্র। সাম্রাজ্যবাদের জন্য লড়াই করে যাওয়া এক যুবক- আলি। জুটে যায় নানা রঙের, ধরনের পাঁচ বন্ধু- জামিলা, জয়নাব, হুমেইরা, নালান আর সিনান। যারা প্রত্যেকেই সমাজের অপছন্দের পাত্র, জীবন নামক যাঁতাকলে পিষ্ট। লিঙ্গ, ধর্ম, রঙ আর জীবনের গল্প ওদের প্রত্যেককেই আলাদা করে তুলেছে যেভাবে, ঠিক সেভাবে একত্রিতও করেছে।

ও আচ্ছা, মিস্টার চ্যাপলিনও আছেন গল্পে। তবে এই চ্যাপলিন আপনার-আমার পরিচিত গুঁফো চার্লি চ্যাপলিন নন। তার পরিচয় নাহয় বই থেকেই জেনে নেবেন। 

এলিফ শাফাক গল্পে দক্ষ শিল্পীর মতো এঁকেছেন তৎকালীন ইস্তানবুলের রাজনৈতিক পটভূমি, সমাজ ব্যবস্থা, মানুষের মন-মানসিকতার এক নিখুঁত চিত্র। বাক্যে উপমার ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। গল্পে সময়ের ব্যাপ্তি ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। এর মাঝে লেখিকা তুলে ধরেছেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু রাজনৈতিক ঘটনাকে- ১৯৬৮ সালে ইস্তানবুল থেকে আমেরিকান সৈন্য হটাবার জন্য আপামর জনতার প্রতিবাদ, ১৯৭৭ সালের পহেলা মে’তে তাকসিম স্কয়ারে বামপন্থীদের উপর গুলিবর্ষণ- প্রতিটি ঘটনাই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে লেইলার জীবনে। যা লেখিকার লেখায় ঠাস বুনটের পরিচয়ই দেয়, কারণ অনর্থক ইতিহাস কপচাননি তিনি, ইতিহাসকে আশ্রয় করে নিজের মতো করে গল্প বলে গেছেন।

সুখের ছোঁয়া পেয়েও হারাতে হয় প্রিয়জনকে; ভাগ্যের ফেরে ছেড়ে দিয়েও ফিরে আসতে হয় আদিম পেশায়, আর তারপরই সকরুণভাবে যবনিকাপাত ঘটে লেইলার নানা স্বাদ-বর্ণ-গন্ধে পরিপূর্ণ বৈচিত্র্যময় জীবনের।

পাঠক, গল্পটা কিন্তু এখানেই শেষ না…

১০ মিনিটস ৩৮ সেকেন্ডস ইন দিস স্ট্রেঞ্জ ওয়ার্ল্ড- স্রেফ টাকিলা লেইলার জীবনগাঁথা নয়; এই গল্প নিখাদ বন্ধুত্বের, উত্তাল সময়ের, সমাজে প্রচলিত ভেদাভেদ তুলে ধরার, অন্যায়কে মেনে নেবার মানসিকতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবার, উন্নত জীবনের হাতছানি দেয়া ইস্তানবুলের অন্ধকার রূপকে চিনিয়ে দেবার এক বর্ণিল আখ্যান।

লেখক পরিচিতি

এলিফ শাফাক, Image Source: NYTimes

এলিফ শাফাকের জন্ম ১৯৭১ সালের ২৫ অক্টোবর, ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গে। মায়ের নাম নুরি বিলগিন এবং বাবার নাম শাফাক আতায়মান। বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পর মায়ের সাথে তুরস্কের আঙ্কারায় চলে আসেন। মা আর নানি বড় করে তোলেন এলিফকে। এলিফ পরবর্তীতে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানান, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ছত্রছায়ায় বেড়ে না উঠে তিনি বেড়ে উঠেছেন দুজন মায়ের ছায়াতলে। তার ব্যক্তিগত জীবন ও লেখায় সেটা ভালোভাবেই প্রকাশ পেয়েছে।  

তুরস্কের নারীদের কাছে এলিফ শাফাক খুবই জনপ্রিয় একটি নাম। তার লেখনীতে উঠে আসে নারীদের অধিকারের কথা, বঞ্চনার কথা, পুরুষশাসিত সমাজের নানা অন্যায়ের কথা। কখনও কখনও দেশের রাজনীতির কট্টর সমালোচনা করেছেন দ্ব্যর্থহীনভাবে। প্রকাশের ভাষা হয়ে উঠেছে নির্মম। এজন্যই হয়তো বর্তমানে তিনি নিজভূম থেকে নির্বাসিত। তবুও থেমে নেই এলিফের কলম।

মোট সতেরটি বই লিখেছেন, যার মধ্যে এগারোটি উপন্যাস। পঞ্চাশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এলিফের উপন্যাসগুলো। সর্বশেষ বই ১০ মিনিটস ৩৮ সেকেন্ডস ইন দিস স্ট্রেঞ্জ ওয়ার্ল্ড বুকার প্রাইজের সংক্ষিপ্ত তালিকায় সগৌরবে স্থান পেয়েছে। ব্ল্যাকওয়েল’স বুক অব দ্য ইয়ার ২০১৯ হিসেবে বইটি এর মধ্যেই নির্বাচিত হয়েছে, হয়েছে ইকোনমিকস বুকস অব দ্য ইয়ারের অন্যতম সংযোজন। পূর্ববর্তী বই দ্য ফর্টি রুলস অব লাভ হয়েছে ব্যাপক প্রশংসিত। হান্ড্রেড নভেলস দ্যাট শেপড আওয়ার ওয়ার্ল্ড তালিকায় স্থান পেয়েছে অনবদ্য উপন্যাসটি।

পলিটিক্যাল সায়েন্সে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী এলিফ তুরস্কের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করেছেন। এছাড়াও পাঠদান করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি ফেলো এলিফ শাফাক। 

এলিফ যে কেবল লেখালেখিই করেন, তা নয়। তার উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হলো:

  • উই ফোরাম এজেন্ডা কাউন্সিল অন ক্রিয়েটিভ ইকোনমির সদস্য
  • ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশন্সের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য
  • শ্যাভেলিয়ে দে আর্টস এত দেস লেতরেস খেতাবে ভূষিত
  • রয়্যাল সোসাইটি অব লিটারেচারের ফেলো
  • এ পর্যন্ত টেড গ্লোবাল স্পিকার হিসেবে এলিফ দুইবার এসেছেন

বর্তমানে এলিফ অরওয়েল পুরষ্কারের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলা অনুবাদ প্রসঙ্গে 

বাংলা অনুবাদের প্রচ্ছদ; Image Source: Abul Fatah Munna

একুশে বইমেলা ২০২০-এ আহনাফ তাহমিদের অনুবাদে আদী প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে জনপ্রিয় এই উপন্যাসটির বাংলা অনুবাদ। এলিফ শাফাকের লেখাকে বাংলা ভাষায় তুলে আনার দুরূহ কাজটা অনুবাদক চমৎকারভাবে সম্পন্ন করেছেন তা বলতে দ্বিধাবোধ নেই। দেশী বাগধারার ব্যবহার করেছেন প্রয়োজনমাফিক, শব্দচয়নেও দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। 

একনজরে

  • ১০ মিনিটস ৩৮ সেকেন্ডস ইন দিস স্ট্রেঞ্জ ওয়ার্ল্ড
  • লেখিকা: এলিফ শাফাক
  • অনুবাদ: আহনাফ তাহমিদ
  • পৃষ্ঠা: ২৫৪
  • মুদ্রিত মূল্য: ৩৩০ টাকা
  • প্রকাশনী: আদী প্রকাশন  

অনলাইনে বইটি সংগ্রহ করতে ক্লিক করতে পারেন নিচের লিঙ্কে:

১)  ১০ মিনিটস ৩৮ সেকেন্ডস ইন দিস স্ট্রেঞ্জ ওয়ার্ল্ড

Related Articles