Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্রিসমাসের অন্যতম সেরা ৩ ক্লাসিক সিনেমা

ক্রিসমাস স্মরণে বাৎসরিক এই উৎসব গোটা বিশ্বে ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হবার পাশাপাশি সাংস্কৃতিকভাবেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই তো ক্রিসমাসকে উদ্দেশ্য করে কত-শত সিনেমা হয়েছে আমেরিকায়। একটা সাব-জনরাই হয়ে গেছে ‘ক্রিসমাস ফিল্ম’। ক্লাসিক অনেক সিনেমার নাম টুকে নেওয়া যায় এই সাব-জনরা থেকে।

বিখ্যাত পরিচালক ফ্র‍্যাংক ক্যাপরার অন্যতম সেরা সিনেমা ‘ইট’স অ্যা ওয়ান্ডারফুল লাইফ’ (১৯৪৬) তো শুধু সিনেমা হিসেবেই নয়, ক্রিসমাসের দিনে উদযাপনের অন্যতম মাধ্যমও হয়ে পড়েছে বিগত অনেক দশক ধরে। ক্রিসমাস এই সিনেমা ছাড়া পূর্ণতা পায় না। প্রভাব এতটাই বেশি এই সিনেমার, এই চলচ্চিত্র মাধ্যমের। সেখান থেকে বেরিয়ে ক্রিসমাস অ্যাকশনের ক্ষেত্রেও ‘ডাই হার্ড’ এর মতো উদাহারণ আছে। ‘ব্ল্যাক ক্রিসমাস’-এর মতো ক্রিসমাস হরর আছে। ‘দ্য নাইটমেয়ার বিফোর ক্রিসমাস’-এর মতো অ্যানিমেশন আছে। তা যাক। বাগাড়ম্বর করবো না। এই আর্টিকেলে এমনই কিছু পুরনো ক্রিসমাস ক্লাসিক নিয়ে আলোচনা হবে, নাম যেগুলোর স্বল্পোচ্চারিত এই অঞ্চলে। কালের খেয়ায় আরেকবার তাকানো যাক সেদিকে। 

মিট মি ইন সেন্ট লুইস (১৯৪৪)

গ্রেটেস্ট হলিডে সিনেমা নিঃসন্দেহে ‘ইট’স অ্যা ওয়ান্ডারফুল লাইফ’ (১৯৪৬)। ফ্র‍্যাংক ক্যাপরার সেই সৃষ্টি অতুলনীয়। তবে এর পর পরই যে নামটি নিতে চাই ক্রিসমাস ক্লাসিক হিসেবে, সেটা ভিনসেন্ট মিনেলির ‘মিট মি ইন সেন্ট লুইস’ (১৯৪৪)। ভিনসেন্ট মিনেলি চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশক ধরে বহু ক্লাসিক সিনেমা উপহার দিয়েছেন। এটা ছাড়াও ‘অ্যান আমেরিকান ইন প্যারিস’, ‘দ্য ব্যাড এন্ড দ্য বিউটিফুল’, ‘দ্য ব্যান্ড ওয়াগন’, ‘লাস্ট ফর লাইফ’, ‘জিজি’- রয়েছে তার মিউজিক্যাল এবং মেলোড্রামা দুই জনরায় দেওয়া ক্লাসিকের তালিকায়। এবং ‘মিট মি ইন সেন্ট লুইস’ তার প্রথম গ্রেট সিনেমা। এই সিনেমা, সেন্ট লুইসে বাস করা নামজাদা স্মিথ পরিবারের গল্প বলে। গোটা সিনেমাই অনেকগুলো সিজনাল ভিনিয়েটে ভাগ করা। মানে, বিভিন্ন সিজন/হলিডের সময়ে, এই স্মিথ পরিবারের বিভিন্ন ঘটনার সংক্ষিপ্ত চিত্রবর্ণনার মধ্য দিয়ে। গ্রীষ্ম, শরৎ ধরে ধরে শীত, বসন্ত, ক্রিসমাস; সবই দর্শক এই স্মিথ পরিবারের মাঝে দিয়ে দেখতে পায়।

এই পরিবারে চার বোন আছে, তাদের এক ভাই আছে, মা-বাবা, দাদা-দাদী আছে। প্রত্যেকেই ভিন্ন চরিত্র। কিন্তু কী গভীর একাত্মতা তাদের মাঝে! যে কেউই এই স্মিথ পরিবারের নানা মজাদার কর্মকান্ড দেখতে দেখতে কখন তাদের সুখ-দুঃখের অংশ হয়ে যাবে, বুঝতেই পারবে না। এই পরিবারের মেঝ মেয়ের ভাব আছে পাশের বাড়ির ছেলের সাথে। এই পরিবারেই সদা চঞ্চল, দুষ্টু এক ছোট্ট বোন আছে, যে ছিচকাঁদুনে গপ্পোবাজিতে মাস্টার। বন্ধুর মতো মা আছে এই পরিবারে। তবে হ্যাঁ, বাবার স্বভাবটা গম্ভীর। একদিন বাবার বড় চাকরি হয় নিউ ইয়র্কে। কিন্তু স্মিথ পরিবারের কেউই তাতে খুশি না। ওই স্টোভের চুলার রান্নাতেই তাদের সংসারের স্বাদ। চিলেকোঠায় লুকিয়ে রাখা পুতুলেই ছোট মেয়ের যত সুখ। প্রতিবেশী ওই ছেলের মাঝেই মেঝ মেয়ের যত শান্তি। স্মিথ পরিবার সেন্ট লুইসে পাতা সংসারের এত বন্ধন, এত মায়া এড়িয়ে যাবে কীভাবে নিউ ইয়র্কে!

‘মিট মি ইন সেন্ট লুইস’, সেই ‘৪৪ সালে মুক্তির পর পরই তুমুল সমালোচকপ্রিয় এবং দর্শকপ্রিয় সিনেমা বনে যায়। বহু ক্লাসিকের ক্ষেত্রেই এমনটা স্বভাবত হয় না। সিনেমাটি তার উষ্ণ হৃদয় আর বিমোহিত হবার মতো রূপ দিয়ে সেই সময় ছাপিয়ে, আজ এই সময়েও সবটুকু আকর্ষণ ছেঁকে নেয়। নিটোল গল্প, একেবারে ঘরের কাছের চরিত্রের কারণে বার বার স্মিথ পরিবারের মাঝে দর্শকের নিজেকে আবিষ্কার করাটা কোনো ছলনা নয়। যেসকল অনুভূতি আর আবেগ স্মিথেরা জড়ো করতে চেয়েছিলেন দর্শকের মনে, তার প্রত্যেকটাই সবকটা নোট, গ্যামাট ধরে ধরে অনুনাদ জাগায় দর্শকমনে। প্রত্যেকটা মিউজিক্যাল নাম্বারে আপনাতেই ছন্দে মেতে উঠবে যে কারো মন।

সিনেমার একটি আনন্দঘন দৃশ্যে জুডি গারল্যান্ড, Image Source: Paramount

ভিনসেন্ট মিনেলি গোটা সিনেমার ভিজ্যুয়ালেই একটা চিত্রানুগ ভাব তৈরি করেছেন শৈল্পিকতার সাথে, যা সাক্ষাত, ‘নস্টালজিয়ার ট্রিপ’। তার আসল মাস্টারি মিশে আছে ‘হাসি বা কান্না’; কোনো অনুভূতিকেই ম্যানুপুলেটিভ না করে, প্রকৃতির স্বাভাবিক ছন্দে এর প্রকাশ ঘটতে দেয়ায়। নিখুঁত সব অভিনয়শিল্পীর অভিনয় তো রয়েছেই। টেকনিকালারের ব্যবহার সবকিছুকে করে আরো সতেজ, আরো রঙিন। তবে টেকনিকালার নয়; প্রত্যেকটি দৃশ্যের মায়াময়তা, মোহাবিষ্টতাই এই সিনেমাকে ‘চিরযৌবনা’ করেছে।

মিরাকল অন ৩৪থ স্ট্রীট (১৯৪৭)

নিউ ইয়র্কের রাস্তা ধরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হেলেদুলে এগিয়ে চলেছে এক ভদ্রলোক। বিশ্বাস হবে, যদি কেউ বলে এই ভদ্রলোকই সান্তা ক্লজ! মোটেই হবার নয়, ওটা যে একটা মিথ স্রেফ। ছেলেভোলানো গল্পের মতো। ওটাই সদ্য ডিভোর্সপ্রাপ্ত ডোরিস তার বাচ্চা মেয়ে সুজানকে বলে। ডোরিস চায় না, তার মেয়ে কোনো কল্পকথায় বুদ হয়ে বড় হোক। এই বয়স থেকেই বাস্তবতাকে বুঝবে তার মেয়ে, এটাই সে চায়। নাহয় পরে যে আশাহত হতে হবে জীবনে বহুবার! ডোরিস যে তার নিজের জীবনের দুঃখ আর বিচ্ছেদের বিষাদ থেকে এমন হতাশাপীড়িত হয়ে উঠেছে, সেটা আন্দাজ করা কঠিন কিছু নয়। প্রতিবেশী ফ্রেড নামের ওই যুবক অবশ্য মাঝেমধ্যেই সুজানকে ওই বাচ্চাসুলভ ব্যাপারগুলোতে আগ্রহী করে তুলতে চায়। ওটারই যে বয়স সুজানের। এরই মধ্যে নিজেকে সান্তা ক্লজ দাবী করা সেই ভদ্রলোক, ক্রিস ক্রিংগ্যল (সান্তার আরেক নাম) মন মাতাচ্ছে সবার।

বিখ্যাত ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ‘মেইসির বাৎসরিক প্যারেড’-এ সবাই সন্তুষ্ট এমন কোমল স্বভাবের সান্তাকে পেয়ে। ডোরিস সুজানকে নিয়ে যখন উৎসবে গেল, সেখানেই উপস্থিত ছিল এই সত্যিকারের সান্তা। এক মেয়ের সাথে ডাচ ভাষায় কথা বলে, এক বাচ্চা ছেলের অনুরোধ তড়িৎ পূরণ করে সবাইকে বিস্মিত করে সে। ছোট্ট মেয়ে সুজানও তার ধারণায় আর অটল থাকতে পারে না।

এদিকে মেয়ে এক কাল্পনিক আকৃতিকে বাস্তব ভাবতে শুরু করছে দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে তখনই যায় সান্তার কাছে। বলে, সান্তা যেন তার মেয়ে সুজানকে বলে, সে শুধুমাত্র সান্তার পোশাক পরেছে। অমন কেউই সে নয়। সান্তাও বাস্তব নয়। কিন্তু সান্তা বার বারই বলে, সে-ই ক্রিস ক্রিংগ্যল, সে-ই সান্তা ক্লজ। ডোরিস তো হাল ছাড়বে না। এটা যে তার বিশ্বাসেও আঘাত। এরপর ৩৪ নম্বর স্ট্রীটের সেই মেইসির দোকানের ঘটনা কত জায়গায় বাড়লো! ডাক্তার ডেকে, সাইকোলজিক্যাল টেস্ট করিয়েও ডোরিস প্রমাণ করতে পারলো না যে এটা ভুয়া সান্তা। সান্তার কোনো অস্তিত্বই কখনো ছিল না। তার নৈরাশ্যবাদ আর অবিশ্বাসের ভিতকে অটল রাখতে গিয়ে শেষ অব্দি ঘটনা যে কোর্টকাচারিতেও গিয়েছে, মিরাকল ঘটার আগে।

Image Source: romp-corner

ক্রিসমাস স্পিরিটকে হৃদয়ে ধারণ করা সিনেমা হলো এই ‘মিরাকল অন ৩৪থ স্ট্রীট’ (১৯৪৭)। বিশুদ্ধতা আর ক্রিসমাসের আনন্দকে এত চমৎকারভাবে এই সিনেমা তার মাঝে বেধেছে, যার কারণে পরবর্তীতে এই গল্পকে উপন্যাসেও রূপ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মুহূর্তে কী দুর্দমনীয় সতেজতা আর ভালো লাগাকে একই ছন্দে রেখেছে এই সিনেমা! শুধু কী তা-ই! বক্তব্য আর বার্তা দেবার ক্ষেত্রেও এই সিনেমা সুস্পষ্ট এবং স্বতঃস্ফূর্ত। ত্রিশের দশকের ‘ডিপ্রেশন এরা’ আর চল্লিশের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী দুই দশকের এমন দুই মানবসৃষ্ট দুর্যোগের ফলে আমেরিকান সমাজের সিনিসিজম আর পেসিমিজমকেই যে ডোরিসের চরিত্র দিয়ে প্রকাশ করেছে এই সিনেমা। এবং বিচ্ছেদের ফলে তার চরিত্রে সৃষ্ট জটিলতাকেও বিশ্লেষণ করা যায় এই দাগে। তার বিপরীতে আশাবাদ আর ভাবালুতাকে মূল উপজীব্য বানিয়েছে এই সিনেমা। মওরিন ও’হারা, এডমুন্ড গোয়েন, জন পেইনের কমনীয় অভিনয়ে, শুধু হলিডে সিনেমা নয়; উষ্ণ অনুভূতি আর মনকে আনন্দে ভরিয়ে দেবার মতোই অপূর্ব সিনেমা হয়েছে ‘মিরাকল অন ৩৪থ স্ট্রীট’।

হলিডে ইন (১৯৪২)

তালিকার পরবর্তী ক্রিসমাস ক্লাসিক হলো একটা মিউজিক্যাল সিনেমা। চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম বিখ্যাত গায়ক বিং ক্রসবি আর গ্রেটেস্ট ড্যান্সার যাকে মানা হয়, সেই ফ্রেড অ্যাস্টেয়ার একসাথে অভিনয় করেছেন এই সিনেমায়। ক্লাসিক তকমা তো ওতেই পাওয়া হয়ে যায়। নাচে-গানে প্রতিটা মুহূর্তে চমকিত করা আর আনন্দ দেওয়া সিনেমা ‘হলিডে ইন’। ওই নামেরই (হলিডে ইন) এক সরাইখানা, এই সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুধু হলিডের সময়েই এই সরাইখানা খোলে। ক্রিসমাস থেকে ফোর্থ অভ জুলাই। প্রত্যেক ছুটির দিনে। নাচ-গান হয় সেখানে।

এই সরাইখানা, সরাইখানা হয়ে উঠবার পেছনে গল্প আছে। ত্রিকোণ প্রেমের গল্প। নিউ ইয়র্কের একটা মিউজিক্যাল দলের এক গায়ক (বিং ক্রসবি), দলের সুন্দরী (মার্জরি রেয়নল্ডস) আর লেডি কিলার ড্যান্সার (ফ্রেড অ্যাস্টেয়ার)-এর ত্রিকোণ প্রেম। সরল গায়ক প্রেম নিবেদন করে। অবসর নিয়ে থিতু হবার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু প্রেমিকা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় কিলার চার্মের ফ্রেডের জন্য। গায়কের ফিরে যাওয়া, হলিডে ইন প্রতিষ্ঠা, এর মাঝে সুন্দরীকে নিজের করে পাবার জন্য দুজনের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছেই। নেচে-গেয়ে মন জিতে নেবার দৌড়। 

Image Source: Paramount Pictures

খুবই সাধারণ, পরিচিত গল্প। এটা তো গল্পের সিনেমা নয়। মিউজিকাল। এর মধ্য দিয়ে ছন্দে ছন্দে গল্পের ঢুকে পড়া এবং সেন্টিমেন্টাল দিকটা ঠিক রেখে এগিয়ে যাওয়া। এই সিনেমা যা নিখুঁত ছন্দময়তার সাথে করতে পেরেছে। ১২টি গান দিয়ে সাজানো এই সিনেমা। ‘হোয়াইট ক্রিসমাস’ গানটি তো একটা মাইলস্টোন। অসাধারণ অর্জন রয়েছে এই সিনেমার। সবদিক থেকে টিপটপ। ‘হলিউডি গ্র‍্যান্ডনেস’কে অনায়সে ধরেছে প্রোডাকশন ডিজাইনে। ডেভিড আবেলকে সাথে নিয়ে মার্ক স্যান্ড্রিকের কোরিওগ্রাফি এর বিপুলতাকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। সবকিছুর উপর ভর করে, ক্রিসমাস থেকে শুরু করে যেকোনো ছুটির সিজনের জন্যই ক্লাসিক হয়ে আছে এই সিনেমা… এবং এই সিনেমাগুলো।

This article is a compiled review of 3 greatest 'Christmas Film'. All are old classics and has the genuine cinematic profoundness in all of them. Must watch in every Christmas.

Feature Image: Paramount Pictures

Related Articles