Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

৫টি ফ্লপ সিনেমা যা পরবর্তীতে জনপ্রিয় হয়

চলচ্চিত্র শিল্প অনেকটা লটারির মতো। ভালো কুশীলব, কাহিনী এবং পরিচালক- এসব থাকলেই যে বক্স অফিস মাত করা যাবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। অসাধারণ অনেক সিনেমা মুক্তি পেয়েই মুখ থুবড়ে পড়েছে সিনেমা হলে, দর্শক-সমালোচকদের শুভদৃষ্টি না পেয়ে ‘ফ্লপ সিনেমা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হচ্ছে হরহামেশাই। কিন্তু ব্যবসায়িক সাফল্যই কি একটি ভালো সিনেমার প্রকৃত মানদণ্ড? এমন কিছু সিনেমাও রয়েছে যেগুলো হলে দর্শক টানতে না পারলেও কালের গর্ভে হারিয়ে যায়নি। সময়ের কষ্টিপাথর এসব সিনেমাকে আরো শুদ্ধতা দিয়ে হাজির করেছে দর্শকের দরবারে। একসময়ের ব্যর্থ সিনেমা অন্য সময়ের ‘কাল্ট ক্লাসিক’ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। ভক্তের টি-শার্ট, পোস্টার বা মোবাইলের ওয়ালপেপারে সিনেমাগুলো যেন জানান দিয়ে যায়, “না, আমি হারিয়ে যাইনি!”

আজ এমন ৫টি সিনেমার কথা বলবো যেগুলো মুক্তির পরপর ব্যবসায়িকভাবে ফ্লপ হলেও পরবর্তীতে জনপ্রিয় হয়।

ব্লেড রানার (১৯৮২)

বাজেট: $২৮ মিলিয়ন

বক্স অফিস: $৩৩.৮ মিলিয়ন

ব্লেড রানার সিনেমার পোস্টার; source: Pinterest

সর্বকালের সেরা কিছু সাই-ফাই সিনেমার দলে অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারবে ‘ব্লেড রানার’। ফিলিপ কে ডিক-এর গল্প অবলম্বনে তৈরি সিনেমাটির মূল চরিত্রে রয়েছেন হ্যারিসন ফোর্ড। ছবিটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে চারটি রোবট আর একজন পুলিশ অফিসারকে ঘিরে। ভবিষ্যতের পৃথিবীতে মানুষের মতোই দেখতে রোবট বানানো হয়। চারটি রোবট দুরভিসন্ধি করে পালিয়ে যায় তাদেরকে যে বানিয়েছে তার খোঁজে। পুলিশ অফিসার রিক ডেকারডের উপর দায়িত্ব পড়ে সেই রোবটগুলোকে খুঁজে বের করার জন্য। আশির দশকে মুক্তি পাওয়ার পর অবশ্য এই সিনেমা আর দশটা গতানুগতিক কল্পবিজ্ঞান সিনেমার মতোই গৃহীত হয়েছিলো। বক্স অফিসে ‘ব্লেড রানার’কে বাঘা বাঘা সব সিনেমার সাথে লড়াই করতে হয়। স্টার ট্রেক, দ্য থিং এবং ই টি: দ্য এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল- এমন সব নন্দিত সিনেমার ভীড়ে সিনেমা হল থেকে হারিয়ে যায় রিডলি স্কট পরিচালিত এই ক্লাসিক ফ্লিক।

নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় ধীরে ধীরে ভিএইচএস ক্যাসেটের মাধ্যমে ‘ব্লেড রানার’ এর একটি বিশাল দর্শক শ্রেণী তৈরি হয়ে যায়। ১৯৯৩ সালে ‘লাইব্রেরি অব কংগ্রেস’ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় চলচ্চিত্র আর্কাইভে স্থান দেয় ‘ব্লেড রানার’কে।

দ্য শশ্যাঙ্ক রিডেম্পশন (১৯৯৪)

বাজেট: $২৫ মিলিয়ন

বক্স অফিস: $৫৮.৩ মিলিয়ন

শশ্যাঙ্ক রিডেম্পশন সিনেমার পোস্টার; source: GoldPoster

বছরখানেক ধরে ‘শশ্যাঙ্ক রিডেম্পশন’ আইএমডিবিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় সিনেমার শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে। দর্শকের ভোটে সেরা সিনেমার প্রথম স্থান পাওয়া এই সিনেমার আয় ছিলো নির্মাণ ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক। স্টিফেন কিং-এর উপন্যাস থেকে বানানো সিনেমাটি সমালোচকদের অকুণ্ঠ প্রশংসা আর একাডেমি এ্যাওয়ার্ড মনোনয়ন পেলেও ব্যবসায়িক ভরাডুবির হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। মুক্তির পরের বছর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিনেমাটির ক্যাসেট বাজারে ছাড়ে, সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে সেই ক্যাসেট হু হু করে বিক্রি হয়। টিভি প্রিমিয়ারে অনেক দর্শকের সামনে এসে পড়ে ফ্র্যাংক ড্যারাবন্ট পরিচালিত সিনেমাটি। এবার আর অবহেলা নয়, কোটি ভক্তের ভালোবাসায় স্নাত হয় শশ্যাঙ্ক রিডেম্পশন। ‘আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটের’ বানানো শতাব্দীর ১০০ সেরা সিনেমার তালিকায় নিজের প্রাপ্য জায়গাটা পেয়ে যায় এই জাদুকরী চলচ্চিত্র।

ফাইট ক্লাব (১৯৯৯)

বাজেট: $৬৩ মিলিয়ন

বক্স অফিস: $৩৭ মিলিয়ন

ফাইট ক্লাব সিনেমার পোস্টার; source: GoldPostermovieswithaplottwist.com

চাক পালাহনিয়াক এর সাইকোলজিকাল উপন্যাস ‘ফাইট ক্লাব’ অবলম্বনে বানানো হয় একই নামের সিনেমা। আজ ‘ফাইট ক্লাব’-এর পাশে মর্ডান ক্লাসিক এর তকমা জুটে গেছে। বইটাও এক সময় বেস্টসেলার হয়। অথচ সিনেমাটির বিচিত্র বিষয়বস্তুর জন্য চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্স। সিনেমায় ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থাকে বিদ্রুপাত্নক প্লটের মাধ্যমে তুলে ধরেন নন্দিত পরিচালক ডেভিড ফিঞ্চার। এমন কাহিনী নিয়ে সিনেমা সচরাচর দেখা যায় না। চলচ্চিত্র বোদ্ধারা মিশ্র অনুভূতি প্রকাশ করেন ফাইট ক্লাবের ব্যাপারে, অন্যদিকে হলে আসা দর্শকরাও যেন সিনেমাটির বক্তব্য বুঝে উঠতে পারছিলেন না। ব্র্যাড পিট আর এডওয়ার্ড নরটন অভিনীত সিনেমাটির কারিশমা বক্স অফিসে নজর কাড়তে পারেনি। কয়েক বছর পর ফাইট ক্লাবের ডিভিডি প্রকাশ করা হয়। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১ কোটি ৩০ লাখ ডিভিডি বিক্রি করে প্রযোজকরা তাদের ক্ষতি কড়ায়-গণ্ডায় পুষিয়ে নেন। শুধু ডিভিডি বিক্রি করেই ১০০ মিলিয়ন ডলার তুলে নেয় ফক্স।

চিলড্রেন অব মেন (২০০৬)

বাজেট: $৭৬ মিলিয়ন

বক্স অফিস: $৩৫.৫ মিলিয়ন

চিলড্রেন অব মেন সিনেমার পোস্টার; source: GoldPoster

সময়ের সেরা চলচ্চিত্র পরিচালকদের একজন আলফনসো ক্যুয়েরন। মেক্সিকান এই নির্মাতা হ্যারি পটার সিরিজের একটি পর্বের পরিচালকও বটে। ২০১৩ সালে ‘গ্র্যাভিটি’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা পরিচালক বিভাগে অস্কার তুলে দেয়া হয় আলফনসোর হাতে। এর সাত বছর আগে একই পরিচালকের ‘চিলড্রেন অব মেন’ সিনেমাটি কেন যেন নজর কাড়তে পারেনি। ডিস্টোপিয়ান পটভূমিতে সাই-ফাই ঘরানার এই সিনেমার গল্প ভবিষ্যতের অনিশ্চিত পৃথিবীকে নিয়ে। সিনেমায় দেখা যায়, ২০২৭ সালে পৃথিবীর সব নারী বন্ধ্যা হয়ে যান। কোনো শিশু জন্মাচ্ছে না সারা বিশ্বে। হঠাৎ খোঁজ পাওয়া গেল এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর। একটি নতুন শিশুর জন্মই হয়তো বাঁচাতে পারে মানব সভ্যতাকে। ক্লাইভ ওয়েন অভিনয় করেছেন মূল চরিত্রে, তার উপরই দায়িত্ব পড়ে সেই অলৌকিক নারীটিকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়ার। চিত্রনাট্য বিভাগে একটি অস্কার মনোনয়ন, ব্যস এতটুকুই হতে পারতো ‘চিলড্রেন অব মেন’-এর গল্প। কিন্তু ডিভিডি কিনে দর্শকরা বুঝিয়ে দেয় ভালো সিনেমার মূল্যায়ন করার লোকের অভাব নেই! ডিভিডি বিক্রি থেকে ২৫ মিলিয়ন ডলার যোগ হয় সিনেমাটির ঝুলিতে, এতে নির্মাণ ব্যয়ের ক্ষতি কিছুটা হলেও কমে। বিগত দশকের সেরা কয়েকটি সিনেমার মধ্যে ‘চিলড্রেন অব মেন’ একটি।

ডনি ডারকো (২০০১)

বাজেট: $৪.৫ মিলিয়ন

বক্স অফিস: $১.২ মিলিয়ন

ডনি ডারকো সিনেমার পোস্টার; source: GoldPosterbrockingmovies.com

টাইম ট্রাভেল নিয়ে অসংখ্য সিনেমা রয়েছে। কিন্তু ‘ডনি ডারকো‘র ব্যাপারটি একদমই আলাদা। এই সিনেমায় আপনি কোনো স্পেস শিপ বা ধুন্ধুমার একশন পাবেন না। স্কুলপড়ুয়া কিশোর ডনি ডারকো এই সিনেমার মুখ্য চরিত্র। মানসিকভাবে ভঙ্গুর হওয়ায় তাকে দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে নিগৃহীত হতে হয়, আচরণেও সে স্বাভাবিক নয়। খরগোশের কস্টিউম পরা এক রহস্যময় লোক ডনিকে এক ভয়ংকর বার্তা দিয়ে যায়। পৃথিবী নাকি ধ্বংস হয়ে যাবে আর ২৮ দিনের মধ্যে।

সিনেমাটির জটিল প্লট অত্যন্ত আকর্ষণীয় হওয়া সত্ত্বেও বক্স অফিসে অবহেলিত হয়। পরিচালক রিচারড কেলির প্রথম সিনেমা হিসেবে ডনি ডারকো একদমই আলোচিত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে সিনেমাটি খুব কম আয় করে, কিন্তু অন্যান্য দেশের দর্শকরা সাদরে গ্রহণ করে এটিকে। ভিন্নধারার সাই-ফাই সিনেমাটির মূল আকর্ষণ জেক জিলেনহালের অনবদ্য অভিনয়। তার বোন ম্যাগি জিলেনহালও আছেন এই সিনেমায়। ডিভিডি প্রকাশের পর বেশ ভালো সাড়া ফেলে দেয় সিনেমাটি। পুনরায় সিনেমা হলে ফিরিয়ে আনা হয় ডনি ডারকোকে। মধ্যরাত্রের শো দেখার জন্য দর্শকদের ভীড় ছিলো দেখার মতো!

চলচ্চিত্র এক বিস্ময়কর শিল্প মাধ্যম। এর পরিধি শুধু সেলুলয়েডের পর্দায় নয়, ডিভিডি বা হালের নেটফ্লিক্সের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত দর্শকরা আবিস্কার করছে চমৎকার সব সিনেমা। এ যেন গুপ্তধন আবিস্কারের মতোই আনন্দদায়ক!

ফিচার ছবি- broadly.vice.com

Related Articles