Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আছে এবং নাই: সমাজের আছে এবং নাই এর কথা বলে যে বই

‘নাই’ নামের একজন মানুষ। ছোটখাট এই মানুষটির উপরে দায়িত্ব অনেক। বন্ধুর বিপদে সাহায্য করা, বন্ধুর বিড়ালকে দেখে রাখা, মায়ের হাতে হাতে সাহায্য করা এবং আরও কত কী! তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো জামার বোতাম ঘরের সুতো টানাটানি করা আর ঘাস চিবোনো। 

জুতোহীন তার পা দুটো বালুর তৈরি বোধহয়। বয়সের তুলনায় সে একটু বেশিই দার্শনিক স্বভাবের। দশটা প্রশ্নের শেষে একটা-দুটোর উত্তর দেয়। নিজে পছন্দ করে ঈদের জামা কেনে, বন্ধুদের সাথে পিকনিক করে, ভুলভাল অঙ্ক কষে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে জীবনের প্রতি উদাসীন নাই সাহেব। 

আছে এবং নাই অথবা নাই কিংবা আছে 

এরকম এক পাগলাটে স্বভাবের ‘নাই’ এর সাথে পরিচয় হলো ‘আছে’ নামের একজনের। ঠিক কীভাবে নাই আর আছের পরিচয় সেটা খুব ঘটা করে বলার মতো কিছুই না। কিন্তু তারপর অসম বয়সের এই আছে-নাই এর বন্ধুত্ব হয়। ঘাস চিবোতে চিবোতে নাই আছের সাথে গল্প করে। নাই এর দেয়া নাম কিন্তু আছে, এই আছে নামের ভীড়ে আছের আসল নামটি জানা হয়নি। 

আছে-নাইকে নিয়ে ছোট ছোট গল্প। প্রতি গল্পে আমাদের সমাজের নানা দিক উঠে এসেছে। আছের কখনও মনে হয়েছে নাই একটু বেয়াড়া ধরনের, কখনও একটু পাগলা।

গুনতে না জানা নাইকে ঘড়ি কিনে দেয় আছে, একটা বই কিনে দেয়। বই পেয়ে বোধহয় অপমান বোধ করে বালুর পা ওয়ালা নাই, কারণ সে পঞ্চান্ন পর্যন্ত গুনতে পারে। কিন্তু সে আবার সময় দেখতে পারে না। কিন্তু সে জানে নির্দিষ্ট সময়ে ঠিক কোথায় গেলে আছের সাথে তার দেখা হবে।

বসন্ত উৎসবে আছে আর নাই মিলে হাওয়াই মিঠাই খায় আর গল্প করে। সেই গল্পগুলো আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে অসম বয়সের দুজন মানুষের কিছু প্রলাপ। কিন্তু নাই এর ছোট ছোট কথার মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক গভীর কিছু বিষয়। 

আছে এবং নাই 

একসময় নাই একটু ব্যথা পায়, আছে একটু ভয়ে ভয়ে তাকে গিয়ে এগিয়ে দিয়ে আসে। সবুজে ঘেরা কোনো ছোট্ট আবাসস্থল, মরিচবাতি দিয়ে মোড়া সেই অঞ্চল। সেখান থেকে ফিরতে গিয়ে আছে পথ হারিয়ে ফেলে।

আছে যখন নাই নামের ছোট্ট মানুষটিকে প্রশ্ন করে- সে কেন তাকে ফেলে সামনে এগিয়ে গেল, নির্বিকার নাই এর উত্তর- বড় মানুষেরা পথ হারায় না। যে পথ দিয়ে হেঁটে এসেছে, সেই পথ দিয়ে ফিরে গেলেই নাকি পথ খুঁজে পাওয়া যেত। আসলেও কি তা-ই?

ঈদ কিংবা বৈশাখের দিনে কিংবা এরপরে আছে-নাই এর দেখা হয়। বন্ধু দিবসে ফুচকা খাবার পরিকল্পনা করে, সেটাও বাতিল করে আছে। কারণ নাই ঝাল ফুসকা খেতে পারে না, যেমন দাঁতে পোকার জন্য খেতে পারে না বরই। 

নাই আর আছে অনেক দূরে বাস করে। কিন্তু একদিন আছে এসে আশ্রয় নেয় নাই এর বাসার আশেপাশে। কলতলায় নাইকে সে দেখে, অবাক হয়। তার মনে প্রশ্ন- নাইকে সে যেখানে পৌঁছে দিয়ে এসেছিল, সেই পথ তো এটা না। তাহলে? নাই কীভাবে এলো? নাই কি জানে সে এখানে এসেছে অতিথি পাখি হয়ে?

আছে তার এই হঠাৎ পাওয়া ছোট্ট বন্ধুকে প্রতিবেশি হিসেবে পেয়ে বেশ খুশি হয়। নাই একটু অভিমানের সুরেই বোধহয় আছেকে একবার মনে করিয়ে দেয় যে, আছে নাই এর এলাকাতে অল্প ক’দিনের অতিথি।নিজের বয়সের, বড় বয়সের, নিজের চেয়ে ছোট বয়সের সব বয়সের মানুষের সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব আমাদের নাই সাহেবের।

দেখা-না দেখা, অল্প-স্বল্প-গল্প এভাবেই চলতে থাকে আছে-নাই এর জীবন। চলতে চলতে একদিন আছে আর নাই এর জীবনে এক দুর্ঘটনা ঘটে। সেই দুর্ঘটনায় নাই হারিয়ে যায়। কেউ তার খোঁজ দিতে পারে না, নাইকে খুঁজে বেড়াচ্ছে আছে। নাই এর বন্ধু থেকে শুরু করে প্রিয় মকবুল চাচা- সবার কাছে নাইকে খুঁজে বেড়ায় আছে। কিন্তু কেউ জানে না নাই কোথায়। সে কি আসলেই আছে না নাই? 

এরকম চলতে চলতে আছে একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেই অসুস্থ অবস্থাতেও সে নাইকে খোঁজে। একদিন সে নাই এর খবর পায়। কিন্তু… 

না, কিন্তুর পরের অংশটুকু না-ই বা বলি, সেটা আবার স্পয়লার হয়ে যাবে। এমনিতে বোধহয় স্পয়লার অনেক বেশি দিয়ে ফেলেছি।

প্রথমে বই হাতে নিলে মনে হবে উপন্যাস। এরপর পড়া শুরু করলে মনে হবে ছোটগল্প। অনেকে হয়তো আছে-নাই এর সম্পর্ককে ছোটদের উপন্যাসের কাতারে ফেলে দেবেন। কিন্তু না, এটা শুধু গল্প না। এটা অনেক গভীরের কিছু বিষয়। আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া, আমাদের চাওয়া-পাওয়া, না পাওয়া, বিপদে পড়া, পরিত্রাণ পাওয়া এরকম নানা ঘটনা ঘটেছে এই আছে এবং নাই এর মাঝে। কখনও নিজেকে নাই মনে হয়েছে, কখনও মনে হয়েছে, “আরে না, এই আছে তো আমি নিজে!” আছে আর নাই এর সম্পর্কটা এত সুন্দরভাবে লেখিকা উপস্থাপন করেছেন যে, পড়ে মনে হবে বাস্তব দুটো চরিত্র আমাদের চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

লেখক পরিচিতি

কিযী তাহ্‌নিনের লেখা কিছু গল্প আগে পড়লেও তার লেখা কোনো বই প্রথমবারের মতো পড়া হলো এবার। তার লেখার মধ্যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখার কিছুটা প্রভাব আছে বলে আমার মনে হয়েছে। আছে এবং নাই তার প্রকাশিত দ্বিতীয় বই। 

কিযী তাহ্‌নিন 

গল্পের সাথে সাথে আপনি আছে আর নাই এর সাথে সবুজ ঘাসের উপর হাঁটবেন, উঁচু পাচিলের গল্প করবেন, আবার একসময় দেখবেন আছে আর নাই দুজন আপনার চোখের সামনে থেকে হাওয়া হয়ে গিয়েছে। আসলেই কি আছে এই আছে এবং নাই? আসলেই কি আছে আর নাই এত গল্প করেছে? দেখা কি হয়েছে আছে আর নাই? এই আছে কি আমি? নাকি আমি নাই? এ প্রশ্নগুলো বার বার আপনার সামনে আসবে। সমাজের আছে আর নাইকে নিয়েই এই আছে এবং নাই। 

বই এমন এক বন্ধু, এমন একটা মাধ্যম, যা আমাদের মনের জানালা খুলে দেয়। সব কিছু নতুন করে ভাবতে শেখায়। বই পড়ুন, নিজের জানার তালিকায় যুক্ত করুন নতুন সব তথ্য।

অনলাইনে বইটি কিনতে চাইলে ক্লিক করতে পারেন নিচের লিঙ্কে:

১) আছে এবং নাই

This is a book review on the bengali book 'Ache ebong Nai'.

Related Articles