Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যাডামস ফ্যামিলি থেকে ওয়েন্সডে: দ্য নিউ ইয়র্কার থেকে নেটফ্লিক্সে যাত্রা

বর্তমানে অনলাইন স্ট্রিমিং প্লাটফর্মের সিরিজগুলোর মধ্যে আলোচনার তুঙ্গে রয়েছে সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত নেটফ্লিক্সের ‘ওয়েন্সডে’ সিরিজটি। মুক্তির পর থেকেই জেন-জি আর মিলেনিয়ালদের মাঝে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলছে আট পর্বের এই সিরিজ। সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্র ওয়েন্সডে অ্যাডামস মূলত ‘দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি’র একজন সদস্য। সিরিজে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা ওয়েন্সডেকে জেনজির একজন মনে হলেও, অ্যাডামস ফ্যামিলির শুরু কিন্তু সেই চল্লিশের দশক থেকে। যুগে যুগে বিভিন্ন অ্যাডাপ্টেশনের মাধ্যমে অদ্ভুত আর রহস্যময় অ্যাডামস পরিবার দর্শকদের সামনে উপস্থিত হয়েছে, যেখানে মূল চরিত্রের অভিনেতা বদল হলেও পরিবারটির অনন্যসাধারণ ভাবই একে আর দশটা শো থেকে আলাদা করে রেখেছে সব সময়।

দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি, দ্য নিউ ইয়র্কার (১৯৩৮)

‘দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি’ ছিল চল্লিশের দশকে দ্য নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি সিঙ্গেল প্যানেল কার্টুন। এই কার্টুনে চরিত্রগুলোর নিজস্ব কোনো নাম ছিল না, কার্টুনিস্ট চার্লস অ্যাডামসের আঁকা বিধায় অ্যাডামস ফ্যামিলি নামেই পরিচিতি পায়। সাধারণভাবে চলে আসা ‘আমেরিকান পরিবার’ ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত স্রোতে চলা এই পরিবার সেই সময় সুনাম-দুর্নাম উভয়ই কুড়িয়েছিল।

দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি, দ্য নিউইয়র্কার (১৯৩৮); Image source: nytimes.com

দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি সিটকম, এবিসি (১৯৬৪-৬৬)

দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি (১৯৬৪-৬৬) সিরিজের কভার; Image source: IMDb

চার্লসের আঁকা এই কার্টুন চরিত্রগুলোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে ষাটের দশকে একে সিটকমে রূপান্তরিত করা হলে। ৩০ মিনিটের এই এপিসোডগুলোতেই প্রথম চরিত্রগুলোর নাম এবং তাদের পেছনে থাকা গল্পগুলো উঠে আসে দর্শকের সামনে।

চরিত্রগুলোর মাঝে থাকা অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা এবং ডার্ক হিউমারের উপস্থিতির কারণেই সিটকমটি ডার্ক কমেডির আওতাভুক্ত। পরিবারের সদস্যদের মাঝে আছেন উইচ গ্র্যান্ডমা অ্যাডামস, যিনি ক্রিস্টাল বলের সাহায্যে ভবিষ্যৎ দেখতে পারেন।
তারই ছেলে গোমেজ অ্যাডামস একজন অবসরপ্রাপ্ত আইনজীবী এবং বেশ কিছু কোম্পানি ও স্টকের মালিক। গোমেজ প্রায়ই স্পেনকে তার পৈতৃক নিবাস হিসেবে উল্লেখ করায় বোঝা যায় যে সে কাস্টিলিয়ান বংশোদ্ভূত। শিশুসুলভ গোমেজ তার স্ত্রী মর্টিসিয়াকে অসম্ভব ভালোবাসেন।
মর্টিসিয়া বেশ রহস্যময় এক চরিত্র, সবসময়ই তাকে দেখা যায় পা পর্যন্ত লম্বা কালো পোশাকে। বিভিন্ন মাংসাশী উদ্ভিদের প্রতি মর্টিসিয়ার প্রচুর আগ্রহ।
গোমেজ এবং মর্টিসিয়ার দুই সন্তান পাগস্লি এবং ওয়েন্সডে। পাগস্লি বেশ সরল মনের নাদুসনুদুস এক চরিত্র, যার আছে অ্যারিস্টটল নামের একটি পোষা অক্টোপাস। ওয়েন্সডে চরিত্রটি বেশ আপোসহীন, তার রয়েছে হোমার নামের কালো মাকড়সা, এবং লুসিফার নামের এক টিকটিকি।
আংকেল ফেস্টার নামে পরিচিত চরিত্রের রয়েছে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ক্ষমতা। এই সিটকমে আংকেল ফেস্টারকে প্রথমে গোমেজের ভাই হিসেবে মনে হলেও পরবর্তীতে দেখা যায় তিনি মর্টিসিয়ার মায়ের বড় ভাই। 
অন্য সদস্যদের মাঝে আছে বাটলার লার্চ এবং 'থিং'। থিং একটি বিচ্ছিন্ন হাত যে পরিবারের সবাইকে নানাভাবে সাহায্য করে। ফোন কল রিসিভ করা, দাবা খেলা, সিগার জ্বালানো, চা ঢালা, চিঠি সংরক্ষণ করাসহ হাজারো কাজ করতে পারে এই থিং!
গোমেজ এবং থিং, অ্যাডামস ফ্যামিলি সিরিজ (১৯৬৪-৬৬); Image source: IMDb

ওয়েন্সডে ইজ মিসিং, দ্য নিউ স্কুবি-ডু মুভিস (১৯৭২)

দ্য নিউ স্কুবি-ডু মুভিস (১৯৭২) এর তৃতীয় পর্বে আমরা অ্যাডামস ফ্যামিলির দেখা পাই আবারও। পর্বের নাম ছিল ‘ওয়েন্সডে ইজ মিসিং’। এ পর্বে মিস্ট্রি মেশিন গ্যাংসহ জলাভূমির মাঝে দিয়ে যাওয়ার সময় ভ্যান নষ্ট হয়ে যায় এবং তাদের উদ্ধার করে অ্যাডামস ফ্যামিলির দুর্গে নিয়ে যায় বাটলার লার্চ। পরে ওয়েন্সডে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় গ্যাং তদন্তে সাহায্য করে। অ্যাডামস ক্ল্যানের প্রত্যেকেটি চরিত্রের উপস্থিতিই সুন্দরভাবে দেখা গিয়েছে এই এপিসোডে। এই শোতে পুরাতন স্টোরি কিছুটা পরিবর্তন করে আংকেল ফেস্টারকে গোমেজের বায়োলজিক্যাল ভাই হিসেবে দেখানো হয়েছে। স্কুবি এবং শ্যাগির হাস্যরসের সাথে অ্যাডামস ফ্যামিলির চরিত্রগুলোর ডার্ক হিউমার দর্শকরা বেশ উপভোগ করেছেন।

স্কুবি-ডু মিটস দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি (১৯৭২); Image source: videocollector.co.uk

দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি ফানহাউজ, এবিসি (১৯৭৩)

সত্তরের দশকের দিকে এবিসি সম্পূর্ণ নতুন কাস্টিং নিয়ে অ্যাডামস ফ্যামিলির নতুন একটি ভ্যারাইটি শো প্রচার করে। তবে তিরিশ মিনিটের পাইলটের পর সিরিজ হিসেবে আর প্রচার করা হয়নি। এই শোতে জ্যাক রাইলি এবং লিজ টরেসকে গোমেজ এবং মর্টিসিয়ার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়।

দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি ফানহাউজ, এবিসি (১৯৭৩); Image source: IMDb

হ্যালোউইন উইথ দ্য নিউ অ্যাডামস ফ্যামিলি, এনবিসি (১৯৭৭)

অ্যাডামস ফ্যামিলিকে নিয়ে ১৯৭৭ সালে আবার নির্মাণ করা হয় এই হ্যালোউইন থিমযুক্ত সিনেমাটি। এই সিনেমায় আমরা মূল সিটকমের কাস্টদের পুনরায় দেখতে পাই। ক্যারোলিন জোনসকে মর্টিসিয়া এবং জন অস্টিনকে গোমেজ হিসেবে পর্দায় আবারও দেখা যায়, দেখা যায় তাদের মধ্যকার অসাধারণ কেমিস্ট্রি এবং কৌতুকপূর্ণ আচরণ। তবে অ্যাডামস ফ্যামিলি ফ্যান বেইজের অধিকাংশই মূল সিটকমের স্টোরিলাইনের সাথে তুলনা করে এই হরর-কমেডি জনরার সিনেমাকে তেমন পছন্দ করেননি।

হ্যালোউইন উইথ দ্য নিউ অ্যাডামস ফ্যামিলি (১৯৭৭); Image source: IMDb

দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি মুভি (১৯৯১)

চার্লস অ্যাডামসের মৃত্যুর পর ১৯৯১ সালে নির্মাতা ব্যারি সোনেনফেল্ড ‘দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি‘ সিনেমাটি নির্মাণ করেন। এতে অভিনেতা রাউল জুলিয়াকে গোমেজ চরিত্রে এবং অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিকা হুস্টনকে মর্টিসিয়া চরিত্রে দেখতে পাওয়া যায়। এই সিনেমাতেই ওয়েন্সডে চরিত্রে দেখা যায় ক্রিস্টিনা রিকিকে। উল্লেখ্য, ক্রিস্টিনা রিকিকে নতুন ‘ওয়েন্সডে’ সিরিজেরও এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা গিয়েছে। এই সিনেমা বাণিজ্যিকভাবে বেশ সফল হয়, বক্স অফিসে এর আয় ছিল ১৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সিনেমার জনপ্রিয়তার কারণে এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় একটি ভিডিও গেইম। এই সিনেমানির্ভর একটি পিনবল মেশিনও তৈরি করা হয়, যা তখন সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত পিনবল মেশিন। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে ‘দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি ভ্যালুস’ নামে এর সিকুয়েলও নির্মাণ করা হয়। সিকুয়েলে প্রথম সিনেমার কাস্টিংই দেখা যায়।

দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি মুভি (১৯৯১); Image source: IMDb

দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি: দ্য অ্যানিমেটেড সিরিজ, এবিসি (১৯৯২-৯৩)

১৯৯১ সালে ‘দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি’ সিনেমার জনপ্রিয়তায় অনুপ্রাণিত হয়ে হানা বারবেরা এই চরিত্রদের নিয়ে নতুন অ্যানিমেটেড সিরিজ প্রযোজনা করেন। মূল সিটকমে গোমেজ চরিত্রে অভিনয় করা জন অস্টিনকে দর্শক ফেরত পায় অ্যানিমেশনের গোমেজের কন্ঠে। তিরিশ মিনিটের এপিসোডের এই সিরিজের টানা দুটি সিজন এবিসি-তে প্রচারিত হয়।

দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি: দ্য অ্যানিমেটেড সিরিজ, এবিসি (১৯৯২-৯৩); Image source: IMDb

দ্য নিউ অ্যাডামস ফ্যামিলি (১৯৯৮-৯৯)

নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে আবারও অ্যাডামস পরিবার নিয়ে নির্মাণ করা হয় একটি আমেরিকান-কানাডিয়ান সিটকম। একটি পর্বে জন অস্টিনকে গ্র্যান্ডপা অ্যাডাম হিসেবে দেখতে পাওয়া যায়। এই ৬৫ পর্বের সিটকম নর্থ আমেরিকানদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলে।

দ্য নিউ অ্যাডামস ফ্যামিলি (১৯৯৮-৯৯); Image source: TV Insider

দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি অ্যানিমেটেড মুভি (২০১৯-২১)

২০১০ সালের দিকে ইলুমিনেশন এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাডামস ফ্যামিলির স্টপ-মোশন অ্যানিমেশন বানানোর প্রকল্প হাতে নেয় যেখানে প্রযোজনা এবং পরিচালনার জন্য টিম বার্টনকে নির্ধারিত করা হয়। কিন্তু ২০১৩ সালের দিকে এসে প্রকল্পটি আর বাস্তবায়ন করা হয়নি। পরবর্তীতে এমজিএমের প্রডাকশনে পামেলা পেটলারের স্ক্রিপ্টে তৈরি করা হয় অ্যানিমেটেড মুভিটি, যা ২০১৯-এ হ্যালোউইন উপলক্ষে প্রচারিত হয়। এই অ্যানিমেশনের সিকুয়েল আসে ২০২১ সালের অক্টোবরে।

দ্য অ্যাডামস ফ্যামিলি অ্যানিমেটেড মুভি (২০১৯-২১); Image source: easyreadernews.com

ওয়েন্সডে, নেটফ্লিক্স (২০২২)

পূর্বে বেশ কয়েকবার অ্যাডামস ফ্যামিলি নিয়ে কাজ করবার কথা থাকলেও শেষে টিম বার্টনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। অবশেষে ‘ওয়েন্সডে’ সিরিজে দর্শক অ্যাডামস ফ্যামিলিকে নিয়ে টিম বার্টনের কাজ দেখতে পেল। প্রিমিয়ারের পর থেকেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে ওয়েন্সডে চরিত্রকে নিয়ে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ। টিম বার্টনের স্বভাবসুলভ ডার্ক এস্থেটিক্সের সাথে অ্যাডামস ফ্যামিলির চিরায়ত ‘ফ্যামিলি ভ্যালুস’ চমৎকারভাবে মিলে যাওয়ায় সিরিজটি নতুন মাত্রা পেয়েছে।

Language: Bangla
Topic: From Adam's Family to Wednesday
References: Hyperlinked inside
Feature Image: Dailyo.in

Related Articles