Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যা স্ক্যানার ডার্কলি: রিচার্ড লিংকলেটারের আন্ডাররেটেড সিনেমা

আমেরিকান ফিল্মমেকার রিচার্ড লিংকলেটারকে দর্শকেরা তার অমায়িক ‘হ্যাং-আউট’ ধরনের সিনেমাগুলোর জন্য চেনে। ‘অ্যা স্ক্যানার ডার্কলি’ (২০০৬) প্রমাণ করে, জলজ্যান্ত বিভীষিকাময় গল্প বিষয়ক সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রেও তিনি সমভাবে পারদর্শী। এটি নির্মিত ফিলিপ কে. ডিকের ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে। লিংকলেটারের পরিচালনায় এখানে দর্শক একটি বেশ পীড়াদায়ক গল্পকে মঞ্চস্থ হতে দেখবে।

‘অ্যা স্ক্যানার ডার্কলি’র নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিচালক শরণাপন্ন হয়েছেন রোটোস্কোপ টেকনোলজির, যা এর আগে তিনি তার ‘ওয়েকিং লাইফ’ (২০০১) প্রজেক্টেও ব্যবহার করেছেন। এ পদ্ধতিতে প্রথমে লাইভ অ্যাকশন শ্যুটিংয়ের পর তাতে অ্যানিমেশন যুক্ত করা হয়। এভাবে এক মিনিটের ফুটেজ অ্যানিমেট করতে প্রায় ৫০০ মিনিটের মতো সময় লাগে, অ্যানিমেশনের পর ফুটেজগুলো দেখতে কমিকবুকের মতো লাগে। কিন্তু বাস্তবিক অভিব্যক্তিসম্পন্ন চরিত্র বা কোনো বাস্তবসম্মত বস্তু নির্মাণের ক্ষেত্রে এর জুড়ি মেলা ভার। স্টার ওয়ার্স ফ্র্যাঞ্চাইজির বিখ্যাত অস্ত্র লাইটসেবারও এভাবেই নির্মিত। 

বব আর্কটর চরিত্রে কিয়ানু রিভস; Image Source: IMDB

 

সিনেমার শুরুতেই আমরা দেখি, চার্লস ফ্রেক (রোরি কক্রেন) নামক এক সহজ-সরল লোককে, যাকে একধরনের পোকা সদলবলে আক্রমণ করে চলেছে, কিন্তু এগুলোকে সে ছাড়া আর কেউ দেখে না। সেখান থেকে লিংকলেটার আর কিয়ানু রিভস, উইনোনা রাইডার, উডি হ্যারেলসন ও মাদকাসক্তিমুক্ত আয়রন ম্যান হওয়ার আগের রবার্ট ডাউনি জুনিয়রকে নিয়ে গঠিত অনবদ্য কাস্ট দুর্দশায় ভরা নারকীয় এক যাত্রায় নিয়ে যায় দর্শকদের। ‘অ্যা স্ক্যানার ডার্কলি’ গা ছমছমে, ডিস্টোপিয়ান সায়েন্স ফিকশনের অন্যতম সেরা উদাহরণ। এই প্রজেক্ট ভালো হবার কারণ হলো মাদকাসক্তি, অলীক ভয় এতসবের গভীরেও এতে লিংকলেটারের ছাপ স্পষ্ট। আর যখন এটি তার সহজাত স্টোরিটেলিং স্টাইল থেকে ভিন্ন দিকে মোড় নেয়, তখন সেটি সুপরিকল্পিত এবং নির্ভুলভাবে করা হয়। 

নিজের সিনেমার গল্প এবং চরিত্রগুলো প্রস্ফুটিত হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় এবং অবকাশ দেওয়ার ব্যাপারে লিংকলেটার প্রসিদ্ধ। তার সিনেমায় চরিত্ররা কথা বলে। নিজেকে ভালোভাবে বুঝতে পারা থেকে শুরু করে মানবতা একসময় টেলিপ্যাথিক ছিল কি না; কথা বলার ক্ষেত্রে তাদের বিষয়ের কোনো কমতি পড়ে না। কথোপকথনের মাধ্যমে গল্প এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সেরা পরিচালকদের একজন তিনি, সেটা ঐকান্তিক, ব্যক্তিগত বা স্পর্শকাতর- যে ধরনের কথোপকথনই হোক। এভাবেই তিনি ও তার সহযোগীরা সাধারণ মানুষ কীভাবে, কী নিয়ে কথা বলে- তা তুলে আনেন পর্দায়। ফলে তার প্রজেক্টে তৈরি হয় বাস্তবিক এবং স্মরণীয় চরিত্রসমূহ, যাদের সাথে আমরা সহজেই নিজেদের মিল খুঁজে পাই।

ডনার সাথে বব; Image Source: Film Affinity

‘অ্যা স্ক্যানার ডার্কলি’তেও আমরা এভাবেই গল্পকে এগিয়ে যেতে দেখি। লিংকলেটারের অন্যান্য সিনেমার সাথে এর মূল পার্থক্য চরিত্র সংক্রান্ত। অসহ্য মানসিক যন্ত্রণায় ভোগা অ্যান্টি-হিরো থেকে সত্যিকারের ঘৃণ্য মানুষ- এ ধরনের চরিত্র নিয়েই নির্মিত এটি। রিভস, রাইডার, ডাউনি জুনিয়র, হ্যারেলসন অভিনীত চরিত্রগুলো একসাথে আড্ডা দেয় আর খুচরা আলাপ করে। এ ধরনের আলাপন আমরা ‘ডেজড অ্যান্ড কনফিউজড’ (১৯৯৩) বা ‘এভ্রিবডি ওয়ান্টস সাম’ (২০১৬)-এ দেখেছি।

একা থাকা দৃশ্যগুলোতে কিয়ানু আর উইনোনার রসায়ন যেন আমাদেরকে বিফোর ট্রিলজিতে ইথান হক আর জুলি ডেলপির কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু লিংকলেটারের অমায়িক সিনেমাগুলোতে যেখানে চরিত্ররা একে অপরকে সত্যি সত্যি ভালোবাসে, প্রগাঢ় টান অনুভব করে; সেখান থেকে একটু ভিন্ন এটা। এ সিনেমার চরিত্ররা প্রায়ই একে অপরের পিঠে ছুরি বসাতে চেষ্টা করে।

বব আর্কটর একজন আন্ডারকাভার পুলিশ। সে নিজের সাদামাটা, সুখী জীবন ছেড়ে নিষ্প্রাণ, অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন বেছে নিয়েছে। স্থানীয় দুর্বৃত্ত আর্কটরের ছদ্মবেশে সে রহস্যময় এবং প্রবলভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী ‘সাবস্ট্যান্স ডি’ নামক মাদকের নেশায় মত্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের মূল লক্ষ্য, এই ড্রাগের চাহিদা এবং যোগান উভয়কেই ধ্বংস করে ফেলা। তার ‘বন্ধুরা’ হলো যথাক্রমে ডনা, লাকম্যান এবং সবসময় সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করা- কুচুটে ব্যারিস। ডনা আর আর্কটরের মধ্যকার সম্পর্ককে বর্ণনা করতে গেলে ‘অস্বাভাবিক’, ‘অস্বাস্থ্যকর; এই দুটি প্রত্যয়কেই ব্যবহার করতে হবে। তবে ডনা বাদে আর কারো ব্যাপারে সে তেমন ভাবে না, তার ব্যাপারে তাদের মনোভাবও একইরকম।

ব্যারিস এ ব্যাপারে আরো এককাঠি সরেস। সে নিজের অপরাধের জন্য আর্কটরকে ফাঁসিয়ে দিতে চায়, যদিও সে তার বাসাতেই আশ্রয় পেয়েছে। আবার লাকম্যান চোখের সামনে বেঘোরে মারা পড়তে বসলেও সে তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করে না। তাদের মধ্যকার মিথস্ক্রিয়া আমাদেরকে লিংকলেটারের অন্যান্য কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও, সবসময় এসব চরিত্রের মাঝে একটা অস্বস্তিকর, অস্বাভাবিক আবহ বিরাজ করে। এসব লোক পরস্পরের সাথে অবস্থান করে কেবল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় একাকিত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস বা আত্মিক টান; এসবের অস্তিত্ব নেই তাদের ভেতর। 

এখানকার চরিত্রদের আত্মিক কোনো টান ছাড়া সম্পর্কের সাথে মাদকের কারণে সৃষ্ট প্যারানয়া মিলে এটি একাকিত্বে ভরা চলচ্চিত্র, যা পরিচালকের অন্যান্য সিনেমার থিমের সাথে খাপ খায় না। এদের সাথে থাকা অবস্থাতেই আর্কটর তাদেরকে পছন্দ করে না, তাহলে অফিসে বসে সন্নিবেশিত গোপন ক্যামেরায় দেখে আর কতটা পছন্দ করবে? কাজের সময় আর্কটর আর তার সহকর্মীরা স্ক্রাম্বল স্যুট নামে একটি পোশাক পরে থাকে। এটি একধরনের জাম্পস্যুট, যা তাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে রাখে।

এটি পরলে তাদের অবয়ব বাইরের মানুষের চোখে ক্রমাগত বদলাতে থাকে এবং কণ্ঠস্বরও বদলে যায়। মনুষ্যকণ্ঠের বদলে শোনা যায় একঘেয়ে যান্ত্রিক স্বর। ছদ্মবেশী পুলিশ সদস্যদের পরিচয় যেন প্রকাশ না পায়, সেজন্যই এই ব্যবস্থা। এসব স্ক্রাম্বল স্যুটগুলো ভালো অ্যানিমেশনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আজ প্রায় ১৫ বছর পরেও এতটা উঁচুমানের অ্যানিমেশন খুব একটা পরিলক্ষিত হয়নি পর্দায়। 

লাকম্যান এবং ব্যারিস; Image Source: IMDB

আর্কটর যে ধরনের আচরণ করে, তার পেছনে ‘সাবস্ট্যান্স ডি’-এর মাথা বিগড়ে দেওয়া প্রভাবেরও অবদান রয়েছে। একপর্যায়ে তার অবস্থা এমন হয় যে, সে নিজেকে আর যার উপর নজরদারির দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়েছে; তাদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। নিজের মাঝেই নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে সে। এই হারিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে সে একা না, পুরো জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মানুষই এই দ্রব্যটিতে আসক্ত। তার এই বিস্মৃতি দর্শকের চোখে আরো পীড়াদায়ক হয়ে ধরা পড়ে। কারণ অনেকাংশে আর্কটর নিজেও অনুধাবন করতে সক্ষম হয় যে, সে ক্রমশ নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। আর যখন আমরা দেখব যে, তার এই আসক্তি অন্যের একটি বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ, যা তাকে না জানিয়েই করা হয়েছে; তখন দর্শকের মন তার জন্য সহমর্মিতায় ভরে উঠবে। আসক্তি আর নিজেকে হারিয়ে ফেলার কষ্ট কেমন, তা ফুটে উঠেছে ‘অ্যা স্ক্যানার ডার্কলি’র এই মনোলগে,

“একটা স্ক্যানার কী দেখতে পায়? এটা কি মগজের ভেতরটা দেখে, না কি হৃদয়ের ভেতরটা? আমার ভেতর দেখে, না কি আমাদের ভেতর? আশা করি, এটা পরিষ্কারভাবেই দেখতে পায়, কারণ আমি নিজের ভেতরটা আর দেখতে পাই না। আমার চোখে যা ধরা পড়ে, সবই ঝাপসা। কামনা করি, আমাদের সবার মঙ্গলের জন্যই স্ক্যানারগুলো ঠিকমতো কাজ করবে। কারণ এগুলোও যদি আমার মতো ঝাপসা দেখে, তাহলে আমার আর কোনো মুক্তির পথ নেই।”

ফিলিপ কে. ডিককে বলা হয় সায়েন্স ফিকশন গুরু। তার রচিত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘ব্লেড রানার’ (১৯৮২), ‘টোটাল রিকল’ (১৯৯০), ‘মাইনরিটি রিপোর্ট’ (২০০২)-সহ বেশ কিছু সিনেমা। ‘অ্যা স্ক্যানার ডার্কলি’ সায়েন্স ফিকশনের জনরার ভেতর পড়লেও এটি ফিলিপের সেমি-বায়োগ্রাফি। বাস্তব জীবনে তিনি সত্তরের দশকের ড্রাগ কালচারের একান্ত অনুসারী ছিলেন। নিজের আসক্তির সময় যে ধরনের পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গিয়েছিলেন, সেটিই তুলে ধরেছেন নিজের লেখার মাধ্যমে ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপটে। নিজে যে আসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছিলেন, সেটার আলোকে একটি নিরাময় কেন্দ্রের কথাও আছে উপন্যাসে। ‘নিউ পাথ’ নামক এই পুনর্বাসন কেন্দ্রটি গল্পে পালন করেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

লেখক বাস্তবে মাদকাসক্তিকে ন্যায্যতা দিতে চাইলেও লিংকলেটার সেই পথে হাঁটেননি। বরং তিনি মাদকাসক্তির গলি-ঘুপচি চেনা ফিলিপের অভিজ্ঞতা অবলম্বনে তুলে ধরেছেন মাদকের ভয়ংকর প্রভাবকে। ফলে, এটি মাদককে মহিমান্বিত করা সিনেমাগুলোর কাতারে না পড়ে পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের দ্বৈত চরিত্রের বাস্তবিক উপস্থাপনের প্রামাণ্য দলিলে। 

ফিলিপের গল্পের কাহিনী ১৯৯৪ সালের ডিস্টোপিয়ান অরেঞ্জ কাউন্টির পটভূমিতে রচিত। লিংকলেটার একই পথ অনুসরণ করে স্থান একই রেখে সময়কে আরো এগিয়ে দিয়েছেন। মাদকের প্রভাব বর্ণনায় দর্শক এর সাথে ড্যানি বয়েলের ‘ট্রেইনস্পটিং’ (১৯৯৬) সিনেমার মিল খুঁজে পাবেন। 

বন্ধুদের সাথে বব; Image Source: nziff.co.nz

শেষের দিকে এসে সিনেমার সকল রহস্যের অবসান ঘটে। আর্কটরের পরিচিত এক চরিত্রকেই আমরা সবকিছুর পরিকল্পনাকারীরূপে অবতীর্ণ হতে দেখি। আর্কটরকে না জানিয়ে সবকিছু করার জন্য তার ভেতরে অনুশোচনাও জেগে ওঠে। আর তার প্রতি সিনেমা জুড়ে এই চরিত্রটি যেরকম আচরণ করে, তার কারণও পরিষ্কার হয়৷ 

পরিকল্পনাকারীর পাপবোধের জাগরণ আর তার সর্বশেষ অবস্থার চিত্রায়ণের মাধ্যমে ‘অ্যা স্ক্যানার ডার্কলি’র মূল থিম আবারও ফিরে আসে। দিনশেষে বাস্তব জীবনের মতো এখানকার চরিত্ররাও একা। এটি রিচার্ড লিংকলেটারের সবচেয়ে নিরানন্দ এবং দুঃখের আবরণে মোড়ান সিনেমা। তার ফিল্মোগ্রাফির অন্যান্য সিনেমার সাথে থিমের দিক থেকে বেশ পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, এতে তার সিনেমার সকল বৈশিষ্ট্যও স্বমহিমায় প্রকাশিত। এভাবেই এটি পরিণত হয়েছে হৃদয়গ্রাহী মৌলিক একটি চলচ্চিত্রে। সময় করে দেখে নিতে পারেন আন্ডাররেটেড সিনেমাটি।

This article is in Bangla. It's a review of the movie 'A Scanner Darkly (2006)' directed by Richard Linklater.

Featured Image: wallpapercave.com

Related Articles